দুই নারীর ঝগড়া বেঁধেছে-ভালোবাসার জন্য যুবক শ্রেষ্ঠ না-বয়স্ক মানুষ শ্রেষ্ঠ।
এই গল্পটা বলেছিলো আবু অল আইনা :
এক সন্ধ্যায় আমি ছাদের ওপরে উঠেছিলাম। উদ্দেশ্য—একটু মুক্ত বায়ু সেবন। পাশের বাড়ির ছাদ থেকে দুটি নারী কণ্ঠের বিতর্ক কানে আসছিলো। ওরা দুজনে আমার দুই প্রতিবেশীর বিবি। ওদের প্রত্যেকেরই একজন করে ভালোবাসার পাত্র আছে—ওদের কথোপকথন থেকে বুঝতে পারলাম। দু’জনেরই স্বামী বয়সে বৃদ্ধ। একজনের ভালোবাসা একটি উঠতি বয়সের যুবক। আর একজনের ভালোবাসার মানুষ পাকা বয়সের এক শক্তসমর্থ পুরুষ। ওরা এমন তর্কে মশগুল যে, অন্য কেউ তাদের কথা শুনে ফেলতে পারে সে দিকে আদৌ খেয়াল ছিলো না।
এই সময়ে রাত্ৰি শেষ হতে থাকে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।
তিনশো সাতাত্তিরতম রজনীতে আবার সে বলতে শুরু করে :
ওদের একজন বলছিলোঃ আচ্ছা ভাই, তোমার ভালোবাসার ঐ ইয়া লম্বা লম্বা দাড়ি তুমি কি করে সহ্য কর? আমন জাঁদরেল বদখদ চেহারার মানুষ দেখলে কি দিল-এ মহব্বৎ জাগে কারো? উফ, সে যখন তোমায় চুমু খায় তোমার গাল বুক ঠোঁট চিরে যায় না? ওর গোঁফের চুল তোমার ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে মুখের মধ্যে ঢুকে যায় না? ঐরকম অত্যাচার তুমি কী করে সহ্য কর ভাই? আমার কথা শোনো, তোমার ভালোবাসার পাত্রটি পালটাও। আমার মতো একটা খুব সুরৎ নওজোয়ান ছোকরা জোগাড় করা। তার আপেলের মতোটুকটুকে রাঙ্গা গালে চুমু খেয়ে কত মজা পাবে। তার মাখনের মতো নরম ঠোঁটের মাংস তুমি মুখে পুরে নিয়ে প্ৰাণ ভরে চুষতে পারবে। আরও কত নতুন উপাদেয় বস্তুর সন্ধান পাবে তার মধ্যে। তা কি তোমাকে ঐ রুক্ষ দাডিওলা দিতে পারবে?
অন্যজন বলে, তুমি একটা আস্ত আহম্মক ভাই। তোমার কোনও বুদ্ধিও নাই, রুচিও নাই। তুমি কি জান না, একটা গাছ তখনই মনোহর মনে হয় যখন সে পাতায় ছেয়ে থাকে। শসার খোসা যখন জড় হয় তখনই খেতে বড় স্বাদের হয়। দাডিবিহীন এবং টাক মাথার মানুষের চেয়ে হতকুৎসিৎ আর দুনিয়াতে কিছু নাই। দাড়ি গোঁফ পুরুষের শোভা আর নারীর শোভা আজানুলম্বিত কেশ। আল্লাই এই ব্যবস্থা করেছেন। এর পরে কী তুমি আমাকে দাড়ি গোঁফ গজায়নি-তেমন একটা খোকাকে আমার নাগর করতে বলবে? তুমি কী বলতে চাও একটা ছোকরার বুকের তলায় শুতে না শুতেই আমার কামনার জলাঞ্জলি হয়ে যাক। আরে, ওরা তো ওঠে। আর নামে। সঙ্গে সঙ্গেই নেতিয়ে পড়ে যায়। নিজেকে ঠকিও না বোন। আমি আমার ভালোবাসাকে ছাড়তে পারবো না। তার মতো দম ছেলেছোকরাদের হতে পারে না। একবার উঠলে আর সে নামতে চায় না। তার কায়দাকানুনই আলাদা। তার আলিঙ্গন, তার বন্ধন, তার চুম্বন, তার রিরংসা তার শৃঙ্গার তার রাগমোচন এক অপূর্ব আলৌকিক বস্তু।
এই সব শুনে ছোকরাসাহেবের প্রেমিকার চোখ কপালে ওঠে। —তাই নাকি! সত্যি বলছি ভাই, আজ তুমি আমাকে নতুন জ্ঞান দিলে।
একটুক্ষণ পরে শাহরাজাদ আর একটা গল্প বলতে শুরু করে : শসার শাহজাদা।