মানব-সৃষ্টিতত্ত্ব প্রসঙ্গ
মানব-সৃষ্টিতত্ত্ব প্রসঙ্গে যেমন, বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে কোরআনে যে ধরনের তথ্য-উপাত্ত বিদ্যমান, সেই ধরনের কোন তথ্য-উপাত্ত কিন্তু বাইবেলের কোথাও পাওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব সম্পর্কে বাইবেলের যে বক্তব্য, কিংবা বাইবেলের আদিপুস্তকে আদি মানুষের বংশধারার যে বিবরণ, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান গবেষণা-আবিষ্কারের আলোকে তা আড়াগোড়াই ভ্রান্তিপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছে। কোরআনে মানুষের আদি উৎস সম্পর্কে এ ধরনের ভ্রান্তিপূর্ণ কোন তথ্য নেই।
কথা উঠতে পারে যে, কোরআনের কোন প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে সম্ভবতঃ ওই ধরনের ভ্রান্তিপূর্ণ তথ্য ছিল; পরে যখন ওইসব তথ্য-উপাত্ত ভুল বলে প্রমাণিত হয় তখন পরবর্তী প্রকাশনার ক্ষেত্রে কোরআন থেকে ওইসব ভ্রান্তিপূর্ণ তথ্য পরিসংখ্যান বাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু, এই বক্তব্য যে আদৌ সঠিক নয়, কোরআন সংরক্ষণের ইতিহাস বিচার-পর্যালোচনায় তা স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে।
প্রথমত, বাইবেলের ওইসব তথ্য-পরিসংখ্যান যে ভ্রান্তিপূর্ণ, তা যে ধরনের বৈজ্ঞানিক গবেষণা, আবিষ্কার ও বিচার-বিশ্লেষণের দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে, সেই ধরনের বৈজ্ঞানিক গবেষণা-বিশ্লেষণ কিন্তু একান্ত হালের ঘটনা।
দ্বিতীয়ত, কোরআনের সেই আদিযুগের প্রাচীনতম কপি এখনো বিদ্যমান। পুংখানুপুংখভাবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, প্রায় দেড় হাজার বছরের প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপির সাথে যেমন, তেমন হাজার বছরের অধিককাল পূর্বের প্রচলিত কোরআনের বিভিন্ন পাণ্ডুলিপির সাথেও বর্তমান চালু কোরআনের কোন সূরা কিংবা আয়াত তো দূরের কথা, একটা হরফেরও কোন গরমিল পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, পুর্নবার ব্যক্ত করতে হচ্ছে, মোহাম্মদ (দঃ) নিজেই কোরআন রচনা করেছেন বলে যে অভিযোগ তা ভিত্তিহীন, তাহলে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন না উঠে পারে না যে, সে যুগে বসে বাইবেল নকল করে কোরআন রচনা করতে গিয়ে তিনি কিভাবে বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রত্যকটি ভুলত্রুটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সনাক্ত করলেন ও বাদ দিতে পারলেন? শুধু কি তাই? একইসঙ্গে মোহাম্মদ (দঃ) সে যুগে বসে কিভাবেই বা অত্যাধুনিক বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা গবেষণা ও আবিষ্কারের সাথে একান্ত সঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য রচনা করে নিয়ে বেছে বেছে সে-সব স্থানে বসাতে পারলেন?
এই পর্যায়ে আবার যে কথাটি অনিবার্যভাবেই এসে পড়ে, তাহল, বাইবেল সঙ্কলনের কাল থেকে শুরু করে মোহাম্মদের (দঃ) আমল পর্যন্ত সময়ের যে সুদীর্ঘ ব্যবধান, সেই প্রেক্ষিতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের এমনকিছু তথ্য-পরিসংখ্যান আবিষ্কৃত হয়নি কিংবা বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে এমন কোন গবেষণাও পরিচালিত হয়নি–যার দ্বারা বাইবেলের বিজ্ঞান-সংক্রান্ত ওইসব বক্তব্য ভুল বলে সাব্যস্ত হতে পারে এবং সঠিক বক্তব্য কারো হাতের নাগালে থাকতে পারে।
এই অবস্থায় বাইবেল কিভাবে প্রণীত ও সঙ্কলিত হল, সেই প্রশ্ন এসে পড়ে অনিবার্যভাবেই। ইতিপূর্বের পর্যালোচনায় জেনেছি, ইহুদী ও খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ববিদদের বক্তব্য এই যে, বাইবেলের পুরানো ও নতুন নিয়ম (অর্থাৎ প্রচলিত তাওরাত, জবুর ও ইঞ্জিল) রচিত হয় ঐশ্বরিক প্রেরণায়। কোরআন সম্পর্কে মুসলিম ধর্মতত্ত্ববিদদের বক্তব্য অবশ্য ভিন্ন। তাঁদের বক্তব্য, কোরআন সরাসরি ওহী বা প্রত্যাদেশের মাধ্যমে প্রাপ্ত বাণী। কিন্তু তবুও কোরআনের সেই বাণী কিভাবে প্রাপ্ত ও সংরক্ষিত এবং বিশেষত কোরআন সঙ্কলন সম্পর্কে ইতিহাসের বক্তব্য কি? এই গবেষণার স্বার্থেই তা বিচার-পর্যালোচনা করে দেখা দরকার।
মোহাম্মদের (দঃ) বয়স তখন ৪০ বছর। তিনি তখন প্রায়ই মক্কানগরীর বাইরে এক নির্জন স্থানে (হেরা পর্বতের গুহায়) যেতেন এবং সাধনায় নিমগ্ন। হতেন। এখানেই তিনি একসময় ফেরেশতা জিবরাঈলের (আঃ)-এর মাধ্যমে লাভ করেন ওহী তথা আল্লাহর বাণী বা প্রত্যাদেশ। সময়টা হচ্ছে, ৬১০ খ্রিস্টাব্দ। কিছুদিন নীরবতার পর আবারও এই ওহী বা প্রত্যাদেশ আসা শুরু হয় এবং এভাবে একটানা দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে মোহাম্মদ (দঃ) যে-সব প্রত্যাদেশ লাভ করেন, সেই সব প্রত্যাদেশের সমষ্টিই হচ্ছে কোরআন।
মোহাম্মদ (দঃ) তাঁর জীবদ্দশাতেই নাজিলকৃত ওইসব ওহী বা প্রত্যাদেশ সাহাবী-সঙ্গ-সাথীদের সহায়তায় দু’ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এক, লিখিতভাবে, দুই, মুখস্থ করে। মোহাম্মদের (দঃ) জীবদ্দশাতেই ওইসব ওহী বা প্রত্যাদেশ বিভিন্ন সূরা বা অধ্যায়ে বিভক্তি করা হয় এবং ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যুর পর ওইসব লিখিত সূরা কিতাবের আকারে একত্রিত করা হয়। যেহেতু, মোহাম্মদের (দঃ) জীবদ্দশাতেই তাঁরই প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কোরআন লিখিত ও মুখস্থ উভয়প্রকারে সংরক্ষিত হয়, যেহেতু কিতাব হিসেবে সঙ্কলনের ক্ষেত্রে কোরআনের প্রত্যেকটি সূরার ও প্রতিটি আয়াত বা বাণীর সঠিকত্ব নির্ধারণে মোহাম্মদের (দঃ) সময়কালের লিপি এবং তাঁর সাহাবী-সঙ্গীদের মুখস্থ-জ্ঞান এই উভয়ধারাই কাজে লাগানো হয় এবং যেহেতু সেই প্রথম যুগের সংরক্ষিত কোরআনের সঙ্গে বর্তমানে প্রচলিত কোরআনের বিন্দুমাত্র গরমিল নেই, সেহেতু নির্দ্বিধায় বলা চলে যে, কোরআন এমন এক আসমানী কিতাব যা আগাগোড়া মানুষের হস্তক্ষেপমুক্ত।
কোরআনের মোট ২৯টি সূরার প্রথমে আলিফ, লাম, মিম, সোয়াদ, রা, কাফ, হা ইত্যাদি মোট ১৪টি হরফ ১৪ রকমে ব্যবহৃত হয়েছে। এসব হরফকে বলা হয় ‘হরফে মোকাত্তায়াত’ বা ‘রহস্যময় হরফ’। এতদিন এতকাল যাবত এসব হরফের রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। একান্ত হালে এসে মিসরীয় বাহাই বিজ্ঞানী ডঃ রশীদ খলিফা কম্পিউটার গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, কোরআনের প্রতিটি সূরার সূচনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বাক্যটি রয়েছে এবং ওই বাক্যটি আরবী ১৯টি হরফ দ্বারা গঠিত। যে সূরার শুরুতে যে কয়টি করে রহস্যময় হরফ রয়েছে, ওই সূরার মধ্যে যতগুলো ওই হরফ রয়েছে, তা একত্র করে নিয়ে ‘বিসমিল্লাহর’ এই ১৯ সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে মিলে যাবে। যেমন, সূরা বাকারার (২ নং সূরার) শুরু হয়েছে আলিফ, লাম ও মিম হরফ দিয়ে। এখন এই সূরার বাকারায় যতগুলো আলিফ হরফ, লাম হরফ ও মিম হরফ আছে, পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সবগুলোর সংখ্যা আলাদা আলাদাভাবে ১৯ দ্বারা ভাগ করলে মিলে যায়। কোরআনের এই বৃহত্তম সূরাটির মধ্যে কোন রুকু বা অনুচ্ছেদ, আয়াত কিংবা বাণীর মধ্যে এমন কি কোন শব্দের বা হরফের মধ্যেও যদি কোন রদবদল সাধিত হত, তাহলে সংশ্লিষ্ট কোন হরফের সংখ্যা ১৯ দ্বারা ভাগ করলে মিলত না–এবং তখন গড়মিল ধরা পড়তই।
কোরআনের কোন আয়াতে এমনকি কোন শব্দেও যে মানুষের কোন হস্তক্ষেপ ঘটেনি, তার আর একটা বড় প্রমাণ হচ্ছে–সূরা আরাফ। কোরআনের এই ৭নং সূরা আরাফের ৬৯ আয়াতে রয়েছে একটি আরবী শব্দ ও ‘বাসতাতা’। এটি ‘বাসাতা’ শব্দ থেকে গৃহীত। আরবী ভাষায় সাধারণত এই ‘বাসাতা’ শব্দটি লিখিত হয় ‘সিন হরফ দিয়ে। কিন্তু কোরআনের এই বাসাতা শব্দযুক্ত শব্দটি লিখিত হয় ‘সিন’ হরফ দিয়ে। কিন্তু কোরআনের এই ‘বাসাতা” শব্দযুক্ত আয়াত যখন নাজিল হয়, ফিরিশতা জিবরাঈল (আঃ) তখন শেষ নবীকে (দঃ) বলে দিয়েছিলেন, যারা ওহী-লেখক, তারা যেন এই আয়াতটি লিখতে ‘বাসাতা’ শব্দটিকে ‘সিন’ হরফ দিয়ে না লিখে সোয়াদ’ হরফ দিয়ে লিখেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, কম-বেশি ৪২ জন সাহাবী মোহাম্মদের (দঃ) উপরে নাজিলকৃত ওহী লিখে নিতেন। এইসব সাহাবী ‘কাতেবে ওহী’ বা ‘ওহী-লেখক’ নামে পরিচিত ছিলেন।
যাহোক, সেই থেকে কোরআনে সূরা আরাফের ‘বাসাতা’ শব্দটি ‘সোয়াদ’ হরফ দিয়ে লিখিত হয়ে আসা হচ্ছে–যদিও আরবী ভাসায় ‘সোয়াদ’ হরফে ‘বাসাতা’ বানান অশুদ্ধ। কিন্তু সপ্তম শতাব্দীতে বসে একজন নিরক্ষর নবী’ কেন আরবী ভাষার একটি চালু শব্দকে ‘অশুদ্ধ বানানে’ লিখার নির্দেশ দিয়ে গেছেন, এবং গত প্রায় দেড় হাজার বছরেও কোন আরবি ভাষাবিদ পণ্ডিত কোরাআন প্রকাশ কিংবা তরজমা করতে গিয়ে ওই ‘বাসাতা’ শব্দটি শুদ্ধ করেননি, তার মাজেজা বা রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে কিছুদিন আগে কোরআনের এই কম্পিউটার নিরীক্ষায়। যেমন, কোরআনের মোট তিনটি সূরার শুরুতে ‘সোয়াদ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে? ৭নং সূরা আরাফে, ১৯নং সূরা মরিয়মে এবং ৩৮নং সূরা ‘সোয়াদে’। কম্পিউটার গণনায় দেখা গেছে যে, এই তিনটি সূরা লিখতে গিয়ে সোয়াদ’ হরফটি ব্যবহৃত হয়েছে মোট ১৫২ বার। পূর্বোক্ত ‘অশুদ্ধ বানানে লিখিত ‘বাসতা’ শব্দটির ‘সোয়াদ’ হরফটিও রয়েছে এই হিসেবের মধ্যে। কম্পিউটার গণনায় আরো দেখা গেছে, এই তিন সূরার সোয়াদ’ শব্দের ১৫২ সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা ভাগ করলে মিলে যায় : (১৫২/১৯ = ৮)।
বর্তমানে প্রচলিত বাইবেল যে সেই প্রাচীনকালের আদি ও অকৃত্রিম তাওরাত, জবুর ও ইঞ্জিলের অভিন্নরূপের সংকলন, সে কথা বলার উপায় নেই। পক্ষান্তরে, কোরআন প্রথম যুগের সেই প্রত্যাদিষ্ট বাণী যা এখনও অবিকৃত রয়েছে। আরবী ভাষায় অবতীর্ণ সেই বাণীই এখন বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে নানা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। কিন্তু মূল বাণী তার আদি ও অকৃত্রিমরূপে লিপিবদ্ধ রয়েছে পবিত্র কোরআনে। কোরআনের এই নির্ভেজাল অকৃত্রিমত্ব সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। আর এ যুগের এই কোরআন যে সেই আদি অকৃত্রিম মূল কোরআন, তার সংকলনের ইতিহাস থেকেও তা অনুধাবন করা যেতে পারে। যেমন–
প্রথমত, সকলেই অবগত আছেন, মোহাম্মদের (দঃ) জীবদ্দশাতেই কোরআনের সূরাসমূহ লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ করে ধরে রাখা হয়েছিল। তখন কাগজের প্রচলন তেমন ছিল না। ফলে, অবতীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওহী লেখকদের মাধ্যমে তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল নরম পাথরের টুকরায়, চামড়ায়, হাড়ে ও তখনকার প্রচলিত অন্যান্য উপকরণে। বিভিন্ন আয়াতেও কোরআনকে স্পষ্ট ভাষায় লিখিত ‘কিতাব’, ‘উন্মুক্ত গ্রন্থ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তা উল্লেখ করা হয়েছে হিজরতের আগে ও পরে অবতীর্ণ বিভিন্ন সূরায়।
দ্বিতীয়ত, লিখিতভাবে সংরক্ষণ ছাড়াও কোরআন সংরক্ষণের অপর যে ধারাটি প্রথম থেকেই চালু রয়েছে, তা হেঞ্জ বা মুখস্থকরণের ধারা। গোটা কোরআন, সবাই জানেন, বাইবেল পুরাতন নিয়ম (তাওরাত ও জবুর) থেকে আকারে অনেক ছোট এবং নতুন নিয়মের (ইঞ্জিল) তুলনায় সামান্য কিছু বড়। যেহেতু, গোটা কোরআন সুদীর্ঘ কুড়ি বছরেরও অধিককাল ধরে ধারাবাহিকভাবে নাজিল হয়, সে কারণে মোহাম্মদের (দঃ) সঙ্গী-সাথীদের দ্বারা একটি একটি করে সমস্ত সূরা মুখস্থ করা হয়েছিল সহজতর।
যাহোক, লিপিবদ্ধকরণের পাশাপাশি কোরআন মুখস্থ বা হেফজ করার এই ধারাটিও কোরআনকে সকল কম হস্তক্ষেপমুক্ত অবস্থায় তার সেই আদি ও অকৃত্রিমস্বরূপে সংরক্ষণ করে আসছে। এভাবে গোড়া থেকেই কোরআন সংরক্ষণের দুটি পৃথক ধারা জারি রয়েছে। লিখিত ও মুখস্থ এই দ্বিবিধ সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা কোরআনের সঠিকত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। লিখিত কোরআনের যেকোন ত্রুটি হেজকারীদের দ্বারা তাৎক্ষণিকভাবেই সংশোধিত হওয়ার অবকাশ রয়েছে।