২৯. বৈকালিক রাশ গোছানো

এই তোমার বৈকালিক রাশ গোছানো থাকল, দয়া করে ঠিক সময় খেয়ে নিও।

সত্যবানের সামনে টুলে একটা কৌটো নামিয়ে রেখে বলল শম্পা, এসে যেন দেখি না কৌটো খোলা হয়নি!

সত্যবান ভুরু কুঁচকে বলল, সবই তো বুঝলাম, কিন্তু বৈকালিক রাশ কথাটার মানে?

মানে? মানে তো অতি সোজা! প্রাতরাশ মানে জান? নাকি তাও জান না?

সেটা জানি।

তবে আর কি। সকালের জলখাবার যদি প্রাতরাশ হয়, বিকেলেরটা বৈকালিক রাশ হবে না কেন?

সত্যবান ওর আলো-ঝলমলে মুখের দিকে অভিভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ওঠে, শম্পা

বলুন স্যার?

এত দূর্দশার মধ্যে এত আহ্লাদ কোথা থেকে আসে তোমার শম্পা?

দুর্দশা!

শম্পাও ভুরু কুঁচকে ঝলে, তা বেশ, দশাটা যদি দুর্দশাই হয়, যদিও আমি তা মানি না, এটা আপনাদের ধারণার ব্যাপার, তাহলেও বলি–আহ্লাদ জিনিসটার বাসা কোথায় বলুন তো মশাই? ওটা কি বাইরের কোনো দোকানে মেলে? নাকি আশপাশের গাছে ফলে?

তোমার কথা শুনলে আমার অবাক লাগে শম্পা। আমার ভয় করে।

ভয় করে? সেটা আবার কী? শম্পা সর্বাঙ্গে আহাদ ঠিকরে বলে, অবাক লাগতে পারে, এমন অবাক করা একখানা মেয়ে দৈবেই দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু ভয়?

ভয়ই তো। মনে হয় হঠাৎ একদিন দেখব এই সবই স্বপ্ন, তুমি আর আমার সামনে নেই।

সামনে না থাকাই স্বাভাবিক। শম্পা তেমনি করে হাসে, পিছনে থাকলে ঠেলার সুবিধে।

সেই তো। সারাজীবন আমায় ঠেলে নিয়ে যাবে এ আমি ভাবতেই পারি না।

তোমায় সেদিন কী পড়তে দিয়েছিলাম? শম্পা মাস্টার মশাইয়ের ভঙ্গীতে গম্ভীর গলায় বলে, পড়নি রাজকুমারী ও বামনের গল্প!

পড়েছি। ওসব পড়াশুনোর মধ্যে কোন সান্ত্বনা পাই না। কোনোমতেই নিজেকে তোমার পাশে ভাবতে পারি না।

শম্পা বসে পড়ে হতাশ গলায় বলে, আচ্ছা তুমি কি চাও বল তো? আমাকেই তোমার যোগ্য করে নিতে কোনো কৌশল প্রয়োগ করব? বেশ, কী করা যায় বল? পা-দুটো কেটে ফেলা? উঁহু, ওতে সুবিধে হবে না। চার-চাকার গাড়ি না থাক, দু-চাকার সাইকেলটাও দরকার। একজনের অন্ততঃ পা থাকা বিশেষ প্রয়োজন। হাত? ওরে বাবা, হাত বাদ দিলে তোমার মুখের সামনে নাড়ব কী?…চোখ? ওটা গেলে কটাক্ষ গেল। এক পারা যায়, সূর্পণখার মতো নাকটা কানটা খতম করে ফেলা। বল তো তাই করা যাক। তাহলে যদি তুমি কিছু-কিঞ্চিৎ সান্তনা। পাও!

শম্পা!

এই দেখ! বেরোবার সময় এই এক নাটক! যাচ্ছি একটা শুভকাজে, আর ওই সব কাণ্ড! পুরুষমানুষের চোখে অশ্রুধারা–এ আমার বরদাস্ত হয় না বাপু!

সত্যবান অন্যদিকে তাকিয়ে বলে, তুমি কেন আমাকে ভালবাসতে এলে শম্পা?

ওই তো! শম্পা সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে, ওইটাই তো আমিও ভেবে মরি। কী মরণদশা হল আমার যে, তোমার মতন একটা উজবুক বুদ্ধুকে ভালবাসতে গেলাম! যাক গে, যা হয়ে গেছে তার তো আর চারা নেই!

চারা নেই কে বললে? তুমি তো অনায়াসেই–

দেখ এবার কিন্তু আমি রেগে যাব। আমার রাগ তুমি জানো না। বাবা বলল, আমার বাড়িতে বসে এসব চলবে না। বললাম, বেশ চালাব না। চলে এলাম এক বস্ত্রে।

সেই তো, তোমার ওই ভয়ঙ্কর ইতিহাসটাই আমাকে সর্বদা ভয় পাওয়ায়।

তবে হে প্রভু, আপনি এখন বসে বসে ভয় পান, আমি একটু বেরিয়ে পড়ি।

সত্যবান বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, এত আহ্লাদে ভাসতে ভাসতে কোথায় চলেছ?

বলব কেন?

না বলতে চাও বলবে না।

উঃ, কী রাগ বাবুর। বলব, বলব, ফিরে এসে বলব। এখন চলি, কেমন? খেও। আর এই বইটা পড়ে ফেলো।

কোনটা? বই তো অনেক চাপিয়ে রেখেছ?

আহা, বললাম না রবীন্দ্রনাথের নৌকাডুবিটা পড়ে ফেলো। কিছুই তো পড়নি এযাবৎ। পড়ে দেখো। দেখবে একমাত্র বই পড়ার মধ্যেই জীবনের সব দুঃখকষ্ট ভোলা যায়। তোমায় আমি ওই নেশায় নেশাখোর করে তুলব দেখো!

হাসতে হাসতে আহ্লাদে ভাসতে ভাসতে চলে যায় শম্পা।

ঝাপসা ঝাপসা অনেকগুলো মুখের মধ্যে থেকে একখানা মুখ ঝলসে উঠল।

রোগা কালো শুকনো একটা মুখ।

তবু বুঝি আকাশ ভরা চন্দ্র-সূর্যের আলো ভরা।

বিশ্বাস করতে কিছুটা সময় লাগল।

হয়তো সে সময় ঘড়ির হিসেবে এক সেকেণ্ডের ভগ্নাংশ মাত্র, তবু থমকে থেমে থাকা ক্ষণকাল বুঝি অনন্তকালের স্বাদবাহী।

ওই মুখের অধিকারিণীর হাতে সত্যি কোন অটোগ্রাফ খাতা ছিল না, তবু হাতটা বাড়ানো, ছিল। রোগা পাতলা নিরাভরণ একখানা হাত।

অনামিকা ওই হাতখানাকে শক্ত হাতে চেপে ধরে বললেন, উঠে আয়।

.

হাসতে হাসতে বেরোলে, আর কাঁদতে কাঁদতে ফিরলে যে? সত্যবান ওকে ঘরে ঢুকতে দেখে হাতের বইটা মুড়ে রেখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আস্তে প্রশ্ন করে, কী হলো?

শম্পা হাতের ব্যাগটা দেওয়ালের পেরেকে ঝুলিয়ে রাখার ছুতোয় দেয়ালমুখো হয়ে বলে ওঠে, কাঁদতে কাঁদতে! বলেছে তোমাকে!

বলে, কিন্তু কণ্ঠস্বরে ওর নিজস্ব কলকণ্ঠের ঝঙ্কার ফোটে না! ঝঙ্কারের চেষ্টাটাই ধরা পুড়ে শুধু।

সত্যবান আর কথা বলে না। বইটা মুড়েই বসে থাকে চুপচাপ।

শম্পা বলে, খেয়েছিলে?

সত্যবান কুণ্ঠিত গলায় বলে, না–মানে, খুব বেশী খিদে পায়নি

শম্পা এবার ফিরে দাঁড়ায়, বলে ওঠে, খুব বেশী খিদের মত ভয়ানক কিছু দিয়ে খাওয়া হয়েছিল কি?

না না, মানে মোটেই খিদে পায়নি।

শম্পা এবার ওর কাছাকাছি টুলটায় বসে পড়ে হতাশ গলায় বলে, আচ্ছা, তোমার জ্বালায় আমি কী করবো বলতে পারে?

করবার কিছু নেই। নিজের হাতেই খাল কেটে কুমীর এনেছে।

শম্পা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে বলে, সেকালের রাণী-মহারাণীরা কেন যে একটা গোঁসাঘর রাখতেন, সেটা মর্মে মর্মে অনুভব করছি। যে কোনো সম্ভ্রান্তচিত্ত মহিলার ওটা একান্ত প্রয়োজন।

একান্ত প্রয়োজন?

নিশচয়! সব সময় মহারাজদের চোখের সামনে থাকতে হলেই তো প্রেস্টিজ পাংচার! কখন যে রাণীর হাসতে ইচ্ছে হয় আর কখন যে কাঁদতে ইচ্ছে হয়

সত্যবান কথার মাঝখানে বলে ওঠে, সব সময় ওই প্রেস্টিজটা আঁকড়েই থাকতে হবে তার কী মানে আছে?

হুঁ! বাক্যিটাক্যি তো বেশ রপ্ত করে ফেলেছো দেখছি। তাহলে বলি–প্রেস্টিজটাই তো মানুষ। ওটা ছাড়া আর কী রইল তার? চারখানা হাত পা, চক্ষু কর্ণ নাসিকা, রক্ত মাংস হাড়, এসব তো পশুজাতিরও থাকে।

এটা তোমার তর্কের কথা, সত্যবান বলে, আমার তো মনে হয় তোমাদের ওই প্রেস্টিজ জিনিসটা পোশাকী জামা-কাপড়ের মত। তবে? নিজেদের লোকের কাছে ওটা রক্ষা করার এত কী দায়?

শম্পা মারা নেড়ে বলে, নো নো। নিজের লোক কেন, সব থেকে দায়  নিজের কাছেই রক্ষা করার।

সতাবান মলিনভাবে বল, এই জন্যেই তোমাকে আমার ভয় করে! মনে হয় তোমার মনের নাগাল একজন্মে কেন, সাতজন্ম ঘুরে এলেও পাব না।

উঃ, নিজের সম্পর্কে কী বিরাট ধারণা। যাক এখন খাবারটা খাবেন মহাশয়? নাকি এটাও নাগালের বাইরের বলে মনে হচ্ছে?

সত্যবান আস্তে বলে, তা হচ্ছে না। হয়ও না। তুমি যখন দয়া করে নিজে অনেকটা নেমে এসে নাগালের মধ্যে দাঁড়াও, তখন মনে হয় হয়তো এইবার সব সহজ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে আর কতক্ষণ? তার পরেই তো আবার ভয়।

উঃ, এবার তো দেখছি তুমিই আমার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই সব ভাবো তুমি?

ভাবনা ছাড়া আর তো কোনো কাজ নেই!

তার মানে এখন থেকে আমায় ভাবনায় পড়তে হচ্ছে। যাক, খাওয়ার প্রশ্নটা তাহলে ধামাচাপা পড়ল?

রাত তো হয়েই গেছে। একেবারে খেয়ে নিলেই হবে!..বরং ততক্ষণ তোমার আজকের– কী বলে, অভিযান না, তার গল্প শুনি।

শম্পা নিজস্ব ভঙ্গীতে ঝলসে ওঠে, অভিযান! ওরে ব্বাস! এরপর হয়তো তুমিই আমার অভিধান হয়ে দাঁড়াবে। তা অভিযানই বটে!

হঠাৎ একটু থামল, চুপ করে গিয়ে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে রইল। যেন সহসা ওর সেই অভিযানের স্মৃতির মধ্যে হারিয়ে যায়।

এখন ওর মুখের পাশের দিকটা দেখা যাচ্ছে যেন বড় বেশী চাঁচাছোলা। চোয়ালের হাড় কি আগে দেখা যেত শম্পার?

সত্যবান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে, কী রোগাই হয়ে গেছো তুমি!

পিসিও তাই বলছিল, কেমন যেন আচ্ছন্ন অন্যমনস্ক গলায় বলে শম্পা, আমি অবিশ্যি তা মানি না। কোনো কালেও আমি মোটকা ছিলাম না। পিসিকে তাই বললাম। তবে মার জবরদস্তিতে নিত্য খানিকটা করে দুধমাখন, মাছ ডিম, মিষ্টান্ন ইত্যাদি পেটের মধ্যে চালান করাতে বাধ্য হতাম তো। তার একটা এফেক্ট থাকবেই।

পিসির কাছে গিয়েছিলে তুমি?

সত্যবান একটু পর বলে কথাটা।

শম্পা তেমনি অন্যমনস্ক গলায় বলে,পিসির কাছে?

হ্যাঁ, পিসির কাছে? মা-বাবার সঙ্গে দেখা হল?

শম্পা সচেতন হয়।

শম্পা একটু নড়েচড়ে বসে, দূর! আমি কি ওখানে, মানে বাড়িতে গিয়েছিলাম নাকি? সকালে রুটি আনতে বেরিয়েছিলাম, হঠাৎ দেখি দোকানের পাশের একটা দেয়ালে প্ল্যাকার্ড সাঁটা-পুলক সঙ্ঘের বার্ষিক উৎসবে অভিনব আয়োজন, শ্যাম নৃত্যনাট্য, বিচিত্রানুষ্ঠান, শিল্পী অমুক অমুক, সভানেত্রী দেশবরেণ্য সাহিত্যিক শ্রীযুক্তা অনামিকা দেবী!..ঠিকানাটা দেখে হাত-পা স্রেফ হিম। বুঝতে পারছে, কেন? একেবারে দোরের কাছে! কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে থেকে কর্তব্য স্থির করে ফেললাম। তখন অবশ্য বলিনি তোমায়, ভাবলাম কি জানি বাবা, সভানেত্রীর কাছ পর্যন্ত পৌঁছতে পারি কিনা! বলে খেলো হব?…তা বুদ্ধির জোরে শেষ অবধি পৌঁছলাম।…একেবারে সভা-অন্তে গাড়িতে ওঠার সময় দেখি-অটোগ্রাফ শিকারীরা হেঁকে ধরেছে, আমিও হাত বাড়িয়ে বললাম–আমায় একটা অটোগ্রাফ..খাতা ফাতা অবিশ্যি ছিল না, ওই আর কি। দেখলাম পিসি বিভ্রান্তের মত চারদিকে তাকাচ্ছে, তারপর না থপ করে আমার হাতটা চেপে ধরে বলল, উঠে আয়।

কোথায় উঠে আয়?

এই দেখ, কোথায় আবার? গাড়িতে!

তারপর?

তারপর আর কি, বাধ্য মেয়ের মত উঠেই পড়লাম। পুলক সঙ্ঘের একটা ছোঁড়া বোধ হয় গাড়িতে, অত গেরাহ্যি করলাম না। করবই বা কি! তখন তো পিসি-ভাইঝি দুজনেই বাকশক্তিরহিত।…একটু পরে পিসি বলল, তোকে কী করব? ঠাসঠাস করে গালে চড় মারব, না চুলের মুঠি ধরে মাথা ঠুকে দেব? আমি বললাম, এই কি দেশবরেণ্যা সাহিত্যিকার ভাবের অভিব্যক্তি?

পিসি বলল, হ্যাঁ।

তারপর না অনেকক্ষণ পরে আমি বলে উঠলাম, আমি কিন্তু আমার আস্তানা থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি–অতঃপর নাটকের দুই নায়িকার মধ্যে এই মত কথোপকথন হলো।

কোথায় তার আস্তানা?

পুলক সঙ্ঘের কাছাকাছি। অনেকটা চলে এসেছি।

এখন কে ছাড়ছে তোকে?

ধরে ফেলার কথা তো ওঠে না বাপু। নিজেই ধরা দিয়েছি।

অশেষ দয়া তোমার। এখন চলো বাড়ি।

আজ থাক্‌ পিসি—

কেন, আজ থাক্‌ কেন? তোর মা-বাপের অবস্থাটা ভেবে দেখিস কোনো দিন?

ওনারা তো ডাঁটুস!

সেই ডাঁট তুই রাখতে দিয়েছিস লক্ষ্মীছাড়া হতভাগা মেয়ে?

ওরে ব্বাস! তুমি যে অনেক নতুন নতুন ভাষা শিখে ফেলেছ দেখছি ইতিমধ্যে

তুমি অনেককে অনেক শিখিয়েছে পাজি নিষ্ঠুর মেয়ে!

তুমি বুঝি এই গালমন্দগুলো শোনাবার জন্যে টেনে গাড়িতে তুললে?

তা ছাড়া আবার কী! এ তো কিছুই নয়, আরো অগাধ আছে। এতদিন ধরে আর কী জমানো সম্ভব ছিল তোর জন্যে।

তাহলে যা যা আছে তাড়াতাড়ি শেষ করে নাও। অর্থাৎ তূণে যত বাণ জমা করে রেখেছো, সব মেরে তুণ খালি করে ফেলল। আমাকে আরো বেশী দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলে ফিরতে বড় ভুগতে হবে পিসি। তখন আর তোমার পুলক সঙ্ঘ বিপুল পুলকে আমাকে আমার মাটকোঠায় পৌঁছতে যাবে না।

মাটকোঠা! মাটকোঠায় থাকিস তুই? পিসি যেন আছাড় খেলো।

দেখে হেসে বাচি না।

বললাম, তবে কি আশা করেছিলে, দালানকোঠা?

না, তোমার সম্পর্কে আশা-টাশা আর কিছু করে না কেউ। কিন্তু ইতিহাসটা কী?

ইতিহাস? বিশদ বলতে গেলে সাত দিন সাত রাতেও ফুরোবে না। সংক্ষিপ্ত ভাষণে হচ্ছে, সেই হতভাগা ছোঁড়াটা, যাকে জাম্বুবান বলে জানতে। তার একজন প্রাণের বন্ধু পার্টি বিরোধে ক্রুদ্ধ হয়ে তার প্রতি বোমা নিক্ষেপ করে ইহকালের মত পদগৌরব শেষ করে দেওয়ায়–

তার মানে?

মানে অতি সোজা। হাসপাতাল থেকে যখন বেলোল, চিরকালের চেনা পা দুটো নেই।

শম্পা!

আহা-হা, অমন আর্তনাদ করে উঠো না, রাস্তার লোক কী ভাববে। আচ্ছা আরো সংক্ষেপে সারি–প্রাণের বন্ধু ছাড়াও আলটু-বালটু কিছু বন্ধু ছিল তার, তাদের সাহায্যে দিব্যি সমুদ্র পার হয়ে কূলে উঠেছি—

কুলে উঠেছি মানে? তোর কথা কিছু বুঝতে পারছি না শম্পা, স্পষ্ট করে খুলে বল্ সব।

পিসি, আর বলতে গেলে তোমার ভাইয়ের বাড়ির মধ্যে গিয়ে ঢুকে পড়তে হবে। আমায় নামিয়ে দাও, বাসে করে চলে যাই।

বাড়ি যাবি না?

আজ থাক না।

পিসি হঠাৎ একটু চুপ করে থেকে আস্তে বললো, সেই ভাল, তুই নিজেই যাস।

তারপর ওই পুলক সঙ্ঘকে বললো, কথায় কথায় অনেকটা চলে এসেছি, একে তোমাদের পাড়াতেই পৌঁছতে হবে–

গাড়ির ব্যাপারে অনেক বারণ করলাম, শুনলো না, বললো, হাত ছাড়িয়ে রাস্তায় ঝাঁপ দিতে পারিস তো দে। ছেলেটা আর কি করবে, এখানে গলির মুখে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। অবিশ্যি পিসি ট্যাক্সি ভাড়াটা দিয়েছিল।

এই বস্তির ধারে দিয়ে গেল?

উপায় কী? বাসাটা না দেখে প্রাণ ধরে চলে যেতে পারে কখনো? এখন ভাবছি কাজটা ভাল করলাম, না মন্দ করলাম!

কোন কাজ?

এই যে হঠাৎ ধরা দেওয়া! কি জানো, হঠাৎ কী রকম যে একটা লোভ হলো!

.

ঠিক এই একই কথা ভাবছিল তখন বকুল নামের একটা মানুষ।

কাজটা ভাল করলাম, না মন্দ করলাম?

যদি শম্পার মা-বাপ জেনে ফেলে শম্পার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল অথচ আমি তাদের বলিনি, কী বলবেন তারা আমায়?

কিন্তু আমি কেমন করে বলবো, ওগো তোমাদের মেয়ে নিজে যেচে এসে আমার সঙ্গে দেখা করে আবার পালিয়ে গেছে, তোমাদের কাছে আসতে চায়নি!

ঘুম হয় না সারারাত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *