২৮. হেমন্তের কাবুল

হেমন্তের কাবুল মধ্যযুগীয় সম্প্রসারণে ফুলে ওঠে, ইংরিজীতে যাকে বলে মিডল এজ স্পেড। অর্থাৎ ভূড়িটা মোটা হয়, চাল-চলন ভারিক্কীভরা।।

যবগমের দানা ফুলে উঠল, আপেল ফেটে পড়ার উপক্রম, গাছের পাতাগুলো পর্যন্ত গ্রীষ্ম-ভর বোদ বাতাস বৃষ্টি খেয়ে খেয়ে মোটা হয়ে গিয়েছে, হাওয়া বইলে ডাইনে বাঁয়ে নাচন তোলে না, ঠায় দাঁড়িয়ে অল্প অল্প কাঁপে, না হয় থপ করে ডাল ছেড়ে গাছতলায় শুয়ে পড়ে। প্রথম নবান্ন হয়ে গিয়েছে, চাষীরাও খেয়েদেয়ে মোটা হয়েছে। শীতকাতুরেরা দুটো একটা ফালত জামা পরে ফেঁপেছে, গাধাগুলো ঘাস খেয়ে খেয়ে মোটা হয়ে উঠেছে, খড়-চাপানো গাড়ির পেট ফেটে গিয়ে এদিক ওদিক কুটোর নাড়ী ছড়িয়ে পড়ছে।

আর সফল হয়ে কেঁপে ওঠার আসল গরমি দেখা যায় সকাল বেলার শিশিরে। বেহায়া বড়লোকের মত কাবুল উপত্যকা কেবলি হীরের আংটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখায়, ঝলমলানিতে চোখে ধাধা লেগে যায়।

কিন্তু এ সব জেল্লাই কাবুল নদীর রক্তশোষণ করে। সাপের। খোলসের মত সে নদী এখন শুকিয়ে গিয়েছে, বাতাস বইলে বুক চিরে বালু ওড়ে। মার্কস তো আর ভুল বলেননি, শোষণ করেই সবাই ফাঁপে।

যে পাগমান পাহাড়ের বরফের প্রসাদে কাবুল নদীর জৌলুশ সে তার নীল চুড়োগুলো থেকে এক একটা করে সব কটা বরফের সাদা টুপি খসিয়ে ফেলেছে। আকাশ যেন মাটির তুলনায় কড় বেশী বুড়িয়ে গেল নীল চোখে ঘোলাটে ছানি পড়েছে।

পাকা, পচা ফলের গন্ধে মাথা ধরে; আফগানিস্থানের সরাইয়ের চতুর্দিক বন্ধ বলে দুর্গন্ধ যে রকম বেরতে পারে না, কাবুল উপত্যকার চারিদিকে পাহাড় বলে তেমনি পাকা ফল ফসলের গন্ধ সহজে নিষ্কৃতি পায় না। বাড়ির সামনে যে ঘূর্ণিবায়ু খড়কুটো পাতা নিয়ে বাইরে যাবে বলে রওয়ানা দেয় সেও দেখি খানিকক্ষণ পরে ঘুরে ফিরে কোনোদিকে রাস্তা না পেয়ে সেই মাঠে ফিরে এসে সবশুদ্ধ নিয়ে থপ করে বসে পড়ে।।

তারপর একদিন সন্ধ্যের সময় এল ঝড়! প্রথম ধাক্কায় চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলুম, মেলে দেখি শেলির ওয়েস উইণ্ড কীটসের অটামকে ঝেঁটিয়ে নিয়ে চলেছে, সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বর্ষশেষ। খড়কুটো, জমে-ওঠা পাতা, ফেলে-দেয়া কুলল সবাই চলল দেশ ছেড়ে মুহাজরিন হয়ে। কেউ চলে সার্কাসের সঙের মত ডিগবাজি খেয়ে, কেউ হনুমানের মত লাফ দিয়ে আকাশে উঠে পক্ষীরাজের মত ডানা মেলে দিয়ে আর বাদবাকি যেন ধনপতির দল–প্রলেতারিয়ার আক্রমণের ভয়ে একে ওকে জড়িয়ে ধরে।

আধ ঘণ্টার ভিতর সব গাছ বিলকুল সাফ।

সে কী বীভৎস দৃশ্য।

আমাদের দেশে বন্যার জল কেটে যাওয়ার পর কখনো কখনো দেখেছি কোনো গাছের শিকড় পচে যাওয়ায় তার পাতা ঝরে পড়েছে সমস্ত গাছ ধবলকুষ্ঠ রোগীর মত ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে।

এখানে সব গাছ তেমনি দাঁড়িয়ে, নেঙ্গা সঙ্গীন আকাশের দিকে উঁচিয়ে।

দু-একদিন অন্তর অন্তর দেখতে পাই গোর দিতে মড়া নিয়ে যাচ্ছে। আবদুর রহমানকে জিজ্ঞেস করলুম কোথাও মড়ক, লেগেছে কি না।

আবদুর রহমান বলল, না হুজুর, পাতা ঝরার সঙ্গে সঙ্গে বুড়োরাও ঝরে পড়ে। এই সময়েই তারা মরে বেশী।

খবর নিয়ে দেখলুম, শুধু আবদুর রহমান নয় সব কাবুলীরই এই বিশ্বাস।

ইতিমধ্যে আবদুর রহমানের সঙ্গে আমার রীতিমত হার্দিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে গিয়েছে। তার জন্য দায়ী অবশ্য আবদুর রহমানই।

আমাকে খাইয়ে দাইয়ে সে বোজ রাত্রেই কোনো একটা কাজ নিয়ে আমার পড়ার ঘরের এক কোণে আসন পেতে বসে, কখনো বাদাম আখরোটের খোসা ছাড়ায়, কখনো চাল ডাল বাছে, কখনো কঁকুড়ের আচার বানায় আর নিতান্ত কিছু না থাকলে সব কজোড়া জুতো নিয়ে রঙ লাগাতে বসে।

আবদুর রহমানের জুতো বুরুশ করার কায়দা মামুলী সায়াল নয়, অতি উচ্চাঙ্গের আর্ট। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তার অর্ধেক মেহন্নতে মোনা লিসার ছবি আঁকা যায়।

প্ৰথম খবরের কাগজ মেলে তার মাঝখানে জুতো জোড়াটি রেখে অনেকক্ষণ ধরে দেখবে। তারপর দেশলাইয়ের কাঠি দিয়ে যদি কোথাও শুকনো কাদা লেগে থাকে তাই ছাড়াবে। তারপর লাগাবে এঞ্জিনের পিস্টনের গতিতে বুরুশ। তারপর মেথিলেটেড স্পিরিটে নেকড়া ভিজিয়ে বেছে বেছে যে সব জায়গায় পুরানো রঙ জমে গিয়েছে সেগুলো অতি সন্তর্পণে ওঠাবে। তারপর কাপড় ধোয়ার সাবানের উপর ভেজা নেকড়া চালিয়ে তাই দিয়ে জুতোর উপর থেকে আগের দিনের রঙ সরাবে। তারপর নির্বিকার চিত্তে আধঘন্টাটাক বসে থাকবে জুতো শুকোবার প্রতীক্ষায়— ওয়াশের আর্টিস্টরা যে রকম ছবি শুকোবার জন্য সবুর করে থাকেন। তারপর তার রঙ লাগানো দেখে মনে হবে প্যারিস-সুন্দরীও বুঝি এত যত্নে লিপস্টিক লাগান না— তখন আবদুর রহমানের ক্রিটিক্যাল মোমেন্ট, প্রশ্ন শুধোলে সাড়া পাবেন না। তারপর বাঁ হাত জুতোর ভিতর ঢুকিয়ে ডান হাতে বুরুশ নিয়ে কানের কাছে তুলে ধরে মাথা নিচু করে যখন ফের বুরুশ চালাবে তখন মনে হবে বেহালার ডাকসাইটে কলাবৎ সমে পৌঁছবার পূর্বে যেন দয়ে মজে গিয়ে বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়ে গিয়েছেন। তখন কথা বলার প্রশ্নই ওঠে না, সাবাস বললেও ওস্তাদ তেড়ে আসবেন।

সর্বশেষে মোলায়েম সিল্ক দিয়ে অতি যত্নের সঙ্গে সর্বাঙ্গ বুলিয়ে দেবে, মনে হবে দীর্ঘ অদর্শনের পরে প্রেমিক যেন প্রিয়ার চোখে মুখে, কপালে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।

প্রথম দিন আমি আপন অজানাতে বলে ফেলেছিলুম সাবাস।

একটি আট ন বছরের মেয়েকে তারই সামনে আমরা একদিন কয়েকজন মিলে অনেকক্ষণ ধরে তার সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছিলুম— সে চুপ করে শুনে যাচ্ছিল। যখন সকলের বলা কওয়া শেষ হল তখন সে শুধু আস্তে আস্তে বলেছিল, তবু তো আজ তেল মাখিনি।

আবদুর রহমানের মুখে ঠিক সেই ভাব।

গোড়ার দিকে প্রায়ই ভেবেছি ওকে বলি যে সে ঘরে বসে থাকলে আমার অস্বস্তি বোধ হয়, কিন্তু প্রতিবারেই তার স্বচ্ছন্দ সরল ব্যবহার দেখে আটকে গিয়েছি। শেষটায় স্থির করলুম, ফার্সীতে যখন বলেছে এই দুনিয়া মাত্র কয়েকদিনের মুসাফিরী ছাড়া আর কিছুই নয় তখন আমার ঘরে আর সরাইয়ের মধ্যে তফাত কোথায়? এবং আফগান সরাই যখন সাম্যমৈত্রীস্বাধীনতায় প্যারিসকেও হার মানায় তখন কমরেড আবদুর রহমানকে এঘর থেকে ঠেকিয়ে রাখি কোন হকের জোরে? বিশেষতঃ সে যখন আমাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বাদামের খোসা ছাড়াতে পারে, তবে আমিই বা তার সম্বন্ধে উদাসীন হয়ে রাশান ব্যাকরণ মুখস্থ করতে পারব না কেন?

আবদুর রহমান ফরিয়াদ করে বলল, আমি যে মুইন-উস-সুলতানের সঙ্গে টেনিস খেলা কমিয়ে দিয়ে রাশান রাজদূতাবাসে খেলতে আরম্ভ করেছি সেটা ভালো কথা নয়।

আমি তাকে বুঝিয়ে বললুম যে, মুইন-উস-সুলতানের কোর্টে টেনিসের বল যে রকম শক্ত, এক মুইন-উস-সুলতানেকে বাদ দিলে আর সকলের হৃদয়ও সে রকম শক্ত–রাশান রাজদূতাবাসের বল যে রকম নরম, হৃদয়ও সে রকম নরম।

আবদুর রহমান ফিসফিস করে বলল, আপনি জানেন না হুজুর, ওরা সব বেদীন, বেমজহব। অর্থাৎ ওদের সব কিছু ন দেবায়, ন ধর্মায়।

আমি ধমক দিয়ে বললুম, তোমাকে ওসব বাজে কথা কে বলেছে?

সে বলল, সবাই জানে, হুজুর; ওদেশে মেয়েদের পর্যন্ত হায়া-শরম নেই, বিয়ে-শাদী পর্যন্ত উঠে গিয়েছে।

আমি বললুম, তাই যদি হবে তবে বাদশা আমান উল্লা তাদের এদেশে ডেকে এনেছেন কেন? ভাবলুম এই যুক্তিটাই তার মনে দাগ কাটবে সব চেয়ে বেশী।

আবদুর রহমান বলল, বাদশা আমান উল্লা তো  বলে থেমে গিয়ে চুপ করে রইল।

পরদিন টেনিস খেলার দুসেটের ফাঁকে দেমিদকে জানালুম, প্রলেতারিয়া আবদুর রহমান ইউ. এস. এস. আর. সম্বন্ধে কি মতামত পোষণ করে। দেমিদফ বললেন, আফগানিস্থান সম্বন্ধে আমরা বিশেষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নই। তবে তুর্কীস্থান অঞ্চলে আমাদের একটু আস্তে আস্তে এগোতে হচ্ছে বলে আমাদের চিন্তাপদ্ধতি কর্মধারা একটু অতিরিক্ত ঘোলাটে হয়ে আফগানিস্থানে পৌঁছচ্ছে। আমরা উপর থেকে তুর্কীস্থানের কাঁধে জোর করে নানা রকম সংস্কার চাপাতে চাইনে; আমরা চাই তুর্কীস্থান যেন নিজের থেকে আপন মঙ্গলের পথ বেছে নিয়ে বাকি রাষ্ট্রের সঙ্গে সংযুক্ত হয়।

দেমিদফের স্ত্রী বললেন, বুখারার আমীর আর তার সাঙ্গোপাঙ্গ শোষকসম্প্রদায় বলশেভিক রাজ্য প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যহারা হয়ে পালিয়ে এসে এখানে বাসা বেঁধেছে। তারা যে নানা রকম প্রোপাগাণ্ডা চালাতে কসুর করছে না, তা তো জানেনই।

আমি কম্যুনিজমের কিছুই জানিনে, কিন্তু এদের কথা বলার ধরন, অবিশ্বাসী এবং অজ্ঞের প্রতি সহিষ্ণুতা, আপন আদর্শে দৃঢ়বিশ্বাস আমাকে সত্যই মুগ্ধ করল।

কিন্তু সবচেয়ে মুগ্ধ করল রাজদূতাবাসের ভিতর এদের সামাজিক জীবন। অন্যান্য রাজদূতাবাসে বড়কর্তা, মেজকর্তা ও ভদ্ৰেতরজনে তফাত যেন গৌরীশঙ্কর, দুমকা পাহাড় আর উইয়ের ঢিপিতে। এখানে যে কোনো তফাত নেই, সে কথা বলার উদ্দেশ্য আমার নয়, কিন্তু সে পার্থক্য কখনো রূঢ় কর্কশরূপে আমার চোখে ধরা দেয়নি।

কত অপরাহ্ন, কত সন্ধ্যা কাটিয়েছি দেমিদফের বসবার ঘরে। তখন এম্বেসির কত লোক সেখানে এসেছেন, পাপিরসি টেনেছেন, গল্প-গুজব করেছেন। তাদের কেউ সেক্রেটারি, কেউ ডাক্তার, কেউ কেরানী, কেউ আফগান এয়ার ফোর্সের পাইলট–দেমিদফ স্বয়ং রাজদূতাবাসের কোষাধ্যক্ষ। সকলেই সমান খাতির-যত্ন পেয়েছেন; জিজ্ঞেস না করে জানবার কোনো উপায় ছিল না যে, কে সেক্রেটারি আর কে কেরানী।

খোদ অ্যামবেসডর অর্থাৎ রুশ রাষ্ট্রপতির নিজস্ব প্রতি তারিশ স্টেও পর্যন্ত সেখানে আসতেন। প্রথম দর্শনে তো আমি বগদানফ সায়েবের তালিম মত খুব নিচু হয়ে ঝুঁকে শেকহ্যাণ্ড করে বললুম, I am honoured to meet Your Excellency। কিন্তু আমার চোস্ত ভদ্রতায় একসেলেন্সি কিছুমাত্র বিচলিত না হয়ে আমাকে জোর হাত ঝাঁকুনি দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাঁ হাতখানা তলোয়ারের মত এমনি ধারা চালালেন যে, আমার সমস্ত ভদ্রস্থতা যেন দুটুকরো হয়ে কার্পেটে লুটিয়ে পড়ল।

মাদাম দেমিদফ বললেন, ইনি রুশ সাহিত্যের দরদী।

কোনো ইংরেজ বড়কর্তা হলে বলতেন, রিয়েলি? হাউ ইন্টারেস্টিঙ। তারপর আবহাওয়ার কথাবার্তা পাড়তেন।

স্ট্রেঙ বললেন, তাই নাকি, তা হলে বসুন আমার পাশে, আপনার সঙ্গে সাহিত্যালোচনা হবে। আর সকলে তখন আপন আপন গল্পে ফিরে গিয়েছেন। স্টেও প্রথমেই অসঙ্কোচে গোটাকয়েক চোখা চোখ। প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে আমার বিদ্যের চৌহদ্দি জরিপ করে নিলেন, তারপর পুশকিনের খ্রীতিকাব্য-রস আমাকে মূল থেকে আবৃত্তি করে শোনাতে লাগলেন। যে অংশ বেছে নিলেন সে-ও ভারী মরমিয়া। ওনিয়েগিন সংসারে নানা দুঃখ, নানা আঘাত পেয়ে তার প্রথম প্রিয়ার কাছে ফিরে এসে প্রেম নিবেদন করছেন; উত্তরে প্রিয়া প্রথম যৌবনের নষ্ট দিবসের কথা ভেবে বলছেন, ওনিয়েগিন, হে আমার বন্ধু, আমি তখন তরুণী ছিলুম, হয়ত সুন্দরীও ছিলুম–

আমাদের দেশের রাধা যে রকম একদিন দুঃখ করে বলেছিলেন, দেখা হইল না রে শ্যাম, আমার এই নতুন বয়সের কালে।

আমি তন্ময় হয়ে শুনলুম। আবৃত্তি শেষ হলে ভাবলুম, বরঞ্চ একদিন শুনতে পাব স্বয়ং চার্চিল হেদোর পারে লঙ্কা-ঠাসা চীনে বাদাম খেয়ে সশব্দে ডাইনে-বাঁয়ে নাক ঝাড়ছেন, কিন্তু মহামান্য বৃটিশ রাজদূত প্রথমদর্শনে অভ্যাগতকে কীটসের ইসাবেলা শোনাচ্ছেন, এ যেন বানরে সঙ্গীত গায়, শিলা জলে ভাসি যায়, দেখিলেও না করে প্রত্যয়।

ব্রিটিশ রাজদূতকে হামেশাই দেখেছি স্ট্রাইপ্ট ট্রাউজার আর স্প্যাট-পরা। ভাবগতিক দেখে মনে হয়েছে যেন স্বয়ং পঞ্চম জর্জের মামাতো ভাই। নিতান্ত দৈবদুর্বিপাকে এই দুশমনের পুরীতে বড় অনিচ্ছায় কাল কাটাচ্ছেন। কীটস কে, অথবা কারা? পিছনে যখন বহুবচনের এ রয়েছে। পাসপোর্ট চায় নাকি? বলে দাও, ওসব হবে-টবে না।

এমন কি, ফরাসী রাজদূতকেও কখনো বগদানফের ঘরে আসতে দেখিনি। বেনওয়া তার কথা উঠলেই বলতেন, কার কথা বলছেন? মিনিস্টার অব দি ফ্রেঞ্চ লিগেশন ইন কাবুল? ম দিয়ো। উনি হচ্ছেন সিনিস্টার অব দি ফ্রেঞ্চ নিগেশন ইন মাবুল।

মাবুল অর্থ অভিধানে লেখে, Loony, off his nut!

স্ট্রেঙ বললেন, তিনি রাজদূতাবাসের সাহিত্যসভাতে চেখফ সম্বন্ধে একখানা প্রবন্ধ পাঠ করেছেন। শুনে তো আমার চোখের তারা ছিটকে পড়ার উপক্রম। আরেকটা লিগেশনের কথা জানি, সেখানে চড়ুই পাখি শিকার সম্বন্ধে প্রবন্ধ চললেও চলতে পারে, কিন্তু চেখফ, বাই গ্যাড, স্যার!

আমি বললুম, রাশান শেখা হলে আপনার প্রবন্ধটি অনুবাদ করার বাসনা রাখি।

স্টেও বললেন, বিলক্ষণ! আপনাকে একটা কপি পাঠিয়ে দেব। কোনো স্বত্ব সংরক্ষিত নয়।

আমরা যতক্ষণ কথা বলছিলুম আর পাঁচজন তখন বড়কর্তার মুখের কথা লুফে নেবার জন্য চতুদিকে ঝুলে থাকেননি। ছোট্ট ছোট্ট দল পাকিয়ে সবাই আপন আপন গল্প নিয়ে মশগুল ছিলেন। আর সকলে কি নিয়ে আলোচনা করছিলেন, ঠিক ঠিক বলতে পারিনে, তবে একটা কথা নিশ্চয় জানি যে, তাঁরা ড্রইংরুমে বসে চাকরের মাইনে, ধোপার গাফিলি আর মাখনের অভাব নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা চালাতে পারেন না।

নিতান্ত ছোট জাত। আর শুধু কি তাই; এমনি বজ্জাত যে, সে কথাটা ঢাকবার পর্যন্ত চেষ্টা করে না!

সাধে কি আর ইংরেজের সঙ্গে এদের মুখ-দেখা পর্যন্ত বন্ধ।

ইংরেজ তখন মস্কো-বাগে দূরবীন লাগিয়ে স্তালিন আর এৎস্কি দলের মোষের লড়াই দেখছে, আর দিন গুণছে ইউ. এস. এস. আরের তেরটা বাজবে কখন।

এ সব হচ্ছে ১৯২৭ সালের কথা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *