২. দেখা করার কথা ছিল

পরদিন সকালে দেখা করার কথা ছিল স্বপ্নার সঙ্গে। স্বপ্না ন্যাশনাল লাইব্রেরির কার্ড করাবে, মধুময় সঙ্গে গেলে ভালো হয়।

পরদিন সকালে মধুময় অন্য মানুষ। সে স্বপ্নার প্রেমিক। রাসবিহারীর মোড়ে স্বপ্নার জন্য অপেক্ষা করতে করতে সে গুন গুন করে একটা গান গাইতে লাগল।

ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে কার্ড হয়ে গেল খুব সহজেই। বাইরে বেরিয়ে এসে স্বপ্না বলল, আজ এমন সুন্দর দিনটা, এক্ষুনি বাড়িতে ফিরতে ইচ্ছে করছে না।

ফিনফিনে হাওয়ার সঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো বৃষ্টি পড়ছে। ওই বৃষ্টিতে ভিজতে বেশ ভালো লাগে। যেন বিদেশের তুষারপাতের মতন। গা ভেজে না। আকাশটা ছায়াময়, স্নিগ্ধ, সত্যিই একটা বেড়াবার মতন দিন।

স্বপ্না আবার বলল, এইসব দিনে কী ইচ্ছে করে জানো তো? ইচ্ছে করে কোনো নদীর ধারে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে। চলো-না, গঙ্গার ধারে গিয়ে একটু বসি।

মধুময় বলল, গঙ্গার ধারে গিয়ে দেখবে, ঠিক কোনো-না-কোনো চেনালোক বেরিয়ে পড়বে।

স্বপ্না বলল, থাকুক গে চেনালোক। তবু এমন দিনটা নষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না।

গঙ্গার ধারে গিয়ে বসলে ভিখিরিরা এসে জ্বালাবে। তোমার ভালো লাগবে না।

 বুঝেছি, আসলে তুমি যেতে চাও না! তোমার আজ কোনো ইন্টারভিউ আছে?

না, বরং তোমাকে আর একটা কোনো নদীর ধারে নিয়ে যেতে পারি, যেখানে কোনো চেনা লোক নেই, ভিখিরি নেই—

কোথায়?

চলোই না

কত দূরে?

সন্ধ্যের মধ্যেই ফিরে আসব। বাড়িতে বরং একটা টেলিফোন করে দাও।

হাওড়া স্টেশনে এসে মধুময় একটা লোকাল ট্রেনের দুটো টিকিট কাটল। তার পকেটে যথেষ্ট টাকা, ইচ্ছে করলেই সে ফার্স্ট ক্লাসে যেতে পারে, কিন্তু বেশি টাকা খরচ করতে দেখলেই স্বপ্না প্রশ্ন তুলবে। সেইজন্যই আগেকার থার্ড ক্লাস, আজকাল যার নাম হয়েছে সেকেণ্ড ক্লাস–সেই টিকিটই কাটল!

ট্রেনে উঠেই বুঝল, ভুল করেছে।

স্বপ্নার জন্য কোনোক্রমে একটা বসবার জায়গা পাওয়া গেলেও মধুময়কে থাকতে হল দাঁড়িয়ে। অসম্ভব ভিড়। লোকেরা গায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। স্বপ্নার পাশে সামান্য একটু জায়গা, মধুময় নিজে সেখানে বসেনি, কিন্তু আর একটি লোক নির্লজ্জের মতন সেখানেই বসে পড়ল ঠেসাঠেসি করে।

মধুময়ের রাগে গা জ্বলতে লাগল। স্বপ্নাকে অন্য কেউ ছোঁয়, সেটা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। কিন্তু উপায়ও কিছু নেই। ট্রেনে সবাই একটু জায়গার জন্য পাগল, সভ্যতা ভব্যতা কেউ বড়ো একটা মানে না।

ভেবেছিল, জানলার ধারে বসে গল্প করতে করতে যাবে। কিন্তু এই ভিড়ের মধ্যে কথা বলাও যায় না।

স্বপ্না কিন্তু মজা পাচ্ছে। সকৌতুকে সে মাঝে মাঝে দেখছে মধুময়কে। মধুময়ের সঙ্গে এর আগে সে কখনো ট্রেনে চেপে কোথাও বেড়াতে যায়নি।

হঠাৎ খেয়াল হতেই মধুময় এক হাতে তার প্যান্টের পকেট চেপে ধরল। তার সব টাকা সে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। যদি কেউ পকেট মেরে নিয়ে যায়!

কথাটা ভেবেই অবশ্য হাসি পেয়ে গেল তার। এ-টাকা তার নিজস্ব নয়। সে নিজেই কোনো চোরের ওপর বাটপারি করেছে। এখন তার কাছ থেকেও যদি কেউ এ টাকা মারে, তবে সেই লোককে কী বলা যাবে?

ঘণ্টাখানেক পর ভিড় একটু ফাঁকা হতে মধুময় বসবার জায়গা পেল। স্বপ্ন জিজ্ঞেস করল, আমরা কোথায় যাচ্ছি?

মধুময় বলল, আর আধঘণ্টা পরেই জানতে পারবে।

সেই আধঘণ্টা পরে ট্রেন ঝমঝমিয়ে পার হতে লাগল একটা ব্রিজের ওপর দিয়ে। নীচে বিরাট একটা নদী। বর্ষার সময় দু-কূল ছাপিয়ে গেছে।

স্বপ্ন জিজ্ঞেস করল, এই নদীর নাম কী?

 রূপনারায়ণ।

স্বপ্নার মুখটা খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কত নাম শুনেছে এই নদীর। কত বইতে পড়েছে, কিন্তু আগে কখনো দেখেনি। কলকাতা থেকে এত কাছে? মাত্র দেড়ঘণ্টা।

উঠে দাঁড়িয়ে মধুময় বলল, আমরা এখানে নামব।

স্টেশনের নাম কোলাঘাট। নামটার সঙ্গে কেমন-যেন-একটা ইলিশ ইলিশ গন্ধ আছে। কোলাঘাট শুনলেই ইলিশ মাছের কথা মনে পড়ে যায়।

মধুময় জিজ্ঞেস করল, তোমরা তো একবার পুরী গিয়েছিলে–তখন এই নদী দেখোনি?

তখন এর ওপর দিয়ে গেছি?

হ্যাঁ, রাত্তিরে গিয়েছিলে বোধ হয়, তাই খেয়াল করেনি।

স্টেশনটা বেশ উঁচুতে। সেখান থেকে সিঁড়ি দিয়ে ওরা নেমে এল নদীর ধারের রাস্তায়। সেই রাস্তা দিয়ে খানিকটা হাঁটবার পর একটা হোটেল পড়ল। প্রায় পৌনে দুটো বাজে। বেশ খিদে পেয়েছে।

মধুময় বলল, এসো, আগে খেয়ে নিই।

ভেতরে গিয়ে বসতেই একজন বেয়ারা এসে বলল, একটু আগেই নদী থেকে ধরা একদম টাটকা ইলিশ মাছ আছে বাবু!

মধুময় বলল, দাও। ভাত, ডাল আর মাছভাজা।

কলাপাতায় করে দেওয়া হল ভাত। হোটেলে তখন ওরা ছাড়া কেউ নেই। গরম গরম মাছ আর মাছের ডিমভাজা আনতে লাগল। ওরা খেয়ে ফেলল পাঁচ-ছখানা করে।

স্বপ্না বলল, আমি জীবনে কখনো একসঙ্গে এত মাছ খাইনি। তবে সত্যি খুব চমৎকার স্বাদ!

খেয়ে উঠে ওরা চলে এল নদীর ধারে। স্বপ্না বলল, আমরা একটু নৌকো করে ঘুরে বেড়াব না?

মধুময় বলল, বর্ষাকাল, যেকোনো সময় ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে।

 তাতে কী হবে? উঠুক না ঝড়। আরও ভালো লাগবে।

যদি নৌকো উলটে যায়?

যাক-না। আমি ডুবে যাব? কেন তুমি আমায় বাঁচাতে পারবে না?

তা পারব অবশ্য।

স্বপ্না ঠোঁট উলটে বলল, ইস, তার দরকার হবে না মোটেই। আমি খুব ভালো সাঁতার জানি।

কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও নৌকো পাওয়া গেল না। সব নৌকো চলে গেছে মাছ ধরতে।

তাকালেই দেখা যায়, নদীর বুকে এখানে-ওখানে মোচার খোলার মতন দুলছে মাছধরা নৌকো। সবাই জাল ফেলে বসে আছে। মাঝে মাঝে জাল টেনে তুলছে, তখন দেখা যাচ্ছে, চকচকে ইলিশের মৃত্যুর আগের শেষ দু-টি-তিনটি লাফ।

মধুময় জিজ্ঞেস করল, এর আগে তুমি কখনো ইলিশ মাছ লাফাতে দেখেছ?

সত্যি, আগে কখনো দেখিনি।

হঠাৎ বেশ জোরে বৃষ্টি এসে গেল। তাতে অবশ্য ভেজার ভয় নেই। ওরা দৌড়ে এসে দাঁড়াল একটা ব্রিজের নীচে। এখানে পাশাপাশি তিনটে ব্রিজ, দুটো ট্রেনের জন্য। একটা মানুষ ও গাড়ির।

ব্রিজের নীচে একেবারে নদীর ধারে দু-খানা সিমেন্টের চাঙড়ের ওপর বসল ওরা। নদীর বুকে বড়ো বড়ো ফোঁটায় বৃষ্টি পড়ছে। অদ্ভুত মোহময় সেই দৃশ্য।

মধুময় তার একটা হাত রাখল স্বপ্নার কাঁধে।

 স্বপ্না মধুময়ের দিকে তাকাল।

মধুময় অনুনয় করে বলল, আজ আপত্তি কোরো না, প্লিজ, খুব ইচ্ছে করছে তোমাকে একটু ছুঁয়ে থাকি।

স্বপ্না সরিয়ে দিল না হাতটা। বরঞ্চ মধুময়ের হাতে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

 মধুময় বলল, এই নদী দেখেই রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, রূপনারায়ণের কূলে জেগে উঠিলাম, জানিলাম এ জগৎ মিথ্যা নয়!

স্বপ্না হেসে বলল, হল না।

স্বপ্না সাহিত্যের ছাত্রী ছিল। মধুময়ের চেয়ে এসব সে অনেক ভালো জানে।

 সে বলল, রূপনারায়ণের কূলে জেগে উঠিলাম, জানিলাম এ-জগৎ স্বপ্ন নয়।

 মধুময় বলল, ওই একই হল। মিথ্যা আর স্বপ্ন তো একই।

স্বপ্না বলল, এক? মিথ্যা আর স্বপ্ন এক?

স্বপ্নটাও মিথ্যে নয়?

না। মোটেই না। মিথ্যেটা শুধুই মিথ্যে। আর স্বপ্নটা সত্যিও না, মিথ্যেও না, অন্যরকম কিছু।

মধুময় বলল, হ্যাঁ, ঠিকই তো। তোমার নাম স্বপ্না, তুমি মিথ্যেও নয়, সত্যিও নয়, তুমি সবকিছুর থেকে আলাদা।

স্বপ্ন হাসল।

মধুময় হঠাৎ একটা কিছু দেখে দারুণ চমকে উঠল। তার জামাটার নীচের দিকে একটা লাল রঙের ফোঁটার দাগ। জামাটার রং হলদে বলে ভালো করে নজর না দিলে দেখা যায় না।

এটা কীসের দাগ? নিজের মনকে প্রশ্ন করবার আগেই মধুময় অবশ্য উত্তরটা জানে। এটা রক্তের দাগ। কালকের জামাটাই পরে এসেছে মধুময়। কাল রাত্তিরে লোকটাকে ঘুসি মারবার ফলে লোকটার ঠোঁট দিয়ে রক্ত বেরিয়ে গিয়েছিল। সেই রক্তেরই একটু ছিটে লেগেছে মধুময়ের জামায়।

মধুময়ের গা-টা ঘিন ঘিন করে উঠল। একটা নোংরা লোকের রক্ত লেগে আছে তার জামায়। লোকটার নিষ্ঠুর লোভী মুখখানা ভেসে উঠল তার চোখে।

সে স্বপ্নার কাঁধ থেকে উঠিয়ে নিল নিজের হাত। এইরকম নোংরা জামা পরে স্বপ্নাকে ছুঁয়ে থাকা উচিত নয়।

তুমি হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলে যে! স্বপ্না বলল।

কই, না তো! এমনি বৃষ্টি দেখছি।

 ওই দেখো, ব্রিজের ওপর দিয়ে একটা ট্রেন আসছে।

একটু দূরে একটা ইটের নৌকো দাঁড় করানো। দু-জন লোক মাথায় করে ইট নিয়ে আসছে পারে। নৌকোটা চওড়া করে রাখতে হয়েছে বলে, ওদের খানিকটা জলের মধ্যে নেমে গিয়ে আনতে হচ্ছে ইট। লোক দুটোরই বুকের পাঁজর বার করা। পুরো নৌকোর ইট নামাতে ওদের নিশ্চয়ই সারাদিন লেগে যাবে। সারাদিন এত পরিশ্রম করে ওরা ক-টাকা পায়? নিশ্চয়ই ভালো করে খেতে পায় না, নইলে অত রোগা হবে কেন? সারাদিন এত পরিশ্রম করেও মানুষ খেতে পায় না!

লোক দুটোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মধুময় বুঝতে পারল জোয়ার এসে গেছে, ক্রমশ নদীর জল বাড়ছে। কেননা একটু আগে ওরা হাঁটুজল পর্যন্ত নামছিল, এখন ওদের উরু পর্যন্ত ডুবে যাচ্ছে।

এসব নদীতে বান ডাকে না, তাই ভয় নেই। জোয়ারের সময় জল বাড়ে আস্তে আস্তে। বেলাভূমির ওপর জল কতটা এগিয়ে আসছে চট করে বোঝা যায় না।

মধুময়ের ইচ্ছে হল, সে এই নদীতে নেমে যায়। ডুব দিয়ে খুব ভালো করে স্নান করে। জামাটা ধুয়ে-মুছে তুলে ফেলে রক্তের দাগটা। কিন্তু তাতে কাল রাত্তিরের স্মৃতি মুছে যাবে?

বার বার মনে পড়ছে সেই লম্পট লোকটার মুখ। খেলাটা ভেঙে যাচ্ছে। মধুময় এ-রকম চায়নি। স্বপ্নার কাছে যখন আসবে, তখন সে অন্য মানুষ থাকতে চায়।

তার গোপন জীবনের কোনো ছাপ যেন না পড়ে।

 কিন্তু জামায় এই রক্তের ছিটে!

মধুময় উঠে গিয়ে এক টুকরো ইট দিয়ে বালির ওপর একটা জাহাজ আঁকতে লাগল। প্রায় স্বপ্নার পায়ের কাছে। আঁকার হাত ছিল মধুময়ের, সে শিল্পী হতে হতে হল না, তার বদলে ছিনতাই দলের সদস্য হয়েছে।

স্বপ্না বলল, বাঃ বেশ সুন্দর হয়েছে তো জাহাজটা!

মধুময় বলল, এক্ষুনি আমরা একটা জাহাজডুবি দেখব।

স্বপ্না বলল, তার মানে?

বুঝতে পারলে না–জল বাড়তে বাড়তে এই জাহাজটাকে ডুবিয়ে দেবে।

 জল বাড়ছে নাকি?

তাকিয়ে থাকো, এবার বুঝতে পারবে।

এবার সত্যিই জল বাড়ার ব্যাপারটা বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠল। একটু একটু করে এগিয়ে এসে নদীর রেখা প্রথমে ছুঁয়ে দিল জাহাজটার একটা প্রান্ত। তারপর এগোতে লাগল একটু একটু করে। মিনিট দশেকের মধ্যেই ডুবে গেল জাহাজটা। স্বচ্ছ টলটলে জলের নীচে বালির ওপর মধুময়ের আঁকা জাহাজটাকে পরিষ্কার দেখা যায়।

জল বেড়ে এসে ছলাৎ ছলাৎ করতে লাগল স্বপ্নার পায়ের কাছে। একটুক্ষণের মধ্যেই তার গোড়ালি পর্যন্ত এসে গেল।

স্বপ্না বলল, কী দারুণ ব্যাপার, না? নদীটা কতদূরে ছিল, আর কত কাছে এসে গেল এ-রকম আগে কখনো দেখিনি।

আর এখানে বসা যায় না। জল আরও বাড়বে। এবার স্বপ্নার শাড়ি-টাড়ি ভিজে যাবে। দুপুর ঢলে এসেছে। এবার বাড়ি ফেরার কথাও মনে আসে।

উঠে স্টেশনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে স্বপ্না বলল, তুমি আমাকে নদী দেখাবে বলেছিলে, দেখালে না তো?

মধুময় অবাক হয়ে স্বপ্নার দিকে তাকাল।

স্বপ্না বলল, এটা তো নদী নয়, নদ। রূপনারায়ণ নদ। বলেই স্বপ্ন ছেলেমানুষের মতো হেসে উঠল খিলখিল করে।

মধুময় বলল, ও পুরুষ, তাই বল! সেইজন্যই তোমার পা জড়িয়ে ধরবার জন্য এত তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসছিল!

স্টেশনে এসে মধুময় আর ভুল করল না। আর সে ভিড়ের কামরায় যেতে পারবে না। স্বপ্নার সঙ্গে এই প্রথম ট্রেনে বেড়ানো। সে টিকিট কাটল ফার্স্ট ক্লাসের।

যথারীতি স্বপ্না অবাক।

তুমি এত-টাকা খরচ করলে শুধু শুধু?

একটা আংটি বিক্রি করে দিলাম যে। সেই টাকা রয়েছে।

আবার আংটি বিক্রি করেছ? কেন? তোমার দরকার হলে আমার কাছ থেকে টাকা নিতে পারো না?

আংটি তো আমি পরিই না বলতে গেলে। আর কখনো পরবও না। শুধু শুধু রেখে লাভ কী?

তবু জিনিসপত্র বিক্রি করা আমি পছন্দ করি না।

শোনো স্বপ্না, এমন সুন্দর দিনগুলো আমরা টাকার অভাবে নষ্ট করব? অন্য লোকেরা আনন্দ করবে, আর আমরা করব না?

মধুময় আড়চোখে আর একবার তার জামার রক্তের ফোঁটাটার দিকে তাকাল। স্বপ্ন দেখতে পায়নি। হলদে জামা, হয়তো স্বপ্না লক্ষও করবে না।

মধুময় মনে মনে তীব্রভাবে বলল, না, আমি কোনো অন্যায় করিনি। একটা বদমাশ লোক রাস্তা থেকে মেয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে মদের দোকানে কিংবা হোটেলে একরাত্রে তিন-চারশো টাকা ওড়ায়। আর একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা ট্রেনে নিরিবিলিতে একটু ভ্রমণ করতে পারবে না? কোনটাতে টাকার সবচেয়ে ভালো ব্যবহার হয়?

ফার্স্ট ক্লাস কামরাটা একদম ফাঁকা। লোকাল ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাসে সাধারণত জায়গা পাওয়া যায় না। কলেজের ছাত্র, ভিখিরি আর হকাররা এসে খুব গোলমাল করে। কিন্তু এখন এই শেষবিকেলে তারা কেউ নেই।

চলন্ত ট্রেনের নির্জন কামরায় যেন একটা রোমান্টিকতার গন্ধমাখানো। মুখোমুখি বসে থাকা। বাইরে চলমান সবুজ মাঠ। সবকিছু বড়ো মোহময়।

হঠাৎ ঝুঁকে মধুময় তার দু-হাত রাখল স্বপ্নার কাঁধে। ভিখিরির মতন করুণ গলায় বলল, তোমায় একটু আদর করব?

স্বপ্না মধুময়ের হাতদুটো ধরে বলল, তুমি আর আমি এ-রকম একটা আলাদা জায়গায় বসে আছি–এই তো আমার দারুণ ভালো লাগছে!

তোমায় একবার চুমু খাই?

না, প্লিজ।

একবার। কেউ দেখবে না এখানে।

না। যখন সময় আসবে।

মধুময় একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল স্বপ্নার দিকে। তার বন্ধুরা সবাই বলে, মেয়েরা মুখে কখনো হ্যাঁ বলে না। ইচ্ছে থাকলেও মুখে না না বলে। একটু জোর করতে হয়। মেয়েরা ওই জোর করাটাই পছন্দ করে।

মধুময় কি স্বপ্নার ওপর জোর করবে? মধুময় নিজের হাতদুটো স্বপ্নার কাঁধ থেকে সরিয়ে নিল। জামায় ওই রক্তের ছিটেটুকু না থাকলে সে নিশ্চয়ই আজ স্বপ্নাকে জোর করে বুকে টেনে নিত। কোনো আপত্তিই শুনত না।

তুমি রাগ করলে?

না, রাগ করিনি।

প্লিজ, রাগ করে আজকের এই সুন্দর দিনটা নষ্ট করে দিয়ো না। আমার এত ভালো লাগছে আজ সবকিছু।

সত্যিই রাগ করিনি।

কিন্তু তুমি যে বললে, যখন সময় আসবে… যদি কোনোদিনই আর সময় না আসে?

যাঃ, তাই কখনো হয়? আমরা একসঙ্গে থাকব না?

আমি চাকরি না পেলে, তোমায় বিয়ে করতে পারব না। যদি কোনোদিনই চাকরি না পাই?

 নিশ্চয়ই পাবে।

তিন বছর তো হয়ে গেল… অনেকে শুনেছি আট-দশ বছর বেকার, যদি আমারও সেই অবস্থা হয়?

আমি ততদিনই অপেক্ষা করে থাকব। এমনকী যদি প্রয়োজন হয় তবে চিরকাল…।

 চিরকালের কথা বোলো না। শুনলেই আমার ভয় করে। চিরকাল কি কেউ কারুর জন্য অপেক্ষা করতে পারে?

তুমি চাকরি না পেলেই-বা, আমি তো চাকরি পেতে পারি। একবার তো একটা পেয়েছিলাম, নিইনি। আবার যদি চেষ্টা করি, আমি ভালো একটা চাকরি পেলেই তারপর আমরা …

একথা সত্যি যে, স্বপ্না চেষ্টা করলেই একটা চাকরি পেতে পারে। স্বপ্নার রেজাল্ট ভালো। তা ছাড়া মেয়ে বলেই কিনা কে জানে, সে দরখাস্ত পাঠালেই ইন্টারভিউ-এর ডাক আসে। আর মধুময়ের অধিকাংশ দরখাস্তের কোনো উত্তর আসে না।

মধুময় বলল, তুমি চাকরি করতে যাবে, আর আমি বাড়িতে বসে থাকব?

বসে থাকবে কেন–তুমি বাড়িতে বসে ছবি আঁকবে। সেটাই তোমার কাজ।

আমার ছবি আঁকা তো শখের কাজ। আমি তো শিল্পী নই। তারপর যদি আমাদের ছেলে মেয়ে হয়, তুমি অফিসে যাবে, আর আমি ঘরে থেকে বাচ্চাকে খাওয়াব, ঘুম পাড়াব, স্কুলে দিয়ে আসব।

বা:! ওরকমভাবে বোলো না।

মধুময় তিক্তভাবে হা-হা করে হেসে উঠল।

শিয়ালদা স্টেশনে পরের কাজটা হল নিখুঁতভাবে। দারুণ ভিড় সেদিন। পর পর কয়েকটা ট্রেন বাতিল হওয়ার ফলে সাংঘাতিক হুড়োহুড়ি শুরু হয়েছিল। এইসব দিন মধুময়দের কাজের পক্ষে খুব চমৎকার।

একটা ট্রেন থামার সঙ্গে সঙ্গে একদল যাত্রী হুড়হুড়িয়ে নেমে আসছে, আর একদল তক্ষুনি সেই ট্রেনে ওঠবার জন্য ঠেলাঠেলি শুরু করছে–সেই বিশৃঙ্খলার মধ্যে মধুময় একজন বুড়োলোককে এমন সুকৌশলে ল্যাং মারল যে, সেই বুড়ো বুঝতেই পারল না, কে তাকে মেরেছে।

বুড়োটি পড়ে গেল চিতপাত হয়ে, মাটিতে মাথা ঠুকে অজ্ঞানের মতন হয়ে গেল কয়েক মুহূর্তের জন্য। রতন আর ধনা চোখের নিমেষে ব্যাগটা তুলে নিয়ে সরে পড়ল। পরিষ্কার কাজ।

বুড়োটি চোখ মেলে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠল।

আমার ব্যাগ? আমার ব্যাগ কে নিল? ওর মধ্যে যে আমার যথাসর্বস্ব ছিল গো?

এ-রকম অনেকেই বলে, মধুময় বিশেষ মনোযোগ দিল না। বিশেষত বুড়োলাকেরা কান্নাকাটি করে নাটক সৃষ্টি করতে ভালোবাসে। বুড়োটির মুখখানা ঠিক একটা শকুনির মতন। নিশ্চয়ই এক নম্বরের ধড়িবাজ!

আমার মেয়ের বিয়ের টাকা… আমার শেষ সম্বল…

সবাই মহাব্যস্ত, তবু বুড়োটির কান্নাকাটি শুনে একটা ভিড় জমে গেল। মধুময় একপাশে সরে দাঁড়াল। কেউ তাকে ল্যাং মারতে দেখেনি।

বুড়োটি উঠে বসে দারুণভাবে মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে বলল, আমি এখন বাড়ি ফিরব কী করে? ওরা আমাকে মেরে ফেলে গেল না কেন? আমার মেয়ের বিয়ে আটকে যাবে… প্রভিডেন্ট ফাণ্ড থেকে আজই সাড়ে তিন হাজার টাকা তুলে আনলাম… সামান্য স্কুলমাস্টারি করি…।

মধুময় ভুরু কোঁচকাল। এই বুড়োটা তাহলে স্কুলমাস্টার! দেখে কিন্তু মনে হয়েছিল, লোকটি এক নম্বরের ঘুঘু। মানুষ ঠকানোই এর পেশা।

লোকটি এমন ডুকরে কাঁদতে লাগল যে, সহানুভূতি না জেগে উপায় নেই।

একজন বলল, ও দাদু, পুলিশে খবর দিন।

আর একজন বলল, পুলিশে খবর দিলে ঘোড়ার ডিম হবে। এ-রকম তো হামেশাই হচ্ছে।

মধুময় ভাবতে লাগল, সত্যিই কি এই বুড়োলোকটির মেয়ের বিয়ের টাকা? অনেকে সহানুভূতি আকর্ষণের জন্য এ-রকম মিথ্যেকথা বলে।

কয়েকজন লোক ধরাধরি করে বুড়োটিকে নিয়ে গেল রেলওয়ে পুলিশের কাছে। মধুময়ও কৌতূহলী হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে।

লোকটি সত্যিই নিজেকে স্কুলমাস্টার বলে পরিচয় দিল। রিটায়ারমেন্টের আর মাত্র এক বছর বাকি। মেয়ের বিয়ে আর পাঁচদিন বাদে। প্রভিডেন্ট ফাণ্ড থেকে আজই টাকা তুলে এনেছিল। মোট সাড়ে তিন হাজার টাকা।

দু-জন যাত্রী সাক্ষী দিল তারা লোকটিকে চেনে। উনি থাকেন বেলঘরিয়ায়। পড়ান শ্যামবাজারের এক স্কুলে। অতিনিরীহ মাটির মানুষ। পাড়ার সবাই খুব ভক্তিশ্রদ্ধা করে। ওঁর মেয়ের জন্য সবাইকে নেমন্তন্ন পর্যন্ত করা হয়ে গেছে।

মধুময় এদিক-ওদিক তাকাল। অবশ্য কোনো লাভ নেই। রতন আর ধনা ভদ্রলোকের ব্যাগটা নিয়ে অনেক দূরে চলে গেছে।

মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিয়ে হয়? সাড়ে তিন হাজার টাকার জন্য বিয়ে আটকে যাবে?

আজ আর মধুময়ের ট্রেন ধরে দূরে যাওয়ার দরকার নেই। কেউ তাকে দেখেনি। সে এখন স্বচ্ছন্দে ফিরে যেতে পারে। তবু সে ট্রেনে উঠে পড়ল। সেই বুড়োলোকটার সঙ্গে একই কামরায়।

বুড়োলোকটি ট্রেনে বসেও কাঁদতে লাগল অনবরত। আর তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার বদলে অন্য লোকেরা শোনাতে লাগল আরও নানারকম চুরি ও রাহাজানির গল্প।

মধুময় একদৃষ্টে চেয়ে রইল বুড়োলোকটির মুখের দিকে। মুখ দেখে সবসময় মানুষ চেনা যায় না। এই লোকটি যদি অতিবদমায়েশই হবে তাহলে বুড়োবয়েস পর্যন্ত ইস্কুলে মাস্টারি করে গেল কেন? মানুষ ঠকানোর তো আরও অনেক ভালো ভালো উপায় আছে। এর আগে যাদের কাছ থেকে ব্যাগ কাড়া হয়েছে, তারাও সবাই কি বদমাশ ছিল তাহলে?

বেলঘরিয়া স্টেশনে নেমে আবার আর একটা কান্ড হল। বুড়োলোকটি হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়ল প্ল্যাটফর্মে। কিছুতেই বাড়ি যাবে না। বাড়িতে গিয়ে কী করে সে মুখ দেখাবে।

একদল যুবক উৎসাহী হয়ে বলে উঠল, চলুন দাদু, আমরা আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছি। কী আর করবেন বলুন। আপনাকে যে প্রাণে মারেনি এই ঢের। ওরা অনেকসময় ছোরাছুরি চালায়।

মারল না কেন! ওরা আমাকে মেরে ফেললেই আমি বাঁচতাম! মেয়েটার বিয়ে হবে না, সর্বনাশ হবে।

মধুময়ও ভিড়ে গেল সেই যুবকদের দলে। একটা রিকশায় বুড়োমানুষটাকে চাপিয়ে ওরা চলল পেছন পেছন।

বাড়ি খুব বেশি দূরে নয়। স্টেশন থেকে সাত-আট মিনিটের পথ।

বাড়ি মানে খুবই সামান্য ব্যাপার। দু-খানা ঘর, পাকা দেওয়াল হলেও ওপরে টিনের চাল। সামনের জমিতে ঢ্যাঁড়স আর বেগুন ফলে আছে।

বাড়ির সামনে বৃদ্ধটি আর একপ্রস্থ কান্না শুরু করতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল অনেকে। তাদের মধ্যে একটি মেয়েকে দেখে মধুময়ের যেন হৃৎপিন্ড থমকে গেল। একুশ-বাইশ বছরের একটি মেয়ে, সাধারণ তাঁতের শাড়িপরা, লাজুক ধরনের মুখখানা। খুব সম্ভবত এই মেয়েটিরই বিয়ে

কিন্তু এই মেয়েটিকে মধুময় সেদিন চৌরঙ্গিতে দেখেছিল না? সেই লম্পট লোকটির সঙ্গে? মধুময়ের খুব ভালো মনে নেই, কিন্তু এর সঙ্গে খুবই মিল, সেই একইরকম মুখের লাজুক ভাব। যদি এই মেয়েটি না-ও হয়, তবু ঠিক এরই মতন একটি মেয়ে, ভদ্র পরিবারের, কিন্তু টাকার অভাবে ওইসব জায়গায় গিয়ে লম্পট ধনীদের খপ্পরে পড়তে বাধ্য হয়।

আর যদি সত্যিই এই মেয়েটি হয়? গ্র্যান্ড হোটেলে ঢুকতে রাজি হচ্ছিল না কিছুতেই। হয়তো মেয়েটি পুরোপুরি পাপের জীবনে যেতে চায়নি। বিয়ে করে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চেয়েছিল।

সাড়ে তিন হাজার টাকার জন্য মেয়েটির বিয়ে হবে না। মেয়েটি আবার বাধ্য হয়ে ওইসব লম্পটদের কাছে যাবে। মধুময়ের মাথার মধ্যে আগুন জ্বলছে-ন্যায়-অন্যায়বোধ সব গুলিয়ে যাচ্ছে। সে আজ, চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে একটি পরিবারের সর্বনাশের জন্য সে নিজে দায়ী।

তার পকেটে আজ মাত্র চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকা আছে। অবশ্য হুট করে এদের টাকা দিতে গেলেই বা এরা কী ভাববে।

উলটো দিকের ট্রেন ধরে মধুময় ফিরে এল শিয়ালদায়। সেখানে আবার মানুষজন যেমন দৌড়োচ্ছিল তেমনিই দৌড়োচ্ছে। খানিক আগে যে একজন বৃদ্ধলোক এখানে সর্বস্বান্ত হয়েছে, তার কোনো চিহ্নই নেই। একটা বেঞ্চে চার জন পুলিশ বসে নিশ্চিন্তভাবে সিগারেট টানছে।

নির্দিষ্ট জায়গায় রতন, ধনারা নেই। মধুময়ের আজ অনেক দেরি হয়েছে। ওরা থাকবেই বা কেন?

পরদিন মধুময় পাগলের মতন খুঁজতে লাগল রতনদের। কোথাও ওদের পাত্তা নেই। সন্ধ্যের দিকে ওদের পাড়ার ফ্যাক্টরির পেছনের জমিতে ওদের আড্ডা বসে, সেদিন ওখানেও কেউ আসেনি। রতনের বাড়িতে তিন বার গিয়েও তাকে পাওয়া গেল না।

সারারাত ঘুমোতে পারল না মধুময়। পরদিন ভোর বেলা রতনের বাড়িতে গিয়ে তাকে ধরল।

ঘুমচোখে বেরিয়ে এসে রতন চমকে উঠল মধুময়কে দেখে। চোখ দুটো লালচে, উসকো খুসকো চুল মধুময়ের। এ-রকম চেহারায় তাকে দেখা যায় না কখনো।

রতন ফিসফিস করে বলল, কী হল! তুই ধরা পড়েছিলি? তোকে মেরেছে?

মধুময় গম্ভীর গলায় বলল, না।

সেদিন তুই এলি না দেখে দারুণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম মাইরি! ভাবলাম, নির্ঘাত তুই ধরা পড়েছিস।

তবু তোরা আমাকে দেখতে যাসনি।

কোনো লাভ আছে? সবাই মিলে ধরা দিয়ে লাভ কী বল?

আমার সঙ্গে একটু আয় রতন, জরুরি কথা আছে।

দু-জনে হাঁটতে হাঁটতে এসে বসল একটা পার্কে। মধুময়ের ব্যবহার দেখে রতন একটু ঘাবড়ে গেছে। সে পুরোনো পাপী, তাই পুলিশে ধরা পড়ার ভয় তার বেশি। সে মনে মনে ঠিক করেছিল, কয়েক দিনের জন্য বাড়ি থেকে গা-ঢাকা দেবে। তার অন্য আস্তানা আছে।

মধুময় সরাসরি বলল, পরশু আমরা যে-টাকাটা পেয়েছি সেটা ফেরত দিয়ে আসতে হবে

রতন আকাশ থেকে পড়ল। টাকা ফেরত দিয়ে আসতে হবে? ছিনতাইয়ের টাকা কেউ ফেরত দেয়? ছেলেটার মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি!

মধুময় বলল, আমরা বেছে বেছে বদমাশ লোকেদের টাকা কাড়ব ঠিক করেছিলাম। অন্তত আমি সেইজন্য এসেছিলাম তোদের দলে। যাতে আমার বিবেক পরিষ্কার থাকে। কিন্তু পরশু আমাদের ভুল হয়েছে। লোকটা একজন নিরীহ স্কুলমাস্টার। ওটা ওর মেয়ের বিয়ের টাকা।

এসব ভাবালুতায় রতনের মন গলে না। সে বলল, হ্যাট! কীসব আগডুম-বাগডুম বকছিস? টাকা ফেরত দিতে গেলেই তো ধরা পড়ে যাবি!

মধুময় বলল, না, ধরা পড়ব না। আমি লোকটার বাড়ি দেখে এসেছি। লোকটার নাম জেনেছি। বাড়ির নম্বর আর রাস্তার নামও জেনে এসেছি। টাকাটা ওকে মানিঅর্ডার করে পাঠালে এখনও ওর মেয়ের বিয়ে হতে পারে।

পোস্ট অফিস থেকে টাকা পাঠাবি? পুলিশ ঠিক খোঁজ করে বার করে ফেলবে তোকে।

সে-ঝুঁকি আমি একলা নিতে রাজি আছি। কিন্তু আমি জানি, পুলিশ আমার খোঁজ পাবে না।

 যাক বাবা! এসব কী আজব কথা! কিন্তু টাকাটা তো আমার কাছে নেই।

তার মানে?

তুই সেদিন এলি না বলে, ভাগ বাঁটোয়ারা হল না। পুরো টাকাটা আমি ধনার কাছে রেখেছি।

ঠিক বলছিস? যদি মিথ্যেকথা বলিস রতন, তাহলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। আমি এ লাইন আজ থেকে ছেড়ে দিচ্ছি … কিন্তু এ টাকাটা ফেরত না-দিলে আমি তোদের সব কটাকে ধরিয়ে দেব!

শোন মধুময়, মিথ্যে নিয়েই আমাদের কারবার। পথে-ঘাটে হাজাররকম মিথ্যে বলি। সেইজন্যই দলের লোকদের কাছে কখনো মিথ্যেকথা বলি না একটাও। ওতে দল টেকে না।

তবু মধুময় পরীক্ষা করার জন্য জিজ্ঞেস করল, ব্যাগে কত টাকা ছিল?

সাড়ে তিন হাজার।

ঠিক আছে, আমি ধনার কাছে এক্ষুনি যাচ্ছি। তুইও চল আমার সঙ্গে।

আমি যাব না ভাই! তুই যে-রকম কথাবার্তা বলছিস, তাতে আমার ভয় লেগে যাচ্ছে। একসঙ্গে তিন জন এখন না জোটাই ভালো। তুই ধনার কাছ থেকে সব টাকাটা নিতে চাস নে, আমি আপত্তি করব না। তারপর সেই টাকা নিয়ে তুই যা-খুশি কর। কিন্তু লোক জানাজানি করিস না।

আর একটু দেরি করলে ধনাকে বাড়িতে পাওয়া যেত না। সে জামাকাপড় পরে বেরোবার জন্য তৈরি হচ্ছিল।

মধুময়কে দেখে সেও বলল, তুই ধরা পড়িসনি তাহলে!

মধুময় বলল, কেন, আমি ধরা পড়লে তোরা খুশি হতিস?

 ধনা অবাক হয়ে বলল, যাঃ, কী বলছিস! তুই ধরা পড়লে আমরা খুশি হব কেন? তুই আমাদের নাম বলে দিলে তো আমরাও ফেঁসে যেতাম।

হয়তো ভেবেছিলি, আমাকে আর ভাগ দিতে হবে না।

 তোর বখরা নিতে এসেছিস বুঝি? কিন্তু তোকে ক-দিন সবুর করতে হবে ভাই।

কেন?

আমি টাকাটা সব খরচ করে ফেলেছি।

মধুময় সঙ্গে সঙ্গে ধনার গলা চেপে ধরে বলল, তোকে আমি খুন করে ফেলব। আমার সঙ্গে চালাকি করতে এসেছিস?

মধুময়ের তুলনায় ধনার গায়ের জোর অনেক কম। সে মধুময়ের সঙ্গে কিছুতেই পারবে না। অসহায়ভাবে মধুময়ের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর আস্তে আস্তে বলল, আমাকে মেরে ফেলতে চাস, মেরে ফেলিস। কিন্তু আজ নয়, আজ ছেড়ে দে। আজ আমার ভীষণ দরকার, আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে।

তার চেয়েও অনেক বেশি দরকারি কাজে আমি এসেছি–পরশুর পুরো টাকাটা আমার চাই। রতনের সঙ্গে দেখা করে এসেছি, সে রাজি হয়েছে।

বললাম তো খরচ হয়ে গেছে। তোর ভাগটা আমি পরে শোধ করে দেব।

 তোকে আমি শেষ করে দেব, ধনা!

আমার কথাটা আগে শোন। আমার গলাটা ছাড়। আমার মা নার্সিং হোমে, আমাকে এক্ষুনি সেখানে যেতে হবে। আমার মা কাল মরতে বসেছিলেন। কাল হঠাৎ মায়ের অ্যাপেনডিক্স বার্স্ট করেছে। তক্ষুনি অপারেশন না করালে বাঁচবার কোনো আশাই ছিল না। কোনো হাসপাতালে জায়গা পাইনি, তাই নার্সিং হোমে ভরতি করালাম। তিন জন বড়ো ডাক্তারের ফি, চোদ্দো বোতল রক্ত কিনতে হয়েছে বাইরে থেকে, ডবল দাম দিয়ে…

আমি তোর একটা কথাও বিশ্বাস করি না।

তুই চল আমার সঙ্গে নার্সিং হোমে … আমি কোনোদিন বন্ধুবান্ধবকে বিট্রে করি না … কাছে যদি টাকাটা না থাকত, তাহলে কিছু করার উপায় ছিল না। কিন্তু টাকা রয়েছে আমার কাছে, অথচ আমার মা বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন, এটা আমি সহ্য করতে পারি? তুই বল? আমার তিনটে ছোটো ভাই-বোন আছে। মা মারা গেলে ওদের নিয়ে আমি একেবারে পথে বসতাম।

মধুময়ের তুলনায় ধনার বাড়ির অবস্থা অনেক খারাপ। মধুময়ের তবু বাবা বেঁচে আছেন এবং চাকরি করেন, ধনার বাবা মারা গেছেন অনেক দিন।

মধুময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, কিন্তু টাকাটা খরচ হয়ে গেল। জানিস, একটা মেয়ের বিয়ে বন্ধ হয়ে গেল এজন্য, হয়তো তার ভবিষ্যৎটাই–

কার বিয়ে?

মধুময় ঘটনাটা খুলে বলল। ধনারও মনের ভাব হল রতনের মতনই। সে ভাবল, মধুময় বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করছে।

সে মধুময়ের হাত চেপে ধরে অভিযোগের সুরে বলল, তুই এইকথা বলছিস? একটা মেয়ের বিয়ে আটকে যাওয়া কি আমার মায়ের মৃত্যুর চেয়ে বড়ো কথা? আমার মা মরলে তুই খুশি হতিস?

আঃ! বাজে বকিস না। এ-রকম কোনো তুলনা চলে না। তুই কাল এলে আমি টাকাটা দিয়ে দিতে পারতাম। তারপর আমার মা মরলে মরতেন!

আমি সে কথা বলিনি।

মেয়েটির পরে আবার বিয়ে হতে পারে।

 কী করে হবে? ওর বাবার শেষ সম্বল ওই সাড়ে তিন হাজার টাকা।

আমরা আর চার-পাঁচটা কেস করে কিছু টাকা তুলে ওদের পাঠিয়ে দিতে পারি।

আমি এ লাইনে আর নেই। আর কোনোদিন যাব না আমি তোদের সঙ্গে।

 দু-দিন একটু মাথা ঠাণ্ডা করে থাক। আমি নার্সিং হোমে যাচ্ছি রে।

সেদিন সন্ধ্যে বেলা স্বপ্নার সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা। ভালো করে স্নান-টান সেরে কাঁচা জামা কাপড় পরে বেরিয়ে পড়ল মধুময়। মুখখানা তার শুকনো বিষণ্ণ। সে নিজেই বুঝতে পারছে।

স্বপ্নার সামনে এসে সে হাসি ফোটাল জোর করে। প্রথমে দেখল একটা সিনেমা। তারপর বেরিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে খাবে।

স্বপ্না বলল, আজ আমি খাওয়াব কিন্তু, তুমি পয়সা খরচ করতে পারবে না।

মধুময় একটুও আপত্তি করল না।

ওরা বসল একটা কেবিনে। এখানেও ওরা মুখোমুখি দু-জন। কিন্তু ট্রেনের কামরার সঙ্গে কত তফাত। একটা পর্দা সরে গেলেই বাইরে থেকে একগাদা লোভী চোখ উঁকি মারে।

স্বপ্না যাতে কিছুতেই বুঝতে না পারে, সেইজন্য মধুময় মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখে নানারকম আবোল-তাবোল কথা বলে যাচ্ছে। কিন্তু তার দুটো জীবন আর আলাদা নেই।

আজ আর মধুময়ের জামায় রক্তের ছিটে নেই, তবু তার সর্বাঙ্গ অশুচি বলে মনে হচ্ছে। সে স্বপ্নার হাতটাও ধরল না। বার বার মনে পড়ছে বেলঘরিয়ার সেই ছোট্টবাড়িটার মেয়েটির কথা। সে কত আশা করেছিল কয়েক দিন বাদে তার বিয়ে হবে… আর হবে না। মেয়েটি আবার চৌরঙ্গিতে এসে দাঁড়াবে, সংসার চালাবার দায়ে লোভী ধনীদের শিকারের জন্য। মধুময়ই এজন্য দায়ী। মধুময়ই দায়ী? মেয়েটির বিয়ে হওয়া বড়ো, না ধনার মায়ের চিকিৎসা? কোনটা ন্যায়, কোনটা অন্যায়?

ওই মেয়েটি আর তার বাবাকে সাহায্য করার জন্য মধুময় কি আবার ছিনতাই-এর কাজে নামবে? ওদের সাহায্য করার জন্য অন্য লোকদের টাকা কেড়ে নেওয়া কি ঠিক? আবার যদি তাদের মধ্যে কেউ ওই বুড়োলোকটির মতন….

মধুময় ডাকল, স্বপ্না?

স্বপ্না বলল, কী?

মধুময় বুঝতে পারল, এই প্রশ্ন স্বপ্নার কানে তুলে কোনো লাভ নেই। স্বপ্না কিছুই বুঝতে পারবে না। তাই সে হাসিমুখে বলল, না, কিছু না।

তারপর মুখটা ফিরিয়ে নিয়েই কেঁপে উঠল। কিছুতেই সামলাতে পারল না নিজেকে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপেও আটকাতে পারল না। মধুময় নিঃশব্দে কেঁদে উঠল। চোখ দিয়ে পড়তে লাগল বড়ো বড়ো জলের ফোঁটা।

স্বপ্না প্রথমে স্তম্ভিত হয়ে গেল। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে এসে মধুময়ের মুখখানা দু হাতে তুলে ধরে বলল, এই এই, কী হয়েছে তোমার? কী হয়েছে বলো না। আমাকে বলো–

মধুময় মুখ নীচু করে বলল, কিছু না, কিছু না, এমনিই হঠাৎ বোকার মতন।

স্বপ্না বলল, ভেঙে পোড়ো না, লক্ষ্মীটি। একটা কিছু পেয়ে যাবে নিশ্চয়ই। আর না পেলেই- বা চাকরি! আমি তো রয়েছি। লক্ষীটি শোনো

মধুময় চোখ মুছে ফেলল। সে যে, ন্যায়-অন্যায়ের দারুণ দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে, সে-কথা বলা যাবে না স্বপ্নাকে। কারুকেই বলা যাবে না। এই একটা ব্যাপারে মধুময় দারুণ একা।

রতন একদিন বলল, এবার একটা বড়োগোছের কাজে হাত দিতে হবে। তোরা রাজি আছিস?

দলের সবাই সঙ্গে সঙ্গে রাজি। শুধু চুপ করে ছিল মধুময়। কথা হচ্ছিল রবারের কারখানার পেছনের মাঠে। মধুময় ভাবছিল, এই দলে মেশা সে ছেড়ে দেবে। সে তার বিবেককে মোটেই বশ করতে পারছে না। তবু হঠাৎ সে বলে উঠল, যদি সত্যি খুব বড়ো কাজ হয়, তা হলে আমি রাজি আছি।

রতন মধুময়ের পিঠ চাপড়ে বলল, এই ছেলেটার হিম্মত আছে। এ একদম ভয় পায় না আমি দেখেছি।

কী কাজ রতনদা?

রাস্তাঘাটে লোকদের ল্যাং মারা বড়ো ছিঁচকে কাজ, ওতে আর আনন্দ নেই। এবার একটা বড়ো কাজ করলেই কয়েক মাস ফুর্তিতে কাটিয়ে দেওয়া যাবে। কাজটা হচ্ছে লোকাল ট্রেনে ডাকাতি। ট্রেনের কোনো একটা কামরায় উঠে দুটো খেলনা পিস্তল আর দুটো ছুরি নিয়ে ভয় দেখালেই বাঙালিরা ভয়ে কাঁপতে থাকে। তখন তাদের পকেটের মানিব্যাগ আর হাতঘড়ি টরিগুলো খুলে নিতে বেশি সময় লাগে না। খুব সহজ কাজ। খবরের কাগজে এ-রকম প্রায়ই বেরোয়। কেউ ধরা পড়ে না।

রতনের শাগরেদ ধনা বলল, শুধু খেলনা পিস্তল কেন ওস্তাদ? আর কিছু থাকবে না?

 মধুময় বলল, রতনদা, আমার একটা কণ্ডিশান আছে, সেটা আগে থেকেই বলে রাখা দরকার।

কী?

এই কাজটা করার পর আমি তোমাদের দল একেবারে ছেড়ে দেব। আমার সঙ্গে তোমরা কেউ কোনোদিন আর যোগাযোগ করতে পারবে না। আর, এই কাজে যতই টাকা উঠুক, আমাকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার টাকা দিতেই হবে।

ধনা বলল, তুই বুঝি এখনও সেই বুড়োলোকটাকে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ভাবছিস? তুই পাগল নাকি রে?

মধুময় উত্তর দিল, সব মানুষেরই কিছু কিছু পাগলামি থাকে। ধরে নে, এটাই আমার পাগলামি।

রতন বলল, ঠিক আছে, মেনে নিলাম। তোকে আমি দেব ওটাকা।

ধনা হুররে বলে লাফিয়ে উঠে বলল, আমি একটা পাইপগান জোগাড় করতে পারব।

রতন বলল, তাহলে তো আরও ভালো। দু-খানা বড়ো ছুরি আমার নিজের কাছে আছে। মধুটার বেশ ষন্ডা চেহারা আছে, তুই মধু একখানা ছুরি নিয়ে কামরায় দরজার কাছে দাঁড়াবি।

 মধুময় আপত্তি তুলল। সে বলল, কিন্তু রতনদা, এ তো নিরীহ লোকেদের ওপরে ডাকাতি করা হবে। খারাপ লোকদের শাস্তি দেওয়া তো হবে না। ট্রেনের কামরায় তো আমাদের মতন লোকেই থাকে।

ধনা বলল, ফার্স্ট ক্লাস না সেকেণ্ড ক্লাস?

রতন বলল, ফার্স্ট ক্লাসে ঢুকে কোনো লাভ নেই। ফার্স্ট ক্লাসে আজকাল বেশিরভাগ লোকই পাসে যায় কিংবা বিনা টিকিটে। এ ছাড়া মাঝে দু-একজন মিলিটারি অফিসার থাকে, তাদের কাছে রিভলবার থাকতে পারে।

কথা থামিয়ে রতন মধুময়ের দিকে চেয়ে রইল। তারপর বলল, এ ছেলেটা ঠিকই বলেছে। নিরীহ লোকেদের ওপর আমরা হামলা করব না। তবে, তোকে একটা কথা বলছি মধু, তুই কাগজে দেখেছিস, ট্রেনের কামরায় এ-রকম ডাকাতি হলেই কোনো একটা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পাঁচ, সাত কী দশ হাজার টাকা খোওয়া যায়। লোকাল ট্রেনে একটা লোক এতটাকা নিয়ে যাতায়াত করে কেন? নিশ্চয়ই ব্ল্যাকমানি। গভর্নমেন্ট নিয়ম করেছে ব্যবসার বড়ো বড়ো লেনদেন সব চেকে করতে হবে। তবু যারা পকেটে নোটের তাড়া নিয়ে ঘোরে, তাদের মতলব খারাপ নয়? তুই কী বলিস?

মধুময় বলল, তা ঠিক।

আমরা খবর রাখব … ট্রেনে ট্রেনে ঘোরাঘুরি করে কিছু লোককে ওয়াচ করব।

সাঁতরাগাছির দিকটা রতনের খুব চেনা। ওখানকার লাইনে পালানোর সব ঘোঁতঘাত সে জানে। কাজ হাসিল করার পর এক জায়গায় চেন টেনে ওরা ঝপাঝপ লাফিয়ে নেমে পালাবে।

আগে তিনবার ওরা সাঁতরাগাছির লোকাল ট্রেনে ঘুরে এল। কোনোরকম অসুবিধে নেই। চাল-স্মাগলাররা যখন-তখন চেন টানে এ লাইনে। ট্রেনও দিব্যি ভালো ছেলের মতন থেমে যায়। আর্মড গার্ড-ফার্ড কিছু নেই। এদিকে কয়েকটা কোল্ড স্টোরেজ আছে। ব্যাগভরতি তাড়া তাড়া নোট নিয়ে এ লাইনে প্রায়ই ব্যবসায়ীরা ঘোরাফেরা করে।

দিন ঠিক হল মে মাসের তিন তারিখ। দুপুর একটা চল্লিশের ট্রেন। ওই সময় বেশিরভাগ লোকই ঝিমোয়। আর কামরায় গোলমাল হলেও পাশের কামরার লোকেরা শুনতে পাবে না।

দলে থাকবে পাঁচজন। রতন, ধনা, কল্যাণ, বিশু আর মধুময়।

দু-জন ব্যবসায়ীকে শেওড়াফুলিতে সকাল থেকে ফলো করবে রতন আর কল্যাণ। টাকা পয়সার খবর ঠিকঠাক থাকলে তবেই কাজ শুরু হবে। সবই ঠিকঠাক মিলে গিয়েছিল। একটা বড়ো কামরায় আলাদাভাবে ছড়িয়ে খুব নিরীহভাবে বসেছিল ওরা। যেন কেউ কাউকে চেনে না। সকলের হাতে একটা কোনো কাগজ কিংবা বই, যেন যে-যার পড়াশুনো নিয়ে মগ্ন হয়ে আছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *