পরিশিষ্ট
বৈরাম খাঁ কিন্তু খাঁ ছিলেন না। তিনি ‘বেগ’। জওহর আবিতাবচি তাঁর গ্রন্থে বৈরাম বেগ বলে উল্লেখ করেছেন। তাকে খাঁ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেন ইরানের শাহ তামাস্প।
আমার ধারণা, সম্রাট হুমায়ূন বৈরাম খাঁ’র প্রতিভা ধরতে পারেন নি। তিনি বৈরাম খাঁকে তাঁর অতি অনুগত একজন হিসেবেই জেনেছেন। পারস্য থেকে ফেরার পর সম্রাট হুমায়ূনের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়। বৈরাম খাঁকে তিনি সর্বোচ্চ সম্মান খান-খানান উপাধি দেন। একই সঙ্গে তাঁর জন্যে পানি সরবরাহের কাজে নিযুক্ত জওহর আবতাবচিকে পাঞ্জাবের রাজকোষের কোষাধ্যক্ষ করে দেন। জওহরের এই নিয়োগ হুমায়ূনের আবেগের কারণে হয়েছে। জওহরের রাজকোষ চালানোর যোগ্যতা ছিল না। সম্রাটের ইচ্ছা বলে কথা।
বৈরাম খাঁ নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সম্রাট হুমায়ূনকে সব ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখেন।
সম্রাটের মৃত্যুর পর বালক আকবরের অভিভাবক হিসেবে তাঁর শাসনভার তার হাতে চলে আসে। আমীরদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে।
আকবর মাতা হামিদা বানু নিজেও শংকিত হন। তিনি মনে করেন, বৈরাম খাঁ কখনোই আকবরের হাতে ক্ষমতা দেবেন না। আকবরকে থাকতে হবে বৈরাম খাঁ’র পুতুল হয়ে।
আকবর সিংহাসনে বসেই বৈরাম খাঁকে বললেন, আপনি মোঘল রাজবংশের জন্যে অনেক পরিশ্রম করেছেন। আপনার বিশ্রাম প্রয়োজন।
বৈরাম খাঁ বললেন, আপনি কি মনে করছেন এখন আমাকে আপনার প্রয়োজন নেই?
আকবর বললেন, আমার প্রয়োজনের চেয়ে আপনার বিশ্রাম জরুরি।
বৈরাম খাঁ বললেন, আমি বিশ্রামে যাচ্ছি। আমার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছি।
আকবর বললেন, আপনি হিন্দুস্থানে বিশ্রাম করবেন না। বিশ্রাম করবেন মক্কায়।
বৈরাম খাঁ বললেন, আমি স্বেচ্ছায় মক্কায় যেতে না চাইলে আপনার সাধ্যও নেই। আমাকে মক্কায় পাঠানো। বিশাল মোঘল সেনাবাহিনীর আমি প্রধান। সৈনিকরা আমার অনুগত। তারপরেও যেহেতু আপনি চাচ্ছেন আমি মক্কায় চলে যাব।
বৈরাম খাঁ আহত এবং বিষণ্ণ হৃদয়ে মক্কায় রওনা হলেন। সম্রাট আকবরের পাঠানো গুপ্তঘাতকরা বৈরাম খাঁকে পথেই হত্যা করল।
পৃথিবীর ইতিহাসে আকবরের পরিচয় আকবর দ্যা গ্রেট। বৈরাম খাঁ’র করুণ পরিণতি গ্রেট আকবরের কাছ থেকে আশা করা যায় না, তবে প্রদীপের নিচেই থাকে অন্ধকার।
অসাধারন
সত্যই অসাধারণ কথার বুনন।
Biram ka ke hotta korar poro akbor ta great ar karon bolben plz….great history sir.
বাদশাহ নামদার হুমায়ুন আহমেদের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক উপন্যাস। তাঁর এ অসাধারণ সৃষ্টি পাঠকের মনে চির জাগরুক থাকবে।