বিধুশেখরের ঘুম ভাঙে অতি প্ৰত্যুষে।। তাঁর শয়নকক্ষটি খুব প্রশস্ত, পশ্চিমশিয়ারী বিছানা। বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি পৃথক কক্ষে একলা ঘুমোন। বিধুশেখর রাত্রে ঘুমের মধ্যে কোনো বিয় পছন্দ করেন না। তাঁর স্ত্রী সৌদামিনী বাতব্যাধি ও বহুমূত্রে ভুগছেন, রাত্রে বারবার তাঁকে উঠতে হয়, তাই তিনি নিজেই অন্য ঘরে থাকেন।
পূর্বদিকের গবাক্ষ দিয়ে ভোরবেলার প্রথম সূর্যের রশ্মি এসে পড়ে বিধুশেখরের চোখে। তখনই তিনি চোখ মেলে তাকান। শীত-গ্ৰীষ্ম বারোমাস এই অভ্যোস। পঞ্চাশের বেশী বয়েস হয়ে গেলেও এখনো তাঁর শরীরে কোনো প্রকার জড়তা আসেনি, ঘুমভাঙা মাত্র তিনি উঠে বসেন এবং হাত জোড় করে ললাটে ঠেকিয়ে প্ৰণাম জানান কুলদেবতার উদ্দেশে।
তারপর তিনি নাকের সামনে তাঁর বাম করতল এনে নিশ্বাস-প্ৰশ্বাস পরীক্ষা করেন। বিধুশেখরের ধারণা, ঘুম ভাঙার পর মানুষের শুধু এক নাক দিয়ে প্রশ্বাস পড়ে। কোনোদিন বাম, কোনোদিন ডান। প্রত্যেকদিন এই সময় শয্যায় বসে বিধুশেখর এক মুহূর্তের জন্য চিন্তা করে নেন, আজ কোন নাকে, বাম না ডান? ঠিক কোনো নির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও কেন যেন বিধুশেখর প্রথম জাগরণের পর বাম নাকের প্রশ্বাসই পছন্দ করেন।
আজ ডান নাক দিয়ে নিশ্বাস পড়ছে। সুতরাং খাট থেকে নামবার জন্য বিধুশেখর প্রথমে বা পা বাড়ালেন। তারপর জানলার দিকে হেঁটে যেতে তিনি পযায়ক্রমে একবার বাঁদিকের নাকের ফুটো আর একবার ডান দিকের নাকের ফুটো টিপে ধরে ধরে প্রশ্বাস পাল্টাবার চেষ্টা করতে লাগলেন। এতে অনেক সময় সত্যিই বদল হয়ে যায়। সেই অবস্থাতেই তিনি সূর্য দেবতার উদ্দেশে ওঁ জবাকুসুম সঙ্কাশং ইত্যাদি মন্ত্র পাঠ করে চললেন।
বিধুশেখর জেগে ওঠার পরও সারা বাড়ি ঘুমিয়ে থাকবে, এটা অসম্ভব কথা। দ্বিতলের বারান্দায় তাঁর খড়মের ঠকঠকানি শুনলেই নীচতলায় একটা চাঞ্চল্য পড়ে যায়। তাঁর খিদমদগারির জন্য তৈরি হয়ে থাকে ভৃত্যমহল।
দোতলায় সিঁড়ির ঠিক সামনের ঘরটায় থাকেন তাঁর স্ত্রী সৌদামিনী। ইদানীং তিনি প্ৰায় চব্বিশ ঘণ্টাই শয্যাশায়ী। সে ঘরের দরজা ভেজানো, বিধুশেখর একটু ঠেলে খুললেন। ঘরের মেঝেতে শুয়ে থাকে। একজন দাসী। কতরি খড়মের শব্দ শুনে সে আগেই উঠে জড়োসড়ো হয়ে বসে রইলো দেয়ালের ধারে। সৌদামিনী তখনও নিদ্রাভিভূত, বিধুশেখর পালঙ্কের পাশে এসে দাঁড়িয়ে পত্নীর মুখের দিকে চেয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। কয়েক বৎসর আগেও সৌদামিনী ছিলেন স্কুলাঙ্গিনী ও সুখী চেহারার রমণী, হঠাৎ যেন শরীরে খরা লেগেছে, মেদ ঝরে গিয়ে শিথিল হয়ে গেছে চামড়া, গৌরবর্ণ এখন পাণ্ডুর হয়ে এসেছে।
বিধুশেখরের চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কে কিছু জ্ঞান আছে। শরীরের বর্ণ পরিবর্তন দেখে তিনি রোগের মাত্রা নির্ণয় করতে পারেন। তিনি ঘুমন্ত পত্নীর একটি হাত তুলে নিয়ে নোখের ডগা ও তালুর রং নিরীক্ষণ করলেন, তারপর নাড়ী টিপে দেখলেন। আবার হাতটা তাঁর বুকের ওপর আস্তে নামিয়ে রেখে বিধুশেখর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। সবই ললাটলিপি! বিধুশেখর কোনোদিন তাঁর পত্নীর প্রতি অবহেলা, অযত্ন করেননি। তিনি ব্ৰাহ্মণ, তাঁর ক্ষমতা আছে, অর্থ আছে, তিনি একাধিক বিবাহ করতে পারতেন অনায়াসেই। কিন্তু বিধুশেখর একদার। সৌদামিনী পাঁচটি কন্যাকে গর্ভে ধরেছেন। একটি পুত্রসন্তানও উপহার দিতে পারেননি। স্বামীকে। বিধুশেখরের কোনো বংশধর থাকবে না, তবুও তো তিনি অন্য পত্নী গ্রহণ করলেন না। বিধুশেখরেরই সমব্যবসায়ী রাজনারায়ণ দত্ত কী কাণ্ড করছেন! রাজনারায়ণ দত্তের একমাত্র পুত্ৰ মধু খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করে দেশান্তরী হয়েছে। শোনা যায় সে সুদূর মাদ্রাজে আছে। মধুকে ত্যাজ্যপুত্র করে আর একটি পুত্রসন্তান পাবার আশায় ক্রুদ্ধ রাজনারায়ণ দত্ত একটার পর একটা বিবাহ করে চলেছেন। নিষ্ফল চেষ্টা, লোক-হাসানো হচ্ছে শুধু।
সৌদামিনী নিজেই বিধুশেখরকে আর একটি বিবাহ করার জন্য পীড়াপীড়ি করেছেন অনেকবার, বিধুশেখর কৰ্ণপাত করেননি। ভাগ্যে থাকলে এক পত্নীতেই পুত্রসন্তান পাওয়া যেত।
নিয়তি যে কার প্রতি কী রকম ব্যবহার করবেন, তার কোনো ঠিক নেই। স্বামী সোহাগ থেকে কখনো বঞ্চিত হননি, শারীরিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব হয়নি কোনোদিন, তবু তাঁকে এমন কাল রোগে ধরলো। সাধ আহ্লাদ সব মিটে গেল এ জীবনের মতন, এখন শুধু মৃত্যুর পানে তিল তিল করে এগোনো। ওদিকে দেখো বিম্ববতীর ভাগ্য। বিম্ববতী সারাজীবনে স্বামীসঙ্গ পেয়েছেন কমই, রামকমল সিংহ প্ৰায় রাত্রেই গৃহে থাকতেন না, স্বভাবতই তাঁর খুবই মনোবেদন থাকবার কথা, তবু বিম্ববতীর কি নিটোল স্বাস্থ্য, শরীরে রোগ ভোগ নেই। এখনো তাঁর রূপ যেন ফেটে পড়ছে। বিধবা হলেন অকালে, তবু বিম্ববতী পুত্ৰগর্বে সৌভাগ্যবতী।
আবার একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিধুশেখর বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে। পুত্রসন্তান না থাক, বিধুশেখর দত্তকপুত্র নেবার পক্ষপাতী নন। তাঁর কনিষ্ঠা কন্যার স্বামীকে তিনি ঘরজামাই করে রেখেছেন। আরও কয়েক বছর বিধুশেখর তাঁর জামাই দুর্গাপ্ৰসাদের মতিগতি লক্ষ করবেন। ছেলেটি বড় বেশী চুপচাপ, এখনো তাকে পুরোপুরি ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। যদি সে দুঃশীল হয়, তবে বিধুশেখর সমস্ত সম্পত্তি দেবত্র করে দিয়ে যাবেন। অনেকটা তাঁর অমতেই রামকমল তাড়াহুড়ো করে গঙ্গানারায়ণকে দত্তক হিসেবে গ্ৰহণ করেছিল, এই তো তার পরিণতি! গঙ্গানারায়ণ! আজকাল এই নামটি মনে পড়লেই বিধুশেখরের গাত্ৰদাহ হয়।
বিধুশেখর নীচে নেমে এলেন। শীতকালে তিনি রৌদ্রে বসে দাঁতন করেন। বাড়ির পিছনের বাগানে ভৃত্যরা এরই মধ্যে তাঁর জন্য একটি আরাম কেদারা পেতে রেখেছে। একটি ছোট বেতের ঝুড়িতে কয়েকটি নিমডাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একজন ভৃত্য। বিধুশেখর বাছাবাছি করে একটি নিমডাল তুলে নিলেন। তারপর দাঁতন করতে করতে তিনি চিন্তা করতে লাগলেন গঙ্গানারায়ণের কথা। যৌবনের দৰ্পে গঙ্গানারায়ণ যেন ধরাকে সারা জ্ঞান করতে শুরু করেছে। বিধুশেখরের প্রত্যেকটি নির্দেশ অমান্য করেই যেন সে আনন্দ পায়। গঙ্গানারায়ণকে তিনি পাঠিয়েছিলেন যশোহরের ইব্রাহিমপুরের কুঠিতে। সেখানে অনেকখানি জমি নীলচাষের জন্য পত্তন নেওয়া আছে। নীলচাষ নিয়ে সম্প্রতি কিছু কিছু হাঙ্গামা হচ্ছে। এই চাষ এখন অত্যন্ত লাভের কারবার তাই দলে দলে সাহেবরা ঝুকেছে। এদিকে। ভাগ্যান্বেষী বে-সরকারী ইংরেজরা এদেশে এসে নানান ব্যবসা ফেদে বসে, এখন তারা হুড়মুড়িয়ে যাচ্ছে নীলচাষে। বিধুশেখর বুঝেছেন যে সাহেবদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতীয় পারা যাবে না। মফস্বলের আদালতে ইংরেজদের বিচার হয় না বলে তারা কোনো রকম আইনের পরোয়া করে না, তারা চাষীদের ওপর যত খুশী জুলুম করতে পারে। সেইজন্যই বিধুশেখর চান নীলচাষের জন্য পত্তন দেওয়া জমি সাহেবদের কাজে ইজারা দিয়ে দিতে, নীলের বাজার তেজী থাকতে থাকতে দাম বেশ ভালো পাওয়া যাবে। সেই উদ্দেশ্যে তিনি পাঠালেন গঙ্গানারায়ণকে, কিন্তু সে করে এলো সম্পূর্ণ বিপরীত কাজ। সে সাহেবদের কাছে জমি হস্তান্তর করার কোনো চেষ্টাই করেনি, বরং উল্টে সে চাষীদের নীলচাষের দরুন যে দাদন দেওয়া হয়েছিল তা সব মকুব করে দিয়ে তাদের সেই জমিতে ধান চাষের অনুমতি দিয়ে এসেছে।
বিধুশেখর চিক করে থুতু ফেললেন মাটিতে। চাষীদের জন্য দরদ! গঙ্গানারায়ণের দুরভিসন্ধি বুঝতে বিধুশেখরের আর বাকি নেই। চাষীদের কাছে উদার, দেশহিতৈষী সেজে সে প্রমাণ করতে চায় যে যেন সে নিজেই জমিদার! নবীনকুমার এখনো ছোটো, তাকে কেউ চেনে না, প্ৰজারা এখনো গঙ্গানারায়ণকেই রামকমল সিংহের জ্যেষ্ঠপুত্র হিসেবে মানে। ছঃ! বিধুশেখর মনে মনে হাসলেন। তিনি ইচ্ছে করলেই এখনো গঙ্গানারায়ণকে আবর্জনায় ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারেন। গঙ্গানারায়ণ জানে না। বিধুশেখর যদি চাইতেন তাহলে তিনি নিজেই এতদিনে রামকমল সিংহের সমগ্র সম্পত্তি গ্রাস করে ফেলতে পারতেন। এমনকি রামকমল সিংহের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে জোড়াসাঁকো থেকে সমগ্ৰ সিংহ পরিবারকে মুছে ফেলে দেওয়াও তাঁর পক্ষে অসম্ভব ছিল না। সে-সব তিনি করেননি শুধু বিম্ববতী আর নবীনকুমারের মুখ চেয়ে। নবীনকুমারের কথা চিন্তা করলেই তাঁর মন কোমল হয়ে যায়।
নবীনকুমার বয়ঃপ্রাপ্ত হোক, তাকে তিনি কলকাতার ধনী, অভিজাত সমাজের একেবারে চূড়ায় প্রতিষ্ঠিত করে যাবেন। তার আগে তিনি সম্পূৰ্ণ ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়ে যাবেন গঙ্গানারায়ণকে, নইলে তাঁর আত্মা কিছুতে তৃপ্ত হবে না। কুলাঙ্গার! বিধুশেখর একসময় এত প্রশ্রয় দিয়েছিলেন গঙ্গানারায়ণকে, তার প্রতিদানে সে কিনা তাঁরই কন্যার ধর্মনাশ করতে উদ্যত হয়েছিল! দুধ-কলা দিয়ে এই কাল-সপকে পোষা হয়েছে এতদিন। এখন সে বিধুশেখরের সামনেই ফোঁস ফোঁস করতে আসে। ওকে বিধুশেখর পথের ভিখারী করে ছাড়বেন।
মৃত্যুর আগে তিনি নির্দেশ দিয়ে যাবেন, যেন নবীনকুমারই তাঁর মুখাগ্নি করে।
দাঁতন শেষ করে নিমডালটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বিধুশেখর ডান হাতটা বাড়িয়ে রইলেন। একজন ভৃত্য অমনি একটি তামার জিভ-ছোলা নিয়ে এলো। খানিকক্ষণ জিহ্বা পরিষ্কার করার পর তিনি সেটা ফিরিয়ে দিলেন ভৃত্যটির দিকে। সে জল নিয়ে প্রস্তুত। মুখ প্রক্ষালন করার পর বিধুশেখর গেলেন অন্য প্ৰাতঃকৃত্য সেরে আসতে।
সকালবেল পুজো-আচ্চা শেষ করার আগে বিধুশেখর সাধারণত কারো সঙ্গে একটিও কথা বলেন না। তাই হুকুমের অপেক্ষা করতে হয় না ভৃত্যদের, তারা প্রত্যেকদিনই একই নিয়মমতন পরপর সব কিছু সাজিয়ে রাখে।
প্ৰাতঃকৃত্যের পর স্নান। বিধুশেখরের বাড়ির সংলগ্ন নিজস্ব পুষ্করিণী আছে। কিন্তু তিনি পুষ্করিণীতে স্নান করা পছন্দ করেন না। অতি ভোর থেকেই ভৃত্যরা বাগানে একটি পোর্সিলিনের বিরাট গামলায় জল ভরে রাখে। সেই জল রৌদ্রে উষ্ণ হয়। তার পাশেই পাতা থাকে একটি মাদুর। প্ৰাতঃকৃত্য সেরে এসে বিধুশেখর বাসী কাপড় ছেড়ে একটি তেলধূতি পরে সেই মাদুরের ওপর শুয়ে পড়েন, তখন কয়েকজন ভৃত্য তাঁর শরীরে তৈল মর্দন করে। এই ব্যাপারটা চলে অনেকক্ষণ। প্ৰভু বা ভূত্যেরা কেউ কোনো কথা বলে না। শুধু দলাই মলাই করার চপাস চটাং শব্দ হয়। তারপর এক সময় বিধুশেখর নেমে পড়েন। জলের গামলায়। সেখানেও তিনি শুয়ে থাকেন স্থির হয়ে, ভূত্যেরা সম্মার্জন করে তাঁর অঙ্গ।
এত কাণ্ড সত্ত্বেও তাঁর স্নানটি প্রায় কাকমানের পর্যয়ে পড়ে। জল সম্পর্কে তাঁর ভীতি আছে। পুষ্করিণীতে তো নয়ই, বিধুশেখর এত ধর্মপ্ৰাণ হয়েও কখনো গঙ্গায় স্নান করতে যান না। তাঁর গৃহে গঙ্গাজল রাখা থাকে। প্রতিদিন পুজোর আগে তিনি সেই জল একটু মাথায় ছিটিয়ে নেন। নৌকাযোগে মহাল পরিদর্শনে যেতে হয় বলে তিনি নিজে জমিদারি পর্যন্ত কেনেননি। তাঁর নিজের অধিকাংশ সম্পত্তি লগ্নী করা আছে কলকাতার বিভিন্ন হোসে।
স্নান সেরে বিধুশেখর ভেজা কাপড় পরেই চললেন গৃহের দিকে। নাকের সামনে করতল এনে আবার তিনি পরীক্ষা করলেন তাঁর প্রশ্বাস। তাঁর ভ্রূকুঞ্চিত হলো। স্নানের পর দেহ পবিত্র হয়, তখন দু নাক দিয়েই সমানভাবে নিশ্বাস প্রশ্বাস হয়, তখন মানুষ মুক্ত হয় ইড়া-পিঙ্গলার প্রভাব থেকে। অথচ আজও ডান নাক দিয়ে প্রশ্বাস পড়ছে কেন? একি কোনো দুর্লক্ষণ?
সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ডান চোখের তারা একবার কেঁপে উঠলো।
বিধুশেখর মনের দুর্বলতার প্রশ্রয় না দিয়ে ওপরে উঠে এসে বস্ত্র পরিবর্তন করলেন। একটি পট্টবস্ত্ৰ পরে তিনি গেলেন পূজার ঘরে। কুশাসনে বসে গায়ত্রী মন্ত্র জপ করতে করতেও তিনি অন্যমনস্কভাবে একবার নাকের কাছে নিয়ে এলেন হাত। এখনো ডান নাক দিয়েই!
এই ঠাকুরঘর এক সময় বিন্দুবাসিনীর অধিকারে ছিল। প্রতিদিন সকালে বিধুশেখর এখানে এসে পূজায় বসলেই বিন্দু তার পিতার জন্য কোষাকুষি, গঙ্গাজল, ফুল সব এগিয়ে দিত। সারা দিন রাত্রির মধ্যে শুধু এই সময়টিতেই বিন্দুর সঙ্গে দেখা হতো বিধুশেখরের। দু একটি কথাবার্তা হতো। এখনো এই কক্ষে এসে বসলেই বিন্দুর কথা একবার মনে পড়ে বিধুশেখরের। কিন্তু সেই হতভাগিনী কন্যার কথা ভেবে বিধুশেখরের মনে কোনো দুঃখবোধ হয় না। অপরাধের তুলনায় তিনি তো বিন্দুকে অতি মৃদু শাস্তিই দিয়েছেন। মতিচ্ছন্ন হয়ে সেই মেয়ে এই ঠাকুরঘর অপবিত্র করেছিল। গঙ্গানারায়ণ তাকে পাপ মনে দেখেছিল। পাপ মনে তাকে স্পর্শ করতে এসেছিল, তার আগে বিন্দু বিষ পান করেনি কেন? বিন্দু, তেমনভাবে মরলে কন্যার জন্য গর্বিত হতেন বিধুশেখর, কন্যার নামে কালীঘাটের মন্দিরে একটি পাথর বাঁধিয়ে দিতেন। সংযমই তো বিধবার অলঙ্কার। যে বিধবা এ জন্মে প্রতিটি বিধান মেনে কঠোরভাবে আত্মসংযম পালন করে, পরজন্মে তার সিথের সিঁদুর অক্ষয় হয়। এ কথা কতবার তিনি বুঝিয়েছিলেন বিন্দুকে। তা সে শুনলো না, জীবনে তিনি তার মুখ দর্শন করবেন না।
পূজা সেরে উঠে দাঁড়ালেন বিধুশেখর। আজ পূজায় ভালো করে মন বসেনি। মনকে তিনি কিছুতেই একাগ্র করতে পারছিলেন না। তবু শুধু শুধু আর বসে থাকার কোনো মানে হয় না। সায়াহ্নে আর একবার বসবেন পূজায়।
নাকের কাছে আবার হাতটা আনলেন। এখনো ডানদিকে।
একটি কমলালেবু, একটি সন্দেশ ও এক গ্লাস ঘোলের সরবত খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করলেন বিধুশেখর। তারপর আবার এলেন পত্নী সৌদামিনীর ঘরে।
সৌদামিনীর নিদ্ৰা ভঙ্গ হয়েছে কিছু আগে। তবে এখনো তিনি শয্যার ওপরেই আধো-শোয়া হয়ে রয়েছেন, একজন নাপিতেনী আলতা পরাচ্ছে তাঁর পায়ে। আগে এসব আলতা পরানো কিংবা অন্যান্য প্ৰসাধনপর্ব শুরু হতো বিকেলবেলায়, কিন্তু এখন সৌদামিনীর নানারকম বাতিক দেখা দিয়েছে। যখন তখন তাঁর নানারকম ইচ্ছে জাগে, আর যখন যেটি চাইছেন, তখন তাঁর সেটি চাই-ই। একদিন রাত দুপুরে ঘুম ভেঙে তিনি হঠাৎ নতুন গুড়ের মোয়া খাবার বায়না ধরেছিলেন। তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন যে দুর্গাপুজোর বাজনা বাজছে আর তার পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁর মৃতদেহ। শীতকাল আসবার আগেই তিনি মরে যাবেন। স্বপ্নে এরকম ইঙ্গিত ছিল, তাহলে আর এবছরের নতুন গুড়ের মোয়া খাওয়া হবে না। সে কথা ভেবেই দুঃখে তাঁর বুক ফেটে গেল, তিনি অবোধ বালিকার মতন কান্না জুড়ে দিয়েছিলেন।
সৌদামিনী অসুস্থ হয়ে পড়ার পর থেকে তাঁর বিধবা বড় মেয়ে নারায়ণী সংসারের কর্তৃত্ব নিয়েছে। দাসীরা ডেকে এনেছিল তাকে। নতুন গুড়ের মোয়া তো দূরে থাক, বাড়িতে কোনো রকম মোয়াই নেই, এত রাত্রে তা পাওয়া যাবেই বা কোথায়। নারায়ণী মাকে অনেক করে বুঝিয়েছিল। কিন্তু সৌদামিনী কিছুতেই শুনবেন না। ওরে তোদের জন্য আমি এত করিচি, আর তোরা আমার এইটুকুনি সাধ মিটোবিনি, এই বলে কী কান্না! নারায়ণী পিতার ঘুম ভাঙায়নি। সেই রাত্রেই পোস্তাবাজারে লোক পাঠিয়ে গুড় আনিয়ে বাড়িতে মোয়া বানিয়ে মাকে খাইয়েছিল সে।
বিধুশেখর ঘরের মধ্যে এসে একটুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেন। নাপিতেনী দ্রুত কাজ সেরে বেরিয়ে গেল। তারপর বিধুশেখর কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আজ কেমন বোধ কচ্চো, সদু?
স্বামীকে দেখে সৌদামিনী মাথার ঘোমটা একটু টেনে দিয়ে বললেন, ভালো, কালকের চেয়ে আজ বেশী ভালো আচি।
সৌদামিনীর এই একটা গুণ, স্বামীর কাছে কখনো নিজের অসুখ বিষয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করতে চান না। তাঁর স্বামী অতিশয় ব্যস্ত কাজের মানুষ। তাঁর চিন্তা আর বাড়াতে চান না। সতী-সাধ্বী পত্নী।
বিধুশেখর জিজ্ঞেস করলেন, হাঁটুর গ্যাঁটের বেদনোটা কমেচে?
সৌদামিনী বললেন, একদম নেই-ই বলতে গেলে! আপনি ও নিয়ে আর ভাববেন না। কোবরেজমশাই খুব ভালো ওষুধ দিয়েচেন।
তারপর ফ্যাকাশে ভাবে একটু হাসির চেষ্টা করে তিনি আবার বললেন, কোবরেজমশাইকে অমান ভালো ভালো ওষুধ দিতে আপনি নিষেধ করুন না। এখন সিথের সিঁদুর নিয়ে মত্তে পারলেই যে আমার সুখ।
বিধুশেখরও সামান্য কৌতুকের চেষ্টা করে বললেন, তা কী করে হবে! পত্নীবিয়োগ তো আমার কোষ্ঠীতে লেকা নেই। আমার আয়ু আশি বচর, তুমি তার চে বেশী বাঁচবে।
সৌদামিনী বললেন, আশি বচর কেন, আপনি বাঁচবেন আরও ঢের বেশী। মেয়েমানুষের অতদিন বেঁচে থাকা ভালো নয়।
বিধুশেখর পত্নীর ললাটে হাত রাখলেন। ঠাণ্ডা, একটু বেশী ঠাণ্ডা। এটাই বিধুশেখরকে চিন্তায় ফেলে। অসুস্থ মানুষের শরীরে তাপ বেশী থাকারই তো কথা। অথচ সৌদামিনীর দেহের তাপ যেন দিনের পর দিন ক্রমশই কমে আসছে।
বিধুশেখর বললেন, হ্যাঁ, ভালোই তো মনে হচ্চে আজ।
—সুহাসিনীদের কোনো পত্তর এয়েচে?
বিধুশেখরের কনিষ্ঠা কন্যা আর জামাই দুর্গাপ্রসাদ গেছে কৃষ্ণনগরে। ওখানেই বিধুশেখরের পৈতৃক বাড়ি। সে বাড়ি বহুদিন অযত্নে পড়ে আছে, সেইজন্যই বিধুশেখর জামাইকে সেখানে পাঠিয়েছেন যাতে সে বাড়িটি সারিয়ে, বাগানের আগাছা জঙ্গল পরিষ্কার করে সেটা ভদ্রস্থ করে তুলতে পারে। মস্ত বড় বাড়ি, শুধু শুধু ফেলে রাখা কোনো কাজের কথা নয়। ইংরেজ কোম্পানি রাজত্ব নেবার পর বাড়ি ভাড়ার বেশ চাহিদা বেড়েছে, সরকারী কর্মচারীরা উচ্চ দামে বাড়ি ভাড়া নেয়, সুতরাং ও বাড়িটিও ভাড়া দিলে কিছু সুসার হয়। কন্যাকেও পাঠিয়েছেন জামাতার সঙ্গে, কিছুদিন ধরে সে পেটের পীড়ায় ভুগছে, ওখানে গেলে কিছুটা স্বাস্থ্য পরিবর্তন হতে পারে। কৃষ্ণনগরের জল-হাওয়া ভালো।
বিধুশেখর বললেন, না, আসেনি। এই তো কদিন মাত্তর গ্যালো, এখনো পত্র আসার সময় হয়নি।
—আজ ও বাড়ি যাওনি?
—যাইনি, যাবো।
ও বাড়ি অথাৎ সিংহ ভবন। প্রতিদিন সকালে সিংহ ভবনে একবার গিয়ে সব খবরাখবর নিয়ে আসা বিধুশেখরের বহুকালের অভ্যোস। ও বাড়ির সব রকম ব্যবস্থাপনা এখনো বিধুশেখরের নির্দেশেই চলে। গঙ্গানারায়ণ যতই বিদ্রোহী হবার চেষ্টা করুক, বিধুশেখর এখনো দুই পরিবারের কত।
পত্নীর কাছ থেকে বিদায় নেবার আগে বিধুশেখর সৌদামিনীর নাকের কাছে হাত নিয়ে বললেন, শ্বাস ফেলো তো!
আশ্চৰ্য, সৌদামিনীরও ডান নাক দিয়ে প্রশ্বাস পড়ছে।
ললাট কুঞ্চিত করে বিধুশেখর ঘর থেকে বেরিয়ে এসে নেমে এলেন নীচে। বৈঠকখানা ঘরের সামনের বারান্দায় কিছু উমেদার, দালাল ও প্রার্থীর ভিড় জমেছে। আজকাল এক নতুন উৎপাত শুরু হয়েছে, যার নাম চাঁদা। আগে ছেলের পৈতে, বাপের শ্ৰাদ্ধ, কন্যাদায় ইত্যাদির নাম করে কিছু দরিদ্র, কিছু ফেরেববাজ সাহায্য চাইতে আসতো। আজকাল আসে ইস্কুলের চাঁদা, সঙের চাঁদা, গাজন, চড়ক, . দুর্গোৎসব সব কিছুর জন্য চাঁদ। আর এই চাঁদা-আদায়কারীরা যেন গুড়ের নাগরির ওপরকার মাছি, কিছুতেই তাড়ানো যায় না।
প্রার্থীরা বিধুশেখরকে দেখে দণ্ডবৎ হলো। এদের থেকে একটু দূরে দাঁড়ানো লম্বা রাইমোহনকেই আগে চোখে পড়ে। খগরাজের ভঙ্গিতে সে হাত জোড় করে রয়েছে।
রামকমল সিংহ মারা যাবার পর রাইমোহন মাঝে মাঝেই এ বাড়িতে যাতায়াত শুরু করেছে। ব্যাপারটা বোঝেন বিধুশেখর। মোসাহেবী করাই রাইমোহনের পেশা, সে নতুন বাবু ধরতে চায়। কিন্তু রাইমোহনের পক্ষে এটা ভুল জায়গা, বিধুশেখর মোসাহেবদের নিয়ে সময় কাটানোকে মোটেই উৎকৃষ্ট আমোদের পন্থা বলে মনে করেন না। তাছাড়া, মোসাহেবরা তাঁর কাছে এসে মদের স্রোতেও ভাসতে পারবে না কিংবা মাগীবাড়িতে গিয়ে ফুর্তির অংশ পাবারও আশা নেই। শহরসুদ্ধ সকলেই জানে এর কোনোটাতেই রুচি নেই বিধুশেখর মুখুজ্যের। তবু রাইমোহন আসে কেন?
বিধুশেখর তার উদ্দেশ্যেই প্রশ্ন করলেন, কী হে, কী বার্তা?
রাইমোহন বিগলিত হাস্যের সঙ্গে বললো, আজ্ঞে, আপনার কুশল সংবাদ নিতে এয়েচিলুম।
তাকে কোনো উত্তর না দিয়ে এবং অন্যদের প্রতি দৃকপাত না করে বিধুশেখর গম্ভীরভাবে এগিয়ে গেলেন দ্বারের দিকে। দ্বারওয়ানরা বুকে সেলাম জানালো, কোচম্যান ছুটে এসে জিজ্ঞাসা করলো, গাড়ি যুতবে কি না, বিধুশেখর হাত তুলে নিষেধ করলেন। তারপর পদব্ৰজেই চললেন সিংহ ভবনের দিকে; তাঁর মন বলছে, ও বাড়িতে হয়তো কোনো বিপদ ঘটেছে।
বিধুশেখরের দীর্ঘ ঋজু চেহারা, লম্বা লম্বা পদক্ষেপে তিনি অল্পকালের মধ্যেই পৌঁছে গেলেন ও বাড়িতে। দ্বারের কাছেই দেখা হলো দিবাকরের সঙ্গে। সে শুষ্ক মুখে বিধুশেখরের অপেক্ষাতেই যেন দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে বুকটা একবার কেঁপে উঠলো বিধুশেখরের, তিনি ব্যস্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন, ছোট খোকা কেমন আছে? নবীন?
দিবাকর বললো, ভালো। সে গুরুমশাইয়ের কাচে পাঠ নিচে!
–আর তোমাদের কতামা, তাঁর শরীর ভালো আচে তো?
–আজ্ঞে হ্যাঁ। তিনি তো এই মাত্তর গঙ্গাচ্চানে গেলেন!
স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন বিধুশেখর। তিনি অকারণ দুশ্চিন্তা করছিলেন। সবই ঠিক আছে। তিনি গঙ্গানারায়ণ সম্পর্কে কোনো প্রশ্নই করলেন না।
দিবাকর তবু কাচুমাচু মুখ করে বললো, বড়বাবু, আপনার সঙ্গে দুটো কতা ছেল! এই বুড়ো বয়েসে কি বউ ছেলে নিয়ে না খেয়ে মরবো? এই আপনাদের বিচার হলো?
বিধুশেখর বললেন, কেন, কী হয়েচে?
—সেই শিশুকাল থেকে এ বাড়ির অন্ন খেয়িচি, কত্তাবাবুদের সেবার কোনো তুরুটি করিনি, মাতার রক্ত জল করে খেটিচি।
বিধুশেখর ঈষৎ ধমক দিয়ে বললেন, ভণিতা না করে আসল কতটা বল।
দিবাকর সঙ্গে সঙ্গে বললো, আজ্ঞে গঙ্গাদাদা আমায় লুটিস দিয়েচেন। তিনি আমার চাকরি রাখবেন না। তিনি বলেচেন, এস্টেটের কাজে আমার আর দরকার নেইকো!
–কেন?
—আজ্ঞে আমি নাকি নিমোখহারাম! আমি অযোগ্য।
বিধুশেখর জানেন, দিবাকর নিমকহারামও নয়, অযোগ্যও নয়। সে চোর। তবে অতি বিশ্বাসী চোর। তার ওপর কোনো কাজের ভার দিলে সে ঠিকই সেটা উসুল করে আসবে, কিছু চুরিও করবে। আজকাল সব ব্যাটাই চোর, কিন্তু কাজ উসুল করতে জানে কজন? সবাই শুধু চুরি করতেই জানে। দিবাকরের মতন কাজের লোক আজকাল দুর্লভ।
—গঙ্গা তোকে ছাড়িয়ে দেবে বলেচে?
—আজ্ঞে ঠিক স্পষ্ট বলেননি। তবে ভাবখানা সেই রকম। শুনে তো আমি আকাশ থেকে পড়িচি। এতকাল সব হুকুম নিয়িচি আপনার কাচ ঠেঙে-মুখের কতটি খসাতে না খসাতেই আমি…
দিবাকর অতি ধূর্ত। পিপড়ে যেমন আগে থেকে ঝড় বৃষ্টির ইঙ্গিত পায়, সেই রকম সে টের পেয়েছে যে বিধুশেখরের সঙ্গে গঙ্গানারায়ণের একটি চূড়ান্ত সঙ্ঘর্ষ আসন্ন। এই সময় সে। নিরপেক্ষভাবে দূরে থাকতে পারে না, লাভের অংশভাগী হতে গেলে আগে থেকেই তাকে যে-কোনো এক পক্ষে যোগ দিতে হবে। সব দিক বিচার করে সে বুঝেছে, বিধুশেখরের পক্ষে থাকাই সবচেয়ে শ্ৰেয় ও নিরাপদ। কূটকৌশলী বিধুশেখরের তুলনায় গঙ্গানারায়ণ নিতান্ত শিশু ছাড়া তো আর কিছুই নয়।
বিধুশেখর হেসে বললেন, তুই দু-চারদিন বাইরে ঘুরে আয় বরং। তোকে আমি ইব্রাহিমপুরের কুঠিতে পাঠাবো ভাবচিলুম। সেখানকার প্রজাদের একটু শায়েস্তা করতে হবে। দরকার হলে দু-চারটে ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতে পারবি না?
দিবাকর বললো, আজ্ঞে, আপনি যদি হুকুম করেন তাহলে আমি যমের বাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দিয়ে আসতে পারি।
দিবাকরের সঙ্গে কথাবার্তা আর বেশী দূর এগোলো না। বিধুশেখরের নিজস্ব ভৃত্য রঘুনাথ ছুটতে ছুটিতে এসে একটা দুঃসংবাদ দিল। কৃষ্ণনগর থেকে একজন লোক এসেছে। সুহাসিনী গুরুতর রকমের অসুস্থ।
খবর শুনে বিধুশেখর একটুক্ষণের জন্য অনড়, স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। বিপদ যে এই দিক থেকে আসবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি। সকাল থেকে ডান নাকের নিশ্বাস দেখেই তাঁর মনে কু-ডাক ডেকেছিল। সুহাসিনী—তাঁর কনিষ্ঠা কন্যা, তাঁর সবচেয়ে আদরের সন্তান-।
আচ্ছন্ন অবস্থা থেকে আবার সজাগ হলেন বিধুশেখর। একটুও সময় নষ্ট করলে চলবে না-সুহাসিনীকে বাঁচাবার শেষ চেষ্টা যে করতেই হবে।