গাড়ি চলেছে। সুজিতের চোখ বুজে এসেছিল। সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুমন্ত যেন সে মানুষের কথা শুনতে পাচ্ছিল। মেয়ে এবং পুরুষের গলার অস্পষ্ট অস্ফুট কথাবার্তা। ওর ঘুমন্ত মুখের ভুরু একটু কোঁচকানো, চোখের পাতা কেঁপে কেঁপে উঠল। ঠিক সে সময়েই ওর কানে তীরের মতো তীব্র চাপা গলা এসে ঢুকল, আপনি চোখ বুজে থাকলেও, সংসারের সবাই চোখ বুজে নেই। একটু দয়া করে চোখ মেলে চারদিকে তাকিয়ে দেখুন তা হলেই বুঝতে পারবেন।
সুজিতের চোখ খুলে গেল। দু চোখে বিস্ময়, চোখের সামনে রেলগাড়ির ছাদ। ওকেই কিছু বলছে নাকি? সে কোথায়? সে কি স্বপ্ন দেখছিল?
পরমুহূর্তেই পুরুষের গম্ভীর গলা তার কানে এল। তোমার কি ধারণা, আমি বাইরের জগতের দিকে চোখ বুজে আছি?
সুজিতের মুখে কুটি-বিস্ময় ফুটে উঠল। কণ্ঠস্বর যেদিক থেকে এল, আড়চোখে সেদিকে দেখবার চেষ্টা করল। যদিও ঘাড় ফেরাল না। সবেমাত্র তার চোখে মিঃ দাশের মুখটি ভেসে উঠেছিল, সেই মুহূর্তেই আবার মেয়ে-গলা শোনা গেল, আমার ধারণা দিয়ে আপনার কী হবে। আপনি নিজেই এক বার ভেবে দেখুন না। সমাজে দুর্নামের দায় আপনি সব আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছেন। আপনার দায় নেই? চার বছর ধরে কলকাতার লোকে যখন দুর্নাম রটনা করছিল, আপনি কতটুকু প্রতিবাদ করেছিলেন?
মিঃ দাশের গলায়ও চাপা উত্তেজনা, কার কাছে প্রতিবাদ করব?
সুনীতা–আপনারই বন্ধুবান্ধবের কাছে, আপনাদের কলকাতার হাই সোসাইটির কাছে। ওই সব বহুরূপী সংদের মুখের সামনে আপনি কখনও প্রতিবাদ করে বোঝাতে চেয়েছেন, আপনার আমার সম্পর্ক কী। আপনি তখন ও-রকম একটা গোবেচারা ভাব নিয়ে চুপ করে থাকতেন কেন? যখন দুর্নাম পাকাপাকি রটে গেল, তখন আপনি তাড়াতাড়ি আমাকে মেয়েদের কোনও হোস্টেলে বা বোর্ডিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলেন।
মিঃ দাশ–এ সব তোমার নিজের ধারণা।
সুনীতা–আমার নিজের ধারণা বলেই বুঝি কলকাতার লোকেরা ভাবছে একটা কুমারী মেয়ের সঙ্গে আপনি অবৈধ সম্পর্ক পাতিয়ে বসে আছেন?
মিঃ দাশ–কিন্তু তুমি জান, আমাদের কোনও অবৈধ সম্পর্কই নেই।
সুনীতা–তবু সেটাই আপনাদের সমাজের বিশ্বাস। তাদের বিশ্বাস, আমি আপনার একটা একটা পোষা
উত্তেজনায় কথা আটকে যায় সুনীতার। সুজিতের মাথার ওপরে দুটো আলোই নেভানো। সে তার বড় বড় চোখের কোণ দিয়ে কৌতূহলিত হয়ে দেখল, সুনীতার অপরূপ মুখখানি রাগে এবং অপমানে রক্তাভ, নাসারন্ধ্র স্ফীত।
মিঃ দাশ বলে উঠলেন, সে জন্যে দায়ি তোমারই চালচলন।
সুনীতা–আমার চালচলন?
মিঃ দাশ–নয়? শিবেন রায়, অরূপ দত্ত, কুবের সিংহ, কলকাতার সব নামকরা বাড়ির বাজে ছেলেদের সঙ্গে তুমি দিনে-দুপুরে ফ্লার্ট করে বেড়াচ্ছ, ড্যান্স-ডিনার পার্টিতে যাচ্ছ নাচতে নাচতে, তোমাকে ঘিরে ধরে সবাই প্রেম নিবেদন করছে, আর তুমি মক্ষীরানির মতো…।
সুনীতার বাঁকা ঠোঁটে তীক্ষ্ণ হাসি দেখা দিল। বলে উঠল, জেলাস?
মিঃ দাশ উত্তেজিত অপমানে বলে উঠলেন, যা মুখে আসে তাই বোলো না।
সুনীতা খিলখিল করে হেসে উঠল। হাসিতে তার সর্বাঙ্গ কাঁপছিল। সুজিত যেন কেমন বিভ্রান্ত বিস্ময়, কিছুটা উৎকণ্ঠায় ঢোঁক গিলতে লাগল।
হাসি থামিয়ে সুনীতা বলল, কিন্তু যা মুখে আসছে তা আপনি বলছেন। এই সব যা বলছেন, ফ্লার্ট, ড্যান্স-ডিনার, প্রেম নিবেদন, মক্ষীরানি, এ সব কবে থেকে?
বলতে বলতে হাসি অদৃশ্য হয় সুনীতার মুখ থেকে। তীব্র উত্তেজনা ফুটে ওঠে আবার। সে বলে, আপনি কি আমাকে সে পথে ঠেলে দেননি? আমার বাবা মারা যাবার সময় আপনাকে তার ছোট ভাই মনে করেই আপনার হাতে আমাকে সঁপে দিয়ে গেছিলেন, আপনিও আমার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। যখন আমাকে আপনার চা-বাগান, শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় নিয়ে এলেন, তখন কি আমি এরকম ছিলাম? আপনাদের অরূপ দত্ত, কুবের সিংহদের কি আমি চিনতাম?
একটু থামতেই মিঃ দাশ কিছু বলে উঠতে চাইলেন। কিন্তু সুনীতা সে সুযোগ দিল না। সে আরও তীব্র উচ্চস্বরে বলে উঠল হাঁ, আপনি যা বলছেন, আজ আমি তাই, আমি তাই। কিন্তু কবে থেকে? যখন দেখেছি, অকারণ চারদিকে আমার দুর্নামে কান পাতা দায়। আমাকে সবাই বিদ্রূপ করছে, অপমান করছে নোংরা ভাবছে, আপনি যার কোনও প্রতিকার করেননি। আর যখন সবাই ভাবছে, আমি একটা খারাপ মেয়ে, ঠিক তখনই আপনাদের এই উঁচু সমাজকে আমি বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছি। সে সমাজ এখন আমার এই পায়ে পায়ে ঘুরছে। …সুনীতা এমনভাবে শরীরকে দোলা দিয়ে, তার রঞ্জিত-নখ একটি সুন্দর পায়ের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, মনে হল সে যেন তার রূপ-যৌবনকেই দেখাচ্ছে, যা সত্যি দেখবার মতোই। তার রূপ-যৌবন সবই যেন তখন আগুনের শিখার মতো ঝলকাচ্ছিল। তার কণ্ঠস্বরে উত্তেজনা থাকলেও, একটা রুদ্ধ আবেগে চেপে এল।
মিঃ দাশ বলে উঠলেন, আস্তে আস্তে কথা বলো।
সে কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করে সুনীতা বলেই চলল, আমি তো এই ছোটনাগপুরের পাহাড়ে জঙ্গলে একলা বেড়াতে এসেছিলাম, তবু আপনি যে কেন আমার পিছন পিছন ছুটে ফিরিয়ে নিতে এসেছেন, তাও জানি। আপনি বিশ্বম্ভর রায়ের মেয়েকে বিয়ে করবেন, আর সেই মেয়ের সামনে আপনি আমাকে নিয়ে দাঁড় করাতে চান, আমাকে দিয়ে বলিয়ে নিতে চান, আপনার সঙ্গে আমার কোনও অবৈধ সম্পর্ক সত্যি কিছু নেই।
সুনীতার কথা শেষ হবার আগেই মিঃ দাশ বলে ওঠেন, আস্তে আস্তে কথা বলো সুনীতা, ভুলে যেয়ো না, এ কামরায় আর একজন লোক আছে।
সুনীতা হঠাৎ একটু থমকে, চকিতে একবার সুজিতের দিকে লক্ষ করে বলল, থাকলেও তিনি ঘুমোচ্ছেন।
তৎক্ষণাৎ সুজিতের মনে হল না ঘুমিয়ে ঘুমের ভান করে থাকাটা সুনীতাকে ঠকানো হচ্ছে। ও তাড়াতাড়ি উঠে বসে বলে উঠল, না না, মানে, আমি ঠিক ঘুমোচ্ছি না।
সুনীতা ও মিঃ দাশ দুজনেই স্তব্ধ বিস্ময়ে সুজিতের দিকে ফিরে তাকাল। হঠাৎ কেউ কোনও কথা বলতে পারল না।
সুজিত সংকুচিত লজ্জায় কয়েক বার ঢোঁক গিলল, শার্টের কলার ঠিক গাধার কানের মতো কেঁপে কেঁপে উঠল। মাথা নিচু করে বলল, খানিকক্ষণ আগেই আমার ঘুম ভেঙে গেছে। মানে, আমার শরীরটা–না, মাথাটা তেমন ইয়ে নয় তো, গোলমাল হলে একদম ঘুমোতে পারি না।
মিঃ দাশ বলে উঠলেন, আপনি কি কোনও স্বাস্থ্য নিবাস থেকে ফিরছেন?
সুজিত বলল, আজ্ঞে না, আমি আসছি নবযুগ উন্মাদ আশ্রম ও মানসিক চিকিৎসালয় থেকে।
মিঃ দাশ যেন আতঙ্কে শিউরে উঠে বললেন, বাই জোভ!
তারপর সুনীতার দিকে তাকিয়ে, চাপা শঙ্কিত গলায় বললেন, ম্যাড, হি ইজ ম্যাড! পাগলাগারদ থেকে আসছে। আমার আগেই যেন কেমন সন্দেহ হয়েছিল, একটা কিছু গোলমাল আছে।
সুনীতা কিন্তু বিস্মিত তীক্ষ্ণ চোখে সুজিতের দিকেই তাকিয়ে ছিল। সুজিত সুনীতার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। তারপর মিঃ দাশের দিকে ফিরে বলল, এখন আমি সুস্থ আছি। সেই জন্যেই আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মিঃ দাশ প্রায় তোতলাতে তোতলাতে বললেন, সুস্থ? সুস্থ মানেটা কী, আপনার…আপনার সার্টিফিকেট আছে, আই মিন, ফিট সার্টিফিকেট?
সুজিত চোখ বড় বড় করে বলল, আজ্ঞে না তো!
যেন একটা অপরাধ করে ফেলেছে, এমন একটা ভাব তার। মিঃ দাশ আরও শঙ্কিত হয়ে চারদিকে এক বার অসহায়ের মতো তাকালেন। চারদিকে দরজা-জানালা বন্ধ, গাড়ি বেগে ছুটে চলেছে। সুনীতা সুজিতের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে ছিল।
কিন্তু মিঃ দাশ বিড়বিড় করে বলে উঠলেন, কী সর্বনাশ, একটা পাগলের সঙ্গে…কামড়েই দেবে, না কি একটা…।
সুজিত নেমে আসবার উদ্যোগ করল। মিঃ দাশ প্রায় চিৎকার করে উঠলেন, কোথায় আসছেন আপনি?
সুজিত অবাক হয়ে থমকে গেল। নীচের দিকে দেখিয়ে বলল, নীচে।
-কেন?
হাত দিয়ে বাথরুমের দরজার দিকে দেখাল, বলল, যাব। মানে, চোখেমুখে একটু জল না দিলে, শরীরটা যেন কেমন…।
সুজিত নেমে এল। মিঃ দাশ প্রায় আক্রমণের আশঙ্কাতেই যেন শক্ত হয়ে বসে আছেন। সুজিত বুঝতে পারছে, মিঃ দাশ লোকটি তাকে পাগল ভেবে ভয় পাচ্ছে। সে মনে মনে দুঃখিত ও বিব্রত বোধ করছে। ভাবছে, সুনীতাও হয়তো তাই ভাবছে। অথচ সুনীতার কথাবার্তা শুনে, সুনীতাকে দেখে, তার মনটা যেন কেমন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। সুনীতার এই রূপ, বা অভিজাত পোশাক, চালচলন, একটা দুর্বিনীত ভাবভঙ্গির মধ্যেও সে যেন একটি অসহায়, চারদিকে নানান কুটিল আক্রমণে ভীত দুঃখী মেয়েকে আবিষ্কার করেছে। এত ঐশ্বর্যের মধ্যেও সে যেন একটি ব্যাধতাড়িতা হরিণীকে দেখতে পাচ্ছে সুনীতার মধ্যে। এই ঝলকের মধ্যে, অপমানে-মুখ-গুঁজে-থাকা একটা মেয়েই যেন তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। এবং নিজের এই অসহায়তা, ভয়, অপমানকে প্রকাশ হতে না দেবার জন্যেই যেন তার ওপরে এই দুর্বিনয়ের তীব্রতা, নিজের অস্তিত্বকে অস্বাভাবিক রূপে প্রকাশের কারণ। কেন যে সুজিতের এরকম মনে হচ্ছে, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই তার কাছে। সে বুঝতে পারছে, সুনীতার জন্যে ইতিমধ্যেই তার মনে একটা সমবেদনার সুর ধ্বনিত হয়ে উঠছে, সেই সঙ্গেই একটা কৌতূহল ও আকর্ষণও অনুভব করছে। কিন্তু নিজেকে সহজে প্রকাশ করা যায় না।
ওপরের বাঙ্ক থেকে নেমে সুজিত এক মুহূর্ত অন্য দিকে ফিরে একটু যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে থাকে, এবং আস্তে আস্তে ফিরে সুনীতার দিকে এক বার তাকায়। সুনীতার ঠোঁটের কোণ দুটি টেপা, সুজিতের চোখ পড়তে–জোড়া এক বার কুঁকড়ে লতিয়ে ওঠে, এবং চকিতে একটা যেন হাসির ঝিলিক হেনে যায়। সুজিতের চোখে একটা বিষণ্ণতার আভাস, হঠাৎ একটি নিশ্বাস পড়ে তার। সুনীতার ঠোঁট ফাঁক হয়ে সহসা তার ঝকঝকে দাঁতের সার দেখা যায়, সে-ও যেন একটু বিমূঢ় হয়ে ওঠে।
সুজিত ল্যাভাটরির দিকে এগিয়ে যায়, এবং মিঃ দাশের পাশ ঘেঁষেই তাকে যেতে হয়। মিঃ দাশ তাঁর সন্দিগ্ধ শঙ্কিত চোখ এক বারও ফেরাতে পারেন না সুজিতের দিক থেকে। পাশ দিয়ে যাবার সময় তাঁর প্রায় নিশ্বাস বন্ধই হয়ে আসে। সুনীতা মিঃ দাশকে দেখছিল।
সুজিত ল্যাভাটরিতে ঢুকে যাবার পর, সুনীতা হঠাৎ খিলখিল করে হেসে উঠল। মিঃ দাশ ফিরে তাকিয়ে বিস্মিত গলায় বললেন, তুমি হাসছ?
সুনীতার হাসি হঠাৎ বিদ্রুপে বেঁকে ওঠে। বলে, হাসব না তো কী করব বলুন? একজন অত্যন্ত নিরীহ ভাল মানুষকে দেখে আপনি যদি
–হোয়াট ডু ইউ মিন! নিরীহ ভালমানুষ?
বিদ্রুপের ভঙ্গিতেই, ঈষৎ কাঁধ ঝাঁকিয়ে, নিঃশব্দে হেসে সুনীতা বলল, আমার তো তাই মনে হচ্ছে। নিরীহ, সরল আর প্রায় শিশুর মতো মিষ্টি। ওর মতো লোকের সঙ্গে আমি বোধ হয় সারারাত একলা ট্রাভেল করতে পারি।
মিঃ দাশের চোখ দুটি বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে ওঠে। সুনীতা ল্যাভাটরির বন্ধ দরজার দিকে ফিরে তাকায়।
.
গাড়ি হাওড়া স্টেশনে ঢুকছে। লোকজনের ভিড়। কুলিদের ছুটোছুটি। মিঃ দাশ মাথায় টুপি, হাতে ছড়ি, ঠোঁটে চুরুট, চোখে গগলস, ট্রেনের দরজা জুড়ে দাঁড়িয়েছেন। উদ্দেশ্য কুলিকে ডাকা। স্টেশনের ঘড়িতে বেলা আটটা।
কামরার মধ্যে সুজিত কোটের বোম বন্ধ করে। জুতোটা পায়ে দেয়। তাকে অদ্ভুত দেখাচ্ছে। সুনীতা কামরার দেয়ালে আয়নায় নিজেকে দেখে নিচ্ছে, শাড়িটা ঠিক করে নিচ্ছে, চুলটা বিন্যস্ত করছে। ব্যাগ থেকে লিপস্টিকটি বের করে চট করে এক বার বুলিয়ে নিয়ে, ঈষৎ জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে ঠোঁট দুটি ফাঁক করতেই আয়নায় সুজিতকে চোখে পড়ে যায়। সুজিত তাকেই দেখছিল।
সুনীতা হঠাৎ ফিরে দাঁড়ায়। পুঁটলি বগলে সুজিত একটু হাসে, নমস্কারের ভঙ্গি করে। বলে, চলি।
সুনীতা যেন এক মুহূর্ত কেমন হয়ে যায় সুজিতের চোখের দিকে তাকিয়ে। কী যেন সে বলতে চাইল, কিন্তু কথা ঠিক ফুটল না।
সুজিত হেসে, গম্ভীর স্বরে হঠাৎ বলে উঠল, আপনাকে, জানেন, আপনাকে যেন কেমন অসহায় বলে মনে হয়।
সুনীতা চমকে ওঠে। বলে ওঠে, অসহায়?
সুজিত করুণ গলায় বলে, কেমন যেন দুঃখী–
কথাটা শেষ হবার আগেই গাড়িটা দাঁড়ায়, ঝাঁকুনি লাগে। ঝাঁকুনিতে সুজিত দরজার দিকে সরে গিয়ে টাল সামলায়। সুনীতা আয়নার ওপর হাত দিয়ে নিজের পতনকে বাঁচায়, এবং মনে করে সুজিত নেমে চলে যাচ্ছে। সে ডেকে ওঠে, শুনুন?
সুজিত ফিরে তাকায়।
সুনীতা বলে, কলকাতায় আপনার বাড়ি কোথায়?
–আমার বাড়ি নেই তো?
–তবে কোথায় যাচ্ছেন?
–চেনা লোক খুঁজে নিতে যাচ্ছি?
তার কথা শেষ হবার আগেই মিঃ দাশের হুংকার শোনা যায়, এ্যাই কোলি! হুড়মুড় করে কুলিরা ঢুকে পড়ে। সুজিত আড়ালে পড়ে যায়। সুনীতা আর তাকে দেখতে পেল না।