কাছে যাওয়া বড্ড বেশী হবে।/এই এখানেই দাঁড়িয়ে থাকা ভালো;/তোমার ঘরে থমকে আছে দুপুর/ বারান্দাতে বিকেল পড়ে এলো। লাইনগুলো কানে আসতেই মুখ ফেরাল দীপাবলী। দরজার ওপাশে অলোক। এখন মধ্যদিন অথবা দিন গড়াবার সময়। যেহেতু সকাল থেকে আকাশ মেঘে ছিল ছাওয়া, সময়টাকে ধরতে গেলে ঘড়ির দর্শন চাই। দীপাবলীর আজ মন এবং শরীরে কয়েক জন্মের আলস্যি, সেই ইচ্ছেও নেই।
নতুন ফ্ল্যাটে এসেছে দিন তিনেক। চারতলায় দখিন খোলা আড়াই ঘরের ফ্ল্যাটটি সুন্দর। আজ ছুটির দিন। খাওয়া দাওয়ার পাট চুকেছিল অনেকক্ষণ। একটু শরীর এলিয়ে নিতে বিছানায় এসেছিল দীপাবলী। অলোকের আবৃত্তিতে পাশ ফিরে শুয়ে আঙ্গুলে কপট ভঙ্গী আনল, তাহলে ওখানেই থাকো। কাছে আসতে হবে না।
অলোক হাসিমুখে এগিয়ে এল। দুটো হাতে দীপাবলীর কাঁধ ধরে ঝুকে পড়তেই নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করে দীপাবলী বলল, বাঃ মুখে যা বলছ কাজে তার ঠিক উল্টোটা করা হচ্ছে। এ তো কবিকে অপমান করা!
মাথা নাড়ল অলোক, শুনি আপন বুকের দুরুদুরু/ সেখানে এক মত্ত আগন্তুক/ রক্তকণায় তুলেছে তোলপাড়/ সেইখানেতেই সুখ, আমার সুখ।
দুহাতে দীপাবলীকে নিজের বুকের হাড়ে তুলে নিল অলোক। গলার শিরায় ঠোঁট রেখে। ফিসফিসিয়ে বলল, আলিঙ্গনের প্রকাণ্ড এক বনে/ ঠোঁটে তোমার দীপ্ত কমণ্ডলু/উপচে পড়ে বিদ্যুত চুম্বনে।
মোটেই না। উঃ দম বন্ধ হয়ে আসছে। প্লিজ।
ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অলোক বলল, তুমি বেরসিক। তোমার হাতের চাপে নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না, এমন করে কেউ কাউকে ধরে নাকি! দীপাবলী গলায় হাত বোলাতে লাগল।
সরি। কিন্তু আর কে কাকে ধরেছে কিভাবে তুমি জানো নাকি?
সঙ্গে সঙ্গে হাত তুলল, এই মারব কিন্তু, ভাল হবে না বলছি।
ভয়ে সরে যাওয়ার ভান করল অলোক, সরল না, এবার আমি কাছে আসি?
না!
ইনজাংশন।
হ্যাঁ। তুমি একটা রাক্ষস। কাল রাত্রে আমাকে ঘুমোতে দাওনি। এসো, কিন্তু চুপচাপ শুয়ে থাকবে পাশে। আমাকে বিরক্ত করবে না। দীপাবলী জায়গা করে দিতে অলোক সেখানে শুয়ে পড়ল। শুয়ে বলল, খাটে চিত হয়ে শুয়ে কড়িকাঠ যে গুনব তারও উপায় নেই। মডার্ন ফ্ল্যাটে কেন যে ওসব থাকে না! তোমাকে ছোঁব?
দীপাবলী ওর হাত টেনে নিয়ে পেটের ওপর রাখল, এখান থেকে একদম নড়াবে না। তোমার মতলব ভাল নয়।
তুমি বড্ড কনজারভেটিভ। শাসন অনুশাসনে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা।
দীপাবলী হাসল, কিছু বলল না। তার খুব ভাল লাগছিল। এত সুখ জমা ছিল তার জন্যে সে কখনও কল্পনাও করেনি। এখন, এই বিয়ের পর থেকে ফুলে ফেপে ওঠা সুখের ঢেউ তাকে মাথায় নিয়ে ক্রমাগত নেমে যাচ্ছে। সে বলল, তুমি খুব ভাল আবৃত্তি কর?
আর কি ভাল করি?
আবার ইয়ার্কি? স্ল্যাং আমার একদম ভাল লাগে না।
বুঝলাম। কপালে অনেক দুঃখ আছে।
মানে?
আরে, বউ-এর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলব না তো কি বলব বাইরের লোকের সঙ্গে? সবসময় মাস্টারমশাই সেজে থাকা যায়?
দীপাবলী হাসল, ও, স্ল্যাং না বলা মানে মাস্টারমশাই সেজে থাকা! বিয়ের আগে তো তোমার মুখে এসব শুনিনি।
প্রথমত কথা আমি এখনও কিছুই বলিনি। দ্বিতীয়ত, বিয়ের আগে মুখ আলগা করার লাইসেন্সই ছিল না। তুমি কেটে পড়তে। অলোক নিশ্বাস ফেলল, ঠিক আছে, মুখে না বলতে দিলে, কাজে করতে দিলেই যথেষ্ট।
সঙ্গে সঙ্গে বালিশ ছুঁড়ে মারল দীপাবলী, অসভ্য!
সরে গেল অলোক। তারপর বিছানা থেকে নেমে বলল, উঠে পড়, গেট রেডি।
ওমা, কোথায়? দীপাবলী অবাক।
যতদূর পারা যায় ততদূর চলে যাই। এমন মেঘের দুপুরে বাড়িতে বসে থাকার কোন মানে হয় না। কুইক, কুইক।
এমন ঝটপট সিদ্ধান্ত নেওয়া দীপাবলীর অভ্যেস নেই। কিন্তু তার ভাল লাগল। তৈরী হতে বেশী সময় নিল না সে। ফ্ল্যাটে তালা চাবি দিয়ে ও নিচে নেমে দেখল অলোক ইতিমধ্যে গাড়ি বের করে ফেলেছে। পাশে বসামাত্র অলোক জিজ্ঞাসা করল, কোন দিকে যাবে? চটপট বলে ফেল।
দীপাবলী বলল, তুমি বের করেছ যখন সিদ্ধান্ত তুমিই নেবে।
অলোক মাথা নাড়ল, সবসময় এমন নির্জীব থেকো না তো!
নির্জীব?
তুমিও তো একটা কিছু করতে পারতে।
ও, এটাকে তুমি নির্জীব থাকা বল? বেশ, সোজা চল।
গুড! অলোক গাড়ি চালু করল। দিল্লির রাজপথ এমনিতেই ফাঁকা তার ওপর আজ ছুটির দিন বলে গাড়ি আরও কম। কিছুক্ষণ চলার পরেই কলকাতার কথা মনে পড়ল। আহা, কলকাতার পথঘাট যদি এমন হত! পূর্ববঙ্গ থেকে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের। অনেককেই যদি জেলায় জেলায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যেত তাহলে কি কলকাতায় কম। মানুষ বাস করতেন? বিধানচন্দ্র রায় যদি ঠিক করতেন কলকাতার জনসংখ্যা বাড়তে। দেবেন না, বাইরে থেকে কেউ সাময়িকভাবে কলকাতায় যদি থাকতে আসে তাকে এন্ট্রি ট্যাক্স দিতে হবে, নতুন বাড়িভাড়া দিতে গেলে বাড়িওয়ালাকে সরকারের কাছ থেকে। অনুমতি নিতে হবে তাহলে কি উপচে পড়া স্রোতের মুখে বাঁধ পড়তো। এটা প্রফুল্ল সেনও করতে পারতেন? সোভেরিন ডেমোক্রেটিক রিপাব্লিকের নাগরিকদের যার যেমন ইচ্ছে। যে-কোন প্রদেশে থাকতে পারে। কিন্তু প্রাদেশিক সরকার ইচ্ছে করলে এন্ট্রি ট্যাক্স নিতে পারেন, নতুন রেশন কার্ড ইস্যু বন্ধ করে দিতে পারেন। আর তা হলেই পরোক্ষ চাপ পড়ত বহিরাগতের ওপর। কলকাতাকে টাকা রোজগারের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা লক্ষ লক্ষ অবাঙালিরা তিনবার চিন্তা করত হাওড়া স্টেশনে পৌঁছাবার আগে। জনসংখ্যার বৃদ্ধি একটা শহরকে ধ্বংসের পথে এগিয়ে ছিল। দিল্লিতে এসে এসব বারংবার মনে হয়।
এই হল যন্তর মন্তর, এই হল কনটপ্লেস, ওটা হুমায়ুনের টুম্ব, কুতুবটাকে দেখে নাও, আরও এগিয়ে চল ওপাশে, রেড ফোর্ট আসছে, না গাড়ি থেকে নাম নেই, পুরোন দিল্লিটা কেমন হিজিবিজি, একটা মোগলাই মোগলাই গন্ধ পাবে। উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম গাড়িটা। কেবলই পাক খাচ্ছিল।
আমরা কোথায় থামব?
