২. খাদ্য প্রস্তুত

রান্নার বিভিন্ন পদ্ধতি

সিদ্ধ : শাক-সবজি, ডাল, ভাত, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাদ্য পানি বা অন্য তরল পদার্থে ফুটিয়ে সিদ্ধ করে রান্না করা হয়। এ্‌টাই রান্নার সহজ এবং সাধারণ পদ্ধতি। দৈনন্দিন রান্নায় এই পদ্ধতি ব্যবহার হয়।

ভাপে সিদ্ধ :  ফুটানো পানি থেকে যে বাষ্প উঠে, সেই বাষ্পের উত্তাপে সিদ্ধ করাকে ভাপে সিদ্ধ করা বলে। ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, পুডিং, কাঁচা নুডলস এভাবে ভাপে সিদ্ধ করে নেয়া হয়।

ভাপে সিদ্ধ করার জন্য অর্ধেক হাঁড়ি পানি নিয়ে হাঁড়ির মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধতে হবে। হাঁড়ির পানি ফুটে বাষ্প উঠতে আরম্ভ করলে কাপড়ের উপর খাবার দিয়ে ঢাকনা দিতে হবে। খাবার সিদ্ধ হলে পরে ঢাকনা খুলে খাবার তুলে নিতে হবে। হাঁড়ির মুখে কাপড়ের পরিবর্তে ঝঁঝরি বসিয়ে ভাপে সিদ্ধ করা যায়। ভাপা পিঠার জন্য বিশেষ রকমের মাটির হাঁড়ি পাওয়া যায়। গ্রামাঞ্চলে বড় হাঁড়িতে অল্প পানি নিয়ে হাঁড়ি খড় দিয়ে ভরা হয়। পানি ফুটলে খড়ের ভিতর দিয়ে বাষ্প উঠে। পাতা পিঠা খড়ের উপর বিছিয়ে দিলে বাষ্পের ভাপে সিদ্ধ হয়্‌। ভাপে পুডিং তৈরি করার জন্য এ্যালিউমিনিয়ামের সসপ্যানে পানি ফুটিয়ে পুডিং-এর মোলড বসানো হয়। মোলডের এক চতুর্থাংশ পানির নীচে থাকে। সসপ্যান পানি বেশি হলে তা ফুটার সময় মোলডের ভিতরে ঢুকতে পারে। যে পাত্রে পুডিং দেয়া হয় সে পাত্রের মাপ মতো ঢাকনা দিয়ে ঢাকলে পুডিং ভাল হবে। পুডিং-এর পাত্র না ঢেকে সসপ্যান ঢাকনা দিলে পুডিং-এ পানি পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

ভাজাডুবো তেলে ভাজা :  খাবার অল্প তেলে এবং ডুবো তেলে দু’ভাবেই ভাজা হয়। মাছ, সবজি, পরোটা ইত্যাদি অল্প তেলে ভাজা যায়। ডুবো তেলে ভাজার জন্য কড়াইয়ে একবারেই বেশি তেল দিতে হবে। ভাজা শেষ হলে তেল ছেঁকে রান্নার জন্য রাখা যায়। ডুবো তেলে ভাজার জন্য তেল গরম করে 180º সেঃ তাপে আনতে হবে। তেলের তাপ পরীক্ষা করার জন্য পাউরুটির কুচি বা শুকনা শাকপাতা তেলে ছাড়লে চারদিকে বুদবুদ উঠলে বুঝতে হবে ভাজার জন্য তাপ ঠিক আছে। তেলের তাপ সব্‌ সময় এক রকম রাখতে হবে। কম বা বেশি তাপ দুটোতেই ভাজা ভাল হয় না। লুচি ডুবো তেলে অল্প ভাজতে হয়। কিন্তু ডালপুরী, সিঙ্গারা, সমুসা, পটেটো চিপস গরম তেলে বেশ কিছুক্ষণ না ভাজলে পরে নেতিয়ে যায়। চপ, কাটলেট টোস্টের গুঁড়ায় গড়িয়ে নিয়ে ডুবো তেলে ভাজতে হয়। প্রন টেমপুরা, ফুলকো ইলিশ ইত্যাদি গোলানো ময়দায় ডুবিয়ে ভাজা হয়। ভাজার জন্য তেল খুব বেশি গরম করলে তেল থেকে ধোঁয়া বের হয়। এ-তেলে খাবার ভাজলে সে খাবার দেরিতে হজম হয়। তাই তেলেভাজা খাবারকে গুরুপাক খাবার বলে। তেল থেকে যাতে ধোঁয়া না উঠে সেজন্য ভাজার সময় তেল 180º সেঃ তাপে রাখা দরকার। এতে ভাজাও সুন্দর হয়।

সেকাটালা : তেল, পানি এসব তরল উপকরণ ছাড়া শুধু তাওয়ায় এবং খোলায় খাবার সেকে বা টেলে নেয়া যায়। রুটি সেকা হয়। জিরা, ধনে, শুটকী খোলায় টালা হয়। কাঁচা মাছ টেলে ভর্তা করা যায়। আবার মাটির পাতিলে বালু গরম করে তাতে মুড়ি ও খই টেলে ভাজা হয়।

ঝলসানপোড়ান : খাবার সরাসরি আগুনের কাছে এনে তাপ দেয়াকে ঝলসান বা পোড়ান বলে। আলু, বেগুন, মিষ্টি আলু আগুনে পুড়িয়ে নরম করা হয়। কাঁচা আম, কাঁচা তেঁতুল, জলপাই, বেল ইত্যাদি কাঠকয়লার আগুনে পোড়ান যায়। শিক কাবাব, বোটি কাবাব, চিকেন টেক্‌কা ইত্যাদি কাঠ কয়লা অথবা বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাসের আগুনে ঝলসান পদ্ধতিতে রান্না হয়ে থাকে।

বেকিং : তন্দুর এবং ওভেনে খাবার বেক করা হয়। খাবার ওভেনে দেয়ার আগে ওভেন গরম করে নিতে হবে। তন্দুর বা ওভেনের মধ্যে খাবারের উপরে, নীচে এবং চারদিকে সমান তাপ পড়ে। পাউরুটি, কেক, বিস্কুট, পাই, পিজজা, পেস্ট্রি ওভেনে বেক করা হয়। মাছ, মাংস, সবজি পুডিং, কাচ্চি বিরিয়ানী ইত্যাদিও ওভেনে রান্না করা যায়। ওভেনে মৃদু তাপে পোলাও জর্দা রেজালা দমে দেয়া যায়। বেকিং পদ্ধতিতে রান্নায় পরিশ্রম কম হয়।

সিদ্ধ, ভাজা, বেকিং, ঝলসানো রান্নায় এসব মূল পদ্ধতিতে কতক কৌশল প্রয়োগ করে খাবারের ঘ্রাণ, স্বাদ, রঙ ও জমিনে বৈচিত্র আনা যায়। এই পদ্ধতিগুলো–

স্টুয়িং : মাছ, মাংস, সবজি অল্প কোন তরল দ্রব্য যেমন দুধ, পানি সস দিয়ে মৃদু আঁচে ঢেকে ধীরে ধীরে ফুটানো। বিফ স্টু (পৃষ্ঠা ২৩৬) এই পদ্ধতিতে রান্না হয়।

ব্রেইজিং : ঢাকনা দেয়া পাত্রে সামান্য তরল দ্রব্যের মধ্যে ধীরে ধীরে মৃদু আঁচে রান্না করা। মিটস্টক, পানি দুধ, ক্রিম, সস এসব তরল দ্রব্য ব্যবহার করা যায়। ব্রেইজিং পদ্ধতিতে সাধারণত মাংস, মাছ রান্না করা হয়। মাংস প্রথমে ময়দায় গড়িয়ে অল্প তেলে বাদামি রং করে ভেজে নিতে হবে। তারপর ঢেকে মৃদু আঁচে রাখতে হবে। মাঝে মাঝে কিছু তরল দ্রব্য দিয়ে উল্টে দিতে হবে।

প্যান ব্রয়লিং : তাওয়ায় বা ফ্রাইপ্যানে না ঢেকে রান্না করা। রান্নার সরম কোন তরল দ্রব্য দেওয়া হয় না। উদাহরণ বিফস্টেক, হ্যামবারগার স্টেক।

পোচিং : খাবারের আকার নষ্ট না করে অল্প পরিমাণ গরম পানি, দুধ কিংবা তেলের মধ্যে ভাজা বা রান্না করা। উদাহরণ ডিম পোচ।

গ্রীলিং : খাবারে সরাসরি তাপ দিয়ে রান্না করা। শুধুমাত্র উপর থেকে তাপ দিয়ে বা শুধু নীচ থেকে তাপ দিয়ে অথবা উপর নীচ দুদিক থেকে তাপ দিয়ে গ্রীল করা যায়। এই পদ্ধতিতে কম সময়ে রান্না হয়, পানি বা কোন তরল দ্রব্য দেয়া হয় না। গ্রীল করা খাবারের উপরিভাগ বাদামী রঙের ভাজা বা ঝলসানো মতো হলেও ভিতরে নরম থাকে। খাবারের উদাহরণ গ্রীল চীজ, গ্রীল চিকেন।

টোস্টিং : সরাসরি তাপ দিয়ে খাবারের বহিরাংশ বাদামী ও মচমচে করা। পাউরুটি টোস্ট করার পরে দু’পিঠ বাদামী ও মচমচে হয়।

স্ক্যালোপিং : টুকরা অথবা স্লাইস করা মাছ বা সবজির সঙ্গে দুধ কিংবা পানি বা সস মিশিয়ে স্তরে স্তরে বিস্কুটের গুঁড়া দিয়ে সাজিয়ে বেক করা। স্ক্যালোপড পটেটো এর উদাহরণ।

বারবিকিউয়িং : মাংস বা মাছে অল্প করে সস মাখিয়ে ধীরে ধীরে রোস্ট করা বা ঝলসান। খাবারের উপরিভাগ শুকিয়ে যাতে শক্ত হয়ে বা পুড়ে না যায় সেজন্য মাঝে মাঝে বিশেষভাবে তৈরি বারবাকিউ সস মাখিয়ে দিতে হবে। যেমন-বারবাকিউ চিকেন।

ক্যারামেলাইজিং : উনুনের উপরে বেশি তাপে সসপ্যান বা অন্য কোন পাত্রে চিনি গালিয়ে বাদামী রং করা। এভাবে গলানো বাদামী রঙের চিনিকে ক্যারামেল বলা হয়। সাধারণত পুডিং তৈরির আগে মোলডে চিনি ক্যারামেল করে নেয়া হয়। ক্যারামেল দিয়ে খাবারের রং গাঢ় করা যায়।

গ্ল্যাসিং : খাবার চিনির সিরার পাতলা আস্তরণ দিয়ে ঢেকে খাবারে চকচকে ভাব আনা। নানরুটি, ডিনার রোল, ডোনাটে গ্ল্যেইস করা হয়।

ডেমি গ্ল্যেইস : মাছ, মাংস রান্নার শেষে পানি শুকিয়ে গেলে বা গ্রেভি ঘন হলে তেল বের হয়ে চকচকে দেখায়। চকচকে গ্রেভীকে ডেমি গ্ল্যেইস বলা হয়।

রান্নার উপকরণ

খাবার গ্রহনযোগ্য, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর করার জন্য বহুরকম উপকরণ ব্যবহার করা হয়। নরম, শক্ত, মচমচে এবং ঝাল, মিষ্টি, নোনতা খাবার রুচি পরিবর্তন করে। এসব বিভিন্ন জমিন ও বিভিন্ন জমিন ও বিভিন্ন স্বাদের খাবার তৈরি করতে নানারকম উপকরণের প্রয়োজন হয়। মসলা দিয়ে খাবারের স্বাদ বাড়ানো যায়। তাছাড়া রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করেও ফাঁপানো হয়, ঘন করা হয়, ইচ্ছামত রং করা হয় এবং স্বাদ উন্নত করা যায়।

ঘন কারার উপকরণ 

ময়দা, বেসন এ্যারারুট, কর্‌ণফ্লাওয়ার, চালের গুড়ি, নেশেস্তা এসব দিয়ে সুপ, স্টু ইত্যাদি ঘন করা হয়। চুলা থেকে নামাবার আগে এসব উপকরণ পানিতে গুলে খাবারে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নাড়তে হবে। ফুটে ওঠার পর পরই নামিয়ে নিলে খাবার মসৃণ ও ঘন হবে।

বেসন : গম ভাঙ্গাবার মেশিনে ছোলার ডাল ভাঙ্গিয়ে গুঁড়া করে বেসন করা যায়। বেসনের ব্যবহার বহুবিধ। বেসন পানিতে গুলে দিলে ফুটে খাবার ঘন হয়।

বেগুনী, আলুচপ বেসনের গোলায় ডুবিয়ে ডুবো তেলে ভাজা হয়। বেসন দিয়ে ডালের বড়াও অনেকে করেন। বেসন কড়াহি, বেসন চিল্লা পাঞ্জাবিদের পছন্দের খাবার। ডালমুটে বেসনের তৈরি বুন্দিয়া, সেমাই মোশানো হয়।

করণফ্লাওয়ার : ভুট্টা থেকে তৈরি ময়দাকে করণফ্লাওয়ার বলে। করণফ্লাওয়ার ধবধবে সাদা এবং পিচ্ছিল। চাইনিজ রান্নায়, সুপে এবং কাস্টার্ডে ব্যবহার হয়। খাবার প্রস্ততে করণফ্লাওয়ারের পরিবর্তে এ্যারারুট, ময়দা ও নেশেস্তা ব্যবহার করা যায়।

নেশেস্তা : সুজি ৬-৭ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পাতলা কাপড়ে ছেনে নিলে যে মাড় বের হয় তাকেই নেশেস্তা বলে। গম থেকে নেশেস্তা নিতে হলে গম পানিতে ভিজিয়ে প্রত্যেক দিন পানি বদলাতে হবে। পঞ্চম দিনে গম বেটে দুধ নিতে হবে। নেশেস্তা দিয়ে কাস্টার্ড, হালুয়া, পাপড়ি তৈরি হয়।

ফাঁপাবার উপকরণ

পাউরুটি, কেক, সুফলে এসব খাবার ফাঁপাবার জন্য ঈস্ট, বেকিং পাউডার, বেকিং সোডা, এবং মেরাং ব্যবহার করা যায়।

ঈস্ট : ড্রই ঈস্ট টিনে প্যাক করে বিক্রি হয়। বিদেশে নরম ঈস্ট কেকও ব্যবহার হয়। শুকনা ইস্টের টিনের মুখ খোলার পর খুব সাবধানে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে। পাত্রে বাতাস ঢুকলে ঈস্ট নষ্ট হয়ে যায়। ঈস্টের প্যাকেটও কিনতে পাওয়া যায়। শুকনা ইস্ট ব্যবহারের আগে ৮-১০ মিনিট মৃদু গরম (43º সেঃ ) পানিতে ভিজাতে হবে। মৃদু গরম পানিতে ঈস্ট ফেনিয়ে না উঠলে সে ঈস্টে কাজ হবে না। ঈস্ট দিয়ে পাউরুটি, কেক, ডোনাট, নানরুটি ইত্যাদি তৈরি হয়।

বেকিং পাউডার : রেসিপির মাপে বেকিং পাউডার ব্যবহার না করলে খাবার ঠিক হয় না। অনেক দিনের পুরনো বেকিং পাউডার অল্প পানিতে দিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে। পানিতে খুব সুক্ষ্ম বুদবুদ উঠলে বুঝতে হবে ব্যবহারযোগ্য রয়েছে। বেকিং পাউডার দিয়ে কেক, বিস্কুট, ডোনাট, প্যানকেক, নিমকপাড়া ইত্যাদি তৈরি হয়।

বেকিং সোডা : গুড়ের বিস্কুট ও কলারকেকের রেসিপিতে বেকিং সোড়া ব্যবহার করা যায়। প্যানকেক, বিস্কুট ও বেকিং সোডা দিয়ে হয়। আধা কাপ টক দই অথবা ১/২ কাপ গুড়ের সাথে ১/৪ চা চামচ বেকিং সোডা মিশালে এক চা চামচ বেকিং পাউডারের সমান কাজ করে।

ডিম : ডিম খাবার ঘন করে, ফাঁপায় এবং খাবারের স্বাদ, গন্ধ ও রং উন্নত করে। ডিম ফেটাবার কৌশলের উপর বিভিন্ন রকম খাবার তৈরি নির্ভর করে।

হালকা ফেটানো ডিম :  ডিমের সাদা ও কুসুম ভেঙ্গে মিশাবার জন্য যতখানি প্রয়োজন শুধু ততখানি ফেটানকে হালকা ফেটানো বলে। কাস্টার্ড, পুডিং ও হালুয়ার জন্য ডিম হালকা ফেটান হয়।

ফেটানো ডিম : ডিমের সাদা অংশ জোরে ফেটলে ফেনা উঠে। ডিমের বরফি, প্যানকেক ইত্যাদির জন্য ডিম জোরে ফেটান হয়।

জমাট ফেটান : ডিমের সাদা অংশ জোরে এবং খুব তাড়াতাড়ি ফেটলে ফেনা উঠে ঘন জমাট বাঁধে। একে মেরাং (পৃষ্ঠা ১৬ ) বলে। কেকের আইসিং, মেকারুন এবং সুফলের জন্য ডিমের সাদা ঘন জমাট করে ফেটতে হয়।

অন্যান্য উপকরণ

রান্নায় ব্যবহৃত উপকরণের মধ্যে বিভিন্ন মসলা ছাড়াও দুধ, দই, তেঁতুল, নারিকেল, সস ও নানা রাসায়নিক দ্রব্য রয়েছে যা দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে নানা রকম সুস্বাদু পুষ্টিকর খাবার তৈরি করা যায়।

তরল টাটকা, ঘন, গুঁড়া ইত্যাদি নান প্রকারের দুধ, ক্রিম এবং দুধের তৈরি দই, পনির, ঘোল রান্নায় নানা ভাবে ব্যবহৃত হয়।

চর্বিবিহীন দুধ বা স্কিম মিল্ক : মাঠা বা ঘোল এই পর্যায়ের দুধ। মেশিনে ফেটে দুধের ননি তুলে নিলে যে দুধ থাকে তা স্কিম মিল্ক। গোয়ালারা হাতেই দুধ থেকে মাখন তুলে নিয়ে মাঠা তৈরি করেন।

গুঁড়া দুধ : চর্বিসহ এবং চর্বিবিহীন দু’রকম গুঁড়া দুধ পাওয়া যায়। তবে অধিকাংশ গুঁড়া দুধ চর্বিবিহীন হলেও এতে উৎকৃষ্ট প্রোটিন থাকে। গুঁড়া দুধে ভাল ছানা হয় এবং দই বসে। এক কাপ গুঁড়া দুধে ৪ কাপ পানি মিশালে তা টাটকা দুধের মতো ব্যবহার করা যায়।

ঘন দুধ : দুধ ফুটার পর ঘন ঘন নেড়ে জ্বাল দিতে হয়। ঘন হয়ে পরিমাণে অর্ধেক হলে তাকে ঘন দুধ বলে। ঘন দুধ রেফ্রিজারেটরে ঠান্ডা করে ক্রিমের পরিবর্তে ব্যবহার হতে পারে।

কনডেন্সড মিল্ক : কনডেন্সড মিল্ক চিনি দিয়ে জ্বাল দেয়া ঘন দুধ, যা টিনের কৌটায় বিক্রি হয়। পুডিং, মিঠা টুকরা এই দুধ দিয়ে সুস্বাদু হয়।

খোওয়া বা মাওয়া : দুধ ঘন করে একেবারে শুকিয়ে ফেললে মাওয়া হয়। ফুটাবার পর দুধ শুকিয়ে আসলে ঘন ঘন নাড়তে হবে। কিছু নরম থাকতে চুলা থেকে নামাতে হবে। ঘন দুধ ঠান্ডা হলে শুকিয়ে মাওয়া হবে। মাওয়া সাধারণত কারখানায় তৈরি করে। মিষ্টির দোকানে মাওয়া দিয়ে মিষ্টি তৈরি হয়।

ননি বা ক্রিম : কাঁচা দুধ মেশিনে বা হাতে ফেটে ক্রিম তোলা হয়। ক্রিম দেখতে ঘন দুধের মতো। এতে চর্বির পরিমাণ বেশি এবং পানির পরিমাণ খুব কম থাকে। ক্রিম খুব ঠান্ডা করে ফেঠলে মাখনের মতো জমে যায়। একে হুইপড ক্রিম বা ফাঁপানো ননি বলে। ক্রিম দিয়ে আইসক্রিম তৈরি হয়। আইসক্রিম, ফল, সুফলে ইত্যাদি খাবার  হুইপড ক্রিম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়।

দই : রান্নায় সাদা ও মিষ্টি দু’রকমের দই ব্যবহার হয়। সাদা দই বেশি টক হলে কিছু চিনি দিতে হবে আবার কোরমা, রেজালা রান্নায় মিষ্টি দইয়ের সঙ্গে লেবুর রস দিলে স্বাদ ভাল হবে।

পনির : কটেজ চিজ, ক্রিম চিজ এগুলো নরম পনির। ব্লু, রকফোর্ড আধাশক্ত এবং চেডার, এডাম, সুইস শক্ত পনির। ঢাকাই  পনিরও শক্ত পনিরের অন্তর্ভুক্ত। পনির সবজি কুরুনিতে ঝুরি করে রান্নার জন্য ব্যবহার করা যায়।

সস :  খাবারের স্বাদ বাড়াবার জন্য টমেটো সস, উস্টার সস, সয়াসস, অয়েস্টার সস, ফিশ সস ইত্যাদি আরও বহু রকমের সস রান্নায় ব্যবহার করা হয়।

ঊস্টার সস (Worcestershire sauce) : এই সসের স্বাদ টক। উস্টার সসের পরিবর্তে তেঁতুল পানি দেওয়া যায়। এই সস বিফ স্টেক, হ্যামবারগার স্টেক, ম্যাণ্ডারিন ফিশ এসব রান্নায় ব্যবহার হয়।

সয়াসস : সয়াসস সয়াবিন হতে তৈরি। চাইনিজ রান্নায় ব্যবহার করা হয়।

সাদা সস : মাখন, ময়দা ও দুধ মিশিয়ে তৈরি হয়। পাতলা, মধ্যম ও ঘন সাদা সসের রেসিপি অষ্টম অধ্যায়ে আছে। পাতলা সাদা সস দিয়ে সুপ হয় এবং সিদ্ধ সবজি ও মাছে মধ্যম সাস দেওয়া হয়।

টমেটো পুরি (Pure) যে কোনো সবজি সিদ্ধ করে ছেনে নিলে তাকে পিউরি বলা হয়। টমেটো পিউরি সিরকা, চিনি ও অন্যান্য মসলা দিয়ে সস করা হয়।

নারিকেলের দুধ : কুরানো ১ কাপ নারিকেল ১/২ কাপ ফুটানো পানি দিয়ে ৮-১০ মিনিট রাখতে হবে। তারপর পরিষ্কার শিলে সামান্য থেতলে ভালোভাবে নিংড়ে দুধ বের করতে হবে। একটি বড় নারিকেল থেকে এক কাপ ঘন দুধ বের করা যায়।

তেতুল : কাঁচা ও পাকা দু রকম তেঁতুলই রান্নায় ব্যবহার হয়। পাকা তেঁতুল অল্প পানিতে ভিজিয়ে ছেলে নিয়ে, এই তেঁতুলের মাড় দিয়ে আচার ও চাটনি তৈরি করা হয়। তেঁতুলের জন্য চাট, চটপটি ও ভেলপুরির স্বাদ হয় মজার।

লেমান রাইন্ড লেবুর খোসার উপরের সবুজ পাতলা আবরণ মিহি ছিন্ত্রির সবজি কুরুনিতে কুরিয়ে নিলে মিহি কুরি পড়ে। লেবুর খোসার এই সবুজ অংশকে ইংরেজিতে লেমন রাইস্ত বলে। কেক, কেক ফ্রস্টিং, বিস্কুট, কোফতা, কাবাব এসবে লেমন রাইন্ড ব্যবহার করা হয়। সবজি কুরুনিতে অরেঞ্জ রাইন্ডও নেওয়া যায়।

মিটস্টক : মাংসের হাড় বেশি পানিতে কয়েক ঘণ্টা সিদ্ধ করে ছেঁকে স্টক নেওয়া হয়। এই মিন্টস্টক সুপ এবং অন্যান্য রান্নায় ব্যবহায় করা যায়।

সিরাপ : চিনি ও পানি বিভিন্ন মাপে মিশিয়ে জ্বাল দিলে সিরাপ হয়। ১ কাপ চিনিতে ১ কাপ পানি মিশালে মধ্যম তারের সিরাপ এবং ১ কাপ চিনিতে কাপ পানি মিশালে ঘন তায়ের সিয়াপ হবে। মিষ্টি তৈরির সময় সিরায় তার সব সময় এক রকম রাখতে হবে। তাই চুলায় রান্নার সময় রসগোল্লার সিরা ঘন হয়ে আসলে পানি ছিটিয়ে দিয়ে হালকা করা হয়।

পাউরুটি, ভাত : মাছ-মাংসের কোফতা ও কাটলেটে নরম পাউরুটির কুচি বা ভাত বেটে দিলে কোফতা নরম হয়। কাটলেটের মাছের সঙ্গে সিদ্ধ আলু চটকে দেওয়া যায়। হ্যামবারগারের মাংস পাউরুটি দিয়ে মাখানো হয়।

টোষ্টের গুঁড়া : চপ, কাটলেট, মাছ ফেটানো ডিমে ডুবিয়ে টোস্টের গুড়ায় গড়িয়ে নিয়ে ডুবোতেলে ভাজা হয়। পাউরুটি টোস্ট করে খুঁড়া করা হয়। পাউরুটি টোস্ট না করে মিহিকুচি করে টোস্টের গুড়ার পরিবর্তে ব্যবহার হয়। এমনি পাউরুটির কুচিতে গড়িয়ে নিয়ে চপ, কাটলেট ভাজলে রং সুন্দর হালকা বাদামি আসে।

স্বাদ লবন মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (M. s. G.) বা আজিনোমটোর বাংলা নাম স্বাদ লবণ, একে টেস্টিং সল্টও বলে। সুপ, মাংস সবজি এসব খাবারের স্বাদ লবণ দিলে স্বাদ বেড়ে যায়। খাবারে যে পরিমাণ লবণ প্রয়োজন তার আট ভাগের এক ভাগ স্বাদ লবণ দিতে হয়। স্বাদ লবণ বেশি খাওয়া ক্ষতিকর।

কারি পাউডার : নানারকম মসলার মিশ্রণে কারি পাউডার তৈরি হয়। বিভিন্ন মসলা বিভিন্ন মাপে নিয়ে গুড়া করে মিশিয়ে কারি পাউডারের মধ্যে স্বাদ ও গন্ধের বৈচিত্ৰ্য আনা যায়। দু-তিন রকম কারি পাউডারের রেসিপি অষ্টম অধ্যায়ে দেওয়া হয়েছে। মাছ, মাংস, ডিম রান্নায় কারি পাউডার ব্যবহার হয়।

পিকেলসের মসলা : আচার, চাটনি, সস, পিকেলস এসব খাবারে নানারকম মসলা দিয়ে স্বাদ ও গন্ধ বাড়ানো হয়। হলুদ, শুকনা মরিচ, আদা, দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, ধনে, জিরা, রাধুনি, শাজিরা, গোলমরিচ, মৌরি, তেজপাতা, সরিষা এই মসলাগুলোর সংমিশ্রণ পিকেলসের মসলা নামে পরিচিত।

সিরকা : আখ, তাল, খেজুর ও জাম ইত্যাদি ফলের রস গাঁজিয়ে সিরকা তৈরি হয়। সাদা সিরকায় ৪ শতাংশ এসেটিক এসিড থাকে। সাইড ও মল্ট ভিনেগারে এসিডের মাত্রা বেশি থাকে। মল্ট ভিনেগার লাল সিরকা বলে পরিচিত। সাদা এবং মল্ট ভিনেগাআরের মিশ্রণে ওয়াইন ভিনেগার তৈরি হয়। পিকেল্‌স আমের কাশ্মিরী আচার ইত্যাদিতে সাদা সিরকা এবং ঝাল মাংস রান্নায় ও আচারে লাল সিরকা দেওয়া হয়।

আগার আগার : আগার আগার পিচ্ছিল জেলী-জেলী ভাব একপ্রকার সামুদ্রিক আগাছা, শুকাবার পরে রং সাদা ও খড়ের মত লম্বা খসখসে দেখায়। আগার আগার শুকনা খড়ের মত এবং গুঁড়া দু’রকমই কিনতে পাওয়া যায়। এটি মিষ্টি খাবার তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।

এসেন্স :  এসেন্স খাবারে সুগন্ধ আনে। জরদা, ফিরণী, সেমাই, হালুয়া, পোলাও, কোরমা এসব রান্নায় গোলাপজল, কেওড়া, জাফরাণ এর ব্যবহার বহু আগে থেকেই প্রচলিত। ভেনিলা এসেন্স ছাড়াও লেমন, পাইন এ্যাপেল, অরেঞ্জ, বেনানা স্ট্রবেরী ইত্যাদি এসেন্স আইসক্রীম, পুডিং, কাস্টার্ড, কেক, বিস্কুট, পেস্ট্রি, জ্যাম, জেলী, মার্মালেড এবং স্কোয়াসে দেয়া হয়। রেসিপির নির্দেশমতো খাবারে এসেন্স খুব সামান্য পরিমাণে দিতে হবে। দৈনন্দিন খাবারে এসেন্স ব্যবহার করা উচিত নয়।

ফুড কালার বা খাওয়ার রং :  খাবারের রং উজ্জ্বল করে উন্নত করার জন্য খাওয়ার রং দেয়া যায়। লেমন স্কোয়াস, পাইন এ্যাপেল স্কোয়াস, গ্রীণ ম্যাংগো স্কোয়াসে সাম্যান্য রং দিলেই স্কোয়াসের ফ্যাকাসে ভাব দুর হয়। কেক, পেস্ট্রি, ডেকোরেশনে বা সাজাবার কাজে খাওয়ার রঙের ব্যবহার প্রচলিত। খাবারের রং হালকা হওয়াই বাঞ্চুনীয়। আজকাল বাজারে নানা ধরণের চড়া রঙের ব্যবহার দেখা যায়। বেশি ফুড কালারের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। খাওয়ার রঙের মধ্যে লেমন, কালার, এ্যাপেল গ্রীণ, স্ট্রবেরী, এগ ইয়েলো কালার এর নাম করা যায়।

জেলাটিন : শুষ্ক চুর্ণ জেলাটিন দিয়ে জমানো ঠান্ডা খাবার তৈরি করা হয়। আনারস ছাড়া অন্য সব সবজি, ফল এবং মাছ-মাংসের সঙ্গে জেলাটিন জমানো যায়। জমাবার জন্য দ’কাপ পানিতে ১ টে.চামচ জেলাটিন প্রয়োজন। প্রথমে ১/৪ কাপ পানিতে জেলাটিন ভিজিয়ে, বাকি পানি ফুটিয়ে নিয়ে জেলাটিন গুলে রেফ্রিজারেটরে রাখলে দুই থেকে চার ঘন্টার মধ্যে জমে যাবে। জেলাটিন রেফ্রিজারেটরে জমাতে হয়। বরফে নয়। জমানো সালাদ এবং সুফলে পুডিং জেলাটিন দিয়ে তৈরি হয়।

ফুড প্রিজারভেটিভ বা খাদ্য সংরক্ষক :  খাদ্যে সংক্রামিত অনুজীব ধ্বংস বা নির্জীব করার জন্য সংরক্ষণের সময় প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ অনুযায়ী সংরক্ষক দ্রব্য ব্যবহার করতে হবে। (১) সোডিয়াম বেনজোয়েট এবং (২) পটাসিয়াম-মেটা-বাই-সালফাইট এ দুটি সংরক্ষক দ্রব্য বিধিমতে ব্যবহার করা যায়। স্কোয়াস, জ্যাম, জেলী, মার্মালেড, টমেটো সস ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য খাবার .১শতাংশ সংরক্ষক দ্রব্য দেয়ার নিয়ম, অর্থাৎ ১ কিলোগ্রাম জ্যামে এক গ্রাম সোডিয়াম বেনজোয়েট বা পটাসিয়াম-মেটা-বাই-সালফাইট দেয়া যায়। উভয় সংরক্ষক দ্রব্যই পানিতে দ্রবণীয় সাদা রঙের মিহি গুঁড়া।

মসলা ও অন্যানা উপকরণের তালিকা

আদা

এলাচ

কাবাবচিনি

কালজিরা

গোলমরিচ

জইন

জয়ত্রী

জায়ফল

জিরা

তিল

দারচিনি

ধনে

পেঁয়াজ

পোস্ত দানা

মরিচ

মেথি

মৌরি

রসুন

রাঁধুনি

লবঙ্গ

শাজিরা সরিষা

সাদা গোলমরিচ

হলুদ

হিং

তেজপাতা

কারিপাতা

ধনেপাতা

পুদিনাপাতা

মেথিশাক

রাঁধুনি পাতা

তুলসী পাতা

অয়েস্টার সস

উস্টার সস

টমেটো সস

ফিশ সস

সয়া সস

সিরকা

কেওড়া

গোলাপ জল

জাফরাণ

ভেনিলা এসেন্স

লেমন এসেন্স

পটাসিয়াম-মেটা-বাই-সালফাইট

স্ট্রবেরী এসেন্স

অরেঞ্জ এসেন্স

বেনানা এসেন্স

রাসপবেরী এসেন্স

বিস্কুটটোন

ঈস্ট

বেকিং পাউডার

বেকিং সোডা

ক্রিম অফ টারটার

এসেটিক এসিড

সাইট্রিক এসিড

লেমন কালার

এগ ইয়েলো কালার

এ্যাপেল গ্রীন কালার

লিকুইড গ্লকোজ

সল্টপিটার (সোরা)

বীট লবণ

স্বাদ লবণ

আগার আগার

জেলাটিন

সোডিয়ামবেনজোয়েট

কয়েকটি মসলার ইংরেজী নাম এবং ব্যবহার

বাংলা নাম – ইংরেজি নাম – ব্যবহার

আদা Ginger মাংসের কোরমা, কারি কচুরী

ইস্ট Yeast পাউরুটি, পিজজা, নানরুটি,

এলাচ Cardamom কোরমা, কালিয়া, রেজালা, হালুয়া

কাবাব চিনি Allspice মাংস, পিকেলস, কেক,

কালজিরা Nigella নিমকপারা, নিমকি আচার

খাওয়ার রং Food colour আইসক্রিম, জরদা, স্কোয়াস

গোলমরিচ Black pepper চপ, কারি, সুপ, ঝোল

গোলাপ জল Rose water ফিরনী, সেমাই, জরদা, কোরমা

জয়ত্রী Mace কাবাব, কেক, পুডিং, বালুশাই

জাফরান Saffron হালুয়া, জরদা, ফিরনী কোরমা

জায়ফল Nutmeg কাবাব, কেক, পুডিং, বালুশাই

জিরা Cumin কারি, আলুরদম, নিরামিষ, খিচুড়ি

তিল Sesame seed সালাদ, ভর্তা, নাডু, পাউরুটি

তেজপাতা Bay leaf কারি, কালিয়া, নিরামিষ

তেঁতুল Tamarind মাছ, চাটনি, চটপটি, ভেলপুরী

দারচিনি Cinnamon মাংস, পোলাও, হালুয়া কেক

ধনে Coriander কারি, ঝোল, নিরামিষ, সুপ

পুদিনা পাতা Mint leave কোফতা, কাবাব, ভর্তা দোপেয়াজা

পেঁয়াজ Onion কোরমা, কালিয়া, কারি, ঝোল, ভাজি

পোস্ত দানা Poppy Seed রেজালা, কোরমা, পাউরুটি

মরিচ Chilli কারি, কালিয়া, দোপেঁয়াজা, কাবাব

মেথি Fenugreek কারি, নিরামিষ, ভাজি

মৌরি Aniseed নিরামিষ, পিঠা, আচার

লবঙ্গ Clove কালিয়া, কারি, কাবাব, ভুনা খিচুড়ি

শাজিরা Caraway কাবাব, কাচ্চি বিরিয়ানী, নেহারী

সরিষা Mustard সরষে ইলিশ, আচার, নিরামিষ

সাদা গোলমরিচ White pepper বোরহানী, চিকেন সালাদ

সোরা Saitpetre হান্টারবিফ, করণবিফ

হলুদ Turmeric কারি, কালিয়া, আচার

হিং Asafoetida কচুরী, সিঙ্গারা, ডালমুট

রসুন Garlic কারি, কোরমা, রেজালা, আচার

কাঁচা ও তৈরি করা খাদ্যের ওজন ও মাপ

ময়দা, সুজি, সেমাই ইত্যাদি খাবার হাল্কা বলে অন্যান্য খাবারের মত ওজনে ও মাপে একরকম হয় না। শাক, সবজি, মাছ যে ওজনে কেনা হয়, কুটে বেছে নেয়ার পর ওজনে কমে যায়। কাঁচা খাদ্য কেনার পর তৈরি করে কতজন লোককে পরিবেশন করা যেতে পারে সে হিসাব জানার জন্যই নীচের তালিকাটি দেয়া গেল।

চাল ২০০ গ্রাম ১ কাপ

ভাত ২০০ গ্রাম ১ কাপ

ময়দা ১১৫ গ্রাম ১ কাপ

সুজি ১৫৫ গ্রাম ১ কাপ

মুড়ি ৩০ গ্রাম ১ কাপ

চিড়া ৯০ গ্রাম ১ কাপ

মরিচ, গুঁড়া ৫ গ্রাম ১ টে.চা.

হলুদ গুঁড়া ৫ গ্রাম ১ টে, চা.

লবণ ৫ গ্রাম ১ চা.চা.

জিরা ৫ গ্রাম ২ চা. চা.

মসুর ডাল ২০০ গ্রাম ১ কাপ

ছোলার ডাল ২০০ গ্রাম ১ কাপ

মুগডাল ১২০ গ্রাম ৯-২০ টি

ডিম ৫০০ গ্রাম ৪ কাপ ঝুরি

বাঁধাকপি ৫০০ গ্রাম ৪ কাপ ঝুরি

গাজর ৫০০ গ্রাম ১ কাপ খোসা ছাড়ানো

মটরশুঁটি ৫০০ গ্রাম ১ টে.চা.রস

কাগজি লেবু ১ টি ৫ কাপ কুরানো

নারিকেল ৫০০ গ্রাম ৪ কাপ ভাত

চাল ২৩০ গ্রাম ২.২৫ কাপ সিদ্ধ

নুডলস ২ কাপ ১ কাপ সিদ্ধ

সেমাই ১১৫ গ্রাম ৪-৫ কাপ কুরানো

পনির ৫০০ গ্রাম ২ কাপ ফাঁপানো

ঘন ক্রিম ১ কাপ ২ টে.চ্‌মচ

ঈস্ট ১ প্যাকেট ১ কাপ

কিসমিস ১৫৫ গ্রাম ১ কাপ

মধু ২৭৫ গ্রাম ১ কাপ

জ্যাম ৩৭৫ গ্রাম ৩ কাপ

গুড় ২৩০ গ্রাম ৩/৪ কাপ

বিনিময় খাদ্য

বেশি দামের খাদ্য কেনা সম্ভব না হলে খাদ্যের বিকল্প ব্যবস্থা করা যায় । এ ব্যবস্থায় বিনিময় খাদ্যে খাদ্যোপাদানের পরিমাণ ঠিক থাকে, কিন্তু খরচ কম পড়ে। রান্নার সময় কোনো উপকরণ না থাকলে তার বিনিময়ে যে উপকরণ ব্যবহার করা যায় এ তালিকা থেকে তাও জেনে রাখা দরকার ।

খাদ্যের মান বজায় রেখে অভাবের সময় বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনিময় খাদ্যের তালিকা

দুধের অভাব

১. চর্বিবিহীন গুঁড়া দুধ বা চিনাবাদাম
২. ডাল বা খিচুরি
৩. শুকনা সিম, বরবটি বা মটরশুঁটির বিচি
৪. হাঁসের ডিম, ছোট মাছ

ফলের দুর্মূল্যে

১. সবুজ শাকসবজি
২. সস্তা দামের মৌসুমী ফল
৩. অঙ্কুরিত মুগডাল
৪. কাঁচা সবজির সালাদ

খাদ্যের দুর্মূল্যে

১. চিনির পরিবর্তে গুড়
২. ভাতের পরিবর্তে আটার রুটি, আলু
৩. মাখন ও ঘিয়ের পরিবর্তে সয়াবিন তেল
৪. মাখনের পরিবর্তে মারজারিন, ডালডা

রান্নার উপকরণের অভাবে

১. লেবুর পরিবর্তে সিরকা, উস্টার সসের পরিবর্তে তেঁতুলের পানি
২. দই-এর পরিবর্তে দুধ ও লেবুর রস বা তেঁতুল
৩. কর্নফ্লাওয়ারের পরিবর্তে নেশেস্তা অ্যারারুট বা ময়দা
৪. বেকিং পাউডারের পরিবর্তে খাওয়ার সোডা

কয়েকটি খাবারের সঙ্গে পরিচয়

সস

মুখরোচক করার জন্য কোন কোন খাবারের সাথে সস পরিবেশনের নিয়ম প্রচলিত। সস খাবারের সাথে একটি বাড়তি সংযোজন। তরল, ঘন, থকথকে সসের স্বাদ বৈচিত্রময়। টক, ঝাল, মিষ্টি এবং ঝাজালো স্বাদের সস ভাজা-ভুনা স্নাকস খাবারের সাথে পরিবেশন করা হয়। টমেটো সস, টার্টার সস, হলান্ডেইজ সস, গ্রীন সস, তেঁতুলের সস সিঙ্গারা, সমুছা, ডালপরী এসব ডুবোতেলে ভাজা খাবারের সাথে বেশ সমাদৃত। চকলেট সস, ক্যারামেল সস, পাইন এ্যাপেল সস, কাস্টার্ড সসের স্বাদ মিষ্টি। আইসক্রিম, কেক, পুডিং মিষ্টিসস দিয়ে পরিবেশন করা যায়। ময়দা, দুধ, মাখন দিয়ে সাদা সস তৈরি হয়। সাদা সস রান্নায় ব্যবহার করা হয়। সস শুধু খাবার মুখরোচক করে না, সসের প্রলেপ দিয়ে খাবার সাজানো যায়। আইসক্রিমের উপরে লাল স্ট্রবেরি সস বা হলুদ পাইন এ্যাপল সস অথবা চকলেট সস দিয়ে পরিবেশন করলে সুন্দর দেখায়।

সালাদ

টমেটো, খীরা, গাজর, শসা, বীট, বাঁধাকপি, লেটুসপাতা এসব কাঁচা সবজি দিয়ে সালাদ হয়। বিভিন্ন রকমের কাঁচা সবজি সুন্দরভাবে কেটে সাজিয়ে সালাদ করা যায়। বিদেশে সালাদের সাথে মেয়নেজ বা ড্রেসিং মিশিয়ে খায়। সালাদের সবজির রং ও তাজাভাব দেখতে বেশ ভাল লাগে। সালাদে কাঁচা সবজি থাকে বলে ভিটামিন সি ও অন্যান্য খাদ্যপুষ্টি বেশী পাওয়া যায়। শুধুমাত্র সবজি দিয়েই সালাদ হয় না। মৌসুমী ফল, পনির, ছানা, সিদ্ধ ডিম, সিদ্ধ মাছ, ঠান্ডা মাংস ইত্যাদি দিয়েও সালাদের ডিস সাজানো যায়। এমন কি এক প্লেট সালাদ দিয়ে একজনের দুপুরের খাওয়া সম্পন্ন হতে পারে। যে ফল খোসা ছাড়াবার পর বাতাসের সংস্পর্শে আসলে কালচে হয়ে যায় সে ফল কাটার পর সিরকা বা লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে অথবা লেবুর রস দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবে। সালাদের জন্য পাকা কলা, আম কেটে সিরাপে ডুবিয়ে রাখলে কালচে হবে না।

স্যান্ডউইচ

ঈস্ট দিয়ে পাউরুটি, বানরুটি, ডিনার রোল তৈরি হয়। এসব রুটির ভিতর ডিম, মাছ, মাংস, পনির, সবজি পিকেলস, মাখন, মেয়নেজ, সালাদ ড্রেসিং দিয়ে স্যান্ডউইচ তৈরি হয়। স্যান্ডউইচের জন্য পাউরুটি ধারালো ছুরি দিয়ে পাতলা করে কাটতে হবে। স্যান্ডউইচের জন্য যেসব পুরের রেসিপি বইয়ে দেয়া্‌ আছে তাছাড়াও নিজের পছন্দমতো নানারকম পুর দিয়ে স্যান্ডউইচ করা যায়। তবে পুরে আকর্ষণীয় রঙের সবজি ও বিভিন্ন স্বাদের খাবার থাকলে সুন্দর হয়। স্যান্ডউইচ প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়ে অথবা পরিবেশনের আগে পর্যন্ত ভিজা কাপড়ে ঢেকে রাখা দরকার। স্যান্ডউইচ তৈরি করার সময় প্রত্যেক টুকরা রুটিতে মাখন বা মেয়নেজ লাগাতে হবে। এক টুকরা রুটির মাখন লাগানো পিঠে পুর দিয়ে আর একটি মাখন লাগানো টুকরা দিয়ে ঢাকতে হবে। এভাবে দুতিনটি স্যান্ডউইচ একটার উপর আর একটা রেখে ছুরি দিয়ে চারপাশের শক্ত অংশ কেটে ফেলার পরে স্যান্ডউইচের মাঝখানে, কোনাকুনি বা লম্বায় কেটে দুভাগ করতে হবে।

ক্লাব স্যান্ডউইচ তিন টুকরা রুটি দিয়ে করা যায় এবং রুটির একপিঠ সামান্য সেকে নিতে হয়। এই স্যান্ডউইচ সামান্য গরম পরিবেশন করার নিয়ম। ক্লাব স্যান্ডউইচ ও হ্যামবারগার স্যান্ডউইচ পিকনিকে, স্কুলে ও অফিস লাঞ্চে বা দুপুরের আহারে পরিবেশন করা হয়। টি-পার্টিতে তিনকোনা, গোল, চারকোনা ইত্যাদি বিভিন্ন আকারে শোভনীয় স্যান্ডউইচ পরিবেশন করা যায়।

সুপ

সুপ তিন রকমের—স্বচ্ছ তরল সুপ, ঘন সুপ এবং ক্রিম সুপ। বড় হাঁড়িতে গরুর হাড় (গরু, খাসী ও মুরগীর হাড় একসঙ্গেও নেয়া যায়), খোসাসহ গাজর এবং পেঁয়াজ টুকরা করে, খোসাসহ ডিম ভেঙ্গে এবং সামান্য তেজপাতা ও অনেক পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিলে, ঘন্টা চারেক ফুটালে পর উপরে একটা স্তর পড়ে। স্তর যাতে না ভাঙ্গে সেজন্য হাঁড়ি সাবধানে নামিয়ে কিছুক্ষণ রেখে, ঠান্ডা স্তর একটু সরিয়ে পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিলে স্বচ্ছ তরল সুপ পাওয়া যায়, এই সুপে লবণ, স্বাদ লবন (ইচ্ছা) এবং সিদ্ধকরা পাতলা স্লাইস সবজি দিয়ে পরিবেশন করা যায়। মিটস্টকে করণফ্লাওয়ার গুলে দিয়ে সুপ ঘন করা হয়। এক কাপ মিটস্টকে ১ টে. চামচ করণফ্লাওয়ার দিলে সুপ ঘন থকথকে হয়। সাদা সস দিয়ে তৈরি সুপকে ক্রিম সুপ বলা হয়। সব সুপেই সবজি দেয়া যায়। সাধারণত খাওয়ার শুরুতে সুপ পরিবেশন করার নিয়ম। খাওয়ার শেষেও সুপ খাওয়া চলে। স্বচ্ছ তরল সুপে ক্যালরির পরিমাণ কম বলে ওজন কমাতে হলে খাওয়ার শেষে সুপ খেয়ে তৃপ্তি মেটানো হয়। সবজি দিয়ে তৈরি ক্রিম সুপের সঙ্গে ক্রেকার বিস্কুট বা রুটি-মাখন পরিবেশন করে দুপুরের বা রাতের খাবার হতে পারে।

সুফলে

সুফলে মাছ, মাংস, পনির ও শাক-সবজি দিয়ে তৈরি ওভেনে বেক করা ফাঁপানো খাদ্য। ডিমের সাদা অংশ ঘন জমাট করে ফেটে অত্যন্ত নিপুণতার সাথে খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে সুফলে তৈরি করা যায়। ঠান্ডা হলে বেক করা সুফলের ফাঁপানো ভাব থাকে না। এজন্য ওভেন থেকে নামিয়েই পরিবেশন করতে হবে। ফাপানো কাস্টার্ড, পুডিংকেও সুফলে বলা হয়। মিষ্টি সুফলে রেফ্রিজারেটরে রাখতে হবে এবং ঠান্ডা পরিবেশন করতে হবে।

হ্যামবারগার

সাধারণত গরুর মাংসের কিমা দিয়ে তৈরি গোলাকার চ্যাপ্টা হ্যামবারগার স্টেক জনপ্রিয় খাবার। হ্যামবারগার স্টেক সাধারণত বানরুটির মধ্যে দিয়ে পরিবেশন করা হয়। পিকনিক এবং অফিস লাঞ্চের জন্য হ্যামবারগার উপযুক্ত খাবার। হ্যামবারগার টমেটো, খীরা, লেটুসপাতা দিলে একটি পূর্ণাঙ্গ সুষম খাবার হয়।

তাকো

তাকো মেক্সিকান খাবার। ১৫ সে.মি. ব্যাসের পাতলা মচমচে ভাজা রুটির মধ্যে শুকনা করে ভাজা সিদ্ধ ডাল, খিরা, টমেটো, গাজর, বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজ এসব সবজি কুচি করে দিয়ে উপরে ঝুরি করা পনির ছিটিয়ে খেতে খুব সুস্বাদু। বিদেশের রেস্তরাঁয় এই মেক্সিকান খাবারটি বেশ জনপ্রিয়। ঝুরা মাছ, মাংসের কিমা, কটেজ চিজ, নরম পনির, দই এসব নানা খাবার রুটির মধ্যে দিয়ে তাকোর স্বাদের বিভিন্নতা আনা যায়। তাকোর রুটি সেকা তেলে বা ডুবো তেলে দুভাজ করে ভাজতে হবে। যাতে স্যান্ডউইচের মত ভিতরে মাছ, মাংস, সবজি, পনির দিয়ে পরিবেশন করা যায়। রুটি ভাজার সাথে সাথেই ভিতরে খাবার ভরে খেতে হবে। নয়ত রুটির মচমচে ভাব থাকবে না আর তাকোর আসল স্বাদ পাওয়া যাবে না। তাকোর রুটি তৈরির জন্য প্রয়োজন ভুট্টার আটা।

পিজ্‌জা

বাংলাদেশে যেমন পরটা কাবাবের সুনাম তেমনি ইটালীর নামকরা খাবার পিজ্‌জা। পৃথিবীব্যাপী পিজজার জনপ্রিয়তা রয়েছে। ঘোর বর্ষণে বা তুষারপাতে ঠান্ডা আবহাওয়ায় গরম পিজজার সাথে আর কোন খাবারের তুলনা হয় না। বিভিন্ন লোকের চাহিদা পুরণের জন্য আছে ভেজিটেবল পিজজা, মিট পিজজা, চীজ পিজজার রেসিপি। পিজজা বেক করা খাবার। পিজজার জন্য ঈস্টের খামির দিয়ে রুটি বেলে গোলাকার পিজজা প্যানে রুটি বিছিয়ে, টমেটো সস দিয়ে রান্না করা কিমা, রুটির উপর ঢেলে ছড়িয়ে দিতে হবে। তার উপরে পনির কুচি, ওরিগেনো, থাইম, শুকনা মরিচের গুঁড়া ও তেল ছিটিয়ে দিয়ে বেক করতে হবে। গরম পিজজায় যে স্বাদ, ঠান্ডা হলে তেমনটি পাওয়া যায় না। তাই পরিবেশনের আয়োজন করেই পিজজা ওভেনে ঢুকাতে হবে, যেন নামিয়েই খাওয়া যায়।

পাই

বাংলাদেশের পিঠার মত আমেরিকা, ইউরোপ, ইংল্যান্ডে পাই একটি ঐতিহ্যময় যুগধর্মী খাবার। প্রাচীনাদের কুশলী হাতের যত্নে তৈরি পাই দেখতে আকর্ষণীয়, স্বাদেও লোভনীয়। পাই সাধারণত পার্টির মেনুতে মিষ্টি খাবার হিসেবে অন্তর্ভুত থাকে। মিষ্টি ছাড়াও কিমা-মাংস বা মুরগীর মাংস দিয়ে সুস্বাদু পাই তৈরি করা যায়।

পাই ওভেনে বেক করা খাবার। গোলাকার বিভিন্ন সাইজের পাইপ্যানে, পাই বেক করা হয়। একটি প্রমাণ সাইজের পাই প্যান এর ব্যাস ২০ সে, মি.। পাই এর মুল উপকরণ ময়দা ও মাখন দিয়ে তৈরি পাইপেস্ট্রি। এতে থাকে ৩ ভাগ ময়দা ও ২ ভাগ ডালডা। পাইপেস্ট্রি দিয়ে রুটি বেলে পাইপ্যানে বিছিয়ে তার উপরে ফল, মার্মালেড, জ্যাম, হালুয়া, কাস্টার্ড বা রান্না করা কিমা-মাংস দিয়ে উপরে আরেকটি রুটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এরপর ওভেনে বেক করা হয়। কোন কোন পাই এর উপরে পাইপেস্ট্রি দিয়ে ঢাকা হয় না। বেক করার পরে পাইক্রাস্ট বেশ খাস্তা হয়, আঙ্গুলের চাপে ভেঙ্গে যায়। বেক করার পরে পাইক্রাস্ট বেশ খাস্তা হয়, আঙ্গুলের চাপে ভেঙ্গে যায়। এ্যাপেল পাই, পাইনএ্যাপেল শিফন পাই, পাস্পকিন পাই, লেমন মেরাং পাই, বোস্টন ক্রীম পাই, পিকান পাই, আরও বহুরকমের পাই-এর স্বাদ অতি মনোরম। বিদেশে বিশেষ অনুষ্ঠানে পাই খাওয়ার রীতি প্রচলিত।

পেস্ট্রি

পেস্ট্রি নানা আকারের ছোট ছোট সাইজের শোভনীয় খাবার। কনফেকশনারীর নানা ধরনের খাবার পেস্ট্রির অন্তর্ভুক্ত। পাফ খামির দিয়ে তৈরি পাফ পেস্ট্রির মধ্যে রয়েছে ডেনিশপেস্ট্রি, আমও ক্রিসেন্ট, পামলিফ, সসেজ রোল, ক্রিমরোল ইত্যাদি। ফ্রেঞ্চ পেস্ট্রির সুনাম জগৎ জোড়া। ক্রিম পাফ, জেলী রোল, ফু্রট টার্ট, চকলেট একলেয়ার সব ফ্রেঞ্চ পেস্ট্রি। আরও অন্যান্য পেস্ট্রি। আরও অন্যান্য পেস্ট্রি যেমন ডোনাট, শর্টব্রেড ক্রিম বিস্কুট, শোভনীয় কেক পেস্ট্রি সবার জন্যই উপাদেয় খাবার উৎসবে বিকালে চায়ের সাথে, টি-পার্টিতে, জন্মদিনে, সভা সমিতিতে এবং অতিথি আপ্যায়নের জন্য পেস্ট্রি ঠিক যোগ্য খাবার। দাওয়াতের লাঞ্চ, ডিনারের মেনুতেও পেস্ট্রি ডেজার্ট হিসাবে পরিবেশন করা যায়। মাখন, ডালডা, ময়দা, চিনি, ডিম, পেস্ট্রি তৈরির মূল উপকরণ। এজন্য পেস্ট্রি অত্যন্ত ক্যালরিবহুল খাবার।

পুডিং

ডিম ফেটে চিনি ও দুধের সংগে মিশিয়ে পুডিং তৈরি হয়। ভাপে সিদ্ধ করলে বা বেক কারা পর পুডিং জমে যায়। ঘন দুধ এবং পাউরুটি বা টোস্ট বিস্কুট দিলে পুডিং তাড়াতাড়ি জমে। মোলডে পুডিং-এর উপকরণ ঢালার আগে চিনি ক্যারামেল করে নিলে পুডিং আকর্ষণীয় হয়। মোলডের আকারে পুডিং জমে যায় বলেই দেখতে সুন্দর হয়। পার্টিতে খাওয়ার শেষে পুডিং পরিবেশন করা যায়।

কাস্টার্ড

কাস্টার্ড ঘন এবং মসৃণ হয় কিন্ত্র জমে না। ডিম, করণফ্লাওয়ার ও চিনি এক সাথে ফেটাবার পর দুধের সঙ্গে মিশিয়ে, হালকা আঁচে চুলায় দিয়ে নাড়তে থাকলে ঘন হয়ে কাস্টার্ড হয়। কাস্টার্ড ঘন এবং থকথকে দু’রকমই করা যায়। এক লিটার দুধে একটি ডিম ও তিন টেবিল চামচ করণফ্লাওয়ার দিলে মাঝারি ধরনের ঘন কাস্টার্ড হবে। ঘন ঠান্ডা কাস্টার্ড আম, কলা, পাকা পেপের টুকরা মিশিয়ে পরিবেশন করা যায়। থকথকে ঘন কাস্টার্ডের সঙ্গে জেলাটিন, কেক ও নানারকম ফল মিশিয়ে হুইপড ক্রিম দিয়ে ফ্রুটস ট্যাইফল সাজান হয়। সাধারণত দুপুরে এবং রাতের খাওয়ার পর কাস্টার্ড পরিবেশন করা হয়।

মুয

আইসক্রিম ব্লেন্ডারে, মিক্সারে বা হাতে ফেটে মোলডে ভরে পুনরায় ফ্রিজে জমিয়ে মুয তৈরি হয়। মুয ডিনার পার্টির শেষে পরিবেশনের জন্য একটি সুন্দর সুস্বাদু ঠান্ডা ডেজার্ট। নানা ফলের কুচি দিয়ে মুয জমানো যায় অথবা টুকরা ফল দিয়ে সাজিয়েও মুয পরিবেশন করা যায়। তাছাড়া সাধারণত হুইপড ক্রিম বা মেরাং দিয়ে মুয সাজানো হয়।

খাদ্য সংরক্ষণ

খাদ্য পচে যাওয়ার কারণ সংরক্ষণ : বাংলাদেশের বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন প্রকার ফল ও সবজি উৎপন্ন হয়। মৌসুমের ফল ও সবজি টাটকা এবং তাজা পাওয়া যায়, দামেও সস্তা থাকে। এই সব ফল সবজি দিয়ে আচার, চাটনি, সস, মোরব্বা, পিকেলস, জেলী , জ্যাম, মার্মালেড তৈরি করে বেশ কিছুদিন সংরক্ষণ করা যায়। বাতাসে, পানিতে, এবং মাটিতে যে অসংখ্য অণুজীব ছড়িয়ে আছে তা খাবারের মধ্যে ঢুকে খাবার নষ্ট করে ফেলে। আবার সবজি ও ফলের এনজাইম নামক পদার্থের জন্য ফল অতিরিক্ত পেকে পচে যায়। খাদ্যের মধ্যে অণুজীব তার বংশ বিস্তারের জন্য উপযুক্ত তাপ এবং বাতাস ও পানি পেলে খুব তাড়াতাড়ি খাদ্য নষ্ট করে। ঈস্ট, মোলড ব্যাকটেরিয়া এই তিন প্রকার অণুজীব এবং এনজাইমের কবল থেকে বাঁচিয়ে খাদ্যদ্রব্য খাওয়ার উপযোগী করে রাখাকে খাদ্য সংরক্ষণ বলে। সাধারণ অর্থে ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য সঞ্চয় করে রাখাকেই খাদ্য সংরক্ষণ বুঝায়। খাদ্যে অণুজীবের প্রবেশে বাধা প্রদান করে, খাদ্যের অণুজীব নির্জীব রেখে অথবা অণুজীব মেরে ফেলে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়। সংরক্ষণ করার জন্য খাদ্য বাতাসবিহীন, শুরু বা বরফে জমানো অবস্থায় রাখতে হবে।

খাদ্য সংরক্ষণের প্রস্ততি সতর্কতা : খাদ্য সংরক্ষণের প্রথম প্রস্ততি শিশি বোতল যোগাড় করা। যে কোন বোতলে খাদ্য সংরক্ষণ করা যায় না। সংরক্ষণের জন্য শিশি, বোতল ও টিনের কৌটা বিশেষভাবে তৈরি হয়। ব্যবহার করা স্কোয়াস, জ্যাম, জেলীর শিশি বোতলে কয়েকবার খাদ্য সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু প্রত্যেকবারই নতুন ঢাকনা লাগালে ভাল হয়। শিশি-বোতলের মুখ ভাঙ্গা থাকলে, ঢাকনা ঠিকমত না লাগলে সে বোতলে খাবার সংরক্ষণ করা যাবে না। সংরক্ষণের জন্য শিশি, বোতল ও ঢাকনা নির্বীজন করে শুকিয়ে রাখতে হবে। সংরক্ষণের কাজে যে সব ছুরি, চামচ, চালনি ছাঁকনী, গামলা, হাঁড়ি, ডালা, খঞ্চা, ট্রে ইত্যাদি ব্যবহার হয় সে সমস্ত জিনিসপত্র সাবান, সোডা ও গরম পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। সংরক্ষণকারীর ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা পালন ও পরিষ্কার জায়গায় সংরক্ষণ করার বিষয়টি অত্যন্ত মূল্যবান মনে করে অনুসরণ করা উচিত। মোটের উপর মনে রাখতে হবে যে গ্রামাঞ্চলে বড়ি, কাসুন্দি, আচার দেয়ার সময় ছোঁয়াছুয়ির নিয়ম মেনে চলার একমাত্র কারণ অণুজীবের প্রবেশে বাধা দেয়া। খাদ্য সংরক্ষণের সময় সতর্ক না হলে খাবারে অনুজীব জন্মে, খাবার গেঁজে উঠে নষ্ট হয়ে যায়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ছাড়াও খাদ্য নির্চাচন, সংরক্ষণ করার পদ্ধতি অনুসরণ এবং সংরক্ষণ করার পর খাদ্য পরিষ্কার, ঠান্ডা, শুকনা ও অন্ধকার জায়গায় তুলে রাখা এসব বিষয়ে অবহেলা হলে সংরক্ষণ করা খাদ্যে অণুজীব জন্মে খাদ্য নষ্ট করে ফেলতে পারে।

সংরক্ষণের জন্য খাদ্য নির্বাচন : সংরক্ষণের জন্য তাজা, টাটকা এবং উৎকৃষ্ট মানের খাদ্য বেছে নিতে হবে। ফুলকপি, মটরশুটি, বাঁধাকটি ইত্যাদি সবজি এবং সস, স্কোয়াস, জেলী, জ্যাম, মার্মালেড.আচার, মোরাব্বা, শুটকী, নোনা ইলিশ যা কিছুই সংরক্ষণ করা হবে সে সব খাদ্যই উন্নত মানের এবং তাজা ও সয়স হওয়া দরকার। অপরিণত, আঁচার কাটা, পোকা, খাওয়া, খোসায় চিতি পড়া বা সামান্য পচা এমন সবজি, ফল, সংরক্ষণের জন্য নির্বাচন করা উচিত নয়। যেমন মটরশুটি খোসা ছাড়াবার পর বড় ও ডাগর বীচি রেখে বাকিগুলো বেছে বাদ দিতে হবে। উৎকৃষ্ট ফল দিয়ে উন্নত মানের জ্যাম.জেলী, স্কোয়াস তৈরি করা যেতে পারে। ভরা মৌসুমে যে সব ফল একই সময়ে গাছে ধরে এবং এক সাথে পাকে সে সব ফল দিয়ে জ্যাম, জেলী, স্কোয়াস সুন্দর হয়। এর কারণ, সমান আকার এবং একই রঙের ফলের পরিপক্কতা একরকম হয়। শুটকী, নোনা ইলিশ, এবং বরফে জমিয়ে রাখার জন্য মাছ, মাংস খুব তাজা ও সরস হওয়া বাঞ্চনীয়। বাসি মাছ-মাংস, ফল-সবজি বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না।

খাদ্য সংরক্ষণ প্রদ্ধতি : আদর্শ মান সম্মত রেসিপি অনুসরণ করে খাদ্য সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। সংরক্ষণ করার কৌশল গুলিও ভালভাবে আয়ত্ব করতে হবে যেমন, বোতল নির্বীজন করা, খাদ্য প্রেসেস করা, বোতল বায়ুরুদ্ধ করে সীল করা  ইত্যাদি। এখানে চার প্রকার খাদ্য সংরক্ষণ করায় পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে। নবম আধ্যায়ে বিভিন্ন প্রকারে খাদ্য সংরক্ষণ করার রেসিপি দেয়া হয়েছে।

রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ : শস্য, শুঁটি, শাক, সবজি, ফল, মাছ, মাংস, সব খাবারই শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। খাদ্য শুকাবার ফলে অণুজীব কোষের পানি বেরিয়ে অণুজীবের জীবন প্রক্রিয়া, ব্যাহত, হয়। সংরক্ষণের জন্য প্রখর রোদের তাপ দরকার। চাটাই, বড় ডালা বা বাঁশের চালনিতে খাদ্য হালকাভাবে ছড়িয়ে মাটি থাকে উচু জায়গায় রেখে রোদে শুকাতে হয়। শুকাবার সময় ৩-৪ ঘন্টা পর পর খাবার নেড়ে ছড়িয়ে দিলে ভালভাবে এবং তাড়াতাড়ি শুকায়। এক সঙ্গে অনেক খাবার অল্প জায়গায় দিলে শুকাতে দেরি হয়। খাদ্য সম্পুর্ণভাবে না শুকালে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পর পর ৪-৫ দিন খাদ্য ঝরঝরে শুকনা করে শুকাতে হবে, যেন ১০% এর বেশি পানি না থাকে। শুকাবার পর পরিষ্কার শুকনা মুখ বন্ধ পাত্রে না রাখলে বাতাসের সংস্পর্শে এসে খাদ্যে ছত্রাক জন্মাতে পারে।

লবণ, চিনি সিরকায় খাদ্য সংরক্ষণ : লবণ চিনি ও সিরকাযোগে খাদ্য সংরক্ষণের পদ্ধতি বহু আগে থেকেই প্রচলিত। নোনা ইলিশ, লেবুর জারক, মোরব্বা এসব খাবারের সাথে সবাই পরিচিত। সংরক্ষণের জন্য খাদ্যে লবণের পরিমাণ ১৫ শতাংশ হলে খাবারে অনুজীব বিস্তার লাভ করতে পারে না। ঘন চিনির সিরাতে ও অনুজীব নির্জীব থাকে। সিরাপে চিনির পরিমাণ ৫০-৬০% হলে অণুজীব জমাতে পারে না। তবে ৭০ শতাংশ ঘন সিরাপে অণুজীব একেবারেই নির্জীব থাকে। এক কেজি চিনিতে দেড়কাপ পানি দিয়ে জ্বাল দিলে ৭০ শতাংশ ঘন সিরাপ হয়। খাদ্য সংরক্ষণের জন্য সিরকায় এসেটিক এসিডের পরিমাণ ৪-৬ % হওয়া বাঞ্চনীয়। সাদা এবং মল্ট ভিনিগার উভয় প্রকার সিরকাই সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়। পিকেলস, রেলিশেস এসব বিদেশী খাবার সিরকায় সংরক্ষণ করা হয়।

পিকেলস : শীতের সবজি, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ ইত্যাদি সিরকায় ডুবিয়ে রেখে পিকেলস করা হয়। পিকেলসের গন্ধ ও স্বাদ উন্নত করার জন্য বিভিন্ন রকম সুগন্ধি পাতা ও গোটা মসলা দেয়া হয়।

রেলিশেস : ফুলকপি, গাজর, বরবটি, মুলা, শসা, শালগম, কামরাঙা, কাঁচাপেপে ইত্যাদি সবজি ছোট টুকরা করে পিকেলসের মসলা সিরকা লবণ ও চিনি সহযোগে জ্বাল দিয়ে রেলিশেস তৈরি করা হয়। চাটনি এবং রেলিশেস  একই ধরণের খাবার। তবে চাটনী টকফল দিয়ে তৈরি হয়। চাটনির মত রেলিশেসেও ঝাল দেয়া যায়। রেলিশেসের স্বাদ টক-ঝাল-মিষ্টি হয়ে থাক।

বরফে জমিয়ে খাদ্য সংরক্ষণ : সবজি, মাছ, মাংস এবং রান্না করা খাবার বরফে-১০০ সেঃ থেকে-১৫০ সেঃ ঠান্ডায় জমিয়ে কয়েকমাস সংরক্ষণ করা যায়। বরফে জমাবার জন্য মাছ, মাংস ধুয়ে পরিষ্কার করে প্রয়োজনমতো টুকরা করে পানি ঝরাতে হবে। তারপর প্লাস্টিকের ব্যাগে বেশ জমাটভাবে মুড়ে বরফের মধ্যে রাখতে হবে। রেসিপি অনুযায়ী সবজি টুকরা করে ফুটানো পানিতে ২-৩ মিনিট রাখার পর তুলে সঙ্গে ঠান্ডা বরফে মিশানো পানিতে দিতে হবে। বরফের মতো ঠান্ডা হলে সবজির পানি ঝরিয়ে পরিষ্কার পলিথিনের ব্যাগে মুড়ে বরফের মধ্যে রাখতে হবে। বরফে রাখার ৩-৪ ঘন্টা পর খাবার জমে গেলে প্যাকেটগুলি নেড়েচেড়ে রাখতে হয়। তাহলে একটা প্যাকেটের সঙ্গে আরেকটা জমাটভাবে লেগে যায় না। রান্না করা খাবার প্লাস্টিকের কৌটায় মুখ বন্ধ করে বরফের মধ্যে রাখা যায়। প্রত্যেক পরিবারের নিজেদের প্রয়োজনমতো ছোট সাইজের প্যাকেট করা উচিত। কারণ, বরফে জমানো খাবার একবার বের করে পুনরায় জমালে বেশিদিন ভাল থাকে না।

আগুনে ফুটিয়ে খাদ্য সংরক্ষণ : ফুটানো তাপে খাদ্যের অনুজীব ঈস্ট, মোলড, ব্যাকটেরিয়া মরে যায় এবং এনজাইমও নষ্ট হয়। ফুটাবার পর খাদ্য বাতাসবিহীন অবস্থায় বায়ুশূন্য টিনের বা কাঁচের পাত্রে অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। ফল, সবজি, মাছ, মাংস এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। ফুটিয়ে সংরক্ষণ করার পদ্ধতিকে টিনজাতকরণ বা বোতলজাতকরণ বলা হয়। ক্যানিং পদ্ধতিতে খাদ্যের সজীবতা ও পুষ্টিমান অক্ষন্ন রেখে সংরক্ষণ করা হয়। আবার ফলের শাঁস, রস, ও পেকটিন নির্যাস দিয়ে জ্যাম, জেলী , সস, স্কোয়া্‌স তৈরি করে বোতলজাত করা হয়। মিষ্টি ও সুগন্ধের জন্য ফল দিয়েই জেলী, জ্যাম, মার্মালেড, ক্যান্ডি ও স্কোয়াস তৈরি হয়। বাংলাদেশে জ্যাম, জেলী তৈরির জন্য আনারস, পেয়ারা, মেষ্ঠা, কুল এবং কাঁচা আম উপযোগী ফল।

জেলী : ফলের পেকটিন নির্যাসের সঙ্গে পরিমাণ মতো চিনি জ্বাল দিয়ে জেলী তৈরি হয়। ফলের পেকটিন, এসিড ও চিনির জন্য জেলী জমে।

পেকটিন : মেষ্ঠা (চুকাই), পেয়ারা, কাঁচা আম, কতবেল, আমড়া, কামরাঙা ও জলপাই এসব পেকটিন সমৃদ্ধ ফলের টুকরা ডুবো পানিতে সিদ্ধ করে ছেঁকে নিলে পেকটিন নির্যাস পাওয়া যায়। জেলী জমার জন্য পেকটিন নির্যাসের সমান অথবা .৭৫ কাপ চিনির প্রয়োজন। পাকা ফল অপেক্ষা কাঁচা ফলে পেকটিনের পরিমাণ বেশী থাকে। তাই জেলী তৈরির জন্য চারভাগের তিনভাগ পাকা ফলের সঙ্গে একভাগ ডাঁসা ফল নিলে জেলী ভাল জমে।

এসিড : জেলী তৈরিতে লেবুর রস দেয়া হয়। লেবুর রসের পরিবর্তে সাইট্রিক এসিডও দেয়া যায়। এসিডের পরিমাণ কম থাকলে এক কাপ ফলের রসে ১টে.চামচ লেবুর রস অথবা .২৫ চা চামচ সাইট্রিক এসিড দেয়া যায়। এসিডের পরিমাণ ঠিক না হলে জেলী জমে না। এসিড জেলী জমায় এবং জ্যাম, জেলী, মার্মালেডের স্বাদ বাড়ায়। ভিন্ন ভিন্ন ফলে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ এসিড লাগে।

চিনি : চিনি জেলী জমায় এবং স্বাদ বাড়ায়। চিনির জন্য জেলী তাড়াতাড়ী নষ্ট হয় না। কিছুদিন সংরক্ষণ করা যায়। এককাপ ফলের রসে ১ কাপ অথবা .৭৫ কাপ চিনি দিলে জেলী জমে। জ্যাম এবং মার্মালেডেও এক কাপ ফলের জন্য .৭৫ কাপ চিনি দিতে হয়। জমাবার জন্য রসে চিনির পরিমাণ কমপক্ষে ৬৮ শতাংশ হতে হবে।

ফলের মধ্যে পেয়ারা এবং মেষ্ঠা দিয়ে উৎকৃষ্ট জেলী হয়। টমেটো এবং কাঁচা আমের ও জেলী হয়। উৎকৃষ্ট জেলী কাঁচের মত স্বচ্ছ দেখাবে, সুন্দরভাবে জমবে, নরম থাকবে এবং রসাল মনে হবে। উৎকৃষ্ট জেলী ছুরি দিয়ে কাটলে সুন্দর টুকরা হবে, আকার নষ্ট হবে না, আবার রুটির উপর মাখানো যাবে।

ফল সিদ্ধ করে পানি পরিষ্কারভাবে ছেঁকে নিলে জেলী স্বচ্ছ দেখায়। কিন্ত ফল সিদ্ধ করার সময় নাড়লে এবং ছাঁকার সময় নাড়াচাড়া করলে পেকটিন নির্যাস ঘোলাটে হয়। ঘোলাটে পেকটিন নির্যাস দিয়ে জেলী তৈরি করলে স্বচ্ছ হবে না। ফল ভাল না হলে জেলী ভাল হয় না।

জ্যাম :  ফল সবজি খোসা ছাড়াবার পর স্লাইস বা ঝুরি করে চিনি এবং লেবুর রস মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে জ্যাম তৈরি করা হয়। জ্যামের জন্য এক কাপ ফলে .৭৫ কাপ চিনি দিতে হয়। আনারস, কাঁচা আম, কমলা, গাজর, মিষ্টিকুমড়া ও মেষ্ঠা দিয়ে জ্যাম তৈরি করা যায়।

মার্মালেড : বীচি বাদে গোটা ফল দিয়েই মার্মালেড/মোরব্বা তৈরি হয়। মার্মালেডর জন্য ফলের খোসা কুচি করে ও ফল টুকরা করে সিদ্ধ করে নিতে হবে। সিদ্ধ এক কাপ ফলের জন্য .৭৫ কাপ চিনি দিতে হয়। চিনি দেওয়ার পর বেশী জ্বাল দিয়ে মার্মালেড তাড়াতাড়ি নামাতে হয়। নামাবার সময় ঘন সিরাপ থাকতে হবে। কমলার খোসার নীচে সাদা অংশ মার্মালেডের জন্য নিতে হয়, কারণ সাদা অংশে পেকটিন বেশি থাকে। কমলা, গাজর, আনারস দিয়ে মার্মালেড তৈরি হয়।

উৎকৃষ্ট জ্যম ও মার্মালেডে ঘন, নরম, স্বচ্ছ এবং জমানো ভাব থাকবে। সরস ফল, সবজি ও চিনির পরিমাণ ঠিক দিয়ে এমনি উৎকৃষ্ট জ্যাম ও মার্মালেড তৈরি করা যায়। তবে চিনির সিরায় সাইট্রিক এসিড দিয়ে জ্বাল দিয়ে সিরা পরিষ্কার করে নিতে হবে। জ্যাম ও মার্মালেডে ঘন ও জমানোভাব আনার জন্য আগার আগার দেয়া যায়।

ক্যান্ডি : ক্যান্ডি চিনির প্রলেপ মাখা শুকনা মোরব্বার টুকরা। ক্যান্ডিতে মোরব্বার চেয়ে চিনির পরিমাণ বা ঘনত্ব বেশি থাকে। কমপক্ষে ৭০% চিনি থাকতে হবে। তবে মোরব্বার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি ঘন সিরা (৭৫%) করে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে টুকরা শুকানো হয়। যেমন চালকুমড়ার শুকনা মোরব্বা যা সাধারণত কেক তৈরিতে ব্যবহার হয়। যেসব ফল দিয়ে মোরব্বা তৈরি হয় সেসব ফল দিয়েই ক্যান্ডি করা যায়। আনারস, আপেল, আদা, কাঁচা বেল, কাঁচা পেপে এসবের মোরাব্বা তৈরির পরে বিশেষ পদ্ধতি অনুযায়ী ক্যান্ডি প্রস্তুত করা যায়।

মোরাব্বায় সিরাপের তার দু’আঙ্গুলের মাঝে নিয়ে টানলে সুতার মত আসবে। এটা মধু ঘন সিরাপ। এই সিরাপে মোরব্বার টুকরা ফুটালে আস্তে আস্তে সিরাপ ঘন হবে। যখন সিরাপের সুতার তার টানার পরে ভাঙ্গবে না তখনই নামিয়ে খোলা বাতাসে রেখে নাড়াচাড়া করলে কিছুক্ষণের মধ্যে মোরব্বার টুকরার উপরে চিনির মসৃন ও চকচকে সাদা স্তর শুকিয়ে কঠিন হয়ে যাবে। টুকরার ভিতরে রসাল শাঁস নরম থাকে। ক্যান্ডি সাধারণত ১০-১৫দিনের বেশি ভাল থাকে না, ছাঁতা ধরে। দু’এক বার রোদে দিয়ে কয়েক দিন ভাল রাখা যায়।

স্কোয়াস : ঠান্ডা পানীয়ের মধ্যে স্কোয়াস বিশেষ বৈচিত্রময় পানীয়। বৈচিত্রের কারণ স্কোয়াসের নানারকম শোভনীয় রং, গন্ধ আর স্বাদ। স্কোয়াস সুস্বাদু পানীয়, প্রধানত ফলের রস থেকে তৈরি হয়। ফলের রসের সঙ্গে চিনি, পানি সাইট্রিক এসিড বা লেবুর রস মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে স্কোয়াস তৈরি করা হয়। স্কোয়াসের জন্য আম, জাম, কমলা, পাতিলেবু, কাগজিলেবু, পেয়ারা উপযোগী ফল। স্কোয়াসে ৪০% চিনি, ২৫% ফলের রস থাকতে হবে কিন্তু ৩.৫% এর অধিক এসিড থাকবে না। স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে স্কোয়াসের সাথে অনেক বরফ কুচি দিয়ে গ্লাসের প্রান্তে লেবুর গোল পাতলা স্লাইস বসিয়ে সুন্দর ভাবে পরিবেশন করা যায়। গ্রীষ্মে গরমের দিনে স্কোয়াস একটি পুষ্টিকর পানীয়।

কোন মৌসুমে কী খাবার সংরক্ষণ করা যেতে পারে

বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল-জুন) – আমের আচার, চাটনি, মোরব্বা, আমসত্ত্ব, আমের কাশ্মিরী আচার, রসুনের আচার । 

আষাঢ়-শ্রাবণ (জুন-আগস্ট) – করমচার সস, চাটনি, আচার, পেয়ারার জেলি, পাকা আমের স্কোয়াস, আনারসের স্কোয়াস, জ্যাম, মোরব্বা, আমড়ার আচার, অরবরইর চাটনি । 

ভাদ্র-আশ্বিন (আগস্ট-অক্টোবর) – পেয়ারার জেলি, তালের হালুয়া, পিঠা, ক্ষীর, বরবটির পিকেস, আমলকীর মোরব্বা, চালতার আচার, কতবেলের আচার, লেমন স্কোয়াস । 

কার্তিক-অগ্রহায়ণ (অক্টোবর-ডিসেম্বর) – আমলকীর মোরব্বা, চালকুমড়ার মোরব্বা, হালুয়া, জলপাইর আচার, মেষ্ঠার জেলি ও জ্যাম, চালতার আচার। ট

পৌষ-মাঘ (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) – কমলার মার্মালেড, কমলা গাজর মার্মালেড, সবজির পিকেলস্, টমেটো কমলা মার্মালেড, তেঁতুলের আচার, কাঁচামরিচের আচার, কুমড়ার বড়ি । 

ফাল্গুন-চৈত্র (ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল) – গাজরের মার্মালেড, কুলের আচার ও গুড়ম্বা, কুল পিঁয়াজের আচার, আম ও গাজরের জ্যাম, কাসুন্দি, পিঁয়াজের আচার, কাঁচা আমের স্কোয়াস, জামের স্কোয়াস । মাষকলাইর বড়ি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *