২. তারেক মামুদকে নিয়ে এলো

দুই

খানিক বাদে তারেক মামুদকে নিয়ে এলো। তারেক ভুল বলে নি। মামুদের চেহারা দেখে বোঝা যায়, ওর মনের ওপর একটা ঝড় চলছে। ঘরে প্রায় নিঃশব্দে ঢুকে সোফার একটা কোনে চুপ করে বসল। এমনিতেই যতবার ও এসেছে দুয়েকটার বেশি কথা বলে নি। ওকে কথা বলানো মানে, প্রশ্ন করা আর তার উত্তরে হ্যাঁ বা না শোনা। আজ যদিও নিজের তাগিদেই এসেছ কথা বলার জন্য। কিন্তু স্বভাবোচিত সঙ্কোচ কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এমনিতে ও ব্যাপারটা কতটা বলতে পারবে আমার সন্দেহ ছিল। কিন্তু তারেক এবং একেনবাবু যখন আছেন, তখন প্রশ্নের কিছু কমতি হবে না। সুতরাং তথ্য উদ্ঘাটন চট করে না হলেও, সেটা যে হবে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
আমরা সবাই চুপ করে আছি। নিস্তব্ধতাটা একেনবাবুই ভাঙলেন। একেনবাবু বললেন, “বলুন স্যার, তারেক সাহেব বললেন আপনি আমার সঙ্গে একটু কথা বলতে চান।”
“আমি একটু চিন্তায় পড়েছি ”, মামুদ আস্তে আস্তে বললেন।
“কিসের চিন্তা স্যার ?”
“হয়তো অহেতুক চিন্তা, কিন্তু মাথা থেকে সরাতে পারছি না। আপনাকে বলতে চাই, আবার মনে হচ্ছে – চিন্তাটা এতই অর্থহীন যে এ নিয়ে অন্যদের বিব্রত করাটাও বোধহয় অনুচিত।”
“স্যার আপনি এতো ভাবনা করছেন কেন, বলে ফেলুন। বন্ধুদের কাছে বলবেন স্যার – এ নিয়ে এতো সঙ্কোচ কেন ?”
“সঙ্কোচ ঠিক নয়, আসলে ব্যাপারটা হয়তো কিছুই নয়। “
“বলে ফেলুন স্যার। তারেক সাহেব বলছিলেন একটা চিঠির কথা – তাতে নাকি কিছু একটা খবর আছে।”
“চিঠির কথাটা ঠিকই বলেছে তারেক। আমার বাবা একটা চিঠি আনোয়ারচাচা, মানে বাবার অ্যাটর্নীর কাছে রেখে যান – বাবার মৃত্যুর পর আমাকে দেবার জন্য। চিঠিতে বাবা লিখেছেন যে, উনি আশঙ্কা করছেন যে, ওঁর হঠাৎ মৃত্যু হতে পারে। এই কথাটাই আমাকে প্রচণ্ড ভাবে বিচলিত করেছে। কেন কথাটা উনি লিখলেন?”
“এই চিঠির ব্যাপারে আপনি আগে কিছু জানতেন না স্যার ?”
“না, বাবা আমায় কিছু বলে যান নি।”
“আপনার বাবার কতদিন আগে মারা গেছেন?”
“আমি এদেশে আসার মাস দুয়েক আগে – তা প্রায় প্রায় মাস পাঁচেক হল।”
“আপনার আনোয়ারচাচা এতদিন চিঠিটা দেন নি কেন স্যার ?”
“আনোয়ারচাচা নিজে বেশ কয়েকমাস মরণাপন্ন অসুস্থ ছিলেন। কিছুদিন হল আবার কাজকর্ম শুরু করেছেন। উনি লিখেছেন চিঠিটার কথা উনি ভুলে গিয়েছিলেন। হঠাৎ ফাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে ওর নজরে এসেছে।”
“আই সি। তা আপনি এতো বিচলিত হচ্ছেন কেন স্যার , ওঁর মৃত্যুটা কি অস্বাভাবিক ভাবে হয়েছিল?”
“সেটা নিয়েই ভাবছি। বাবা মারা যান একটা পার্টি চলাকালীন। হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে ওঁর মৃত্যু হয়।”
“আপনার বাবার হার্টের কোনও প্রব্লেম ছিল?”
“তা ছিল, বাবার হার্ট বরাবরই খারাপ। বছর তিনেক আগে ওঁর ট্রিপ্‌ল বাইপাস হয় আপনাদের মুম্বাইয়ের এক হাসপাতালে। কিন্তু তারপর থেকে উনি ভালোই ছিলেন। খুব সাবধানে নিয়ম মতোই চলতেন। তবে নিয়ম মেনে চললেও প্রব্লেমতো হতেই পারে।”
“তাহলে আপনার সন্দেহ জাগছে কেন স্যার ?”
“তাইতো বলছি যে, চিন্তাটা মনে হয় অহেতুকই। তাছাড়া পার্টিতে আমার খালু ছিলেন, যিনি পুলিশের সাবেক ডিআইজি।”
“সাব-ডি.আই.জি-টা কি?” প্রমথর প্রশ্ন।
“‘সাব’ নয় দাদা, ‘সাবেক’ – মানে প্রাক্তন ”, তারেক বিশদ করল।
“আর খালু?” একেনবাবু প্রশ্ন করলেন।
“মেসোমশাই।”
“সরি স্যার, বলুন।”
“তিনি অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু দেখেন নি। তাছাড়া বাবার কাছের মানুষ আরও অনেকে ছিলেন। তাঁদেরও কেউ কোনো রহস্য এর মধ্যে দেখেন নি, নইলে কানাঘুষো শুনতাম। বাবার পানীয়টাও পুলিশ পরীক্ষা করেছিল – কিছু পায় নি।”
“দাঁড়ান স্যার, দাঁড়ান। পুলিশ কেন এসেছিল?”
“এর উত্তর আমি ঠিক বলতে পারবো না। ডাক্তার আহমেদ আমাদের পাড়াতেই থাকেন। তিনি বাবাকে নিয়মিত না হলেও মাঝে মধ্যে দেখতেন। তিনিও পার্টিতে ছিলেন। এবং বাবাকে পরীক্ষা করে ডেথ সার্টিফিকেটও দিয়েছিলেন। আমার ধারণা খালু তাও হয়তো একটু নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন।”
“তা পানীয়তে যখন কিছু পাওয়া যায় নি, তাহলে এখন ও নিয়ে চিন্তা হচ্ছে কেন স্যার?”
“কে জানে, আমি হয়তো ঠিক গুছিয়ে বলতে পারবো না। কতগুলো জিনিস এখন মনে হচ্ছে ঠিক ছিল না।”
“যেমন ?”
“যেমন, পার্টি চলার সময়ে দুবার টেনিস কোর্টের বাতিগুলো নিভে যায়। দুবারই সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ করেছিল। আমাকে গিয়ে রিসেট করতে হয়েছিল। তখন এ নিয়ে আমি অতটা ভাবি নি। অনেক সময়ে লাইনের ওভারলোড যদি খুব কম থাকে, তাহলে সার্কিট ব্রেকার সব সময়ে ট্রিপ নাও করতে পারে।”
“আমি একটু কনফিউসড স্যার টেনিস কোর্টের সঙ্গে পার্টির সম্পর্কটা কি?”
“ও সরি, পার্টিটা টেনিস কোর্টেই হচ্ছিল। আসলে বাবার হার্ট বাইপাসের পরে টেনিস কোর্ট আর ব্যবহার করা হত না। আমি নিজে কোনোদিনই টেনিসে উৎসাহী ছিলাম না। তাই ওটা এমনিই পড়ে থাকতো। শুধু পার্টির সময়ে ব্যবহার করা হত। শেষ পার্টিটা ঐ টেনিস কোর্টেই হয়েছিল।”
“এবার বুঝলাম। বলুন স্যার কি বলছিলেন।”
“কি বলছিলাম আমি?”
“বলছিলেন স্যার, সার্কিট ব্রেকার মাঝে মাঝে এমনিতে ট্রিপ করতে পারে – সে নিয়ে তখন কিছু ভাবে নি।”
“ও হ্যাঁ। কিন্তু এখন ভাবছি, দ্বিতীয়বারের পরে আর ব্রেকার ট্রিপ করে নি কেন! আমি তখন ভেবেছিলাম বাড়ির পেছনে সুইমিংপুল আর বাগানের স্পট্ লাইটগুলো নিভিয়ে দিয়েছিলাম বলে বোধহয় লোড কমে গিয়েছিল। কিন্তু এখন মনে পড়েছে যে ঐ আলোগুলো ছিল অন্য সার্কিটে – তাদের ব্রেকার আলাদা। ওগুলোর জ্বলা নেভার সঙ্গে টেনিস কোর্টের আলোর কোনও সম্পর্ক নেই।”
“আই সি।”
“এছাড়া বাবা নাকি অরেঞ্জ জুসের গেলাসে চুমুক দিয়ে বলেছিলেন, জুসটা তিতো। আমিও অরেঞ্জ জুসই খাচ্ছিলাম, আমার তিতো লাগে নি।”
“কিন্তু সেই জুসটাতো পরীক্ষা করা হয়েছিল?”
“তা হয়েছিল। সেইজন্যেই মনে হচ্ছে – সবকিছুই হয়তো অহেতুক চিন্তা।”
“চিন্তা যখন আপনার হচ্ছে, তখন একটা কাজ করা যাক স্যার। আপনি পার্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে বা দেখেছেন সবকিছু ডিটেল্‌সে বলুন। কিচ্ছু বাদ দেবেন না।”
“কিরকম ডিটেল্‌স?”
“এই যেমন স্যার, পার্টি কখন শুরু হল, কারা এসেছিলেন, বসার কি বন্দোবস্ত ছিল, খাবার কোত্থেকে এসেছিল, কে কোথায় বসেছিলেন, কখন আলো নিভলো – যা-যা আপনার মনে আছে – সব।”

“কি ভাবে শুরু করি ”, বলে মামুদ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল তারপর আস্তে বলা আরম্ভ করল:
“আমার বাবা মাঝে মাঝেই বাড়িতে পার্টি দিতে ভালো বাসতেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে পার্টিটা বাইরে হত, নইলে বাড়ির হলঘরে। আমাদের বাড়িটা বেশ বড়। বাবা প্রচুর টাকা খরচ করে এটা বানিয়েছিলেন বছর দশেক আগে। আমাদের বাড়ির সামনে ছিল একটা বড় টেনিস কোর্ট আর তার চারিধারে ঘিরে ছিল বিশাল বাগান। পেছনে সুইমিং পুল আর তার চারপাশে কিছুটা বাঁধানো চত্বর, তারপর আবার বাগান।। পার্টি শুরু হয়েছিল সন্ধ্যার সময়ে। প্রায় একশোর মতো লোক পার্টিতে নিমন্ত্রিত ছিলেন। বাবার বিজনেসের সূত্রে চেনাজানা, রাজনৈতিক জগতের লোক, সরকারী অফিসার, লেখক, শিল্পী, চিত্রতারকা – মোটমাট বাংলাদেশের বেশ কিছু নামীদামী লোককে বাবা ডেকেছিলেন।

পার্টি শুরু হয়েছিল সাড়ে সাতটা নাগাদ। ড্রিঙ্ক আর অ্যাপেটাইজার দেওয়া হয়েছে। যাঁরা মদ খান তাঁদের জন্য ওয়াইন, বিয়ার, হুইস্কি, জিন, শেরি ইত্যাদি হরেক রকম পানীয় রয়েছে। আর অন্যদের জন্য অরেঞ্জ জুস, পাইনাপেল জুস, কোক – ইত্যাদি। বাবা অসুস্থ হবার পর থেকে পার্টি-টার্টির সব দায়িত্ব পড়েছিল বাবার বিজনেস পার্টনার জামালচাচার উপরে। জামালচাচা বাবার থেকে বয়সে অনেক ছোট – বাবাকে বড় ভাইয়ের মতোই দেখতেন; বাবার অনেক ব্যক্তিগত কাজেও সাহায্য করতেন। ঢাকার এক কেটারারকে দিয়ে জামালচাচা সব কিছু করাতেন। টেবিল চেয়ার আনা থেকে শুরু করে – সেগুলো সাজানো, মিনি-বার বসানো, অন্যান্য ডেকোরেশন, পানীয়, অ্যাপেটাইজার ও খাবার ইত্যাদির আয়োজন ও পরিবেশন – সবকিছুই তারা নিখুঁত ভাবে করত। বাবা অসুস্থ হবার পর অন্তত: গোটা ছয়েক পার্টি এই কেটারার আমাদের বাড়িতে করেছে। খুব বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান।

সবকিছুই চমৎকার চলছিল। ঠিক পৌনে আটটা যখন বাজে তখন হঠাৎ টেনিস কোর্টের আলো সব নিভে যায়।
মাপ করবেন স্যার, ঠিক পৌনে আটটা সেটা আপনি কি করে বুঝলেন ?
ওটা একটা হাস্যকর ব্যাপার। আমি একটা সস্তা ডিজিট্যাল হাতঘড়ি কিনেছিলাম তার কয়েকদিন আগে। কোনও কারণে সেটাতে রাত্রি পৌনে ৮-টার অ্যালার্ম দেওয়া ছিল। আমি কিছুতেই অ্যালার্মটাকে ক্যানসেল করতে পারছিলাম না। প্রতিদিন রাত্রি পৌনেআটটায় ওটা বাজতো, একটা বোতাম টিপে আমি আওয়াজটা বন্ধ করতাম। আলোটা পৌনে আটটাতেই নিভেছিল, কারণ ঠিক সঙ্গে সঙ্গেই আমার ঘড়ির অ্যালার্মটা বেজে উঠেছিল।

ঢাকাতে মাঝেমধ্যে বাতি চলে যায়। আমাদের একটা জেনারেটর ছিল। বাতি নিভলে সেটা চালানো হত। কিন্তু আমি দেখলাম রাস্তার আলো নেভে নি। আমাদের বাড়ির ভেতরের আলোগুলোও জ্বলছে। সুতরাং সার্কিট ব্রেকার কোনও কারণে ট্রিপ করেছে। বাবা চেয়ারে বসেছিলেন। আমি বাবার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাবাও ব্যাপারটা বুঝেছেন। বললেন, বাড়ির ব্রেকারগুলো গিয়ে দেখতে। আম্মা বাবার পাশে বসে ছিলেন। আম্মা বললেন, ‘আমাকেও ঘরে যেতে হবে, তোমার বাবার ওষুধ আনতে ভুলে গেছি।’
আমি বললাম, ‘কোথায় ওষুধটা আছে বল, আমি নিয়ে আসছি।’
আম্মা বললেন, ‘না, তুমি খুঁজে পাবে না। আমাকে নিয়ে চলো।’
অন্ধকারে আম্মাকে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছতে আমার একটু সময়েই লেগে গেল।
বাড়িতে ঢুকে আম্মা লিফটে উঠলেন, আর আমি ……।”
“লিফট?”
“বাবার অসুখের পর ওটা লাগানো হয়।”
“আই সি, সেটা কোথায়?”
“দরজা খুলে ঢুকেই হলের ডানপাশে।”
“বুঝলাম স্যার, ঠিক আছে বলুন।”
“সার্কিট ব্রেকারগুলো হল ঘরের অন্যপ্রান্তে সিঁড়ি ঘরের দেয়ালে। আমি যখন সেদিকে এগোচ্ছি, তখন দেখলাম জামালচাচা বাথরুম থেকে বেরোচ্ছেন।”
“বাথরুমটা কোথায় স্যার ?”
“লিফটের পাশে উপরে যাবার আরেকটা সিঁড়ি, তার ঠিক পরেই।”
“তারপর কি হল স্যার ?”
“ও হ্যাঁ, জামলচাচা আমাকে দেখে বললেন, ‘কি ব্যাপার ?’
আমি বললাম, ‘বাতি নিভে গেছে।’
‘সেকি!’
‘হয়তো ওভারলোড, ব্রেকার ট্রিপ করেছে।’
‘আচ্ছা বিপদতো! কিন্তু অন্ধকারে মাসুদভাইকে একা রেখে চলে এলে…. আম্মা আছে তো?’
আম্মা ওষুধ আনতে উপরে গেছে শুনে জামালচাচা তাড়াতাড়ি ছুটলেন। বাবার স্বাস্থ্য সম্পর্কে জামলচাচার একটা দুশ্চিন্তা আছে। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে বাবা যাতে বেহিসাবি কিছু না করেন সেই জন্য পার্টি-টার্টিতে উনি বাবাকে খুব নজরে রাখেন। আমার অবশ্য এটা বাড়াবাড়ি লাগে, কারণ বাবাকে স্বাস্থ্য সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন বলেই আমার মনে হয়।”
“একটা প্রশ্ন স্যার। আপনাদের বাড়ির সেট-আপটা একটু বলুন। আপনি টেনিস কোর্ট থেকে বাড়িতে ঢুকলেন কি ভাবে?”
“টেনিস কোর্টের পাশেই গাড়ি-বারান্দা। সেখান থেকে সামনে বাড়ির একটা ছোট্ট বারান্দা পেরিয়ে বাড়িতে ঢুকতে হয়। সেট আপটা মুখে কতটা বোঝাতে পারবো জানি না। কিন্তু আমার কাছে অনেক ছবি আছে সেগুলো দেখালে পরিষ্কার বুঝতে পারবেন।”
“ঠিক আছে স্যার, সেটা পরেই না হয় দেখাবেন। এবার বলুন তারপর কি হল।”
“হলের অন্যপ্রান্তে পৌঁছে ব্রেকারবস্কটা খুলে দেখি, সত্যিই একটা ব্রেকার ট্রিপ করেছে। ওটা সেট করে দিতেই একটা হাততালির আওয়াজ ভেসে এলো। অর্থাৎ টেনিস কোর্টে আবার বাতি ফিরে এসেছে।” এতটা বলে মামুদ একটু লজ্জিত ভাবে বললেন, “আচ্ছা, আমি কি বেশি ডিটেলে আপনাকে বলছি?”
“এতটুকু নয় স্যার। ঠিক এভাবে বলে যান – যা যা ঘটেছিল। তবে একটা প্রশ্ন স্যার, সার্কিট ব্রেকার বক্সের কাছাকাছি আর কাউকে দেখলেন?”
“হ্যাঁ, আমাদের মালীর আয়েষা নামে একটি বোবা মেয়ে আছে। বছর দশ এগারো বয়স। সে ওখানে ঘুরঘুর করছিল। ও বুদ্ধিতেও খাটো – এদিক ওদিক নিজের মনেই ঘুরে বেড়ায়। আমার একবার মনে হয়েছিল, মেয়েটাই ব্রেকারে হাত দিয়েছে কিনা। আমি জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু খেয়াল হল ও জবাব দিতে পারবে না। তবে ওকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম, এখানে হাত দিবি না বলে।”
“ও কথা বুঝতে পারে ?”
“তা মোটামুটি পারে।”
“আর কাউকে দেখেন নি স্যার ?”
“না।”
“সিঁড়িঘরের সিঁড়িটাও কি দোতালায় যাবার ?”
“হ্যাঁ, দোতালায় যাবার দুটো সিঁড়ি। এই সিঁড়িটা কাজের লোকরাই সাধারণত: ব্যবহার করে। এক-আধ সময়ে আমরাও করি, যখন বাড়ির পাশে ফলের বাগানে যাই।”
“তারপর বলুন স্যার।”

“আমি যখন বাইরে এলাম তখন দেখি জামালচাচা বাবার স্বাস্থ্যকামনা করে একটা টোস্ট দিচ্ছেন। অনেকে ওখানে মদ খেলেও বাবা হার্ট বাইপাস হবার পর থেকে আর মদ খান না। পার্টি-টার্টিতে সাধারণতঃ কমলালেবুর রস বা আনারসের রস – এইরকম কিছু খান। জামালচচার পর খালুও টোস্ট দিলেন। তখনই বাবার মুখ দেখে মনে হল বাবার মুখটা একটু বিকৃত। বাবা বললেন, ‘জামাল, বেশ তিতো এবারের জুসটা।’
জামলচাচা বললেন, ‘সেকি, আমারতো সেরকম লাগছে না।’ বলতে বলতেই আবার আলো নিভে গেল। আমি আবার ছুটলাম সার্কিট ব্রেকার অন করতে।
কে জানি পেছন থেকে বললেন, পেছনের বাগানের আলোগুলো বন্ধ করে দিতে , তাহলে লোডটা একটু কমবে। আমি তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে সার্কিট ব্রেকারটা অন করে, পেছনের আলোর মেইন সুইচটা অফ করে দিয়ে যখন ফিরলাম তখন বাবাকে ডাক্তার আহমেদ আর খালু ধরাধরি করে শুইয়ে দিচ্ছেন মাটিতে। আমি জামলচাচাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি হয়েছে?’
জামলচাচা একেবারে হতচকিত। বললেন, ‘কি জানি, হঠাৎ খেঁচুনি দিয়ে পড়ে গেলেন।’
তাহলে কি স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক – কি হল বাবার ! কয়েক মিনিটের মধ্যে দেখলাম বাবার দেহটা একেবারে নিথর।
পার্টিতে যাঁরা এসেছেন তাঁরা সবাই দিশেহারা। ডাক্তার আহমেদ গলার পাশে আঙুল দিয়ে মাথা নাড়লেন। ইতিমধ্যে খালু পুলিশে ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে বলেছে। আম্মা বাবাকে জড়িয়ে ভীষণ কান্নাকাটি শুরু করেছেন। কয়েকজন মহিলা আর মিসেস আহমেদ আম্মাকে ধরে আছেন। আমার বুকে যে কী কষ্ট হচ্ছে বোঝাতে পারবো না। আমি নীচু হয়ে বসে বাবার গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম শরীরটা যেন ঠাণ্ডা হতে শুরু করেছে। আমার পাশে ডাক্তার আহমেদ। আমি তখন একটাই প্রশ্ন, ‘সব শেষ?’
উনি মাথা নাড়লেন।
জামালচাচা শুনলাম খালাকে বলছেন, ‘মাসুদভাই জুসটা খেয়ে তিতো বলেছিলেন। আমারতো তিতো লাগলো না। বুঝতে পারছি না।’
খালু সেটা শুনেই একটা রুমাল দিয়ে বাবার গেলাসটা ঢেকে রাখলেন।

খানিক বাদেই অ্যাম্বুলেন্স এলো, সেইসঙ্গে পুলিশও। খালু পুলিশ অফিসারের সঙ্গে কিসব বললেন। তারপর তাঁরা বাবার পানীয়ভর্তি গ্লাসটা নিয়ে চলে গেলেন।
আমি এতো শোকাচ্ছন্ন যে, কারোর সঙ্গে কথা বলতে পারছি না। কিন্তু আমার আশেপাশে যা হচ্ছে সবই কানে আসছে। ডাক্তার আহমেদের সঙ্গে খালু আর জামালচাচার কথাবার্তা শুনছিলাম, অন্যদিকে আম্মার বিলাপ। অনেকে এসে আমায় সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। এরই ফাঁকেই আমি শুনলাম ডাক্তার আহমেদ জামালচাচাকে বোঝাচ্ছেন যে, তিতো লাগাটা কিছু অস্বাভাবিক নয় – ওটা স্ট্রোকের আগে সাময়িক বিভ্রান্তি। সিজার হওয়ার আগে অনেক রকম অদ্ভুত স্বাদ গন্ধ মানুষ পায়।
জামলচাচা বললেন, ‘কিন্তু স্ট্রোকতো পরে হল !’
‘আমার মনে হয় ম্যাসিভ স্ট্রোকের একটু আগেই একটা মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছিল। তখনই উনি জুসটা তিতো লাগার কথা বলেছিলেন। ওঁর হার্টটাও খুব বাজে অবস্থায় ছিল।’
কে জানি ডাক্তার আহমেদের কথা সমর্থন করলেন। ‘হ্যাঁ, প্রথমেতো দু-এক চুমুক জুস খেলেন, তখন তো তিতো বলেন নি।’
‘কে জানে, আমারতো ওঁকে অসুস্থ বলে মনে হত না।’ জামালচাচা যেন আত্মগত হয়েই বললেন।
আমারও সেটাই ধারণা ছিল। বাবা এতো সংযত হয়ে থাকতেন যে, হঠাৎ এভাবে চলে যাবে, এটা কখনোই আমার মনে হয় নি।

পরের প্রশ্নটা হল বাবার পোস্ট মর্টেম হবে কিনা। আম্মার ভীষণ আপত্তি বাবার শরীর কাটা ছেঁড়া হবার ব্যাপারে। ডাক্তার আহমেদও সেটা করার খুব একটা কারণ দেখছেন না। যদি পানীয়তে গোলমেলে কিছু পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্য অন্যকথা। সুতরাং দ্রুত পানীয়টা পরীক্ষাটা করা হোক। সেখানে কিছু না পাওয়া গেলে, ধর্মাচারে যা যা পালনীয় সেটা করা হবে। খালু আর জামালচাচা তার দায়িত্ব নিলেন – আমি শুধু সঙ্গে থাকবো।
পরদিন সকালেই জানা গেল পানীয়তে কিছু পাওয়া যায় নি। সুতরাং পোস্ট মর্টেম করার আর কোনও কারণ রইলো না। মোটামুটি এই ব্যাপার।”

“থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। তাহলেতো আপনার দুশ্চিন্তার কোনও কারণ দেখছি না। কেন আপনার মনে হচ্ছে যে মৃত্যুটাতে কোনও রহস্য আছে।”
“ঐ যে বললাম হঠাৎ দুবার করে সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ করা।”
প্রমথ বলল, “ব্রেকারটাতো ডিফেক্টিভ হতে পারে।”
“তা পারে অবশ্য। তবে আরেকটা কারণও রয়েছে আমার চিন্তার। আমার ধারণা বাবা কোনও একটা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন।”
“কিরকম ঝামেলা স্যার ?”
“তা বলতে পারবো না। তবে ওঁকে একটু বিমর্ষ দেখতাম। দুয়েকবার প্রশ্ন করেছি। কিন্তু সন্তোষজনক কোনও উত্তর পাই নি। আম্মার সঙ্গেও একটা দূরত্ব লক্ষ্য করেছি। এমনকি জামালচাচার সঙ্গেও খিটমিট করতেন। ওঁর মৃত্যুর পর জামালচাচার কাছে শুনেছি যে, ব্যবসাতে অনেক গণ্ডগোল চলছিল, তাই ওঁর মনটা ভালো ছিল না। জামালচাচা নিজেও বাবার মৃত্যুতে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ব্যবসার ওঁর নিজের অংশটা জামালচাচা বিক্রি করে দেন। একটু অর্থকষ্টের মধ্যেও পড়েছিলেন।”
“কেন জানেন স্যার ?
ব্যবসার দেনাটেনাই হবে নিশ্চয়। বাবার ব্যবসাতে আমার নিজের কোনও আগ্রহ ছিল না। আমি বাবাকে বলেছিলাম যে, ওতে আমি নিজেকে জড়াবো না। তাই জামালচাচা যখন এসে আমাকে আমার অংশটা বুঝে নিতে বলেন, আমি কোনও উৎসাহ দেখাই নি। তাতে উনি একটু ব্যথিতই হয়েছিলেন।”
“আপনার বাবার অবর্তমানে আপনাদের তরফ থেকে কোম্পানিটা দেখভাল কে করছেন?”
“আম্মা আর আমি জামালচাচাকে অনুরোধ করেছি সেটা করতে, আর তারজন্য পারিশ্রমিক নিতে।”
“আপনার বাবার কোনো উইল ছিল স্যার ?”
“যদ্দুর জানি, না। বাবা মাঝে মাঝে উইলের প্রসঙ্গ তুলতেন, কিন্তু আমি ওঁকে বলে দিয়েছিলাম যে ওঁর সম্পত্তি আমি চাই না। আমি নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াবো। আমার ঐরকম মনোভাব দেখেই হয়তো ও নিয়ে আর এগোন নি।”
“কিন্তু স্যার, উইলতো শুধু আপনার জন্য নয়, আপনার আম্মার জন্যেও।”
“তা ঠিক।” মামুদ একটু লজ্জিত হল। “কিন্তু জামালচাচা আমার মনোভাব জানেন। আমাদের বাড়ি নিয়ে আম্মার একটু দুশ্চিন্তা ছিল – জামালচাচাই কথাপ্রসঙ্গে আমাকে বলেছিলেন। আমি ওঁকে কাগজপত্র তৈরি করতে বলেছি যাতে আম্মার নামে বাড়িটা হয়।”
কথাটা শুনে আমার খটকা লাগলো। ছেলের সঙ্গে বাড়ির ভাগাভাগি নিয়ে চিন্তা – তাহলে কি আম্মা মামুদের সৎমা? একেনবাবুর ভুরুটাও একটু কুঁচকোলো। কিন্তু একেনবাবু তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন না। জিজ্ঞেস করলেন, “দ্বিতীয়বার যখন সার্কিট ব্রেকার অন করতে গেলেন স্যার, তখন কাউকে দেখেছিলেন?”
“আমি যখন বাড়িতে ঢুকছিলাম, তখন মিস্টার খানকে দেখেছিলাম দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছেন। আমাকে দেখে বললেন, কি আবার আলো নিভে গেল নাকি?
আমি বললাম, হ্যাঁ, এই এক্ষুণি। কিন্তু আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে উনি ঝড়ের বেগে টেনিস কোর্টের দিকে চলে গেলেন।”
“একটু স্ট্রেঞ্জ স্যার, তাই না?”
“উনি একটু অদ্ভুত ধরণেরই লোক।”
“কি করেন উনি?”
“মিস্টার খানকে আমি ভালো চিনি না। শুনেছি ওঁর অনেক পলিটিক্যাল কানেকশন আছে।”
“আপনার বাবার বন্ধু ?”
“না, বাবা ওঁকে পছন্দ করতেন না। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক ওঁকে ঘাঁটাতে চাইতেন না। শুনেছি বাবার ফ্যাক্টরিতে একবার প্রচণ্ড লেবার ট্রাবল হয়েছিল – যাঁর পেছনে উনি ছিলেন। পরে অবশ্য মিটমাট হয়। আমার ধারণা তার জন্য বাবাকে বেশ ভালো অঙ্কের টাকা দিতে হয়েছিল মিস্টার খানকে। সেইজন্য জামালচাচা সব সময়ে বাবাকে বলতেন বাবার সব পার্টিতে উনি যেন নিমন্ত্রিত হন এবং ওঁকে যাতে বিশেষ সমাদর করা হয়। ভালো না করতে পারলেও খারাপ করতে উনি নাকি ওস্তাদ।”
“ভেরি ইন্টারেস্টিং স্যার। মিস্টার খান ছাড়া, দ্বিতীয়বার আর কাউকে দেখেছিলেন?”
“রহিম মালী, আয়েষার যে বাবা – তাকে দেখেছিলাম সিঁড়িঘরে। আয়েষার খোঁজে এসেছিল।”
“আয়েষাকে দেখেছিলেন?”
“না।”
“সাইডের দরজাটা খোলা ছিল। সেখান দিয়েই হয়তো বেরিয়ে গিয়েছিল। আমি রহিমকে একটু বকলামও সাইডের দরজাটা বন্ধ করে না রাখার জন্য। সাধারণত: ওটা রাত্রে ভেতর থেকে বন্ধ থাকে। রহিম অবশ্য বলল যে, ও দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে বাড়িতে গেছে। তবে আমাদের বাড়িতে এ ব্যাপারে কোনও ডিসিপ্লিন নেই – যে যার খুশী যেদিক দিয়ে ইচ্ছে বেরিয়ে যায়। বাড়িতে দিনরাত্রি বাবার এক নার্স থাকে, আম্মারও একজন হেল্পার আছে। এছাড়া রাঁধুনি, দুজন কাজের লোক, মালী – তারা কখন কোথা দিয়ে বেরোচ্ছে না বেরোচ্ছে – তার কোনও ঠিক নেই।”
“আই সি। আপনাদের বাড়ির মালী বা কাজের লোকরা থাকে কোথায়?”
“ওদের থাকার জায়গাগুলো আমাদের কম্পাউণ্ডের পেছনে। তবে দিন আর রাত্রির দুজন নার্স বাইরে থেকে আসে।”
“তাঁদের কেউ কি পার্টিতে ছিলেন?”
“না, বাবা বা আম্মা বাড়ির কাজের লোকদের পার্টিতে থাকা পছন্দ করতেন না।”
“আচ্ছা, আপনার বাবার মৃত্যুটা যদি সত্যই স্বাভাবিক না হয়, তাহলে কাকে আপনার সন্দেহ হয়?”
“এইবার আমায় মুশকিলে ফেললেন। তেমন ভাবে কাউকেই সন্দেহ হয় না। তাছাড়া পুলিশ সন্দেহের কিছু দেখে নি। তবে আগেই বলেছি বাবার চিঠিটা আমাকে বিব্রত করেছে।”
“চিঠিটা স্যার, আপনার কাছে আছে?”
“হ্যাঁ, এই দেখুন।”
“পড়তে পারি স্যার ?”
“নিশ্চয়, সেইজন্যেইতো দিলাম।”

ছোট্ট চিঠি – কথাগুলো হুবহু আমার মনে নেই। তবে মূল বক্তব্য হল, মাসুদ সাহেব আশঙ্কা করছেন যে, হঠাৎই ওঁর একদিন মৃত্যু হবে। তাতে ওঁর দুঃখ নেই, কারণ বাঁচার ইচ্ছেও ওঁর ফুরিয়েছে। যাইহোক, মামুদের নামে যেসব শেয়ার উনি করিয়েছিলেন আর ওঁদের জয়েন্ট অ্যাকাউণ্টের পাশবই আনোয়ারের কাছে রেখে দিয়ে যাচ্ছেন। বাবার স্মৃতির কথা স্মরণ করে এগুলো যেন মামুদ গ্রহণ করে। শেয়ারগুলো ক্যাশ করতে চাইলে আনোয়ার এব্যাপারে মামুদকে সবরকমের সাহায্য করবেন। আরও কিছু কথা – যেগুলো ঠিক মনে নেই।

চিঠিটা পড়ে একেনবাবু বললেন, “একটু পাজলিং স্যার, তাই না? তবে কিনা হঠাৎ করে মৃত্যু – খুন না হয়ে হার্ট অ্যাটাকেওতো হতে পারে।”
মামুদ মাথা নাড়ল। “কিন্তু বাবা এইভাবে মৃত্যু চিন্তা আগে কখনও করেন নি। তাই আমার কাছে খুবই অস্বাভাবিক লেগেছে।”
“আই সি। ভালোকথা স্যার, পার্টির কোনও ছবি আছে?”
মামুদ কথাটার অর্থ বুঝল না। জিজ্ঞেস করল, “কার কথা বলছেন?”
“বলছি স্যার, আপনার বাবার সেই পার্টির সময়ে কেউ ছবি তুলছিলেন?”
“আমিই তুলে-ছিলাম কয়েকটা আমার ক্যামেরায়।”
“সেগুলো আছে আপনার কাছে?”
“হ্যাঁ। অনেকগুলো ছবির সিডি আমি নিয়ে এসেছি। সেখানে পার্টির ছবি নিশ্চয় কয়েকটা আছে।”
“নিয়ে আসুন না স্যার, একটু দেখি।”
“আমাকে একটু খুঁজতে হবে।”
“আমরাও আছি স্যার, আপনিও আছেন। যখন পাবেন স্যার, নিয়ে আসুন স্যার। আর বাড়ির ছবিগুলোও।”
“বেশ, কিন্তু আপনার কি মনে হয় – যা শুনলেন এখন পর্যন্ত।”
“ফ্র্যাঙ্কলি স্যার, আই হ্যাভ নো ক্লু।”