ধর্মনগর একটি ক্ষুদ্র মফঃস্বল শহর। সেখানে রাজ সরকারের একটি ছোটখাটো বাড়ি আছে। কিন্তু সস্ত্রীক, সপরিষদ মহারাজ বীরচন্দ্রের পক্ষে সে বাড়ি অনুপযুক্ত। তাই শহরের একটু বাইরে রাজকীয় তাঁবু খাটানো হয়েছে। তিনটি হাতি ও দশটি ঘোড়াও রাখা হয়েছে কাছাকাছি, এ অঞ্চলে হাতি-ঘোড়াই প্রধান যান-বাহন, গরুর গাড়িতে বিপদের আশঙ্কা আছে, জঙ্গলের মধ্যে যখন-তখন হিংস্ৰ শ্বাপদের উপদ্রব হয়।
প্রধান তাঁবুতে বীরচন্দ্রের সঙ্গে রয়েছে তাঁর নবোঢ়া পত্নী মনোমোহিনী। এর মধ্যে তার অনেকখানি পরিবর্তন হয়েছে, সে আর ডানপিটে, কৌতুকময়ী বালিকাটি নয়, শরীর বেশ ডাগর, তার হাবভাবে ফুটে ওঠে রাজমহিষী সুলভ গাম্ভীর্য। মনোমোহিনী বুদ্ধিমতী, সে বুঝেছে যে মহারাজের উপযুক্ত সঙ্গিনী হয়ে উঠতে না পারলে প্রাসাদে তার মর্যাদা থাকবে না। মহারাজও কিছুদিন পরেই তাকে নজরের আড়াল করে দেবেন। এখন সে মহারাজের নর্মসঙ্গিনী শুধু নয়, বীরচন্দ্রের কবিতাও আগ্রহের সঙ্গে শোনে, বোঝার চেষ্টা করে। সেবা-যত্নে সে মহারাজকে তার প্রধানা মহারানী ভানুমতীর শোক অনেকটা ভুলিয়ে দিয়েছে।
বীরচন্দ্র রাজধানী ছেড়ে এতদূর এসেছেন। শুধু রাজ্য পরিদর্শনের কারণে নয়, তাঁর অন্য একটি কৌতূহল আছে।
বীরচন্দ্রের পূর্ববর্তী কোনও রাজা রাজধানী ছেড়ে বেশিদিন বাইরে থাকেননি, সমগ্র রাজ্যটি কখনও ঘুরেও দেখেননি। সিংহাসনটি অন্য কে কখন জবরদখল করে নেয়, তার তো ঠিক নেই। ভ্ৰাতৃবিরোধ এবং সেনাপতিদের বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনায় এই বংশের ইতিহাস পরিকীর্ণ।
বীরচন্দ্রের সে রকম কোনও ভয় নেই। তার সিংহাসন এখন মোটামুটি নিষ্কণ্টক। যুবরাজ রাধাকিশোরের ওপর তিনি রাজকাৰ্য পরিচালনার ভার দিয়েছেন, তাকে সাহায্য করবেন মহারাজের নিজস্ব সচিব রাধারমণ ঘোষমশাই। এই ঘোষমশাইয়ের বিশ্বস্ততা ও দক্ষতার ওপর বীরচন্দ্রের পূর্ণ আস্থা আছে। বীরচন্দ্ৰ ভ্ৰমণবিলাসী ও সৌন্দর্যপিপাসু, তাই মাঝে মাঝে দূরে দূরে যান।
সকালবেলা দশখানি লুচি ও এক জামবাটি ভর্তি মোহনভোগ দিয়ে জলখাবার সেরে বীরচন্দ্ৰ অশ্বারোহণে বেরিয়ে পড়লেন। সঙ্গী শুধু শশিভূষণ, আর পিছনে তিনজন বন্দুকধারী দেহরক্ষী। ডিসেম্বর মাস, তবু শীত তেমন প্রবল নয়। বীরচন্দ্র পরে আছেন পাৎলুন ও কোট, মাথায় পাগড়ি, অশ্বপৃষ্ঠে চলার সময়েও তাঁর মাঝে মাঝে গড়গড়া টানা চাই, একজন হুঁকোবরাদের সঙ্গে সঙ্গে ছুটছে, মহারাজের ইঙ্গিত পেলেই সে গড়গড়ায় নলটি এগিয়ে দিচ্ছে।
শশিভূষণ ধুতি-পাঞ্জাবি পরে আছেন, ঊর্ধ্বাঙ্গে একটা শাল জড়ানো। ঘোড়ায় চড়তে গেলেই যে বিলাতি পোশাক পরতে হবে, এমনটা তিনি বিশ্বাস করেন না। তাঁর সঙ্গে রয়েছে একটা বড় চামড়ার কেস ভর্তি ক্যামেরা। সামনে পাহাড়ের সারি, তা নিবিড় বনানীতে আবৃত। সরু পায়ে চলা পথ ছাড়া কোনও তৈরি পথ নেই, মাঝে মাঝে দু’পাশের গাছের ডাল এসে গায়ে লাগে। এদিকের পাহাড়গুলি বড় নয়, টিলাই বলা যায়, তবু আকাশের গায়ে এই ঢেউ খেলানো দিগন্তরেখা বড় মনোহর।
শশিভূষণ বললেন, মহারাজ, পাহাড়ের গায়ে ওই যে জঙ্গল, তা দেখে মনে হয় যেন কোনও দিন মানুষের পায়ে বিধ্বস্ত হয়নি। প্রকৃতি এখনও আদিম অবস্থায় রয়েছে এখানে।
বীরচন্দ্র বললেন, আমার ত্রিপুরা অতি সুন্দর। প্রকৃতি এখানে অকৃপণ। জঙ্গলে যে-সব মানুষজন থাকে, তারাও জঙ্গলকে অপবিত্র করে না। তুমি উদয়পুর থেকে অমরপুর পর্যন্ত বড়মুড়া পাহাড়শ্রেণী দেখেছ? কী অপূর্ব!
শশিভূষণ বললেন, আজ্ঞে না, এ দেশটির অনেক কিছুই আমার এখনও দেখা হয়নি।
বীরচন্দ্র বললেন, সে পাহাড়কে মনে হয় যেন দেবতাদের লীলাস্থল। আমি তো বড়মুড়াকে দেবতামুড়া বলি। তবে দুঃখ কি জান মাস্টার, আমাদের এই ত্রিপুরার সৌন্দর্যের কথা বাইরের অনেকেই জানে না।
শশিভূষণ বললেন, সে কথা ঠিক। এ দেশ সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই, মনে করে অতি দূর-দুৰ্গম স্থান। কলকাতায় অনেকে ভাবে, ত্রিপুরায় বুঝি শুধু পাহাড় আর জঙ্গল, শহর-টহর কিছু নেই।
বীরচন্দ্ৰ হেসে বললেন, আর আমি বন-গাঁয়ে শিয়ালরাজা! তোমাদের কলকাতার লোকদের কথা আর বল না। তারা সব পশ্চিমমুখো! পুবের দিকে তাকাতে জানে না। সূর্য ওঠে পুবে, আর কলকাতার শিক্ষিত লোকেরা বিলেতের দিকে চেয়ে প্ৰণাম ঠোকে। তোমাদের এক কবি হেম বাড়ুজ্যে লিখেছেন :
চিন ব্ৰহ্মদেশ অসভ্য জাপান
তারাও স্বাধীন তারাও প্রধান
ভারত শুধুই ঘুমায়ে রয়।
আচ্ছা বল তো, জাপান কি সত্যই অসভ্যদের দেশ? জাপানিরা কোনওদিন বাইরের কোনও শক্তির কাছে পরাধীন হয়নি। ওদের সম্রাট সূর্য দেবতার বংশধর। সেখানকার সব লোক বৌদ্ধ, তারা হয়ে গেল অসভ্য? তোমাদের কবি চিন, ব্ৰহ্মদেশকেও অসভ্য বলেছেন নাকি?
শশিভূষণ একটু বিব্রতভাবে উত্তর দিলেন, আপনি ঠিকই বলেছেন মহারাজ, এসব অজ্ঞতার ফল। চিন-জাপান সম্পর্কে অনেকেই কিছু জানে না। এই দেখুন না, জাপানে যে সূর্যকে দেবতা না ভেবে দেবী রূপে কল্পনা করা হয়, তাই বা জানে ক’জনা? আসলে হয়েছে কী জানেন, এই ভারতের ওপর বারবার আক্রমণ এসেছে উত্তর আর পশ্চিম থেকে। আগে মোগল-পাঠানরা এল, তারপর পর্তুগিজ-ওলন্দাজ-ফরাসি-ইংরেজরা। সেই জন্যই ভয়ে বা বিস্ময়ে বা ভক্তিতে গদগদ হয়ে এদেশের মানুষ তাকিয়ে থাকে পশ্চিম দিকে।
মহারাজ রাগতভাবে বললেন, যারা চিন-জাপানকে অসভ্য বলে, তারা যে ত্রিপুরাকে জংলী ভাববে, তাতে আর আশ্চৰ্য কী!
শশিভূষণ বললেন, হেম বাড়ুজ্যে লিখেছেন বলেই যে সকলে ওরকম মনে করে, তার কোনও মানে নেই। আমার তো ওই কবিতাটি পড়ে হাসি পেয়েছিল।
মহারাজ বললেন, থামো তো তুমি! আমার ঢের জানা আছে। কলকাতার মানুষ তাদের অজ্ঞতা ঢাকবার জন্য আত্মম্ভরিতা দেখায়!
শশিভূষণ চুপ করে গেলেন। কিছুক্ষণ মন দিয়ে গড়গড়া টানতে লাগলেন বীরচন্দ্র। ঘোড়া দুটি দুলকি চালে এগিয়ে চলল পাহাড় শ্রেণী পাদদেশের দিকে।
একটু পরে বীরচন্দ্ৰ হঠাৎ বিষয় পরিবর্তন করে বললেন, বুঝলে মাস্টার, আজ আমার মনটা একটু খারাপ!
শশিভূষণ সচকিতভাবে জিজ্ঞেস করলেন, কেন মহারাজ?
বীরচন্দ্রের মুখখানি ঈষৎ লজ্জারুণ হল। গোঁফের দু’দিকে তা দিতে দিতে তিনি বললেন, কথাটা তোমাকে বলা উচিত কি না জানি না। আমার কনিষ্ঠা রানী আজ আমাদের সঙ্গে আসবার জন্য আবদার করছিল। বয়েস তো কম, একেবারে অবুঝ। আমি বললাম, আমাদের ঘোড়ায় চেপে যেতে হবে, পাল্কি যাবার রাস্তাও নেই। তাতে সে বলে, সে নাকি ঘোড়ায় চড়তে জানে। মণিপুরে থাকতে শিখেছে।
শশিভূষণ বললেন, তা হলে তাকে নিয়ে এলেন না কেন, মহারাজ।
বীরচন্দ্র বললেন, তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? ত্রিপুরা রাজ্যের রানী প্রকাশ্যে ঘোড়ায় চড়ে যাবে, লোকে তার মুখ দেখবে, আমাদের বংশ মর্যাদা ধুলোয় লুটোবে না?
শশিভূষণ বললেন, আমাদের কলকাতায় কিন্তু অসুবিধে হতো না। সেখানকার বড় মানুষেরা স্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ঘোড়ায় চাপেন। দেবেন ঠাকুরের ছেলে জ্যোতিবাবু তাঁর পত্নীকে নিয়ে বেরুতেন শুনেছি। আমি নিজে গড়ের মাঠে রাজা-মহারাজদের দেখেছি, সাহেব মেমদের পাশাপাশি বউ নিয়ে হাওয়া খাচ্ছেন।
বীরচন্দ্র এ কথাগুলি যেন শুনলেন না। আপনমনে বললেন, আসবার সময় দেখলাম, ছলো ছলো নয়নে তাকিয়ে আছে। এখন নিশ্চয় কাঁদাকাটি করছে সে।
শশিভূষণ বললেন, মহারাজ, আমি একটি প্রস্তাব জনাব? আপনি কলকাতায় একটা অট্টালিকা বানান। সেখানে আপনি মাঝে মাঝে গিয়ে থাকবেন। আমার মনে হয়, এটা বিশেষ দরকার।
বীরচন্দ্ৰ ভ্ৰকুঞ্চিত করে কয়েক মুহূর্ত শশিভূষণের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন, দরকার? কেন, কিসের দরকার!
শশিভূষণ বললেন, আপনি যাওয়া-আসা করলে আপনার কথা, ত্রিপুরা রাজ্যের কথা সেখানকার মানুষ জানবে। আর কলকাতা মারফত সারা ভারত জানবে। কলকাতা এখন ভারতের রাজধানী। গোটা পৃথিবীতে কলকাতার সুনাম। কত দূর দূর দেশ থেকে জাহাজ আসে, এমনকি ভূগোলকের উল্টো পিঠ আমেরিকা থেকেও জাহাজ আসে কলকাতা বন্দরে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সমৃদ্ধিতে রমরম করছে কলকাতা শহর। আপনি বোধহয় অনেকদিন যাননি। কত সুরম্য প্রাসাদ নির্মিত হয়েছে সেই নগরীতে। ভারতের বড় লাট, ছোট লাট দু’জনই থাকেন কলকাতায়, সেই টানে রাজা-মহারাজা, নবাব বাহাদুর যে কলকাতায় এসে থাকেন, তার ইয়ত্তা নেই। কুচবিহার, ময়ূরভঞ্জ, মহীশূর, জয়পুর ইত্যাদি সব রাজাদেরই নিজস্ব বাসভবন আছে কলকাতায়। সেই জন্যই বলছি, ত্রিপুরা সরকারেরও একখানি থাকা উচিত সেখানে। আপনার ফটোগ্রাফির এত শখ, কলকাতায় ফটোগ্রাফির ক্লাব আছে, বার্ষিক প্রদর্শনী হয়-
শশিভূষণকে থামিয়ে দিয়ে বীরচন্দ্র রুক্ষ স্বরে বললেন, থাক, আমাকে আর কলকাতার গুণপনা শোনাতে হবে না। আমি কলকাতায় গেছি, অত মানুষের ভিড় আমার ভালো লাগে না!
শশিভূষণ চুপ করে গেলেন।
এবারে ওঁদের পাকদণ্ডি ধরে চড়াইয়ে উঠতে হবে। অতি সাবধানে অশ্বচালনা করতে হবে এখানে। মাঝে মাঝেই এক পাশে খাদ। তবে স্নিগ্ধ বাতাস বইছে, শোনা যাচ্ছে নানারকম পাখির ডাক, অরণ্য থেকে ভেসে আসছে টাটকা সবুজ গন্ধ। তীর্থযাত্রীরা ছাড়া এ পথ দিয়ে আর কেউ যায় না, একটি কাঠুরেরও দেখা পাওয়া গেল না।
বীরচন্দ্র এখনও চিন্তা করছেন মনোমোহিনীর কথা। কল্পনায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন, অভিমানের কান্নায় ভেসে যাচ্ছে সেই মুখ।
অরণ্যের এই নিস্তব্ধতার মধ্যে কথা বলতেও ইচ্ছে করে না। শশিভূষণ অভিভূতভাবে দু’পাশের গাছপালা দেখতে দেখতে এগোলেন।
হঠাৎ একটা যেন হলুদ রঙের উল্কা ছিটকে এল জঙ্গল থেকে। সেটা ঝাপিয়ে পড়ল বীরচন্দ্রের ঘোড়ার ওপর। প্রথমে কয়েক মুহূর্ত কেউ বুঝতেই পারল না যে সেটা একটি বাঘ।
ঘোড়াটার টুঁটি কামড়ে ধরে গর্জন করে উঠল বাঘাটা। তখন একটা বিকট কোলাহল শুরু হয়ে গেল। হুঁকোবরাদার ভয়ে পালাতে গিয়ে পড়ে গেল খাদে। দেহরক্ষী দু’জন বন্দুক তাক করতে গিয়ে দেখল টোটা ভরা নেই। বীরচন্দ্রের কাছে বন্দুক নেই যদিও, কিন্তু কটিবন্ধে ঝুলছে তলোয়ার। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি এমনই বিহ্বল হয়ে গেলেন যে টানাটানি করেও তলোয়ার কোষমুক্ত করতে পারলেন না। ঘোড়া থেকে তিনি পড়ে গেলেন মাটিতে।
দেহরক্ষীদের মধ্যে একজন বন্দুকে টোটা ভরার পরেও এমনই কম্পিত হাতে গুলি চালাল যে তা বাঘটার ধারে কাছেও গেল না। বাঘটা এবার ঘোড়াটাকে ছেড়ে বীরচন্দ্রের দিকে আক্রমণ-উদ্যত হয়েছে।
শশিভূষণ নিজের ঘোড়া থেকে লাফিয়ে নেমে বিদ্যুৎ বেগে ছুটে গিয়ে অন্য দেহরক্ষীটির হাত থেকে কেড়ে নিলেন বন্দুক। তারপর সোজা বাঘটির মাথার দিকে পরপর দুটি গুলি চালালেন। কিছুকাল আগে তিনি বিশিষ্ট শিকারী ছিলেন, তাঁর লক্ষ্যভ্রষ্ট হবার কথা নয়। বাঘটি আর মাথা তুলতে পারল না।
শশিভূষণ বীরচন্দ্রকে তুলে ধরে বললেন, মহারাজ, আপনার লাগেনি তো?
বীরচন্দ্র এখনও কোনও কথা বলতে পারছেন না। শুধু দু।দিকে মাথা নাড়লেন। শশিভূষণ ধুলো ঝেড়ে দিতে লাগলেন তার পোশাকের। দেহরক্ষী দু’জন এখন অকারণ চ্যাঁচামেচি করছে, তাদের ধমক দিয়ে বললেন, হুঁকোবরাদার কোথায় গেল, তাকে খোঁজো।
ঘোড়াটির গলা থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে, চিৎকার করছে মৃত্যু যন্ত্রণায়, তার বাঁচার কোনও আশা নেই। বন্দুকে আবার টোটা ভরে শশিভূষণ ঘোড়াটির ভব যন্ত্রণা শেষ করে দিলেন।
সমগ্র ঘটনাটি ঘটে গেল মাত্র দুতিন মিনিটের মধ্যে। কতখানি বিপদ যে ঘটতে পারত এবং প্রায় বিনা ক্ষতিতে যে উদ্ধার পাওয়া গেল, তা উপলব্ধি করতে সময় লাগল আরও কিছুক্ষণ।
হুঁকোবরাদার বেশি নীচে পড়েনি, তাকে উদ্ধার করা হল। ওরা সবাই মিলে মৃত বাঘটিকে ঘিরে মন্তব্য করতে লাগল নানারকম। গায়ে ছাপ ছাপ দেওয়া বেশ বড় আকারের চিতা, এর চামড়া অতি মূল্যবান। একজন দেহরক্ষী জিজ্ঞেস করল, মহারাজ, এর চামড়াটা খুলে নেব?
বীরচন্দ্র আবার দুদিকে মাথা নাড়লেন, হাতের ইঙ্গিতে সরে যেতে বললেন তাদের। এবার নিজে কাছে এসে ভালো করে দেখলেন তার আততায়ীকে। সাধারণ বাঘের চেয়েও চিতা অনেক দুঃসাহসী ও হিংস্র। আজ ত্রিপুরার সিংহাসন শূন্য হয়ে যেতে পারত।
তিনি পা দিয়ে ঠেলে ঠেলে মৃত বাঘটিকে নিয়ে এলেন খাদের কিনারে। তারপর জোর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন অনেক নীচে। ঘাড় ঝুঁকিয়ে সেটা দেখার পর শশিভূষণের দিকে ফিরে বললেন, মাস্টার, তুমি আমার জীবনরক্ষা করলে, এজন্য একটা পুরস্কার তোমার প্রাপ্য।
শশিভূষণ বিনীতভাবে বললেন, আপনি যে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, এটাই আমার বড় পুরষ্কার। আর কিছু চাই না। আমি কর্তব্য করেছি মাত্র।
বীরচন্দ্র বললেন, উহু, এটা শুধু কৰ্তব্য নয়, বীরত্ব। সাহস। ত্রিপুরা রাজ্যকে তুমি অরাজকতা থেকে বাঁচালে। এর পুরস্কার তো তোমাকে নিতেই হবে। কী সেই পুরষ্কার জান?
শশিভূষণ চুপ করে রইলেন। বীরচন্দ্র তার হাত থেকে বন্দুকটি নিয়ে বললেন, এর যথার্থ পুরষ্কার, এই মুহূর্তে তোমার মৃত্যুদণ্ড!
দুচক্ষু বিস্ফারিত হয়ে গেল শশিভূষণের। বীরচন্দ্রের শীতল কণ্ঠস্বর শুনেই বোঝা যায়, তিনি কৌতুক করছেন না! তবু তিনি খানিকটা অবিশ্বাসের সঙ্গে বললেন, এত বড় পুরস্কারের যোগ্য তো কিছু আমি করিনি!
বীরচন্দ্র বললেন, তুমি একজন মাস্টার, তোমার তো বন্দুক ধরার কথা নয়। তোমার উচিত ছিল ভয়ে কাপড় নষ্ট করে ফেলা কিংবা রাস্তায় গড়াগড়ি দিয়ে বলির পাঠার মতন চ্যাঁচানো! তুমি গুলি চালিয়ে আমার প্রাণ বাচালে কেন?
বীরচন্দ্র বন্দুক তুলে তাক করলেন শশিভূষণের দিকে। শশিভূষণ এখনও বুঝতে পারছেন না এটা কী ধরনে মস্করা।
বীরচন্দ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বললেন, ত্রিপুরার মহারাজ একটা সামান্য বাঘের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করতে পারেননি, এটা কি তাঁর পক্ষে গৌরবের কথা? তাঁর অপদাৰ্থ দেহরক্ষীগুলো বন্দুক ধরতেই শেখেনি। ত্রিপুরার মুকুট রক্ষা করল কি না এক ধূতি পাঞ্জাবি পরা বাঙালিবাবু? ঠাকুর লোকেরা শুনে হাসবে। নাঃ, এর কোনও প্রমাণ রাখা যায় না। বাঘের থাবায় আসলে মরেছ তুমি, বুঝলে?
দেহরক্ষীরা পাংশু মুখে ঘেষাঘাষি করে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বীরচন্দ্র বললেন, এই হারামজাদারা, তোরা যদি একটা কথা বলিস তা হলে গর্দান যাবে।
বীরচন্দ্ৰ বন্দুক উঁচিয়ে রইলেন শশিভূষণের দিকে। তিনি ভয় পাননি, তাঁর ওষ্ঠ তিক্ত হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে যদি মৃত্যু হয়, তবে তাঁর মুখে লেগে থাকবে একটা বিরক্তির ছাপ।
বীরচন্দ্ৰ এবার আপনমনেই বললেন, আমি কখনও নিজের হাতে মানুষ মারিনি। আজই কি প্রথম মারব? বড় বিশ্ৰী ব্যাপার। এই মাস্টারটি ছবি তোলার অনেক কিছু বোঝে। এমন লোক কি আর পাব?
বন্দুক নামিয়ে তিনি বললেন, ওহে মাস্টার, তোমার প্রাণটা বাঁচাবার একটা রাস্তা আছে। শপথ করো, এই ঘটনা কোনওদিন কারুর কাছে প্ৰকাশ করবে না!
শশিভূষণ কোনও উত্তর দিলেন না।
বীরচন্দ্ৰ এবার খানিকটা মিনতির সুরে বললেন, এখানে তো একটা কথাও উচ্চারণ করবেও না, এমনকি কলকাতায় তোমার বাড়ির লোকদের চিঠি লিখেও জানাবে না।
শশিভূষণ তবু বললেন না কিছুই।
বীরচন্দ্ৰ শশিভূষণের কাছে এসে তাঁর কাঁধে হাত রেখে বললেন, কথা দাও, মাস্টার। তোমার কথাই যথেষ্ট। তুমি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছ, আমার মানটা বাঁচিয়ো।
শশিভূষণ বললেন, এতদিন আমায় দেখছেন, আপনার বোঝা উচিত ছিল, নিজের সম্পর্কে বেশি কিছু বলা আমার স্বভাব নয়। যাই হোক, এবার কি আমরা ফিরে যাব, না এগোব?
বীরচন্দ্র বললেন, ফিরব কেন? যাব, শেষ পর্যন্ত যাব।
তিনি দেহরক্ষীদের একটি অশ্বে আরোহণ করলেন। তারপর আগের সব কিছু যেন ভুলে গিয়ে হালকা গলায় বললেন, মাস্টার, তুমি বন্দুক চালাতে শিখলে কোথায়? আমার ধারণা ছিল, কলকাতার কলেজে পড়া বাবুরা কলম ছাড়া আর কিছু ধরতে জানে না।
শশিভূষণ নিজের বংশের কথা বিশদ না করে শুধু বললেন, আমার উঠতি বয়েসটা কেটেছে মুর্শিদাবাদে সেখানকার বনে-জঙ্গলে শিকার করেছি।
– বাঘও মেরেছ নিশ্চয়ই। প্রথম বাঘ এরকম চটপট কেউ মারতে পারে না।
— তা মেরেছি। দু’একটা।
— ছিলে বাঘ শিকারী, তারপর মাস্টারির মতন নিরীহ কাজ বেছে নিয়ে এলে কেন এখানে?
— আমার উত্তরটা শুনলে হয়তো বিশ্বাসযোগ্য হবে না, মহারাজ। এসেছি ত্রিপুরাকে ভালোবেসে।
– বিশ্বাস করা সত্যি শক্ত। সবাই আসে কোনও না কোনও মতলবে, স্বার্থের সন্ধানে। নিঃস্বাৰ্থ ভালোবাসা যে বড় দুর্লভ বস্তু! মাস্টার, তুমি ত্রিপুরা রাজ্যটিকে ভালোবাস, না এখানকার কোনও সুন্দরীতে তোমার মন মজেছে?
শশিভূষণের এখন গল্প করার মেজাজ নেই। মুখের সামনে বন্দুক তুলে যদি কেউ হত্যার হুমকি দেয়, তারপর কারই বা মেজাজ ঠিক থাকে। কিন্তু বীরচন্দ্রের স্বভাব যেন শিশুর মতন, তিনি এরই মধ্যে হালকা গলায় হাসছেন।
কয়েকবার চড়াই-উৎরাইয়ের পর তারা এসে থামলেন একটা ঝরনার সামনে। সমতল থেকে অনেকখানি উচ্চে, চতুর্দিকে ঘোর জঙ্গল, যতদূর দেখা যায় শুধু পাহাড় ও উপত্যকা। ঝরনাটার এক পাশে একটা ছোট মন্দির, কাছাকাছি জঙ্গল পরিষ্কার করা, এদিক-সেদিকে ছড়িয়ে রয়েছে কয়েকটা পাথরের উনুন, পোড়া কাঠ, ভাঙা মালসা। বোঝা যায়, তীর্থযাত্রীরা এখানে রান্না করে খায়।
মন্দিরটি এমন কিছু দর্শনীয় নয়, কিন্তু পাশেই দেয়ালের মতন যে খাড়া পাহাড়, সেদিকে তাকিয়ে দু’জনেই বিস্ময়ের শব্দ করে উঠলেন। সেই পাথুরে দেয়ালের গায়ে খোদাই করা আছে একটি বিশাল মুখ। তার তিনটি চোখ, এক দিকে একটি ত্রিশুল।
মহারাজ অস্ফুট স্বরে বললেন, কালভৈরব!
শশিভূষণ ঘোড়া থেকে নেমে চামড়ার ব্যাগ খুলে ক্যামেরা বার করলেন। এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললেন, আরও অনেক খোদাই করা মূর্তি আছে। ওই যে বিষ্ণু, সুদৰ্শন চক্র, গরুড়….
ঝরনাটির জলধারা ক্ষীণ, হেঁটে পার হয়ে এলেন দু’জনে। পাহাড়ের গায়ে দেখতে লাগলেন একের পর এক মূর্তি।
বীরচন্দ্র বললেন, এই সেই উনকোটি তীর্থ!
শশিভূষণ বললেন, এ পর্যন্ত আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারিনি। ভেবেছিলাম গল্প কথা। এই দুৰ্গম পাহাড়ের গায়ে কে এত মূর্তি খোদাই করে রাখবে? কার জন্য? মন্দিরেও তো কেউ থাকে না।
বীরচন্দ্র বললেন, ঊনকোটি! তার মানে জান? এক কোটির থেকে মাত্র একটি কম। এত মূর্তি ও ছবি যে আছে, তার সব আজ পর্যন্ত কেউ দেখেনি। শুনেছি, হাজার বছর আগে শিবের ভক্তরা এখানে এসব করে গেছে। প্রতি বছর অশোকাষ্টমীর সময় এখানে তীর্থযাত্রীরা দূর দূর দেশ থেকে আসে।
শশিভূষণ বললেন, এ যে শিল্পের খনি। ইতিহাসের খনি! এখানে আসার আগে আমি কোনও দিন ঊনকোটির নামও শুনিনি।
স্ট্যান্ডের ওপর ক্যামেরা বসিয়ে ছবি তোলার ব্যবস্থা হল। কোনওটা বীরচন্দ্ৰ তুলছেন, কোনওটা শশিভূষণ। ছবি অবশ্য ভালো আসার সম্ভাবনা কম। এখানকার আকাশ মেঘলা, যথেষ্ট আলো নেই।
পাহাড়ের ধারে ধারে খাদ নেমে গেছে। দেখা যায় অনেক দূর পর্যন্ত। কোনও কোনও স্থানে নীচে নামার জন্য সিঁড়ির চিহ্ন রয়েছে। অর্থাৎ এক কালে সিঁড়ি ছিল, এখন ক্ষয়প্রাপ্ত। তবু সেই চিহ্ন ধরে নামতে নামতে আরও দেয়াল চিত্র ও ভাস্কৰ্য দেখা যায়। শশিভূষণ এরই মধ্যে এক শো’র বেশি দেখছেন, সত্যি যেন শেষ নেই। বেশি নীচে নামতে সাহস হয় না, তা হলে আবার ওপরে ওঠা খুবই কষ্টকর হবে। তা ছাড়া এক জায়গা থেকে স্পষ্ট দেখা গেল, নীচের উপত্যকা অরণ্য মর্দন করে চলেছে হাতির পাল।
বীরচন্দ্রের ভারি চেহারা, পাহাড়ে বেশি ওঠা-নামা করলে তিনি শ্ৰান্ত হয়ে পড়েন, শ্বাসকষ্ট হয়। শশিভূষণ এক এক দিক দেখে এসে মহারাজকে মূর্তিগুলির বর্ণনা দেন। ব্ৰহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর, হনুমান, গণেশ, নানান ভঙ্গিমার কিন্নরী, বুদ্ধ ও শিব, ভগীরথী, রাবণ কী নেই! এক সময় শশিভূষণও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়লেন, তবু ফিরে যেতে ইচ্ছে করে না। মহারাজের পাশে বসে তিনি সম্পূর্ণ এলাকাটির পরিপার্শ্বের রূপ উপভোগ করতে লাগলেন।
এক সময় তিনি অভিভূতভাবে বললেন, মহারাজ, ত্রিপুরার যে এত সম্পদ আছে, তা সারা ভারতবর্ষের মানুষের জানা উচিত। অজন্তার কথা শুনেছেন? মহারাষ্ট্রের এক দুৰ্গম অঞ্চলে পাহাড়ের গুহার মধ্যে বৌদ্ধ শিল্পীরা কী সব অপূর্ব শিল্পসম্পদ রেখে গেছেন। বহুকাল লোকে সেই সব শিল্পকীর্তির কথা জানতই না। ইংরেজরা এই শতাব্দীতে পুনরাবিষ্কার করেছে। ইংরেজরাও কি ত্রিপুরায় এই উনকোটির সন্ধান জেনেছে?
বীরচন্দ্ৰ তন্ময় হয়ে চেয়ে আছেন, কোনও উত্তর দিলেন না।
শশিভূষণ আবেগের সঙ্গে বললেন, আমার ইচ্ছে করে সারা জগতের মানুষকে ডেকে এনে দেখাতে। কিন্তু আমার কথা কে শুনবে? সেইজন্যই বলছিলাম, মহারাজ, কলকাতায় ত্রিপুরা সরকারের একটা কেন্দ্র থাকলে এই সব জিনিসের প্রচার হতো। ভারতের রাজধানীতে এখন সারা পৃথিবীর মানুষই আসে।
যেন ধ্যান ভঙ্গ করে বীরচন্দ্র বললেন, হু! তোমার প্রস্তাবের সারবত্তা আছে, তা ঠিক। তা হলে সেই ব্যবস্থাই করা যাক। বাড়ি বানাতে সময় লাগবে। তার আগে কলকাতা শহরে একটা বড়সড় বাড়ি ভাড়া করলেই হয়। তার এক অংশে আমি গিয়ে মাঝে মাঝে থাকব। আর এক অংশে হবে আমার সরকারের দফতর। তুমি হবে সেই দফতরের নিয়ামক।
শশিভূষণ চমকে উঠে বললেন, আমি? না, না, আমি না! অপর কারুর ওপর ভর দিন, ও দায়িত্ব নিতে আমি রাজি নই।
বীরচন্দ্ৰ ভুরু কুঞ্চিত করে বললেন, তোমারই প্রস্তাব, অথচ তুমি রাজি নাও কেন?
শশিভূষণ বললেন, আমি ত্রিপুরাতেই থাকতে চাই। এখানে আরও কত কী দেখার আছে। কলকাতায় চাকরি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়!
– আমি যদি বলি তোমায় যেতেই হবে? তোমার পাঠশালায় তো ছাত্র জোটে না। আমি ঠিক করেছি, ও পাট এবার চুকিয়ে দেব। রাজধানীতে একটা কলেজ বানাব, সেখানে সাধারণ ঘরের ছাত্ররাও পড়বে, রাজকুমাররাও ইচ্ছে হলে পড়বে। তবে, সে কলেজ বানাতে তো দেরি লাগবে, ততদিন তুমি কী করবে? তোমার যে আর চাকরি থাকবে না?
– আপনার এখানে চাকরি না থাকলে আমি পরিব্রাজক হব। ইংরেজের রাজত্ব সীমার মধ্যে আমি কোনওদিন চাকরি করতে যাব না। পরম করুণাময়ের কৃপায় নিজের ব্যয়ের সংস্থান আছে।
— ওহে শশীমাস্টার, তুমি দেখছি বেশ ঘাড়-বেঁকা। আমি বললাম, তোমাকে কলকাতায় যেতেই হবে, তুমি তা প্রত্যাখ্যান করলে! কোনও রাজা-মহারাজের মুখের ওপর কেউ এমন কথা বলে? তার ফল কী হয় জান না?
— যদি বেয়াদপি করে থাকি, তা হলে ক্ষমা করবেন, মহারাজ। আপনি কুমারদের পাঠশালা তুলে দিচ্ছেন, আমিও ইস্তফা দিচ্ছি। আমি আর কোনও চাকরি চাই না।
— ইস্তফা দেবার তো আর প্রশ্নই ওঠে না। রাজার মুখের ওপর যদি কেউ কথা বলে, তাতে রাজার ক্রোধের উদ্রেক হয়। যে-রাজার ক্ৰোধ নেই, তাকে কেউ মানে না। রাজার ক্ৰোধ হলে সেই বেয়াদবকে শান্তি দিতেই হয়। তোমাকে শাস্তি দিতে আমি বাধ্য।
– শাস্তি দিন, আমি মাথা পেতে নেব।
— মাথা পেতেই নিতে হবে তোমায়। তোমার ধড় থেকে মাথাটা বিচ্যুত হয়ে যাবে। সবার চোখের আড়ালে। তোমার ধড় কিংবা মাথা কেউ আর খুঁজে পাবে না। জঙ্গলের মধ্যে পুঁতে দেওয়া হবে, কোনও এক সময় তা নিয়ে ভোজের উৎসব করবে অন্য জন্তুরা।
— মহারাজ, আজ সকালে আপনি এক বিচিত্র মেজাজে আছেন। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার আমাকে পৃথিবী থেকে অদৃশ্য করে দেবার কথা বললেন। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি পৃথিবী ছাড়ার একেবারেই ইচ্ছে নেই আমার।
বীরচন্দ্ৰ হা-হা শব্দে উচ্চহাস্য করলেন। উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমার মতন একটি গুণীকে একেবারে শেষ করে দিতে আমারই কি ইচ্ছে হয়? আমাকে বাধ্য করো না। আমার কথা মানো, শাস্তি পেতে হবে না। কলকাতায় যাও, আমার জন্য বাড়ি প্রস্তুত করে রাখো। কলকাতায় গেলেও তুমি তো ইংরেজের রাজত্বে চাকরি করছ না, তুমি প্রতিনিধি থাকছ স্বাধীন ত্রিপুরার! আঃ, এবার ছোট রানীকেও কলকাতায় নিয়ে যাব। তাকে একদিন ঘোড়ায় চড়াব কেল্লার মাঠে, গঙ্গার ধারে! সে কত খুশি হবে!