দ্বিতীয় অধ্যায় (গর্ভস্থ সন্তান গণনা, তিথিভেদে ফাল্গুন মাসের ফল, ভূমিকম্পের আশঙ্কার কথা, ধর্মার্থে উপবাসের দিন নির্ণয়, শনির অবস্থান ভেদে চৈত্র মাসর ফল, রবিবার দোষে অতিবৃষ্টির ও সুবৃষ্টির লক্ষ্মণ, বারদোষে চৈত্র মাসের ফল)
১.
বাণের পৃষ্টে দিরে বাণ।
পেটের ছেলে গ’নে আন।।
নামে মাসে করি এক।
আটে হ’রে সন্তা দেখ।।
এক তিন থাকে বাণ।
তবে নারীর পুত্র জান।।
দুই চারি থাক ছয়।
অবশ্য তার কন্যা হয়।।
থাকিলে তার শূন্য সাত।
হবে নারীর গর্ভপাত।।
ব্যাখ্যা– –
গর্ভিণীর নামের অক্ষর সংখ্যা যত।
… যত মাসের গর্ভসংখ্যা কর একত্রিত।।
পাঁচের পিঠেতে পাঁচ পঞ্চান্ন জানিবে।
উক্ত যোগফল যাহা যোগ করি লবে।।
অতঃপর পাবে যাহা আট ভাগ করো।
এক তিন পাঁচ ভাগ শেষ পুত্র ধরো।।
দুই চারি ছয় হলে কন্যা লাভ হয়।
শূন্য সাতে গর্ভপাত হইবে নিশ্চয়।।
মনে করো পাঁচ মাস গর্ভ অবলার।
পুত্র বা কন্যা বলো হইবে তাহার।।
নামের অক্ষর সংখ্যা তিন অবলাতে
গর্ভ পাঁচ মাস পাঁচ যোগ দাও তাতে
তিন পাঁচ যোগ দিলে ফল আট হয়
পঞ্চান্ন আটেতে তেষট্টি মোট হয়
আট ভাগে থাকিবে বাকী সাত
অতএব অবলার হবে গর্ভপাত।।
হিসাব :–
অবলার অক্ষর সংখ্যা ৩ + গর্ভের মাস সংখ্যা ৫= ৮, ৫৫ + ৮ = ৬৩/৮ = ৭, ভাগশেষ ৭, অতএব অবলার গর্ভপাত হইবে।
২.
যত মাসের গর্ভ নারী নাম য’ অক্ষর।
যত জন শুনে পক্ষ দিয়ে এক কর।।
সাতে হরি চন্দ্র নেত্র বাণ যদি রয়।
ইথে পুত্র পরে কন্যা জানিবে নিশ্চয়।।
ব্যাখ্যা-
গর্ভিণীর নাম অক্ষর সংখ্যা সনে।
যে কয় মাসের গর্ভ তাহার মিলনে।।
যত জন গণনার সমক্ষে উপস্থিত।
অতিরিক্ত দুই যোগ কর একত্রিত।।
সাত দিয়া ভাগ করি ভাগশেষ দেখো।
এক, তিন, পাঁচ, যদি পুত্র জেনে রাখ।।
অন্যরূপ হ’লে কন্যা জনমে তাহার।
মন দিয়া শুন এই বচন খনার।।
সাতমাস গর্ভ যেন ধরে সুনয়নী।
পুত্র কি কন্যা হবে বল দেখি গণি।।
দুইজন আছি তথা তুমি আর আমি।
কি হইবে শীঘ্র তবে বলো দেখি তুমি।।
চারিটি অক্ষর সুনয়নী নামে পাই।
সাতমাস গর্ভ, সাত যোগ কর তাই।।
আমরা দু’জন দুই যোগ করো তাতে।
অতিরিক্ত দুই পুনঃ হইবে মিলাতে।।
সর্বশুদ্ধ যোগফলে মিলিল পনেরো।
সাত ভাগ করি এক ভাগশেষ ধরো।।
অতএব সুনয়নীর পুত্র হবে কোলে।
খনার এ গণনা ভাই বুঝহ সকলে।।
হিসাব :–
সুনয়নী নামের অক্ষর সংখ্যা – ৪ + গর্ভমাসের সংখ্যা – ৭ + শ্রোতা তুমি আর আমি দুইজন – ২ + অতিরিক্ত দুই – ২ = মোট ১৫
যেহেতু — ১৫/ ৭ = ২, ভাগশেষ ১, অতএব পুত্র
৩.
গ্রাম গর্ভিণী ফলে যুতা।
তিন দিয়ে হরো পুতা।।
একে সুত দু’য়ে সুতা।
শূন্য হলে গর্ভ মিথ্যা।।
এ কথা যদি মিথ্যা হয়।
সে ছেলে তার বাপের নয়।।
ব্যাখ্যা–
যে গ্রামে বাস তার নামাক্ষর যত।
গর্ভিণীর নামাক্ষর করহ মিলিত।।
প্রশ্নকর্তা যে এক ফলের নাম নেবে।
সেই ফলের নামের অক্ষর লইবে।।
যোগ করি তিন দিয়া করিবে হরণ।
হরণান্তে এক শেষে পুত্রের গণন।।
দুই শেষে কন্যা জান শূন্যে গর্ভে নয়।
খনার বচন ইহা জানিও নিশ্চয়।।
এই গণনার ভুল নাহি হতে পারে।
অন্যথায় সে ছেলেকে জন্ম দিছে পরে।।
বালীগ্রামে বাড়ী নাম আভারাণী তার।
প্রশ্নকর্তা যে নাম করিল তাহার।।
বলো দেখি পুত্র কি কন্যা তাহার হইবে।
কেমনেতে প্রশ্মফল জানিতে পারিবে।।
বালী আভারাণী আর আতা নাম হয়।
অক্ষরের সংখ্যা মোট আটটি তো হয়।।
তিন দিয়া হর ভাই দুই বাকি রবে।
অতএব গর্ভিণীর কন্যা লাভ হবে।।
হিসাব :—
বালীগ্রাম, অতএব গ্রামের অক্ষর সংখ্যা — ২ + আভারাণী নামের অক্ষর সংখ্যা – ৪ + ফলের নাম আতা অতএব অক্ষর সংখ্যা – ২ = মোট ৮
৮ / ৩ = ২, ভাগশেষ ২, অতএব আভারাণীর কন্যা হইবে।
৪.
নামে মাসে করি এক।
তার দ্বিগুণ করে দেখ।।
সাতে পুরি আটে হরি।
সমে পুত্র বিষমে নারী।।
ব্যাখ্যা-
অন্তঃসত্ত্বা যে রমণী নামাক্ষর যত।
যে কয় মাসের গর্ভ করো একত্রিত।।
দ্বিগুণ করিয়া তাতে সাত যোগ দিযে।
আট দিয়া সেই সমষ্টি ভাগ করিবে।।
সম অঙ্ক যদ্যপি বাকীতে থাকে তবে।
পুত্র হবে অন্যথায় কন্যা জন্ম লবে।।
চারি মাস জেনো গর্ভবতী কুন্তলিনী।
কি আছে গর্ভেতে তার বল দেখি গণি।।
চারিটি অক্ষর কুলিনী নাম আছে।
মাস সংখ্যা চারি তাতে মিলিত হয়েছে।।
যোগ করি পাই আট দ্বিগুণ করিলে।
ষোল হয় দেখহ তাহার গুণফলে।।
তাতে সাত যোগ করি তেইশ হইবে।
আট দিয়া ভাগ কর ফল বুঝা যাবে।।
বিষম অঙ্ক তো তাতে দেখিতেছি বাকী।
অতএব কন্যাপ্রাপ্ত হবে বিধুমূখী।।
হিসাব :—
কুন্তলিনী নামের অক্ষর সংখ্যা – ৪ + মাসের সংখ্যা – ৪ = মোট ৮
৮x২ = ১৬ + ৭ = ২৩, ২৩ / ৮= ২, ভাগশেষ ৭ বিষম অঙ্ক (বিজোড়) অতএব কুলিনীর কন্যা হইবে।
৫.
ফাল্গুনে রোহিণী যত্নে চাই।
আগামী বৎসর গণিয়া পাই।।
সপ্তমী অষ্টমী হয় ধান।
নবমীতে বন্যা, দশমীতে নির্মুল পাতান।।
ব্যাখ্যা–
ফাল্গুনে রোহিণী যেই দিনে দেখা দিযে।
সপ্তমী অষ্টমী তিথি হলে শস্য হবে।।
নবমী পড়িলে বন্যা হবে তার ফলে।
খড় না সঞ্জাত হয় দশমী পড়িলে।।
৬.
ডাক দিয়ে বলে মিহিরের স্ত্রী, শুন পতির পিতা।
ভাদ্র মাসে জলের মধ্যে নড়েন বসুমাতা।।
রাজ্য নাশ, গো-নাশ, হয় অগাধ বান।
হাতে কাঠা গৃহী ফেরে, কিনতে না পায় ধান।।
ব্যাখ্যা–
ভাদ্রে জল মধ্যে যদি ভূমিকম্প হয়।
সেবার রাজ্যের মধ্যে অশুভ নিশ্চয়।।
গো-নাশ, ধান্যের নাশ, নিশ্চয় জানিবে।
হইবে অগাধ বান সব ভেসে যাবে।।
৭.
শয়ন উত্থান পাশমোড়া।
তার মধ্যে ভীমা ছোঁড়া।।
দুই ছেলের জন্মতিথি।
অষ্টমী নবমী দু’টি।।
পাগলার চৌদ্দ পাগলীর আট।
এই নিয়ে কাল কাট।।
ব্যাখ্যা–
শয়ন উত্থান আর পার্শ্ব একাদশী।
শ্রীরাম নবমী আর শিব চতুর্দশী।।
ভীম একাদশী জন্মাষ্টমী।
ধর্মার্থে উপবাস করো বাপু তুমি।।
এই কয় দিনেতে যে উপবাস করে।
বহু পুণ্যফল সেই লভে লোকান্তরে।।
৮.
মধুমাসে ত্রয়োদশ দিনে রয় শনি।
খনা বলে সে বৎসর হবে শস্য হানি।।
ব্যাখ্যা–
চৈত্রেতে ত্রয়োদশ দিবসে যে বৎসর।
শনি করে অবস্থান হানি তো বিস্তর।।
শস্যশূন্য বসুন্ধরা দৃষ্ট তবে হয়।
খনার বচন ইহা মিথ্যা কভু নয়।।
৯.
পাঁচ রবি মাসে পায়।
ঝরা কিংবা খরায় যায়।।
ব্যাখ্যা–
যে বৎসর একমাসে পাঁচ রবিবার।
অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি হয় ফল তার।।
বড় অলক্ষণ ইহা অমঙ্গল কারণ।
ব্রাহ্মণ সজ্জনে দান করহ কাঞ্চন।।
১০.
মধুমাসে প্রথম দিবসে হয় যেই বার।
রবি শোষে, মঙ্গল বর্ষে, দুর্ভিক্ষ বুধবার।।
ব্যাখ্যা–
চৈত্রের প্রথম দিন যদি রবি হয়।
অনাবৃষ্টি সে বৎসর কেবা করে নর।।
মঙ্গল যদ্যপি তবে সুবর্ষা হইবে।
বুধবার পড়ে যদি দুর্ভিক্ষ ঘটিবে।।
১১.
সোমে শুক্রে গুরু আর।
পৃথ্বী মা সয় শস্যের ভার।।
পাঁচ শনি পায় মীনে।
শকুনি মাংস না খায় ঘূণে।।
ব্যাখ্যা–
সোম, শুক্র, হলে বহু শস্য হবে তাতে।
পাঁচ শনি এক চৈত্রে মরি মড়কেতে।।