2 of 4

২.২৪ আবু নবাস আর জুবেদার গোসলের কাহিনী

হারুন অল রসিদ তার চাচার মেয়ে বেগম জুবেদাকে প্ৰাণাধিক ভালোবাসতেন। তার মনোরঞ্জনের জন্য তিনি একটি সুন্দর নয়নাভিরাম বাগিচা বানিয়া দিয়েছিলেন। বাগিচার মাঝখান একটি বিরাট ফোয়ারা। তার চারপাশে পুকুর-সদৃশ এক চৌবাচ্চা—হাল্কা নীল জলে ভরা। বাগিচার চারপাশে ঘন বাঁপড়া গাছ বসানো। এই গাছের পাতার আচ্ছাদন বাগিচাটাকে বাইরের জগৎ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এই বাগিচায় বেগম জুবেদা অসংবৃত বেশবাসে ঘুরে বেড়ায়, সাঁতার কাটে, গোসল করে। বাইরের কোন জনপ্রাণীর দৃষ্টি এখানে পৌঁছবার কোনও উপায় নাই। এমন কি সূর্যের আলোও ঢুকতে পায় না। এখানে।

একদিন, প্রচণ্ড খরতাপে দগ্ধ হচ্ছিল দুনিয়া, দুপুরে বেগম জুবেদা বাগানে ঢুকে সাজপোশাক খুলে ফেলে ঝরনার ধারে এসে দাঁড়ালো। এক পা এক পা করে নেমৈ সে হাঁটুজলে গিয়ে দাঁড়ালো। আরও গভীরে যেতে তার ভয় করে। একে ঠাণ্ডা জল তার ওপর সে খুব ভালো করে। সাঁতার কাটতে জানে না।তাই সে কোমর ছুইছুই জলে দাঁড়িয়েই ঘটি করে জল ভরে কাঁধে ঢালতে থাকলো।

পা টিপে টিপে খলিফা তার পিছনে এসে ঢুকেছিলেন বাগানে। দূর থেকে ঝরনার পাশে জুবেদার উলঙ্গ শরীর দেখার লোভ তিনি আর সামলাতে পারেন নি। একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে তিনি জুবেদার শঙ্খশুভ্র শরীরের লাবণ্য নিরীক্ষণ করতে থাকেন। খলিফা গাছের একটা ঝুলন্ত শাখা ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ তার হাতের ভারে ডালটা মড়মড় শব্দ করে ভেঙ্গে পড়ে।

এই সময় রাত্রি শেষ হয়ে আসে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

 

তিনশো উনীআশিতম রজনীতে আবার সে শুরু করে :

হঠাৎ এই শব্দে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে জুবেদা। দু হাতে নিজের শরীরের নিম্নাঙ্গ ঢাকার চেষ্টা করে এদিক ওদিক চাইতে থাকে। কোনও অদৃশ্য চোখের লোলুপতা থেকে নিজেকে রক্ষণ করতে চেষ্টা করে। কিন্তু বৃথাই সে চেষ্টা, ছোট দু’খানা হাতের আচ্ছাদনে তার অর্ধাংশও ঢাকা পড়ে না। সবই খলিফার দৃষ্টিগোচর হয়।

এর আগে খলিফা কখনও তার চাচার মেয়ে জুবেদাকে এই অবস্থায় দেখেন নি।

এমন ঝকঝকে প্রকাশ্য দিবালোকে এই তিনি প্রথম তাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখার সুযোগ পেলেন। জুবেদার গোপন অঙ্গের শোভা দেখে তিনি বিমুগ্ধ বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। একটু পরে আবার পা টিপে টিপে, যেমন করে এসেছিলেন তেমনিভাবে, বাগিচা থেকে বেরিয়ে গেলেন। মন তার এক অনাস্বাদিত আনন্দে ভরে গেলো। গুন গুন করে তিনি গাইতে থাকলেন :

ঝরনার ধারে দেখে এলাম তারে…

কিন্তু অশান্ত হৃদয় উথাল পাথাল করতে থাকে। কিছুতেই মনকে সহজ শান্ত একাগ্র করতে পারলেন না। তাই গানের পরের কলি আর গুছিয়ে বানাতে পারলেন না। তিনি। চেষ্টার কোনও অন্ত ছিলো না, কিন্তু কিছুতেই তিনি মেলাতে পারলেন না। পরের ছত্র। তাই অপ্রকাশের যন্ত্রণায় তিনি ছটফট করতে থাকেন। শুধু সেই একটা কলিই-ঝরনার ধারে দেখে এলাম তারে—ফিরে ফিরে গাইতে লাগলেন।

এইভাবে আর কতক্ষণ অসহায়ভাবে কাটাতে পারা যায়। অসমাপ্ত কবিতাটা বুকের মধ্যে আঁকুপাকু করতে থাকে। কিন্তু মুখের ভাষায় সে মূর্ত হতে পারে না।

অবশেষে সে কবি আবু নবাসকে ডেকে পাঠায়। —দেখ তো কবি, আমি একটা গানের কলি বানিয়েছিঃ ঝরনার ধারে দেখে এলাম তারে—। কিন্তু পরের ছত্ব মনে আসছে। তবে মুখে আসছে না। তুমি মিলিয়ে দাও তো

আবু নবাস বলে, যে হুকুম, জাঁহাপনা। খলিফাকে অবাক করে দিয়ে সে তৎক্ষণাৎ পুরো গানটি বানিয়ে দিলো :

ঝরনার ধারে, দেখে এলাম তারে,
এখনও তার রূপের ছবি চক্ষে আমার ভাসে।
তার বুকের পাহাড়ে, পিছলে পড়ি আছড়ে,
ক্ষতি কিবা তার, মৃত্যুই যদি আসে।

খলিফা হতবাক হয়ে ভাবেন, যে কথাগুলো এতক্ষণ ধরে অনেক চেষ্টা করেও তিনি ভাষায় রূপ দিতে পারলেন না আবু নবাস মুহূর্তের মধ্যে কী করে তাকে সহজ সুন্দর করে প্রকাশ করে দিলো। ঠিক ঠিক এই কথাগুলোই তো উনি বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। কিন্তু আবু নবাস কত সহজে পারলো! নিশ্চয়ই সে এক অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী!

কবিকে প্রচুর ইনাম দিয়ে খুশি করলেন খলিফা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *