2 of 3

২.০৫ বাবুল বুঝতে পারেনি

বাবুল বুঝতে পারেনি, কত বড় বিপদের ঝুঁকি নিয়ে সে সস্ত্রীক বেরিয়েছিল নৌকো যাত্রায়। দু-তিন দিন ঝড় বৃষ্টির পর একদিনের জন্য সাময়িকভাবে আবহাওয়া শান্ত হলেও আকাশে আবার জমেছিল লাল মেঘ। ঢাকা পৌঁছোবার আগেই উঠলো ঝড়।

যেন ঝড় নয়, প্রলয়ের নাচ। দুনিয়া অন্ধকার, চতুর্দিকে প্রচণ্ড গতির শব্দ। তীরে ভেড়াবার প্রাণপণ চেষ্টা করেও কিছু হলো না, তার আগেই উল্টে গেল তাদের নৌকো। এইটুকুই সৌভাগ্যের বিষয় যে কূল খুব দূরে ছিল না, বাবুল ও মঞ্জু দু’জনেই সাঁতার জানে, কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে গেল, কিন্তু সঙ্গে করে আনা বাক্স-প্যাঁটরায় সাজানো তাদের অস্থায়ী সংসার ভেসে গেল জলে। মঞ্জু তার ছোট গয়নার বাক্সটিও সামলাতে পারেনি, কারণ সে সর্বক্ষণ তার শিশু সন্তানকে দু হাতে উঁচু করে ধরেছিল।

নিঃস্ব অবস্থায়, সিক্ত বসনে ওরা ধানমণ্ডির বাড়িতে এসে শুনলো যে বেতারে ঘোষণা করা হয়েছে, চট্টগ্রাম, নোয়াখালি, বরিশালে ঝড়ের তাণ্ডবে সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড হয়ে গেছে, মানুষই নাকি মরেছে দশ-বিশ হাজার। কত হাজার পরিবার যে নিরাশ্রয় তার ইয়ত্তা নেই, চতুর্দিকে ভাসছে লাশ।

মঞ্জু হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে আল্লার কাছে মোনাজাত করতে লাগলো। পরম করুণাময় আল্লা যে তার সন্তানটিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, এজন্যই সে ধন্য।

ধানমণ্ডির বাড়িতে বাবুলের বাবা-মা উপস্থিত নেই, তাঁরা কয়েকদিনের জন্য গেছেন টাঙ্গাইল। বাবুলরা কোনো খবর দিয়ে আসেনি। বাবুলের বড় ভাই আলতাফ জার্মানি থেকে সদ্য ফিরেছে, সে আছে এখানে। বাবুল-মঞ্জুকে নিরাপদে পৌঁছোতে দেখে সে খুশী হলেও চিন্তিত হয়ে পড়লো বাবা-মায়ের জন্য। টাঙ্গাইলের কোনো খবর নেই। টেলিফোনে কানেকশান পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত রাত দশটায় আলতাফ আর বাবুল দু ভাই মিলেই গেল স্থানীয় থানায়, সেখানে তাদের মতন আরও অনেক উদ্বিগ্ন মানুষ এসে ভিড় করেছে। ঢাকা শহরে চাকরি ব্যবসায়ের সূত্রে যারা থাকে তাদের অনেকেরই এখনো নাড়ির যোগ আছে গ্রামের সঙ্গে। থানায় ওয়্যারলেসে বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ করে খবর আনানো হচ্ছে। তাতে জানা গেল টাঙ্গাইলে বিশেষ কিছু ঘটেনি, সেখানে হতাহতের কোনো সংবাদ নেই।

বঙ্গোপসাগরের ঝড় প্রায় প্রত্যেক বছরই বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে একবার না একবার প্রবলভাবে। হানা দেয়। তবে কলকাতা বা ঢাকার গায়ে তেমন ঝাপ্টা লাগে না, মূল আঘাতটা পড়ে এদিকে চট্টগ্রাম, ওদিকে মেদিনীপুরে। দু-এক দিনের মধ্যেই জানা গেল, এবারে ঝড়ের মূল আঘাত পড়েছে চট্টগ্রাম-নোয়াখালিতে, ওদিকে মেদিনীপুর নিষ্কৃতি পেলেও ত্রিপুরার বহু ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে গেছে।

সরকারি হিসেব মতন পূর্ব পাকিস্তানে নিহতের সংখ্যা ১৬ হাজার, বেসরকারি মতে ২৫ থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে। এই বিরাট বিপর্যয়ের তুলনায় সরকারি সাহায্যের প্রায় কিছুই উদ্যোগ নেই। গভর্নর মোনেম খাঁ প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের কাছে ওয়াদা করে এসেছেন বে-আদব বাঙালীদের তিনি দমন করবেন, বাঙালীদের জীবন রক্ষার কোনো দায় নেই তাঁর। তিনি নিজে যে বাঙালী সেই পরিচয়টাও গা থেকে ঘষে তুলে ফেলতে চান।

পৃথিবীর সমস্ত পত্র-পত্রিকায় এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের খবর ও ছবি ছাপা হবার ফলে ঘটনার সাত দিন পর প্রেসিডেন্ট আইয়ুব করাচি থেকে উড়ে এলেন ঢাকায়। একবার না এলে ভালো দেখায় না। কিছুদিন আগে সামরিক শাসন তুলে দিয়ে তিনি সংবিধান সম্মত রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। তাঁর নিজেরই তৈরি সংবিধান, তাঁর হাতেই সমস্ত ক্ষমতা।

রাজনৈতিক দলগুলি সব ছত্রভঙ্গ। উনিশশো আটান্নর সেই কালরাত্রির পর দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পার্টি অফিসগুলি তালাবন্ধ করে, কাগজপত্র পুড়িয়ে, নেতাদের সব জেলে ভরে এমন অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছিল যাতে পাকিস্তানে আর কোনোদিন রাজনৈতিক দলগুলি মাথা তুলতে না পারে। সামরিক শাসনের অত্যাচারে কেউ কোনো আন্দোলন করতেও সাহস পায়নি। সরকার থেকে প্রচার করা হতে লাগলো যে রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতি, মন্ত্রীদের স্বজন-পোষণ ও অকর্মণ্যতার জন্যই দেশের এই দুরবস্থা। দোকানদারদের ওপর জোর-জুলুম করে কমানো হলো জিনিসপত্রের দাম। বন্ধ করে দেওয়া হলো বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তায় রাস্তায় আর মিছিল নেই, যখন তখন পুলিস-জনতায় খণ্ডযুদ্ধ নেই, সাধারণ লোকরা অনেকেই ভাবলো, সুখের চেয়ে স্বস্তি ভালো। রাজনৈতিক দলগুলির পরস্পরের খেয়োখেয়ি, যখন তখন মন্ত্রিসভার পতন, আইন শৃঙ্খলার অবনতি, এ সবের হাত থেকে তো মুক্তি পাওয়া গেছে, তা হলে মিলিটারিই তো ঠিক মতন দেশ চালাতে পারে দেখা যাচ্ছে। তিক্ত বুদ্ধিজীবীরা ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে ভাবলো, এ দেশ গণতন্ত্র পাওয়ার যোগ্যই নয়!

কয়েক বছরের মধ্যেই কিন্তু মনোভাব বদলে গেল রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খাঁর। তিনি নিজের পছন্দ মতন সংবিধান চালু করেছেন, তাতে তাঁর সুবিধে মতন নিবাচন ব্যবস্থাও আছে। কিন্তু নির্বাচন করতে গেলে তো কয়েকটা দল লাগে। প্রথমে তিনি বেসিক ডেমোক্রেসির নামে একটা দলহীন নির্বাচন করলেন, সেটা বিশেষ সুবিধের হলো না, হাসাহাসি করতে লাগলো সবাই। তখন তিনি বললেন, দল চাই, পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলি সব গেল কোথায়? আগেকার নেতাদের জেল থেকে মুক্তি দাও, আবার দলাদলি করতে বলো!

আইয়ুব নিজেও চাইলেন একটা সরকারি দল গড়তে। তাঁকেও তো নিবার্চনে দাঁড়াতে হবে, একটা দলীয় টিকিট চাই। একেবারে নতুন দল গড়ার অনেক ঝামেলা, তাই তাঁর সহকারীরা পরামর্শ দিল পুরোনো মুসলিম লীগটাকেই কজা করে নেওয়া হোক। পাকিস্তান সৃষ্টির সঙ্গে মুসলিম লীগ নামটি অঙ্গাঙ্গী জড়িত। যদিও চুয়ান্ন সালের নির্বাচনে দারুণভাবে হেরে গিয়ে সেই মুসলিম লীগ বর্তমানে একেবারে ধরাশায়ী। তবুও, ধর্মীয় উন্মাদনা জাগাবার প্রয়োজন হলে ঐ নামটি কাজে লাগানো যাবে। তাই আইয়ুব ঐ দলের একটি অংশ দখল করে নিয়ে তার নতুন নাম দিলেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ।

পূর্ব পাকিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই বারবার উত্তাল হয়ে উঠে সরকার কাঁপিয়ে দিয়েছে, এবারে তারও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো। গভর্নর মোনেম খাঁ গোপন পথে প্রচুর টাকা খরচ করে ও দালাল লাগিয়ে ছাত্রদের মধ্যেও নতুন একটি সরকারি পার্টি তৈরি করালেন। এর নাম ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফেডারেশান। এই পার্টির ছেলেরা ফেল করলেও পাস করে যাবে, এরা কোনো সহপাঠীর পেটে ছুরি বসালেও এদের কোনো শাস্তি হবে না, কোন্ হস্টেলে কোন্ ছাত্রেরা জায়গা পাবে তা এরাই ঠিক করবে, অধ্যাপকরা এদের হুকুম শুনতে বাধ্য, কবে কবে স্কুল-কলেজ খোলা থাকবে বা বন্ধ হবে, তাও এরাই বলে দেবে। যে ছাত্র অতি উত্তম সরকার-ভক্তি দেখাবে সে এক হাজার টাকা পর্যন্ত জলপানি পাবে। সুতরাং এই নতুন ছাত্র পার্টিতে সদস্য কম হলো না।

জেল থেকে বেরিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হোসেন সোহরাওয়ার্দি এক নতুন চাল চাললেন আইয়ুবের ওপর। তিনি বৃদ্ধ হয়েছেন, শরীর অশক্ত, তবু মনোবল প্রচণ্ড। আইয়ুব রাজনৈতিক দলগুলিকে পুনর্জীবন দিতে আগ্রহী। সোহরাওয়ার্দি প্রস্তাব দিলেন,কোনো রাজনৈতিক দলেরই আলাদা অস্তিত্ব বজায় রাখার প্রয়োজন নেই।

আওয়ামি লীগ থেকে মৌলানা ভাসানী তাঁর দলবল সমেত বেরিয়ে গিয়ে ন্যাপ নামে পার্টি গঠন করায় আওয়ামি লীগ দুর্বল হয়ে গেছে। বস্তুত ন্যাপের জন্যই কেন্দ্রে সোহরাওয়ার্দি মন্ত্রিসভার পতন হয়েছে এবং সামরিক শাসক আইয়ুবের ক্ষমতায় আসার পথ সুগম হয়েছে। এখন আওয়ামি লীগ একা আইয়ুবের শক্তির সঙ্গে যুঝতে পারবে না। মৌলানা ভাসানীর দলকেও বেশি শক্তিশালী হতে দেওয়া যায় না।

ভাসানীর দলও অবশ্য তেমন শক্তিশালী নেই, কারণ বামপন্থীদের মধ্যেও ভাঙন এসেছে। চীন ও ভারতের সীমান্ত সংঘর্ষ হঠাৎ যুদ্ধের রূপ নেবার পর সারা পৃথিবীতেই বামপন্থী-দক্ষিণপন্থী চিন্তায় একটা রদবদল শুরু হয়ে যায়। প্রাক্তন ভারতবর্ষ ভেঙে দুটি রাষ্ট্র তৈরি হবার ফলে আমেরিকা গাঁটছড়া বাঁধে পাকিস্তানের সঙ্গে, আর ইণ্ডিয়ার সঙ্গে সোভিয়েত দেশ ও চীনের গলায় গলায় বন্ধুত্ব। জোট-নিরপেক্ষতার নীতি ঘোষণা করলেও ভারতের মাথাটা হেলে থাকে সমাজবাদী ব্লকের দিকে। হিন্দী-চীনী ভাই ভাই রব আকাশে বাতাসে মুখরিত হয়েছে, চৌ-এন-লাই ভারতবর্ষে এসে নিজেও ঐ ধ্বনি তুলেছেন। তারপরে এক সময় হঠাৎ ম্যাকমোহন লাইনের ব্যাখ্যা নিয়ে একেবারে যুদ্ধ বেঁধে গেল, অপ্রস্তুত, হঠকারী ভারত মেনে নিল অসম্মানজনক পরাজয়। চীনা সৈন্য ভারতের অভ্যন্তরে অনেকখানি ঢুকে পড়ে যেন বলতে চাইলো, দ্যাখ তোদের গালে থাপ্পড় মারতে পারি কি না! তারপর সত্যি সত্যি থাপ্পড় না মেরে শুধু একটু চুন কালি মাখিয়ে সেই সৈন্যবাহিনী আবার স্বেচ্ছায় ফিরে গেল নিজেদের নির্ধারিত সীমান্তের ওপারে।

শত্রুর যে শত্রু, সে আমার বন্ধু, এই প্রতিষ্ঠিত নীতিতে বিশ্বাস করে পাকিস্তান এই সময় মার্কিন বাহুবন্ধন ছাড়িয়ে কুঁকলো চীনের দিকে। আমেরিকাও চীন-ভারত যুদ্ধে ভারতকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে, ভবিষ্যৎ আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এখন সে ভারতকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সুসজ্জিত করতে চায়। ওদিকে সোভিয়েত দেশ আর চীনের মধ্যে আদর্শগত ফাটল ধরেছে, তাই চীন-ভারত যুদ্ধে সোভিয়েত দেশ ভারতের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করেনি। ভারতের এখন বেশ আদুরে ছেলের মতন অবস্থা, আমেরিকা ও রাশিয়া এই দুই মহাশক্তির কাছ থেকেই গরম গরম উপহার পাচ্ছে। সুতরাং চীন এই অবস্থায় পাকিস্তানের বন্ধুত্বের হাতকে স্বাগত জানালো। থাক না পাকিস্তানে স্বৈরাচারী সামরিক শাসন, তবু চীনের একটা বন্ধু তো চাই। তা ছাড়া, চীনের এখন বাসনা পাকিস্তানের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা।

পাকিস্তান সরকার ও চীনের বন্ধুত্বের সূচনায় পাকিস্তানের উগ্র বামপন্থীরা উল্লসিত হলো। তারা চীনের সমর্থক, এতকাল তারা পাকিস্তানের সামরিক শাসনের তীব্র বিরোধিতা করলেও এখন তারা হয়ে পড়লো সরকার সমর্থক। চীনের সঙ্গে যার ভাব, সে তো চীনাপন্থীদের শত্রু হতে পারে না। এই সব বামপন্থীরা মৌলানা ভাসানীর ন্যাপের ছত্রছায়াতেই সমবেত হয়েছিল, এবারে তাদের মধ্যেও দেখা দিল দুটি ভাগ।

কোন একটি দল এককভাবে আইয়ুব খানের সঙ্গে নিবার্চনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিততে পারবে না বলেই সোহরাওয়ার্দি সব দলের পৃথক অস্তিত্ব বিলোপ করে যুক্তফ্রন্ট গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর আরও একটি উদ্দেশ্য ছিল। অনেক দল থাকলেই অনেক নেতা। একটি মাত্র দল হলে তার সর্বাধিনায়ক একজনই হবে, সেই সর্বাধিনায়ক তিনি ছাড়া আর কে? একথাও তো ঠিক, পাকিস্তানের দুই অংশেই তাঁর পরিচিতি সবচেয়ে বেশি, তিনি পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নটিতে কখনো খুব জোর দেননি বলে পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষের কাছেও তিনি গ্রহণযোগ্য। আইয়ুবের বদলে যদি কেন্দ্রের ক্ষমতার শিখরে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আর কারুকে বসাতে হয়, তাহলে সোহরাওয়ার্দির চেয়ে যোগ্যতর আর কেউ নেই। পূর্ব পাকিস্তানের আর কোনো নেতাকে পশ্চিমীরা মানবে না।

এই যুক্তফ্রন্ট গড়ার প্রস্তাবে মৌলানা ভাসানী মন থেকে সায় দিতে পারলেন না। তিনি পোড়খাওয়া, অভিজ্ঞ রাজনীতিক, তিনি সোহরাওয়ার্দির আসল চালটা বুঝতে পেরেছেন। এটা তাঁকে ছাড়িয়ে সোহরাওয়ার্দির অনেক উঁচুতে উঠে যাওয়ার প্রয়াস। কিন্তু সর্বদলের সমন্বয় ব্যাপারটা আদর্শ হিসেবে শুনতে খুব ভালো, চুয়ান্ন সালে ফজলুল হকের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে জিতেছিল, মাত্র ন’ বছর আগেকার কথা, দেশবাসীর নিশ্চিত মনে আছে। এখন এই যুক্ত দল গঠনের বিরোধিতা করলে অনেকেই তাঁকে ক্ষুদ্র স্বার্থের কারবারি মনে করবে, তাই মৌলানা ভাসানী গররাজি হয়েও প্রস্তাবটি মেনে নিলেন।

আওয়ামী লীগকে পুনর্জীবিত না করে যুক্তফ্রন্ট গঠনের আহ্বান আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি শেখ মুজিবর রহমানেরও মনঃপূত নয়। আওয়ামী লীগই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। তাছাড়া যুক্তফ্রন্ট গড়তে গেলে নুরুল আমীন, নাজিমুদ্দিনের মতন মানুষদের সঙ্গেও হাত মেলাতে হয়। বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের সময়ে এই নুরুল আমীনের আদেশেই ছাত্রদের ওপর গুলি চলেছিল। আর নাজিমুদ্দিনের বিশ্বাসঘাতকতার তো শেষ নেই। বিক্ষুব্ধ হয়ে থাকলেও শেখ মুজিবুর রহমান এই প্রস্তাব একেবারে নস্যাৎ করে দিতে পারলেন না, কারণ মৌলানা ভাসানী পৃথক দল গড়ার পরে সোহরাওয়ার্দিকেই তিনি লীডার বলে মানেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগের আর প্রধান দুই নেতা আতাউর রহমান খান এবং আবুল মনসুর আহমদ, এঁরা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীও বটে, এঁরা সোহরাওয়ার্দির নীতির প্রবল সমর্থক। ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক মিঞাও ঐ পক্ষে। শেখ মুজিবও নিমরাজি হলেন, গড়া হলো দলহীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। কিন্তু কাজের কাজ বিশেষ এগোল না, যখন তখন মতবিরোধ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। মওলানা ভাসানী কাকে যেন বললেন, ঐডা হইল নাথিং ডুয়িং ফ্রণ্ট!

এই দলের সমর্থনে পাকিস্তানের দু’দিকেই দিনের পর দিন প্রচার অভিযান চালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন সোহরাওয়ার্দি। রাজশাহীতে সভা শেষ করেই রাত্রি দশটায় আত্রাই, সেখান থেকে গাড়িতে করে শান্তাহারে রাত একটায় মিটিং, তারপর ভোর চারটেয় আবার পার্বতীপুর। এর পর তিনি একটু বিশ্রাম নিতে গেলেন। বাইরে তখনও গোলমাল চলছে, একজন কেউ হেঁকে বললো, ওহে, নেতা এই মাত্র শুয়েছেন, একটু ঘুমাতে দাও, তোমরাও ঘুমায়ে নাও! জানলার বাইরে থেকে একজন বললো, না আর ঘুমাবো না। একবার ঘুমায়েই সব হারিয়েছি। গণতন্ত্র ফিরায়ে না আনা পর্যন্ত ঘুমাবো না!

কথাটা শুনেই সোহরাওয়ার্দি উঠে পড়ে জানলা দিয়ে মুখ বার করে বললেন, ঠিক বলেছো। এই উঠে পড়লাম, আর ঘুমাবো না!

কিন্তু সোহরাওয়ার্দির বয়েস সত্তর পেরিয়ে গেছে। এতটা ধকল সইবে কেন। অসুস্থ হয়ে পড়ে তিনি চিকিৎসার জন্য কিছুদিনের জন্য চলে গেলেন বিদেশে। যাবার আগে তিনি তাঁর দলের সেক্রেটারিকে ডেকে বলে গেলেন, মাথা গরম করে কিছু করে বসো না। আমি ফিরে আসি, তারপর যদি অন্য কিছু করতে হয় তো ভেবে দেখা যাবে!

সোহরাওয়ার্দি আর ফিরলেন না। ডিসেম্বরের শীতে আচম্বিতে দুঃসংবাদ এলো, বেইরুতের এক হোটেলে তাঁর ইন্তেকাল হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দির অধিকাংশ আত্মীয়-স্বজনই থাকে করাচি ও লাহোরে, যারা অনেকে বাংলা বলতেই পারে না। সেই হিসেবে তিনি হয়তো পুরোপুরি বাঙালী ছিলেন না, যদিও বাংলার মাটির সঙ্গে তাঁর যোগ অবিচ্ছেদ্য। সোহরাওয়ার্দি পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্যতম স্রষ্টা। অবশ্য তিনি চেয়েছিলেন তাঁর স্বপ্নের পাকিস্তান হবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সারা জীবন লড়াই করে গেলেন। পারিবারিক অধিকারে তাঁর আত্মীয়েরা চাইলো পশ্চিম পাকিস্তানেই তাঁকে দাফন করা হোক। কিন্তু ভালোবাসার দাবি অনেক বড়। সেই দাবিতে তাঁর লাশ আনা হলো ঢাকায়। এক বিশাল জনসমুদ্র চোখের জলের ধারায় তাঁর প্রাণশূন্য দেহকে অভ্যর্থনা জানালো বিমানবন্দরে। তারপর ‘ঘোড় দৌড় ময়দানে পাঁচ লক্ষ লোকের সমাবেশে হলো তাঁর জানাজা।

তাঁর কবরের জায়গা নিয়ে হঠাৎ শুরু হয়ে গেল মতবিরোধ। কিছুদিন আগেই শের-এ বাংলা ফজলুল হকের দেহান্ত হয়েছে, তাঁর কবরের পাশেই সোহরাওয়ার্দির কবর থাকা সবদিক থেকেই সমীচীন। কিন্তু একজন আপত্তি তুললো, ফজলুল হকের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দির কোনোদিন মতের মিল হয়নি, তা হলে এখন দু’জনে কাছাকাছি থাকবেন কী করে? দু’জনের আত্মাই, যদি অশান্ত হয়ে ওঠে? শান্ত, গম্ভীর, শোকের পরিবেশ লোকজনের চ্যাঁচামেচিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেখে মুরুব্বিরা ঠিক করলেন, তাহলে কিছুটা দূরত্ব রাখা হোক। ফিতে দিয়ে মেপে ফজলুল হকের কবরের থেকে প্রায় একশো হাত দূরত্বে ভূগর্ভে নামিয়ে দেওয়া হলো সোহরাওয়ার্দির মরদেহ।

মৃত্যুর পরেও দুই নেতা যদি পাশাপাশি না থাকতে পারেন তাহলে জীবিত অবস্থায় অন্যান্য নেতারা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবেন কী করে? মরহুম সোহরাওয়ার্দির শোককাল কাটতে কাটতেই তাঁর স্বপ্নের যুক্ত দল ভাঙতে শুরু করে দিল। তিনি তাঁর সেক্রেটারিকে বলেছিলেন, তিনি ফিরে না-আসা পর্যন্ত যেন আলাদা আলাদা ভাবে রাজনৈতিক দলগুলিকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা না হয়। তিনি ফিরে না আসুন, তাঁর লাশ তো এসেছে। শেখ মুজিবুর রহমান তড়িঘড়ি নিজের বাসভবনে প্রাক্তন আওয়ামি লীগের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং ডাকলেন। এবারে তিনি আতাউর রহমান বা আবুল মনসুরের প্রতিবাদ বা নির্লিপ্ততার তোয়াক্কা করলেন না, তাঁরা উপস্থিত না হলেও ক্ষতি নেই। প্রথমে সোহরাওয়ার্দির রুহের মাগফেরাত প্রার্থনা করা হলো। তারপরেই সোহরাওয়ার্দির সঙ্গে সম্পর্ক শেষ। যুক্ত দল থাকুক বা না থাকুক, আওয়ামি লীগকে পুনর্জীবিত করা হবে এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপ পৃথকভাবে চালানো হবে, কারণ একটি সুসংগঠিত দল ছাড়া কোনো আন্দোলন চালানো যায় না। তুমুল হর্ষধ্বনির ও জিন্দাবাদ পুকারে প্রস্তাব গৃহীত হয়ে গেল। এবারে শেখ মুজিবুর রহমান হলেন আওয়ামি লীগের একচ্ছত্র নেতা।

মৌলানা ভাসানীও তক্কে তক্কে ছিলেন। তিনি যুক্তদল ভাঙার অপবাদের বোঝাটা পুরোপুরি নিজের কাঁধে নিতে চাননি। শেখ মুজিবকে তিনি ভালোভাবেই চেনেন, তিনি অপেক্ষা করছিলেন। আওয়ামি লীগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠবার পরেই তিনি ন্যাপকে চাঙ্গা করে তুললেন।

এখন এঁরা নিজের নিজের পার্টিকে সংগঠিত করে তোলার কাজে ব্যস্ত। এখন খণ্ড প্রলয়ে বিপর্যস্ত মানুষের সাহায্য ও ত্রাণে এগিয়ে আসার সময় কোথায় তাঁদের? বছরখানেক আগেই। নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভয়াবহ দাঙ্গা হয়ে গেছে। এরকম একতরফা, নৃশংস দাঙ্গা পাকিস্তানেও আগে কখনো হয়নি, সেই সময় বড় বড় নেতারা শান্তি কমিটি গড়েছেন, রিলিফের ব্যবস্থা করেছেন যথাসাধ্য। প্রত্যেক বছর এরকম কী করে করা যায়? মানুষ তো মরবেই, এদেশে অকাল মৃত্যুই অধিকাংশ মানুষের নিয়তি।

অবশ্য, বেশি উদারতা দেখিয়ে আইয়ুব যদি হঠাৎ জনপ্রিয়তা আদায় করে ফেলেন তবে তা রোখার জন্যও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেদিকেও রাজনৈতিক নেতারা চোখ রেখেছেন। এ বছর না হোক, তার পরের বছর, কিংবা তারও পরের বছর নিবার্চন তো হবেই, তখন এই সব প্রশ্ন উঠবে। তাই একটি-দুটি রিলিফের জন্য মিছিল বেরুতে লাগলো রাস্তায়।

আলতাফ অনেকদিন দেশছাড়া, সে অনেক কিছুই জানে না। সকালবেলা বাবুল তার বড় ভাইকে এই সব বৃত্তান্ত শোনাচ্ছিল।

আওয়ামি লীগ ভেঙে ন্যাপ গড়ার সময় যে হাঙ্গামা হয় তাতে গ্রেফতার হয়েছিল আলতাফ। ছাড়া পেয়েছিল অবশ্য আড়াই মাসের মধ্যেই। কিন্তু জেলের জীবন আলতাফের একেবারেই সহ্য হয়নি। সে কাপুরুষ নয় মোটেই, কিন্তু আরাম পরায়ণ। সে সারাদিন যুদ্ধ করতে রাজি আছে, যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দিতেও সে পিছু-পা নয়, তবে বেঁচে থাকলে সে সন্ধেবেলা ভালো সিগারেট টানতে চায়, রাত্তিরে সে নরম বিছানায় ঘুমোত চায়। জেলের খাবার খেয়ে সে রক্ত-আমাশায় প্রায় মরতে বসেছিল। সুতরাং আটান্ন সালে যখন আইয়ুব সামরিক শাসন জারি করেন তখনই সে আবার গ্রেফতার হবার ভয়ে দেশত্যাগী হয়। সবচেয়ে সহজ পালিয়ে যাবার জায়গা হলো পশ্চিম জার্মানি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সে দেশের শুধু বয়স্ক পুরুষরাই নয়, কিশোররা পর্যন্ত নিহত হয়েছে অসংখ্য, তাই এখন জার্মানিতে মেয়েদের তুলনায় পুরুষদের সংখ্যা ঢের কম। কাজের লোকের খুব অভাব। আলতাফের মতন একজন সুস্বাস্থ্যবান যুবককে পেলে তারা যে লুফে নেবে এ তো জানা কথা। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আলতাফের মতন হাজারে হাজারে যুবক কাজের সন্ধানে ছুটে গেছে জার্মানিতে।

এই ক’বছরে বেশ পরিবর্তন হয়েছে আলতাফের। আগে সে ছিল দারুণ ছটফটে, যখন তখন হেসে উঠতো খুব জোরে। তার কথাবার্তায় এমন একটা জেদী ভাব ছিল যে এদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত সে আর অন্য কিছু চিন্তা করতে চায় না। এখন সে অনেক শান্ত হয়েছে, অন্যান্য অনেক বিষয় নিয়ে সে এখন বেশি মগ্ন। তার চেহারাও আগের মতন সুন্দর নেই, কোমরটি স্ফীত হয়েছে অনেকখানি, জার্মান গোরুর উত্তম মাংস ও অঢেল বীয়ার তাকে উপহার দিয়েছে মেদ।

আলতাফ ছোট ভাইকে জিজ্ঞেস করলো, তুই এখন কোন্ পার্টি করস? এখনও মুজাফফর সাহেবের সাথে লেগে আছিস নাকি?

বাবুল দু হাত তুলে লঘু কণ্ঠে বললো, আমি এখন আর কোনো পাট্টি পুটির মধ্যে নাই। চাচা আপন প্রাণ বাঁচা! বিয়ে করেছি, একটা বাচ্ছা হয়েছে।

আলতাফ বললো, হ্যাঁ, তোর এখন কিছুদিন মন দিয়ে সংসার ধর্ম পালন করাই উচিত। মঞ্জু তো এখনো ভালো করে সামলায়ে উঠতে পারে নাই। সেদিন যখন এলি মেয়েটার মুখের অবস্থা দেখে আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। বড় বাঁচা বেঁচে গেছিস! খোকাটার যে কিছু হয় নাই।

–মঞ্জুর খুব মনের জোর। দেখতে নরম সরম হইলে কী হয়।

–কত টাকার গয়না ছিল সঙ্গে?

–ও কথা বাদ দাও। যা গেছে তা তো গেছেই। আমার বিবিও তা নিয়ে কান্নাকাটি করেনি। সব গয়নার চেয়েও ছেলেটার জীবনের দাম বেশি।

–বাবুল, তুই কি ঐ গ্রামের কলেজেই মাস্টারি করবি নাকি?

–তা ছাড়া আর কী করি! শহরে থাকলেই বিপদ, পুরানো বন্ধুরা টানাটানি করবে। মঞ্জুও ঢাকায় থাকতে চায় না।

–তুই জার্মানিতে চলে আয়। আমি সব ব্যবস্থা করে দেবো। তুই ভালো কাজ পেয়ে যাবি।

প্রস্তাবটা একেবারে উড়িয়ে দিয়ে, হেসে উঠে বাবুল বললো, আমি বিদেশে যাবো? কী যে বলো? আমি হইলাম অকর্মার চেঁকি। ছেলে-পড়ানো ছাড়া আর কিছুই পারি না। বিদেশে সব সময় জুতা-মুজা পরে থাকতে হয়, মুজা পরলেই আমার পায়ে ফোস্কা পড়ে।

আলতাফ তার কাঁধে চাপড় মেরে বললো, আরে দূর, কী পোলাপানের মতন কথা বলিস। ওসব অভ্যাস হয়ে যায়। শোন, বিদেশে গেলে চক্ষু খুলে যায় অনেকখানি। বিদেশে থেকে দেশের কাজ করা যায় ভালো করে। আমি তো সেখানে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেছি, এখান থেকে পাটের ব্যাগ নিয়ে যাবো, এখানকার লোকেরা ভালো পয়সা পাবে…।

বাবুল বললো, ব্যবসা? ওরে বাপ রে, ওসব আমার মাথাতেই ঢোকে না! ভাইয়া, আমার পক্ষে মাস্টারিই ভালো!

আলতাফ ঈষৎ ধিক্কারের সুরে বললো, ব্যবসা ছাড়া বাঙ্গালীর উন্নতির আর কোনো পথ নাই! বাঙ্গালী শুধু পলিটিক্স আর মাস্টারি করতেই জানে। ওদিকে পশ্চিম পাকিস্তানীরা সব ব্যবসা কজা করে নিয়ে আমাগো পোঙা মেরে দিচ্ছে। আমি তোরে কই, শুনে রাখ বাবুল, এখন ব্যবসায় ঝাঁপিয়ে পড়াই হবে তোর আমার মতন বাঙালীর বেস্ট পলিটিক্স।

একটা রিলিফের মিছিল ওদের বাড়ির সামনে দাঁড়ালো। দুর্গতদের জন্য চাঁদা ও পুরোনো কাপড়-চোপড় সংগ্রহ করা হচ্ছে। দুই ভাই কথা থামিয়ে এগিয়ে গেল দরজার কাছে।

টাকা-পয়সার ব্যাপারে আলতাফ বরাবরই উদার। এখন বিদেশে থেকে তার অবস্থা অনেক সচ্ছল হয়েছে। কুতার পকেট থেকে একতাড়া নোট বার করে গুনে গুনে তিনশো টাকা বার করে, তার থেকে আবার একশো টাকা কমিয়ে দুশো টাকা দিয়ে দিল রিলিফ ফাণ্ডে।

ওপর তলায় একটি শিশুকণ্ঠের কান্নার আওয়াজ শুনে উৎকর্ণ হয়ে উঠলো বাবুল। তার ছেলে কাঁদছে। মঞ্জু কি কাছে নেই? সে দৌড়ে উঠে গেল সিঁড়ি দিয়ে। তার ছেলে তো এমন তীব্রভাবে চেঁচিয়ে কাঁদে না!

দূরে কোথায় দশ-বিশ হাজার লোক মরেছে তার থেকেও নিজের সন্তানের বিপদ-আপদের চিন্তা অনেক বড় হয়ে ওঠে। বাবুল এখন দেশের অবস্থা নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না। রাজনীতিতে ঢুকতে চায় না, সে চায় মঞ্জুকে নিয়ে, তার সন্তানকে নিয়ে মশগুল হয়ে থাকতে। মঞ্জু যদি দুঃখ পায়, মঞ্জু যদি কাঁদে তা হলে গোটা দুনিয়াটাই বাবুলের কাছে তুচ্ছ হয়ে যায়। সে মঞ্জুকে সুখী করবে, সে তার সন্তানকে দুধে-ভাতে রাখবে। পৃথিবীর এখন তার সংসারের বাইরে অপেক্ষা করুক।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *