হাশেম জ্বরে কাঁপছে হি হি করে। বীথি কম্বল এনে দিতেই সেটা গায়ে জড়িয়ে মরার মতো পড়ে রইলো।
মরিয়ম বললেন, তোর চাচাকে অফিসে একটা টেলিফোন কর, বীথি। আর তোর বড় চাচার বাসায় যাবি একবার?
পাশের বাড়িতে এসে চাচাকে টেলিফোন করল সে। মুরশেদ চৌধুরীর গলাটা কী অদ্ভুত শোনাল।
হাশেম ফিরেছে? কখন? রাস্কেলটা এতদিন ছিল কোথায় কিছু বলেছে? চাচার কথা বলার ধরনই ও রকম। পাছে মমতা চোখে পড়ে যায়, বাইরে তাই তম্বি। হাশেমের কাছে বীথি যে হঠাৎ নগ্ন হয়ে পড়েছিল সেই থেকে বুকের কাপুনিটা যাচ্ছে না; কাঁপা গলায় সে উত্তর করল, কিছু বলেনি। জ্বর এসেছে খুব।
আমি এক্ষুনি আসছি।
বীথি ফিরে এসে দেখে মায়ে ছেলের গলা সপ্তমে উঠেছে।
মরিয়ম বলছেন, এসেই পাগলামো শুরু করলি। এই জ্বর নিয়ে ঘরে যাবি না তো রাস্তায় পড়ে মরবি?
না, না, আমাকে কোথাও যেতে হবে না।
চল বাবা, ঘরে গিয়ে শুবি।
এখান থেকে আমি কোথাও নড়তে পারবো না।
মরিয়ম তার কম্বল ধরে টানলেন।
আহ ছাড়ো।
কম্বলটা প্রায় কেড়ে নিয়ে সোফায় কুণ্ডলি পাকিয়ে চোখ বুজে পড়ে রইল হাশেম।
একটু পর বিড়বিড় করে বলতে লাগল, সবাই, সবাই এমনি করে। জড়িয়ে ধরে রাখতে চায়। কোথাও কি সুস্থির হয়ে থাকতে পেরেছি? যখন চলে যেতে চেয়েছি, দুঃখী সব। মানুষগুলো এসে বলেছে চলে যাবে? তাহলে আমরা বাঁচব কী করে? জানো মা, ওদের চোখের দিকে তাকালে মায়া লাগে। মনে হয়, ওদের বুকের শূন্যতা চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসবে। আমার তো মায়া করলে চলে না। তাই পালিয়ে আসতে হয়েছে। দিনের পর দিন, এক গা থেকে আরেক গাঁ।
প্রতিটি নিঃশ্বাসের পর জ্বরের দাপটে হাঁপাতে থাকে হাশেম, তবু থামে না। কথাগুলো তাই বেদনার মতো শোনায়। হাশেম, না মরিয়ম না বীথি কেউ তাকে থামাতে পারে না, বলে চলে, আমি সবাইকে বলি, হতভাগা আমি কে যে আমাকে এমন করে মূল্য দিস? আমাকে অত ওপরে উঠিয়ে তোরা যে শেষে ঠকবি।
দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে হাশেম—-কিন্তু তাকি কেউ বুঝতে চায়?
জ্বরটা বোধ হয় ভালো করেই এসেছে। বারবার করে বলে আর জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভেজাতে ব্যর্থ চেষ্টা করে।
তা কি কেউ বুঝতে চায়। তা কি কেউ বুঝতে চায়। আমি একা যদি বিশ্বটাকে বাঁচাতে পারতাম, তাহলে আকাশের সেই সাত রাজার রাজা ব্যাটা আমাকে অমর আয়ু দিয়ে পৃথিবীতে পাঠাতেন রে। বীথি, তুই শুনছিস? তাহলে আমার দৃষ্টি হতো দীপ্তি। কোন খানে এতটুকু অন্ধকার রাখতাম না। সব আলো করে দিতাম। সব আমি আলো করে দিতাম। এখানে ওখানে আমাকে সারা রাত জেগে থাকতে হতো না।
জ্ঞান বোধ হয় হারিয়ে যাচ্ছে হাশেমের। মরিয়ম গিয়ে তাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলেন, মাথায় বুলিয়ে দিলেন মমতার হাত। হাশেম একটুও বাধা দিল না।
মরিয়ম বীথির দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তুই যা, বীথি। পারিস তো আবুকেও ধরে আনিস।
বড় চাচাকে খবরটা দিয়ে বীথি এলো ইউনিভার্সিটিতে আবুর খোঁজে। আবু তো জানবে না, বীথি এসেছে হাশেমের সংবাদ নিয়ে। মনে করবে তার রিহার্সেল দেখতে এসেছে। মনে করে খুব খুশি হবে। আজ সকালে বড়ড বকেছিল আবু, সে যাবে না শুনে। বীথির ভয় করছিল, নাশতা কিছু না খেয়েই বুঝি বেরিয়ে যাবে তার ওপর রাগ করে। আশেপাশে ঘুরছিল তাই। যখন দেখেছে আবু খাবার টেবিলে বসে খাচ্ছে তখন স্বস্তি পেয়েছে। কী ভঙ্গি তার খাওয়ার যেন এক সংগে গোটা প্লেট মুখে পুরতে পারলে শান্তি। দেখে হাসি পেয়েছিল, কিন্তু তার সামনে হাসে নি, পাছে অনর্থ ঘটে। তাহলে আবু আর খেতোই না।
ইউনিভার্সিটিতে গেট পেরিয়ে হাঁটতে থাকে বীথি। কোনদিন আসে নি এখানে। বড় জড়সড় লাগছে। মনে হচ্ছে বিশ্ব তাকিয়ে আছে তার দিকে। মাথার পরে দুপুর রোদে ঝলসে আছে আকাশ। চমকে ওঠে হঠাৎ, হাশেমের সেই কথাটা মনে করে চমকে ওঠে বীথি। তুই এত কষ্ট পাস কেন?
হাশেম কী করে জানল, বীথির এত কষ্ট?—-যে কষ্টর কথা কোনদিন সে কাউকে বলতে পারেনি, যে কষ্ট সইতে না পেরে নিজেকে শান্ত করবার জন্যে একেকদিন তাকে কঠিন প্রতিজ্ঞা করতে হয়েছে।
বুকের ভেতরে দুপ দুপ করতে থাকে বীথির।
কিন্তু কোথায় আবু? কোথায় গিয়ে তার সন্ধান নেবে? কার কাছে গিয়ে শুধোবে, আবুকে দেখেছেন?
করিডরে বিব্রত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল বীথি। একটি মেয়ে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিল। তাকে অমন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঘুরে দাঁড়িয়ে শুধালো, কাউকে খুঁজছেন?
বীথি নাম বলল। বলল, সে তার বোন।
মেয়েটা ভাবল খানিক। পরে বলল, আসুন আমার সংগে।
বীথিকে সে নিয়ে এলো মেয়েদের কমনরুমে। সেখানে এককোণে গিয়ে বসলো সে। বেয়ারার হাতে একটা স্লিপ পাঠিয়ে মেয়েটা বলল, আপনি বসুন, লোক পাঠালাম খুঁজতে। রিহার্সেল নেই?
আছে, সে তো ছটার দিকে। এই তো কিছুক্ষণ আগেও আমাদের সঙ্গে ছিল। কেন, বাসায়। কিছু হয়েছে নাকি?
বীথি লজ্জা পেয়ে যায়। ভীরু চোখ তুলে বলে, না, না, এমনিতে দরকার।
অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল সে। দুচোখ ভরে হৈচৈ দেখল মেয়েদের। দেখতে দেখতে কখন যে এদের মধ্যে ডুবে গিয়েছিল তা বীথি নিজেও বলতে পারবে না।
বেয়ারা এসে খবর দিল, আবুকে পাওয়া যাচ্ছে না।
দূরে সোনালি জমিনে ছোট ছোট লাল ফুল ভোলা শাড়ি পরা একজন পাউরুটি চিবোচ্ছিল। নামটা শুনে সে ওখান থেকেই বীথিকে যে মেয়েটি নিয়ে এসেছিল তাকে শুধালো, কাকে খুঁজছিস?
আবুকে। উনি ওর বোন।
মেয়েটি তখন হাতের পাউরুটি পিরিচে রেখে রাণীর মতো এগিয়ে এলো তার কাছে। বীথি মুগ্ধ হলো। এত ভালো লাগল, চোখ ভরা খুশি নিয়ে সে উঠে দাঁড়াল। মেয়েটি বলল, আবুকে বুঝি খুব দরকার। ওকে কি পাওয়া যাবে? ও আজ বিকেল চারটেয় আমাদের বাসায় আসবে।
বীথি চকিতে মুখ তুলে তাকালো খুব সরাসরি করে।
আমি ওকে বললে চলবে?
একটু ইতস্তত করে বীথি উত্তর করল, বলবেন হাশেম ভাই এসেছেন আজ। বেশি রাত যেন না করে।
বলে বেরিয়ে আসে বীথি। কেন যেন মনটা খুব ভার হয়ে গেছে। কারণ খুঁজে পায় না। তাড়া দেয় রিকশঅলাকে। হাশেমের কথা মনে পড়ে। আর বকুল। কেমন ছিল দেখতে?
হাশেম ভাই বুঝলো কী করে, মনে মনে তার এত কষ্ট যে কষ্টের পরিমাপ করতে গিয়ে সে নির্বাক হয়ে গেছে?
সোনালি জমিনে ছোট ছোট লাল ফুল–তোলা শাড়ি। বকুলের কথা ভাবতে গিয়ে, বীথির চোখে এই মেয়েটির মুখ ভেসে উঠতে চায়।
আনমনে হাসলো সে। বকুলকে নিয়ে বড্ড বেশি ভাবছে না কি?
.
আজ সকাল থেকে আবুর দিনটা কেটেছে যেন নেশা লাগানো এক ঘূর্ণির ভেতর দিয়ে। বীথির সেই অমন মাথা নাড়া, কিছুতেই রিহার্সেলে আসতে রাজি না হওয়া, মনটাকে একেবারে মৃত করে রেখেছিল।
বাসা থেকে বেরিয়ে সোজা ইউনিভার্সিটি এসেছিল আবু। এত সকালে এসে কোন দরকার ছিল না, তবু। এসে গুম হয়ে বসে রইলো মধুর দোকানে। তারপর যখন দেখল বিলকিসকে, উঠে দাঁড়াল তার সংগে দেখা করবার জন্যে।
লাইব্রেরীতে যাবে বলে আজ একটু ভোরে ভোরে এসেছিল বিলকিস। প্রচুর দিন কিস্সু পড়াশোনা হয়নি, মেলা বই, মেলা টিউটোরিয়াল পড়ে আছে। সেগুলো সারতে হবে। আবুকে দেখে বিস্মিত হলো সে।
শুধালো, কী ব্যাপার?
কিছু না। কিছু না।
চলে যাচ্ছিল আবু। বুঝল বিলকিস। বলল, কথা বলবেন? বাসায় আসুন না। একদিনও তো আসেন নি। আজ চারটের দিকে?
আচ্ছা।
চলি এখন। আজ আমি ভালো ছাত্রী।
বলে বিদ্যুত হাসিতে মুখ উদ্ভাসিত করে চলে গেছে বিলকিস।
আজ বিকেলে এই প্রথম বিলকিস আবুকে ডেকেছে তার বাসায়। কিন্তু এ নিয়ে এত ভাববার, মন এত প্রস্তুত ও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠবার কী কারণ থাকতে পারে, শাদা চোখে তার ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
যতই এগিয়ে এলো ঘড়ির কাঁটা বিকেল চারটের দিকে, ততই অস্থিরতা বেড়ে উঠলো আবুর। এমন হলো যে, বেলা বারোটা না পেরোতেই তাকে বেরিয়ে পড়তে হলে সবার সঙ্গ ছেড়ে, ইউনিভার্সিটি ছেড়ে, এমনকি একটা জরুরি টিউটোরিয়াল ক্লাশ পালিয়ে। দুপুরের রোদের মধ্যে খুব লম্বা করে হাঁটবার একটা প্রেরণা পেল। যেন এতকাল যার জন্যে প্রতীক্ষা তাকে হাতের কাছে পেয়ে পালাতে চায় আবু।
কিন্তু বিলকিস তো এমন কিছু রত্নমানিক আজ তাকে প্রতিজ্ঞা করেনি। ওই একটা দোষ আবুর। বিলকিসকে কিছুতেই সে যেন সহজ চোখে দেখতে পারে না।
বিলকিস হয়ত জিগ্যেস করল, কী কেমন আছেন?
ভালো।
কথাটা বলেই তার ভারী সাধ হয় বিলকিসের কাঁধ আলতো হাতে স্পর্শ করে, চোখের দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করে, আর তুমি?
কিন্তু বলা হয় না। বিলকিসের সামনে বিমূঢ়ের মতো দাঁড়িয়ে থেকে সে মনে মনে প্রশ্নোত্তরের সম্পূর্ণ একটা খসড়া দেখতে পায়। যেন শুনতে পায় বিলকিস বলছে, আমিও ভালো। তারপর সে কল্পনা করে, বিলকিস একটা নীরব মুহূর্ত যেতে দিয়ে, ব্যথায় নীল হয়ে বলছে, ভালো আছি। কিন্তু শরীরের ভালো লাগা নিয়ে আমার গা জ্বালা করে, আবু। মন আমার ভরে উঠবে কবে বলতে পারো?
এ সব কিছুই হয় না। একটু পর আবু সত্যি সত্যি যে প্রশ্নটা করতে পারে তা হচ্ছে আপনি কেমন আছেন?
প্রশ্নটা উচ্চারণ করতে গিয়ে কণ্ঠে বারোয়ারি সুর ছাড়া আর কিছুই আনা সম্ভব হয় না। অতি মাত্রায় পোষাকী, সযত্নে বাঁচিয়ে চলা একটা দূর উচ্চারণ।
এই দ্বিধা নিয়ে, এই কিছু বলতে না পারা নিয়ে নিজেকে একেকদিন যাচ্ছে তাই বলে গাল দিয়েছে আবু। সে তিরস্কারের এক ভগ্নাংশও অন্য কাউকে করা হলে রক্তপাত হতে পারত। একেকদিন আবুর ইচ্ছে হয়েছে, নিজের আঙুল দাঁত কামড়ে রক্ত বার করে ফেলে।
একদিন খুব জেদ হয়ে গিয়েছিল আবুর। আজ সে বিলকিসকে নিয়ে যা হোক একটা কিছু করে বসবেই। হাতের তাস সোজা টেবিলের ওপর ফেলে দিয়ে বলবে, আমি তোমাকে ভালবাসি। এখন তুমি কী করবে বলো?
দিনটা ছিল ছুটির দিন।
বাথরুমে গিয়ে বালতি বালতি পানি ঢেলে নেয়ে ওঠে আবু। হাতের আঙুল চুপসে শাদা হয়ে যায়। তখন বেরিয়ে আসে। অস্থির পায়ে হাঁটতে থাকে বারান্দায়। মাকে দেখা যায়। বীথি পাশ দিয়ে চলে যায়। তবু কারো দিকে দৃষ্টি পড়ে না তার। হাঁটতে থাকে। বাগানে এসে বসে। আবার ঘরে যায়। এমনি করে অবশেষে একসময়ে বেরিয়ে আসে। তক্ষুনি রিকশা পাওয়া যায় না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় আবুকে। অনেকক্ষণ মানে দুমিনিট। সেই দুমিনিটে বিশ্বের রিকশাঅলা মনে মনে তার অভিসম্পাত কুড়িয়েছে।
কিন্তু রিকশা পেয়েও, অর্ধেকটা পথ এসেও, বিলকিসের কাছে যাওয়া হয়নি সেদিন।
একটা রেস্তোরাঁয় বসে খুব দামি ঠাণ্ডা পানীয়ের ফরমাস করেছে। মনে মনে বলেছে, না গিয়ে ভালোই করেছি। বিলকিস যদি চটে যেত, তাহলে চিরদিনের মতো আমার কাছে ওর দুয়ার বন্ধ হয়ে যেত। সেটা তো আরো মর্মান্তিক। তার চেয়ে এই ভালো।
রেস্তোরাঁ সোফায় গা এলিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়, আরেকদিন যাবো। মেলে ধরবো আমার দুহাত। বলব—- দাও, আমাকে দাও।
কিন্তু এ প্রতিজ্ঞাও রক্ষা করা হয়ে ওঠে না। মনের ভেতরে কেবলি সে ফুঁসতে থাকে অক্ষমতার জ্বালায়।
ইউনিভার্সিটির ভিড়ের ভেতরে চোখে পড়ে বিলকিসের মুখ। কিংবা দূর থেকে তার চলে যাওয়ার তরংগ। কিংবা হাসি, অন্য কারো জন্যে অন্য কোন মুহূর্তে। চকিত হতে হয় বিলকিসের কণ্ঠস্বরে। কোন দিন বা হাত মুক্ত রেখে ডান হাতে বই খাতা কোলের কাছে ধরে মাটির দিকে চিবুক নামিয়ে চলে যায় বিলকিস। বিলকিসের একটা শাড়ি শাদা, একটা ময়ূর নীল, একটা সমুদ্র–নীল, একটা আকাশ নীল, একটা শুধু নীলের আভাস, একটা সোনালি। জমিনে ছোট ছোট লাল ফুল তোলা, আর একটা সবুজ–ছায়া–ছায়া পাতায় পাতায় আচ্ছন্ন। সিনেমা হলে একদিন অন্ধকারে সমুখের কাধ চেনা মনে হয়—- আলো জ্বললে বুকে কাপন ওঠে—-বিলকিস। নীলখেত ব্যারাকের রেলক্রসিং–এ মোটর বাঁধা পড়েছে; নীল রং কন্সালের জানালায় বিলকিসকে দেখা যায় বই ওটাতে ওল্টাতে হাই তুলছে। ইউনিভার্সিটিতে সাহিত্য সভায় বিলকিস একটা সরল রেখার মতো দাঁড়িয়ে তুখোড় ইংরেজিতে বক্তৃতা করছে, সমালোচনার ছুরিতে কোণঠাসা করে ফেলছে কোনো আত্মতৃপ্ত, বানানো অনুভূতি সর্ব, খ্যাতিমান তরুণ লেখককে।
একেকটা রূপ যেন বারুদের একেকটা কাঠি। আবুর প্রত্যক্ষ হলেই যেন তীব্র দীপ্তিতে জ্বলে ওঠে। সে আগুনে তখন আর বিলকিসকে দেখা যায় না। আগুনের ভেতর দিয়ে যে বিলকিসকে দেখা যায়, সে আবুর নিজস্ব পৃথিবীতে তারই চেতনার তুলিতে আঁকা।
আর কথা। বিলকিসেব কথাগুলোও যেন হৃদয়ের মধ্যে লাল আগুন ধরাতে জানে।
খুব সাধারণ একটা কথা। বিলকিস হয়ত একদিন বলেছে, আমাদের বাসায় কাল চোর এসেছিল। রাতে হঠাৎ ঘুম ভাঙলে আমার এমনিতেই ভয় করে। যা ভয় করছিল।
কল্পনার ফুল দল মেলতে থাকে। আবু ভাবে, বিলকিসের হঠাৎ ঘুম ভাঙলে ভয় করে। ভয় পেলে কেমন দেখায় বিলকিসকে? তার যেন মনে হয়, কাল রাতে বিলকিসের সঙ্গে সে শুয়ে ছিলো। চোরের শব্দে ধরমড়িয়ে উঠে বসেছে সে, বিলকিস, আর আবু তাকে জড়িয়ে ধরে বলছে, ভয় কী, ভয় কী, এই তো আমি।
তখন বিলকিসের মুখ আচ্ছন্ন হয়ে গেছে চুলে। তার ভেতর থেকে পৃথিবীর প্রতীকের মতো মুখটাকে আবিষ্কার করে সে তখন যেন চেপে ধরেছে নিজের মুখের সঙ্গে।
কিংবা হয়ত একদিন কথা হচ্ছিল গেটের কাছে বাড়ি যাবার আগে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। মাথার পরে দেখিয়ে বিলকিস বলল, দেখেছেন গাছগুলো?
হ্যাঁ, কেন?
ভারী সুন্দর, না?
আবু তাকায় আকাশের দিকে। সেখানে সবুজ পাতায় সোনার মতো রোদ পড়ে আছে।
বিলকিস বলে, একেক সময় আমার কী মনে হয় জানেন? মনে হয়, পাতায় ছাওয়া এই রাস্তাটা যদি কোন দিন না ফুরাতো। মনে করুন না, পৃথিবীর শেষ অবধি এমনি করে চলে গেছে গাছের পর গাছ। নিচে পীচের রাস্তা। না, না, লাল মাটির রাস্তা। লাল মাটিতে ডালের ছায়া পড়েছে। সেই ছায়ায় মানুষ পথ চলছে।
আকাশের দিকে, গাছের দিকে, ছায়ার দিকে তাকিয়ে বিলকিস কথাগুলো বলে। চোখ দিয়ে তাকে আর মন দিয়ে তার কল্পনাকে অনুসরণ করে আবু। মনের ভেতরে তার সাড়া ভাঙতে থাকে যেন।
অনেক অনেক আগে আবু যখন ছোট ছিল, তখন একেক দিন, কী জানি কেন অভিমান হলে মরে যেতে ইচ্ছে করত। কিন্তু মানুষ মরে যায় কী করে? আট ন বছরের ছেলেটার তা বোঝার কথা নয়। মনে আছে, তখন অভিমানটা বুকে পুষে আবু ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ত পথে। পথের দুধারে ছিল এমনি গাছ আর গাছ। হাঁটতে হাঁটতে পাথরের পথ শেষ হতো। তারপর ধুলো ভাঙা ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের রাস্তা। ধুলোর ভেতর দিয়ে, গাছের কোল ঘেঁষে, কখনোবা দাঁড়িয়ে পড়ে গাছের গায়ে বেয়ে ওঠা একটা লাল পিঁপড়ে মেরে আবু চলে যেত সেই কোন্ দূরে।
একটু একটু করে আকাশটা মায়ের মুখের মতো হয়ে আসছে। মাথার ওপরে বিরাট আমগাছটায় পাখিদের কাকলি শুনে বাসার সমুখে ছেলেদের কোলাহল মনে পড়ে যাচ্ছে। তখন আবু একটা ছায়ায় দাঁড়িয়ে পা দিয়ে ধুলোয় চক্র আঁকতে থাকে। হয়ত হাটবার ছিল। হাটে যাচ্ছে পশারীর দল। তাদের পেছনে পেছনে শহরে ফিরে এসেছে আবু।
বড় হয়ে যখন মনে পড়েছে এই সব চলে যাওয়ার কথা, তখন আবুর মনে হয়েছে, যেখানে সে চলে যেত আসলে সে জায়গাটা আর এ পৃথিবীতে নেই। সেখানে এখন মৃত্যু ছাড়া আর কিছুতেই ফিরে যেতে পারবে না আবু।
সেই আট ন বছর বয়সে এমনি করে কতবার মরে গেছে আবু। মরে গিয়ে আবার ফিরে এসেছে।
বিলকিসের ওই একটা গুণ আবুকে মুগ্ধ করে রাখে। নিজের ভাবনাটাকে সম্পূর্ণ করে, বিশ্লেষণ করে না বলে থামতে জানে না বিলকিস। অন্য কোনো মানুষের ঠোঁটে যে কথাগুলো শুনে মনে হতে পারত, বানিয়ে বলছে, সেই কথাগুলোই যখন বিলকিস বলে তখন তার পেছনে অন্তরকে অনুভব করা যায়।
বিলকিসের কথা শুনে আবু বলে, তা কি হয়?
হয় না। হয় না বলেই তো দুঃখ হচ্ছে। যতটুকু হয় না মানুষ মন দিয়ে তা ভরে তুলতে চায় যে।
আবুর তখন ইচ্ছে করে অনেক কথা বলতে। কথা খুঁজে পায় না। চুপ করে থাকে। রিকশা পেলে চলে যায় বিলকিস।
সেদিন রাতে শুয়ে শুয়ে আবু ভাবতে থাকে, বিলকিসের কি কোনদিন অমন মরে যেতে ইচ্ছা করেছে? হয়ত অনেকদিন আগে বিলকিসও অভিমান করে মরে যাবার জন্যে পায়ে পায়ে চলেছে—-যে পথে দুধারে ছিল ঠাণ্ডা ছায়া মেলানো গাছ। আজ এই গাছগুলো দেখে তার মনেও কি ফিরে ফিরে আসতে চেয়েছিল সেই স্মৃতি?
মনে মনে বিলকিসের ছোটবেলা সৃষ্টি করতে থাকে আবু। এত বিশদ করে ভাবতে থাকে। যে, এক সময়ে চোখের সমুখে প্রত্যক্ষ করতে পারে ছোট্ট মেয়েটিকে, যার নাম বিলকিস। এমন একদিন দুদিন নয়, অনেকদিন মনে হয়েছে তার। এমন ক্ষমতা যদি থাকত, যার অলৌকিক বলে সে ফিরে যেতে পারত বিলকিসের শৈশবের পৃথিবীতে, মেলাতে পারত নিজেকে তার সংগে, তার সেই পরিবেশকে করে নিতে পারত নিজের পরিবেশ, তাহলে নতুন সুন্দর জীবন হতো তার। তাহলে ঘর থেকে পা বাড়ালেই দেখা হতো বিলকিসের সংগে। তখন বিলকিসের সংগে পাথরের পথ ভাংগা চলত, বেণি নিয়ে টানাটানি করা যেত, কোচড়ভরা বেতফলে ভাগ বসানো যেত তার।
তা হলে অনেক সহজ হয়ে যেত সব কিছু। সহজ হয়ে যত নিজেকে উন্মুক্ত করা। এমন করে দ্বিধায়, সংকোচে, অভিমানে তাকে জ্বলে পুড়ে মরতে হতো না। তাহলে বুক ভরা বিশ্বাস নিয়ে সে বলতে পারত, তোর কি চোখ নেই, বিলকিস? আমার ভোলা দরোজা দিয়ে আয়। তোর জন্যে খুলে রেখেছি যে।
একদিন, এমনি এক ভাবনার চূড়ান্ত চূড়োয় নিজের চোখে হাত রেখেছিল আবু। সেখানে অশ্রু টলটল করবে, উষ্ণ তরল বিকারহীন অশ্রু, এ যেন তার কতকালের জানা।
আজ হঠাৎ ওভাবে ইউনিভার্সিটি ছেড়ে তার বেরিয়ে পড়বার কারণ ছিল। মনের ভাবনাগুলো রীতিমত সশরীর হয়ে মাথার ভেতরে দুপদাপ লাগিয়েছে তখন থেকে।
বিকেল চারটেয় দেখা হবে বিলকিসের সংগে। এখনো অনেক দেরি তার। কিন্তু অলক্ষিতে কোথায় কোন এক ঘড়িতে যেন ইতিমধ্যেই বিকেল চারটে বেজে গেছে।
মাথার পরে এখনো খাড়া রোদ। পথ দিয়ে এলোপাথারি চলতে চলতে আবু যেন স্পষ্ট শুনতে পায় বিলকিস তাকে দেখে বলছে, এত দেরি করে এলেন?
তখন ও উত্তর করছে, দেরি করে যাবো বলেই দেরি করে এলাম। যদি সত্যি দেরি হয়ে থাকে, ক্ষমা করে দিন।
তার কথা শুনে বিলকিস যেন হাসলো।
আবু ভারতে থাকে, তখন সে বলবে, আপনাদের এখানে এই প্রথম এলাম। ভারী সুন্দর বাসা। আপনাদের নিজের?
হ্যাঁ।
কিছু ফুলগাছ এনে বাগান করুন।
কে করবে?
কেন, আপনি?
আর আমি বাগান করেছি!
বলেই বিলকিস যেন খুব ক্লান্ত এমনি একটা ভঙ্গিতে হাত তুলেই নামিয়ে নেবে। কিন্তু তার চোখ আলোকিত থাকবে এক নামহীন খুশিতে। পরে শুধোবে, আপনার বুঝি বাগান করার শখ?
বলতে পারবে না আবু। কেবল বলবে, কিছুটা।
কী ফুল করেছেন? নিয়ে যাবেন একদিন দেখাতে?
যাবেন? সত্যি যাবেন? কবে বলুন।
তাহলে কাল।
বেশ তো।
তারপর কাল বাগান দেখে ফেরার পথে আবু আচমকা বলবে বিলকিসকে, কখনো ভালোবেসেছেন?
শুনে বিস্মিত হবে বিলকিস। বিস্মিত হয়ে পরকহীন চোখে তাকিয়ে থাকবে তার দিকে। তারপর কম্পিত কণ্ঠে উচ্চারণ করবে, লাজনা হয়ে, অস্পষ্ট মাথা নেড়ে, না, না। আমিও না।
তখন বিলকিসের শরীর স্পর্শ করে আবু বলবে, কী জানি কেন, সারাক্ষণ খুব একা মনে হয়। মনে হয়, কোথায় কে যেন ঐ দিগন্তটার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। অথচ চিনতে পারি না, কাছে যেতে পারি না। বলতে পারেন কেন এমন হয়?
কী জানি।
তখন বিলকিস সুন্দর একটি স্বর হয়ে উঠবে।
আমি অনুভব করতে পারছি, চোখ ভরে দেখতে পাচ্ছি, আপনি তাকে চিনতে পারছেন না। আপনার মনে তখন খুব ঝড় দিয়েছে। তখন দুহাত বাড়িয়ে সেই দিগন্তে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে কাছে করছেন। আমি আমার দুচোখ ভরে দেখতে পাচ্ছি যে।
তার উত্তরে আবু তাকে দুহাতে জড়িয়ে বলবে, এইতো আমি কাছে করেছি।
হঠাৎ হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে চারটে বাজতে মাত্র দশ মিনিট বাকি। বিলকিসদের বাসায় পৌঁছুতে লাগবে পনেরো মিনিট। চারটে পাঁচে গিয়ে পৌঁছুবে। সেটা হয়ত সময় রক্ষা হলেও শোভন হবে না মোটেই।
চারটে বলেছে বলে চারটেয় পৌঁছুতে হবে? তাতে করে যেন তার আগ্রহটা ধরা পড়ে যাবে। তার চেয়ে এক রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসলো আবু। কিন্তু কী দুর্ভাগ্যক্রমে সে ঢুকেছিল এই দোকানটায়। তার পুরনো বন্ধু কামাল বসে ছিল একগাদা ফাইল টাইল চায়ের ছড়ানো সরঞ্জাম আর সিগারেটের খোলা প্যাকেট নিয়ে। স্কুল ফাইন্যাল থেকে আই, এ, অবধি একসাথে পড়ে আবু এলো ইউনিভার্সিটিতে আর কামাল গিয়েছিল তার বাপের ব্যবসায়। কামাল দুহাত তুলে হৈচৈ একটা কাণ্ড বাধিয়ে বলল, আরে এসো এসো। কতকাল পরে দেখা।
তাকে দেখে, তার কথা শুনে, আবু খুশি হতে পারল না। একটা বিদঘুঁটে পাথর এসে যেন তার পথ আগলে দাঁড়িয়েছে। তবু চেষ্টা করে যতটা প্রীত হওয়া গেল সেটাই যথেষ্ট হলো। কামালের জন্যে। কামাল খুশি হয়ে টেবিল চাপড়ে বলল, চা খাও।
ঘড়ির দিকে তাকাল আবু। তাকিয়ে একটু উসখুস করে উঠল।
আর কিছু?
অন্যদিকে ইতস্তত দৃষ্টি করছিল আবু। এখন যেন মনে হচ্ছে, বিলকিসের কাছে তার পৌঁছুতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। চোখ ফিরিয়ে তাড়াতাড়ি বলল, না, না।
খাও না কিছু।
কামাল তার হাতে ঠেলা দিয়ে কথাটা বলল; বড়ড ভালগার মনে হলো তখন তাকে। আবারো শুধালো, চপ?
না।
কাটলেট?
না।
তো কী খাবে?
আবু যাবার জন্যে অস্থির হয়ে উঠল। কিছু বুঝতে না পেরে কামালেরই খোলা প্যাকেট থেকে সিগারেট নিয়ে ধরালো। সিগারেট সে বড় একটা খায় না। এখন মনে হচ্ছে এর চেয়ে ভালো কিছু নেই। এতে করে দুরন্ত আঙুলগুলো তবু ঠাণ্ডা থাকছে। কামাল আবার জিগ্যেস করল, কেক? পেশট্রি?
বললাম তো শুধু চা। তা নয়, তুমি একেবারে পুরো মেনু মুখস্ত বলতে লেগেছ।
তার কথা শুনে হা হা করে হাসল কামাল। হাসতে গিয়ে তার রোগা মুখটার অনুপাতে অসম্ভব বড় একটা হাঁ সৃষ্টি হলো। বলল, না হয় বিজনেসে লসই খাচ্ছি, তাই বলে বন্ধু বান্ধবকে খুশি করবার মতো অবস্থা নেই? এই দ্যাখোনা, জুন থেকে ডিসেম্বর, পাকা ছটি মাস— আবু বাধা দিল।
কামাল, এক্ষুনি যেতে হবে এক জায়গায়। একেবারে ভুলে গেছি। খুব দরকার।
বলতে বলতে উঠে দাঁড়াল আবু। কামালকে এক লহমার সুযোগ দিল না। নইলে ঝাড়া দুঘণ্টা তার বকবকানি শুনতে হতো।
একেবারে মনেই ছিল না। আরেকদিন তোমার চা পেশট্রি চপ কাটলেট যা আছে সব খাওয়া যাবে। চলি।
বাইরে বেরিয়ে আবু যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। বেরিয়ে আসবার মুখে জোর করে হাসতেও হয়েছিল একবার। বাইরে এসে হঠাৎ সে অনুভব করে পেশীতে হাসিটা তখনো আঁকড়ে আছে।
বিরক্ত হয়ে মুহূর্তে সেটাকে নিশ্চিহ্ন করে আবু রিকশা নেয়।
বিলকিসদের বাসায় যখন পৌঁছুলো তখন প্রায় সাড়ে চারটে। মাত্র আধঘণ্টা। দেরিটা এখনো ভদ্রতার সীমারেখা পেরিয়ে যায়নি দেখে আবু মনে মনে খুশিই হলো।
একবার ইতস্তত করল গেটের কাছে দাঁড়িয়ে। নীল বার্ণিশ করা কাঠের দরোজা। হঠাৎ মনের মধ্যে ভীষণ একটা টান অনুভব করল আবু। ফিরে যাবে? যেন দেখা না হলেই পরম একটা স্বস্তি পাওয়া যাবে, কিন্তু ফিরে যাওয়াও যায় না আর। কেউ দেখলে বলবে কী, লোকটা দরোজার কাছে দাঁড়িয়ে না ডেকেই চলে যাচ্ছে। কত কী ভাবতে পারে ঐ তো মোড়ে দাঁড়ানো লোকটাই। কিংবা বিলকিস যদি দেখে ফেলে দোতলা থেকে?
প্রায় সংগে সংগে বছর দশেকের একটা মেয়ে দৌড়ে এসে দরোজা খুলে প্রজাপতির মতো জিগ্যেস করল, কাকে চান?
আন্দাজ করে আবু বলল, তোমার আপাকে।
মেয়েটি শরীর দুলিয়ে বলল, নেই তো। আপনার একটা চিঠি আছে। এখন চারটে বাজে না?
হ্যাঁ।
আবুর মাথার মধ্যে সব যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। বোকার মতো সে জিগ্যেস করল, নেই?
উহু। বাইরে গেছে। দাঁড়ান, যাবেন না।
চিঠি এনে দিল মেয়েটি। সে চিঠিতে লেখা আছে—-
আপনাদের বাসা থেকে কে একজন এসে ইউনিভার্সিটিতে খুঁজছিল আপনাকে। তক্ষুণি যেতে বলেছিল। বাসায় কে যেন এসেছেন বলল। নামটা মনে করতে পারছি না। বারবার বলে গেছে দেরি করবেন না যেন। ভালোই হলো, আমাকেও হঠাৎ একটা দরকারে বেরুতে হতো। তাতে না জমত আলাপ, মাঝ থেকে শুধু শুধু কষ্ট করতেন। কিছু মনে করবেন না। আরেক দিন আসবেন?
এক মুহূর্ত কি ভাবল আবু। চিঠিটার মর্ম ভালো করে বুঝলোও না। আগাগোড়াই যেন বিলকিসের ব্যঙ্গ–তাকে ডাকা, ডেকে না থাকা। হঠাৎ মরিয়া হয়ে উঠল সে। খাতা খুলে লিখল—- আমি না এলে কারো কিছু এসে যাবে না আশা করি। আরেকটা তারিখ নাইবা নিলেন।
পাতাটা ছিঁড়ে ভাঁজ করে মেয়েটোকে দিয়ে বলল, তোমার আপাকে চিঠিটা দিও।