২৭. নাশতা নিয়ে এল অঞ্জু

নাশতা নিয়ে এল অঞ্জু। বাইরের লোক আছে বলেই কিনা কে জানে, আজ একটু বিশেষ ব্যবস্থা দেখা গেল। রুটির বদলে পরোটা তৈরী হয়েছে। ডিম ভাজার সঙ্গে সেমাই দেওয়া হয়েছে। একটি পিরিচে আবার পাকা পেপে টুকরো করে কাটা। সাইফুল ইসলাম বলল, ইয়ে, টুনীর সঙ্গে একটা কথা বলার ছিল। ও আর গান শিখতে যায় না।

অঞ্জু হাসিমুখে বলল, আপার বিয়ে ঠিক হয়েছে তো, সে এখন কোথায়ও যায় না।

বিয়ে ঠিক হয়েছে, কবে?

এই তো, কয়েক দিন।

ও।

ছেলে খুব ভালো। খুব সুন্দর চেহারা।

সাইফুল ইসলাম অবাক হয়ে অঞ্জুর দিকে তাকিয়ে রইল। আমাকে কেউ কিছু বলে নাই। ইয়ে, তাকে বল একটু আসতে।

টুনী ঘরের ভিতর ঢুকল না। দরজার পাশে দাঁড়াল। অঞ্জুর কাছে মনে হল টুনীর চোখ দুটি অস্বাভাবিক ফোলা-ফোলা। যেন প্রচুর কান্নাকাটি করে এসেছে।

টুনী স্বরে বলল, স্যার ডেকেছিলেন?

হুঁ।

কিছু বলবেন?

না, বলব আর কি? সিও সাহেবের বাসায় যাও না। ভাবলাম…

টুনী তাকিয়ে রইল। সাইফুল ইসলাম কথার মাঝখানে থেমে গেল। যেন আর তার কিছু বলার নেই। টুনী বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে করে রান্নাঘরে চলে গেল।

অঞ্জু চায়ের চিনি আনতে গিয়ে দেখে টুনী রুটি বেলছে। তার চোখে সূক্ষ্ম জলের রেখা। অজু কিছু বলল না। তার নিজেরও কান্না আসতে লাগল।

 

চুরি তো তিন-চার দিন আগে হয়েছে, এত দিন পর আসলেন যে?

সাইফুল ইসলাম ঢোক গিলল। ওসি সাহেব বললেন, হারমোনিয়াম ছাড়া আর কী গেছে?

আর কিছু না।

চুরি-টুরি হলে সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট করা দরকার। সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট হলে আমরা খোঁজখবর করতে পারি। দাগী চোরদের ডেকে ধমকামকি দিলে বের হয়ে পড়ে। বুঝলেন?

জি স্যার।

আরে, চুরি তো ছোট জিনিস, খুনের খবর দিতেই লোক তিন-চার দিন দেরি করে।

সাইফুল ইসলাম কথা বলল না। ওসি সাহেব বললেন, কেন দেরি করে জানেন?

জ্বি-না।

কাকে কাকে আসামী দেবে, সেই শলাপরামর্শ করতে গিয়ে দেরি হয়। যত পুরনো শত্র আছে, সব আসামী দিয়ে দেয়। বুঝলেন?

জি স্যার।

তার ফলে আসল যে কালটি, তার কিছু হয় না। আরে ভাই, পুলিশ যে খারাপ তা তো সবাই জানে, আপনারাও যে খারাপ–এইটা সবাই জানে না।

ওসি সাহেব চুরির এফআইআর করলেন। হারমোনিয়াম কোন দোকানের, কবে কেনা, সব লেখা হলে বললেন, এর নিচে নাম সই করেন। ঠিকানা লেখেন। দেখব, কিছু হয় কিনা।

সাইফুল ইসলাম নাম সই করল। সেই নামের দিকে ওসি সাহেব দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থেকে ঠাণ্ডা গলায় বললেন, আপনাকে দু-একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

জি স্যার, করেন।

মনসুরের ব্যাপারটা নিয়ে আপনি ঝামেলা পাকাবার চেষ্টা করছেন, এর কারণ বলেন তো?

সাইফুল ইসলাম তোক গিলল।

ওর বাবাকে কয়েক দিন রেখেছেনও আপনার এখানে। ঠিক না?

জ্বি স্যার।

ঐ টাউটটা এখন কোথায়?

বাড়িতে চলে গেছে।

আপনি তো বেনামী চিঠিপত্র ছাড়ছেন চারিদিকে। ঠিক না?

সাইফুল ইসলাম কপালের ঘাম মুছল। তারপর শুকনো গলায় বলল, স্যার, এক গ্রাস পানি খাব।

এই, এঁকে পানি দাও তো এক গ্লাস। পানি খেয়ে ঠাণ্ডা হন। ঠাণ্ডা হয়ে জবাব দেন।

সাইফুল ইসলাম কলকল করে ঘামতে লাগল।

হুঁ, এখন বলেন তো মতলবটা কী? শোনেন, দশ বছর ধরে পুলিশে আছি। আমাদের কারবারই খারাপ লোকদের সাথে। আপনার মতো লোক বহুত দেখেছি। মিচা শয়তান। আড়ালে কলকাঠি নাড়াবার আসল শয়তান।

আচমকা প্ৰচণ্ড একটা চড় কমিয়ে দিলেন ওসি সাহেব। সাইফুল ইসলাম স্তম্ভিত হয়ে গেল। তার মনে হল পায়জামাটা ভিজে গেছে। প্রস্রাব হয়ে গেছে। সম্ভবত।

চলেন আমার সাথে। আপনার ঘর সার্চ করব।

জ্বি, কী বললেন স্যার?

আপনার ঘর সার্চ হবে।

ওসি সাহেব উঠে দাঁড়ালেন।

মিচা শয়তান, ছিঁচকা শয়তান, সব শয়তান টাইট দেওয়ার ওষুধ আমাদের আছে। ওঠেন তো দেখি এখন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *