ব্যক্তিত্বের কথা
“সঠিক জনসংযোগের কাজে আমাদের সামাজিক মেলামেশায় কিছু উদ্দেশ্যের স্পর্শ থাকা নেহাতই জরুরী। মানুষকে কোন না কোনভাবে প্রভাবিত করতেই হবে”–হাবার্ট ক্যাসন
“আপনাকে নিজেকে বিশ্লেষণ করতেই হবে। প্রথমেই আপনার বিশেষত্ব পরীক্ষা করে নিন। ভালো কি মন্দ সেটা বিচার করুন, অভ্যাসগুলোর দিকে তাকান, আপনি ভাবাবেগকে কতখানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন দেখুন, অবসর সময় কিভাবে কাটে তাও দেখুন। কাজকর্মে কেমন দক্ষ তাও দেখে নিন–আসলে নিজের সম্পর্কে সবকিছু জেনে নিন।”–নেভিল ক্লিসার, হাউ টু সাকসিড ইন লাইফ
“যে বিশেষ ক্ষমতায় কোন বিশেষ একজন্য অন্যকে প্রভাবিত করতে পারেন ঠিক সেই ক্ষমতাকেই আমরা সংক্ষেপে ব্যক্তিত্ব বলে থাকি”–রয় শেরউড, থিংস উই সুড নো অ্যাবাউট মাইন্ড’—
.
এক. মানসিক ঝাঁকুনি ইত্যাদি
তা হলে, আপনার আগ্রহ জাগছে? এই বই হাতে নিয়ে আপনি পাতা উল্টে চলেছেন? আপনি কি সত্যিই আগ্রহী?
আপনি হয়তো বলবেন শুধু একটু দেখে নিতে চাই। প্রতিদিন এরকম ডজন ডজন বই বাজারে আসছে–যেসব বই লিখেছেন মনোবিজ্ঞানী আর নামী ডাক্তাররা। আপনার তাই বক্তব্য হবে নতুন আর জানার কিছুই নেই–অন্ততঃ কাজে লাগার মত।
সে যাই বলুন, বইখানা আপনি হাতে নিয়েছেন। যেহেতু আপনপর একটু আগ্রহ সঞ্চার হয়েছে। বলেই।
আপনার এটা মনে হয়েছে যে মনকে তৈরি করার মধ্যে কিছু বস্তু থাকে। ব্যাপারটা কখনই কোন পাগলামি নয়, যেমন লোকে বলে।
এর ফল কেমন তা তো রোজকার জীবনেই দেখতে পাব।
যেসব মানুষকে ঈর্ষা করেন তাদের ব্যাপারটা কেমন? মনে মনে বা সত্যিই কি কখনও যাকে প্রশংসা করেন তাকে বলেননিঃ কি করে এসব পারেন? আপনার মত এত তাড়াতাড়ি তো ভাবতেই পারি না, ঠিক ঠিক তো নয়ই। বেশি করে ভালো কাজ করে উপরওয়ালাকে সন্তুষ্টও করতে পারি না। আপনার মত চমৎকার খেলতেও পারি না, কোন কাজেই দেখি আপনার অসুবিধে বা ঝামেলা হয় না। সন্তুষ্ট করা কঠিন, তেমন মানুষকেও আপনি বাগে আনতে পারেন। আপনি কোনভাবেই শত্রু তৈরি করেন না। কখনও অসৎ কাজ করেন না, আপনি ভেঙেও পড়েন না। আপনি সফলতার প্রতীক, প্রত্যেকেই সেটা বোঝে। এর রহস্যটা কি জানার জন্য আমার সব কিছু দিতে রাজি আছি।’
এটা পৃথিবীর প্রাচীনতম জিনিসের মধ্যে একটি। এটাকে বলে মন তৈরি করা। এটার শুরু মানুষ, যখন মন পরিষ্কার করে আর তা কাজে লাগানোর কথা ভাবে।
সারা জীবন ধরেই আপনি মনকে তৈরি করছেন। বাড়িতে, স্কুলে, কলেজে, অফিসে বা যখন বন্ধুদের সঙ্গে থাকেন। আপনি যখন সিনেমায় বা ফুটবল খেলার মাঠে বা গান বাজনার আসরে যান তখনই তাই করেন। আপনি সজাগ অবস্থায় যা কিছু করেন তাতেই মনকে ব্যবহার করে চলেন। তাতে তৈরি হয় চিন্তার অভ্যাস। আবেগের অভ্যাস এই রকম সব কিছু। অবশ্য ওটাও ঠিক সব কিছুর জন্যই বিশেষজ্ঞ থাকেন। তারা অনেকটা অগ্রসর হন। তাঁরা চান বেশ সুগঠিত প্রবল ক্ষমতার মন। তারা সাধারণ মন নিয়ে খুশি হন না। তাঁদের লক্ষ্য হল বেশ পুষ্ট মানসিক পেশী। এই রকম মন নিয়ে তাঁরা মনকে ইচ্ছেমত ভারসাম্যে সার্কাসি খেলায় লাগিয়ে জীবনে চমঙ্কার, সাফল্য আনেন।
এখানে তাঁদের সেই মন তৈরি করার কৌশলই কাজে লাগাতে চাওয়া হয়েছে। তাঁরা মনকে এমনভাবে কাজে লাগান যাতে মন এক সময় শুধু একটা বিষয়ই বহুক্ষণ ধরে ভেবে চলতে পারে। হিমালয়ের কিছু মন-গবেষক শুনেছি তাঁদের মনের সব কিছু উজাড় করে ঢেলে দিয়ে বহুক্ষণ এইভাবে রেখে দিতে পারেন।
তবে আপনি হয়তো বলবেন ওই অর্থে মন-গবেষক হতে চাই না আমি। এসব করার মত আমার সময় নেই। আমি সাধারণ মানুষ, যাকে জীবন বাঁচাবার তাগিদেই ব্যস্ত থাকতে হয়। এতেই আমার সব সময় চলে যায়। সারাদিনে সকাল আর বিকেলে আধ ঘন্টার মত সময়ই আমার নিজের বলা যায়। আমার তাই ওই সার্কাসি কায়দায় মন চালনা করার মত ধৈর্য, সময় বা শক্তি নেই। আমি মন-বীর হতে চাই না। অতএব ধন্যবাদ, এখানেই ইতি টানছি। তবে যাই হোক আমার কাজকর্ম কি করে আরও সুষ্ঠুভাবে করা যায় সেটা জানতে আপত্তি নেই। আমি আরও টাকা রোজগার করতে চাই। আমাকে উঠতেই হবে, আমি ব্যর্থ হতে চাই না। আমি আমার জীবনে সাফল্য আনবোই। আমি দেখেছি যে মানুষের মাথা আছে (অবশ্য সে সেটা খাটাতে পারলে) সে যা চায় তাই পায়। আমি এটাও দেখেছি মস্তিষ্ক, মন বা আর যা কিছুই বলুন, চালাবার এক সঠিক আর বেঠিক পথ আছে। মনকে শিক্ষাদান করার মধ্যে একটা কিছু আছে, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। আমি অবশ্য কোন মন বিষয়ক খেয়ালী হতে চাইছি না। কি বলতে চাই বুঝেছেন নিশ্চয়ই কোন খেলোয়াড়, খেতাব আকাক্ষী লড়াইপ্রিয় চ্যাম্পিয়নের মত কিছু না। আমি যা চাই তা হলো আমার অফিসের কাজকর্ম ভালোভাবে করার জন্য যথেষ্ট দক্ষতা। আমি কাজে দক্ষ হতে চাই। ভবিষ্যতে একদিন আমার দপ্তরের প্রধান হতে চাই। আমার অবসর তেমন নেই, তাই এমন পরিশ্রম সাধ্য কোন কাজ যদি না করতে বলেন, বরং দিনে কয়েকটা মিনিট দিলে যদি হয়-তাহলে এই মনকে নাড়া দেবার ব্যাপারটা দেখতে পারি।
কথাটা মনে রেখেই বলি, এই ছোট বইটিতে যা আছে তা আপনারই উপযুক্ত। একথা বলছি না এর সবই আমারই। এর কোন কোনটা আমি নিজেও কাজে লাগিয়েছি। এগুলো কার্যকরী আর বোধগম্য। এগুলো পেয়েছি বড় বড় মন-শিক্ষকদের বইয়ে। যে সব মানুষ মন-শিক্ষণের কাজকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। আমার বা আপনার মত সাধারণ ব্যস্ত মানুষদের, যাদের কোন কাঠের চেয়ারের ধারণা মাথায় রেখে সমস্ত মন সমর্পণ করার বাসনা নেই, তাদের কথা ভেবেই কঠিন অংশগুলো বাদ দিয়েছি। পরের পৃষ্ঠাগুলোয় যে অনুশীলনী পাবেন সেগুলো করতে আনন্দই পাবেন।
এই সব মন ঝাঁকুনি দেওয়ার কাজ রোজই করার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। ছোট করেই শুরু করে দিন। প্রথমে, পাঁচ মিনিট, তারপর দশ, এইভাবে…।
হাজার হাজার বা লক্ষ লক্ষ মানুষ সারা পৃথিবী জুড়ে প্রত্যহ এই রকম মানসিক অনুশীলন করে থাকেন।
অতএব নিশ্চিত হতে পারেন আপনিও সঠিক পথ নিয়েছেন।
মজা তখন লাগে যখন দেখবেন আপনি অদ্ভুত রকম মানসিক শক্তি আর মানসিক দক্ষতা লাভ করেছেন। এতে আপনার মানসিক ধারণ ক্ষমতাও বেড়ে উঠবে। যেমন ধরুন, আগে হয়তো আপনি কোন কিছু তাড়াতাড়ি বুঝতে পারতেন না, কিছুদিন পরেই দেখবেন আপনার বোঝার ক্ষমতা আর বুদ্ধি বিবেচনা শক্তি খুব সূক্ষ্ম হয়ে একেবারে ক্ষুরের মতই ধারালো হয়ে উঠেছে। আগে ধরুন আপনি যেখানে অমনোযোগিতা, চঞ্চলতা, অস্পষ্ট কোন চিন্তা, স্নায়বিক আবেগ, সংশয়, নিজের মতে দাঁড়িয়ে থাকার অক্ষমতা ইত্যাদিতে ভুগতেন–এই মন–শিক্ষার কাজ আগ্রহ নিয়ে শুরু করার পরেই দেখবেন আপনার মন চমৎকার কাজ করতে শুরু করেছে।
আপনি আপনার মনের উপর নির্ভর করতে পারবেন। আপনি এবার থেকে আপনার মনকে দক্ষ ছুতোর যেভাবে তার যন্ত্রকে ব্যবহার করে সেইভাবেই ব্যবহার করতে পারবেন।
আপনি আপনার অফিস, কারখানা যেখানেই থাকুন আপনি হবেন একজন অত্যন্ত বুদ্ধিমান সত্যিকার দক্ষ মানুষ। আপনি লোকের সন্তোষের কারণ হবেন, প্রশংসা পাবেন। সমস্ত অসুবিধা দূর করে ফেলে যার সংস্পর্শে আসবেন তারই শ্রদ্ধা আদায় করবেন। অর্থাৎ আপনি সাফল্য নিয়ন্ত্রণ করবেন।
.
দুই. সাফল্যের পথে
আপনি যেখানে উপস্থিত হতে চলেছেন একদিন সেখানে পৌঁছবেন বলেই ভেবেছেন। আপনি কোন উদ্দেশ্য ছাড়া জীবন কাটানোর পথ ত্যাগ করবেন ঠিক করেছেন। আপনি মন ঠিক করে ফেলেছেন আপনার যা আছে সেটা যতদূর সম্ভব ভালোভাবে ব্যবহার করবেন। আপনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে জয়ী হবেন, সাফল্য আনবেনই। জীবনের সেরা নির্যাস আপনার চাইই; আর তা হলো যে জিনিস সত্যিই না হলে চলে
সেই সঠিক চিন্তা, ঠিক কাজ, নির্মল মন, যতটা সম্ভব সুস্বাস্থ্য, সামান্য সম্পদ, বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা। এর সবই আপনার উপরেই নির্ভরশীল। আপনি হয়তো বলবেন এর অনেকটাই নির্ভর করছে সুযোগ, ভাগ্য, সঞ্চয়তার উপর। আপনি হয়তো উদাহরণ দিয়ে বলতে চাইবেন, “ওই লোকটিকে দেখুন! উনি চমৎকার কাটাচ্ছেন। এটা পাওয়ার মত কি এমন তিনি করেছেন?
এক মিনিট ভাবুন। লোকটি কি সত্যিই দারুণভাবে রয়েছে? ওর জীবনযাত্রা কি সত্যই ভালো? ওর বিরাট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে। এতো টাকা তিনি কিভাবে করলেন? দুর্নীতির পথে? উনি জীবনের মাধুর্য কি তা জানেন? ওঁর কি ভালো আর সত্যিকার আদর্শ আছে? নিজের কাজের আড়ালে তিনি কি ভালোভাবে আর সঠিক পথে নিজের কাজের মুল্যায়ন করে থাকেন?
এটা তিনি যদি না করেন তাহলে তিনি অবশ্যই সাফল্যের কাছ থেকে অনেক দূরে। আসলে তিনি হলেন নিদারুণ অসাফল্যের প্রতীক।
অন্যদিকে, এটাও সত্যি যে একজন সৎ মানুষকে আপনি কখনই দমিয়ে রাখতে পারবেন না। এ ধরনের ব্যাপার অবশ্যই আপনার জানা আছে। এমন লোককে অবশ্যই আপনি চেনেন। এই লোকটিকে নানারকম ভীতিকর অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়। তবে তিনি তার মুখোমুখি হতে ভয় পান না। নিজেকে তিনি ঠিক চিনে নেন। তিনি কখনই বলেন না : সুযোগটা নেওয়ার চেষ্টা করি, এটা জুয়া খেলা। এর অর্থ হলো বহুদিনের কঠিন পরিশ্রম। তবে তিনি তাই করলেন। তাঁর নিজের গুণগুলো দেখলেন, নিজের ত্রুটি শুধরে নিলেন। সুযোগের অপেক্ষায় না থেকে তা সৃষ্টি করে নেন। তিনি এক অফিস বয় থেকে ম্যানেজার হন।
এর সবই নির্ভর করছে আপনারই উপর।
আপনার সারা জীবনই হলো আপনার সারা জীবনের কাজকর্মের যোগফল। সঠিক কাজই আপনাকে সেখানে পৌঁছতে সাহায্য করবে। ভূল কাজের ফলে আপনার গতি পিছিয়ে যাবে। একপা ও আপনি এগুতে পারবেন না।
কাজ করা কী? আপনি কাজ কিভাবে করেন? কাজের বিচার কীভাবে করব আমরা?
আমরা প্রায়ই বলি : ওহ! কাজটা করলাম যেহেতু করার ইচ্ছে হয়েছিল।
প্রত্যেকেই যদি এই রকম বলতে থাকে তাহলে আমরা দাঁড়াব কোথায়? উদাহরণ হিসাবে ধরুন, আপনার বাবা বললেন : আর একদিনও আমার কাজ করার ইচ্ছে নেই, বা কোন করণিক হয়তো বললেন : আমার এক এক সময় ইচ্ছে হয় বসের মুখখানায় ঘুসি বসিয়ে দিই। হয়তো একজন আবার বললো, আমি জানি ব্যাপারটা ঠিক নয়, তবে মিথ্যে বলতেই চাইছি–তাতে নোংরা ব্যাপার আর চিন্তার কারণ থাকবে না। একবার ভাবুন এই সব লোক যা বলেছে আর ভেবেছে তাই যদি করে তাহলে কি রকম গোলমেলে ব্যাপার দাঁড়াবে!
তাহলে দেখছেন তো আপনি যা ভাবছেন সেটা কাজে লাগানো মোটেই ঠিক পথ নয়।
এ কথা বলারও কোন অর্থ হয় না যে পাখি, জীবজন্তুরা আর ফুল স্বাভাবিকভাবেই বাঁচে তাদের চিন্তা নেই, আর তাই তাদের জ্বালাযন্ত্রণাও নেই।
এটা অবশ্য ঠিক আমাদের সহজাত শক্তিতেই বুঝতে পারি জীবন এগিয়ে চলেছে। তবে গাছের মত আমাদের শুধু বেড়ে উঠলেই চলে না বা সিংহের মতো খাদ্য খুঁজে ফিরলে বা মাছের মতো ডিম ছাড়লেই চলে না।
তফাৎ শুধু মাত্র, আমরা শুধু কিছু করা বা না করা এই দুটোর মধ্যে একটা বেছে নিতে পারি।
আমরা সজাগ আছি যে আমরা আমরাই। আমরা জানি আমরা কী করতে চাই। আমরা এও জানি আমরা কাজ করি, সেটা করতে হবে বলেই করিনা বরং করা চলতে পারে বলেই করি।
সঠিক কাজ করার তাহলে অর্থ হলো আমরা যেটা ঠিক বলে জানি তাই করা।
এ ধরনের কাজের একটা দাম আছে। এতে সবুরে মেওয়া ফলে।
কোন লোক যদি তার আবেগে তাড়িত হয়ে কিছু করে তাহলে সেরা কাজটি কখনই করতে পারে না সে।
যেমন ধরুন, সে হঠাৎ কিছু না ভেবেই প্রচণ্ড রাগের বশবর্তী হয়ে পড়লো। আর এর ফলে সে এমন অনেক কিছু করে ফেলতে পারে যার জন্য পরে অনুতাপ করতে হতে পারে। সে যাই হোক, তিনি আর একটু ভালো কাজ করতে পারতেন। যদি না তাঁর নিজেকে খারাপ দিকে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থাকতো। কোন রাগী মুষ্টিযোদ্ধা, যে ক্রুদ্ধ ভঙ্গীতে এলোমেলো হাত চালায় আমরা জানি, সে যদি মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারে তাহলে নিজেকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে রেখে প্রতি ঘুসিই কাজে লাগাতে পারে।
না ভেবেচিন্তে কাজ করলে সেটা বেশি দূর এগোয় না।
এর কারণ না ভেবে কাজ করলে সেটা যান্ত্রিক হয়। এটা নির্ভর করে স্নায়ু আর বিশেষ কিছু আভ্যন্তরীণ কাঠামোর উপর, যেমন অন্ত্রগুচ্ছ আর শিরা। আমাদের এই সব স্নায়ুর বা শিরার উপর কোন রকম নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই কিভাবে আশা করতে পারি যার পিছনে অনুভূতি ছাড়া আর কিছুই নেই তাকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো? আমরা অনেকটা একটা এক্সপ্রেস ট্রেনের মত, দ্রুতবেগে ছুটে চলেছি, শুধু ইঞ্জিনের কেবিনের কোন ড্রাইভার নেই।
তাই আমাদের কাজকর্মে সাহায্য করার জন্য কোন বাধা সৃষ্টি না করে এর পিছনে কোন চিন্তা জুড়ে দেবার চেষ্টা করা যেতে পারে। অথচ এলোমেলো বাজে চিন্তা নয়। আমাদের নিজেদের ঠিক মত চিন্তা করা শেখানো দরকার। তাই আসুন, কিছু করার আগে দুবার চিন্তা করি।
এটা তেমন সহজ কাজ নয়। সাধারণ বুদ্ধি হলো একেবারে অসাধারণ কিছু। তাহলেও এটা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তাহলে আসুন, সাধারণ এই বুদ্ধি জমিয়ে রাখাই হোক আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।
.
তিন. সাফল্যের পরিকল্পনা
আপনি চূড়ায় উঠতে চান?
আপনার তাই একটা ধারণা থাকা দরকার কোথায় চলেছেন আর যাত্রাপথের শেষে কি দেখতে চান।
তাই ব্যাপারটা কি রকম আপনার জানা দরকার।
একটা উদাহরণ দেখুন।
আপনি কি টাকা পেতে চান? …টাকা যে ক্ষমতার জন্ম দেয় তাই চান? …চান সুখ …নিরাপত্তা … আর সম্মান?
না কি এমন কিছু চান যার সত্যিই মূল্য আছে? উৎকর্ষ ভরা মন? পৃথিবীতে কারো প্রতিই কোন দোষ করার আনন্দ? পৃথিবীতে জীবন যাপন যা আনন্দে ভরে তোলে সেই সত্য আর সৌন্দর্য?
এখানেই ভাবনার বিষয়?
আপনার ধারণাই আপনার সুখ দুঃখের কারণ একথা ভুলবেন না।
এই ধারণাই আপনার মধ্যের জীবনকে ভরে তোলে, আলোকিত করে, আপনাকে এগিয়ে নিয়ে চলে।
কী কাজ করতে চলেছেন সে সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকার অর্থ আপনি অন্ধকারের যাত্রী কোন অন্ধের মতই।
ব্যাপারটা অনুসরণ করার চেষ্টা করুন।
অন্ধভাবে জীবন কাটানোতে দুঃখই আনে।
কোথায় চলেছেন তাই দেখে নিন।
নিজের সম্পর্কে ভাবুন। কাজটা প্রত্যেক দিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে করার চেষ্টা করুন, যেমন ধরুন রাতে ঠিক ঘুমোনোর আগে।
মনে মনে নিশ্চিতভাবেই জেনে রাখুন যে, সব কিছুই নির্ভর করে সঠিক চিন্তা আর ধারণার এবং অনুভূতির উপর। তারপর বাস্তবের মুখোমুখি হোন, সারাদিনের কাজকর্মের দিকে তাকান। যা হওয়া উচিত ছিল ঠিক তাই কি হয়েছে? আরও একটু ভালো কি হতে পারত না? নিজের উপর আপনার কি নিয়ন্ত্রণ আছে? নাকি আপনি শুধু মাটির উপর চোখ রেখে এগিয়ে চলেছেন?
গ্রেনভিল ক্লিসার, তাঁর ‘হাউ টু সাকসিড ইন লাইফ’ বইটিতে এই উপদেশ দিয়েছেন : জীবনের ক্ষেত্রে একটা পরিকল্পনা ছকে নিন। যেমন এতটা ঘুমের জন্য, এতটা কাজের আর এতটা খেলার জন্য।
তার উপদেশ হলো, এগিয়ে চলুন। বাঁধাধরা পথে আটকে যাবেন না। আপনার শুধু শরীর নয়, মনকেও বেড়ে উঠতে দিন।
আপনার নিজের দাম বাড়ানোর জন্য কি করেছেন? আপনাকে নিজেকে উন্নত করতেই হবে।
বড় বড় জিনিস বড় মানুষের সামনেই আসে। যে তৈরি নয় সে রকম যদি সামান্য কারও সামনে বড় জিনিস আসে সে সেটা নিয়ে কী করতে পারবে?
তাই তৈরি থাকুন।
এখন কথাটা হল নিজেকে কীভাবে তৈরি করছেন আপনি?
আপনার বাড়তি সময়গুলো কীভাবে কাজে লাগান? শুধু কি শুয়ে বসে কাটিয়ে দেন?
এ রকম হলে অত্যন্ত দোষের কাজ।
বরং আপনার নিজের সম্পর্কে আরও ভালো করে জেনে নিন।
এ সম্বন্ধে কথাবার্তা বলুন। ঐ বিষয়ে কাগজ, সাময়িকপত্র বা বই পড়ে ফেলুন। যেটা করার জন্য ভালো আর নতুন ধরণের পথ খুঁজে বের করুন।
এজন্য বিশেষ পাঠ্যসূচী আর শিক্ষণ ব্যবস্থার আশ্রয় নিন। কোন স্কুল, ক্লাব বা লাইব্রেরিতে ভর্তি হয়ে যান।
মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করার জন্য মন ঠিক করে নিন। মনটা নাড়াচাড়া করতে দিন, জীবন্ত ধারণা দিয়ে মনে আলোড়ন তুলুন। এটাই হলো আরও কাজের চাকা ঘুরিয়ে উৎপাদনের ব্যবস্থা করা। এইভাবেই আপনি আরও শক্তিশালী–অপ্রতিরোধ্য অগ্রণী-শক্তির অধিকারী হতে পারেন।
আপনার কাজে নতুন অর্থের সূচনা হবে। আপনি আরও উচ্চতর মূল্য লাভ করবেন। আর এভাবেই আপনি সাফল্য নিয়ন্ত্রণও করতে পারবেন।
গেনভিল ক্লিসার এইরকম ধারণার জন্মদাতা। সফলভাবে কাজ সম্পন্ন করবেন–এটাই হোক আপনার জীবনের উদ্দেশ্য।
জীবনই হল কাজ, আপনার আর প্রতিটি মানুষেরই ব্যস্ত থাকার উপায়। জীবনে সবচেয়ে বড় যা ভাবতে পারেন, কাজ হলো তার অন্যতম।
অপরের জন্য কাজ করুন। এটা করলে দেখবেন–আপনি সোনার সম্পদ জয় করেছেন। একাজে আপনিই যা কিছু দেখবেন–আপনি সোনার সম্পদ জয় করেছেন। একাজে আপনিই যা কিছু করবেন তা খাঁটি সোনায় পরিণত হয়ে সারা জীবনেরই সম্পদ হয়ে থাকবে।
এ বিশ্বে কোন মানুষ যদি বোঝে যে এই পৃথিবীতে আগে সে আসার আগে যা ছিল তার চেয়ে একটু ভালো করেছে, তাহলে এর চেয়ে আনন্দ আর কিছু নেই।
অন্যের জন্যই বাঁচার চেষ্টা করুন। এটাই হল কাজ। এর থেকেই জন্ম নেয় সাফল্য।
নিজের কাজে যদি তৎপর হতে পারেন তাহলে আপনিও এগিয়ে যেতে পারেন। যাইহোক তাতে কিছু না ভেবেই আপনার কাজকে নিজের উপযুক্ত করে তুলুন। এটা হলো আসল রহস্য। আপনি হয়তো ভাবেন বা অনুভব করেন, সত্যিকথা বলতে যে কাজের যোগ্য আপনাকে হতে হবে। এটাই যেন ঠিক বলে শোনাচ্ছে। ঠিক কাজে ঠিক হোক। আর তাই হওয়া উচিত। তবে আমি বা আপনি তো বেছে নিতে পারবো না। তাই আমাদের পক্ষে যেটা ভালো তাই করা উচিত …কাজটিকে মানিয়ে নেওয়া।
হয়তো বলবেন খুব আগ্রহের শোনাচ্ছে না।
একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন আপনি হিসাবশাস্ত্রে বেশ পাকা। আপনার ইচ্ছে ছিলো বীমার কাজে আসবেন। আপনার দাবা খেলতে, বেড়াতে আর টেনিস ভালো লাগে। কিন্তু আপনাকে আসতে হয়েছে। লোহালক্কড়ের কাজে নানা ঝামেলার মধ্যে। আপনাকে নাড়াচাড়া করতে হচ্ছে ধাতব পাত, ঢালাই আর ঝালাইয়ের কাজ করতেও হচ্ছে। কাজটা আমার ভালো লাগে না।
আপনি এটা ছেড়ে দিতে চলেছেন?
না তা করবেন না, আপনি যদি সহজে হার মানার মানুষ না হন। যে ধরনের মানুষ কঠিন কাজে ভয় পায় না, বাধা বিপত্তিতে হার মানে না; সে ধরনের মানুষ ঠিক লেগে থেকে একগুয়ে হয়ে কাজে সফল হবেই।
আপনার কাজ সম্বন্ধে সব খুঁটিনাটি আগে জেনে নিন। সব ভালো করে যাচাই করুন। কাজটিকে অফিস বা কারখানার অন্য সব দপ্তরের সঙ্গে তুলনা করে মিলিয়ে নিন। বোঝবার চেষ্টা করুন। এ নিয়ে ভাবুন, কথা বলুন। এ নিয়ে পড়ুন আর লিখুন।
কোন কিছুই রসকস হীন নয়। তবে যার চিন্তাধারা আছে সে একটু বিব্রত হতে পারে মাত্র। যত বেশি করে কাজে মনোযোগ দেবেন ততই আপনার মন জাগ্রত হবে আর আপনার অনুভূতিও চাঙ্গা হবে।
আপনি বোধ হয় অবসর নিতে চলা সেই বুড়ো ইঞ্জিন-ড্রাইভারের কাহিনী শুনেছেন। শেষবার সে যখন ইঞ্জিনটা চালাচ্ছিলো, সে বলে তার মনে খুবই লাগলো যে অন্য একজন লোক তার এই ইঞ্জিন চালাবে। ভারি চমৎকার আমার এই ইঞ্জিন! তাই না? বুড়ো নিজের কাজকে বড় ভালোবাসতো। সে তার তেলমাখা ইঞ্জিনটাকে অত্যন্ত ভালোবাসতো।
নিজের কাজকে ভালোবাসুন।
আমাদের কাজের পিছনে যখন অনুভূতি কাজ করে আমরা তখনই সব সেরা হয়ে উঠি।
আপনি যতো নড়েচড়ে বলে বসলেন, কয়েক মিনিট আগে কি যেন বলেছিলেন আমাদের সব কাজের পিছনে চিন্তা সম্বন্ধে?
ঠিকই ধরেছেন। বোঝা যাচ্ছে আমরা অনেকটা গোলমাল করে ফেলেছি। কিন্তু এবার সঠিক কোন কাজের দিকে তাকান। সেটা কী রকম?
কিন্তু কারও জীবন সেটা হঠাৎ হয় না। কাজ যিনি করছেন তিনি যদি সেটা ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে থাকেন তাতে সেটা ভুল আর ক্ষতিকর হতে পারে।
না। তিনি কোন ঝুঁকি নিতে চাননি। তিনি আগেই ভেবে রেখেছিলেন। তারপর এটাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। এটার সম্বন্ধে কোন ধারণাই ছিল না।
তিনি তাঁর শরীরের যন্ত্রগুলো গতিশীল করেন। তাঁর মনে আর স্নায়ুতে যে আলোড়ন আসে তাই হল অনুভূতি।
ঠিক তখনই তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক কর্মবীর মানুষ।
অতএব দেখতে পাচ্ছেন, সঠিক কাজ তৈরী হয় একটা ধারণা থেকেই, আর তাছাড়াও এক অনুভূতি থেকে যা যন্ত্রকে পরিচালিত করে।
আমরা ভালো করে কাজ করি, কারণ আমরা ভালোভাবে চিন্তা করি আর তাছাড়াও ভালোভাবে ‘অনুভবও’ করি।
আবেগ ছাড়া কোন চিন্তার কোন ক্ষমতা নেই-এটা কোন স্বপ্নেরই জন্ম দেয়।
আবার চিন্তা ছাড়া আবেগ হলো লক্ষ্য ছাড়া ছুঁড়ে দেওয়া একটা তীর-যার শেষ পরিণতি অপব্যয়, ক্ষতি আর ব্যর্থতা।
সঠিক চিন্তা, যা উপযুক্ত অনুভূতির জন্ম দেয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য ভেদ করার পথে আমাদের সঠিকভাবে পরিচালনা করে।
আসুন আমরা আমাদের জীবনের একটা ছক তৈরী করে ফেলি। আসুন আমরা জেনে নিই পরিষ্কারভাবেই আমরা কোথায় চলেছি আর সেখানে পৌঁছবোই বা কেমন করে।
আর এই ভাবেই আমরা ঠিক যা চাই তা পেতে পারি।
ভেসে বেড়ানো কাউকে তার জীবনের উদ্দেশ্য পূরণ করায় না। আমরা ভাবি আর না ভাবি ঘটনা যথারীতি ঘটে চলে। আসল কথা হলো আমাদের কেবল দেখতে হবে ঐ সব ঘটমান অবস্থা আমাদের যেন সাহায্য করে বাধার সৃষ্টি না করে আর বেঁধে না রাখে।
আমরা তো বাতাসের উপর বিশ্বাস রেখে চলি না। আমরা শুধু গতিপথটা মনে রেখে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাই। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসরণ করি।
ব্যাপারটা মাঝে মাঝে কষ্টকর হয়ে ওঠে। তার অর্থ হলো মাঝপথে থেমে পড়া। আমাদের হয়তো মাঝপথে সত্যিকার যাতে আনন্দ পাই তা ত্যাগ করতেও হতে পারে। এজন্য আমাদের হয়তো শুষ্ক, নীরস, কারিগরী বিষয়ের বইও পাট করতে হতে পারে, আমাদের পছন্দসই হাল্কা বই সরিয়ে রেখে। অথবা, আমাদের হয়তো অফিসে বা পড়ার টেবিলে আটকে থাকতেও হতে পারে–যে সময়টা আমারা অনায়াসে টেনিস খেলে বা ব্রিজ খেলেই কাটাতে পারতাম। দীর্ঘ সময় কাজে আটকে থাকার অর্থ হলো ক্লান্তিতে জর্জর হয়ে পড়া। এতে আমাদের অনেক বেশী ঘুমোতেও হয়। এছাড়াও আমাদের হয়তো নিয়ন্ত্রণ, চাঁদনী রাতের হৈ চৈ, নাচের আসর ইত্যাদি থেকেও সরে থাকতে হয়।
তবে যে মানুষ নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে বদ্ধপরিকর, সব সময়েই কোথায় পৌঁছবেন তিনি সেটা মনে রাখেন। সফল হয়ে আরও পাওয়ার জন্য তিনি ঢের বেশিই দিতে রাজি।
.
চার. সাফল্যের আকাক্ষা
আমরা সব সময়েই কিছু না কিছু করে চলেছি। দৌড়বাজীর ‘শুরু’ আর ‘থামা’ কথা দুটো আমরা সব সময় সঙ্গে নিয়ে ছুটে চলেছি।
‘একটার পর একটা যাচ্ছেতাই ঘটনাই হলো আমার জীবন’ কথাটা বলেছেন একজন অতি ব্যস্ত মানুষ।
এ ব্যাপার সকলের জীবনেরই কথা–তা সেই ব্যস্ততা চোখে পড়ুক আর না পড়ুক, যে ব্যস্ততা জড়িয়ে থাকে শরীরে বা মনে।
তাই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে হাজির হওয়ার অর্থই হলো ভালোভাবে কাজ করে যাওয়া।
‘আপনি যদি উন্নতি করতে চান’, কথাটা আপনারই, তাহলে অবশ্যই উন্নতি করবেন। ব্যাপারটা খুবই সহজ।
এই উদাহরণটা লক্ষ করুন।
এখন সকাল ছ’টা, বিছানা ত্যাগ করে ওঠার সময়। অ্যালাম ঘড়ি ক্রিং ক্রিং করে চলেছে। আপনি আপনার চোখ ডললেন, পাশ ফিরলেন, আড়মোরা ভাঙলেন, হাই তুললেন। আপনি জানেন দেরী হলে কি হবে। আপনি এও জানেন আপনার আরও একটু বিশ্রাম দরকার। আপনি আরও একটু ঘুমোতে চান। অতএব আপনি আরও শুয়ে রইলেন আর যথারীতি ‘লেট’ হলেন যদিও উল্টোটাই চাইছিলেন।
তাহলে দেখতে পাচ্ছেন শুধু চাইলেই সেটা একটা মানুষকে বেশি দূর নিয়ে যেতে পারে না। কাজের থেকে এটা সম্পূর্ণ আলাদা।
তফাৎটা কি রকম?
ওহ! আপনি হয়তো বলবেন, এটা অনুভূতির ব্যাপার। আপনার যদি ইচ্ছে করে তাহলে গিয়ে কাজ করুন। অবশ্য আপনার যদি কাজের শক্তি থাকে। কার্যকরী শক্তিই হল সবকিছু। কিছু আপনি করছেন তারই পিছনে এটা রয়েছে।
আরও একটা ব্যাপার ধরুন।
এবার একটি কাজের জন্য তৈরী যন্ত্র। এর কোন জীবন নেই, জড়পদার্থ। যন্ত্রটার ক্ষুদে চাকাগুলোও নড়ছে না। কিন্তু কেন? বিদ্যুৎ রয়েছে, কাজ চালু করতে সদা জাগ্রত। তাহলে গণ্ডগোল কোথায়? একটু দাঁড়ান। অপারেটার আসছেন। তিনি এসে সুইচ টিপবেন। এক মুহূর্তের মধ্যেই মেশিনটা সশব্দে চলতে আরম্ভ করলো। শত শত চাকা, হুইল পিস্টন শক্তির স্পর্শে আনন্দে কাজ করে চললো।
তাহলে তফাৎটা কোথায়? সুইট টেপার মধ্যে।
আমাদেরও সুইচ টিপতে হবে।
তবে শুধু ইচ্ছা করাই সুইট টেপা নয়। আমাদের মনস্থির করতে হবে, নিজেদের হুকুম দিতে হবে, আমাদের ইচ্ছাকে কাজে লাগাতে হবে।
আমাদের মধ্যে অনেকেই এই ব্যাপারে নিশ্চিন্ত নয়।
আমাদের কাজের ধারণা আছে, চাহিদা, অনুভূতি আর নিজের নিজের পথের কাজ করার পদ্ধতিও আছে। আমরা প্রায়ই না ভেবেই কাজ করে বসি। আমরা কাজটা করি আর ঝামেলা অনুভব করি না। আমরা অসন্তোষ থেকে বহু দুরে থাকার চেষ্টাই করি–আর তা হলো অস্বস্তি সৃষ্টিকারী লোকজন, জায়গা বা কাজের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা আর এটা করবো নাই বা কেন? নীরস আর খারাপ কিছু করার চেয়ে বরং আমরা যা ভালোবাসি তাই করাই ভালো।
আমরা চেষ্টা করার ইচ্ছেই করি না। আসল কারণ হলো আসুন এই মেশিনটাকে নিজেই নিজের দায়িত্ব নিয়ে নিই, এরকমই বোধ হয় আমাদের বক্তব্য। সুইচ টেপা কাজটাই বাজে। এটা না করেও চালাতে পারি। এত বছর তাইতো করে এলাম।
কিন্তু অসন্তোষের ব্যাপারটা কেমন?
এর মুখোমুখি না হয়েও পারা যায় না। এর মুখোমুখি আমাদের হতেই হয়। এটা না করলেই ভোগান্তি হয়। যেমন ধরুন, ‘বিপদ’-এটা অসন্তোষের কারণ বটে। এটা আমাদের আক্রমণ করে বলতে পরেন–যে আক্রমণ ঘটতে পারে শরীর আর মন দুটোর উপরেই। এটা আবার আমরা যাদের ভালোবাসি তাদের উপরেও আক্রমণ করতে পারে। তাই একে এড়িয়ে পালাতে গিয়ে লাভ হয় না। তাই আসুন নিজেকে ঠিক করে নিন। অসন্তোষের মুখোমুখি তাকান। প্রচেষ্টার জন্ম দিন। আপনার ইচ্ছাকে জাগ্রত করুন।
অতএব দেখতে পাচ্ছেন, প্রতিটি কাজের পিছনেই রয়েছে কাজের প্রচেষ্টা, আপনি একটা বিষয়ে সচেতন। কখনও সে প্রচেষ্টা বড় আবার কখনও বা ছোট। জীবন যাপন করে জীবনের নিজের মতই একটা প্রচেষ্টা মাত্র। প্রতিটি জীবিত প্রাণীর মধ্যে রয়েছে বাঁচার তাগিদ। এটা কেড়ে নিন, জীবন তাহলে নিঃশেষ হয়ে যাবে। আবিষ্কারকদের পিতামহ, সেই এডিসন এটা ভালোমতই জানতেন। একদিন তিনি তার পরিবারের সকলকে বললেন, তিনি ভেবে দেখেছেন বহুদিন বেঁচে আছেন। তিনি মনস্থির করেছিলেন আর বাঁচবেন না। তারমধ্যে কোনরকম গোলমাল ছিলো না। কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছাশক্তি কাজে লাগিয়েছিলেন। নিজের ঘরে গিয়ে তিনি শুয়ে পড়ে মারা গেলেন।
আমাদেরও প্রয়োজন এই রকম ভালোভাবে বাঁচার ইচ্ছাশক্তি, সোজা উঠে এগিয়ে চল। এটাই হলো প্রতিটি জীবের জীবন কাহিনী। এবার বেঁচে থাকা বা না থাকার দুরেটার একটা বেছে নিতে হবে। তাই বিপদকে মেনে তার মুখোমুখি হতে হয়। অসন্তোষ আর কদর্যতার সামনে দাঁড়াতে হয়। তাতে তাই নিজের একটা ইচ্ছা জন্মানোর শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়।
তাহলে আসুন আমরা আমাদের ইচ্ছাশক্তিকে তৈরি রাখি কঠিন কাজের জন্য। এর একমাত্র পথ। হলো অনুশীলন। আপনার ইচ্ছাকে রোজ কাজে লাগান। যতবার পারেন চেষ্টা করুন। কঠিন কোন কাজের চেষ্টা করুন। যে কাজ করতে আপনার আদৌ কোন ইচ্ছা নেই। সুখকে একবার ফিরিয়ে দিন। সুখকে অন্তত একবারের মত ত্যাগ করুন। এটাই হলো ইচ্ছা সমন্বিত কাজের পথ, নিয়মিত কাজের পথ, সদুদ্দেশ্য প্রণোদিত কাজের পথ।
.
পাঁচ. ছ’পেনি ও একটি সোনার গিনি
আপনি বা আমি রোজই ডজন ডজন মানুষের সংস্পর্শে আসি যাদের মনে রাখার কথা আমলই দিই না।
তাদের মধ্যে কিছুই নেই, অর্থাৎ এমন কিছু তাদের মধ্যে নেই যেটা আমাদের আকর্ষণ করে। আমাদের কাছে তাদের কোন মূল্যই নেই।
তারা যদি আমাদের জন্য কাজ করে আমরা তাদের কোন দাম দিতে চাই না। আবার আমরা যদি তাদের জন্য কাজ করি তাহলে ভাবি বিশেষ চেষ্টা করে কেন তাদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করবো?
তাহলে ঐ সমস্ত লোকের ভুলটা কি?
তারা পৃথিবীর অসংখ্য কোটি কোটি মানুষেরই মতো। তারা চোখে পড়ার মত কিছু করে না। অথচ তাদের পরিবার পরিজন আছে, তারা আইন মেনে চলে, সতোর সঙ্গে কাজে ব্যস্ত থাকে। বেশ সম্মান আকর্ষণও করে থাকে। এসব থাকা সত্ত্বেও কিন্তু তারা কেমন মূল্যহীন, আকর্ষণহীন। তারা একদল মূল্যহীন মানুষ মাত্র, যেসব মানুষের সুখের কোনো অর্থই নেই।
আসল কথা হলো এই লোকগুলো একবারের জন্যও নিজেদের কখনও বোঝানোর চেষ্টা করেনি। তাদের অস্তিত্ব টের পাওয়ানোর প্রচেষ্টা চলায় নি। তারা কখনই নিজেরা কি জানবার চেষ্টা করেনি।
এর ফলে তাদের আসল সত্ত্বা বেড়ে ওঠেনি।
এই সব প্রকৃত সত্ত্বাগুলো দেখতে পাবেন, বেশ কয়েক বছর আগেও কেমন উজ্জ্বল, সুখী ছিলো। কিন্তু তাদের দিকে কেউ মনোযোগ দেয়নি। তাই আজ তারা কতকগুলো দুর্বল, ব্যর্থ চরিত্র মাত্র।
এটা থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে আমরা যদি চালনা করার ব্যাপারে সাফল্য লাভ করতে চাই তাহলে তাদের আমাদের কাছে টেনে নিতেই হবে।
আমরা বুঝতে পারি আমাদের কাছে টানার এই ক্ষমতা আছে যখন মানুষ আমাদের ওপর খুশি হয়। তারা নিশ্চয়ই আমাদের মধ্যে কিছু দেখতে পায়।
আপনি বা আমি এধরনের পুরুষ বা মহিলার প্রায়ই মুখোমুখি হই। অন্যেরা এই সব মানুষের তুলনায় খুবই সস্তা আর মুল্যহীন বলে মনে হয়। এরা হলো দু’তিন পয়সা দামের মানুষ। এই সব মানুষকে কিনে ফেলতে কয়েকটা মিনিট বা বার কয়েক দেখা সাক্ষাতেই তাদের সবকিছু জেনে নিতে পারা যায়। তারা শুধু বুদবুদের মতই ফেনিয়ে শেষ হয়। তারা আমাদের ব্যস্ত রাখতে পারে না।
তবে যে লোকের কথা বলছি তিনি সম্পূর্ণ আলাদা।
কেউ তাকে চট করে পুরোপুরি আয়ত্ত করতে পারে না। কেউ পরিষ্কারভাবে তাঁকে দেখে নিতেও পারে না। এতে মনে হয় যে ওঁর এমন গভীরতা আছে যা যে কোন মানুষের পক্ষে বোঝা আয়ত্তের বাইরে।
তা সত্ত্বেও লোক তার ক্ষমতা; গভীরতা আর সারা জীবনব্যাপী বৈচিত্র্য অনুভব করতে থাকে।
এই লোকটি এমনই হন যিনি যে কোন জায়গায়, যে কোন সময়ে মানুষের কাছ থেকে সেরা জিনিসটি আদায় করে নিতে পারেন।
তাহলে তার মতো হচ্ছেন না কেন? মানুষকে আপনার মধ্যে কিছু দেখতে দিন। আপনার মধ্যে সেটা না থাকলে তিনি দেখতে পাবেন না। অতএব সেটা রাখার চেষ্টাই করুন না কেন?
আপনার মনকে গভীরত্ব আর দাম দেবার চেষ্টা করুন। নিজের সম্বন্ধে নানা বিষয় ভাবুন। যেসব চিন্তাবিদকে দেখবেন তাদের লক্ষ্য করুন তাদের কথা বই থেকে পড়ে জেনে নিন।
বাঁচাকেই বেশ গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করুন। শেখার চেষ্টা করুন সবচেয়ে ভালো কি, কিসে সত্যিই কাজ হবে-এর সঙ্গে খেয়াল রাখুন সত্যিকার জ্ঞানীরা কি ভাবেন, কি বলেন বা কি করে থাকেন।
যেসব মানুষের জীবনে আপনার মতই ঝঞ্ঝাট ছিলো তাদের জীবনী পড়ুন। দেখে নিন তারা কিভাবে সে গুলোর মুখোমুখি হয়েছেন।
বিশ্বের সেরা কাহিনীগুলোই আপনাকে জীবন সম্পর্কে সব কিছু আর কি করে বাঁচতে হয় তা জানিয়ে দেবে।
আপনার কাজের বাইরের সময়টুকুতে প্রত্যেকদিনএই ভাবেই নিজেকে উন্নত করতে চেষ্টা চালান। অপর্যাপ্ত সম্পদ আহরণ করতে হলে এর চেয়ে ভালো উপায় আর নেই। এরকম করার ফলে সবাই আপনাকে চাইবে।
.
ছয়. ব্যক্তিত্বের কথা
মানুষ বাস্তবের মুখোমুখি হতে ভয় পায়। তারা অপ্রিয় ব্যাপারকে ভয় পায়, বিশেষ করে তাদের নিজেদের সম্বন্ধে। তারা সহজে মেনে নিতেও পারেনা, তারা বলে সব দোষই তাদের নিজেদের। এই ব্যর্থ দুঃখজনক পরিস্থিতিতে তারা এর মুখোমুখি হতে ইচ্ছে করে না। তারা নিজেদের ব্যাপারে কিছুই জানে না, সেই সব ঘটনারই মত।
এই ব্যাপারটা এমনই যে আসলে সেটাই তাদের দমিয়ে রাখে, তাদের সামনে এগিয়ে আসতে বাধা দেয়।
কারণ কেউ যদি না জানে তাদের মধ্যে গোলমাল কোথায়, তাহলে তার পক্ষে কিভাবে জানা সম্ভব সে কি ঠিক করে নেবে?
এটা বিশেষ ভাবেই জীবনে সাফল্য লাভ করার ব্যাপারে সত্যি।
আপনি বা আমি, আর আমাদের বেশির ভাগই প্রায় অনুভব করি যে বিশেষ কেউ একজন বেশ উন্নতি করে চলেছে, আর তার কারণ হলো সে বিশেষ বংশে জন্মেছে বা বিশেষ কোন ক্ষমতার আড়ালে আছে। অন্যরা তাকে নানা বাধা পার হতেই সাহায্য করে। বাধা পাওয়ার কোন উপায়ই ছিল না। তার উপায়, সুযোগ আর সময় সবই ছিলো। এতেই তার সবকিছু ব্যাখ্যা মেলে। ভাগ্যেরও এতে আঙুলের স্পর্শ ছিলো। জীবনের কাজে কর্মেও সুযোগ থাকে। আপনি যদি ভাগ্য’ না নিয়েই জন্মান, শত চেষ্টা না করেও আপনার অবস্থার বদল হবে না। একটার পর একটা বাধা আর বিপত্তি আসতে থাকবে, আপনি অভাগা। এর বেশি আর বলার কিছু নেই। আপনি নিছক বাতাসের ঝাঁপটায় উড়ে গেলেন। আপনি বলবেন বাতাসকে সামলাবার উপায় নেই আপনার।
এখন যেটা আঁকড়ে ধরতে হবে তা হলো এই :
বহু অবস্থা আসে যার কোন বাধা থাকে না। এগুলো আমাদের আয়ত্তের বাইরে যথাস্থানে থেকে যায়। এই পৃথিবীতেই যেন আমাদের কেউ ছেড়ে দিয়েছে। আমরা এই পৃথিবী তৈরি করিনি। তাহলে, আমাদের একটা অংশই এই পৃথিবীর সব কিছু। যে সময়টাতে আমাদের বাস, যে জাতি থেকে আমাদের আগমণ, যারা আমাদের আগে চলে গেছেন … আমাদের বাবা মা আমাদের জন্য যে টাকা খরচ করতে পারেন, যে শিক্ষা আমরা গ্রহণ করতে পারি, আমাদের যে শরীরে আমরা বাঁচি, যে মনের অংশ নিয়ে আমরা কাজ করি-এর কোনটাই আমরা কখনই বেছে নিতে পারি না।
এসব যেমন আছে, তেমন ভাবেই আমাদের গ্রহণ করতে হয়। তারাই, আমরা যেমন আছি তার কিছুটা তৈরি করে।
তবে পুরোপুরি নয়।
এ ব্যাপারে উদাহরণ হিসেবে যাকে আপনি প্রশংসা করেন, যিনি সার্থকতা লাভ করেছেন তার ব্যাপারটাই ধরুন।
আসল ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করতে চেষ্টা করুন।
আপনি দেখতে পাবেন যে তিনি কোন বিপত্তি আর হতাশার সামনে বহুবার পড়েছিলেন। যখন মনে হয়েছে তিনি সৌভাগ্যের মধ্যে আছেন আর উপভোগ করেছেন তখনও তিনি কিন্তু আড়ালে লড়াই করে চেষ্টা আর উন্নতির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ধরণের মানুষরাই হয় স্বীকৃত। তাঁরা যতদূরই যান, বাইরের সবকিছু পরিবার, প্রতিষ্ঠা, সম্পদ, ‘ভাগ্য’-কোন কিছুই বাধা হয় না। তাঁরা নিজেদের উপরেই নির্ভর করে।
এই দৌড়ে তারা নিজেদের সাহায্য নিজেরাই করেন। তাঁদের শক্তির উৎস হলো তাদের মানসিক বল আর শারীরিক ক্ষমতা; তাঁদের ব্যক্তিত্বের শক্তি।
ব্যক্তিত্ব আসলে তাহলে কি? এটা নিয়েই আপনি হন ‘আপনি’ আর আমি হই ‘আমি’ এটা এমন কিছু যেটা আমার আর আপনার তফাৎ সৃষ্টি করে …।
আপনি যা ভাবছেন এটা কিন্তু তা নয়–অর্থাৎ উঁচু কণ্ঠস্বর, ভাবভঙ্গী, দৃষ্টি বা অস্বাভাবিক উচ্চতা বা শরীর নয়।
এটা হল আপনি যা তাই, অর্থাৎ আপনার বাইরের আকৃতি। পরের পৃষ্ঠাগুলোয় আমরা এই ব্যক্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করবো।
সেটা হলো : আমরা কি, আমরা ভাবি কেন, অনুভব করি কেন, আর কাজই বা করি কেন, কিভাবে আমাদের সেরা জিনিস আদায় করে নিই, কিভাবে আমরা মানুষের মনোলোভা ব্যক্তিত্ব গঠন করতে পারি, যে ব্যক্তিত্ব সব জয় করে নেয়, থিয়েটারে সব সেরা আসন জোগাড় করে দেয়।
উদাহরণ হিসেবে ধরুন, আমাদের আলোচনা করতে হবে স্বাস্থ্যবান মনের জন্য সুস্বাস্থ্য সম্পন্ন শরীর, আর স্বাস্থ্যবান দেহের জন্য স্বাস্থ্যসম্পন্ন মন।
তারপরেই নিজেদের প্রশ্ন করতে হবে : খেলাটা কি কীভাবেই বা খেলা হয়? এসবের পিছনে উদ্দেশ্যই বা কী?
আমাদের জীবনের একটা উদ্দেশ্য থাকতেই হবে। তা যদি না থাকে, তাহলে আমাদের কোথাও জায়গা হবে না।
আমরা নিজেরা যা আর আমরা যা হতে চাই, সেগুলোই আমাদের উদ্দেশ্যকে দৃঢ় সত্য করে গড়ে তোলায় সহায়তা করবে। আমাদের সহজাত ক্ষমতাকে নমনীয় করে তুলতে হবে। নমনীয় করতে হবে তার ইচ্ছা, বাসনা, আবেগ আর কামনাকেও আর এই পথ ধরে আমাদের ব্যক্তিত্বকে গঠন করতে হবে।
আমাদের যার যেখানে স্থান ‘ব্যক্তিত্বই’ সেখানে আমাদের স্থাপন করে।
কার্যকরী একটা ব্যক্তিত্ব থাকলেই বেঁচে থাকার আনন্দ। এর সাহায্যেই আপনি আপনার সামনের ধাপগুলোর উচ্চতার পরিমাপ করে নিতে পারেন।
এই যুগটাই হলো আসলে ব্যক্তিত্বের যুগ। সেরা ব্যক্তিত্বের অধিকারী যিনি তিনিই জয়ী হন। যে ব্যক্তি নিজেকে অবহেলা করেন তিনি অবশ্যই সব সুযোগ হারিয়ে বসেন। তিনি ব্যর্থ হন–আর এই ব্যর্থতার জন্য তার কাউকে দোষারোপ করার উপায় থাকে না, একমাত্র নিজেকে ছাড়া। তিনি যদি তার ব্যক্তিত্বকে চালনা করে অনুশীলনের মাধ্যমে দৃঢ়ত্ব দান করতেন আর ব্যক্তিত্বের পেশীগুলো গড়ে তুলতেন তাহলে হয়তো তিনি আশ্চর্যজনক কিছু করতে পারতেন।
এর পরের পৃষ্ঠাগুলোয় যা বক্তব্য থাকছে তা হয়তো আপনাদের কাছে অনেক পরিবর্তনেরই কিছু বার্তা বয়ে আনবে। এই পৃষ্ঠাগুলো হয়তো যা সঠিক সময়ে সঠিক শব্দ বা কথাই আপনাদের পারবে।
এটা আপনাদের কাছে রাখবে সঠিক ব্যক্তিত্ব প্রস্তাবের কাঠামো। এই কাঠামো তৈরি হয়েছে বাস্তবের ঘটনায় নির্ভর করে। এগুলো আবিষ্কার করেছেন প্রথম শ্রেণীর মনস্তত্ত্ববিদরা, তাঁরা হলেন ফ্রয়েড, ম্যাকডুগাল, পেলম্যান প্রমুখ ও গুণীজনেরা।
সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এগুলো আপনার অন্ধভাবে ভুল করার হাত থেকে রক্ষা করবে। আর প্রয়োজনের সময় কর্তৃত্বের অবস্থা দান করবে–এই শক্তি, আপনার ধারণার বাইরে আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
.
সাত. ভিতরের শক্তি
সঠিক জায়গায় পৌঁছানো হল ক্ষমতারই প্রকাশের ফল : তা হল, এগিয়ে নেওয়ার শক্তি, ব্যক্তিত্বের শক্তি।
আপনি সারা জীবন ধরে যদি মনেপ্রাণে ভালো করতে চান, তাহলে এই শক্তিই আপনি অর্জন করতে চাইবেন–এই ‘সর্বাভৌম’ ক্ষমতা আপনি আরও বেশি করেই চাইবেন।
এ শক্তি রয়েছে আপনারই মধ্যে। এটাই আপনাকে সঠিক কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। এটাই আপনাকে ভালোভাবে কাজ সম্পন্ন করায়।
মানুষ আপনার ক্ষমতার স্পর্শ টের পায়। আপনি সকলকে খুশি করে তুললে তাদের মধ্যে জেগে ওঠে প্রতিক্রিয়া।
ক্ষমতার অধিকারী একজন মানুষ সত্যিই অসাধারণ। এ ধরনের মানুষের কাহিনী আপনি পড়ে থাকবেন, তারা কিভাবে তাদের ছাপ রেখে যান মানুষেরই চিন্তা আর কাজে কর্মে। হয়তো এ ধরণের মানুষের সংস্পর্শে আপনি কখনও এসেছেন। এই শক্তির প্রকাশ আপনিও কখন টের পেয়েও থাকবেন। এটা আপনার উপর উজ্জ্বল কোন ছাপও রেখে যেতে পারে আর আপনাকে কর্মে উদ্বুদ্ধ করে থাকতে পারে।
যে শক্তি তার উপস্থিতি টের পাইয়ে দেয় সে শক্তি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এই শক্তির জন্যই আপনি আর আমি কাজ করে চলি। সেই শক্তি নয়, যে শক্তি বৃষ্টিধারায় মরুর বুকে ঝরার সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য বালুকণা তাকে শুষে নেয়।
আমরা সেই শক্তিকেই খুঁজে ফিরি (বলতে গেলে) যা বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়, যা ইঞ্জিনকে গতিময় করে চালায় টারবাইন আর ডায়নামো। যে শক্তি সমুদ্র শাসন করে, শাসন করে বিস্তৃত ভূমি আর বাতাসকে। অর্থাৎ সেই কার্যকরী শক্তি।
আত্মনিয়ন্ত্রণই এই শক্তির যোগান দিতে পারে। তবে এর অর্থ হলো প্রথমে যে আপনার নিজের উপর বিশ্বাস আছে।
আপনার পক্ষে কোন কাজে সফল হওয়া সম্ভব হবে না যদি না আপনি নিজে জানেন আপনি নিশ্চিত। আপনার মধ্যে যদি ইতস্তত ভাব থাকে, বা আরও খারাপ হলে আপনি যদি হতোদ্যম হন তাহলে আপনি কখনই শ্রেষ্ঠত্বের পর্যায়ে উঠতে পারবেন না।
আপনি নিজেকে বলতে চেষ্টা করুন (মাঝে মাঝে কাজটা কঠিন মনে হলেও) যে আপনি সক্ষম, আপনার মধ্যে বেশ কিছু ভালো জিনিস আছে।
তারপরেই মনস্থির করে নিন আপনি এগিয়ে যাবেন, উঠবেন আরও …আরও উঁচুতে। নিজেকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করুন। সত্যিকার গ্রহণীয় বস্তু কখনও হঠাৎ এসে পড়ে না।
আত্ম-জিজ্ঞাসা আর আত্মজ্ঞান অতি দরকারী জিনিস। এটা না থাকলে, বা এর সাহায্য ছাড়া আমাদের নিজেদের কাছ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ জিনিসটি আদায় করতে পারবো না।
প্রায়ই এটা লক্ষ্য করা যায় আমরা যা পাই তার ঢের বেশি পেতে পারতাম শুধু নিজেদের সম্পর্কে যদি আরও কিছু জানা থাকতো।
আপনি নিজেকে ভালো করে দেখুন। যতোটা সম্ভব জানতে চেষ্টা করুন নিজে কিভাবে চিন্তা করেন, কিভাবে আর কেন আপনি কাজগুলো করেন।
আপনার নিজের ভালো দিকগুলো আর যা ভালো নয় সেগুলোও ভালো করে জানতে চেষ্টা করুন; নিজের কাছ থেকে যতোটা সম্ভব আদায় করে নিন। নিজেকে আরও যোগ্য করে তুলুন।
শক্তির অপব্যয় করবেন না। এ নিয়মটি চমৎকার ভুলবেন না।
এরকম করার ফলেই আপনার অন্তর্দৃষ্টি জন্মাবে। আপনি বুঝতে পারবেন কিভাবে আপনার যন্ত্র কাজ করছে। আপনি বুঝতে সক্ষম হবেন। আপনি তার পরিমাপ করতে পারবেন, সেটা তাৎক্ষণিক কি করে চলেছে, কি করতে সে সক্ষম ব্যবহার করলে।
অন্তরের এই জ্ঞান একটা শক্তির ধারণার জন্ম দেয়। এর ফলে সেই যন্ত্র ব্যবহারে আপনার গর্ববোধ হবে। আপনি এজন্য আপনার সব মনোযোগ এর উপরেই দিতে চাইবেন। কিছুদিনের মধ্যে এর ফলেই সেটা আপনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসবে।
আত্মসম্মান, আত্মজ্ঞান, আত্মনিয়ন্ত্রণ (একজন ঋষি কবি বলেছেন)–এই তিনটিই শুধু মানুষকে সর্বশক্তিমান করে তুলতে পারে।
সঠিক জীবন যাপন নির্ভর করে এরই উপর। এগুলো ছাড়া মানুষ কেবল শক্তির অপচয় করে। সে চারপাশের সব কিছুই নষ্ট করে দেয়। সে নিজেকেও ধ্বংস করে। সে ব্যর্থ হয়ে যাওয়া কিছু শক্তিই হয়ে ওঠে। আর, জেনে রাখবেন এর প্রতিরোধের ছায়া পড়ে সব জায়গাতেই।
অন্য চারজনের চেয়ে আপনি আরও দূরে যেতে ইচ্ছুক। আপনি আরও ভালো করতে পারেন। আর কেনই বা নয়?
হাজার হাজার ছেলে কত খারাপভাবে সব শুরু করেছে। তা সত্ত্বেও তারা একবারে সামনের সারিতেই পৌঁছে গেছে। আর এইভাবেই কিছু বিখ্যাত আর বিশাল ব্যবসা (মার্শাল ফিল্ডের আর জন ওয়ানামেকারের) মহীরুহ হয়ে ওঠে। এ ব্যবসা যে শুরু করেছিলেন তার হাতে প্রচুর মূলধন আদৌ ছিলো না। তাছাড়া তিনি কোন বিখ্যাত স্কুল বা কলেজেও শিক্ষা পাননি। তিনি শুধু লড়াই চালিয়ে গেছেন। সব কিছুই তার বিরুদ্ধে ছিলো। তাসত্ত্বেও কোন উপায়ে তিনি সব বাধা অতিক্রম করেন–কতবার তিনি কঠিন বাধা পেয়েছেন, আঘাত পেয়েছেন, তবুও তিনি শেষপর্যন্ত পোড়খাওয়া মানুষ হতে পেরেছেন।
সকলেই বলে এরকম হওয়া দরকার ছিল। কারণ তার মধ্যে ছিলো সেই শক্তি। এটা আমাদের মধ্যে না থাকলে জীবনে আমরা তেমন কিছু করতে পারবো না।
একে হয়তো ব্যক্তিত্ব আখ্যা দেওয়া চলে, বলা চলে অগ্রণী শক্তি। চৌম্বক শক্তি বা এই ধরনের ইচ্ছেমত অন্য কোন নামও দেওয়া চলতে পারে।
আসল জিনিসটা হলো এটা মনে রাখা যে কোন স্ত্রী বা পুরুষকে যে শক্তি চালনা করে সেটা হলো এই ভিতরের শক্তি। ভিতরের ঐ শক্তিই প্রচণ্ডভাবে জ্বলতে থেকে সে যেভাবে বলে বা করে তাকেই প্রভাবিত করে।
এবার সে শক্তির দিকে ফিরেছে। সে এবার তাকে ব্যবহার করতে চলেছে, প্রতিটি অংশের সে কণা পর্যন্ত ব্যবহার করতে চলেছে।
সে তাকে উসকে দিচ্ছে, সে আগুন যাতে নিভে না যায় সে সেই চেষ্টাও করে চলেছে। সে এবার নিজেকে আবিষ্কার করেছে। সে নিজের সম্পর্কে নিশ্চিত। কোন কিছুই তার আত্মবিশ্বাসকে চলাতে পারবে না। তার আত্মবিশ্বাস তার সাহস সর্বোচ্চ। সে নির্ভয়। সে তার অন্তরের শক্তির জ্বলন্ত অগ্নিশিখাকে দহন করতে দিচ্ছে। যাই ঘটুক না কেন সে আত্মগর্বে বলীয়ান। আমাদের সকলের মধ্যেই রয়েছে এই শক্তি। আমরা ব্যর্থ হই কারণ আমরা এ সম্পর্কে কিছুই করি না। আমরা এ বিষয়ে চোখ বন্ধ করে রাখি। অথবা এও বলা যায় আমরা অপ্রয়োজনীয় ভাবেই ভীত। বা আমরা হয়তো এটা নাড়াচাড়া করে চালু করতে ইচ্ছুক নই।
যেভাবেই হোক, আমরা প্রকৃত যা সেটা কখনই দেখা সম্ভব নয়। এমনকি আমাদের নিজেদের কাছেই আমরা অদৃশ্য, অপরিচিত। আমরা সেই অদৃশ্য মানুষেরই মত। চোখের সামনে পড়ে থাকে টুপি, গ্রেট-কোট, মাফলার, পোশাক, পৃথিবীর সব কিছু যা দেখা যায়। শুধু ছবিতে মানুষটি নিজে নেই, আশ্চর্যই বলা যায়। এবার আয়নাটা সামনে ধরুন। আমরা নিজেদেরও কখনও ঠিকঠিক দেখতে পাই না বেশির ভাগ সময়, অন্তত আমরা প্রকৃতই যা।
তাই এখন আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো : আমাদের চরিত্র বা আমাদের আনন্দ রূপকে। উজ্জ্বলভাবে বাইরে প্রকাশ করা।
আর এটা করতে পারলে তাতেই আমরা সত্যিকার এগিয়ে যেতে পারবো।
কাজের চরিত্রই আমাদের এগিয়ে যেতে সম্ভাবনা তৈরি করে, জীবনের ট্যাক্সি এই পথেই গতিমান হয়ে মাটি ছেড়ে ছুটতে আরম্ভ করে, আর এই করেই সে আরও উঁচুতে উঠে যায়।
কাজের ক্ষেত্রে চরিত্রই হলো আসল এগিয়ে চলার শক্তি, এটা অনেকটাই বৈমানিক সুলভ কথা।
এটা যতক্ষণ চোখের আড়ালে থাকে, থাকে দরজার আড়ালে ঢাকা এটা অনেক বড় কাজ করার স্বপ্ন দেখে চলে।
তাই আসুন, দরজা খুলে ফেলুন। সেই সুপ্ত শক্তিকে জাগ্রত করুন। তাকে শুধু দিবাস্বপ্নে বিভোর হয়ে না থেকে বড় কাজ করতে আহ্বান করুন।
হার্বাট ক্যাসন তার বইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে এই ধারণাই প্রকাশ করেছেন : ব্যক্তিত্ব হলো একটা কার্যকরী সম্পদ।
‘কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এগিয়ে যেতে পারে না’, তার মত হলো এই রকম ‘যদিনা এর পিছনের মানুষেরা নিজেরাই চলমান, গতিময় হয়’।
প্রতিটি ব্যবসার ক্ষেত্রেই কথাটা সত্যি। বিশেষ করে যে ব্যবসা সত্যিই বেঁচে থাকতে চায়।
ব্যক্তিত্ব যদি সমস্ত ব্যবসাকে নষ্ট করে দেয় তাহলে লাভের কণামাত্রও আশা থাকে না। আর তার ফলে সবই হয়ে দাঁড়ায় একটা বোঝা, সম্পূর্ণ অলাভ আর ক্ষতির ব্যাপার।
‘ব্যক্তিত্ব হলো এমনই কোন সিলমোহর যার ছাপ আমরা মানুষের উপর রেখে যাই’ কথাটা ক্যাসনের। এই ভাবেই আমরা মানুষকে প্রভাবিত করি। আর এই ভাবেই সব মানুষ আমাদের কথা ভাবে, আমাদের অনুভূতি দিয়ে টের পায়। আমরা যা চাই তা এরই মাধ্যমে লাভ করতে পারি।
এটা আমাদের বন্ধুত্বলাভে সহায়ক হয়। এ দরজা খুলে ধরে। সামনে প্রসারিত করে দেয় মসৃণ, দীর্ঘ পথ।
এরই সাহায্যে আমরা বিশাল পর্বতের উচ্চতা মেপে নিতে পারি। ব্যক্তিত্বের মতো যাদুকরী ক্ষমতা আয়ত্ত হলে পাহাড় অতিক্রম করাও কোন সমস্যাই নয়।
এ হল বন্ধুত্ব লাভের; বন্ধু জয় করার একটা কলাশিল্প।
হয়তো তার চেয়েও বেশি কিছু, এ হলো বন্ধুত্বকে কাজে লাগানোর কৌশল, এ না থাকলে কোন মানুষ হয়ে যায় জীবনীশক্তি হীন, মৃত আর অকার্যকর। আর এটা থাকলে সে বাস করে চলে আনন্দের সঙ্গে, ক্রমশঃ শক্তিলাভ করে। সে হয়ে ওঠে এক দুর্দাম শক্তি; এটাই তাকে চালনা করে। সে হয় অপ্রতিরোধ্য, মৌলিক আর বিশেষত্বময়।
সে সম্পূর্ণভাবেই জীবনীশক্তিময় হয়ে ওঠে। সে শুষ্কতাকে সজীবতা দান করে। সে কখনই নিরানন্দময় হয় না। সে কখনই বার্ধক্য অনুভব করে না।
সে সর্বদাই শিখে চলে, সবসময়ই চায় জানতে, প্রতি মুহূর্তেই তার বাসনা জাগে আরও শিক্ষা গ্রহণ করতে।
সে কখনই লাজুক বা পিছিয়ে থাকা মানুষ হতে চায় না।
বেঁচে থাকা তার কাছে যে অর্থ বয়ে আনে তা হলো সত্যিকার মানুষের সঙ্গে বেঁচে থাকা, যে বেঁচে থাকা কখনই কিছু ধারণা, পেঁজামিল, বা নিছক মূল্যবিহীন কল্পনার সঙ্গে নয়।
মানুষের সঙ্গে মিলিত হওয়া তার কাছে হয়ে ওঠে জীবনের উপাদান। সে মানুষের সঙ্গে মিলতে চায়… তাদের চালনা করার জন্য… আর তা নিজের ইচ্ছায়। আর ঠিক এই কারণেই সে সর্বত্রই হয় বিজয়ী।
গ্রেনভিল ক্লিসারের একখানি বই রয়েছে যেটা লক্ষ লক্ষ স্ত্রী পুরুষকে সুখ আর সাফল্যের জন্য সাহায্য করে চলেছে। বইটির নাম : জীবনে কিভাবে সফল হওয়া যায়।
বইটির উদ্দেশ্য সব কিছুকেই ভিতর আর বাইরে থেকে সমান ভাবে দেখা। এটা কোন উপদেশ নয়, নতুন কিছুও বলা হয়নি এতে। এটা এমন কিছু যেগুলো ক্লিসার প্রচুর খরচ করেই আয়ত্ত করে ছিলেন, তিনি জীবনের যন্ত্রণা সাপেক্ষেই এটা শিক্ষা করেন। আর সেই কারণেই তিনি যা বলেছেন তার যথেষ্ট মূল্য আছে। এ হলো সত্যিই কোন পুরুষেরই বই। এ বইটি একজন বিখ্যাত মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন, যিনি জীবনের পাঠশালা থেকে প্রথম শ্রেণীর সম্মান নিয়ে স্নাতক হয়েছেন।
ক্লিসার জানিয়েছেন আমাদের অধিকাংশই এলোমেলোভাবে চলতে চাই। আমরা একটু একটু করে পক্কতা লাভ করি আর তারপরেই ক্রমশ আমাদের পচন ধরে।
জীবনে আমাদের প্রাপ্ত লাভের অংশ তেমন বিরাট হতে পারে না। এটা আরও ঢের বেশি উঁচুতে উঠতে পারে।
আমরা আজ এখন যা করে চলেছি তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু করার ক্ষমতা আমাদের অবশ্যই আছে।
কোন ব্যবসাই উন্নতি লাভ করতে পারে না যতক্ষণ আমরা অপচয়ের দিকে দৃষ্টি দিতে ব্যর্থ। কথাটা বলেছেন ক্লিসার। এমন ছিদ্র আছে যেগুলির দিকে আমাদের নজর দেওয়া অতি জরুরী। একপ্রান্তে যে শক্তি কাজ করে চলে সেটা অপর প্রান্তে হয়তো সঠিক সমতা আনতে ব্যর্থ। এর ফলে সম্যক ফল লাভ হতে পারে না। সব কাজটাই পণ্ড হয়ে যায়।
সব কাজের দিকে যথাযোগ্য নজর দিতে ব্যর্থতার অর্থই হলো আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।
ক্লিসার তাই উপদেশ দিতে চেয়েছেন যাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে তাদের এই ধরনের ব্যাপারে অবশ্যই নজর দিতে হবে। অপচয় বন্ধ করুন, এই হলো তাঁর মত। অন্ততঃ কমিয়ে আনুন।
আমরা যে জিনিস পাওয়ার যোগ্য তাই আমরা পাই। এই হলো ক্লিসারের অভিজ্ঞতা।
তাহলে আপনিও সাফল্যের অধিকারী হওয়ার জন্য এটাই আপনার বিশেষ লক্ষ্যবস্তু করে তুলুন না কেন?
এটা সম্পূর্ণভাবেই আপনার হাতে। এটা আপনার ক্ষমতার মধ্যে ব্যক্তিগত ব্যাপার। ঠিক এই রকমই সকলে বলে যে বিশেষ কায়দা কানুনই মানুষের পরিচয়। আমরা কিন্তু বলতে পারি এবং সেটা সত্য যে সাফল্যই মানুষের প্রতিষ্ঠা আনতে সক্ষম।
অতএব সাফল্য লাভের দিকে দৃষ্টি দিন। এর উপরেই আপনার চোখ রাখুন। একে আশা করতে থাকুন। নিজেকে প্রত্যায়িত করুন যে একমাত্র সাফল্য ছাড়া কিছুতেই আপনার বাসনা নেই।
এটা ব্যক্তিগত ব্যাপার–এই সাফল্য : এ হল ব্যক্তিত্বের কাজ।
আর আপনি যার জন্য কাজ করে যাবেন তা হলো সঠিক মাপের ব্যক্তিত্ব। এই ব্যক্তিত্ব অর্জন করার জন্য আপনার শক্তিও আছে। নিজের উপর আস্থা রাখুন। আত্মবিশ্বাসই অর্ধেক লড়াই জয় করে আনে।
ক্লিসার আর একটা কথাও বলেছেন : আত্মশিক্ষায় বিরাট কাজ দেয়। নিজেকে তাই পর্যালোচনা করে লক্ষ্য রাখুন। এক টুকরো কাগজে আপনার সব ভুল, ব্যর্থতা আর ক্রটি লিখে রাখুন। লিখে রাখুন আপনার সময় কিভাবে ব্যবহার করছেন। আর তারপরেই নিজেকে নিজের হাতে নিন অত্যন্ত জেদ আর পরিশ্রম দিয়ে।
ক্লিসারের মতে সকল ব্যক্তির এই জিনিসগুলি থাকতে হবে : সমায়ানুবর্তিতা … দ্রুততা … … মিতব্যয়িতা।
যে ব্যক্তি কোন বড় মাপের কাজ করতে যান তিনি সময়ের মূল্য জানেন। তাঁর সময় নষ্ট করার মত সময় থাকে না। তিনি গুরুত্ব দিয়েই সময়কে গ্রহণ করেন। আর এই কারণেই তিনি সর্বদাই সময়ের প্রতি অবিচল থাকেন–এতে কিছু করণীয় থাকে। তিনি যদি সময় পুড়িয়ে ফেলেন (কেউ যেমন ব্যাঙ্ক নোট পোড়ায়) তাহলে শেষ পর্যন্ত তার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
আর এই জন্যই তিনি তাঁর সারা দিন ভাগ করে নিয়ে পরিকল্পনা ছকে নেন। হাতে অনেক কাজ থাকে। তিনি যেসব আনন্দের সঙ্গেই করেন–সে কাজ নিয়ে টালবাহানা করতে চাননা বা বন্ধ রাখেন না। হেলায় যারা সব নষ্ট করেন (এটা তার জানা) তাদেরই কাজ বাকি পড়ে যায়।
যারা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন তাঁরা তাঁদের সারা জীবন ধরেই শিক্ষালাভ করে চলেছেন। তাঁরা বড় হয়েছেন কারণ তারা জানেন কত কমই না তিনি শিখেছেন। কতখানি এখনও অজানা রয়ে গেছে। তাঁরা এসব শেখেন যে কোন মানুষের কাছ থেকেই, যে কোন জায়গা থেকে, যে কোন সময়ে। ঠিক এ কারণেই তারা বিনয়ী হন। তারা এটা জানেন সরে দাঁড়ালে’, মানুষকে এড়িয়ে গেলে, বা হটিয়ে দিলে, ঘৃণা বা অবজ্ঞা করলে শেষ পর্যন্ত কোন লাভ হয় না। এমন কেউ নেই যিনি তাঁর সঙ্গী যা জানেন না তিনি তেমন দু একটা জিনিস জানেন না। যে মানুষ কিছু শেখার জন্য আগ্রহী–তিনি জ্ঞান ক্রয় করেন তার বিনয়ের সাহায্যে। বিনয়ের জন্য কোন খরচ লাগে না। এর চেয়ে লাভজনকও কিছু হয় না।
উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানুষের নিজস্ব একটা ইচ্ছাশক্তি থাকে। তিনি জানেন কোথায় কিভাবে চলেছেন। তাঁর জাহাটিতে তিনি হন কর্তা। এটা কেবল ভেসে চলা নয়, তিনি এলোমেলো হতে দেন না। তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখেন। তিনি নিজেরও প্রভু। তার যেহেতু আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শক্তি রয়েছে।
এই চিহ্নই হলো মিতব্যয়িতা।
তিনি তাঁর জীবনের জন্য পরিকল্পনা নেন। তিনি অপব্যয় দূর করেন। তিনি যেন জাহাজের ক্যাপ্টেনের পাশে রয়েছেন, চোখ কুঁচকে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকেন। জাহাজটি ছোট ছিমছাম। টাকা জাহাজটিকে আটোসাঁটো করে রাখে। মানুষটি সেটা জানেন। সময় নষ্ট না করার মতই তিনি টাকাও অপচয় করেন না।
মিতব্যয়িতা হলো অন্তরের উজ্জ্বলতার সেই চিহ্ন যা সামান্য নামক সেই বিরাট গুণ প্রতিভায় স্ফূরিত করে।