খাদ্য ও কৃষি সমস্যা
কিছুকাল যাবৎ আমাদের আর্থিক বিশেষ দুর্দিন চলছে। এর কারণের দীর্ঘ তালিকা তৈরি করা সম্ভব কিন্তু সবচেয়ে বড় কারণ আমাদের কৃষির দুরবস্থা।
গত পাঁচ-সাত বৎসর আমাদের খাদ্যোৎপাদন বাড়েনি। ১৯৬০-৬১-র পর ১৯৬৪-৬৫ সালে কিছুটা বেড়েছিল বটে, কিন্তু পরবর্তী দু বৎসরে আবারও কমে গেছে। ফলে খাদ্যমূল্য ও অন্যান্য দ্রব্যমূল্য অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দু বছরে শস্যোৎপাদন কমবার অন্যতম কারণ দেশের একটা বড় অংশ জুড়ে খরা অথবা সুবৃষ্টির অভাব। বর্ষণের সঙ্গে কৃষিশ্রীর এই সম্পর্ক শুধু এদেশেই নয় বিদেশেও লক্ষ্য করা যায়। ১৯৫৮-৫৯ সালের পর তিন বৎসর চীনদেশে খাদ্যোৎপাদন কম হয়; সে দেশের সরকার তখন প্রধান অপরাধী হিসাবে আবহাওয়াকে সনাক্ত করেন। এমন কি ভারত অথবা চীনের অপেক্ষা শিল্পে অনেক বেশী অগ্রসর সোভিয়েত দেশেও গত দশ বৎসরে আবহাওয়ার ভালমন্দর। ফলে শস্যোৎপাদনের হ্রাসবৃদ্ধি বারবারই চোখে পড়ে। অতএব এদেশে বৃষ্টির উপর কৃষির নির্ভরতা বহুদিন চলবে এ কথাটা ধরেই নেওয়া যায়।
এইটুকু বলে শেষ করলে অবশ্য সবটুকু বলা হয় না। ফলন শুধু বর্ষণের উপরই নির্ভর করে না, কৃষি ব্যবস্থার উপরও নির্ভর করে। বারিধারাটা এখনও প্রধানত আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে; কিন্তু কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি আমাদের হাতের বাইরে নয়। তবে কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি সময়সাপেক্ষ। ইতিমধ্যে আমাদের খাদ্যের যোগান কম। অতএব কি করা যায়?
এখানে গোড়াতেই একটা তর্কের সম্ভাবনা আছে। ১৯৬৬ সালে কংগ্রেসী সরকারের আমলে অনেকে জোর গলায় বলেছিলেন যে, দেশে খাদ্যের অভাব নেই; খাদ্যমূল্যবৃদ্ধির ওটা কারণ নয়। এখনও কেউ কেউ সেকথা বলছেন, হয়তো বা খানিকটা কম প্রত্যয়ের সঙ্গে। কিন্তু ১৯৬০ সালের তুলনায় ১৯৬৬ সালে যে খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধি পায়নি এবং ইতিমধ্যে দেশের জনসংখ্যা যে প্রায় শতকরা ১৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে একথাটা অস্বীকার করা কঠিন। হিসাব করে হয়তো দেখান সম্ভব যে, দেশে মোট যে পরিমাণ খাদ্য আছে সেটা সকলের ভিতর সমানভাবে ভাগ করে দিলে সকলেরই একরকম চলে যেত। কিন্তু। এ যুক্তিটার উপর নির্ভর করে বেশীদূর এগোনো যায় না। শস্যোৎপদান হ্রাস পেলেও মাঝারি ও বড় চাষীর পরিবারে আহারের পরিমাণ প্রায় একই থাকে; হ্রাসবৃদ্ধির ধাক্কাটা গিয়ে পড়ে অন্যদের উপর। চাষীর কাছ থাকে ধান কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাতেও বেশী লাভ নেই। নানা দেশের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে, খুব বড গোছের জোরজবরদস্তি করতে গেলে চাষী বরং তার শস্য ও সম্পত্তি নষ্ট করে ফেলে তাতে সারা দেশেরই ক্ষতি।
তাহলে কী করা যায়.? চাষীর হাতে এখন যেটুকু শস্য উদ্বৃত্ত আছে সেটা দেশময় অবাধে বিক্রী করতে দেওয়া হোক, কেউ কেউ একথা বলেছেন। এর পক্ষে কিছু যুক্তি আছে। একটা উদাহরণ ধরা যাক। বীরভূমে উদ্বৃত্ত শস্য আছে, কিন্তু চব্বিশ পরগণায় এখন ঘাটতি। বাইরে থেকে চব্বিশ পরগণায় খাদ্যের আমদানি বন্ধ করে দিলে ওখানে মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধি পাবে, লোকের কষ্ট অসহ্য হয়ে উঠবে। বীরভূম, বর্ধমান, মেদিনীপুর থেকে চব্বিশ পরগণায় চাল রপ্তানির সুযোগ থাকলে ঐসব জেলায় চালের দাম খানিকটা বাড়বে বটে, কিন্তু চব্বিশ পরগণায় অনেকটা কমবে। মোটের উপর এতে দেশের মানুষের কষ্ট কম হবে। শুধু জেলা-রাজনীতির দৃষ্টি নিয়ে তাকালে স্থান থেকে স্থানান্তরে খাদ্য চলাচলে বাধা সৃষ্টির নীতি সমর্থনযোগ্য মনে হতে পারে; কিন্তু দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখলে যথাসম্ভব অবাধ চলাচলই ভালো।
দেশময় খাদ্যের চলাচল অবাধ হলেও অবশ্য খাদ্যমূল্য স্বাভাবিক সুরে নেমে আসবে বলে আশা করা যায় না। খাদ্যের ঘাটতি দূর না হওয়া পর্যন্ত খাদ্যমূল্য অস্বাভাবিক থাকবে। এ অবস্থায় দেশের দরিদ্র লোকদের দুর্দশা লাঘবের জন্য সরকারের কিছু কর্তব্য আছে। অর্থাৎ নিম্ন আয়ের ব্যক্তিরা যাতে বাজার দরের চেয়ে সস্তায় অত্যাবশ্যক খাদ্য যোগাড় করতে পারেন সে ব্যবস্থা চালু রাখার দায়িত্ব সরকারের। ব্যবস্থাটা নানাভাবে করা। যায়। সরকার বাজার দরে চাল ক্রয় করে স্বল্পমূল্যে বিক্রয় করতে পারেন। এতে অসুবিধা এই যে, ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের ভিতর অনেকটা পার্থক্যের ফলে সরকারের এই থাতে বহু অর্থব্যয় হবে। অন্যান্য নানা প্রয়োজনীয় কাজে অর্থের অনটন ঘটবে। দ্বিতীয় পথ হিসাবে সরকার মাঝারি ও বড় চাষীদের কাছ থেকে নিয়ন্ত্রিতমূল্যে ধান অথবা চাল ক্রয় করে স্বল্পমূল্যে বিক্রী করতে পারেন। চাষীকে যে দাম দেওয়া হবে সেটা বেশী নিচু হলে চলবে না; কারণ তাতে ধানচাল আদায় করা কঠিন হবে, ভবিষ্যতে কৃষিকাজে চাষীর উৎসাহও কমে যাবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ বছর চাষীদের আগের চেয়ে বেশী দাম দিতে। রাজী হয়েছেন; নীতি হিসাবে এটা ভালো। একই সঙ্গে রেশনের দোকানে চালের মূল্য বৃদ্ধি না করবার ফলে অবশ্য সরকারের উপর একটা ঘাটতির বোঝা এসে পড়েছে। সংবাদে প্রকাশ যে, এ বছর পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ বাবদ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সাড়ে চার কোটি টাকা চেয়েছিলেন; কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এ প্রস্তাবে সম্মত হননি। কেন্দ্রীয় সরকারের দিক থেকে অসম্মতির কারণ অনুমান করা অবশ্য কঠিন নয়। প্রত্যেক প্রাদেশিক সরকার চাইবেন এ অবস্থায় চাষী ও ক্রেতাসাধারণ উভয় পক্ষকেই যথাসম্ভব সন্তুষ্ট রেখে ঘাটতির বোঝাটা কেন্দ্রের উপর নিয়ে ফেলতে; কেন্দ্র চাইবেন প্রদেশ সরকারকে এই ঘাটতি বৃদ্ধির ব্যাপারে সংযত করতে।
প্রদেশ সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি ও ঘাটতি হ্রাসের ব্যাপারে বিভিন্ন উপায় চিন্তা করে দেখবার দায়িত্ব নিশ্চয়ই আছে। পশ্চিমবঙ্গে ভূমি রাজস্ব বিলোপ না করে সেটাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো যায় কিনা চিন্তার যোচ্য। এই নতুন ব্যবস্থায় চাষীকে ভূমিরাজস্ব বা ভূমিকর দিতে হবে টাকায় নয়, ধানে। খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যতদিন রোধ করা যাবে না ততদিন পর্যন্ত এ ব্যবস্থাটা বিবেচ্য। একর প্রতি দেয় ধানের পরিমাণ ছোট চাষীর তুলনায় বড় চাষীর ক্ষেত্রে ক্রমশ বাড়ানো যেতে পারে। এ ভাবে সরকার কিছুটা ধান কর হিসাবে বিনামূল্যে পেতে পারেন। এতে কৃষকের ___ উদ্বৃত্ত ধানের পরিমাণ জানাবারও প্রয়োজন নেই। যে সব চাষীর জমির আয়তন পাঁচ একরের কম তাঁদের এই কর থেকে রেহাই দেওয়া ভালো। কর মিটিয়ে দেবার পর উদ্বৃত্ত ধান, বা তার প্রধান অংশ, সকল চাষীকে অবাধে বিক্রী করতে দেওয়া যেতে পারে। সরকারও প্রয়োজনমত বাজারে ধানচাল ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন। শহরে রেশনের দোকানে সবাইকে স্বল্পমূল্যে চাল সরবরাহ না করে যাঁদের মাসিক আয় পাঁচশ টাকার কম তাঁদের জন্য ব্যবস্থা করাই যথেষ্ট।
দীর্ঘকালীন দৃষ্টিতে কিন্তু আমাদের খাদ্য তথা আর্থিক সমস্যার কোনো সমাধান সম্ভব নয় কৃষিজাত উৎপাদন বৃদ্ধি ভিন্ন। এদিক থেকে কৃষি ব্যবস্থার আলোচনা প্রয়োজন।
ভারতবর্ষের বর্তমান যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তানায়ক বিচারপতি মহাদেব গোবিন্দ রাণাডে বহুদিন আগে কৃষির উন্নতির জন্য একটা ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন দেশজোড়া লক্ষ লক্ষ ছোট কৃষক আর তারই মাঝে মাঝে বিভিন্ন অঞ্চলে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত কয়েকজন অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত, সঙ্গতিবান, বড় কৃষক। ব্যাপারটা তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন এইভাবে কৃষির উন্নতির জন্য বিজ্ঞান ও মূলধনের প্রয়োগে নেতৃত্ব আসবে অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত, অর্থবান বড় কৃষকদের পক্ষ থেকে। সেই দৃষ্টান্তে ছোট কৃষকদের উন্নতিও ত্বরান্বিত হবে। ভূমির অধিকারী ছোট ছোট কৃষকেরা হবেন জাতির মেরুদণ্ডস্বরূপ; কিন্তু দৃষ্টান্ত ছাড়া ছোট চাষীর পক্ষে তাড়াতাড়ি এগোনো সম্ভব নয়।
রাণাডের কথাটা চিন্তা করে দেখবার মত। ভারতবর্ষের প্রতিটি প্রদেশে অবশ্য ঠিক একই ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন নয়। মধ্যপ্রদেশের মত যে-সব অঞ্চলে চাষীদের ভিতর শিক্ষার মান বিশেষভাবে নিচু অথচ জমির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশী সেই সব অঞ্চলে। রাণাডের প্রস্তাব বিশেষ প্রযোজ্য মনে হয়। আবার কেরলের মত যে-অঞ্চলের সাধারণ। গ্রামেও শিক্ষার মান উঁচু ও জমির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম, সেখানে বড় চাষীর প্রয়োজন অপেক্ষাকৃত কম। কাজেই ভারতের সকল অঞ্চলের ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা এবং ভূমির মালিকানার ঊর্ধ্বমাত্রা ঠিক একই প্রকার হবার আবশ্যকতা নেই।
ছোট ও বড় চাষীর এই সহাবস্থান ব্যবস্থাকে কার্যকরী করতে হলে আরও কয়েকটি ব্যাপারে মনোযোগ দিতে হবে।
প্রতিটি চাষীর জমি যথাসম্ভব একটি অবিভক্ত খণ্ড হিসাবে তাকে দেবার চেষ্টা করতে হবে। বড় চাষীর জমি বহুখণ্ডে বিভক্ত থাকলে রাণাডের উদ্দেশ্য বিফল হবে। জমির এই পুনর্বিন্যাস সহজ নয়, কিন্তু এটা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত গ্রামে গ্রামে শিক্ষার দ্রুত প্রসার অত্যাবশ্যক। এছাড়া গ্রাম্য জীবনের জড়ত্ব ভাঙ্গবে না। শিক্ষার আংশিক প্রসারে এই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে না, কারণ গ্রামবাসীর ভিতর যে ক’জন শিক্ষিত তাঁরা শহরে গিয়ে ভিড় করেন। সবাই শিক্ষিত হলে শিক্ষিত লোক গ্রামে থাকবেন; সকলের পক্ষে শহরে যাওয়া সম্ভব নয়। যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রাম থেকে নিরক্ষরতা দূর করা প্রয়োজন।
আমাদের দরিদ্র গ্রামে যেখানে শৈশব অতিক্রান্ত হলেই চাষীর ছেলে মাঠে কাজে নামে সেখানে অক্ষরজ্ঞান ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া অবশ্য সহজ কাজ নয়। শুধু স্কুলঘর তৈরী করলেই শিক্ষাবিস্তার হয় না। তাই শিক্ষাকে কি করে জীবন ও জীবিকার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত করা যায় গান্ধীজী সেই দৃষ্টি নিয়ে সমস্যাটা বুঝতে চেয়েছিলেন, সেটাই প্রয়োজন।
তৃতীয়ত, সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলিকে এমনভাবে গড়ে তোলা দরকার যাতে ছোট চাষীরাই তাতে প্রধান অংশগ্রহণ করতে পারেন। পঞ্চায়েতী ব্যবস্থারও অনুরূপ বিবর্তন প্রয়োজন। বর্তমান গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি প্রায়ই গ্রামের অপেক্ষাকৃত ক্ষমতাবান। কয়েকজনের কুক্ষিগত। এই গণতান্ত্রিক অভুত্থানের যুগে সাধারণ নিম্ন আয়ী গ্রামবাসীকে আরও অধিক সংখ্যায় পঞ্চায়েতের সভ্য হিসাবে গ্রহণ করবার কথা বিশেষভাবে ভাবতে হবে। সমবায় ও পঞ্চায়েতে সাধারণ চাষীকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা না হলে গ্রামে গণতন্ত্র। অসম্পূর্ণ থেকে যাবে এবং সামাজিক বিরোধ ক্রমে তীব্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকবে। আর্থিক উন্নতির কাজেও এই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন যাতে সরকারের দাক্ষিণ্য শুধু বিত্তবানের দুয়ারে গিয়ে না ঠেকে, বরং সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে গ্রামীণ জীবনের সবাঙ্গীন উন্নতিতে সহায়তা করে।
কৃষির উন্নতির জন্য এখন প্রয়োজন হল জল এবং সেই সঙ্গে সার ও উকৃষ্ট বীজের উপযুক্ত ব্যবহার। জল সরবরাহের ব্যবস্থা না হলে সারের ব্যবহারের সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। কাজেই জলের ব্যবস্থার দিকে প্রথমে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। সারের জন্য। ক্ষেত্র তৈরী হলে সার ও উৎকৃষ্ট বীজ যাতে কৃষকের, বিশেষত ছোট কৃষকের হাতে যথাসময়ে পৌঁছয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া দরকার। ছোট কৃষকের সমবায়। প্রতিষ্ঠানের ভিতর দিয়ে এটা সম্ভব হতে পারে। তাছাড়া কোথায় কোথায় কী ধরনের সার কত পরিমাণে প্রয়োজন সে বিষয়ে গবেষণা ও নির্দেশ দানের জন্য প্রতি অঞ্চলে বিশেষজ্ঞ থাকা চাই।
কৃষির উন্নতির জন্য কী প্রয়োজন ও কী প্রয়োজন নয়, এ-বিষয়ে আমাদের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের ভিতর কিছু ভুল ধারণা বহুদিন যাবৎ চালু আছে। অনেকের ধারণা যে, যৌথ চাষ প্রথা ও ট্রাকটরের ব্যবহার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আবশ্যক। এটা ভুল ধারণা।
এশিয়া ও ইয়োরোপের যে-দেশগুলিতে চাষ সবচেয়ে উন্নত তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই ভুলটা চোখে পড়ে। এশিয়ায় কৃষির সর্বাপেক্ষা উন্নতি ঘটেছে জাপানে এবং ইদানীং ফরমোসায়। এসব দেশে ট্রাকটরের ব্যবহারে জমির উৎপাদিকা শক্তি বাড়ে না, চাষের কাজ অল্প সংখ্যক লোকের সাহায্যে সম্পন্ন করা যায় এই মাত্র। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ট্রাকটর কখনও প্রয়োজন হয় বটে; কিন্তু সাধারণভাবে বলা চলে যে, ভারতের মত দেশে। শিল্পে অটোমেশনের আবশ্যক যেমন সীমায়িত, কৃষিতে ট্রাকটরের প্রয়োজনও তেমনই।
অপরপক্ষে কৃষকদের ভিতর শিক্ষার প্রসার সকল দেশেই উন্নতির একটি আবশ্যিক শর্ত। সেই সঙ্গে আরও প্রয়োজন চাষে জল সরবরাহ ও নিষ্কাসনের ব্যবস্থা, সারের ক্রমবর্ধমান প্রয়োগ, শস্যনাশী কীট ও বীজানু ধ্বংসের সাবধানী ব্যবস্থা, শস্য মজুত রাখবার জন্য ভালো গুদাম, এবং চাষী যাতে কৃষিজ দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহী হয় সেজন্য সুমূল্য নির্ধারণ। কৃষি উন্নয়নের এই পথ।
গণযুগ ও গণতন্ত্র (১৯৬৭)