পীরজাদার ইনভাইটেশন ছিল তার এক ক্লায়েন্টের বাড়িতে। ক্লায়েন্ট ভদ্রলোকের মেজ মেয়ের জন্মদিন। তাকে কিছু মূল্যবান অলঙ্কার উপহার দেয়া গেল। সর্ব অঙ্গে যৌবন বিচ্ছুরিত মেয়েটা ভারী খুশি হয়েছে ছবিটা এখনো চোখে ভাসছে তার। যে কেউ মনে করতে পারতো উপহারের এই বহর দেখে যে, পীরজাদার চোখ পড়েছে মেয়েটির ওপর। হ্যত তারা মনে করেছেও। পীরজাদার চেয়ে আর কে ভালো জানে এটা হচ্ছে তার ঘৃণার একটা প্রকাশ। যে কোন নিয়ম, নিয়মের কথা শুনলে পীরজাদার আজকাল গা জ্বালা করতে থাকে। তখন সর্বস্ব পণ করে তার ওপর কিশতি মাৎ করতে তৎপর হয়ে ওঠে সে। জন্মদিনে। উপহার দেয়াটা একটা নিয়ম। এ নিয়ম বদলাতে পারবে না পীরজাদা। আর তাই যেন জেদ করে মূল্যবান এক উপহার ছুঁড়ে ফেলে ক্রোধ নেভানো। উপহারটা দিয়েই বেরিয়ে এসেছে সে। এসে বসেছিল একবারে সুরা পান করতে। যখন উঠল, রাত তিনটে। মোড়ের বুড়ো ঝাকড়া গাছটার নিচে ছায়া ছমছম করছে। মনে হচ্ছে শহর থেকে সমস্ত লোক পালিয়ে গেছে মহামারীর ভয়ে।
এলফিনস্টোন স্ট্রীটে দোকানগুলোর শো প্যানেলে এখনো তীব্র আলো জ্বলছে। মূর্তিগুলোর গায়ে পরানো বডিস, শার্ট, টাউজার। কোনটা বন্ধ, কোনটার শুধু উর্ধ্বাঙ্গ। খোলা স্যুটের কাপড় হঠাৎ স্তব্ধ ঝর্ণার মতো ঝুলছে। অতিকায় সিগারেটের টিন থেকে উঁকি দিয়ে আছে জাদুকরের লাঠির মতো সিগারেট। আকাশে নিয়ন বাতির দীপ্তিতে লেখা বিজ্ঞাপন জ্বলছে, নিবছে, জ্বলছে। একটা বিজ্ঞাপনের চারদিকে সহস্র বিন্দুতে খণ্ড খণ্ড লাল বর্ডার নর্তকীর মতো লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরছে। বিরাম নেই সে চলার।
পীরজাদা একটা সিগারেট ধরালো। সারা রাতে খাদ্যবস্তু কিছু পেটে পড়েনি এক প্লেট চীনাবাদাম ছাড়া। এখন কিছু খেতে পেলে ভালো হতো। ভাবলো, গাড়িটা ঘুরিয়ে যাবে কোনো হোটেলে। হয়ত এখনো কোথাও ফ্লোর শো হচ্ছে, রান্নাঘরে কিছু থাকতে পারে।
রেক্স সিনেমা পেরিয়ে ফোয়ারার কাছে আসতেই আকাশের দিকে চোখ পড়ল পীরজাদার। সে আকাশে তারার চন্দন ফোঁটা। তৎক্ষণাৎ তার চোখের সমুখে ভেসে উঠলো কল্পনার সেই নিকষ কালো মহিলার মুখ। সে যেন চোখের ইশাবায় ডাকছে। পীরজাদা আর কোন দিকে তাকাল না, ফিরল না, সোজা তার গাড়ি ছুটল হোটেল কোলামবাসের দিকে।
মাসখানেক হলো একটা নতুন জিনিস লক্ষ্য করছে পীরজাদা। আকাশের সেই কাল্পনিক মুখেব কথা মনে পড়তেই আচমকা আরেক জনের কথা মনে পড়ে যায় তার। সে ব্যক্তিটি তার দুকামরা পরের অধিবাসিনী রজনী। রজনীকে প্রথম যেদিন দেখেছিল, সময়টা সন্ধ্যে, চমকে উঠেছিল পীরজাদা। বুকের মধ্যে মোচড় অনুভব করেছিল যেন জন্মজন্মান্তরের ব্যথা। মন হয়েছিল, রজনীর কালো মুখের লাবণ্য দেখবার জন্যেই এতকাল ধরে সে বেঁচে আছে।
পীরজাদা অবাক হয়ে দেখত রজনীকে। ভীরু, নম্র, সচকিতা, তাড়া খাওয়া হরিণীর মতো মেয়ে। বোধহয় অস্পষ্ট করে একটা সাদৃশ্য এবং সান্ত্বনা খুঁজে পেত প্রথম পর্যায়ে তার স্ত্রীর গ্রামীণতার সঙ্গে।
হয়ত সকালে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়েছে রজনী, পদশব্দে চোখ ফিরিয়ে পীরজাদা তাকিয়ে থাকত। তার চোখে কী থাকত কে জানে, রজনীর লজ্জা করত। ঘরে চলে যেত সে তাড়াতাড়ি। বুকের মধ্যে দুপদুপ করত।
তার পালানোটা চোখে পড়েছিল পীরজাদার। তারপর থেকে রজনীর মুখোমুখি পড়ে গেলে পীরজাদাই সরে যেত।
আর রজনীর সঙ্গে যে লোকটা এসেছে, মহসিন, পীরজাদা তাকে হোটেল থেকে রোজ ভোরে বেরুতে দেখত। ওর খুব ইচ্ছে করত দুজনের সঙ্গে কথা বলে, কিন্তু নিজের দুর্ভাগ্যের সঙ্গে ও এতখানি পরিচিত যে ভয় হতো তাতে করে সবটাই হারিয়ে যাবে। এই যে রজনীকে দেখে তার মনের মধ্যে কেমন একটা উপশম হচ্ছে, শান্তি হচ্ছে, সেটা আর থাকবে না। হয়ত রজনীরা চলে যাবে। আর কোনদিন খুঁজে পাওয়া যাবে না এ শহরে।
মেয়েটাকে বোঝা যেতো না। কী যেন ভাবে ও। সারাক্ষণ ভাবে। সারাদিন ওর মনটা কোথায় যেন পড়ে থাকে। পীরজাদা খুব অবাক হতো মানুষের এত তন্ময় হয়ে থাকার ক্ষমতা দেখে।
আর একটা জিনিস বুঝতে পারত না সে। তা হচ্ছে ওরা হোটেলে আছে কেন? দেখে ওদের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে যে ধারণা হয় তাতে কোন তৃতীয় শ্রেণীর হোটেলে থাকারই কথা। এখানকার এত খরচ তারা জোগাচ্ছে কি ভাবে? কিন্তু এ ভাবনা তার ভেবে কি লাভ? সে মাথা ব্যথা হোটেল ম্যানেজার ইব্রাহিম বালোচের।
কেবল একদিন কথা হয়েছিল রজনীর সঙ্গে। সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল করাচিতে যা সচরাচর হয় না। বারান্দায় এসে পড়ছিল বৃষ্টির ছাঁট। ভিজিয়ে দিচ্ছিল। রজনীর হয়ত মনে পড়েছিল, বাংলায় তার বাসার মধ্যে এমন সব দিনে ছাদের পরে অবাধ স্বাধীনতার কথা। সে বৃষ্টিতে খুব করে ভিজল। মহসিন নিত্যকার মতো বেরিয়েছে কাজের সন্ধানে। ফিরে এসে দেখে রজনীর গায়ে তাপ, জ্বর এসেছে।
রজনী তার গলা জড়িয়ে ধরে বলল, আমি মরে যাবো। আমাকে বাড়িতে নিয়ে চলো। বিব্রত হলো মহসিন। বাড়ির উল্লেখ মনের মধ্যে খচ করে বিধলো। বলল, তুমি একটু শুয়ে থাকো, আমি ডাক্তার নিয়ে আসছি।
অতরাতে মহসিন বেরুলো ডাক্তারের খোঁজে। করাচির কিসসু জানে না চেনে না, ম্যানেজার একটা ঠিকানা দিয়ে দিল, সেইটে নিয়ে সে ছুটলো। এ দিকে ঘরে কাত্রাচ্ছে রজনী। ভুল বকছে। বলছে, আমাকে বাড়ি নিয়ে যাও, আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও।
কামরায় ফিরছিল পীরজাদা। ঘরের মধ্যে থেকে মেয়েটার কাতরোক্তি শুনে থমকে দাঁড়াল। ব্যাপারটা অনুমান করতে চেষ্টা করল। কিছু বোঝা গেল না। মহনি ঘরে আছে কিনা তাও বুঝতে পারল না। পোর্টারকে ডেকে বলল সংবাদ দিতে। সে এসে জানাল, রজনী একা। জ্বর এসেছে।
ঘরে যাওয়া হলো না পীরজাদার। রজনীর ঘরে ঢুকতে ইচ্ছে করছিল, তাও দ্বিধায় মরে গেল। ওদের কামরার সমুখে সে দাঁড়িয়ে রইলো চুপ করে। রজনীর যন্ত্রণা বুঝি আবার বাড়লো। বার থেকে মনে হলো একটা কাটা কবুতর দাপাচ্ছে।
পীরজাদা ভেতরে এসে বলল, পানি দেব?
রজনী তাকে দেখল বড় বড় চোখ মেলে। এক মুহূর্তে শান্ত হয়ে গেল সে। কী বলল বোঝ গেল না। পীরজাদা তার পাশে চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো। জিগ্যেস করল, জ্বরটা কখন? আপনার স্বামী কোথায়? চোখ দিয়ে একটা ইশারা করল রজনী যার কোন মানে হয় না। পীরজাদা যদি মনের ভাষা শুনতে পেত, তাহলে শুনতে পেত, মেয়েটা বলছে আমার স্বামী কে? যে বিয়ের জন্যে ঘর পালানো, সে বিয়ে তো আমার আজও হয়নি।
পীরজাদা খানিকক্ষণ ছটফট করলো বসে থেকে। মনে হলো জ্বরটা তারই হয়েছে। নিচে নেবে এসে গাড়ি করে তার বন্ধু ডাক্তারটিকে ডেকে নিয়ে এলো দশ মিনিটের মধ্যে। সেই বিষ মেশানো হুইস্কির আড়াই বছর পরে আজ প্রথম বন্ধুটির বাড়িতে তার পদার্পণ। তাই সে তক্ষুণি এলো এবং রোগিনীকে দেখে অবাক হলো। তার কী ধারণা হলো কে জানে, ডাক্তার মানুষ অসুস্থ মানুষের সমুখে ব্যক্তিগত কিছু জিগ্যেস করল না। ওষুধ দিয়ে চলে গেল। যাবার সময় বলে গেল, পীরজাদা আমার সঙ্গে একবার টেলিফোনে কথা বোলো।
তখন তার কথা শুনে যে কেউ বুঝতে পারত এ মেয়েটার সঙ্গে পীরজাদার কী সম্পর্ক সেইটে জানবার জন্যে তার কৌতূহল ফেটে পড়ছে। কিন্তু তখন পীরজাদার মাথার মধ্যে রজনীর ব্যথাক্লিষ্ট মুখ; ভাববার মতো মনের অবস্থা তার নেই।
ডাক্তার চলে যাবার পর রজনীর পায়ের কাছে এসে দাঁড়িয়েছিল পীরজাদা। তখন মেয়েটা একটা কথাই উচ্চারণ করেছিল, শুকরিয়া। সেই একটি মাত্র শব্দ যেন সহস্রের অভিধা নিয়ে বাজলো পীরজাদার হৃদয়ে। সে আর কিছু নয়, উদ্বেলিত হৃদয়কে শান্ত করে, কোন রকমে বলে গেল, আমি কুড়ি নম্বরে থাকি। বাইরে বেয়ারাকে বলে গেলাম থাকতে। দরকার পড়লে ডাকবেন।
মনের মধ্যে একটা দুরন্ত আশা ছিল, রজনী তাকে যেতে দেবে না। কিন্তু রজনী কিছুই বলল না। পীরজাদা তার ঘরে ফিরে এসে জেগে রইলো উল্কণ্ঠা বুকে নিয়ে।
না, সে রাতে আর পীরজাদার ডাক আসেনি। মহসিন ফিরে এসেছে, তার কণ্ঠস্বরও শুনেছে। মহসিন ওষুধ নিয়ে এসে দেখে, রজনীর চিকিৎসা আগেই হয়ে গেছে। উদ্যোক্তার পরিচয় বেয়ারার কাছ থেকে পেয়ে খুশিও হতে পারল না, অনধিকার চর্চা বলে ক্রুদ্ধও হতে পারল না। লোকটা যা করেছে তা মানবিক। মানবিকতার এমন এক প্রচণ্ড শক্তি আছে, যে, মালিন্যকে তার সামনে মাথা নত করে থাকতে হয়।
মহসিন যে ব্যাপারটা ভাল চোখে দেখেনি, এটা বোঝা গিয়েছিল তারপরে বহুবার পীরজাদা মুখোমুখি পড়েও একটা কথা না বলা বা ধন্যবাদ না দেয়াতে। এটা লক্ষ্য করে পীরজাদা মরমে মুষড়ে রইলো, যেন একটা বিরাট অপরাধ করে ফেলেছে সে। কদিন চোরের মতো পালিয়ে সে ঘর থেকে বেরুতো, ঘরে ফিরত, পাছে সামনে পড়ে যায় মহসিনের বা রজনীর। আর রজনীর উচ্চারিত একটি মাত্র শব্দ শুকরিয়া—-রজনী তার সীমিত উর্দুজ্ঞানে ঐ একটি মাত্র কথাই বলতে পেরেছিল—-সেটা পীরজাদার কানে অমৃতের মতো লেগে রইলো।
তারপর থেকে এমন হলো, হোটেলে ফিরলেই বুকের মধ্যে সে রজনীর অস্তিত্ব টের পেত। এই নতুন অনুভূতিটা বেশ কিছু দিন উপভোগ করলো পীরজাদা। এই সারাক্ষণ মনের মধ্যে কান পেতে থাকা, দূরে বাড়িগুলোর বিন্দু বিন্দু আলোর মধ্যে রজনীর মুখের আভাস সৃষ্টি, হঠাৎ চোখে পড়া রজনীর একটা শাড়ির রং—- সমস্ত কিছু মিলিয়ে এক মন্ত্রের নিগড়ে যেন বাঁধা পড়ে গেছে সে।
দিন দশেক পরে একদিন বিকেলে রজনী আর মহসিনকে বেরুতে দেখা গেল। পীরজাদা এর আগে কখনো দুজনকে এক সঙ্গে দেখেনি। রজনী পরেছে একটা ছাই রং শাড়ি—-যেন তার গায়ের রং ভোরের আলো লেগে ফিকে হয়েছে। কবরী রচনা করে তাতে দিয়েছে মোতিয়ার বেড়। চলনে ফুটে উঠেছে আন্দোলিত কুসুমের ছন্দ। মুগ্ধ হলো পীরজাদা এবং অনুতপ্ত হলো।
অনুতাপ কারণ, এই প্রথম তার মনে পড়ল রজনী বিবাহিতা। এ সত্যটা জেনেও তার মন এতদিন চাতুরি করে ভুলে বসে ছিল। ধিক্কারে ভরে উঠলো সমস্ত মন। চোখ ফিরিয়ে সে ঘরে ঢুকলো। এ সম্পর্কে আর দশটা মানুষের চেয়ে পীরজাদার ভয়টা ছিল সবচে বেশি। তার নিজের স্ত্রী অন্য এক পুরুষের প্রেমে পড়ে একদিন তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল বিষ খাইয়ে। ছি ছি করতে লাগল তার আত্মা। চেয়ারে কাঠ হয়ে বসে থাকবার, নিজেকে সংযত করবার ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগল, এ তার কী হলো? জীবনের জন্যে, বেঁচে থাকার জন্যে, আবার সে দিশা খুঁজে আবারো কি ডেকে আনবে আরেক মৃত্যু?
