অষ্টাবিংশ অধ্যায় – জগতের অসারত্ব-কীর্তন
মার্কণ্ডেয় বলিলেন,–অপরিসীম দুঃখের সাগর এই সারাংশরহিত জগৎ সমূহ যে ক্ষণে উৎপন্ন হইতেছে, পুনরায় সেই ক্ষণেই লীন হইতেছে। ১।
নিঃসার জগৎ–যে সকল সারবস্তু অক্লেশে উৎপাদন করিতেছে, পুনর্বার মহাপ্রলয়কাল উপস্থিত হইলে সেই জগতেই উক্ত সারবস্তু সকল বিলীন হইতেছে। ২
জগন্নাথ হরি, উৎপত্তি এবং প্রলয় দ্বারা মহাদেবকে ভাবে জগৎ-প্রপঞ্চের নিঃসারতা দেখাইলেন। ৩
একমাত্র মঙ্গলনিধান শান্ত অনন্ত অচ্যুত পরাৎপর জ্ঞানময় বিশিষ্ট অদ্বৈত অব্যগ্ৰ অচিন্ত্যরূপ এক ব্ৰহ্মই সার তদ্ভিন্ন সকলই অসার। ৪
যাহা হইতে এই বিশ্বের উৎপত্তি, স্থিতি এবং লয় হইতেছে এবং যিনি মেঘ জালমণ্ডিত গগনমণ্ডলকে অসার বিশ্বমণ্ডলের সহিত ধারণ করিতেছেন, যোগি পুরুষগণ আত্মস্বরূপ যে পরমাত্মার প্রাপ্তিবাঞ্ছায় সৰ্ব্বদা অষ্টাঙ্গযোগ শিক্ষা করেন এবং যাহাকে প্রাপ্ত হইয়া মায়াজাল-জটিল-সংসারমণ্ডলে পুনৰ্বার প্রতি নিবৃত্ত হন না;–সেই যোগিগণের আরাধ্য ব্রহ্মই সার, অন্য সকলই অসার এবং যাহার দ্বারা নিত্যপদ-প্রাপ্তি হয়, সেই নিবৰ্ত্তক (নিষ্কাম) ধর্ম দ্বিতীয় সার। প্রবর্তক (সকাম) ধর্ম অসার। ৫-৭
বল্মীককুল (উই) যে প্রকার উৎসাহে মৃত্তিকাসঞ্চয় করত স্বীয় স্বার্থসাধন করে, সেইরূপ চতুর ব্যক্তি পাপ-বিমুক্তি এবং পারলৌকিক পথের পাথেয় স্বরূপ ধর্মসঞ্চয় করিবে। ৮
এক ধর্মই সকল প্রকার সাংসারিক কৰ্ম্মসমূহের মঙ্গলনিদান। এতদ্ভিন্ন অর্থ, কাম এবং মোক্ষ প্রভৃতি, সেই ধর্ম হইতেই উৎপন্ন হয়। ৯
বরং শিরচ্ছেদাদি দ্বারা প্রাণ পরিত্যাগ শতগুণে শ্রেয়স্কর, তথাপি লোক এবং বেদ উভয়গর্হিত ধর্ম-পরিত্যাগ করা অতি অযোগ্য। ১০
এই লোকত্রয় ধৰ্মকৰ্তৃক ধৃত। জগতের সৃষ্ট্যাদি কাৰ্য্য ধর্ম হইতে হইতেছে। এবং পূর্বে ত্রিদিবেশ্বর দেবগণ ধৰ্মবলে দেবত্ব লাভ করিয়াছেন। ১১
চতুষ্পদ ধর্মরূপ ভগবান নিরন্তর জগৎ পরিপালন করিতেছেন। তিনিই আদি পুরুষ বলিয়া অভিহিত হন। ১২
যে ব্যক্তি ধর্মচ্যুত হয়, সেই ব্যক্তিই ক্ষর নামে অভিহিত এবং যে ব্যক্তি প্রযত্ন-পরিপাল্য স্বধর্ম হইতে চ্যুত না হয়, তাহাকেই অক্ষরসংজ্ঞার অভিধেয় বলা হয়। ১৩
মার্কণ্ডেয় বলিলেন, আমি তোমাদের নিকট সার ব্ৰহ্ম এবং অসার জগতের বিষয় বর্ণনা করিলাম। ১৪।
এই বিষয় স্বয়ং মহাদেব স্বীয় অন্তরে ধ্যানে দর্শন করিয়াছেন। জগন্নাথ বিষ্ণু এই বিষয় দর্শন করাইয়াছিলেন। ১৫
মহাদেব স্বয়ং আত্মধ্যান বলে দর্শন করিয়াছিলেন। নিরাকার হইয়াও মূর্তিমান নিৰ্ম্মায়িক পরমব্রহ্মই সার এবং ধর্ম দ্বিতীয় সারস্বরূপ। এতদ্ভিন্ন সকলই অসার। বুদ্ধিমান্ ব্যক্তি এই সার পদার্থ জানিয়াও নিত্য-পদ মোক্ষধাম প্রাপ্ত হন। ১৬
অষ্টাবিংশ অধ্যায় সমাপ্ত ॥ ২৮