আমিনা বিনতে ওহ্ব যুহরিয়ার সঙ্গে পুত্র আবদুল্লাহর বিবাহ
ইবন ইসহাক বলেন, ঐতিহাসিকদের মতে, অতঃপর আবদুল মুত্তালিব পুত্র আবদুল্লাহর হাত ধরে বনু আসাদ ইবন আবদুল উযযা ইবন কুসাই এর এক মহিলার নিকট গমন করেন । মহিলাটি হলো ওয়ারাকা ইবন নওফলের বোন। তাঁর নাম ছিল উন্মে কিতাল। সে সময়ে সে কা’বার নিকট অবস্থান করছিল। আবদুল্লাহকে দেখে সে বলল, আবদুল্লাহ! তুমি যাচ্ছ কোথায়? আবদুল্লাহ বললেন, আমি আমার আব্বার সঙ্গে যাচ্ছি। মহিলাটি বলল, যদি তুমি এই মুহুর্তে আমার সাথে মিলিত হতে সম্মত হও তা হলে আমি তোমার বদলে যে সংখ্যক উট জবাই করা হয়েছে, সে সংখ্যক উট তোমাকে দেব। জবাবে আবদুল্লাহ বললেন, আমি আমার আব্বার সঙ্গে আছি। তাকে ছেড়ে অন্যত্র যাওয়া বা তার মতের বাইরে কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় । আবদুল্লাহকে নিয়ে আবদুল মুত্তালিব ওহাব ইবন আবদে মানাফ, ইবন যুহরা ইবন কিলাব ইবন মুররা ইবন কা’ব। ইবনে লুওয়াই ইবন গালিব ইবন ফিহর এর নিকট যান। ওহাব ইবন আবদে মানাফ তখন বয়স ও মযাদায় বনু যুহরার সর্দার ছিলেন। আলাপ-আলোচনার পর তাঁর কন্যা আমিনার সঙ্গে আবদুল্লাহর বিবাহ হয়ে যায়। আমিনাও ছিলেন তাঁর সম্প্রদায়ের মহিলাদের নেত্রী। ঐতিহাসিকদের মতে বাড়িতে নিয়ে আসার পর আমিনার সঙ্গে আবদুল্লাহর বাসর হয়। তাতে রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর গর্ভে আসেন।
অতঃপর আবদুল্লাহ পুনরায় বনু আসাদের উল্লিখিত মহিলার নিকট যান। কিন্তু মহিলাটি এবার তাকে কিছুই বলল না। আবদুল্লাহ বললেন, কী ব্যাপার, আজ যে কোন প্ৰস্তাবই করছ না, যেমনটি গতকাল করেছিলে? মহিলাটি বলল, গতকাল তোমার সঙ্গে যে নূর ছিল,এখন আর তা নেই। তোমাকে এখন আর আমার প্রয়োজন নেই। উল্লেখ্য যে, এই মহিলা তার ভাই ওয়ারাকা ইবন নওফলের নিকট শুনেছিল যে, এই উম্মতের মধ্যে একজন নবী আগমন করবেন । তাই তার আকাঙ্খা ছিল যে, সেই নবী তারই গর্ভ থেকে জন্মলাভ করুন। কিন্তু আল্লাহ তাকে সর্বাধিক সম্রােন্ত ও পবিত্র বংশে প্রেরণ করেছেন। যেমন : এক আয়াতে আল্লাহ তা’আলা।
“আল্লাহ রিসালাতের ভার কার উপর অর্পণ করবেন, তা তিনিই ভাল জানেন।” (৬ঃ১২৪)
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্মের বিস্তারিত কাহিনী পরে আলোচনা করা হবে।
উন্মে। কিতাল বিনতে নওফল তার ব্যর্থতার জন্যে অনুতাপ প্ৰকাশ করতে গিয়ে নিম্নোক্ত পংক্তিগুলো আবৃত্তি করেছিলেন। ইবন ইসহাক সূত্রে বর্ণিত বায়হাকীর বর্ণনা থেকে তার প্রমাণ পাওয়া যায
–শোন, তুমি যুহরার বংশধরদের আঁকড়ে ধরে রাখবে তারা যেখানেই থাকুক। আর আমিনা যে একজন বালককে গৰ্ভে ধারণ করেছে। হেদায়াতেব অগ্রপথিককে দেখতে পাবে যখন সে তার উপর উপগত হবে। আর ঐ নূরকে যা তার সম্মুখে পথ প্রদর্শক হিসাবে চলে। সব মানুষ তাকে কামনা করে। তিনি হিদায়াত প্রাপ্ত ও ইমাম হয়ে মানুষের নেতা হবেন। আল্লাহ তাকে পরিচ্ছন্ন নির্মল নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তারপর তাঁর নূর আমাদের থেকে অন্ধকার দূরীভূত করেছে।
তা আল্লাহর সৃষ্টি। তিনি তা দান করেছেন। দিনের বেলা যখন তিনি চলমান থাকেন অথবা স্বস্থানে অবস্থান করেন।
কুফরীর পর তিনি মক্কাবাসীদের হেদোয়ত দান করবেন। তারপর তিনি তাদের উপর সিয়াম সাধনা ফরয করবেন। আবু বকর মুহাম্মদ ইব্ন জাফর ইব্ন সাহল আল খারায়েতী ইব্ন। আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, বিবাহ করানোর উদ্দেশ্যে আবদুল মুত্তালিব যখন পুত্র আবদুল্লাহকে নিয়ে রওয়ানা হন তখন তিনি তাবালর এক ইহুদী গণক ঠাকুরণীর নিকট যান। এই মহিলাটি বিভিন্ন কিতাব পড়াশুনা করেছিল। তার নাম ছিল ফাতেমা বিনতে মুর আল খাস।আমিয়া। মহিলাটি আবদুল্লাহর চেহারায় নবুয়তের নূর দেখতে পেয়ে বলে উঠল, ওহে যুবক! তুমি কি এই মুহুর্তে আমার সঙ্গে মিলিত হতে পোর? তবে তোমাকে আমি একশত উট প্ৰদান করব। জবাবে আবদুল্লাহ বললেন :
—এতো হারাম!! আর হারামের পরিণতি হচ্ছে ধ্বংস। আমি তো বৈধ পরিণয়ের সন্ধান করছি। কী করে আমি তোমার আহবানে সাড়া দিই? সন্ত্রান্ত মানুষ তো নিজের মান মর্যাদা ও দীন-ঈমান রক্ষা করে চলে।
আবদুল্লাহ পিতার সঙ্গে চলে যান। পিতা আমিনা বিনতে ওহবের সঙ্গে তাঁকে বিবাহ দিলেন। আবদুল্লাহ আমিনার নিকট তিন দিন অবস্থান করেন। অতঃপর এক সময়ে গণক ঠাকুরণীর নিকট গেলে মহিলাটি জিজ্ঞাসা করল, আমার নিকট থেকে গিয়ে তুমি কী করলে? আবদুল্লাহ তাকে বিবাহের সংবাদ শুনালেন। শুনে মহিলাটি বলল, আমি চরিত্রহীনা নারী নই।
তবে তোমার চেহারায় বিশেষ নূর দেখে চেয়েছিলাম যে, তা আমার মধ্যে আসুক। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিল অন্যরকম। এই বলে মহিলাটি কয়েকটি পংক্তি আবৃত্তি করেন।
আমি একটি মেঘখণ্ডকে আলোকময় হতে দেখেছি। ফলে মেঘমালা আলোকিত হয়ে উঠেছে। আমি তাকে এমন একটি নূর মনে করলাম। যার কারণে পূর্ণিমার চাঁদের আলোকিত করার ন্যায়। তার পার্শ্ববতী সবকিছু আলোকিত হয়ে গেল।
আমি তাকে এমন গর্বের বস্তু হিসেবে বরণ করে নিলাম, যাকে আমি নিয়েই আসব। প্রত্যেক চকমকি প্রজ্জ্বলিতকারী তা প্ৰজ্বলিত করতে পারে না।
আল্লাহর শপথ, যুহরিয়া গোত্রের নারী তোমার সাধারণ কোন বস্ত্ৰ ছিনিয়ে নেয়নি। অথচ তুমি তা জান না। ফাতেমা আরো বলে –
—হে বনু হাশিম! আমিনা তোমাদের ভাইকে ধারণ করেছে। যখন তারা মধুযামিনী উদযাপন করেছে। যেমনি ভাবে প্ৰদীপের আলো নির্বাপিত হওয়ার সময় তৈল মিশ্রিত
সালতেকে ধারণ করে।
যুবক যা অর্জন করে তার সবটুকু পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। আর যা সে নষ্ট করে তা সে উদাসীনতার কারণে নষ্ট করে না। তুমি সৌজন্যমূলক আচরণ করতে থাক যদি তুমি নেতৃত্ব চাও। কারণ তোমার বহু সন্তান-সন্ততির অধিকারী দাদা আর নানাই তোমার নেতৃত্বের জন্য যথেষ্ট। তোমার নেতৃত্বের জন্য যথেষ্ট হবে তুমি কৃপণ হও অথবা দাতাই হও। আমিনা তার
থেকে এক মহান সন্তান ধারণ করেছে। তিনি এমন এক গৌরবময় সন্তান ধারণ করেছেন যার তুলনা নাই।
ইমাম আবু নু আয়ম তার দালায়িলুন নবুওয়াতে বর্ণনা করেন যে, ইব্ন আব্বাস (রা) বলেছেন, আবদুল মুত্তালিব এক শীতের সফরে ইয়ামানে যান। সেখানে তিনি এক ইহুদী পণ্ডিতের সাথে সাক্ষাৎ করেন। আবদুল মুত্তালিবের ভাষায়, তখন জনৈক আহলি কিতাব আমাকে বলল, আপনার অনুমতি পেলে আমি আপনার শরীরের কিছু অংশ দেখতে চাই। আমি বললাম, হ্যাঁ, দেখতে পোর, যদি তা গোপন অঙ্গ না হয়। আবদুল মুত্তালিব বলেন, অনুমতি পেয়ে লোকটি এক এক করে উভয় নাকের ভিতরে খুঁটিয়ে দেখল। অতঃপর বলে উঠল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তোমার দুহাতের এক হাতে রাজত্ব আর অপর হাতে রয়েছে। নবুওত। আর আমি তা বনু যুহরায় দেখতে পাচ্ছি। এ কেমন করে হলো? আমি বললাম, তা আমি জানি না। লোকটি বলল, তোমার কি শাগাহ আছে? আমি বললাম, শাগাহাঁ আবার কী? লোকটি বলল, মানে স্ত্রী। আমি বললাম, বর্তমানে নেই। লোকটি বলল, তাহলে ফিরে গিয়ে যুহরা গোত্রে একটা বিয়ে করে নেবেন।
আবদুল মুত্তালিব দেশে ফিরে গেলেন এবং হালা বিনতে ওহাব ইব্ন আবদে মানাফ ইব্ন যাহারাকে বিয়ে করলেন। হালার গর্ভে হামযা ও সাফিয়্যা জন্মগ্রহণ করলেন। অতঃপর আবদুল্লাহ ইব্ন আবদুল মুত্তালিব আমিনা বিনতে ওহবকে বিবাহ করেন। আমিনার গর্ভে জন্মলাভ করেন রাসূলুল্লাহ (সা)। আবদুল্লাহ আমিনাকে বিয়ে করার পর কুরাইশরা বলাবলি করতে শুরু করে যে, আবদুল্লাহ তার পিতা আবদুল মুত্তালিবকে সাত করে দিয়েছে।