পীরজাদা ছটফট করছে। ভাগ্যের পরিহাস, যে কারণে ছটফট সেটা অমূলক। কিন্তু সে কথা সে জানবে কি? এ কথা রজনী ছাড়া আর কেউ জানে না যে, মহসিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়নি? বিয়ের জন্যে ঘর ছেড়েছিল। হোটেলের ভাড়া করা ঘরে প্রথম রাতেই রজনীর প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও বাসর হয়ে গেছে। মন তো দিয়েছিল, মনের আঁধারটিকেও সমর্পণ করতে হয়েছিল মহসিনের উত্তুঙ্গ ইচ্ছার মুখে। কিন্তু বিয়ে হয়নি।
মহসিন বোঝাতে চেষ্টা করত, দ্যাখো, এটা নতুন জায়গা। কিছু জানিনে শুনিনে, কোথায় কাকে গিয়ে বলবো বিয়ে পড়িয়ে দাও। বিয়ে তো আমাদের হয়েই গেছে। হয়নি? বিয়ের চেয়েও এখন যেটা বড়, আমার একটা কাজ দরকার, আমাদের একটা বাসা দরকার—-কই সে কথা তো তুমি আমাকে কিছু বলো না।
শুনে রজনী মরমে মরে যেত। তাইতো, আগে একটা কাজ দরকার। ভয়ে বুক শুকিয়ে যেত, কাজ না পেলে খাবে কী? কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? তখন আর কিছু দিশেবিশে না পেয়ে মহসিনের বুকের মধ্যে নিজেকে রেখে সহানুভূতি আর সাহস ঢেলে দেয়ার ভীরু চেষ্টা করত সে।
এই করে চলছিল। কিন্তু রজনী বাংলার মেয়ে। নিয়মাচারের জন্যে তারা আজো জীবন দিতে জানে। মহসিন যেখানে দিনের পর দিন ভগ্নহৃদয়ে ফিরে আসছে কাজের কোন হদিশ না পেয়ে, সেখানে রজনীর তো উচিত ছিল তাকে সাহসে বলীয়ান করে তোলা, তার ইচ্ছার। সমুখে বিনীতা হওয়া। কিন্তু ঘটনো উলটো। যত দিন যাচ্ছে রজনীর প্রেমের গোলাপে কাটার। সংখ্যা বাড়ছে সমপরিমাণে। এই সত্যটা তাকে দগ্ধে মারছে যে, সে তার বিবাহিতা স্ত্রী নয়। সে অনাচার করছে। তার প্রেম বড় নয় তার ক্ষুধা বড় নয়, তার আশ্রয় বড় নয়—-তার সব প্রয়োজনের বড় যে প্রয়োজন সেটা ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে।
কিন্তু কথাটা বলতে সাহস হয় না। মহসিন যে অমিত আশা নিয়ে এসেছিল তা নিভে গেছে। না বললেও রজনী এটা এখন স্পষ্ট করে জানে। মহসিন বুঝেছে, তার স্বল্পবিদ্যে এবং শূন্যের মূলধন দিয়ে এমন বড় কিছু করা যাবে না যাতে রজনী ও তার কল্পনার সংসার বাস্তব হয়ে উঠবে। অথচ ফেরবার পথ নেই। একেকদিন কাজ খোজার অছিলায় সারাটা দিন সে কাটায় ক্লিফটনে।
সমুদ্রের গর্জন তবু চিন্তাকে অবশ করে রাখতে পারে খানিকটা। চোখের সমুখে পৃথিবীর একদল হাস্যমুখরিত মানুষ, মেলা, নাগরদোলা দেখে দুর্বহ সময়কে সহনীয় করে তোলা যায়। একেক দিন মহসিনের মনে প্রশ্ন উঁকি দেয় কেন সে রজনীকে নিয়ে এসেছিল? রজনীর ওপর তার ভীষণ রাগ হয়। মেয়েটা কেন আসতে রাজি হলো তার সঙ্গে?