যখনই খিদে পাবে।
পেয়েছে। চা খাব।
রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড করাল অলোক। জানলা দিয়ে মুখ বের করে হাঁকল, দো স্পেশাল।
স্পেশ্যাল বললে কেন? স্পেশ্যাল মানে তো বেশী দুধ ঢালা।
তাই তো চাই। তোমার এখন একটু দুধ খাওয়া দরকার।
মানে?
দুধ শরীরকে কমনীয় করে। হঠাৎ মুখ ফিরিয়ে অলোক অন্য গলায় বলল আচ্ছা, তুমি কখনও ভেবে দেখেছ বাংলা ভাষায় কয়েকটা কি দারুণ শব্দ আছে!
হকচকিয়ে গেল দীপাবলী, দারুণ শব্দ?
হুঁ। পৃথিবীর অন্য ভাষা জানি না, ইংরেজিতে তো নেই। এই যেমন কমনীয়, রম্য, অভিমান। এক লাভ শব্দটার কতগুলো শাখা, প্রেম, স্নেহ, মমতা, ভালবাসা, কিছুটা ভক্তিও। মানুষের জীবনের এক একটা তাকের জন্যে এক এক রকমের ভালবাসা এবং সেটাকে বোঝাতে শব্দের অভাব নেই। খুব আপ্লুত গলায় বলছিল অলোক।
হাসল দীপাবলী, তোমাকে হঠাৎ এমন ভাবনায় পেল কেন যা ভেবে ভেবে ক্লিশে হয়ে গিয়েছে। বাঙালি এই নিয়ে এর আগে অনেকবার গর্ব করেছে। রেগে যেও না, আমি সত্যি। কথাটাই বললাম।
না, ঠিক আছে। তবে কি জানো, দিল্লিতে বাংলা চর্চা করার সুযোগ তো বেশী হয় না, তাই ভাবনাটা মাথায় আসা মাত্র বলে ফেললাম।
খুব ভাল করেছ। দীপাবলী উজ্জ্বল হাসল। তার মনে হচ্ছিল অলোকের উৎসাহে খোঁচা না দিলেই ভাল হত। আমরা যতটুকু জানি তা যে পাঁচজনের কাছে ইতিমধ্যে পুরোন হয়ে গেছে সেটুকুই জানতে চাই না। আবার এমনও তো হতে পারে, শিক্ষিত শহুরে ভজন, যিনি দিনে দশবার টেলিফোন করেন, বলতে পারবেন কিভাবে অন্যপ্রান্তের সঙ্গে কথা লেনদেন করছেন! কোন প্রক্রিয়ায় রেডিওতে গান বাজছে তা জানতে চাইলে অনেকেই আমতা আমতা করবেন। এটাই সত্যি। অথচ এই জ্ঞানটুকু স্কুলেই পেয়ে যাওয়া উচিত। যে পায়নি তাকে ব্যঙ্গ করে কোথাও পৌঁছানো যায় না।
সন্ধে হয়ে আসছিল। এই অবিরাম ঘোরায় মন্দ লাগছিল না দীপাবলীর প্রিয়জন কাছে। বসে আছে অথচ কথা হচ্ছে না একটাও, এরও আলাদা মাধুর্য আছে। শেষপর্যন্ত গাড়ি থামল একটা পেট্রল পাম্পে ঢুকে। তেল তলানিতে এসে গেছে। ইঞ্জিন বন্ধ করেই অলোক বলল, পঙ্কজদা–!
দীপাবলী দেখল তাদের আগে যে গাড়ি তেল নিচ্ছে তার মালিক কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়েছিলেন। ওদের ঢুকতে দেখে ফিরে তাকিয়েছেন। অলোক দরজা খুলে নিচে নেমে হাসল, কেমন আছেন পঙ্কজদা?
মাইগড়। অলোক যে। ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন, তোমাকে কদিন থেকে খুব ভাবছিলাম। বিয়ে করেছ শুনলাম?
হ্যাঁ, হয়ে গেল। আপনাকে, মানে অনেককেই জানাতে পারিনি সময়াভাবে।
নেভার মাইন্ড। আমি এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
অলোক ঘুরে ইঙ্গিত করতে দীপাবলী নেমে এল। অলোক আলাপ করিয়ে দিতে ভদ্রলোক নমস্কার করে অভিনন্দন জানালেন। তারপর বললে, শুনলাম আপনি রেভিন্যু সার্ভিসে আছেন। নতুন জয়েন করেছেন?
হ্যাঁ। মাত্র কয়েকটা দিন।
ওএসডি?
হ্যাঁ। দীপাবলী হাসল। প্রথমে তাই ভাল। ফাইলপত্তর, ডিপার্টমেন্টের হালচাল জেনে নেওয়া যায়। এতদিন যা পড়েছেন তার সঙ্গে বাস্তবের ফারাকটা কত তা বুঝলে আর ঠোকর খাবেন না।
অলোক বলল, ও হো, পঙ্কজদার একটা পরিচয় দিই। উনিও আগে রেভিন্যু সার্ভিসে ছিলেন। চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন ব্যবসা করছেন।
ও মা, চাকরি ছেড়ে দিলেন কেন?
অনেক বড় গপ্পো। ওই যে, ওই গাড়িতে যে মহিলা বসে আছেন তিনিও আমাকে মাঝে মাঝে নির্বোধ বলেন। আসলে আমার ওইরকম বোকামি করতে ইচ্ছে করল। ঘুরে দাঁড়িয়ে পঙ্কজ গলা তুলে ডাকলেন, নন্দা! প্লিজ কাম হিয়ার।
দীপাবলী দেখল গাড়ির দরজা খুলছে। আর সেই সময় পেট্রল পাম্পের লোকটি জানাল প্রথম গাড়িটাকে এগিয়ে নিতে হবে এবং দ্বিতীয় গাড়ি সেই জায়গা নেবে। অগত্যা পুরুষ দুজন যে যাঁর গাড়িতে উঠে গেলেন। দীপাবলী মুখখামুখি হল এক মধ্যবয়সী মহিলার। মহিলা সুন্দরী না হলেও শ্ৰীময়ী। একেবারে সাদামাটা পোশাক। এমন কি মেক আপ বলতে পাউডারও ব্যবহার করেননি। হেসে বললেন, আমি গাড়িতে বসেই কিন্তু সংলাপ শুনেছি।
দীপাবলী হাসল, হাসতে হয় বলেই হাসা।
ভদ্রমহিলা বললেন, আমি নন্দা মিত্র। স্কুলে পড়াই। দীপাবলী ঠিক বুঝতে পারছিল না। পঙ্কজবাবুর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবার সময় অলোক ওঁর উপাধি বলেছিল সোম। অবশ্য এরা যে স্বামী-স্ত্রী তা এখনও কেউ বলেনি। দীপাবলী নিজের নাম বলল। এরপর কথাবার্তা দিল্লি শহর নিয়ে খানিকক্ষণ হল। ইতিমধ্যে গাড়ি সরিয়ে রেখে ছেলেরা ফিরে এসেছে। পঙ্কজ বললেন, নন্দা, আমি অলোককে বলছি আমাদের ওখানে গিয়ে চা খাবার জন্যে। তুমিও বল।
নন্দা দীপাবলীকে বললেন, খুব ভাল। চলন না প্লিজ।
দীপাবলী অলোকের দিকে তাকাল। অলোক বলল, আসলে আজ আমরা শহরটাকে ঘুরে দেখব ননস্টপ এমন প্ল্যান ছিল।
পঙ্কজ হাসলেন, তা একবার যখন থামতে হয়েছে তখন প্ল্যান পাল্টাতে দোষ নেই। ম্যাডাম, আপনি আপত্তি করবেন না। প্রকৃতি না বললে পুরুষের হ্যাঁ বলার ক্ষমতা থাকে না। বিয়েতে নিমন্ত্রিত না হবার দুঃখ ভুলে যাব যদি আমাদের আস্তানায় কিছুক্ষণ আড্ডা মারার সুযোগ পাই।
এভাবে কেউ অনুরোধ করলে রাজী হতেই হয়। আর সত্যি কথা বলতে গেলে ওদের তো সেই মুহূর্তে কোন নির্দিষ্ট জায়গায় যাওয়ার কথাও ছিল না। অতএব পঙ্কজদের গাড়ির অনুসরণ করল অলোক।
পাশে বসে দীপাবলী বলল, এত লোককে নেমন্তন্ন করেছিলে এঁদের করোনি কেন? ভদ্রলোক তো বেশ হাসিখুশী।
হ্যাঁ। পঙ্কজদা খুব জমাটি মানুষ।
তা হলে?
কি তা হলে? নেমন্তন্ন করিনি কেন? বিশ্বাস কর খেয়াল ছিল না। তাছাড়া ওঁকে একা নেমন্তন্ন করলে উনি আসতেন না। আবার নন্দাদি কারো নেমন্তন্ন গ্রহণ করেন না। অন্তত সামাজিক অনুষ্ঠানে কেউ ওঁকে যেতে দ্যাখেনি।
পঙ্কজবাবুর সঙ্গে নন্দা মিত্রর সম্পর্ক কি?
ইহকাল পরকালের সঙ্গী।
স্বামী-স্ত্রী হলে দুজনের উপাধি আলাদা হবে কেন?
কারণ ওঁরা স্বামী-স্ত্রী নন। একসঙ্গে থাকেন।
সত্যি?
হ্যাঁ। আর এই কারণে দিল্লির বাঙালি সমাজের অধিকাংশ ওদের এড়িয়ে চলে। সামনাসামনি দেখা হলে যতটুকু ভদ্ৰতা রাখা সম্ভব রাখে সবাই।
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল দীপাবলী, তুমিও তাই করো?
তাই মনে হচ্ছে? অলোক হাসল, এই যে ওঁদের বাড়িতে যাচ্ছি, সেটা যেতাম?
কিন্তু বিয়েতে নেমন্তন্ন না করাটা?
দ্যাখো, যেখানে আমি একা থাকতাম সেখানে যা কিছু ভালমন্দ তা আমার হত। কিন্তু পাঁচজনকে নিয়ে যখন জমায়েত তখন একজনের জন্যে সবার মনে বিরূপ কিছু ঘটুক তা আমি চাইব না। এক্ষেত্রে ভালমন্দ ন্যায় অন্যায়বিচার করব না।বরং এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলব।
এঁরা আমাদের বিয়েতে গেলে সেরকম ঘটনা ঘটত?
হু নোস?
দীপাবলী মাথা নাড়ল, আমি কিছু বুঝতে পারি না।
হনুমান রোডে কিছু বাঙালি অনেককাল আগে থেকেই বাস করেন। সেই সময় ভাড়া কম ছিল এবং সেটা এখনও বজায় থাকায় বাড়ির চেহারাও পাল্টায়নি। আশেপাশের দিল্লির ঝমকে বাড়িগুলোর চেহারা তাই বড্ড বেশী নজরে পড়ে। পঙ্কজদের বাড়ির বাইরেটা পুরোন ধাঁচের কিন্তু ভেতরে ঢুকে বোঝা গেল আধুনিকতার কোন অভাব সেখানে নেই। বসার ঘরেও নরম কার্পেট বিছানো যেখানে পা রাখলে শরীরে আরাম ছড়ায়। পঙ্কজ বললেন, আমার কাকা নাইনটিন থার্টিতে মাত্র আশি টাকায় এই বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। ওঁদের ছেলেমেয়ে ছিল না। কলকাতা থেকে আমি এসে জুটেছিলাম একসময়। তা ওঁরা চলে গেলেন আমি থেকে গেলাম। কাকা থাকতেই বাড়ি ভাড়া বেড়ে হয়েছিল তিন শো। মুশকিল হল এখন ভাড়া নেবার লোকও নেই।
অলোক অবাক, সেকি? ওঁরা নেই?
না। ওঁদেরও কোন বংশধর বেঁচে নেই। আমি প্রতিমাসে রেন্ট কন্ট্রোলে জমা দিচ্ছি।
অলোক হাসল, কপাল করে এসেছিলেন আপনি!
কপাল? নিশ্বাস ফেললেন পঙ্কজ, তা বলতে পারে।
নন্দা জিজ্ঞাসা করলেন, কি খাবেন বলুন? চা না কফি?
দীপাবলী বলল, শুধু চা।
পঙ্কজ হাসলেন, সন্ধে হয়ে এল। চটপট চা দাও।
দীপাবলী জিজ্ঞাসা করল, সন্ধের সঙ্গে চায়ের কি সম্পর্ক?
পঙ্কজ বললেন, সন্ধের পরে আমরা আর চা খাই না।
নন্দা ওদের বসতে বলে ভেতরে চলে গেলেন। দীপাবলীর খারাপ লাগছিল না। সে জিজ্ঞাসা করল, তখন পেট্রল পাম্পে আপনি একটা গল্পের কথা বলছিলেন।
আরাম করে বসেছিলেন পঙ্কজ। চোখ বন্ধ করলেন, সন্ধেটা নষ্ট করতে চাইছেন মিসেস মুখার্জি? যে সব কথা বলব তা নিজের পাপ এবং অক্ষমতার কথা। এখন থাক, অন্য সময় সুযোগ পেলে বলা যাবে।
পাপ বলছেন কেন? অলোক প্রশ্নটা না করে পারল না।
অন্যায় করেছি, নিজের বিবেকের কাছে। পাঁচজনে চুরি করছে দেখে নিজেও চুরি করেছি অজুহাত বানিয়ে। একটা গল্প বলি। আমার এ্যাসেসি ছিল ডিন অ্যান্ড টিন কোম্পানি। কোম্পানি তবে স্ট্যাটাসে রেজিস্টার্ড ফার্ম। দুজন পার্টনার। চামড়ার রোগের একটা তেল বের করেছিল ওরা, গ্রামে গঞ্জে এখনও হু হু করে বিক্ৰী হয়। নেট ইনকাম শো করত তিন লাখের মত। অ্যাকাউন্টসে কোন ফাঁক ছিল না। অনেক ভেরিফিকেশন করে। ধরতে পারিনি।একবার একটা রিটার্ন ফর্ম খুলে দেখি সেটা ছাপা হয়েছে যে বছর, পেছনে প্রিন্টার্স ডিক্লেয়ারেন থাকে, তার তিন বছর আগে ডিপার্টমেন্টে জমা দেওয়া হয়েছে। সিল টিল আছে। আমি ওদের উকিলকে বললাম জমা দেবার রসিদ এনে দেখাতে। কদিন বাদে ভদ্রলোক বললেন ওটা খুঁজে পাচ্ছেন না। আমি রিসিভিং সেকশন থেকে রেজিস্টার আনিয়ে দেখেছি ওই তারিখে ডিন অ্যান্ড টিনের কোন রিটার্ন জমা পড়েনি। ইনকাম ট্যাক্সের একশ উনচল্লিশ ধারা অনুযায়ী কোন রেজিস্টার্ড ফার্ম ঠিক সময়ে রিটার্ন না জমা দিলে তাকে আনরেজিস্টার্ড হিসেবে ট্রিট করে দেরির সময়টার সুদ চার্জ করতে হয়। আমি ওই রিটার্ন ফর্ম কেন বাতিল হবে তা অর্ডারে লিখে যেদিন প্রথম হিয়ারিং দিয়েছিলাম সেই দিনটাকেই জমা দেবার দিন ধার্য করে সুদ এবং পেনাল্টি চার্জ করলাম। এবং সেই সঙ্গে কেন জালিয়াতির অভিযোগ আনা হবে না তার কারণ দেখাতে বললাম। উকিল অনেক অনুরোধ করল ক্ষমা টমা করে দিতে কিন্তু আমি কঠোর হয়ে রইলাম। কয়েক হাজার টাকা আমাকে অফার করা হল। আমি আরও খেপে গেলাম। এবং ওঁরা আমার অডারের বিরুদ্ধে ওপরওয়ালার কাছে আপিল করলেন। ডিপামেন্টের একটা অদ্ভুত আইন আছে। বুনাল অ্যাপিলেট কমিশনার বা কমিশনারের কাছে যখন পার্টি ইনকামট্যাক্স অফিসারের অর্ডারের বিরুদ্ধে আপিল করেন তখন সংশ্লিষ্ট অফিসারকে ডাকার প্রয়োজন বোধ করেন না কর্তৃপক্ষ। লিখিত অর্ডারের ভিত্তিতে প্রশ্ন টশ্ন করে রায় দেন। এক্ষেত্রেও প্রায় এল। ওপরওয়ালা সমস্ত পেনাল্টি এবং ইন্টারেস্ট মার্জনা করেছেন কারণ ওদের স্ট্যাটাস রেজিস্টার্ড ফার্ম। অর্ডারে কোথাও আমার বক্তব্যের বিশ্লেষণ নেই। আই টি ম্যানুয়ালে বলা হয়েছে এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড ফার্মকে আনরেজিস্টার্ড হিসেবে ধরতে হবে। তিমি সেসব ধর্তব্য বলেই মনে করলেন না। আজ পর্যন্ত কমিশনারের রায়ের বিরুদ্ধে কোন অফিসার যেতে সাহস পাননি। সেই ক্ষমতাও তার নেই। অতএব সেই উকিল যখন গা জ্বালানো হাসি হেসে আমায় বলল, মিছিমিছি অতগুলো টাকা হারালেন সোমসাহেব তখন মাথা নিচু করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। মিসেস মুখার্জী, এই গল্পটা একটা প্রতীক। মাত্র। আগেই বলেছি অজুহাত তৈরী করে আমিও ঘুষ নিয়েছি। কিন্তু একটা সময় এল যখন নিজের বিবেকের সঙ্গে যুদ্ধ করে আর পারতাম না। তখনই সরে এলাম।
দীপাবলী চুপচাপ শুনছিল। এবার প্রশ্ন করল, আপনি যদি প্রথম থেকে কঠোর থাকতেন, যদি আইনের বাইরে পা না বাড়াতেন তা হলে?
তা হলে কি হত তা আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
মানে?
ধরুন, দিল্লিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ইন্ডিয়ার টেস্ট ম্যাচ হবে। ম্যাচের দিন দুই আগে আপনার ওপরওয়ালা ডেকে বলবেন তাঁর চারখানা ভি আই পি টিকিট চাই। আপনার ব্যক্তিগতভাবে দেওয়ার ক্ষমতা নেই। আপনি কি করবেন?
আমি সেটাই বলব।
উনি আসবেন। বলবেন, দেখুন না কোন অ্যাসেসির সোর্স আছে?
অ্যাসেসির কাছে টিকিট চাইলে তাকেও কিছু বেআইনি সুবিধে দিতে হবে। অতএব সেটা চাইব কেন?
কিন্তু যখন দেখবেন আপনার অন্য কলিরা গোছ গোছা টিকিট প্রভুর পায়ে দিয়ে আসছেন তখন আপনি একা হয়ে যাবেন। আর তার পরেই আপনাকে ওই অ্যাসেসমেন্ট থেকে সরিয়ে ইন্সিগনিফিকেন্ট কোন জায়গায় পোস্ট করা হবে। হয়তো মফস্বলেও চলে যেতে হতে পারে। আপনি বিপদে পড়বেন। সেটা কি আপনি চাইবেন? আপনার কলিগরা বোঝাবে খেলা উপলক্ষে কোন অ্যাসেসির কাছে চারটে টিকিট যদি ডিসেম্বরে চাওয়া হয় সে বিগলিত হয়ে ব্ল্যাকে কিনেও দিয়ে যাবে। কিন্তু তার কেস যখন এক বছর পরে উঠবে তখন সেটা মাথায় রাখার কোন দরকার নেই। তারও সাহস হবে না মনে করিয়ে দেবার। তা হলে টিকিট দেবে কেন? দেবে কারণ ওটা দুজনের দেওয়া নেওয়ার ক্ষেত্র তৈরী করবে।
আপনি আমাকে দারুণ আতঙ্কের ছবি দেখাচ্ছেন।
হাসলেন পঙ্কজ, ব্যতিক্রম আছে। ডিপার্টমেন্টে সৎ নির্ভীক অফিসার কর্মী নিশ্চয়ই আছেন। নইলে ডিপার্টমেন্ট এতদিন উঠে যেত। হয়তো তাঁরা সংখ্যায় খুব কম, আমি পারিনি, আপনি যদি তাঁদের সংখ্যা বাড়াতে পারেন তা হলে নিশ্চয়ই খুশী হব।
নন্দা চা খাবার নিয়ে এলেন। গল্প বইল অন্য খাতে দীপাবলী লক্ষ করছিল পঙ্কজ এবং নন্দা পরস্পরের সঙ্গে ব্যবহার করছেন একেবারে স্বামী-স্ত্রীর মত। না বলে দিলে কোন ফাঁক কেউ বুঝতে পারবে না। নন্দা বললেন, তুমি এবার অফিসের গল্প থামাও।
থামিয়ে দিয়েছি অনেকক্ষণ!
আপনি স্কুলে পড়ান? দীপাবলী হালকা হতে চাইল।
হ্যাঁ ভাই। এই নিয়েই তো যত গোলমাল।
গোলমাল মানে?
আমি এখনও বাপের বাড়ির টাইটেল ব্যবহার করছি অথচ পঙ্কজের সঙ্গে আছি, স্কুল কমিটিতেও প্রসঙ্গটা উঠেছিল। আমি রেজিগনেশন দেব বলে তৈরী ছিলাম। কিন্তু আমার হেডমিসট্রেস এমন লড়ে গেলেন যে কমিটি মেনে নিল।
দীপাবলী বলল, অপরাধ যদি না নেন, আপনারা বিয়ে করেননি কেন?
অলোক ধমকে উঠল, আঃ দীপা, এটা ওঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
নন্দা তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন, না, না, প্রশ্ন করলেন বলে ভাল লাগল। এখানকার বাঙালিরা তো আমাদের সামনে এসে এই প্রশ্নটাও করে না, আড়ালে যত কথা। বিয়ে করতে পারিনি দুটো কারণে। আমি ডিভোর্স পাইনি। যে ভদ্রলোককে বিয়ে করতে হয়েছিল বাবা মায়ের পছন্দ মেনে তাঁর সঙ্গে বাস করা সম্ভব হয়নি। মনের মিল ছেড়ে দিন, দৃষ্টিভঙ্গী, রুচি এবং শিক্ষার আকাশ পাতাল ফারাক ছিল। তার ওপর উনি মানসিক বিকৃতিতে ভুগতেন। কালো কদাকার নারী তাঁকে ভীষণ টানত। বাড়িতে কাজের লোক রাখার উপায় ছিল না। শেষে বাধ্য হলাম আলাদা থাকতে। ওঁর আপত্তি ছিল না। কিন্তু বললেন পারিবারিক সম্মান বজায় রাখতে তিনি আমাকে ডিভোর্স দিতে পারবেন না। তবে কোন কেস করবেন না। আমি আইনের সাহায্য নিয়ে আলাদা হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এদেশের আইনে বিচ্ছেদ পাওয়া একতরফাভাবে খুব শক্ত। আমাকে প্রমাণ করতে হত উনি আমার ওপর নিয়মিত অত্যাচার করেন, যৌনব্যাধি অথবা কুষ্ঠ আছে অথবা অন্য কোন নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের কারণে মানসিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছি। এর কোনটাই আমি প্রমাণ করতে পারতাম না। নন্দা বাঁ হাতে ঘাড় থেকে চুল সরালেন। দীপাবলী মুগ্ধ হয়ে শুনছিল যেন, তারপর?
তারপর এই ভদ্রলোক। আমরা ভালবাসলাম। উনি একা। কিন্তু স্থির করলাম একসঙ্গে থাকব। বিদেশে অনেকেই থাকেন। ভাই, কোন বাঙালি মেয়ে যখন নিতান্তই উপায় থাকে না তখন স্বামীর বাড়ি থেকে বাইরে পা বাড়ায়। বিবাহিত অবস্থায় পরস্পরকে সন্দেহ করে লক্ষ লক্ষ স্বামী-স্ত্রী সারাজীবন একসঙ্গে কাটায়। ওঁকে পেয়ে একটাই সান্ত্বনা আমি তাদের থেকে এখন অনেক ভাল আছি। নন্দা কাপ ডিস তুলে নিলেন।
কিন্তু–! দীপাবলীকে বাধা দিলেন পঙ্কজ। দাঁড়ান ভাই এক মিনিট। অলোক, চলবে তো? নাকি বিয়ের পর সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছ?
আপত্তি নেই।
গো অ্যাহেড। স্ত্রীকে কথা দুটো বলে পঙ্কজ ট্রেটা নিয়ে উঠে পড়লেন। নন্দা জিজ্ঞেস করলেন, বলুন?
দীপাবলী জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা, আপনাদের মধ্যে কোন লিগ্যাল বাইন্ডিং নেই, এর ফলে ইনসিকিওর ফিল করেন না?
লিগাল বাইন্ডিংস থাকা সত্ত্বেও কি বাংলাদেশের মেয়েরা সব সময় সিকিওর ভাবে নিজেদের? তাছাড়া ইনসিকিউরিটি বোধ জন্মায় ব্যবহার থেকে। যতক্ষণ আমি আর পঙ্কজ পরস্পরের কাছে ট্রুথফুল এবং অনেস্ট থাকব ততক্ষণ কোন সমস্যা নেই। আর যাই হোক ইচ্ছের বিরুদ্ধেও একজনকে অন্যকে বহন করতে তো হবে না।
পঙ্কজ ফিরে এলেন। হাতে বিদেশি হুইস্কির বোতল, গ্লাস। অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলেন নন্দা, আমার মনে হচ্ছে দীপাবলী ও রসে বঞ্চিত তাই আজ আমি ওকে সঙ্গ দেব। তোমরা খাও। ওরা খাওয়া আরম্ভ করল। দীপাবলী লক্ষ্য করল অলোক তাকে কিছুই বলল না। নন্দা বললেন, তাই বলে ভাববেন না আমি আইনসম্মত বিয়ের বিরোধী। আমার ক্ষেত্রে ঘটনাটা ঘটেছে অথবা অনেক মেয়ের ক্ষেত্রে ঘটে বলে একটা সিস্টেম খারাপ হয়ে যেতে পারে না। আমি শুধু বলছি, এখন আমরা ভাল আছি।
কিন্তু যদি ছেলেমেয়ে জন্মায়?
ইয়েস। সেটা একটা সমস্যা। তবে আমাদের যা বয়স তাতে ওই সময়টা আমরা পেরিয়ে এসেছি।
কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে!
পঙ্কজ তাকে থামিয়ে বললেন, ভারতীয় আইন নতুন যে ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে তথাকথিত অবৈধ সন্তানকেও আইনসম্মত উত্তরাধিকারত্ব দিতে বলা হয়েছে।
গল্প চলছিল। রাত গড়াচ্ছিল। একসময় আচ্ছা ভাল। ওরা গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এলেন। দীপাবলী বলল, আপনাকে আমার ভাল লেগেছে। আমাদের ওখানে এলে খুশী হব। নাও কথা দিলেন যাওয়ার।
অলোক ইঞ্জিন চালু করা মাত্র পঙ্কজ বললেন, সাবধানে ড্রাইভ করো অলোক। রাফ চালিও না। মিসেস মুখার্জি ওকে অ্যালার্ট করবেন প্লিজ।
চোয়াল শক্ত হল দীপাবলীর। সে মুখ ঘুরিয়ে নিল।