1 of 2

২.০৪. চতুর্থ পরিচ্ছেদ – সন্দেহ প্রবল হইল

দেবেন্দ্রবিজয় কিছুদূর গিয়াছেন, এমন সময়ে দেখিলেন, হামিদা বিবি একখানি কাগজে অঞ্চলাগ্রে বাঁধিতে বাঁধিতে বাটীর বাহির হইল| দেখিয়া দেবেন্দ্রবিজয় মনে করিলেন, খুব সম্ভব, ইহা মজিদের পত্র| দেখিতে হইবে, পত্রখানি কোন্ উদ্দেশ্যে, কাহার নামে, কোথায় যাইতেছে|
যেদিকে হামিদা বিবি যাইতেছিল, সেইদিক্কার পথে সহজে ঠাহর হয়; এমন জায়গায় অকটি টাকা ফেলিয়া দিয়া দেবেন্দ্রবিজয় কিছুদূরে গিয়া দাঁড়াইলেন| পথ চলিতে চলিতে হামিদা বিবি পথিমধ্যে সেই টাকাটিকে অভিভাবকশুন্য দেখিয়া তুলিয়া লইল| দেবেন্দ্রবিজয় দূর হইতে তাহা দেখিয়া হামিদা বিবির নিকটে ছুটিয়া আসিয়া বলিলেন, “কে রে মাগী তুই, দে আমার নোট দে-টাকা দে-আমার নোট আর টাকা হারিয়েছে|”
বৃদ্ধা হামিদা বিবি থতমত খাইয়া বাহির করিয়া দেবেন্দ্রবিজয়ের হাতে দিয়া বলিল, “এই বাবু, তোমার টাকা|”
দেবেন্দ্রবিজয় গলাবাজি করিয়া বলিলেন “নোট-আমার নোট কোথা? তুই মাগী নিয়েছিস্| চালাকি বটে! এখনই থানায় চালান্ দিব, জান না বটে?”
হামিদা বিবিও তদপেক্ষা গলাবাজি করিতে জানে| আঘাতপ্রাপ্ত কাংস্যপাত্রের ন্যায় তাহার কণ্ঠ ঝন্ঝন্ করিয়া উঠিল; বলিল, “আ মর্ মিন্সে! মর্বার অর জায়গা পাও না-পথের মধ্যে বেইজ্জৎ করতে এসেছ| তোমার নোট কোথা, তা’ আমি কি জানি?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “আমি নিজের চোখে তোকে নোট তুলে নিতে দেখেছি, এখন, ‘কি জানি’ বল্লে চল্বে না| ঐ যে মাগী, এরই মধ্যে আঁচলে বেঁধে ফেলেছিস্| বেশী চালাকী কর্লে এখনই পাহারাওয়ালা ডেকে হাজির করব|”
হামিদা বুড়ী রাগিয়া, চোখমুখ কপালে তুলিয়া, অস্থির হইয়া উঠিল, “আসুক না পাহারাওয়ালা-পাহারাওয়ালার নিকুচি করেছে! আমি সেই ভয়ে ম’রে গেলুম আর কি! আমি নোট নিয়েছি, এখানা কি তোমার নোট? চোখের মাথা একেবারে খেয়েছ? বলিয়া তাড়াতাড়ি আঁচল হইতে সেই পত্রখানা বাহির করিয়া ফেলিল|
“কই দেখি, কেমন নোট কি না, বলিয়া দেবেন্দ্রবিজয় সেই পত্রখানি হামিদা বিবির হাত হইতে টানিয়া লইলেন| পত্রখানি খামে বন্ধ না থাকায় দেবেন্দ্রবিজউের সুবিধা হইল| ভাজগুলি তাড়াতাড়ি খুলিয়া ফেলিয়া দেখিলেন, দুই-তিন ছত্রমাত্র লিপিবদ্ধ| খুলিতে-না-খুলিতে পাঠ শেষ হইয়া গেল| লিখিত ছিল:-
“জোহেরা,
আমি অত্য্ন্ত বিপদ্গ্রস্ত| অদ্য সন্ধ্যার পর তোমাদের বাগানে অতি অবশ্য আমার সহিত গোপনে দেখ করিবে-কথা আছে|
মজিদ”
দেবেন্দ্রবিজয় পত্রখানি হামিদাকে ফেরৎ দিয়া বলিলেন, “না গো, কিছু মনে ক’রো না-আমারই ভুল হয়েছে-তুমি ভাল মানুষের মেয়ে-তুমি কেন নোট নিতে যাবে? টাকাটি পেয়েছিলে, তখনই আমাকে ফেরৎ দিলে-তা’কিছু মনে ক’রো না|”
হামিদা বিবি দেবেন্দ্রবিজয়ের মিষ্টবাক্যে একেবারে দ্রবীভূত হইয়া গেল| পত্রখানি আঁচলে বাঁধিতে বাঁধিতে বলিল, “না মনে আর কর্ব কি? টাকা খোয়া গেলে সকলেরই গায়ের জ্বালা হয়-গায়ের জ্বালায় দু’কথা যাকে তাকে ব’লেও ফেলে-সে কথা কি আর মনে করতে আছে, বাপু?” বলিয়া হামিদা বিবি নিজের পথ দেখিল|
দেবেন্দ্রবিজয় চিন্তিতভাবে আপন মনে বলিলেন, “জোহেরার সহিত মজিদের কি কথা আছে? জোহেরার সহিত মজিদের বিবাহ হইবে, শুনিয়াছি| আজ সন্ধ্যার পর কোন্ অভিপ্রায়ে মজিদ গোপনে তাহার সহিত দেখা করিবে, তাহাও আমাকে দেখিতে হইবে; কিন্তু নিজের দ্বারা সে কাজ হইবে না-মজিদ আমাকে চিনে| শ্রীশের দ্বারা কাজটা যাহাতে ঠিক করিয়া লইতে পারি, সেই চেষ্টা দেখিতে হইবে|”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *