1 of 2

২৭. বেজি জাতটা কিছুতেই পোষ মানে না

বেজি জাতটা কিছুতেই পোষ মানে না। যতই পোষো, যতই আদরে রাখো, সুযোগ পেলেই শালারা জঙ্গলে পালিয়ে যাবে। যাবে তো যাবেই, আর আসবে না।

নিতাই তা জানে। তবে বহুকাল ধরে একটা বেজির বড় শখ। মল্লিবাবুর একজোড়া বেজি ছিল। তখনকার এই রতনপুর ছিল কেউটে গোখরোর আড়া। উরু পর্যন্ত একটা চামড়ার স্নেক-বুট পরে বেজি নিয়ে মল্লিবাবু এই ভিটের জঙ্গলেই কত সাপ মেরে বেড়িয়েছেন। সেই কর্মফলেই অকালে মরণ। সাপ মারতে নেই, এই সরল সাদা কথাটা শহুরে বাবুরা কিছুতেই শুনবে না। নিতাই ধরে নিয়েছিল, একদিন সাপেই কাটবে বাবুকে। সেটা অবশ্য হয়নি। মল্লিবাবু সাপ মেরে মেরে এ জায়গাকে সাপের শ্মশান বানিয়ে ছেড়েছিলেন। তিনি মারতেন, তার বেজি দুটোও মারত। মদন ঠিকাদার বলত, সাপের চেয়ে মানুষ অনেক বেশি বিপজ্জনক। মেয়েমানুষ আরও সাপ না মেরে ববং বন্দুক দেগে এখানকার কয়েকটা বদমাশ শয়তানকে মারো হে মল্লিবাবু। বন্দুক লেগে দাও, জায়গাটা ঠান্ডা হবে। মল্লিবাবু জবাবে বলতেন, আমি সবকিছু মারতেই ভালবাসি।

তখন গনিয়ার জঙ্গল নামে একটা জঙ্গল ছিল, এখন রিফিউজিরা সেখানে থানা গেড়েছে। সেই জঙ্গলে ঢুকে পাখি মারতেন মল্লিবাবু। কম করেও চার-পাঁচটা খ্যাপা কুকুর মেরেছেন। বধে খুব আনন্দ ছিল। মানুষও মেরেছেন কি না সে কথা বলা বারণ। নিতাইয়ের মুখ দিয়ে কখনও তা বেরোবে না। তা সেই গনিয়ার জঙ্গলেই একদিন বেজি দুটো পালিয়ে গেল। মল্লিবাবুর সে কী রাগ বাবা! পোষা জীব মায়া কাটিয়ে পালিয়ে গেলে রাগ হওয়ারই কথা।

আর পোষা মানুষ, ভালবাসার মানুষ পালিয়ে গেলে? যে লক্ষ্মীছড়ি গুসকরায় গিয়ে রসবড়া ভাজছে তাকে কিছু কম পুষত নিতাই? বেজির নেমকহারামি তবু গায়ে সয়, মেয়েমানুষেরটা সয় না।

খালধারে রামলাখনের ঘরে একটা বেজির বাচ্চা রেখে গেছে কোনও এক খদ্দের। কাণ্ডটা ভারী মজার। ব্যাটা নাকি বেজির বাচ্চাটা নিয়েই ফুর্তি করতে এসেছিল। পকেট গড়ের মাঠ। খাসির নাড়িভুড়ি দিয়ে প্যাঁজ লঙ্কার ঝাল-কটকটে করে রান্না ঘুগনি আর দিশি মাল মিলিয়ে পনেরো-বিশ টাকার খেয়ে উঠে বলল, পয়সা নেই। তখন রামলাখন বেজিটা রেখে দিল। বেজির প্রতি কোনও মায়া-দয়া নেই তার। লোকটাও আর ছাড়াতে আসেনি।

সন্ধান পেয়ে বেজিটা বাগাতে রামলাখনকে গিয়ে অনেক তোতাই-পাতাই করেছে নিতাই। রামলাখন রাজি নয়। কেবল বলে, তোর পয়সা কোথায়? বেজি কি মাগনা?

দেব। যত চাস দেব।

বাকির কারবার হবে না। হঠ।

জানিস আমার দশ বিঘে জমি আছে?

সবাই জানে। যা না জমির এক গোছ ধানে হাত দিয়ে দেখ গেছো মাগি তোর কী হাল করে।

চাটুজ্জে-গিন্নিকে গেছো মাগি বললি! দাঁড়া বলে দেব।

বল গে। লাইনের এপারে কিছু করতে এলে—

বলে জঘন্য একটা খিস্তি দেয় রামলাখন।

শুনে কান ঢেকে ফেলে নিতাই। বলে, ছিঃ ছিঃ, মুখটা গঙ্গাজলে ধুয়ে ফেলিস রে। ওসব পাপকথা বলতে নেই।

তবে জমির কথা তুলিস কেন? জমি কি তোর বাপের?

আমার নামে তো।

তাতে কী? নাম ধুয়ে জল খা গে যা।

বেজির জন্য চাস কত বলবি তো!

পঞ্চাশ। এক পয়সা কম হবে না।

তাই দেব।

নগদ ছাড়, দিয়ে দিচ্ছি।

নগদ পাব কোথায়? কাউকে বাণ মারতে হয় তো বল, মেরে দেব।

দেহাতিরা বাণ-টানকে একটু ভয়-টয় পায়। রামলাখনের বাপটা পুরোদস্তুর দেহাতি ছিল। কাঁচা চামড়ার মজবুত নাগরা পড়ত। মাথায় ফগে জড়াত, মোটা মার্কিনের কুর্তা পরত, আটহাতি ধুতি ব্যবহার করত। কিন্তু পাষণ্ড রামলাখনটা এ দেশের জল-হাওয়ায় শেয়ালের মতো চালাক হয়ে উঠেছে। বলল, তোর বাণের মুখে পেচ্ছাপ করি। বাণ মারবি তো গেছো মাগিকে মার গে। মুখে রক্ত উঠে যদি মরে তো বেজিটা দিয়ে দেব।

রামলাখনের রাগের কারণ আছে। স্টেশনের গায়ে একটা গাছের গোড়া বাঁধিয়ে দিব্যি একটা জুয়ার আজ্ঞা করেছিল সে। সন্ধের দিকে কারবাইড জ্বালিয়ে আসর বসত। জমি কারও বাপের নয়, সরকারের। কারও বলার হক ছিল না। পুলিশ-টুলিশ বড় একটা আসেও না এদিকে। কেউ এসে পড়লে দু-চার টাকা দিলেই হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ একদিন পালে বাঘ পড়ল হড়াম করে। স্বয়ং সার্কেল অফিসার আর থানার ও সি এসে হাজির।

রামলাখনকে মাস তিনেক জেলের ভাত খেতে হয়েছিল। পুলিশের একটা পোস্টও বসে গিয়েছিল স্টেশনের ধারে। সবাই বলে, কাণ্ডটা ঘটিয়েছিল তৃষা। পুলিশ তার হাতের লোক। তার পিছনে পলিটিকসওয়ালারাও আছে।

নিতাই বলে, তা কিসে দিবি বলবি তো! বেজি জিনিসটা আমার বড় পছন্দ।

রামলাখন উদাস গলায় বলে, আমার ভুট্টাখেতটা যদি সাতদিন কুপিয়ে চৌরস করিস তো দিয়ে দেব।

বলে কী ব্যাটা! দিনে আট টাকার মজুর রাখলেও সাতদিনে ছাপ্পান্ন টাকা যে! ব্যাটার মাথাটাই খারাপ। নিতাইকে কাজ করতে বলছে। কাজ করা কাকে বলে তা নিতাই নিজেই ভুলে গেছে। ফাইফরমাশ করা ছাড়া তার আর ভারী কাজ আসেই না। কাজের নামে গায়ে জ্বর আসে। আর করাই বা কার জন্য? যার জন্য কাজ সেই তো কবে লম্বা দিয়েছে।

নিতাই বলল, তোর দিন ঘনিয়েছে রে ব্যাটা! সাধুসন্নিসিকে কাজের কথা বলিস!

তুই সাধু?

আলবত সাধু।

তবে চোর কে? বদমাশ কে?

তোর কবে কী চুরি করেছি রে নির্বংশের ব্যাটা?

অ্যাই বাপ তুলে কথা বলবি না বলে দিচ্ছি।

ওই দেখ। বাপ তুললাম কখন? তুইই তো আমাকে চোর আর বদমাশ বললি।

বললাম তোকী? মারবি নাকি?

মেজাজ দেখাচ্ছিস কেন রে হারামজাদা? বেজিটা নিয়ে কথা হচ্ছে তো তাই নিয়ে কথা ক’।

হারামজাদা বললি যে! মানে জানিস?

মদ বেচে দু’পয়সা করেছিস বলে খুব তেল হয়েছে রে তোর। এই বলে রাখলাম, নিতাইকে খেপিয়ে কেউ সাতদিন পার করতে পারেনি। মরবি।

ফের বুজরুকি করছিস? এটা লাইনের ওপার নয়, মনে রাখিস।

হেঃ হেঃ করে হেসে নিতাই বলে, এই তো সেদিন জন্মালি রে লাখন। মায়ের পেটে যখন ছিলি তখন এই নিতাই এসব জায়গায় লাঠি ঘোরাত। দেহাত থেকে এসেছিস দেহাতির মতো চুপচাপ থাক।

এই পর্যন্ত হয়েছিল। তিনদিনের দিন নিতাই মাঝরাতে গিয়ে রামলাখনের মাটির ঘরে সিঁধ দিল।

পরদিন সকালের রোদে বেজিটা খ্যাপা নিতাইয়ের ঘরের সামনে তুরতুর করে চলে ফিরে বেড়াতে থাকে আর প্রাণ ভরে দেখতে থাকে নিতাই। ইস্পাতের একটা বন্ধু হল। বেজিটাকে এমন ট্রেনিং দেবে সে যে, ব্যাটা বাঘের গলার নলিও কেটে দিয়ে আসতে পারবে।

নিতাই জানে বেজি খুঁজতে এ বাড়িতে আসার মুরোদ রামলাখনের নেই। মুখে যতই গেছো মাগি বলুক, সজল খোকার মাকে যমের মতো ডরায়। তাই নিতাই খানিকটা নিশ্চিন্ত।

বেজির ঘোরাফেরা দেখতে দেখতে নিতাই অনেক তত্ত্বকথা ভাবছিল। মল্লিবাবুর ছিল দুটো বেজি, তার একটা। বড়লোকদের সব জিনিসই কিছু বেশি থাকে। কিন্তু ভগবান তা বলে বড়লোকদের তিনটে করে হাত-পা দেয়নি। তবে বড়লোক শালারা অত তড়পায় কেন?

কথাটা ভেবে খুশিই হল সে। এখন কথাটা কাউকে বলা দরকার। ঘরে একটা পাখির খাঁচা খালি পড়ে আছে। তার বউ ময়না পুষত। বউ পালানোর পর কিছুদিন মন খারাপ থাকায় ময়নাটাকে আর দানাপানি দেওয়া হয়নি। পাখিটা মরেই যেত। যখন ধুকছে তখন তৃষা এসে নিয়ে গেল। খাঁচাটা পরে ফেরত দেয়। ময়নার জন্য নতুন মস্ত খাঁচা বানিয়ে নিয়েছে।

বেজিটাকে ধরে খাঁচাবন্দি করে তত্ত্বকথাটা কাউকে বলতে বেরোল নিতাই।

গ্রীষ্মকালে মাথার জটাটা খুব পাকিয়ে উঠেছে। উকুনের চিড়বিড়েনির চোটে মাথা খাবলে ঘা করে ফেলল। সেই ঘা এখন দগদগিয়ে উঠে পুঁজ রক্ত পড়ছে। চিমসে গন্ধ এমন ছাড়ে যে, নিতাই নিজেও টের পায়। বোষ্টমরা বেশ আছে। মাথা কামিয়ে ফেলে। তান্ত্রিকদেরই যত বিপদ।

হরিশ ডাক্তার আগে জল দিলেও লোকের রোগ সারত। এখন আর পসার নেই, এই গঞ্জ জায়গায় এখন আরও দু’জন ডাক্তার হয়েছে। তবু হরিশ ডাক্তার এখনও বাজারের গায়ে ডিসপেনসারিতে হাতের থাবায় নাক ঢেকে চুপ করে বসে থাকে। কম্পাউন্ডার পর্যন্ত। নেই।

নিতাই গিয়ে সুমুখের চেয়ারটা টেনে বসে বলল, মাথার ঘায়ের একটা ওষুধ দাও দিকিনি।

হরিশ বেশি কথা বলে না। চেয়ে থেকে শুধু বলল, পয়সা কে দেবে?

চিকিচ্ছের আগেই পয়সা! ডাক্তাররা কি চামারই হল দিনে দিনে!

যা না, ওই যে সব ভাগাড়ের ডাক্তাররা এসেছে তাদের কাছে যা। কী বলে শুনে আয়।

ওসব শুনে কী হবে? তুমি হলে এ গাঁয়ের পুরনো ডাক্তার। আমিও পুরনো লোক। তোমার আমার কি কেবল পয়সার সম্পর্ক?

তবে কিসের সম্পর্ক? তুই আমার কোন ভাতিজা লাগিস?

মাথার ঘায়ে আমার বলে পাগল-পাগল অবস্থা! পিছুতে লাগছ কেন বলো তো একটা মলম-টলম দাও না। ডাক্তাররা তো বিনিমাগনা কত ওষুধ পায়।

সে তোর মতো গর্ভস্রাবের জন্য নয়।

খুব যে বড় বড় কথা বলছ, তোমার অবস্থাও জানি।

কী জানিস?

তোমার রুগি জোটে না।

হুঁ! দু’দিন সবুর কর, তারপর দেখিস জোটে কি না।

দু’দিনে কী হবে?

ভাগাড়ের ডাক্তাররা যখন রতনপুরে শকুন ফেলবে তখন ত্রাহি-ত্রাহি বলে এসে জুটবে সব। রুগি জোটে না! রুগি জোটে না তো তুই-ই বা কেন এসে জুটলি? বেরো!

আচ্ছা না হয় মানছি। পুরনো চাল ভাতে বাড়ে, সবাই জানে। তোমার দাম এরা বুঝবে কি? আমরা পুরনোরা বুঝি।

হরিশ ডাক্তার একটা শ্বাস ফেলে বলে, সুবিধে হবে না রে, অন্য জায়গায় দেখ।

চটলে নাকি?

চটাই তো স্বাভাবিক। সকালবেলায় তোর মুখটাই দেখতে হল!

শাস্ত্রে কী আছে জানো?

কী আছে?

শাস্ত্রে আছে, বড়লোকদের তিনটে করে হাতও নেই, তিনটে করে পাও নেই। আছে?

তবে বড়লোকদের কটা করে হাত-পা?

দুটো করে। গরিবদের মতোই।

এটা তো ভেবে দেখিনি।

ভাবো। ভাবলেই টের পাবে।

ভাবব’খন। এখন তুই বাপু গতর তোল।

তুলছি, তুলছি। আমার হাতে মেলা সময় বলে ভালো নাকি? কাজ আমারও আছে। বলছিলাম, বড়লোকদের যদি ভগবান গরিবদের মতোই সব দিয়েছেন, তবে শালাদের অত তেল কেন?

এটাও ভাববার কথা। জামাকাপড় ক’দিন কাচিস না বল দেখি! গন্ধে ভৃত পালায়।

ভূত কখনও গন্ধে পালায় না গো ডাক্তার।

তবে কীসে পালায়?

মন্ত্রে।

ওঃ, তুই তো আবার তান্ত্রিক!

আলবত তান্ত্রিক। একটা মলম দাও, মাস পয়লা দাম দিয়ে দেব।

তোর কি মাস পয়লায় বেতন হয় নাকি?

আমার যজমান আছে, তাদের বেতন হয়।

তোরও যজমান?

আমাকে ভাবো কী বলো তো তোমরা, তন্ত্রটা তো ইয়ারকি নয়!

সে জানি। কিন্তু তোর ওষুধের পয়সা না থাকলেও গাঁজার পয়সা জোটে কোত্থেকে বল দিকি?

লোকে দেয়।

চুরি-টুরি এখনও করিস নাকি?

চোর কি আমার গায়ে লেখা আছে?

চোরের গায়ে চোর লেখা থাকে নাকি?

মলম তা হলে দেবে না?

পয়সা দিলে দেব।

ফুঃ! বিনা পয়সায় কত মলম চাও? ওই বেণু ডাক্তারের কাছে গেলে এখনই বাপের সুপুত্র হয়ে মলম দেবে।

তাই যা না।

যাচ্ছি। তুমি পুরনো লোক বলেই এসেছিলাম।

যা যা ভাগ।

গনগন করতে করতে নিতাইখ্যাপা বেরিয়ে এল। ওযুধ করাটা একটু শিখতে হবে। জড়িবুটি কিছু না জানলে আজকাল সাধুসন্নিসির তেমন কদর হয় না।

বেণু ডাক্তার গঞ্জে নতুন লোক। তার ডাক্তারখানায় কিছু রুগি জোটে। আজও জুটেছে।

দরজায় দাঁড়িয়ে নিতাই হুংকার দিল, জয় কালী! জয় কালী তারা মহাবিদ্যা সোড়শী ভুবনেশ্বরী।

বেণু একটা ছেলের পিলে টিপে দেখছিল। বিরক্ত মুখ তুলে বলল, কী চাই?

চাটুজ্জেবাড়ি থেকে আসছি।

কোন চাটুজ্জে?

চাটুজ্জে আবার এখানে ক’টা? শ্রীনাথ চাটুজ্জে, তৃষা চাটুজ্জের নাম শোনোনি?

ও।

বলে বেণু ডাক্তার আবার পিলে দেখতে লাগল। তারপর ওষুধের নাম লিখল, কম্পাউন্ডারকে ডেকে কাগজখানা দিল।

ততক্ষণে নিতাই কাঠের বেঞ্চটায় জায়গা করে নিয়ে বসে ঠ্যাং নাচাচ্ছে। বসে বসে সে বেণু ডাক্তারকে দেখছিল আর ভাবছিল। কোত্থেকে এসে বেশ জুড়ে বসে গেছে। কথায় আছে বন থেকে বেরুল টিয়ে, সোনার টোপর মাথায় দিয়ে। এও হল সেই কাণ্ড।

আপনমনে খুব একচোট হাসল নিতাই। বেণু ডাক্তার ভ্রু কুঁচকে চেয়ে তার হাসি দেখল, কিছু বলল না। নিতাই হেসে-টেসে নিয়ে বলল, হরিশ ডাক্তার কী বলে জানো? বলে, তোমরা নাকি সব ভাগাড়ের ডাক্তার।

বেণু আবার ভ্রু কোঁচকায়। বলে, এটা গালগল্পের জায়গা নয়।

তোমরা বাপু হুট করে বড় চটে যাও। আজকাল কারও সঙ্গে বসে দুটো কথা বলতে পারি না। সবাই ব্যস্ত, সবাই বদরাগী।

হাতের রুগিকে ছেড়ে দিয়ে বেণু নিতাইয়ের দিকে চেয়ে বলল, কী চাই?

মাথার ঘায়ের জন্য একটু মলম দাও তো।

মাথাটা দেখি।

গোরু-মোষ যেমন গুতোনোর সময় করে তেমনি মাথাটা এগিয়ে দিল নিতাই।

বেণু ডাক্তার টাকার কথাটা আগে তুলাল না। তার মানে লোকটা খারাপ নয়। জপানো যাবে।

অনেকক্ষণ দেখল বেণু। তারপর বলল, ওষুধ দিচ্ছি। দিন সাতেক লাগিয়ে দেখো। যদি তাতে কমে তবে একবার মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে দেখিয়ে।

নিতাই একগাল হেসে বলে, তোমার ওষুধেই কমবে। লোকে বলে তুমি ধন্বন্তরী।

কই, হরিশবাবু তো বলেন না!-বলে বেণু একটু হাসে।

হরিশ আবার ডাক্তার! কলিকালে কতই হল, পুলিপিঠের ন্যাজ বেরুল।

বেণু ডাক্তারের সত্যিই গালগল্পের সময় নেই। তবু বলল, পুলিপিঠের আবার লেজ হয় নাকি?

ও সে এক মাতালের গল্প। মদ খেয়ে আলায়-বালায় পড়ে ছিল, তো এক ইঁদুর এসে তার মুখ শুঁকছে। খপ করে ইঁদুরটাকে চেপে ধরে ভাবল, বাঃ এ যে দিব্যি পুলিপিঠে। কিন্তু পুলিপিঠের একটা ন্যাজও’রয়েছে। তাই ভাবছে এসব কলিকালের কাণ্ডমাণ্ড আর কী!

গল্পটা বেণু ডাক্তার জানত না। একটু হাসল। হাসি দেখে ভরসা পেল নিতাই। মানুষের মুখে হাসি সে বড় একটা দেখতে পায় না। ভারী দুর্লভ জিনিস। বলল, এরকম কত গপ্পো আছে আমার ঝোলায়। শুনতে চাও তো রোজ এসে শুনিয়ে যাব।

কম্পাউন্ডার একটা অয়েল পেপারে মোড়া খানিকটা মলম এনে দিয়ে বলল, এক টাকা বারো আনা। দিনে তিনবার লাগাবে। সকাল, দুপুর, রাত্রি।

কম্পাউন্ডার ছোকরা চেনা মানুষ। আর চেনা মানুষকেই নিতাইয়ের যত ভয়। তাই শুনি-না শুনিনা ভাব করে বলল, বুঝলে ডাক্তার, আমি ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছি। ম্যাট্রিক পরীক্ষার সময় এমন টাইফয়েড হল, পরীক্ষাটাই বরবাদ।

ও বাবা!—বেণু ডাক্তার চোখ বড় করে বলে, এইট থেকেই এক লাফে ম্যাট্রিক!

কোথাও একটা কিছু গোলমাল হচ্ছে বুঝতে পেরে নিতাই মোলায়েম গলায় বলে, সে আমলে। হত। আজকের কথা তো নয়।

তুমি কোন আমলের লোক, বয়স কত?

তা তিন কুড়ি চার কুড়ি হবে।—নিতাই বোকা সাজল একটু।

ডাক্তার হাসে। বলে, তা হলে তো মেলাই বয়স তোমার।

আমি যখন ছোট ছিলাম তখন এ জায়গায় বাঘ ডাকত।

কম্পাউন্ডার ছোকরা তাড়া দিয়ে বলে, পয়সাটা?

নিতাই বিরক্ত হয়ে বলে, চুপ দে তো সতু। কাজের কথা হচ্ছে তার মধ্যে ঘ্যান ঘ্যান লাগালি। পয়সা হবে’খন। চাটুজ্জেবাড়ির পয়সা মার যায় দেখেছিস? আমার দশ বিঘে জমি আছে।

কথার তোড়ে সতু ভড়কে পিছিয়ে গেল।

বেণু ডাক্তার তোক খারাপ নয়। তাছাড়া পসার জমাতে হলে লোককে প্রথম প্রথম একটু খাতির করতেই হয়। তাই হাসিমুখেই বলল, ঠিক আছে, পরে দিয়ে যেয়ো। তৃষা বউদির কাছে বিলও পাঠিয়ে দিতে পারি।

আঁতকে উঠে নিতাই বলে, না না, বউদিদিমণিকে আবার এর মধ্যে কেন? মোটে তো সাতসিকে পয়সা। গনিয়ার জঙ্গলের পূবধারে ভাঙা মন্দির খুঁড়লে সাত ঘড়া সোনার মোহর, জানো? বহুকাল আগে এক সাধু আমাকে সন্ধান দিয়ে গেছে। ভারী আলিস্যি তো আমার, তাই আজও তুলিনি। আমারটা খাবেই বা কে বলো! সন্নিসি ফকির মানুষ। তুলব-তুলব করেও তাই তুলিনি। এবার একদিন যেতেই হবে দেখছি।

মলমটা নিয়ে বেরোতেই দেখতে পেল, সামনে বউদিমণির দোকান এয়ীর পাশের টিউবওয়েলটায় মাছির মতো ভিড় লেগেছে। আগে বাজারে পাতকো ছিল, পুকুর ছিল, একটা টিউবওয়েলও ছিল। পুকুর মজে ভরাট হয়েছে, পাতকো ভাঙা, টিউবওয়েলটার দশাও বুড়োর দাঁতের মতো নড়বড়ে। বউদিমণি এই টিউবওয়েল বসাল এই সেদিন, এখনও গায়ের সবুজ রংটা চটেনি পর্যন্ত। প্রথম-প্রথম লোকে এ টিপকলের জল নিত না। মাতব্বররা নাকি নিষেধ করেছিল। আজ ভিড় দেখে খুশি হল নিতাই। একটা হুংকার ছেড়ে বলল, জয় কালী। এই ব্যাটারা, লাইন লাগা! লাইন লাগা!

বলে নিজেই এগিয়ে গিয়ে লোকজনকে ঠেলা ধাক্কা দিতে থাকে নিতাই, বাপের কল পেয়েছিস শালারা? ভেঙে ফেলবি যে। এই খোকা, ভর দিবি না, টিপল বেঁকে যাবে।

লোকে হিহি করে হাসে, নিতাইয়ের কথার অবাধ্যও হয় না। যত যাই হোক, বউদিমণিরই তো কল। আর নিতাই হল বউদির ডান হাত। লোকে তাই লাইন লাগাতে থাকে। নিতাই একটু তফাত হয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে মাতব্বরি করতে থাকে, এই পদা, অমন ঝকাং ঝকাং হ্যান্ডেল মারছিস যে! বাপের জন্মে এসব সাহেবি জিনিস দেখেছিস? খাস বিলেত থেকে জাহাজে করে আনা। বলি ও রতনের মা, লাইন ভেঙে এগোলে যে বড়! কাদু, তুই হরিপদর পেছনে। এই শালা কেতল, তোর কি চান করার মতলব নাকি? কোমরে গামছা, মাথায় সপসপে তেল, হাত বালতি মগ? আঁা? চান করলে ঠ্যাং ভেঙে দেব। ইঃ, লাটসাহেব বউদির বিলিতি কলে চান মারাতে এসেছে! ভাগ, ভাগ! হুঁ হুঁ বাবা, এ কল এমন মন্তর দিয়ে বেঁধেছি কেউ বদ মতলব নিয়ে এলে কল সাপ হয়ে ছুবলে দেবে। এ হল পাতালগঙ্গার জল, যত পারিস খা, রোগ-ভোগ দূর হয়ে যাবে, গায়ে। হাতির বল হবে। ডায়াবেটিস জানিস, ডায়াবেটিস? এই জল খেলে ডায়াবেটিসও সারে।

দুপুরের দিকে বাজারটা ফাঁকা-ফাঁকা। তারই ভিতর থেকে হঠাৎ একটা কালোপানা লোক ধা করে বেরিয়ে এল। নিতাই মাতব্বরিতে ব্যস্ত ছিল বলে দেখতে পায়নি। লোকটা এসে রক্তাম্বরখানা গলার কাছটায় চেপে ধরতেই নিতাই চেতন হয়ে দেখল, রামলাখন।

এই শালা, কাল আমার ঘরে সিঁধ দিয়েছিল কে?

তোর বাবা।—বলে চোখ বুজে রইল নিতাই। নিশ্চিন্তে। কারণ, সেই মুহূর্তে সে বাজারের ও প্রান্ত থেকে একটা ভটভটিয়া আসার শব্দ পেল। সময় মতোই আসছে।

শালা, এইখানে আজই তোর লাশ নামিয়ে দিয়ে যাব।

নিতাই চোখ বন্ধ কবে গম্ভীর গলাতেই বলল, পিপড়ের পাখা ওঠে কখন জানিস? মরার সময়। ঘোর কলি, ঘোর কলি। নইলে মাতাল বদমাশবা সাধুসন্নিসির গায়ে হাত তোলে?

একটা খিস্তি দিয়ে রামলাখন বলে, পুলিশে সকালবেলায় খবর করেছি। কিন্তু তোক পুলিশে দেব না। নিজের হাতে বানাব।

ভটভটিয়াটা ত্রয়ীর সামনে দাঁড়িয়ে গেছে। কলের লাইন ভেঙে লোকে মারপিট দেখতে জুটে গেছে চারধারে।

নিতাই চোখ খুলে চারদিকটা দেখে নিয়ে খুশি হল। লোকজন না জুটলে খেল কিসের? ঠান্ডা গলায় বলল, তিনদিনের মধ্যে গলায় রক্ত উঠে মরবি। যা, বাণ মেরে দিলাম। ঠিক আছে। বাণের মোকাবিলা করে নেব। এখন বল, বেজিটা কোথায়? তার আমি কী জানি?

তুই জানিস না তো কে জানে? তোর বাপ জানে। বল।—বলে রামলাখন একটা ঠুসো দিল পেটে।

ককিয়ে উঠে নিতাই বলে, বাপ জানে সে আমার বাপের কাছেই যা না। আমার বাপ কোথায় আছে জানিস? ভূত হয়ে মাদারপাড়ার বাঁশবনে দোল খায়। তোকেও সেখানে পাঠাব। আর তো মোটে তিনদিন।

চড়াক করে একটা চড় পড়ল গালে। মাথাটা ঘুরে গেল একটু। গাঁজার নেশা থাকলে একটু দুধ দরকার হয়। নইলে শরীরে কিছু থাকে না। বুধিয়ার মায়ের কাছ থেকে একপো করে নিলে কেমন হয়? বদলে মন্তর দেবে ওদের। রাজি হবে না?

নিতাই বিড়বিড় করে বলে, তুই মরবি। তোর বংশ ঝেডেপুছে সাফ হবে। ছেরাদ্দ হবে না, পিণ্ডি পড়বে না।

মলমটা ঠেলা ধাক্কায় হাতের মধ্যেই ভচকে গেছে। হাতময় আঠা। এই অবস্থাতেও সাবধানে হাতটা তুলে মাথার ঘায়ে মলম ঘষতে ঘষতে সে হঠাৎ চেঁচায়, বোম কালী, গোলে বকাবলী। জয়

মা! শেষ করে দে, ফিনিশ করে দে, রক্ত দিয়ে চান কর মা! মা গো!

সরিৎবাবু বড় দেরি করছে। আবার চোখ বুজে ফেলে নিতাই। চোখের নজর লুকোনোটা ভাল অভ্যাস। তারাপীঠের এক সাধু তাকে কায়দাটা শিখিয়েছিল। বলেছিল, পাপ-তাপ করল লোককে চোখের দিকে তাকাতে দিয়ো না। চোখে সব ভেসে ওঠে। ধরা পড়ে যাবে। চোখ বুজে থেকো, মেজাজটা ঠান্ডা রেখো। বিপদ কেটে যাবে। সেই উপদেশটা আজ কাজে লাগিয়ে দিল।

ভিড়ের ওপাশে রাস্তার ধারে সরিৎ তার মোপেড় থামিয়েছে, দোকানের কর্মচারীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছে। গোলমাল দেখে ঘাড় ঘুরিয়ে মুখ কোঁচকাল।

কী হচ্ছে রে ওখানে?

দোকানের ছোকরা কর্মচারী শম্ভু বলে, খ্যাপা নিতাইকে রামলাখন ধরেছে। বেজি না কী চুরি করেছে বুঝি।

রামলাখনটা কে?

সে ওই লাইনের ওধারে ঝোপড়ায় থাকে। মহা বদমাশ।

সরিৎ একবার ভাবল, ঝামেলায় জড়াবে না। সেজদি আবার কী না কী বলে।

কিন্তু রামলাখন নামে লোকটা খুব গলা তুলছে। দু-চার ঘা ঝাড়লও। সরিতের রক্তটা একটু চনমনে হয়ে ওঠে। নিতাই চোর-ছ্যাঁচড় যা-ই হোক, সে চাটুজ্জেবাড়ির আশ্রিত। তার ওপর বাজারি মার পড়লে দিদিরও অপমান।

সরিৎ মোপেড় থেকে নেমে রাস্তাটা চকিত পায়ে পার হল।

 

বাবা আজকাল তাকে ঘরের চাবি দিয়ে যায়। আগের মতো বাবা আর রাগী নেই। না, কথাটা ভুল হল। বাবা এখন বরং আগের চেয়ে আরও বেশি রাগী হয়ে গেছে। কিন্তু সজলের ওপর বাবা আজকাল একদম রাগে না।

বাবার ঘরে ঢুকে সজল আজকাল ইচ্ছেমতো জিনিসপত্র হাঁটকায়। বাবা কিছু বলে না। মাঝে মাঝে বলে, আমি যখন থাকব না তখন তুমি এ ঘরটায় থেকো।

তুমি কোথায় যাবে?

কোথাও চলে যাব।

কেন?

এখানে ভাল লাগে না।

আমারও লাগে না। আমাকে রামকৃষ্ণ মিশনের হোস্টেলে পাঠাবে?

সে তোমার মা জানে।

মাকে তুমি বলো না!

কেন হোস্টেলে যেতে চাও?

হোস্টেলে অনেক বন্ধু পাব।

কেন, এখানেও তো তোমার অনেক বন্ধু। পাঠশালার মাঠে বিকেলে ওই যাদের সঙ্গে ফুটবল খেল।

হ্যাঁ, ওরা আবার বন্ধু নাকি? মা তো আমাকে বাইরের কারও সঙ্গে মিশতে দেয় না, যদি আমি খারাপ হয়ে যাই। তাই সব ভাল ভাল ছেলেদের সঙ্গে মা বন্দোবস্ত করেছে, তারা যদি বাড়িতে এসে আমার সঙ্গে খেলে তা হলে রোজ ভাল টিফিন খাওয়াবে।

শ্রীনাথ অবাক হয়ে বলে, সে কী!

সজল হি হি করে হাসে। বলে, একটা ছেলেও ভাল করে শট করতে জানে না। একটা ছেলের সঙ্গেও আমার তেমন ভাব নেই। শুধু খাওয়ার লোভে পেটুকগুলো রোজ খেলতে আসে।

রাগে ক্ষোভে শ্রীনাথের মুখটা কেমনধারা হয়ে গেল। প্রায় কাপা গলায় বলল, শাসন তা হলে এত দুর গেছে।

তুমি ভেবো না বাবা, আমি স্কুলে অন্যসব বন্ধু পাই।

কিন্তু এ রকম ভাড়া করা বাছাই ছেলেদের সঙ্গে মিশলে যে মনের দিক থেকে তুমি পঙ্গু হয়ে যাবে।

কথাটার মানে বুঝল না সজল; কিন্তু আন্দাজে বুঝল। বলল, সেইজন্যই তো হোস্টেলে যেতে চাই। যেতে দেবে, বাবা?

শ্রীনাথ একটু ভেবে মাথা নেড়ে বলে, আমি তোমাকে যেতে দেওয়ার মালিক নই।

তা হলে আমি তোমার সঙ্গে যাব।

শ্রীনাথ হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। গাঢ় স্বরে বলে, সেও তোমার মা জানে। তোমার মায়ের হাত থেকে কেউ পালাতে পারে না। তুমিও পারবে না।

আর তুমি?

আমি পারব। একভাবে না পারি অন্যভাবে পারব।

অন্যভাবে কীরকম বাবা?

সে তুমি বুঝবে না। তবে আমি যখন থাকব না তখন এই খোলামেলা ঘরখানায় তুমি এসে থেকে। আমার বাগানটা দেখো। বাগান করা খুব ভাল। প্রকৃতির মতো এমন শিক্ষক আর নেই।

বাবার কথাগুলো একটু অদ্ভুত লাগে বটে, কিন্তু বাবা বরাবরই একটু এ রকমই তো। সজল তাই বাবাকে নিয়ে বেশি ভাবে না। তবে ঘরখানা তার খুব ভাল লাগে। সুযোগ পেলেই এসে হানা দেয়। হাঁটকায়।

সেদিন সকালের পড়া থেকে ছুটি পেয়েই চলে এল বাবার ঘরে। গ্রীষ্মের ছুটি চলছে। অগাধ অফুরন্ত দুপুর সামনে। বাবার ঘর থেকে ক্ষুরটা গোপনে নিয়ে বেরিয়ে এল সজল। বিশাল বাগানের এদিক-সেদিক ঘুরতে ঘুরতে চলে এল নিতাইয়ের ঘরে।

সামনে ঝিম মেরে ঘুমোচ্ছে ইস্পাত। ঝোপড়ার দরজাটা বন্ধ। ঠেলতেই ঝাঁপের দরজা খুলে যায়।

নিতাইদা আছো?

নেই। তবে একটা অদ্ভুত জিনিস রয়েছে। পাখির খাঁচায় ছোট্ট একটা বেজি।

সজল খাঁচার গায়ে হাতের চাপড় দিতেই বেজিটা এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। বেজি সাপ মারে শুনেছে সজল। কখনও দেখেনি। সে খাঁচাটা দোলাতে থাকে। এখন একটা সাপ এনে খাঁচাটার মধ্যে ছেড়ে দিলে দারুণ হত।

ভাবতে ভাবতেই ফটকের দিকে একটা গোলমাল শুনতে পেল সজল।

ছোটমামা কাকে যেন মারতে মারতে আর গালাগাল দিতে দিতে টেনে আনছে। বলছে, চল শালা, তোর বেজি যদি খুঁজে না পাস তবে পুঁতে ফেলব।

দরজায় দাঁড়িয়ে সজল দেখল। লোকটা রামলাখন। মামা খুব মারছে রামলাখনকে। চেন দিয়ে গলাটা পেঁচিয়ে ধরে রেখেছে এক হাতে। মামার গায়ে দারুণ জোর। দেখে একটু খুশির হাসি হাসে সে। গায়ের রক্ত ছলাত-ছলাত করে।

বেজির ব্যাপারটা বুঝতে তার এক পলকও লাগেনি। চকিতে ঘরে ঢুকে খাচাটা নিয়ে সে বেরিয়ে আসে। তারপর অজস্র ঝোপঝাড়ের মধ্যে ঢুকে যায়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *