অষ্টবিংশ পরিচ্ছেদ
প্রশংসা করুন
আমার জনৈক বান্ধবী মিসেস আর্নেস্ট জেন্ট নিউইয়র্কে তার বাড়িতে এক পরিচারিকাকে পরের সোমবার থেকে কাজ করতে বলেন। ইতিমধ্যে মিসেস জেন্ট তার আগেকার নিয়োগকর্তার কাছে ফোন করে তার সম্বন্ধে জানতে চাইলেন, যে তাকে আগে রেখেছিল। তিনি পূর্ণ প্রশংসাপত্র পেলেন না। মেয়েটি কাজ করতে এলে মিসেস জেন্ট বললেন : ‘নেলী, তুমি আগে যে বাড়িতে কাজ করতে সেখানে ফোন করেছিলাম। তিনি বলেছেন তুমি সৎ এবং বিশ্বাসী, ভালো রান্নাও কর আর বাচ্চাদের যত্ন করো। কিন্তু তিনি এটাও বলেছেন তুমি ভালো করে পোশাক পর না আর বাড়িঘর সাফ রাখো না। আমার মনে হয় তিনি মিথ্যে বলেছেন। তুমি যে সন্দুর পোশাক পর, যে কেউ দেখলে তা বুঝবে। আমি বাজি ধরতে পারি পোশাকের মতই তুমি বাড়ি সাফ রাখবে। আমরা সুন্দর মানিয়ে চলতে পারবো।’
তার তাই পরে সম্পর্কও বেশ ভাল হয়। নেলী তার খ্যাতি বজায় রাখার চেষ্টাই করত। বিশ্বাস করুন তাই হয়। সে বাড়ি ঝকমকে রাখতো। বরং সে কয়েক ঘন্টা বেশি খেটে মিসেস জেন্টের ধারণা বজায় রাখতে চাইত।
বলডুইন মোটর কোম্পানীর প্রেসিডেন্ট স্যামুয়েল ভাউক্লেইন বলেন, সাধারণ মানুষকে সহজেই চালানো যায় শুধু আপনি যদি দেখান যে তার কোন গুণের জন্য তাকে আপনি প্রশংসা করেন।
ছোট্ট করে বললে আপনি যদি কোন মানুষকে কোন গুণের জন্য উন্নত করতে চান তাহলে এমন ব্যবহার করতে হবে যেন তার সেই গুণটি বর্তমান রয়েছে আর সেটা দারুণ কিছু। শেক্সপীয়ার বলেছিলেন : কোন গুণ না থাকলে সেটা যে তার মধ্যে রয়েছে এমন ভাব দেখান। যে লোকের ওই বিশেষ গুণ নেই সেটা যদি তার আছে ধরা যায় তাহলে সে তার খ্যাতিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টাই করে। তাকে প্রশংসা করুন, তাহলে সে আপ্রাণ চেষ্টায় আপনার কাছে নিজেকে জাহির করতে চাইবে।
.
জর্জেট শেবল্যাঙ্ক তার ‘সুভেনিরস, মাই লাইফ উইথ মেটারলিঙ্ক’ বইতে কোন এক সামান্য বেলজিয়ান মেয়ের অদ্ভুত পরিবর্তনের কাহিনী লিখেছেন। সেটা এই রকম :
কাছাকাছি এক হোটেলের একটি পরিচারিকা মেয়ে আমার খাবার আনতো। তাকে ‘ডিম ধোওয়া মেরী’ বলে ডাকতো সবাই যেহেতু সে ডিম ধুয়ে জীবিকা আরম্ভ করে। মেয়েটি অদ্ভুত ধরনের, ট্যারা চোখ, পায়েও দোষ। বেচারি নানা দিক থেকেই প্রতিবন্ধী ছিল।
একদিন সে যখন হাতে করে আমার জন্য ম্যাকরোনির প্লেট নিয়ে অপেক্ষা করছিল আমি সোজাসুজি বললাম, ‘মেরী, তুমি জানো না তোমার মধ্যে কত গুণ আছে।‘
নিজের আবেগ চেপে রাখতে অভ্যস্ত মেরী কয়েক মিনিট অপেক্ষা করল কারণ যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায় তাই। তারপর ও ডিমটা টেবিলে নামিয়ে রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেশ বুদ্ধিমতীর মতই জবাব দিলো; মাদাম, কথাটা বিশ্বাসই করতাম না। ও কোন প্রশ্ন করেনি কারণ ওর কোন সন্দেহ ছিলো না। ও শুধু রান্নাঘরে গিয়ে কথাটা আমায় বললো। আর বিশ্বাসের জোর এমন যে কেউ ওকে ঠাট্টাও করতে পারল না। সেইদিন থেকে ওকে সবাই একটু সম্মানও জানাতে লাগল। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটে গেল মেরীর নিজেরই মধ্যে। নিজে যে দারুণ কিছু এই বিশ্বাসের ফলে ও নিজের মুখ আর শরীরের এমন যত্ন নিতে আরম্ভ করল যে ওর উপোসী যৌবন প্রস্ফুটিত হয়ে উঠল।
দুমাস পরে আমি যখন চলে যাচ্ছিলাম মেরী শেফের ভাইপোর সঙ্গে ওর বিয়ের কথাটা আমায় জানাল। আমি একজন লেডি হব,’ বলে ও আমায় ধন্যবাদ জানাল। একটা ছোট্ট কথায় ওর জীবনটাই বদলে গেল।
জর্জেট শেবল্যাঙ্ক ‘ডিম দেওয়া মেরীকে’ সম্মানের সঙ্গে বাঁচার পথ করে দিয়েছেন–আর সেই সম্মানবোধ ওর জীবনধারাই বদলে দিল।
হেনরি ক্লে বিসনারও ফ্রান্সের আমেরিকান সেনাদলের চরিত্র সংশোধন করতে একই পথ নিয়েছিলেন। আমেরিকার সেনাপতিদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় জেনারেল জেমস জি হার্ড বিসনারকে বলেন যে তাঁর মতে ফ্রান্সে থাকা বিশ লক্ষ আমেরিকার সৈন্যরা অত্যন্ত ভালো আর আদর্শবাদী। এদের মত জীবনে আর কাউকেই তিনি দেখেন নি।
এটা কি অতিরিক্ত প্রশংসা? হয়তো তাই। কিন্তু বিসনার এটা কিভাবে কাজে লাগান দেখুন।
‘আমি কখনই সৈন্যদের বিসনার তাদের সম্বন্ধে কি বলেছেন শোনাতে ভুল করেনি, বিসনার লিখেছেন। এক মুহূর্তের জন্যেও আমি কথাটার সত্যমিথ্যা যাচাই করিনি। তবে আমি জানতাম এটা সত্যি না হলেও জেনারেল হার্বর্ডের প্রশংসা ওদের উদ্বুদ্ধ করবে ওই অবস্থায় পৌঁছতে।’
একটা প্রাচীন প্রবাদ আছে-’কোন কুকুরকে বদনাম দিয়ে তাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে পারা যায়। কিন্তু তার প্রশংসা করে দেখুন কি হয়!’
প্রায় প্রত্যেকেই–ধনী, দরিদ্র, ভিখারি, চোর–সবাইকেই একবার সৎ বললে তারা সেটা বজায় রাখার চেষ্টা করে।
সিংসিং কারাগারের ওয়ার্ডেন লজ বলেন, কোন দুবৃত্তের সঙ্গে ব্যবহার করতে হলে একটা মাত্র উপায় আছে তাকে কজা করার। তার সঙ্গে এমন ব্যবহার করুন যেন সে কোন সম্মানিত ভদ্রলোক। ধরে নিন সে আপনার সমান। এমন ব্যবহারে সে এমনই বিগলিত হবে যে, সে এই ভেবে গর্বিত হবে যেকেউ তাকে বিশ্বাস করে। লজের কথা বিশ্বাস করতেই হবে কারণ এমন দক্ষ লোক আর হয়নি। কথাটা বারবার বলার মতই।
অতএব কাউকে যদি আঘাত বা অসম্মান না করে বদলাতে চান তবে ৭ নম্বর নিয়ম হল :
‘লোককে ভালো করে প্রশংসা করুন। সে তা হলে ভালো হতে চাইবে।‘