২. নর্সমিথের প্রধান চরিত্ররা

দ্বিতীয় অধ্যায়—নর্সমিথের প্রধান চরিত্ররা

নর্স মিথোলজিতে দুটি আলাদা গোত্রের দেবতার উল্লেখ পাওয়া যায়। দেবতাদের গোত্রদুটির নাম অ্যাসির এবং ভানির। অ্যাসিররা প্রধানত যুদ্ধ, আবহাওয়া ইত্যাদির দেবতা ছিলেন। তাঁরাই নর্স দেবতাদের প্রধান গোষ্ঠী। অপর গোত্রে ছিলেন ভানির গোত্রের দেবতারা। তাঁরা মূলতঃ উর্বরতা, জ্ঞান এবং ফসলের দেবতা ছিলেন। ভানির দেবতারা অনেকসময় ভবিষ্যৎ দেখতে পেতেন। নর্সমিথের গল্পগুলির বেশিরভাগ অ্যাসিরদের নিয়ে হলেও কিছু উল্লেখযোগ্য গল্প ভানির গোষ্ঠীর দেবতাদের নিয়েও রয়েছে।

নর্স মিথোলজিতে অগুনতি আশ্চর্য জীব, বস্তু এবং সত্ত্বার উল্লেখ আছে। জাদুকর, ভবিষ্যত-বক্তা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার অলৌকিক ক্ষমতাযুক্ত মানুষের কথা বলা হয়েছে। ট্রল, ওগার, রাক্ষস, দৈত্য, ইত্যাদি বিভিন্নপ্রকার অনিষ্টকারী জীবের সন্ধান আছে। বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন পরিচিত জন্তু যেমন আছে, তেমনি ড্রাগন, এল্ফ, ডোয়ার্ফ জাতীয় কাল্পনিক জীবেরও বহুল উল্লেখ আছে। এছাড়া জাদু-ক্ষমতাযুক্ত নানা ধরনের বস্তুর কথা আছে, চলমান মৃতদেহ, অথবা কথা বলা আত্মার প্রসঙ্গও আছে। এখানে শুধু বিশেষ কয়েকটি প্রাণী ও বস্তু সম্পর্কেই লেখা হয়েছে।

অ্যাসির গোত্রের দেবতা

ওডিন

ওডিন হলেন অ্যাসির গোত্রের দেবতাদের মধ্যে সবথেকে শক্তিশালী কারণ তাঁর অগাধ জ্ঞান। ওডিন যেভাবে পেরেছেন জ্ঞান সংগ্রহের চেষ্টা করেছেন আজীবন। তিনি তাঁর একটি চোখ জ্ঞানের সন্ধানে বলি দিয়েছেন, এমনকি ম্যাজিক্যাল রুন-এর পাঠোদ্ধার করার জন্য তিনি নিজেকে বলি দিয়েছিলেন নিজের কাছেই। তাঁকে সর্বপিতা বা পরম পিতা বলে ডাকা হয়। যে সব দেশে তিনি পূজিত হন প্রতি দেশে তাঁর আলাদা আলাদা নাম। বোর এবং বেসলার তৃতীয় পুত্র বলে তাঁর নাম থার্ড। এছাড়াও বিভিন্ন ছদ্মনামে তিনি পরিব্রাজক হয়ে প্রায়ই ঘুরে বেড়িয়েছেন পৃথিবীতে। যখন পৃথিবীর পথে তিনি চলেন, তখন তিনি এক লম্বা মানুষের ছদ্মবেশ নেন। লম্বা মানুষটির পরনে থাকে প্রাচীন জাদুকরদের পোষাক—আলখাল্লা, মাথায় এক কৌণিক টুপি। এই টুপিটি তাঁর নষ্ট চক্ষুটির উপরে টানা থাকে— যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে তিনি একচোখে দেখতে পান না। তিনি সকল যাত্রীর দেবতা, সকল যুদ্ধের দেবতা। তাঁর পোষা দুটি বড় বড় দাঁড়কাক আছে। যাদের নাম হুগিন আর মুনিন। হুগিন শব্দের অর্থ চিন্তা এবং মুনিন শব্দের অর্থ স্মৃতি। এই দুই পাখি সারাদিন উড়ে বেড়ায় সারা বিশ্বে। তারা সব ঘটনা দেখে, বোঝে এবং তারপর ওডিনের কাঁধে বসে তাঁর কানে ফিসফিস করে সব সংবাদ দেয়।

ওডিন চতুর এবং দরকারে মিথ্যাভাষণও করেন। তিনি ইচ্ছা করলে যেমন খুশি রূপও ধারণ করতে পারেন। তাঁর মিথ্যার জন্য কেউ তাঁকে দায়ী করে না কারণ সেই মিথ্যাও তিনি কোনো বৃহত্তর স্বার্থসিদ্ধির জন্যেই বলে থাকেন।

অ্যাসগার্ডে তাঁর সভাঘরে সর্বোচ্চ জায়গায় তাঁর সিংহাসন আছে, যার নাম লিদস্কাল্ফ। এই সিংহাসনে বসে তিনি যা দেখতে চান তাই দেখতে পান, যা জানতে চান, তাই জানতে পারেন। কোনো ঘটনা তাঁর চোখ এড়িয়ে যেতে পারে না।

পৃথিবীতে যুদ্ধ তিনিই এনেছেন। যুযুধান দুই পক্ষের একপক্ষ যখন প্রথম বর্শাটি ছোঁড়ে, তখন সেই যুদ্ধ ওডিনকেই সমর্পণ করা হয়। যদি কেউ যুদ্ধে বীরের মত যুদ্ধ করে বেঁচে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে ওডিন তাঁর উপর দয়া করেছেন। আর যদি যুদ্ধ করে কেউ মারা যান— তাহলে ওডিনের নিজস্ব নারীসেনা ভ্যালকারিরা তাঁদের নিয়ে আসেন ভালহ্যালায়। ইংরাজি সপ্তাহের চতুর্থ দিন, অর্থাৎ বুধবারকে ওডিনের দিন বলা হয়— ওয়েডনেস ডে কথাটি ওডিন’স ডে থেকেই এসেছে।

বিশ্বাস করা হত এক ধরনের লিপির মধ্যে জাদুবিদ্যা থাকে, এই লিপিকে রুন বলা হয়। জাদু-রুন লিপি।

বিশ্বাস করা হত এক ধরনের লিপির মধ্যে জাদুবিদ্যা থাকে, এই লিপিকে রুন বলা হয়। জাদু-রুন লিপি।

.

থর

থর ওডিনের সন্তান, বজ্রবিদ্যুতের দেবতা। তিনি সুবিশাল, শক্তিশালী এবং সরল, সাধাসিধে। শক্তিশালী এবং সরল হওয়ার ফলে তাঁর মাথাটিও কথায় কথায় গরম হয়ে যায়। তাঁর চুল এবং দাড়ির রঙ লাল। তাঁর একটি কোমরবন্ধ আছে, যার নাম মেগিংজর্ড। এই কোমরবন্ধ পরলে তাঁর শক্তি দ্বিগুণ হয়ে যায় তাঁর অস্ত্রের নাম মিয়লনির, একটি বিরাট হাতুড়ি। দানবরা সকলেই এই হাতুড়িকে ভয় পায়। এর আঘাতে অনেক দানব এবং ট্রলের মৃত্যু হয়েছে। থরের মা হলেন ধরিত্রীদেবী জর্ড। তাঁর স্ত্রী এর নাম সিফ। তিনি অত্যন্ত সুন্দরী— এক মাথা লম্বা সোনালী চুলের জন্য বিখ্যাত। থর অ্যাসগার্ড এবং মিডগার্ড (পৃথিবী)-এর রক্ষাকর্তা। ট্যানগ্রিসনির ও ট্যানোস্টার—থরের দুই ছাগলের নাম। ট্যানগ্রিসনির নামের অর্থ যে দাঁত দেখিয়ে গর্জন করে। আর ট্যানোস্টার নামের অর্থ যে দাঁত কিড়মিড় করে। নাম শুনেই বোঝা যায়, এরা নিশ্চয়ই খুব রাগী আর তেজী ছাগল। এরা থরের রথ টানত। দরকারে থর এদের কেটে মাংস রান্না করে খেয়ে নিতেন। পরের দিন এরা নিজের জীবন ফিরে পেয়ে আবার রথ টানতে শুরু করত। থরের অনেক অনেক অভিযানের গল্প নর্স মিথোলজিতে রয়েছে— যদিও তার খুব অল্প কয়েকটিই এই বইতে আছে।

ইংরেজি সপ্তাহের পঞ্চম দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবারকে থরের দিবস বলে ধরা হয়। থ’স ডে থেকে থার্সডে কথাটির উৎপত্তি হয়েছে।

লোকি

লোকি খুবই সুপুরুষ, সুন্দর দেখতে। তিনি খুব সুন্দর কথা বলেন, কথায় বশ করতে তাঁর জুড়ি নেই। লোকজন তাঁকে খুবই পছন্দ করেন কিন্তু তিনি এর সঙ্গেই খুবই ধূর্ত এবং শঠ। তাঁকে দেখলে বোঝার উপায় নেই, যে অ্যাসগার্ডের প্রতি তাঁর খুব রাগ ও হিংসা আছে।

