২৭. সর্বশেষ পালানোর জায়গা
ড্রাগনটিকে কোনোদিকে ঘোরানোর কোনো উপায় নেই। ড্রাগনটি দিকবেদিক ছুটছে, সে জানে না যে কোনদিকে যাচ্ছে। এবং হ্যারি জানে এটি যদি হঠাৎ বাঁক নেয় অথবা যদি ওলোটপালট খায় তাহলে কোনো ভাবেই তার পিঠে সেটে থাকা যাবে না। ড্রাগনটি উপরে থেকে আরো উপরে উঠে যাচ্ছে। এতটা উপরে যে লন্ডন শহরটা সবুজ মানচিত্রের মত দেখা যাচ্ছে। তারপরও হ্যারি এক ধরণের কৃতজ্ঞতা বোধ করল ড্রাগনটির প্রতি, কারণ সে ছাড়া ওখান থেকে বের হয়ে আসা অসম্ভব ছিল। ড্রাগনের ধাতবের মত পিঠের উপরে উবু হয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছে। ঠাণ্ডা বাতাস এসে চামড়ার পোড়া জায়গায় লাগছে। ড্রাগনের পাখা দুটি উইন্ডমিলের মত বাতাসে ঝাপটা দিচ্ছে। ভয়ে না আনন্দে বোঝা গেল না রন পেছনে বকবক করছে আর হারমিয়ন মনে হল ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
মিনিট পাঁচেক পর, ড্রাগন ওদের ফেলে দিতে পারে হ্যারির এই ভয়টা কেটে গেল। কারণ এটির আন্ডারগ্রাউন্ডের ওই কারাবাস থেকে শুধু উড়ে দূরে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো দিকে খেয়াল না থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন হল কতক্ষণে এবং কীভাবে এই বিশাল প্রাণীটির পিঠ থেকে ওরা নামতে পারবে। ড্রাগনটি নিচে নামা ছাড়া কতক্ষণ উড়তে পারে সে সম্পর্কে হ্যারির কোনো ধারণা নেই। অথবা বিশেষ করে এই ড্রাগনটি নামার জন্য কীভাবে একটি ভাল জায়গা খুজেঁ পাবে, তাও আবার সেটি চোখে কম দেখে?
হ্যারি চারদিকে তাকাতে থাকল, সে মনে মনে ভাবল যেন যখন তখণ স্কারটিতে চুলকাতে শুরু করতে পারে…।
ভোল্টেমর্টের জানতে কত সময় লাগবে যে তারা বেলাট্রিক্সের ভল্ট ভেঙে প্রবেশ করেছিল? কত সময়ের মধ্যে গবলিনরা ভোল্ডেমর্টকে জানিয়ে থাকতে পারে? ভল্ট থেকে কী নেয়া হয়েছে সেটা বুঝতে কত সময় লাগবে? এবং কখন বুঝবে যে সোনার কাপটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে? শেষ পর্যন্ত ভোল্ডেমর্ট জেনে যাবে যে ওরা হরক্রুক্স নিতে ঢুকেছিল…
ড্রাগনটিকে মনে হচ্ছে ঠাণ্ডা এবং পরিস্কার বাতাস চাইছে। ড্রাগনটি আরো উপরে হালকা অস্পষ্ট ঠাণ্ডা মেঘ পর্যন্ত উঠে গেল। হ্যারি এখন আর শহরের বাইরে দিয়ে যাওয়া লাল বিন্দুগুলো দেখতে পাচ্ছে না। ওগুলো ছিল গাড়ি। একের পর এক গ্রাম এলাকা পার হল, যেগুলোতে রাস্তা ও নদীগুলোকে মনে হল মাটির উপর ফিতার মত দাগ কাটা।
এটা কী করতে চাচ্ছে বলে তোমার মনে হয়? রন উচ্চস্বরে বলল। ওরা উড়ে উত্তর থেকে আরো উত্তরের দিকে যাচ্ছে।
বলতে পারছি না, হ্যারিও উচ্চস্বরে বলল। তার হাত অবশ হয়ে আসছে। কিন্তু পড়ে যাওয়ার ভয়ে সে হাত বদল করার সাহস পেল না। বেশ কিছুক্ষণ ধরে হ্যারি ভাবছে যদি এটি সমুদ্রের গভীরের দিকে রওয়ানা দেয় তাহলে ওরা কী করবে? সমুদ্রের কোনো উপকূলে বোট সেলিং দেখলে ওর ওপর লাফ দেহে কি না! হ্যারির ঠাণ্ডা লাগছে এবং হাত পা অবশ হয়ে আসছে। বলার অপেক্ষা রাখে
যে ভয়ানক ক্ষুধা এবং পানি পিপাসাও চেপেছে হ্যারির। তখন সে ভাবল এই প্রাণীটি কখন খেয়েছে। তাকেও তো খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়। এই সময় আবার মনে হল, কী হবে যদি বুঝতে পারে যে উপযুক্ত তিনটি খাবার তার পিঠের উপর আছে?
এ সময় ওরা আকাশে কিছুটা নিচের দিকে নেমে এল। এখনও নিচে নীল দেখা যাচ্ছে। এখনো ড্রাগন ছোট বড় শহর পার হচ্ছে। তার বিশাল পাখা দুটোর ছায়া খণ্ড খণ্ড কাল মেঘের মত শহরগুলোর উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। ড্রাগনের পিঠে ধরে বসে থাকতে থাকতে এখন হ্যারির শরীরের সর্বত্র তীব্র ব্যাথা করছে।
রন উচ্চস্বরে বলল, আমরা একটু নিচে নেমেছি বলে মনে হচ্ছে?
হ্যারি নিচের দিকে তাকিয়ে গাঢ় সবুজ পাহাড়, লেক এবং রক্তিম সুর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে পেল। দৃশ্যগুলো আরো বড় হতে থাকল। নিচের সব কিছু স্পষ্ট থেকে আরো স্পষ্ট হয়ে উঠল। সে ড্রাগনটির পাশ দিয়ে নিচের দিকে দেখল এবং ভাবল সুর্যালোর প্রতিচ্ছবির মধ্য দিয়ে এটি স্বচ্ছ পানি খুঁজছে কি না।
ড্রাগনটি নিচের থেকে আরো নিচে চক্কর দিয়ে নামতে থাকল। মনে হল একটি লেকের পাশে নামতে চাচ্ছে।
আরো নিচে নামলে আমরা ঝাঁপ দেব! হ্যারি অন্যদের উদ্দেশে বলল। এটি আমাদের অস্তিত্ব জানার আগেই আমরা পানিতে ঝাঁপ দেব!
ওরা সম্মত হল। হারমিয়নকে একটু পরিশ্রান্ত মনে হল। এবার হ্যারি দেখতে পেল ড্রাগনের হলুদ পেটের প্রতিবিম্ব পানির উপর দেখা যাচ্ছে।
এখন!
হ্যারি পা নিচের দিকে দিয়ে ড্রাগনের পিঠ থেকে পিছলে সোজা পানির দিকে ঝাঁপ দিল। লাফ দেয়ার সময় যতটা ভেবেছিল লেকটি তার চেয়েও বেশি নিচে মনে হল। এত উপর থেকে পড়ে হ্যারি সোজা পানির নিচের ঠাণ্ডা সবুজ গাছগাছালির জগত পর্যন্ত চলে গেল। সে জোরে পায়ে ধাক্কা দিয়ে উপরের দিকে উঠল। সে হাঁপাতে থাকল। দেখল রন এং হারমিয়ন যেখানে পড়েছে সেখান থেকে পানি চলকে উঠছে। ড্রাগনটি কিছু বুঝতে পেরেছে বলে মনে হয় না। ইতিমধ্যেই সেটি ৫০ ফুটের মত দূরে চলে গেছে এবং পানির উপরিতলে ছুঁই ছুঁই করে নাক দিয়ে পানি প্রায় স্পর্শ করছে। লেকের গভীর থেকে রন এবং হারমিয়ন যখন উঠে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে পানি ছিটাতে থাকল, তখন ড্রাগন উড়ে যাচ্ছে। জোরে জোরে পাখা ঝাঁপটে সেটি গিয়ে লেকের অন্য ধারে বসল।
হ্যারি, রন এবং হারমিয়ন অন্য প্রান্তের দিকে ছুটতে শুরু করল। লেকটি অতটা গভীর মনে হচ্ছে না কিন্তু কিছুক্ষণের ভেতরই পানির ভেতরের গাছ গাছালি, কাদার কারণে চলা দুস্কর হয়ে উঠল। এরচেয়ে সাঁতার কাটা ভাল। ওর পুরোপুরি ভেজা শরীর ভারি হয়ে উঠেছে। পিচ্ছিল ঘাসের উপর গিয়ে হাপাতে থাকল। একেবারে নিঃশেষ হয়ে গেছে।
হারমিয়ন গা ছেড়ে দিয়েছে। সে কাশছে এবং প্রচণ্ডভাবে কাঁপছে। যদিও হ্যারি শুয়ে ঘুমিয়ে পড়তে পারতো কিন্তু সে দুর্বল পায়ে উঠে দাঁড়ালো এবং যাদুদণ্ড দিয়ে ওদের চারদিকে প্রোটেকশন চার্ম একে দিল।
কাজটি শেষ করে সে ওদের কাছে ফিরে এল। এই প্রথম ভল্টের অভিযানের পর ওদের দিকে হ্যারি ভালো করে দেখল। দুজনেরই মুখে, হাতে ও অন্যান্য স্থানে দগদগে পোড়া দাগ। পরণের কাপড়ের জায়গায় জায়গায় পুড়ে আছে। ওরা গাছ গাছালির রস দিচ্ছে এবং ব্যাথায় মুখটা কুঁঞ্চিত করছে। হারমিয়ন হ্যারির হাতে অষুধের বোতলটি দিল। এবং আরো তিনটি ফলের রসের বোতল টেনে বের করল। তারপর তিনজনের জন্যই ধোয়া, শুকনো গাউন বের করল। এগুলো সে সেল কটেজ থেকে নিয়ে এসেছিল। ওরা কাপড় পাল্টে নিয়ে ঢকঢক করে ফলের রস খেল।
ওয়েল, ভালো দিকটি হল আমরা হরক্রুক্সটা পেয়ে গেছি, রন বলল। সে তার সেরে উঠতে থাকা ক্ষতগুলো দেখছে। আর মন্দ দিক হল-
-তলোয়ারটি নেই, হ্যারি দাঁতে দাঁত চেপে জিন্সের প্যান্টের ভেতর দিয়ে পায়ের ক্ষতে অষুধ ঢালতে ঢালতে বলল।
তলোয়ার নেই, রন রিপিট করল। ওই বেঈমান ঘোট নোংরাটি-
হ্যারি ভেজা জ্যাকেটের পকেট থেকে হরক্রুক্সটি বের করল। সে কেবলই জ্যাকেটটি খুলে রেখেছে। এবং হরক্রুক্সটি ঘাসের উপর ওদের সামনে রাখল। সূর্যের আলোতে চকচক করছে। ওরা ঢকঢক করে জুস পান করতে থাকল।
এখানে অন্তত আমরা কিছুক্ষণ পড়ে থাকতে পারি। এটির কারণে আমাদের লাল ও অদ্ভুত দেখা যাবে, রন বলল। সে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখটা মুছল। হারমিয়ন লেকের অপর পারের দিকে তাকালো। ড্রাগনটি এখনো পানি খাচ্ছে।
ওটার কী হবে বলে মনে হয়, হারমিয়ন বলল।
ড্রাগনটি কি সুস্থ হতে পারবে?
রন বলল, তুমি হ্যাগ্রিডের মত কথা বলছ। ও একটা ড্রাগন হারমিয়ন! ও নিজেই নিজেকে ঠিক করে নেবে। বরং আমাদের চিন্তা করার আরো বিষয় রয়েছে।
তুমি কী বলতে চাচ্ছ?
ওয়েল আমি জানি না তোমাকে কীভাবে বলব, রন বলল। কিন্তু আমার ধারণা ওরা হয়তো ইতিমধ্যে জেনে থাকবে যে আমরা গ্রিনগোট ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকেছি।
ওরা তিনজনই হাসতে শুরু করল। তিনজনের কেউ হাসি থামাতে পারছে না। হাসতে হাসতে হ্যারি পাঁজরে ব্যাথা অনুভব করল। ক্ষুধায় মাথাটা একটু হালকা হয়ে এসেছে। কিন্তু সে লাল হয়ে আসা আকাশের নিচে আবার ঘাসের উপর শুয়ে পড়ল। সে গলা শুকিয়ে না আসা পর্যন্ত হাসতে থাকল।
তা হলে এখন আমরা কী করব? হারমিয়ন হাসি রেখে সিরিয়াস হয়ে উঠল। সে শীঘ্রই জেনে যাবে, তাই না? ইউ-নো-হু জেনে যাবে যে আমরা তার হরজুক্সের সন্ধান পেয়েছি!
রন ভরসা নিয়ে বলল, হয়তো এমন হতে পারে যে কেউ তাকে বলতে সাহস পাবে না। হয়তো ওরা বিষয়টি ঢেকে ফেলতে-
রনের গলার শব্দ, আকাশ, পানির ঘ্রাণ সব কিছু হ্যরির কাছ থেকে দূর হয়ে গেল। হ্যারির মাথার যন্ত্রণায় মনে হচ্ছে তলোয়ার দিয়ে কেউ আঘাত করেছে। দেখল সে একটি আলো আধারি রুমে দাঁড়িয়ে আছে। একদল উইজার্ড অর্ধ চক্রাকারে তার সম্মুখে দাঁড়ানো। এবং মেঝেতে তার সামনে উবু হয়ে আছে একটি ছোট শরীর।
তুমি কী বললে আমাকে? তার কণ্ঠস্বর দরাজ কিন্তু শীতল। তার ভেতর থেকে ক্রোধ ঠিকরে উঠছে। একটা বিষয়ে সে ভয় পাচ্ছে, কিন্তু এটা সত্যি হতে পারে না। সে বুঝতে পারছে না এটা কী করে সম্ভব…
গবলিনটি ভয়ে পাঁপছে। তার সামনে উঁচুতে লাল চোখের দিকে সে তাকাতে পারছে না।
আবার বল, ভোল্ডেমর্ট বিড়বিড় করে বলল। আবার বল!
ম-মাই ল-লর্ড, তোতলাতে থাকল গবলিন। ভয়ে তার কালো চোখ দুটো বিস্ফারিত হয়ে গেছে। ম-মাই ল-লর্ড…আমরা …চেষ্টা করেছি ছ-ছদ্ম বে-বেশ ধা-রীদের থা-থামাতে। ভে-ভেঙে লে-লে-ঞ্জে-সে ঢু-টুকে–ভ-ভল্টে-
ছদ্মবেশধারী? কি ছদ্মবেশধারী? আমি তা জানি গ্রিনগোট সব সময় ছদ্মবেশ প্রকাশ করে দেয়?
ও-ওই হ্যাঁ-হ্যারি প-পটার আর স-সঙ্গীরা…
এবং তারা নিয়ে গেল? তার কণ্ঠ উচ্চ হয়ে উঠছে। আমাকে বল! কী নিয়েছে ওরা!
রাগে ক্ষোভে তার নিজের কাছে নিজেকে অদ্ভুত মনে হল। সে যেন পাগল হয়ে গেছে, এটা হতে পারে না, অসম্ভব। এখন পর্যন্ত কেউ জানে না। এই ছেলে কী করে এই গোপন খবর জানবে?
এলডার ওয়্যান্ডটি উপরে তুলল এবং সারা ঘরে সবুজ আলো ছড়িয়ে পড়ল। নিচু হয়ে থাকা গবলিনটি ঘুরে পড়ে গেল। অন্য যারা ছিল তারা ভয়ে এদিক সেদিক ছুটল। বেলাট্রিক্স এবং ম্যালফয় দরোজার দিকে দৌড়িয়ে পলায়নরত গুলোর দিকে কার্স ছুঁড়ে দিল। যারা এই সংবাদ এনেছিল, যাদের কাছ থেকে সোনালী কাপের খবর জানল তারা সবাই নিহত হল
মৃতদের ভেতর দিয়ে সে হাঁটতে থাকল। তার সম্পদ, তার নিরাপত্তা, তার অমরত্বের চাবিকাঠি… সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে, কাপটি চুরি হয়ে গেছে। কী হবে যদি অন্যসব সম্পর্কে ওই ছোকরাটি জেনে যায়? সে কি জানতে পারে? সে কি সেগুলো খুঁজতে শুরু করেছে? এর পেছনে কি ডাম্বলডোর আছে? ডাম্বলডোর সে সব সময় তাকে জ্বালাতো, ডাম্বলডোর, তার আদেশে মারা গেছে। ডাম্বলডোর, মৃত্যুর পর জটিল হয়ে ওই ছোকরার মধ্য দিয়ে আবির্ভূত হচ্ছে কি, ওই ছোকরা কিন্তু নিশ্চয়ই ওই ছোকরা যদি কোনো হরক্রুক্স ভেঙে থাকে তাহলে তো, সে, ভোল্ডেমর্ট তা জানবে–অনুভব করতে পারবে? সে হল সবার মধ্যে বিখ্যাত উইজার্ড, সবচেয়ে ক্ষমতাধর একজন। সে ডাম্বলডোরের হত্যাকারী, আরো কত নাম না জানা লোকের হত্যাকারী তার ইয়ত্তা নেই। কী করে লর্ড ভোল্টেমর্টের জানার বাইরে থাকে। সে নিজে এতটা গুরুত্বপূর্ণ এতটা মূল্যবান হওয়া সত্ত্বেও কে তার বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছে, কে তার ক্ষতি করছে, সে কথা জানবে না?
এটা ঠিক, সে তার ডায়েরি ধ্বংসের কথা বুঝতে পারেনি। কিন্তু সে বুঝেছে যে এর কারণ হল তার শরীরটা বোঝার মত না,…না, নিশ্চিত যে অন্যগুলো সব নিরাপদে আছে। অন্য হরক্রুক্সগুলো নিশ্চয়ই অক্ষত আছে…।
কিন্তু অবশ্যই তাকে জানতে হবে, অবশ্যই তাকে নিশ্চিত হতে হবে….সে রুমের ভেতর দিয়ে দ্রুত হাঁটতে থাকল। পায়ের কাছে থাকা গবলিনগুলোর লাশ লাথি দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল। এবং তার উত্তপ্ত মস্তিস্কের ভেতর ছবি ধরা দিল : একটি লেক, একটি ছোট বিল্ডিং এবং হোগার্টস…
তার প্রচণ্ড ক্ষোভ একটু দমে আসল : ছেলেটি জানবে কী করে যে সে গাউন্টে রিংটি লুকিয়ে রেখেছে? কেউ এখন পর্যন্ত জানে না যে তারসঙ্গে গাউন্টের কোনো সম্পর্ক আছে। সে গাউন্টের সঙ্গে সংযোগটাকে লুকিয়ে রেখেছে; রিংটি অবশ্যই সেখানে নিরাপদে ছিল।
কীভাবে ওই ছেলেটি, অথবা অন্য যে কেউ গুহাটি সম্পর্কে জানবে, অথবা এর প্রোটেকশন ভেদ করবে? লকেটটি চুরি করার মত ধারণা একেবারে অবাস্তব…
স্কুলে যেমন, সে একা জানতো হোপার্টের কোথায় সে হরক্রুক্স গুঁজে রেখেছে, কারণ ওখানের গোপন জায়গাটিতে তার একারই প্রবেশের সুযোগ ছিল….
কিন্তু এটা নিশ্চিত যে সে প্রতিটি গোপন জায়গায় যাবে এবং তার প্রত্যেকটি হরক্রুক্স-এ ডাবল করে প্রোটেকশন দিতে হবে, কাজটি করতে এলডার ওয়্যান্ডের মত খাটুনি করতে হবে, এবং কাজটি সে অবশ্যই একা করবে….
কোনটায় তার প্রথম যাওয়া উচিত? কোনটা সবচেয়ে বিপদজনক জায়গায় আছে?
পুরাতন অস্বস্তি তার ভেতরে জ্বলে উঠল। ডাম্বলডোর তার নামের মাঝের অংশটি জানতো… ডাম্বলডোর গাউন্টের সঙ্গে সংযোগ করে দিয়ে থাকতে পারে তার গোপন জায়গাগুলোর মধ্যে ওদের এই পরিত্যক্ত বাড়িটি সবচেয়ে কম নিরাপদ, ওখানেই তাকে আগে যেতে হবে…
লেকটি, নিশ্চিত যে সেটা অসম্ভব….ক্ষীন সম্ভাবনা আছে তার বিগত দিনের অরফানেজে থাকাকালীন অন্যায়গুলো সম্পর্কে ডাম্বলডোর জেনে থাকতে পারে।
এবং হোগার্টস… কিন্তু সে জানে যে সেখানে তার হরক্রুক্সগুলো নিরাপদ।
কেননা নির্দেশ না পেলে হ্যারি পটারের জন্য অসম্ভব হগসমিডে প্রবেশ করা। তারপরও বুদ্ধিমানের কাজ হবে স্নেইপকে সতর্ক করে দেয়া যে ছেলেটি ক্যাসলে পুনরায় ঢোকার চেষ্টা করতে পারে। কেন ছেলেটি ঢুকতে পারে সে কথা স্নেইপকে বলা অবশ্যই বোকামি হবে। বেলাট্রিক্স এবং ম্যালয়ের উপর বিশ্বাস রাখা চরম বোকামি হয়ে গেছে। ওদের নির্বুদ্ধিতা এবং অসাবধানতা প্রমাণ করেছে না যে ওদের ওপর বিশ্বাস রাখাটা উচিত হয়নি?
সে প্রথমে গাউন্ট স্যাকে যাবে, তারপর সে সঙ্গে নাগিনীকে নেবে। এখন থেকে সে আর নাগিনীকে দূরে রাখবে না… সে লম্বা পা ফেলে রুম থেকে বের হয়ে হলের ভেতর দিয়ে অন্ধকার বাগানে প্রবেশ করল যেখানে ঝরনা রয়েছে। সে পারসেলটা করে নাগিনীকে ডাকল এবং সে একটি লম্বা ছায়ার মত বেরিয়ে তার কাছে এল…
হ্যারি নিজেকে বর্তমানে ফিরিয়ে আনল। তার চোখ দুটো ঝট করে খুলে গেল। সে একটি লেকের পারে শুয়ে আছে, সুর্যাস্তের সময়। রন এবং হারমিয়ন তার দিকে তাকিয়ে আছে। ওরা উদ্বিগ্ন হয়ে বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করছে। তার ওই অব্যাহত স্কারের যন্ত্রণার কারণে সে যে ভোল্ডেমর্টের ভেতরে প্রবেশ করেছে তা বুঝতে বাকী থাকল না। সে কষ্ট করে উঠে বসল, হ্যারি কাঁপছে। মনে মনে অবাক হল যে তার গা এখনো ভেজা, এবং দেখল যে কাপটি তার সামনে ঘাসের উপর নিশ্চল পড়ে আছে। সুর্যের সোনালী আলোর সঙ্গে লেকের নীল জল মিশে আছে।
সে জানে, ভোল্ডেমর্টের ওই চিৎকারের পর হ্যারির নিজের কণ্ঠ নিজের কাছে খুব অচেনা মনে হল। সে জানে, এবং সে অন্য হরক্রুক্সগুলো চেক করতে যাচ্ছে। হ্যারি উঠে দাঁড়ালো। এবং শেষ হরক্রুক্সটি আছে হোগার্টে। আমি জানতাম! আমি সেটা জানতাম।
কি?
রন তাকিয়ে আছে। হারমিয়ন হাটুর উপর ভর করে উদ্বিগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে।
কিন্তু তুমি কী দেখলে, তুমি জানলে কীভাবে?
আমি দেখলাম সে কাপটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছে, আমি… আমি তার মস্তিষ্কের ভেতর প্রবেশ করেছিলাম, হ্যারি স্মরণ করল লোকগুলোর মৃত্যুর কথা। সে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছে এবং সঙ্গে আতঙ্কিতও। সে বুঝতে পারছে না যে আমরা কীভাবে জানলাম। এবং সে এখন খোজ করে দেখতে যাচ্ছে যে অন্যগুলো নিরাপদে আছে কি না। প্রথমে সে রিংটার খোজ করছে। সে ভাবছে যে হোগার্টরটা সবচেয়ে নিরাপদে আছে। কারণ সেখানে স্নেইপ আছে। আর সেখানে ঢোকা বা গোপনে খোজ করা খুবই মুশকিল। আমার ধারণা সে ওই জায়গাটায় সবচেয়ে পরে চেক করবে। যদিও সে সেখানে এক ঘন্টার ভেতরই হাজির হতে পারে
তুমি কী দেখেছ যে হোগার্টের কোন জায়গাটায় সেটি আছে? রন জানতে চাইল।
না, সে স্নেইপকে সতর্ক করে দেয়ার কথা চিন্তা করছে। ঠিক কোথায় আছে সেটা নিয়ে সে চিন্তা করেনি।
দাঁড়াও, দাঁড়াও! হারমিয়ন উত্তেজিতভাবে বলল। রন হরক্রুক্সটি হাতে নিল এবং হ্যারি অদৃশ্য আলখাল্লাটি বের করল। আমরা এখনই যেতে পারি না! আমরা এখন পর্যন্ত প্রানও করিনি, আগে আমাদের প্রয়োজন।
আমাদের রওয়ানা হতে হবে, এক্ষুনি, হ্যারি দৃঢ়ভাবে বলল। সে একটু ঘুমানোর কথা ভেবেছিল। একটি নতুন তাবুর কথা চিন্তা করেছিল। কিন্তু সেটা এখন অসম্ভব : তুমি কি চিন্তা করতে পারো সে যদি বুঝতে পারে যে লকেট এবং রিংটি নেই তাহলে সে কী করবে? কী হবে যদি সে হোগার্টের হরক্রুক্সটি সরিয়ে নেয়, যদি মনে করে যে ওখানে সেটি নিরাপদ নয়?
কিন্তু আমরা দুকব কিভাবে? : হ্যারি বলল, আমরা ইসমিডে যাব। আমরা সেখানে বুঝে দেখতে চেষ্টা করব। বুঝতে চেষ্টা করবো কী ধরণের প্রোটেকশন স্কুলের চারপাশে ব্যবহার করা হয়েছে। আলখাল্লার নিচে আসো হারমিয়ন! এবার আমরা সব একসনে থাকতে চাই।
কিন্তু আমাদের তিনজনের জায়গা-
অন্ধকার হয়ে আসছে, আমাদের পা বেরিয়ে থাকলেও কেউ লক্ষ করবে না।
কালো পানির উপর বিশাল ড্রাগনের পাখার থপথপ শব্দ হল। ড্রাগন পেট ভরে পানি খেয়ে উড়াল দিয়েছে। ওরা প্রস্তুত হয়ে বসে সেটিকে উপরে থেকে আরো উপরে উঠে যেতে দেখল। দ্রুত অন্ধকার হয়ে আসায় আকাশ কালো দেখা গেল। তারপর কাছের একটি পাহাড়ের পেছনে অদৃশ্য হয়ে গেল। হারমিয়ন হেঁটে সামনে এসে দুজনের মাঝখানে নিজের জায়গাটায় দাঁড়ালো। হ্যারি আলখাল্লাটি যতটা সম্ভব টেনে নামালো। তারপর একসঙ্গে ওরা অন্ধকারের ভেতর যাওয়া শুরু করল।