আজ দুপুরবেলা ভারি মেঘ করে এল। মনে হচ্ছে যেন বর্ষাকাল। এই বৃষ্টির পরেই শীতকাল শুরু হবে। এতদিন হেমন্ত হেমন্ত ভাব ছিল। কালো মেঘের পটভূমিতে বেলোয়াটিকারের দিক থেকে একঝাঁক সাদাপায়রা ডিগবাজি খেতে খেতে উড়ে আসছিল নয়াটোলির দিকে। মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইল দীপিতা।
ওর শ্বশুরবাড়ির গেটের কৃষ্ণচূড়াগুলোর উলটোদিকে পথের ওপরে একটি মস্ত গামহার গাছ আছে। গামহার গাছ দীপিতা চিনত না। অমল-ই চিনিয়ে দিয়েছে। ভেতরে আছে একটি বটলব্রাশের গাছ। অনেক পুরোনো। শ্বশুরমশাই নাকি ওই গাছটি সুষ্ঠুই জমিটি কিনে বাড়ি বানিয়েছিলেন। আরও একটি গাছ ছিল নাকি ওই বটলব্রাশ-এর জোড়া। সেটি নাকি বাড়ি বানাবার সময়-ই কেটে ফেলা হয়েছে। ভাবলেও খারাপ লাগে। গাছ কেউ কাটে? সে, যে গাছই হোক-না-কেন।
বটলব্রাশ-এরও গাছ দীপিতা কলকাতাতে তার কলেজের এক বন্ধুদের বাগানবাড়িতে দেখেছিল। প্রকৃতি যে, তাকে এখনও মোহিত করে, তার মধ্যে আলোড়ন তোলে, একথা ভেবেও অবাক লাগে দীপিতার। বিশ্বাস-বাড়ি থেকে কণিকা ব্যানার্জি বা নীলিমা সেনের বা অতুলপ্রসাদের গান, বা রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের পুরাতনি গান ভেসে এলে এখনও কেন, মন উচাটন হয়? এখনও সব সূক্ষ্মতা বোধ হয় নষ্ট হয়নি। হয়নি যে, সেটাই বড়োকষ্টের। পুরোপুরিই যদি ভোঁতা হয়ে যেতে পারত, সুখী হতে পারত হয়তো। খেতে-পরতে পাওয়াই তো একজন মানুষের সুখের চরম নয়, পরমপ্রার্থনা নয়!
কবিতা লেখে না আর ও, গানও গায় না, এমনকী কবিতা পড়েও না। এ বাড়ির সঙ্গে কবিতা, গান এসবের কোনো সম্পর্কই নেই। সকাল থেকে রাত অবধি ‘টাকা রোজগার আর খাওয়ার চিন্তা। বিনোদন’ বলতে একমাত্র পরনিন্দা আর পরচর্চা। তবু ও যে, বেঁচে আছে এখনও তা বুঝতে পারে আজকের মেঘলা দুপুরের মতো প্রাকৃতিক কোনো হঠাৎ অভিঘাতে। বেঁচে আছে বলে, নিজেকে অভিশাপও দেয় দীপিতা। এ বাঁচা কি বাঁচা! আজকাল ওর প্রায়ই মনে হয় যে, কিছু একটা করতে হবে। ওর জীবনটাকে এভাবে নষ্ট হতে দেবে না দীপিতা। প্রায়-ই ভাবে, যখন একা থাকে। ওর আগের জীবনটা, কুমারী জীবনটা, গায়ে-মাখা সুগন্ধি সাবানের-ই মতো হঠাৎ-ই হাত পিছলে শ্বশুরবাড়ির কুয়োতে পড়ে গেছে। পড়ে গিয়ে গলে গেছে। আর তাকে উদ্ধার করার উপায় নেই কোনো।
বিয়ের পরে পরে, যখন অমল এখনকার চেয়ে অনেক বেশি সময় দিত দীপিতাকে, তখন রবিবারের দুপুরে অনেক গল্প করত ওরা। অমলের গ্রাম্য সারল্য মুগ্ধ করত দীপিতাকে। কবিতা বা গানের বা নাটকের বা সাহিত্যের গল্প নয়। এমনিই সব গল্প। অন্য পরিবেশের, অন্য জীবনের সব সাধারণ গল্প। তাই অসাধারণ মনে হত দীপিতার কাছে। এখন অমল খালি ভস ভস করে নাক ডাকিয়ে ঘুমোয়।
বিয়ের পরে পরে অমল দীপিতার এই ‘গাছ-প্রীতি’র কথাতে হাসত। বলত, নানারকম গাছ কেটে, তাদের চিরে-ফেড়েই তো আমাদের রুজি-রোজগার। গাছকে অত ভালোবাসলে, খাব কী? শুকিয়ে মরতে হবে। ব্যাবসা লাটে উঠবে।
সেকথা ভাবলেও খারাপ লাগত দীপিতার।
একদিন অমলকেও বলেছিল, দেখো, তোমাদের একদিন খুব পাপ লাগবে। যারা মদের ব্যাবসা করে তারা যেমন ভালো হতে পারে না। গাছেদের প্রাণ নেই বুঝি?
-তোমার বড়মামা তো সব-ই জানতেন। তোমাকে বলেননি উনি আমাদের কীসের ব্যাবসা?
অমল জিজ্ঞেস করেছিল।
-না : আমাকে কেউ কিছুই বলেননি। শুধু বলেছিলেন, হবু-জামাই ডালটনগঞ্জের বড়ো ব্যাবসাদারের ভালো ছেলে। সচ্চরিত্র। তখন ডালটনগঞ্জ নামের যে-একটা জায়গা আছে, অথবা সেটা কোথায়, তাও জানতাম না। বড়োমামিমা বলেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের “অরণ্যের দিনরাত্রি’ ওইসব জায়গাতে তোলা।
অমল বলত সব তো মোহনদার-ই বন্দোবস্তে হয়েছিল। ওই ছবির পেছনে মোহন বিশ্বাসের যে, কত টাকা গলে গেছে সে-সময়ে, সে আমরাই জানি।
বড়োমামা বলেছিলেন, জামাই বিরাট ব্যাবসার পার্টনার।
হ্যাঁ। পার্টনার ওই নামেই! ইনকাম-ট্যাক্স কমাবার জন্যেই তো পার্টনার করেছিলেন বাবা। ছাতার পার্টনার আমি। অমল বলত।
তারপরে দীপিতা বলত, আমিও আশ্চর্য হতাম ভেবে যে, কোথায় কলকাতার বরানগর আর কোথায় এই পালামৌর ডালটনগঞ্জের নয়াটলি! তোমার বাবা খুঁজে খুঁজে আমাকে বের করলেন কী করে?
–বা : রে! তোমার বড়োমামার সঙ্গে বাবার যে, যোগাযোগ ছিল অনেক-ই আগে থেকে। তোমার বড়োমামা তো পুলিশের এস. পি. ছিলেন ওড়িশার সম্বলপুরে। আমার বাবাও তো তখন সেখানেই ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের রেঞ্জার ছিলেন। কী কারণে জানি না, কোনো গূঢ় কারণ নিশ্চয়ই থাকবে, আমার বাবা তোমার বড়োমামার কাছে খুব-ই কৃতজ্ঞ ছিলেন। সেই কৃতজ্ঞতার ঋণ মিটোতেই আমার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে তোমাকে নিয়ে এসেছিলেন আমার বাবা। তোমার মামারা সত্যি সত্যিই তোমাকে হাত-পা বেঁধে জলে ফেলে দিয়েছিলেন। আমি কি কোনোদিক দিয়েই তোমার যোগ্য? রূপে-গুণে তুমি তো সরস্বতী। সফিসটিকেটেড।
সফিটসিকেশন সব ধুয়ে-মুছে যেতে বসেছে। পাঁচ বছর তো হল কর-বাড়িতে। তারপর উদাস গলাতে দীপিতা বলেছিল, আমার-ই বা কী যোগ্যতা। যে, মেয়ে স্বাবলম্বী নয়, যে নিজে রোজগেরে নয় অথবা যার বাবার টাকার জোর নেই তার কোনো গুণ-ই গুণ নয়। এমন অভাগীও তো সকলে হয় না। কারও মা-বাবা আর দুই দিদি কি একইসঙ্গে প্লেন ক্র্যাশে মারা যায়?
তারপরে একটু চুপ করে থেকে বলল, আসলে, মামাবাড়ির, মানে, বড়োমামা বড়োমামিকেই মা-বাবা বলেই জেনেছিলাম। মেজোমামার মেয়েদের না-থাকা দিদিদের মতোই দেখেছিলাম। কলকাতা শহরের শিক্ষিত, সংস্কৃতিসম্পন্ন মানুষেরাও যে, এমন হতে পারেন, তা কী করে জানব বলো? তা ছাড়া আপন মামাই তো। অবশ্য শুনেছি যে, বাবার দশ লক্ষ টাকা ইনশিয়োরেন্স ছিল। আরও কী কী ছিল, তা আমি জানি না। সব-ই বড়োমামাই নিয়েছিলেন। আমার তো তখন পাঁচ বছর বয়েস।
-তোমার বড়োমামা বাবার কাছ থেকেও এক লাখ টাকা নিয়েছিলেন, তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে দেওয়ার জন্যে। পণ’। তা কি তুমি জানো?
–সে কী! টাকা তো মেয়েপক্ষই চিরদিন দেন বলে শুনেছি।
–আমি শুনেছি, তোমার বড়োমামার কাছে আমার বাবার এত গভীর ঋণ ছিল যে, তাঁকে কন্যাদায় থেকে উদ্ধার করেও সেই ঋণশোধ হয়নি, উলটে ওই টাকাও দিতে হয়েছিল।
-কীসের ঋণ?
–পুলিশ সাহেবের কাছে তো কারও টাকার ঋণ থাকে না।
অমল মুখ নামিয়ে বলল।
-তবে?
–আমি জানি না। তবে সম্বলপুরের ফরেস্ট অফিসের এক পিয়োন বাবুলি বেহারা, যার কাছেই আমি মানুষ হয়েছিলাম বলতে পারো, যার কাছে আমার অক্ষর পরিচয়, আমার হাতেখড়ি, তার কাছ থেকেই আমি শুনেছিলাম যে, বাবা একটি খুনের মামলাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এবং মিথ্যে খুন নয়। ফাঁসি হয়ে যেত। তোমার বড়মামা বাবাকে বাঁচিয়েছিলেন।
–এসব কথা তুমি বিশ্বাস করো? তোমার নিজের বাবা সম্বন্ধে এসব কথা?
–বিশ্বাস করতে ভালো লাগেনি। কার-ই বা লাগে? কিন্তু করি। কারণ বাবুলি কাকা ভগবানের মতো মানুষ ছিলেন। সম্বলপুর ছেড়ে তাঁর দেশ বার্মাতে চলে যাবার আগে উনি বলেছিলেন অমু, বাবার মতো হোয়য়া না, তুমি, তোমার মতোই হোয়ো। মানুষ’ হোয়য়া। সন্তানহীন বাবুলিকাকা আমাকে নিজের সন্তানের মতোই দেখতেন। কিন্তু কথা রাখতে পারিনি। ছেলেরা হয়তো বাবার মতোই হয়।
–তোমার বিয়ের সময়ে তাঁকে তো দেখলাম না। নেমন্তন্ন করোনি?
–আমার বিয়েতে আমার কতটুকু হাত ছিল? কোনো ব্যাপারেই আমার কোনো অধিকার-ই ছিল না। না তখন ছিল, না এখন আছে। আমি বাবার কর্মচারী। নিজের বাবার চাকরি করার মতো বাজে ব্যাপার আর হয় না। যারা জানে, তারাই জানে।
-দীপিতা বলেছিল, তুমি কি পুরুষমানুষ? তোমার এসব কথা বলতে লজ্জা করে না?
-করে। আবার করেও না। আমি পুরুষমানুষ কি না জানি না। আমি ভালো মানুষ। বলতে পারো বোকামানুষ। এমনকী মেয়েমানুষও বলতে পারো। অনেকরকম মানুষ নিয়েই তো এই সংসারের চিড়িয়াখানা ভরা।
-মানুষ কি হতে পেরেছ? তোমার বাবুলিকাকার কথামতো?
-না।
-তবে?
-জীবনে মানুষ আর ক-জন হতে পারে বলো? মানুষের চেহারা তো কোটি কোটি মানুষের প্রত্যেকেরই থাকে কিন্তু মানুষ’ ক-জন হতে পারে? তবে হতে যে, পারিনি তারজন্যে বাবার শিক্ষাও অনেকখানি ছিল। বাবুলি বেহারার সব প্রভাব থেকে যাতে আমি মুক্ত হই, বাবা তার সব বন্দোবস্তই করেছিলেন। তা ছাড়া আমার মধ্যে সাহস ছিল না। বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার মতো চরিত্রজোর আমার ছিল না। পড়াশুনোতেও তো সাধারণ ই ছিলাম। মেরুদন্ড এমনি এমনি গজায় না, তারজন্য শক্ত ভিত-এর প্রয়োজন হয়। বাবা তাড়িয়ে দিলে তোমাকে আর পুঁটিকে নিয়ে আমি কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? কী এমন নিজস্ব যোগ্যতা আমার!
একটু চুপ করে থেকে অমল বলেছিল, বাবাকে কোনোদিনও ভালোবাসতে পারিনি, শ্রদ্ধা করতে পারিনি। ভয়-ই পেয়েছি চিরদিন। সম্পর্কটা বাবা-ছেলের হতে পারেনি কোনোদিনও, রাজা-প্রজার-ইছিল। আমার মেরুদন্ড’ বলে যাতে কিছু গড়ে না ওঠে, তার সব বন্দোবস্তই বাবা করেছিলেন। তবুও বিদ্রোহী হয়ে উঠতাম মাঝে মাঝে। অক্ষমের, দুর্বলের বিদ্রোহ। এখনও হই। বিদ্রোহের বীজ সম্ভবত এখনও সুপ্ত আছে আমার মধ্যে। তাই বাবা আমার চেয়ে কমল আর বিমলকে অনেক বেশি ভালোবাসেন। তারা যে, বাবার বুড়ো-বয়সের ছেলে কিনা! তারা বাবার স্বপ্নের ছেলে, বাবার আদর্শে, তাঁর মানসিকতায়, তাঁর জীবনদর্শনেই তারা বড়ো হয়ে উঠেছে। যাকে ইংরেজিতে বলে, মানে, যেমন ফরেস্ট কনসার্ভেটর ঘোষ সাহেব প্রায়ই বলতেন, ‘Like Father like Son.
তারপর বলেছিল, আমার মাঝে মাঝে কী মনে হয় জান?
–কী?
–কমল আর বিমল বড়ো হয়ে ব্যাবসাতে এলেই, বাবা আমাকে লাথি মারবেন। পরিবারের স্বার্থর-ই জন্যে বাবা আমাকে ব্যবহার করছেন। আমাকে উনি পছন্দ করেন না। তা ছাড়া উনি প্রায়-ই একটি বাক্য ব্যবহার করেন, ‘ওকে টাইট করে দেব। আমাকে একা নয়, পৃথিবীর সবাইকেই। এই ‘টাইট করা’ মনোবৃত্তি থেকেই বাবার সব স্বাভাবিকতা আর ভালোত্বর প্যাঁচগুলো বোধ হয় আস্তে আস্তে একেবারে কেটে গেছে। ওইসব গুণ বাবা আর ইচ্ছে করলেও ফিরে পাবেন না। একসময়ে ওইসব গুণ অবশ্যই ছিল। নইলে, আমার মধ্যে ওসব ‘বোকা-বোকা’ বোধ এল কী করে! আমিও তো বাবার-ই ছেলে। আমি যে-সময়ে মায়ের গর্ভে আসি, তখন সম্ভবত বাবা মানুষটা অন্যরকম ছিলেন। আস্তে আস্তে বদলেছেন। বোধ হয় সব মানুষের বেলাতেই তাই হয়। সে কারণেই বোধ হয় সব স্বামী-স্ত্রীর প্রথম সন্তানেরা সরল, ভালো অথবা বোকা-বোকা হয়। তারা ধূর্ত হয় না সাধারণত। অবশ্য ব্যতিক্রম কি আর নেই? অবশ্যই আছে।
-থাক এসব কথা।
দীপিতা বলেছিল, অমলের পিঠে হাত রেখে।
তারপর গাঢ়স্বরে বলেছিল দীপিতা অমলকে, সোনা, আমার এসব খারাপ কথা শুনতে ভালো লাগে না গো। এসব তুমি কখনো বোলো না আর আমাকে। আমি বুঝতে পারছি যে, ক্রমশ আমি তোমাদের-ই মতো হয়ে যাচ্ছি। আমার নিজস্বতা বলতে আর কিছুমাত্র রইল না। থাকবে না।
একটু পরেই অমলের নাক ডাকতে শুরু করল। দীপিতার ঘুম আসছিল না। সে আবার জানলার কাছে মোড়াটাকে টেনে নিয়ে এসে বসল।
রঙ্গনের ডালে বৃষ্টির ফোঁটা জমে আছে। বৃষ্টিতে ভেজা গাছগাছালি থেকে দারুণ একটা গন্ধ উঠছে। ভেজা ইউক্যালিপটাসদের গা থেকেও ভারি সুন্দর গন্ধ ছড়াচ্ছে। আস্তে আস্তে নয়াটোলির এই কটুগন্ধী বাড়ির ভেতরে বৃষ্টিশেষের হাওয়াতে ভর করে, এক মিশ্র সুগন্ধ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে, কর-বাড়ির দূষিত আবহাওয়াতে সেই অসময়ের বৃষ্টিবাহী সুগন্ধ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। ধীরে, ধীরে, খুব-ই ধীরে ধীরে।
দীপিতা ভাবছিল, সেও কি নিজের নষ্ট হয়ে-যাওয়া পানাপুকুরের জীবনকে বদলাতে পারবে? আস্তে আস্তে, খুব আস্তে আস্তে?
কর-বাড়ির আবহাওয়া ক্রমশই অসহ্য হয়ে উঠছে ওর কাছে। কিন্তু জীবন তো ব্লাউজ বা শাড়ি নয়, যে ইচ্ছে করলেই ছেড়ে ফেলা যায়। এই জীবন তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছে। এই বাঁধন ঘেঁড়ার ক্ষমতা তার একার হাতে নেই। অথচ…
.
পালামৌ ন্যাশনাল পার্ক এর মধ্যে গাড় থেকে মারুমারের মাঝে মীরচাইয়া ফলস-এর পরে পিচরাস্তা থেকে ডানদিকে একটি পথ বেরিয়ে গেছে বন বিভাগের-ই বানানো। সে-পথে ক্কচিৎ বন-বিভাগের জিপ ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনের চাকা গড়ায়। পালামৌ টাইগার প্রোজেক্টের ‘কোর এরিয়ার’ মধ্যে পড়ে এইসব অঞ্চল। এত বছরে বাঘের সংখ্যা সত্যিই বেড়েছে কি না, তা বনবিভাগের আমলারাই বলতে পারবেন। কিন্তু টাইগার প্রোজেক্ট চালু হওয়ার পরে, এ-অঞ্চলের অগণ্য মানুষ যে, অনাহারে মারা গেছে, অগণ্য মেয়ে দেহপসারিনি হয়ে গেছে একথা ভোঁদাই জানে। এইসমস্ত অঞ্চলের মানুষদের এই রুখু অরণ্য-বেষ্টিত গ্রামের মধ্যেই বাস। তাদের ফসল ফলানোর মতো জমি নেই বলতে গেলে। যতটুকু আছে, তাতে গোলদনি, সাঁওয়া, চিনামিনা এইসব জংলি ধান কিছু করে ওরা। বাজরা মকাইও করে, কেউ কেউ মটরছিম্মি বা লাউঁকি। কিন্তু সেই ধান খেয়ে বড়জোর তিন মাস চলে। ছিপাদোহর, ও গাড়র হাটে অন্য ফসল বেচে যা, সামান্য আয় হয় তাতেও মাসখানেকের খোরাকির সংস্থান হয়। বাকি সময়ের খাবার এরা আগে জোটাত বাঁশ ও কাঠের ঠিকাদারদের কাছে কুলি-কামিনের কাজ করে। কিন্তু টাইগার প্রোজেক্ট হওয়ার পর থেকে সেসব রোজগার একেবারেই নেই, কারণ, বাঘেদের নির্বিঘ্ন-প্রজননের জন্যে জঙ্গলের মধ্যে সবরকম ক্রিয়া কর্মই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুকনো মহুয়া, বুনো আম, এবং অন্যান্য ফল ও ফুল এবং নানা মূল, কান্দা-গেঠি এইসব খুঁড়ে বের করে খেয়ে কোনোক্রমে, মানুষের মতো নয়, পশুর ই মতো বেঁচে থাকে এরা। আজকাল ডাকাতিও শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন হল। নকশাল ছেলেদের আড্ডাও হয়েছে। কী করবে মানুষ। বাঁচতে তো হবে। বুড়োরা হায় রাম! বলে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাদের ভাগ্যকে দোষারোপ করে অনাহারে মরছে। কিন্তু শিশুরা এখন যুবক হয়েছে। তারা অত সহজে ভাগ্যর ওপরে সব ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারেনি। তাই ট্যুরিস্টদের ছিনতাই করা শুরু করেছে। ডাকাতিও হচ্ছে প্রায়-ই।
ওই লালমাটির বন-পথের পাশে, জিপের বনেটের ওপরে ভোঁদাই, ইমরাত আর ইমরাত এর এক রিস্তেদার রহমত বসেছিল। ইমরাত আর রহমত মহুয়া খাচ্ছিল। বিটকেল, ওদের ভিজিয়ে রাখা ভোলা, ভাজা আর কাঁচা লঙ্কা আদার কুচির সঙ্গে মাটির ভাঁড়ে করে এগিয়ে দিচ্ছিল। চোরাশিকারে এলে ওরা সঙ্গে কখনো-কখনো বিটকেলকেও নিয়ে আসে। অতটুকু ছেলেকে সঙ্গে দেখে চেকনাকাতে কেউ সন্দেহও করে না।
ইমরাতের এক রিস্তেদার মৌলবি, জঙ্গলের মধ্যে ডেরা করেছে বেশ কিছুদিন হল। ওদের দু-জনকে জিপে বসিয়ে রেখে ইমরাত আর রহমত তার কাছে গেছিল। ডিজেলের জেনারেটর আছে মৌলবির। টিভি আছে। রেডিয়ো আছে। সরকার এই অভয়ারণ্যের মধ্যে তাকে থাকতে দিয়েছে কেন কে জানে? লোকটার জীবিকা কী, তাও বুঝতে পারে না ভোঁদাই। কিন্তু বিহার-শরিফ থেকে, নওয়াদা থেকে, রাংকা থেকে, গাড়োয়া থেকে কাবুলিওয়ালার মতো দেখতে মানুষেরা এর কাছে আসে-যায়। সব-ই একে ডাকে ‘মৌলবি সাব’ বলে। ইমরাতের এই রিস্তেদারের চেহারা কখনো দেখেনি ভোঁদাই। লোকটার কাছে বন্দুক, রাইফেল আছে। ইমরাতের গুলি-বন্দুক সব সেই জোগান দেয়। দারুণ দারুণ বিলিতি গুলি। কী করে পায়, কোথা থেকে পায়, কে জানে।
শিকার হয়ে গেলে জঙ্গলেই তা কেটে-কুটে একটা রাং মৌলবি সাহেবকে দিয়ে বাকিটা ওরা নিয়ে যায়। ইদানীং নিজেদের বন্দুক রাইফেলও আনে না। চেকনাকা পেরোতে সুবিধে হয়। মৌলবির কাছ থেকে ধার নিয়ে বন্দুক-রাইফেল, তাকেই ফিরেই দেয় ইমরাতরা।
শিকার বলতে চিতল হরিণ, কোটরা, খরগোশ। শম্বর, ছোটো পেলে মারে। বড়োশম্বর মারলে অনেক-ই হ্যাঁপা। ম্যানেজ করা যায় না। খেতেও ভালো নয়। একবার একটা বাচ্চা মেরেছিল মাসখানেকের। ভারি নরম মাংস ছিল। ইমরাতরা গোরুও খায়।
কেমন খেতে, তা জানার জন্যে এবার একটা বাইসনের বাচ্চাও মেরেছিল। ভারতীয় বাইসনের আসল নাম ‘গাউর’। বাইসন, উত্তর আমেরিকার প্রাণী। গাউরের চেয়ে অনেক-ই ছোটো। সাধারণে অনেকেই জানে না এসব।
ইমরাত বলে যে, মৌলবি সাহেব এদিকে অনেক মাদ্রাসা বানাবার জন্যে এসেছেন স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে। পাটনার বড়া মসজিদের ইমাম-ই নাকি তাঁকে পাঠিয়েছেন। এখন বিহারে লালু যাদব-রাবড়ি দেবীর জমানাতে যাদব আর মুসলমানদের কেউ কিছু বলে এমন হিম্মত বা মূর্খামি কারও নেই। তা ছাড়া কোনো অজ্ঞাত কারণে বনবিভাগও মৌলবি সাহেবকে বেশ সমীহ করে চলে। অঙ্ক কী, তা ঠিক বোঝে-না ভোঁদাই।
ভোঁদাই বোঝে যে, কিছু একটা গোলমাল আছে। তবে ইমরাতের কোনো গোলমাল নেই। নানা জায়গাতে ইউনিফর্ম সাপ্লাই করে জীবিকা নির্বাহ করে সে। আঠারো ঘণ্টা খাটে। পুরো বিহার জুড়ে ওর ব্যাবসা। ব্যবহারও খুব ভালো। হেরাফেরিও করে না কোনোরকম। দিব্যি দিন চলে যায়। তার দুই বিবি বছর বছর বিয়োয়। বিরিয়ানির দাওয়াত লেগেই থাকে। উদার মানুষ। তবে টোকা মারলেই বোঝা যায় যে, তার ভেতরেও একজন কট্টর’ মুসলমান বাস করে। বাইরের ঔদার্য তখন ঝুরোমাটির মতো ঝরঝরিয়ে ঝরে যায়।
ইমরাতের চরিত্রর নিষ্ঠুর দিকটা ফুটে ওঠে, যখন ও গুলিতে আহত অথবা মৃত জানোয়ারকে দৌড়ে গিয়ে জবাই করে। ওরা বলে, ‘হালাল করা’। এ-বছরে শীতে কান্দাহারে খুনি হাইজ্যাকারেরা যেমন করে রূপিন কাটিয়ালকে জবাই করেছিল। গলাতে আমেরিকান ‘রেমিংটন কোম্পানির বড়ো ছুরি দিয়ে আড়াই প্যাঁচ লাগায়। এই জবাই একটা বীভৎস ব্যাপার।
বেতলার টুরিস্ট লজ-এর বাবুর্চির হেল্পার একদিন নাকার পাশে একটা বড় মোরগকে হালাল করে ছেড়ে দিয়েছিল। তখন ভোঁদাই পথের পাশে জিপে বসেছিল। শ্বাসনালি-কাটা মোরগটা কীভাবে দপাদাপি করছিল, এক এক ঝটকাতে রক্তর ফিনকি ছিটিয়ে কত দূরে দূরে গিয়ে পড়ছিল, তা দেখেই ভোঁদাই বুঝেছিল, জীবন্ত অবস্থাতে হালাল-করা প্রাণীর রকমটা। এর চেয়ে বলি অনেক-ইভালো। এককোপে ধড় থেকে মুন্ডু আলাদা হয়ে যায়। কষ্ট অনেক ই কম হয়। ভোঁদাই তাই ভাবে, গোরু বা আহত বড়ো জানোয়ারকে জবাই করলে তাদের মৃত্যুযন্ত্রণা কেমন হতে পারে। মানুষের কথা তো ছেড়েই দিল। জানোয়ার মরে গেলেও, মরে তার জিভ বেরিয়ে গেলেও, ইমরাত তবু তাকে হালাল করে। অথচ যে, প্রাণীকে ‘হালাল’ করে মারা না হয়েছে তাকে খাওয়া ইসলামে বারণ আছে। কখনো ইমরাত ভোঁদাই-এর সঙ্গে একা থাকলে কিন্তু হালাল নিয়ে অমন বাড়াবাড়ি করে না। সঙ্গে অন্য কোনো মুসলমান থাকলেই অমন বাড়াবাড়ি করে। পাছে সেই সঙ্গী ভাবে যে, ইমারতের মুসলমানত্বে কোনো খামতি আছে। মুসলমানদের সঙ্গে হিন্দুদের সম্ভবত এখানেই তফাত। ইসলামের যেটা গুণ সেটাই হয়তো দোষ। বড়োবেশি ঘেরাটোপ, বাঁধাবাঁধি ওদের ধর্মে হিন্দুধর্ম হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনেক স্বাধীনতা দিয়েছে। দোষ’ বলতে, জাতপাতের নোংরা ব্যাপারটা। কিন্তু ইসলাম ধর্মে গোঁড়ামিটাই একটা গুণ। ওদের সবচেয়ে বড়োগুণ এই যে, মানুষে মানুষে কোনো তফাত করে না ওরা। ওদের বিরাদরিকে তারিফ করে ভোঁদাই। এই কারণেই কত হিন্দু অপমানে, অসম্মানে মুসলমান হয়ে গেছে।
হিন্দুরা সকলেই যে, দেবদেবী মানে এমন আদৌ নয়। কিন্তু মুসলমানদের আল্লার প্রতি অন্ধ-ভক্তি না থাকলেই চলে না। এই ব্যাপারটা একটু অবাক করে ভোঁদাইকে।
ছেলেবেলার সুখ-দুঃখের বন্ধু ইমরাত। তার চেয়েও বড়োকথা, শিকারের বন্ধু। অনেক বিপদকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ‘সামনা করেছে ওরা কৈশোর থেকে। এই বন্ধুত্বের রকম অন্যে বুঝবে না।
বিটকেল একদিন বলেছিল ও বাজারে শুনেছে যে, পুরুলিয়ায় প্লেন থেকে যে-অস্ত্রশস্ত্র ফেলা হয়েছিল তারসঙ্গে এই মৌলবি সাহেবের নাকি সম্পর্ক আছে।
যতদিন না দোস্তিতে ফাটল ধরছে ততদিন বাজারি গুজবে দোস্ত-এর বিচার করতে বসতে রাজি নয় ভোঁদাই। তা ছাড়া ইমরাত পুরো দস্তুর হিন্দুস্থানি। গাছের খাওয়া আর তলার কুড়োনোটা ও অত্যন্ত অপছন্দ করে। ওর নামে মিথ্যে কথা রটায় অন্য মুসমানেরাই।
জঙ্গলে আসার সময়ে, নিজেদের অস্ত্র নিয়ে চেকনাকা পেরিয়ে যাওয়া এবং আসাটাও বিপজ্জনক। তাই মৌলবির বন্দুক নিয়ে শিকার করাটাই সুবিধেজনক ওদের পক্ষে। শিকার নিয়ে ফেরাটাও বিপজ্জনক। তবে নাকাতেও ওরা দিয়ে যায় নজরানা। ধরা পড়লে, কম করে দশ-পনেরো বছর সশ্রম কারাদন্ড। অধুনা ভারতবর্ষের আইন হচ্ছে Live and let live চুরি করো, ডাকাতি করো, ঘুস খাও, ঘুস দাও, খুন করো, ধর্ষণ করো, টাকা থাকলেই পার পেয়ে যাবে। ভোটের সময়ে ছাপ্পা মারো, মেরে ক্ষমতাতে এসো। কেউ তোমার কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারবে না। Nothing succeeds like success.
–কেয়া ইয়ার? হুয়া ক্যায়া?
–তবিয়ত গড়বড়া গিয়া।
–কাহে?
–কওন জানে?
–তবিয়ত, না দিল? রানি মুখার্জি? ‘পেয়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া?’
গান ধরেছিল।
–মজাক মত উড়ানা।
বলল, ভোঁদাই বিরক্ত হয়।
–চলো, মেহমান আয়েগা আজ চাতরা সে। কুছ মিল গ্যায়া তো আচ্ছাহি হ্যায়, খাতিরদারিমে কাম আয়েগা।
-তুমহারা শালা কিতনা হ্যায় ইমরাত?
–বহুত হ্যায়। মগর তুমহারা তকলিফ কওন চি কী? একভি সাদিভি করনেকা হিম্মত হুয়া নেহি তুমহারা, শালা, ক্যায়া আসমানসে গিড়েগা সুরত হারাম?
–শাদি করনেমে ঔর আওলাদ পায়দা করনেমে, কওসি হিম্মতকি জরুরত পড়তি হ্যায়?
তারপর ইমরাত বলল, লেরে বিটকেল। তুহর চানা-পিয়াজ, ঔর হারা-মিরচা।
ইমরাত বলল, অব ম্যায় জিপ চালাউঙ্গা, আজ হামারা রিস্তেদার রহমত মিয়া মারেঙ্গে।
ইমরাত স্টিয়ারিং-এ বসল। রহমত গিয়ে সামনের বাঁ-দিকের সিটে বসল, বন্দুকের ব্যারেল বের করে। সিলড-বিম স্পটলাইটটা ইঞ্জিনের বনেটের নীচের ব্যাটারির সঙ্গে ক্ল্যাম্প দিয়ে আটকানো ছিল। কিন্তু জঙ্গলের আরও গভীরে না গেলে স্পষ্ট করা যাবে না। কারণ, পিচরাস্তা থেকে কোনো গাড়ি বা ট্রাক বা বাস গেলে তারা আলোর আভাস পাবে।
মাইলখানেক গিয়েই পথটা ডানদিকে একটা হেয়ারপিন টার্ন নিয়েছে। বর্ষার পরে জঙ্গলের বাড় হয়েছে ভীষণ। স্পট ফেললেও নিবিড় আণ্ডারগ্রোথ-এর জন্যে দেখা যায় না কিছুই। কোনো জানোয়ার আত্মহত্যা করতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে এলে, অথবা রাস্তা পেরোবার সময়েই একমাত্র তাকে মারার সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।
জিপটা সেই হেয়ার পিন বাঁকের মুখে আসতেই দেখা গেল পথজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রকান্ড এক দাঁতাল শুয়োর। সাদা দাঁতদুটো জিপের হেডলাইটের আলোতে চেকনাই পেয়েছে।
-হারাম। মারো শালে কো।
ইমরাত বলল। হেডলাইটের আলোর আভাতে বারো-বোর দোনলা শটগানের নাকের মাঝি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। রহমত মিয়া গুলি করল। বন্দুকের ডান দিকের ব্যারেলে ‘বল’ ছিল। বলটা গিয়ে পড়ল শুয়োরটার সামনের পা-এর হাত খানেক আগে। মাটি ছিটকে উঠল। বিশ্রী একটা ঘোঁৎ-ঘোঁৎ আওয়াজ করে শুয়োরটা তিন লাফ দিয়ে চরকি মেরে জঙ্গলে ঢুকে গেল ঝোঁপঝাড় ভেঙে।
ভোঁদাই বলল, আইয়ে রহমত ভাই, পিছে আইয়ে। মুঝে জারা চান্স দিজিয়ে।
অতবড়ো শুয়োরটাকে যে, অতকাছ থেকে কেউ মিস করতে পারে, ভাবা যায় না। রহমত ইমরাত-এর শালা হতে পারে কিন্তু শিকারি নয়। মানুষ-মারা শিকারি হয়তো হতে পারে কিন্তু বন্যপ্রাণী মারা শিকারি নয়। সব ব্যাপারেই শিক্ষানবিশি হতে হয়। পৃথিবীতে কোনো কর্মই সোজা নয়, তা দূর থেকে যতই সোজা বলে মনে হোক-না-কেন!
ইমরাত কিছু বলল না।
রহমত মিয়া পেছনে এল।
ভোঁদাই বলল, সামনে গিয়ে বাঁ-দিকে উঠে, ইক চান্স হামারা। ইনকো বাদ ম্যায় স্টিয়ারিংমে বৈঠেগা, তুম মারেগা ইমরাত।
জিপটা স্টার্ট করে এক-শো গজ যাওয়ার পরেই শুয়োরটাই ডান দিকের জঙ্গল ফুড়ে বাঁ দিকের জঙ্গলে যাওয়ার জন্যে দৌড় লাগাল। রানিং-এর ওপরেই মারল ভোঁদাই মৌলবি সাহেবের দেওয়া, ইংলিশ আলফাম্যাক্স-এর নতুন পৌনে-তিন-ইঞ্চি এল. জি. দিয়ে। এক্কেবারেকানপার্টিয়ামে।
শুয়োরটা পথের ওপরেই পড়ে গেল।
–ইঞ্জিন বন্ধ করো।
ভোঁদাই বলল।
-কাহে?
–উঠানা নেহি হোগা?
–হারাম হামলোগোনে খায়েগা থোরি।
–হামলোগোনে তো খায়েগা।
–উ হোনে সেকতা। তো তুম দোনো উঠাও। মগর ই হারামমে হামলোগোনে হাত নেহি লাগায় গা।
ভোঁদাই কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। আজ ইমরাত-এর ইয়ার্কি মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বেশি মহুয়া খেয়ে ফেলেছে।
তারপর বলল, অজীব বাত! খ্যয়ের ঠিকে হ্যায়, হাম ঔর বিটকেল উসকি দাঁত কাট লেগা আর পিছলাওয়ালা দো রাং। উসকি বাদ হাম দোনো পিছে বৈঠেগা, তুম দোনো সামনামে বৈঠো মজেমে।
কী ভেবে, ইমরাত বলল, ঠিকে হ্যায়। তব উতারো তুম দোনো।
তারপরে বলল, বিটকেল-এর দিকে ফিরে, ঔর বুতল নেহি হ্যায় রে, বিটকেলোয়া? সুরতহারাম।
–হাঁ জি। হ্যায় হুজৌর।
গরিব বিটকেল বলল, বাধ্য বান্দার মতো। বলে, মহুয়ার নতুন একটি বোতল এগিয়ে দিল ইমরাত-এর দিকে।
ভোঁদাই নামল, জিপের পেছনের সিট-এর নীচে রাখা ছুরিটা বের করে। বিটকেলও নামল।
ভোঁদাই বলল ইমরাতকে, হেডলাইট নেহি না বুজানা।
–জি হুজৌর।
ইমরাত বলল। ঠাট্টার গলাতে।
জিপ থেকে নামবার সময়ে বন্দুকটা সেফ করে রহমত মিয়ার হাতে দিয়ে দিল ভোঁদাই। বাঁ-ব্যারেলেও ‘এল. জি.’ ভরা ছিল।
মহুয়ার বোতল থেকে ঢকঢক করে অনেকখানি মহুয়া খেল ইমরাত, তারপর রহমতের দিকে এগিয়ে দিল বোতলটা।
ভোঁদাই আর বিটকেল যখন শুয়োরটার কাছে গিয়ে পৌঁছেছে তখন-ই মারুমারের দিক থেকে একটা বড়োবাঘ-এর ডাক শোনা গেল। পরপর কয়েকবার। পাহাড়, বর্ষণক্ষান্ত ঘন বন থেকে যেন থরথরিয়ে কেঁপে উঠল।
বিটকেল ভয় পেয়ে ভোঁদাইকে জড়িয়ে ধরে বলল, কাকু-উ-উ! বাঘ।
ভোঁদাই হেসে বলল, কোনো ভয় নেই। বাঘ সঙ্গিনীকে ডেকেছে। আয়। চটপট কাজ সারি। আঃ কী নদনদে চর্বি রে। যা ভিন্দালু হবে না! মগনাটা আবার শুয়োরের ভিন্দালুটা রাঁধে দারুণ।
ভোঁদাইরা যখন কাজ শুরু করেছে তখন হঠাৎ-ই ইঞ্জিনটা স্টার্ট করে ইমরাত জিপটাকে এক ঝটকাতে ব্যাক করে নিয়ে পথের মোড়ে মুহূর্তের মধ্যে ঘুরিয়ে, জোরে চালিয়ে চলে গেল ওদের অন্ধকারে ফেলে রেখে। ভোঁদাই তার টর্চটাও নিয়ে নামেনি, জিপের হেডলাইটের আলো ছিল বলে।
–এমন ইয়ার্কি কেউ করে? বলো ভোঁদাইকাকু?
বিটকেল বলল।
ভোঁদাই বলল, ইমরাতটা ওরকম-ই। ইয়ার্কি নয়, তিড়ি মারে। ও চিরদিন-ই এইরকমই। মনে মনে আসলে ছেলেমানুষ-ই আছে। শরীরের বয়স বত্রিশ, মনের বয়স দশেই আটকে আছে।
–এখন কী হবে?
আতঙ্কিত বিটকেল বলল।
–কী আবার হবে? এমন নধর শুয়োরটা খাওয়া হবে না। দাঁত দুটো দিয়ে ভালো ছুরি হত, চাবির-রিং, শু-হর্ন।
অন্ধকারে কিছুক্ষণ থাকতেই চোখ সয়ে এল। উপরে চেয়ে দেখল বিটকেল, তারারা ঝকমক করছে। তবে কৃষ্ণপক্ষর রাত। আজ দ্বিতীয় বা তৃতীয়া হবে। চাঁদ উঠবে শেষরাতে। লালমাটির পথ আবছা দেখা যায়, দু-পাশের সবুজ অন্ধকারে ঢাকা বনের মাঝখানে, কোরা রঙা নতুন শাড়ির মতো মেলা আছে।
-কী করবে ভোঁদাইকাকু?
–দাঁড়া। একটু দেখি। ভাবি একটু। যদি ইয়ার্কি-ই মেরে থাকে তো ফিরে আসবে। তবে কখন? সেই হচ্ছে কথা।
–আর যদি না ফেরে?
ভয়ার্ত বিটকেল বলল।
-না ফিরলে, আমরা হাঁটা লাগাব। মারুমারে গিয়ে রামধানিয়ার বাড়ি শুয়ে থাকব। মহুয়াডাঁর থেকে আসা লাস্ট বাস তো কখন চলে গেছে। কাল সকালের বাসে ফিরব ডালটনগঞ্জে। অত চিন্তার কী আছে?
–পিসি যে, চিন্তা করে করে মরে যাবে ভোঁদাইকাকু।
–আরে পিসি তো আমারও আছে, নাকি? তার ওপরে আমার মাও তো আছে। বাইরে বেরোলে, বিশেষ করে জঙ্গলে, অত মা-মাসির কথা ভাবলে চলে না।
তারপর বলল, মাঝে মাঝে, মা-মাসি-পিসিদের চিন্তা করা ভালো আমাদের জন্যে। বুঝলি। দাম বাড়বে।
বিটকেল কোনো মন্তব্য না করে চুপ করেই রইল।
–এই অন্ধকারে মারুমারে হেঁটে যেতে গিয়ে পথে যদি, অন্য শুয়োরে ফেড়ে দেয় আমাদের? ভাল্লুকে নাক খামচে তুলে নেয়? সাপ কামড়ায় যদি? যদি বাঘে ধরে?
–যদি ফেল নদীতে। অত ‘যদি’ নিয়ে জঙ্গলে আসা যায়?
ভোঁদাই আর বিটকেল প্রায় মিনিট পনেরো অন্ধকারে মৃত শুয়োরটার সামনে দাঁড়িয়ে থাকল কিন্তু ইমরাত ফিরল না জিপ নিয়ে।
–এও হতে পারে যে, ওর শালার জন্যে কোনো হরিণ-টরিণ মেরে ফিরে আসবে এখানে। ইমরাত-এর শালা আসছে আজ রাতে চাতরা থেকে, শুনলি-না? সে তো আর শুয়োর খাবে না।
-কেন?
–আরে গাধা শুনলি কী তবে এতক্ষণ? শুয়োর খায় না মুসলমানেরা। শালার খাতিরদারির জন্যেই তো আজকে এসেছে ও। আমার জিপ, আমার ডিজেল, ধরা পড়লে জিপ বাজেয়াপ্ত হয়ে আমার-ই দশ-পনেরো বছরের জেল হবে। সশ্রম কারাদন্ড। তোরা তো
সকলে জঙ্গলে জঙ্গলে সটকে যাবি। ফিগার ভালো হয়ে যাবে শাহরুখ খানের মতো। আর দেখ আমার সঙ্গেই এরকম পেঁয়াজি। আমাকে চেনে না ইমরাত। একদিন এমন শেখাব না! বলেই, কান খাড়া করে উৎকর্ণ হয়ে শুনল, ওই দিকে কী, ‘খস খস শব্দ হল একটা।
-এবার চলো ভোঁদাইকাকু।
-জঙ্গলে ওরকম কত শব্দ হয়। জংলি ইঁদুর-ফিদুর হবে। জঙ্গলে এরকম রাতের বেলা অন্ধকারে ঘোরার মতো মজা আছে? আমি তো এই মজার জন্যেই আসি। ইমরাতটা তো শুধু জানে গুলি করতে আর মরা জানোয়ারকে হালাল করে নিয়ে গিয়ে খেতে। চিজ একটা। ওর মধ্যে অন্য অনেক গুণ আছে, কিন্তু সূক্ষ্মতা বলে কোনো ব্যাপার-ই নেই। অমলদার-ই মতো।
তারপর বলল, বেঁচে গেছে। যে-মানুষ যত সূক্ষ্ম, যত সুরুচিসম্পন্ন, যত স্পর্শকাতর তার ‘দুঃখ’ও ততবেশি!
বিটকেল এসব কথার কিছু বুঝল না। যেদিক থেকে খসখস শব্দটা এসেছিল সেদিকেই তাকিয়ে রইল একদৃষ্টে সেদিকের সবুজ অন্ধকারে।
–চল এগোই। ইমরাত ইচ্ছে করলে আজই আমাকে ফাঁসাতে পারে। মানে ওর ইয়ার্কিটা যদি একটু বাড়াবাড়ি রকমের করে আর কী! শালার সামনে বাহাদুরি দেখাতে গিয়ে কত কী করে মানুষে।
-কী করে?
বিটকেল জিজ্ঞেস করল।
–কোনো কিছু মেরে, মানে, হরিণ-টরিণ, বাঘ-ভাল্লুক মারার হিম্মত তো ওর নেই। তা ছাড়া জানে ও, যে মারলে, হ্যাঁপাও অনেক। যে-জানোয়ারই মারুক, মেরে আমার জিপের মধ্যে মরা জানোয়ারটাকে ফেলে রেখে যদি তার মৌলবির বাড়ি গিয়ে বিরিয়ানি খায় তাহলে কাল-ই আমাকে অ্যারেস্ট করবে পুলিশ, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের করা ডাইরির জোরে।
–এমন করতে পারে?
–পারে না? বলিস কী? সেদিন মোহনদাদের একজন ট্রাক ড্রাইভারের ট্রাকের চাকার তলাতে একটা ব্যর্থ-প্রেমিক খরগোশ আত্মহত্যা করল দৌড়ে এসে, সেজন্যে এখনও কেস চলছে। শুনলাম, মোহনদা দশ হাজার টাকা খেসারত দিয়ে অফেন্স কম্পাউণ্ড’ করে কেস মিটিয়ে নেবে। বোঝো তবে। একেই বলে, বজ্র-আটুনি, ফসকা-গেরো।
বিটকেল-এর মাথার উপর দিয়ে কথাগুলো ঝোড়ো হাওয়ার মতো বয়ে গেল। ওর বোধগম্য হল না কিছুই। বিটকেল শুধু বলল, আমারও জেল হবে তোমার সঙ্গে ভোঁদাইকাকু? তাহলে আমার পিসির কী হবে?
উলুবনে মুক্তো ছড়াল, তা বুঝতে পেরে বিরক্তস্বরে ভোঁদাই বলল, আমার পিসির যা হবে, তোর পিসিরও তাই হবে। তোর পিসিকে আমার মা আর পিসি আমাদের বাড়িতে এনে রাখবে। কিন্তু তোর জেল হবে কেন? আমি বলব, তুই আমাদের সঙ্গে ছিলি-ই না।
-তুমি বললে কী হবে? সকলে বুঝি দেখেনি আমাকে? নাকাতে? তা ছাড়া ইমরাত কাকুই বলে দেবে।
-না, না। ইমরাত মানুষ ভালো। ও বলবে না। তোর ক্ষতি করে ওর কী লাভ হবে?
তারপরে বলল, তুই চুপ কর তো। সে আমি বুঝব। জঙ্গলের মধ্যে কথা বললে কখন। কোন জানোয়ার এসে ঘাড়ে পড়বে তার শব্দ পাবি কেমন করে? একদম চুপ করে চল।
বিটকেল চুপ করে গেল। কিন্তু মনে মনে বলল, নিজে যে, এতক্ষণ গড়গড় করে কত কথা বললে তারবেলা কিছু নয়?
মিনিট পনেরো হাঁটার পরে বিটকেল বলল, ভোঁদাইকাকু, যদি দারহা মেলে পথে।
–‘দারহা’ মানে?
–তুমি দারহা কী জানো না?
–না তো!
-–দারহা একরকমের জংলি ভূত। রমেন জ্যাঠার কাছে শুনেছি আমি। রাতের বেলা হঠাৎ জঙ্গলের পথে সামনা-সামনি এসে দাঁড়িয়ে পড়বে। তালগাছের মতো লম্বা। এদিকে রোগা টিঙটিঙে। মুখটা পেছন দিকে থাকে। সে বলবে, আও হামসে কুস্তি লড়ো।
–আর না লড়লে?
–না লড়লে তোমাকে গলা টিপে মেরে জঙ্গলে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।
-–দারহার সঙ্গে দেখা হলে আমি তো আর বেঁচেই থাকতাম না। তাই দেখিনি। তুই দিনে দিনে একটা রামছাগল হচ্ছিস। রমেনদার গুলকে তুই সত্যি ভেবে বসে আছিস?
পিসিও তাই বলে।
–কী বলে?
–আমি একটা রামছাগল।
–কাত্যায়নী মাসি ঠিক-ই বলে।
এমন সময় ‘গুম’ করে একটা শব্দ হল দূরে।
-ওটা কীসের শব্দ?
দাঁড়িয়ে পড়ে, বিটকেল বলল।
বনের গভীরে রাইফেলের শব্দ এরকম শোনায়, বন্দুকের শব্দ অন্যরকম। গুলি যদি জানোয়ারের গায়ে লাগে তাহলে একরকম শব্দ হয় আর যদি ফসকে যায় তাহলে অন্যরকম শব্দ হয়। ছেলেবেলা থেকে বনেজঙ্গলে ঘুরছে বলে ভোঁদাই এসব জানে। ফাঁকা জায়গাতে শব্দ একরকম শুনতে লাগে, গভীর জঙ্গলে অন্যরকম। জলের ওপরে আরও অন্যরকম।
বিটকেল আবার উদবিগ্ন গলাতে বলল, ও কীসের শব্দ ভোঁদাইকাকু?
-হরিণ কিংবা অন্যকিছু মারল ইমরাত।
–কত দূরে?
–খুব বেশি দূরে নয়। মীরচাইয়া ফলস-এর কাছাকাছিই হবে।
–ও। তবে আমাদের ফেলে যায়নি।
–ওর ঘাড়ে ক-টা মাথা। আমাকে ও ভালো করেই চেনে।
–তবে ইয়ার্কি মারছিল বলো। এ কীরকম ইয়ার্কি রে বাবা!
-ওর ইয়ার্কি ওরকম-ই। ছেলেটা কিন্তু ভালো। মনটা খুব-ই বড়ো। ও কি আমার আজকের দোস্ত? নেঙ্গোটিয়া দোস্ত। বাবার অসুখের সময়ে, ও যা করেছে তার ঋণ। কোনোদিনও শোধবার নয়।
–তবে ইমরাতকাকুর সঙ্গে অত ঝগড়া করছিলে কেন?
–আরে ঝগড়া তো মানুষ কাছের মানুষের সঙ্গে, ভালোবাসার মানুষের সঙ্গেই করে। যে পর, তার সঙ্গে কি কেউ ঝগড়া করে?
-তা ঠিক।
–তবে চল আমরা ফিরি।
-কোথায়?
-বা :! শুয়োরটার কাছে।
–কেন?
-হায়নাতে বা শেয়ালে এসে খেয়ে যেতে পারে। নেকড়েও আছে বেতলার জঙ্গলে। খেতে পারে খিদে থাকলে। তা ছাড়া, আমরা ওখানে না থাকলে ইমরাত ভাবতে পারে, ওরা আমাদের অন্ধকারে ফেলে চলে গেছে বলে, খুব-ই ভয় পেয়েছি আমরা।
-কী জানি কাকু। তোমাদের বন্ধুত্ব’র রকমটা ভারি গোলমেলে।
–তা হোক। মগনা যা ভিন্দালু রাঁধবে না শুয়োরের। তুই শুয়োর খেয়েছিস আগে?
–দুর। গু খায় ওরা।
–আরে সে তো ধাঙড়-বস্তির শুয়োর। এই শুয়োরেরা তো বনের গাছ-পাতা, ফল-মূল খায়। রামচন্দ্র যখন বনবাসে ছিলেন তখন বন্য বরাহ শিকার করে খেতেন। শুধু রামচন্দ্রই কেন? রাম, লক্ষ্মণ, সীতাও। ফাস্ট-ক্লাস মাংস না হলে তাঁরা কি খেতেন?
–তাহলে ইমরাত চাচারা খায় না কেন?
-ওদের কথা ছাড়। ওরা তো গোরু খায়। ওরা ওদের মতো থাকুক, আমরা আমাদের মতো। নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান। গান শুনিসনি?
–আমি আর কী শুনেছি ভোঁদাইকাকু! ভোর পাঁচটাতে উঠি, এগারোটোতে শুই। কী করে যে, আমার আর পিসির দিন কাটে, তা আমরাই জানি। তাও তো নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। আজকাল এইসব বাঙালি মিষ্টি-ফিষ্টি বাঙালিরা খায় না।
–হুঁ! বাঙালি জাতটাই মুছে যাবে আস্তে আস্তে। তারা বাংলা পড়ে না, শাড়ি পরে না, বাঙালি রান্না খায় না। দারহার মতোই আশ্চর্য ভূত হয়ে উঠছে তারা আস্তে আস্তে।
-ওরা শুয়োরটার কাছে পৌঁছোতে পৌঁছোতেই জিপের ইঞ্জিনের আওয়াজ এল দূর থেকে।
–আসছে বাঁদরটা।
বলল, ভোঁদাই।
–তোমরা কি প্রায়-ই এরকম ঝগড়া করো।
–তা করি।
–বাবা!