লোকির মায়ের নাম লফি। লফি দৈত্য হলেও এত রোগা এবং চতুর ছিলেন যে তাঁকে নাল বা সুচ বলেও ডাকা হত। তাঁর পিতার নাম ছিল ফারবৌটি, যাঁর নামের মানে—যিনি খুবই সাংঘাতিক আঘাত হানেন। ফারবৌটি ছিলেনও তাঁর নামের মতই সাঙ্ঘাতিক।

লোকি আকাশে হেঁটে বেড়ান। তাঁর এক জোড়া জুতো আছে, যা তাঁকে উড়তে সাহায্য করে। তিনি যেমন ইচ্ছে রূপ ধারণ করতে পারেন ওডিনের মত। ওডিন আর লোকি ছাড়া এমন গুণ আর কারোর নেই। কিন্তু তাঁর সবথেকে বড় অস্ত্র হল তাঁর বুদ্ধি। তাঁর মত এত বুদ্ধি বিশ্বে আর কারো নেই। তিনি যে কোনো দেবতা বা দানবের থেকে বেশি চালাক। ওডিনও এতটা চতুর নন।

লোকির সঙ্গে ওডিনের রক্তের সম্পর্ক আছে। ওডিনের মা বেসলা এবং লোকির ঠাকুর্দা হলেন ভাইবোন। অবশ্য সেই দূরসম্পর্কের সূত্রে নয়— একসময় ওডিন এবং লোকি নিজেদের রক্তের মিশেল করে ব্লাডব্রাদার বা রক্তভ্রাতা সম্পর্কে আবদ্ধ হন। এই সম্পর্ক যতটা না দুরসম্পর্কের ভ্রাতার, তার থেকেও বেশি এই রক্তচুক্তির। অ্যাসগার্ডে তাঁর সবথেকে ভালো বন্ধু ছিলেন থর তবে তিনি থরের সঙ্গেও কখনো বন্ধুত্ব করেছেন, কখনও বা শত্রুতা করেছেন। অন্যান্য দেবতারা লোকিকে সহ্য করতেন, কারণ লোকি অত্যন্ত ধূর্ত। তিনি কৌশলে প্রতিশোধ নেবেন বা কোনো অপূরণীয় ক্ষতি করবেন— এই ভয়ে লোকির সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে কেউ যেতেন না।

লোকির স্ত্রীয়ের নাম সিজিন, তাঁর দুই পুত্র সন্তান নারফি এবং ভালি। এছাড়াও দানবী প্রেয়সী অ্যাঙ্গবোদার ঔরসে তাঁর তিনজন দানবীয় সন্তান হয়— যারা হলেন জরমুঙ্গড, হেল এবং ফেনরির। এছাড়াও একবার লোকি ঘোটকীরূপ ধরেছিলেন একটি কার্যসিদ্ধির জন্য, সেখানে এক দানব ঘোড়া ‘স্প্যাদিলফারি’-কে তাঁর রূপের প্রতি আকৃষ্ট করাই মূল কার্য ছিল। সেই দানব-ঘোড়ার ঔরসে তাঁর একটি ঘোটক সন্তান হয়। সেই ঘোড়াটি একটি বিরাট ধূসর রঙের পুরুষ ঘোড়া, তার আটটি পা। সে ঘোড়াদের মধ্যে সবথকে শক্তিশালী এবং দ্রুতগামী। সেইজন্যেই তার নাম স্লিপনির—যার অর্থ যে বাতাসের থেকেও দ্রুতবেগে ছুটতে পারে। লোকি ওডিনকে স্লিপনির উপহার দিয়েছিলেন। লোকি যে স্লিপিনিরের মা, এই তথ্য সকল দেবতাই জানতেন কিন্তু স্লিপনিরের মাতৃত্ব নিয়ে লোকির সামনে প্রশ্ন তোলার সাহস কারোর ছিল না।

লোকি বহুবার অ্যাসগার্ডে বিপদ ডেকে এনেছেন আবার বিপদ থেকে বাঁচিয়েছেনও। তবে ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ী, দেবতাদের শেষ যুদ্ধ র‍্যাগনারকে— লোকী এবং তাঁর সন্তানরা দেবতাদের পক্ষে যুদ্ধ করবেন না।

ফ্রিগ

অ্যাসিরদের রানী, ওডিনের স্ত্রী। বিবাহ এবং মাতৃত্বের দেবী হলেন ফ্রিগ। এছাড়া অনেকসময় তাঁকে ভালোবাসা এবং উর্বরতার দেবী বলেও মানা হয়। ইংরেজী সপ্তাহের ষষ্ঠদিন, শুক্রবার ফ্রাইডে এঁর নামেই পরিচিত হয়েছে। ওডিনের ঔরসে এঁর তিনজন পুত্ৰ—হোডার বা হোড়, বন্ডার এবং হারমোড। এঁদের মধ্যে হোড এবং বল্ডার যমজ। ফ্রিগ তাঁর সন্তানদের খুবই ভালোবাসতেন, বিশেষত বল্ডারকে। ওডিনের অনুপস্থিতিতে তিনিই অ্যাসগার্ড পরিচালনা করতেন। তিনি জাদুবিদ্যা জানতেন। দরকারে তিনি তাঁর জাদুর প্রয়োগও করেছেন অনেকবার। তিনি ব্যক্তিত্বময়ী, মমতাময়ী এবং স্থিরবুদ্ধির অধিকারী ছিলেন। খুব দরকার না হলে তিনি অ্যাসগার্ড ছেড়ে কখনো যেতেন না। তাঁর একটি বিশেষ ক্ষমতা ছিল, তিনি প্রতি জীবের ভবিষ্যত কী হবে জানতেন তবে তা তিনি কখনো প্রকাশ করতেন না। তাঁর ব্যক্তিগত পরিচারিকার নাম ছিল ফুল্লা। থর যেমন ধরিত্রীদেবী জর্ডের পুত্র, এক মিথকাহিনী অনুসারে, ফ্রিগও ধরিত্রীদেবী জর্জের কন্যা। প্রায়ই এঁর সঙ্গে সৌন্দর্য এবং ভালোবাসার দেবী ফ্রেয়াকে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন মিথকাহিনীতে।

হিমদল

হিমদল হলেন আলোর দেবতা। সমুদ্র দানব অ্যাগির এবং তাঁর স্ত্রীয়ের নয়জন কন্যা ছিল। এই নয়জন নারীর সকলেই তরঙ্গ ছিলেন। ওডিন এবং এই নয়জন তরঙ্গ মাতার সন্তান হলেন হিমদল। তাঁর নয়জন মা ছিল বলে তাঁকে “সন অফ নাইন মাদার্স” বলে অভিহিত করা হয় অনেক সময়েই। তিনি জগতের শেষপ্রান্তে জন্মগ্রহন করেন এবং তিনি মাটির শক্তি, সমুদ্রের জল এবং শূকরের রক্ত খেয়ে বড় হয়ে ওঠেন। তাঁর দাঁতগুলি সোনার। তাঁর ঘোড়ার নাম গালটপ। তিনি ‘জ্যালারহর্ন’ নামক শিঙা বহন করেন। তিনি অ্যাসগার্ডে আসার রামধনুসেতু বাইফ্রস্ট এবং অ্যাসগার্ডের প্রহরী। এক মুহূর্তের ঘুম তাঁর কাছে যথেষ্ট। একশ মাইল অবধি প্রতিটি জিনিস তিনি দেখতে পান এবং ঘাস বেড়ে ওঠার মত সামান্য শব্দও তিনি শুনতে পান। তিনিও সম্ভবত যেমন ইচ্ছা রূপ ধারণ করতে পারেন। একটি গল্পে তিনি সিলমাছের রূপ ধরেছিলেন। তবে অন্যান্য গল্পে তাঁর রূপ পরিবর্তন করার তেমন উদাহরণ পাওয়া যায় না।

সিফ

অত্যন্ত সুন্দরী এই দেবী হলেন থরের স্ত্রী। তিনি একমাথা সুন্দর সোনালী চুলের অধিকারিণী বলে প্রসিদ্ধ। তাঁর সোনালী চুল একবার লোকি চুরি করেছিলেন—সেই একটিমাত্র গল্পেই ভালোভাবে সিফের উল্লেখ পাওয়া যায়। থরের সঙ্গে বিবাহের আগে সিফের একটি সন্তান আছে, যার নাম উল্লার। থরের ঔরসে এঁর দুই পুত্র এবং এক কন্যা। পুত্রদের নাম হল মোডি, ম্যাগনি এবং কন্যার নাম থ্রাড।

উল্লার

উল্লার একজন প্রাচীন দেবতা। তিনি সিফের সন্তান। তীরধনুক, শিকার এবং বরফজুতো বা স্কি এর দেবতা। দেবতাদের মধ্যে উল্লারের তীরধনুকের নিশানা সবথেকে পোক্ত।

ব্র্যাগি

কবি এবং কবিতার দেবতা। ইনি ওডিন এবং দানবী গানলডের সন্তান। কথিত আছে যে প্রথম কবিতা ইনিই রচনা করেছেন। এঁর লম্বা দাড়ি আছে। ব্র্যাগির স্ত্রীয়ের নাম ইডুনা, তিনি একজন ডোয়ার্ফ-এর কন্যা। এই অ্যাসির দেবতা সুন্দর গান এবং কবিতা লেখার ক্ষমতার জন্য এবং খুব সুন্দর কথা বলার জন্য বিখ্যাত কবিরা এঁর পূজা করতেন।

ব্র্যাগির স্ত্রী ইডুনার কাছে এক প্রকার আপেল আছে, যে আপেলে চিরযৌবন পাওয়া যায়। কথিত আছে, প্রতিদিন রাত্রে নৈশভোজের পরে ইডুনা প্রত্যেক দেবতাকে একটি করে আপেল দেন, যাতে দেবতারা অমরত্বের সঙ্গে সঙ্গে চিরযৌবনপ্রাপ্তও হন।

বল্ডার

ইনি হলেন ওডিন এবং ফ্রিগ-এর মধ্যম সন্তান। তিনি অ্যাসিরদের মধ্যে সবার থেকে ভালো বলে পরিচিত বলে এঁকে ‘দ্য গুড’ ডাকনামেও ডাকা হয়। ইনি আলোর মতো উজ্জ্বল ছিলেন। এঁর স্ত্রীর নাম ন্যান্না এবং পুত্রের নাম ফরসেটি। অ্যাসগার্ডে তাঁর যে প্রাসাদটি আছে, তাঁর নাম ব্রাইডাব্লিক, সেই প্রাসাদের থেকে সুন্দর জায়গা আরো কোথাও নেই বলে নর্সরা বিশ্বাস করতেন। তাঁর একটি জাহাজ আছে, নাম রিংহর্নি। এই জাহাজের অদ্ভুত গুণ হল এ কেবল বল্ডারের নির্দেশই পালন করে, অন্য কেউ কোনো নির্দেশ দিলে পালন করে না। সকলেই বল্ডারকে ভালোবাসেন, সকলেই বল্ডারকে শ্রদ্ধা করেন, কিন্তু তা সত্বেও লোকির ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ইনি ভাই হোডারের হাতে প্রাণ হারান।

হোডার বা হোড

ইনি বল্ডারের যমজ ভ্রাতা। ওডিন এবং ফ্রিগের আরেক সন্তান। হোড খুবই শক্তিশালী কিন্তু জন্মান্ধ। অন্ধ হলেও তিনি কিন্তু অস্ত্রবিদ্যায় পটু ছিলেন, এবং গায়ের জোরে তাঁর সমকক্ষ খুব কম অ্যাসিরই ছিল। লোকির বিশ্বাসঘাতকতায়, তিনি না চাইতেও বন্ডারকে হত্যা করে ফেলেন। পরে ওডিনের অন্য এক সন্তান ভালি তাঁকে হত্যা করে বল্ডারের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেন।

হোনির, ভিলি এবং ভে

এঁরা ওডিনের ভ্রাতা। ওডিন, ভিলি এবং ভে এই তিনজনে প্ৰথম বরফদানব য়িমির কে হত্যা করে জগতের সৃষ্টি করেন। জগত সৃষ্টর কাহিনীর পরে ভিলি এবং ভে র বেশি উল্লেখ পাওয়া যায় না নর্স মিথে। তবে শুরুর দিকের কাহিনীগুলিতে হোনিরের উল্লেখ না থাকলেও পরে অনেক উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি অ্যাসিরদের তরফ থেকে ভ্যানাহাইম— যা ভানির গোত্রের দেবতাদের বাসস্থান, সেখানে বাস করতেন।

টিউ

টিউ হলেন যুদ্ধের এবং বীরত্বের দেবতা। এঁর নাম থেকেই ইংরেজি সপ্তাহে তৃতীয়দিন অর্থাৎ মঙ্গলবারের নাম টিউ’স ডে হয়েছে। খুবই বীর এই দেবতার ডানহাত কবজি থেকে ফেনরির নেকড়ে কেটে নিয়েছিল। থরের মত তাঁরও বীরত্বপুর্ণ অভিযানের অনেক কাহিনী আছে নর্স মিথে। তবে এই বইতে সামান্য কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা আছে।

ভানির গোত্রের দেবতা

নিয়র্ড

ভানির গোত্রের দেবতাদের প্রধান হলেন নিয়র্ড। অ্যাসিরদের প্রধান ওডিনের সঙ্গে তিনি এক শান্তিচুক্তি করেন। এই চুক্তি অনুযায়ী ভানির এবং অ্যাসিররা কখনো পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধবিগ্রহ করবেন না, বরং দৈত্যদের বিরূদ্ধে তাঁরা একত্রিত হয়ে যুদ্ধ করবেন। চুক্তির শর্তকে আরো শক্তিশালী করার জন্য এবং অ্যাসিরদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরো বাড়ানোর জন্য তিনি অ্যাসগার্ডেই বসবাস করা শুরু করেন। দানবকন্যা স্কাডি তাঁর স্ত্রী, ফ্রে এবং ফ্রেয়া হলেন তাঁর যমজ সন্তান। একটি মত অনুসারে ফ্রে আর ফ্রেয়া স্কাডির সন্তান নন, নিয়র্ডের অন্য স্ত্রীর সন্তান।

ফ্রে

ফ্রে অত্যন্ত সুপুরুষ, আলোর মত উজ্জ্বল একজন ভানির দেবতা। তাঁর পিতা হলেন নিয়র্ড, মাতা দৈত্যকন্যা স্কাডি। তিনি সুন্দর আবহাওয়া, উর্বরতা, শান্তি এবং আনন্দের দেবতা। তাঁর জন্মের পর তাঁকে উপহার হিসাবে এলফহাইমের সর্বাধিনায়কের পদ দেওয়া হয়। তাঁর একটি তরবারি ছিল, যার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল এই তরবারি নিজে নিজেই যুদ্ধ করতে পারত। কিন্তু দানবকন্যা গের্ডকে বিবাহ করার জন্য তিনি এই উত্তম তরবারিটি তাঁর অনুগত পরিচারক স্কিরনিরকে দান করে দেন। তাঁর গুলিনবাস্টি নামে এক সোনার লোমওয়ালা যুদ্ধে পটু শুকর আছে। স্কিডব্লাডনির নামে এক আশ্চর্য জাহাজ আছে, যা ইচ্ছে করলে কাপড়ের মত ভাঁজ করে ফেলা যায়।

ফ্রেয়া

ফ্রেয়া হলেন ফ্রে এর যমজ বোন। অপরূপা রূপসী আলোকসামান্যা এই ভানির দেবী প্রেম, সৌন্দর্য্য, কাম, উর্বরতা, সোনা এবং এক বিশেষ ধরনের জাদুবিদ্যা— যাকে নর্সরা সেইদ বলতেন তার দেবী। ফ্রেয়ার একটি অসাধারণ নেকলেস আছে, যার নাম ব্রিসিংগামেন। তিনি দুইটি বিরাট বেড়ালে টানা রথে ভ্রমণ করেন। তাঁর একটি আংরাখা আছে যা বাজপাখীর পালক দিয়ে তৈরি। তাঁর স্বামীর নাম ওডুর। তাঁর দুটি কন্যা, নোস এবং হারসেমি।

হোনির

হোনিরের উল্লেখ অ্যাসির দেবতাদের মধ্যেও হয়েছে কারণ হোনির হলেন ওডিনের ভ্রাতা, জন্মগতভাবে অ্যাসির দেবতা। কিন্তু যখন ভানির এবং অ্যাসিরদের মধ্যে মৈত্রী চুক্তি হল, তখন নিয়র্ড যেমন অ্যাসগার্ডে এসে থাকতে লাগলেন, তেমনি হোনির থাকতে গেলেন ভানাহাইমে। স্মরি স্টারলুসেন তাঁর প্রোজ এডায় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, হোনির হয়তো ভিলির অন্য নাম। হোনির ঠিক কীসের দেবতা জানা যায়নি। শুধু এইটুকুই জানা গেছে যে তিনি মানুষ সৃষ্টির সময় ওডিনকে সাহায্য করেছেন এবং ওডিন যখন পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াতেন তখন হোনির প্রায়ই তাঁকে সঙ্গ দিতেন। দুজনে একত্রে পৃথিবীতে ভ্রমণ করেছেন বহুবার।

বিভিন্ন ধরনের প্রাণী ও বস্তু

এলফ্

এলফ্ হল এক প্রকার প্রাণী যারা মানুষের মতই, কিন্তু কিছু অতিরিক্ত ক্ষমতা সম্পন্ন। এলফ্-রা এলফহাইমে পরিবেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকত। তাঁদের বর্ণনায় বলা হয়েছে তাঁরা ‘সুর্যের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল’। এদের সঙ্গে ভানির গোত্রের দেবতাদের বেশি যোগাযোগ ছিল। এলফ্, ডোয়ার্ফ, ভানির দেবতা দের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য পরিষ্কার ভাবে বলা নেই। এলফ্-রা রোগ সৃষ্টি করতে পারে, আবার সহজেই সারিয়েও দিতে পারে। মনে করা হয় যে এলফ্ এবং মানুষের সন্তানরা খুব বড় জাদুকর হতে পারে, এবং তাঁদের ভাবনাচিন্তা করার মান খুব উন্নত হয়। ভানির দেবতা ফ্রে হলেন এলফ্‌হাইমের অধিপতি।

ডার্ক এলফ্ বা ডোয়ার্ফ

ডোয়ার্ফ বলতে আমরা যে বেঁটেখাটো ছোট্টছোট্ট মানুষদের বুঝি— যেমন আমরা ‘স্নো হোয়াইট’-এ পড়েছি, এই ডোয়ার্ফরা কিন্তু একেবারেই তেমন না। এঁরা উচ্চতায় মানুষের থেকে অল্প ছোট, এবং মিশকালো রঙের। এইজন্যেই তাঁদের অন্ধকার রাতে দেখা যায় না। এঁরা খনিতে থাকতে ভালোবাসেন, প্রখর সূর্যালোক এঁদের সহ্য হয় না। এঁরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং শক্তিশালী জাদুর অধিকারী। এঁরা অনন্যসাধারণ জিনিসপত্র বানাতে পারেন। যেমন থরের হাতুড়ি, ওডিনের বর্শা, বা ফেনরির নেকড়েকে বেঁধে রাখার

জন্য যে শিকল সবই এঁরা বানিয়েছেন। এমনকি ফ্রের জন্য একটি সোনার লোমওয়ালা শুয়োরও। এঁরা অসীম শক্তির অধিকারী। বলা হয়, চারজন ডোয়ার্ফ আকাশের চারকোণ তুলে ধরে আছেন। তাঁদের নাম, নর্ডি, সুড্রি, অস্ট্রি এবং ভেস্ট্রি। নর্ডি থেকে নর্থ, সুড্রি থেকে সাউথ, অস্ট্রি থেকে ইস্ট এবং ভেস্ট্রি থেকে ওয়েস্ট শব্দ এসেছে। এঁরা যথাক্রমে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিমদিকের আকাশ ধরে থাকতেন।

ট্রল

নর্স মিথোলজিতে যে সব আশ্চর্য জীবের খোঁজ পাওয়া যায়, তাঁদের মধ্যে এক প্রকার হল ট্রল। ট্রল আকারে অন্তত দুইমানুষ সমান বড়, বিপজ্জনক হলেও, বোকা এবং বিশ্রী দেখতে। সূর্যের আলো লাগলে এঁরা তৎক্ষণাৎ পাথর হয়ে যান। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান বিশ্বাস অনুসারে, থর একবার এঁদের আচ্ছা করে শিক্ষা দিয়েছিলেন, তারপর থেকে এঁরা বাজ-পড়ার শব্দকে ভয় পান। ট্রলদের আর পর্বত দৈত্যদের মধ্যে পার্থক্য খুব কম, এবং সেই পার্থক্য ভালো করে বোঝানোও নেই, তবে মনে হয়, ট্রলেরা একটু আকারে ছোট এবং বোকা।

দানব

পুরো য়োটুনহাইম জুড়ে দানবদের বাস। এঁরা প্রধানত দেবতাদের শত্রু কিন্তু অনেকসময় বন্ধুও। জগত সৃষ্টির কাহিনী পড়লে জানা যায় যে দেবতাদের শরীরেও আদতে দানব-রক্ত আছে। বিশেষত, লোকি দেবতা হলেও তাঁর পিতা-মাতা দুইজনেই দানব। এছাড়া মিমির আছেন। তিনি দানব হলেও দেবতাদের বন্ধু কিন্তু বেশিরভাগ দানবই দেবতাদের শত্রু। দানবদের প্রচুর রকমভেদ আছে নর্স মিথোলজিতে। দেবতাদের সঙ্গে সবথেকে বেশি শত্ৰুতা দেখা যায় রাইমদানব বা বরফদৈত্যদের। এছাড়াও আছে পর্বতদানব, সমুদ্রদানব, ঝড়দানব ইত্যাদিরা। দানবরা বিশাল, বুদ্ধিমান এবং অনেক ক্ষেত্রেই জাদুকরও।

ভ্যালকারি

এঁরা ওডিনের নিজস্ব নারীসেনাদল যার মধ্যে ওডিনের কিছু নিজের সন্তানও আছেন। এঁরা সুন্দরী এবং অমর। মেঘের আড়াল থেকে লক্ষ্য রাখেন, যুদ্ধে কোনো বীরের মৃত্যু ঘটলে তার আত্মা নিয়ে আসেন ওডিনের বিরাট সভাঘর ‘ভ্যালহালা’য়। আর যুদ্ধ যখন ঘটে না তখন এঁরা রাজহংসীর ছদ্মবেশে আকাশে উড়ে বেড়ান কেউ কোনো বীরত্বের কর্ম করছে কি না দেখার জন্য। কখনও বনের মধ্যে নির্জনে এঁরা ছদ্মবেশ খুলে রেখে স্নান করেন। তখন যদি কোনো পুরুষ তাঁদের দেখতে পেয়ে রাজহংসীর ছালটা লুকিয়ে রাখেন, তাহলে ভ্যালকারি আর সাধারণ নারীর কোনো পার্থক্য থাকে না। তাঁদের বিবাহও করা যেতে পারে। কিন্তু যখনই কোনো ভ্যালকারি মিডগার্ডের কোনো সাধারণ মানবকে বিবাহ করেন, তখন থেকেই তিনি তাঁর অমরত্ব হারান, সাধারণ মর্ত্যমানবী হয়ে যান।

ভ্যালকারিদের সম্পর্কে আমাদের সাধারণ ধারণা বেশ উঁচু, কিন্তু পুরোনো নর্স মিথোলজি পড়লে এঁদের সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন হতে বাধ্য। সেখানে এঁদের বর্ণনা পড়লে মনে হয় পরীদের নয়, ডাকিনীর বর্ণনা পড়ছি। এঁদের মূল কাজ একই থাকে, তবে সেই কার্যসিদ্ধির জন্য এঁরা নিষ্ঠুর জাদু করতেও পিছপা হন না। যদি কোনো বীর খুব বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন, এবং কোনো ভ্যালকারির মনে হয় তাঁর স্থান ভ্যালহালায় হওয়া উচিত, তাহলে সেই ভ্যালকারি যেন-তেন-প্রকারেণ সেই বীরের যাতে যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যু হয় তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। দরকার হলে জাদুও ব্যবহার করেন।

আংলো-স্যাক্সনদের মিথে ভ্যালকারিরা স্রেফ নারী-আত্মার রূপ যাঁরা যুদ্ধে রক্তপাত এবং ধ্বংস ডেকে আনেন।

ভ্যালহালা

যুদ্ধে বীরের মতো লড়ে, মৃত্যুবরণ করা বীর সৈন্যের আত্মা মৃত্যুর পর যে স্থানে আসেন, সেই স্থানটির নাম ভ্যালহালা, এটি একটি বিরাট হলঘর।

পুরাতন নর্স মিথে ‘ভ্যালহালা’ হল হেলহাইমেরই অংশ, কিন্তু পরবর্তীকালে এই স্থান অ্যাসগার্ডে ওডিনের মূল সভাগৃহের পাশে বলে লেখা হয়েছে। এই হলঘরে পাঁচশ চল্লিশটি দরজা আছে যাতে আটশ সৈনিক একসঙ্গে একবারে বেরোতে পারে। ভ্যালহালার ছাদ বিজয়ীদের ঢাল দিয়ে বানানো। থামে বিজয়ীদের বর্শা দিয়ে করা কারুকাজ। মাঝের বিশাল থামটি বিশ্ববৃক্ষ ইগড্রাসিল নিজে। তার পাতা খেয়ে প্রাণধারণ করে ‘হেইড্রান’ নামের এক ছাগল, যার থেকে দুধের বদলে অফুরন্ত মদ্য পাওয়া যায়। সেই মদ্য খেয়ে বীরেরা আরও বীর হয়ে ওঠেন।

আমরা আগেই পড়েছি, এই বীরদের খুঁজে আনার ভার ভ্যালকারিদের উপর। এই ভ্যালকারিদের সৌজন্যে ভ্যালহালায় সৈন্য বাড়তে থাকে। সেই সৈন্যদের আইনহের্জার বলা হয়। তাঁরা দিনে ‘ফিল্ড অফ লাইট’ বা আলোক-প্রান্তরে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে আমৃত্যু যুদ্ধ করেন। তারপর আবার বেঁচে উঠে বিকেলে ফিরে আসেন ভ্যালহালাতে। কারোর সঙ্গে কারোর শত্রুতা থাকে না, সবাই বন্ধু এখানে। যে সময়ে তাঁরা যুদ্ধে যান, আন্ধ্রিমনির নামে যে ভ্যালহালার রাঁধুনি আছে, সে সাহ্রিমনির নামে এক বিরাট শুয়োরকে বলি দেয় আর বিরাট এক কেটলিতে তার মাংস রান্না করে। এই সাহ্রিমনিরের বৈশিষ্ট্য হল এ আবার পরেরদিন সকালে জ্যান্ত হয়ে যায় আর কখনও এর মাংস কম পড়ে না। রাতে সব বীরেরা বড়বড় টেবিলে বসে শুয়োরের মাংস খান আর প্রচুর মদ্য পান করেন। অ্যাসগার্ডের চারণকবিরা তাঁদের বিভিন্ন গান গেয়ে গেয়ে শোনান, কখনও প্রাচীন অ্যাসির আর দৈত্যদের যুদ্ধের গল্প, কখনও আগামী র‍্যাগনারকের গল্প গান করে শোনান, বীরদের মনোরঞ্জনের জন্য। এইভাবেই দিনের পর দিন কেটে যায় ভ্যালহালায়।

বাইফ্রস্ট

এটি একটি রামধনু সেতু, যার দ্বারা অ্যাসগার্ড এবং মিডগার্ডের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষিত হত। বাইফ্রস্ট শব্দের অর্থ, আকাশের নড়বড়ে রাস্তা। এই সেতু অ্যাসগার্ডের যে অংশে শেষ হয়েছে, সেই জায়গার নাম হিমিনজর্গ। এই জায়গায় প্রহরী হিসাবে হিমদল সারাক্ষণ প্রহরা দিচ্ছেন যাতে অ্যাসির ছাড়া আর কেউ অনধিকার প্রবেশ করতে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *