২.০১ ভবিষ্যৎ বঙ্গ-সাহিত্য

সাহিত্য
ভবিষ্যৎ বঙ্গ-সাহিত্য

আমি বক্তা নই।কিছু বলতে আমি আদপেই পারিনে। ঘরে বসে কাগজ কলম নিয়ে লেখা এক ব্যাপার, আর বাইরে দাঁড়িয়ে বলা আর এক ব্যাপার। আপনারা আমার বই পড়ে সবাই প্রশংসা কচ্ছেন, অথচ কিছুদিন থেকে লেখা আমি একমত ছেড়ে দিয়েছি। সাহিত্য সেবাকেই জীবনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা বলে মনে করতে পারচি নে। আমার নিজের কথা ছাড়াও সমস্ত দেশের সাহিত্যে কত অসত্য, কত পঙ্গুতা এসে পড়েছে। সমাজের সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে তার ভিতরের বাসনা কামনার আভাস দেওয়াই সাহিত্য। ভাবে, কাজে, চিন্তায় মুক্তি এনে দেওয়াই ত সাহিত্যের কাজ। সাহিত্য যদি বাস্তবিক মুক্তির ব্যাপার হয়, তবে আমাদের সাহিত্য একেবারেই পঙ্গু। আমাদের সাহিত্যে নতুন জিনিস দেবার জো নেই। ইউরোপের কথা ধরুন। ওদের Church আছে, Navy আছে, Army আছে। ওদের অবাধ মেলামেশা আছে, আনন্দ আছে। আমাদের এদিক যাবার জো নেই, ওদিক যাবার জো নেই, কোনদিকে একটু নড়চড় হয়েছে কি সব গোলমাল হয়ে যাবে! তারই মধ্যে যে একটু-আধটু পারে সে আমাদের নিত্যকার বৈচিত্র্যহীন সংসার ও সমাজের কথা নিয়ে নাড়াচাড়া করে।

সাহিত্যে স্বাধীনতার মানে অরাজকতা, anarchy নয়। এখানে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করে কারুর মনে ভয় জাগিয়ে তুলতে আমি চাইনে, কিন্তু দেখি কথা হয় যেন সব লুকিয়ে লুকিয়ে, ভয়ে ভয়ে। ‘সিডিশন’ (sedition) বাঁচিয়ে এখানে মুক্তির কথা বলা হয়। তাই আমার মনে হয়, বড় সাহিত্যিক আমাদের দেশে এখন আর জন্মাবে না। রাজনীতিতে, ধর্মে, সামাজিক আচার-ব্যবহারে যেদিন আমাদের হাত-বাঁধা, পা-গুটানো আর থাকবে না, যে দিন আনন্দের ভিতর দিয়ে লিখতে পারা যাবে, সেই দিন আবার সাহিত্যসৃষ্টির দিন ফিরে আসবে।” ( ১৩৩০ সালের জ্যৈষ্ঠ মাসে বরিশাল বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ শাখার অভিনন্দনের উত্তরে প্রদত্ত বক্তৃতার সারাংশ। )

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *