ভারতীয় উচ্চ-সঙ্গীত
বিগত আষাঢ় মাসের ‘ভারতবর্ষে’ শ্রীযুক্ত দিলীপকুমার রায় লিখিত ‘সঙ্গীতের সংস্কার’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ইহার একটি প্রতিবাদমূলক প্রবন্ধ শ্রীযুক্ত প্রমথনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় ভারতবর্ষে ছাপিবার জন্য পাঠান। কিন্তু লেখক কি কারণে জানেন না, তাঁহার দুর্ভাগ্যক্রমে উক্ত প্রতিবাদ-প্রবন্ধ ফেরত আসায় “বাধ্য হয়ে গরম গরম প্রবন্ধটি একেবারে জুড়িয়ে যাবার আগে তাকে ‘বঙ্গবাণীর’ উদার অঙ্কে ন্যাস্ত” করেছেন। প্রবন্ধটি ‘বঙ্গবাণীর’ মাঘের সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
শ্রীযুক্ত প্রমথবাবু তাঁহার প্রবন্ধের একস্থানে লিখিয়াছেন—“আমি সেই প্রত্নতত্ত্ববিৎকে বেশি তারিফ করি যে একখানি তাম্রশাসন খুঁড়ে বের করেছে ও পড়েচে—কিন্তু সে কবিকেও তারিফ করি না যে নতুনের গান না গেয়ে কেবল ‘নতুন কিছু করো’র গান গেয়েছে।” প্রবন্ধটি কেন যে ফেরত আসিয়াছে বুঝা কঠিন নয়। খুব সম্ভব ভারতবর্ষের বুড়া সম্পাদক দিলীপকুমারের প্রবন্ধের প্রতিবাদে তাঁহার স্বর্গগত বন্ধু, দিলীপের পিতার প্রতি এই অহেতুক কটাক্ষ হজম করিতে পারেন নাই। এবং সেই কবি নূতন গান না গেয়ে “শুধু কেবল ‘নতুন কিছু করোর’ গানই গেয়েছেন”—প্রমথবাবুর এই উক্তিটিকে অসত্য জ্ঞান করে তাঁহার প্রেরিত এই উচ্চাঙ্গের প্রবন্ধটিকে ত্যাগ করে থাকেন ত তাঁহাকে দোষ দেওয়া যায় না।
সে যা হউক, না ছাপিবার কি কারণ তা তিনিই জানেন কিন্তু দিলীপকুমারের বিরুদ্ধে অধিকাংশ বিষয়েই প্রমথবাবুর সহিত আমি যে একমত তাহাতে লেশমাত্র সন্দেহ নাই। এমন কি ষোল আনা বলিলেও অত্যুক্তি হইবে না। প্রমথবাবু হিন্দুস্থানী সঙ্গীত লইয়া চুল পাকাইয়াছেন, তথাপি দিলীপের বক্তব্যের অর্থগ্রহণ করা শক্তিতে তাঁহার কুলায় নাই। প্রমথবাবু বলিতেছেন তিনি কথার কারবারী নহেন, সুতরাং ‘বিনাইয়া নানা ছাঁদে’ কথা বলিতে পারিবেন না–তবে মোদ্দা কথায় গালিগালাজ যা করিবেন তাহাতে ঝাপসা কিছুই থাকিবে না।
প্রমথবাবুর চুল পাকিয়াছে, আমার আবার তাহা পাকিয়া ঝরিয়া গেছে। দিলীপ বলিতেছেন, “আমাদের সঙ্গীতে ‘একটা নূতন কিছু’ করার সময় এসেছে, তা আমাদের সঙ্গীত যতই বড় হোক–কেন না প্রাণধর্মের চিহ্নই গতিশীলতা।” কিন্তু বলিলে কি হইবে? দিলীপের যখন একগাছিও চুল পাকে নাই, তখন এ–সকল কথা আমরা গ্রাহ্যই করিব না।
দিলীপ বলিতেছেন, “যে আসলটুকু আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি,–তাকে হয় সুদে বাড়াও, না হয় আসলটুকু খোয়া যাবে, এই হচ্চে জ্ঞানরাজ্যের ও ভাবরাজ্যের চিরন্তন রহস্য।”
প্রমথবাবু বলিতেছেন, “এ সাধারণ সত্য আমরা সকলেই জানি।” জানিই ত।
পুনশ্চ বলিতেছেন, “কিন্তু সৃজন কাজটা এত সোজা নয় যে, যে-কেউ ইচ্ছা করলেই পারবে। এ পৃথিবী এত উর্বর হলে …। হিন্দুস্থানী সঙ্গীতের ধারায় যদি পঞ্চাশ-ষাট বৎসর কোন নূতন সৃষ্টি না হয়ে থাকে তাহলে সেটা এতবড় দীর্ঘকাল নয় যে, আমাদের অধীর হয়ে উঠতে হবে।”
আমারও ইহাই অভিমত। আমাদের চুল পাকিয়াছে, দিলীপের পাকে নাই। আমরা উভয়ে সমস্বরে বলিতেছি, অধীর হইয়া ছটফট করা অন্যায়। পৃথিবী অত উর্বর নয়। পঞ্চাশ-ষাট বছরের বেশি হয় নাই যে, ইহারই মধ্যে ছটফট করিবে! আর যতই কেন কর না, কিছুই হইবে না সে স্পষ্টই বলিয়া দিতেছি,–ইহাতে ঝাপসা কিছুই নাই।
কিন্তু ইহার পরেই যে প্রমথবাবু বলিতেছেন, “যখন কোন স্রষ্টা সৃষ্টির প্রতিভা নিয়ে আসবে, তখন সে সৃষ্টি করবেই, শৃঙ্খল ভাঙবেই, অচলায়তন ভূমিসাৎ করবেই–তাকে কেউ ঠেকিয়ে, কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না …”। প্রমথবাবুর এ উক্তি আমি সত্য বলিয়া স্বীকার করিতে পারি না, কারণ সংসারে কয়টা লোকে আমার নাম জানিয়াছে? কয়টা লোক আমাকে স্বীকার করিতেছে? ও-পাড়ার মনু দত্ত যে মনু দত্ত, সে পর্যন্ত আমাকে দাবাইয়া রাখিয়াছে! পৃথিবীতে অবিচার বলিয়া কথাটা তবে আছে কেন? যাক, এ আমার ব্যক্তিগত কথা। নিজের সুখ্যাতি নিজের মুখে করিতে আমি বড়ই লজ্জা বোধ করি।
কিন্তু ইহার পরেই প্রমথবাবু দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় উচ্চ-সঙ্গীত সম্বন্ধে যে সত্য ব্যক্ত করিয়াছেন, তাহা অস্বীকার করিবার সাধ্য কাহারও নাই। প্রমথবাবু বলিতেছেন, “ভারতের উচ্চ-সঙ্গীত ভাবসঙ্গত। কেবল সা রে গা মা পর্দা টিপে শ্রুতি-সুখকর শব্দ-পরম্পরা উৎপন্ন করলেই সে সঙ্গীত হয় না। এক কথায় রাগ-রাগিণীর ঠাট বা কাঠাম ভাবগত, পর্দাগত নয়।”
আমিও ইহাই বলি, এবং আমাদের নাগ মহাশয়েরও ঠিক তাহাই অভিমত। তিনি পঞ্চাশোর্ধ্বে লড়াইয়ের বাজারে অর্থশালী হইয়া একটা হারমোনিয়ম কিনিয়া আনিয়া নিরন্তর এই সত্যই প্রতিপন্ন করিতেছেন।
তিনি স্পষ্টই বলেন, সা রে গা মা আর কিছুই নয়, সা’র পরে জোরে চেঁচাইলেই রে হয়, এবং আরও একটু চেঁচাইলে গা হয়, এবং আর ও জোর করিয়া একটুখানি চেঁচাইলে গলায় মা সুর বাহির হয়। খুব সম্ভব, তাঁহারও মতে উচ্চ সঙ্গীত ‘ভাবগত’, ‘পর্দাগত’ নয়। এবং ইহাই সপ্রমাণ করিতে হারমোনিয়মের চাবি টিপিয়া ধরিয়া নাগ মহাশয় ভাবগত হইয়া যখন উচ্চাঙ্গ-সঙ্গীতের শব্দ-পরম্পরা সৃজন করিতে থাকেন, সে এক দেখিবার শুনিবার বস্তু। শ্রীযুক্ত প্রমথবাবুর সঙ্গীত-তত্ত্বের সহিত তাঁহার যে এতাদৃশ মিল ছিল, আমিও এতদিন তাহা জানিতাম না। আর তখন দ্বারদেশে যে প্রকারের ভিড় জমিয়া যায় তাহাতে প্রমথবাবুর উল্লিখিত ওস্তাদজীর রেয়াজের গল্পটির সহিত এমন বর্ণে বর্ণে যে সাদৃশ্য আছে তাহাও লক্ষ্য করিবার বিষয়।
প্রমথবাবু বলিতেছেন, “যে চালের ধ্রুপদ লুপ্তপ্রায় হয়েছে, এবং যা লুপ্ত হয়ে গেলেও দিলীপকুমারের মতে আক্ষেপ করবার কিছুই নেই, আমার মতে সেই হচ্চে খাঁটি উঁচুদরের ধ্রুপদ। এ ধ্রুপদের নাম খাণ্ডারবাণী ধ্রুপদ!”
ঠিক তাহাই। আমারও মতে ইহাই খাঁটি উঁচুদরের ধ্রুপদ। এবং, মনে হইতেছে নাগ মহাশয় সম্প্রতি এই খাণ্ডারবাণী ধ্রুপদের চর্চাতেই নিযুক্ত আছেন। তাঁহার জয় হউক।
বৈশাখের ‘ভারতী’তে দিলীপকুমার কোন্ ওস্তাদজীকে মল্লযোদ্ধা এবং কোন্ ওস্তাদজীর গলায় বেসুরা আওয়াজ বাহির হইবার কথা লিখিয়াছেন, আমি পড়ি নাই কিন্তু অনেকের সম্বন্ধেই যে এই দু’টি অভিযোগই সত্য, তাহা আমিও আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় সত্য বলিয়া জানি। প্রমথবাবু বাঙ্গালাদেশের প্রতি প্রসন্ন নহেন। চাটুয্যে-বাঁড়ুয্যে মশায়ের মুখের গান তাঁহার ভাল লাগে না, কিন্তু বেশিদিনের কথা নয়, এই দেশেরই একজন চক্রবর্তীমশাই ছিলেন, প্রমথবাবুর বোধ করি তাঁহাকে মনে নাই।
প্রমথবাবু লিখিতেছেন, “যে জন্য আলাপের পর ধ্রুপদ, ধ্রুপদের পর খেয়াল এবং খেয়ালের পর টপ্পা ঠুংরির সৃষ্টি হয়েছিল, সেই জন্যই ওই-সবের পর বাঙ্গালা দেশে কীর্তন, বাউল ও সারি গানের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এই শেষোক্ত তিন রীতির সঙ্গীত আমার খাঁটি বাঙ্গালার জিনিস হলেও উচ্চ-সঙ্গীতের তরফ থেকে আমি তাদের বিকাশকে অভিনন্দন করতে পারি না। কেন?”
কেন? কেননা আমরা বলচি যে “তারা অতীতের সঙ্গে যোগভ্রষ্ট!”
কেন? কেননা আমরা বলচি “তারা অনেকটা ভুঁই-ফোঁড়ের মত নিজের বিচ্ছিন্ন অহঙ্কারে ঠেলে উঠেছে।” এমন কি একজনের পাকা চুল এবং আর একজনের ন্যাড়া মাথার অহঙ্কারের উপরেও।
কেন? কেননা, “আজকাল এইটেই বড় মজা দেখতে পাই যে, অতীতকে তুচ্ছ করে কেবল প্রতিভার জোরে ভবিষ্যৎ গড়তে আমরা সকলেই ব্যগ্র!”
শুধু প্রতিভার জোরে ভবিষ্যৎ গড়বে? সাধ্য কি! আমরা পাকা চুল এবং ন্যাড়া মাথা বলচি সে হবে না! বাধা আমরা দেবই দেব!
“আজকাল প্রতীচ্যের অনেক বিজাতীয় সঙ্গীতের স্রোত এমনি ভাবে আমাদের মনের মধ্যে ঢুকে পড়েচে যে, আমরা যখনই আমাদের প্রাচ্য সঙ্গীতের চাল বা প্রকাশ-ভঙ্গীকে এতটুকু বিচিত্র করতে যাই তখনই তা একটা জগাখিচুড়ি হয়ে ওঠে।”
কেন? কেননা আমরা বলচি, তা জগাখিচুড়ি হয়ে ওঠে!
কেন? কেননা আমরা বলচি,—একশ’বার বলচি, ও দু’টো তেল-জলের মত পরস্পরবিরোধী।
আমরা পাকা চুল এবং ন্যাড়া মাথা এক সঙ্গে গলা ফাটিয়ে বলচি ও-দু’টো অগুরু, চন্দনের সঙ্গে ল্যাভেন্ডার, ওডিকলোনের মত পরস্পরবিরোধী! উঃ! অগুরু চন্দন ও ল্যাভেন্ডার ওডিকলোন! এতবড় যুক্তির পরে দিলীপকুমারের আর কি বক্তব্য থাকিতে পারে আমরা তা ভাবিয়া পাই না।
অতঃপর বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় নালিশ করিতেছেন, “খাড়া পর্দা হতে খাড়া পর্দার উপরে সেইভাবে লাফিয়ে পড়া, যেভাবে কোন বীরপুঙ্গব স্বর্ণলঙ্কার এক ছাদ হতে আর এক ছাদে লাফিয়ে পড়েছিলেন … ইত্যাদি ইত্যাদি।”
ইহা অতিশয় ভয়ের কথা! এবং প্রমথবাবুর সহিত আমি একযোগে ঘোরতর আপত্তি করি। যেহেতু ছাদের উপর নৃত্য শুরু করিলে আমরা, যাহারা নীচে সুনিদ্রায় মগ্ন, তাহাদের অত্যন্ত ব্যাঘাত ঘটে। তদ্ভিন্ন অন্য আশঙ্কাও কম নয়। কারণ আমরা যদিচ ন্যাড়ামাথা, কিন্তু স্বর্ণলঙ্কার প্রতি যিনি বিরূপ তিনি যদি বাঁড়ুয্যে মশায়ের পাকা চুলকে গায়ের সাদা লোম ভাবিয়া ছাদে লম্ফ দিতে বাধ্য করেন, ত বিপদের অবধি থাকিবে না।
প্রমথবাবু কহিতেছেন, “ধ্রুপদ ও খেয়াল দুই-ই ভারত-সঙ্গীতের দু’টি বিচিত্র ও মৌলিক বিকাশ, কিন্তু এ দুয়ের মধ্যে ধ্রুপদই যে অধিক সৌন্দর্যশালী, তা নিরপেক্ষ সঙ্গীতজ্ঞ মাত্রেই স্বীকার করবেন।”
স্বীকার করিতে বাধ্য! স্বীকার না করিলে তিনি হয় নিরপেক্ষ নহেন, না হয় সঙ্গীতজ্ঞ নহেন। হেতু? হেতু এই যে, একজন পাকাচুল এবং একজন ন্যাড়ামাথা উভয়ে সমস্বরে বলিতেছি! জোর করিয়া বলিতেছি! ইহার পরেও যে সংসারে কি যুক্তি থাকিতে পারে আমরা ত ভাবিয়া পাই না! আমরা পুনশ্চ বলিতেছি যে, “ধ্রুপদ হচ্চে সব রীতির গানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ, গরিষ্ঠ ও পূজ্যতম!” দুনিয়ায় এমন অর্বাচীন কে আছে যে, এতবড় অখণ্ড যুক্তির সম্মুখেও লজ্জায় অধোবদন না হয়! তবু ত শক্তিশেল হানিলাম না। বাঁড়ুয্যে মহাশয়ের ‘মুখপাতের’ যুক্তিটা চাপিয়া গেলাম।
আমাদের ওস্তাদদের সম্বন্ধে দিলীপকুমার বলিয়াছেন যে, আমরা ছাত্রদের পক্ষে মাছিমারা নকলের পক্ষপাতী, অর্থাৎ ছাত্রদের আমরা গ্রামোফোন করিয়াই রাখিতে চাই, দিলীপকুমারের এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
প্রমথবাবু ত স্পষ্টই বলিতেছেন, “আমি ত কোন দিনই আমার ছাত্রদের নিজস্ব ব্যক্তিত্বকে দাবিয়ে রাখবার চেষ্টা করিনি,—কেন না, স্বাধীন স্ফূর্তির অবসর না দিলে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়।…ইত্যাদি।”
আমার নিজের ছাত্রদের সম্বন্ধেও আমার ঠিক ইহাই অভিমত। এবং শিক্ষাদানের যথার্থ উদ্দেশ্য বিফল হইয়া যায় তাহা আমরা কেহই চাহি না। (অবশ্য কিঞ্চিৎ অবান্তর হইলেও এ কথা বোধ করি এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আমার নিজের ছাত্র নাই। কারণ, যথেষ্ট চেষ্টা করা সত্ত্বেও কোন ছাত্রই আমার কাছে শিখিতে চাহে না। লোকের মুখে-মুখে শুনিতে পাই, এমন দুর্বিনীত ছাত্রও আছে, যে বলে যে ওঁর কাছে শেখার চেয়ে বরঞ্চ প্রমথবাবুর কাছে গিয়া শিখিব।)
সে যাই হউক, কিন্তু ছাত্রদের সম্বন্ধে আমরা উভয়েই দিলীপকুমারের অভিযোগের পুনঃ পুনঃ প্রতিবাদ করি। এইরূপ হীন পন্থা আমরা কেহই অবলম্বন করি না। উনিও না, আমিও না।
আরও একটা কথা। আমাদের ওস্তাদদের মুদ্রাদোষ সম্বন্ধে দিলীপকুমার যে-সকল মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছেন, তাহা নিতান্তই অসার এবং অসঙ্গত। প্রমথবাবু যথার্থই বলিয়াছেন, “মানুষ যখন কোন একটা ভাবের আবেশে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে, তখন আর জ্ঞান থাকে না।” সত্যই তাই। জ্ঞান থাকে না। আমাদের নাগমশায় যখন খাণ্ডারবাণী ধ্রুপদ চর্চা করেন দিলীপকুমার আসিয়া তাহা স্বচক্ষে একবার দেখিয়া যান! বাস্তবিক, থাকে না!
কিন্তু প্রবন্ধ দীর্ঘ হইয়া পড়িতেছে, আর না। বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের প্রত্যেক ছত্রটি তুলিয়া দিবার লোভ হয়, কিন্তু তাহা সম্ভবপর নহে বলিয়াই বিরত রহিলাম। তাঁহার পক্ষিসমাজের ‘এক ঘরে’ হওয়ার বিবরণটিও যেমন জ্ঞানগর্ভ, তেমনি বিস্ময়কর। শরীর রোমাঞ্চিত হইয়া উঠে। পরিশেষে প্রবন্ধ সমাপ্তও করিয়াছেন তেমনি সারবান কথা বলিয়া—“আসল কথা, সকল বিষয়েই অধিকারীভেদ আছে।” অর্থাৎ, গান গাহিতে জানিলেই যে প্রবন্ধ লিখিতে হবে, এবং এক কাগজে না ছাপিলে আর এক কাগজে ছাপিতেই হইবে, তাহা নয়,—অধিকারীভেদ আছে।
————-
(‘ভারতবর্ষ’, ১৩৩১ ফাল্গুন সংখ্যা হইতে গৃহীত।)