২৭. জমি থেকে কৃষি-জনসংখ্যার উৎপাটন

সপ্তবিংশ অধ্যায়– জমি থেকে কৃষি-জনসংখ্যার উৎপাটন

ইংল্যাণ্ডে চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ ভাগেই ভূমিদাস-প্রথা কার্যতঃ অন্তর্হিত হয়ে যায়। তখন, এবং আরো বেশি মাত্রায় পঞ্চদশ শতাব্দীতে, জনসংখ্যায় সুবিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই[১] গঠিত ছিল মুক্ত কৃষক স্বত্বাধিকারীদের দিয়ে তাদের সম্পত্তির অধিকার সামন্ততান্ত্রিক যেনামের পিছনেই লুক্কায়িত থাকনা কেন। বৃহত্তর জমিদারগুলিতে, প্রাচীন বেইলিফ’, যে নিজেই ছিল একজন ভুমিদাস, তার স্থান গ্রহণ করল মুক্ত কৃষক। কৃষিকর্মের মজুরি শ্রমিকদের একটা অংশ গঠিত ছিল ক্ষুদ্র কৃষকদের নিয়ে, যারা অবসর সময়টার সদ্ব্যবহার করত বড় বড় জমিদারিতে কাজ করে; আরেকটা অংশ গঠিত ছিল মজুরি শ্রমিকদের একটি স্বাধীন বিশেষ শ্রেণীকে নিয়ে, যাদের সংখ্যা ছিল আপেক্ষিক ও অনাপেক্ষিক উভয় দিক থেকেই স্বল্প। এই দ্বিতীয়োক্তরা আবার ছিল চাষী-মালিক, যেহেতু মজুরি ছাড়াও তারা তাদের জন্য বরাদ্দ করত কুটির-সমেত ৪ বা ততোধিক একর আবাদযোগ্য জমি। তা ছাড়া বাকি চাষীদেরও সঙ্গে তারাও ভোগ করত এজমালি জমিতে উপস্বত্ব, যা তাদের দিত গো-চারণের সুবিধা, যোগাত কাঠ, আলানি, ঘেসো জমির চাপড়া ইত্যাদি।[২] ইউরোপের সমস্ত দেশে সামন্ত তান্ত্রিক উৎপাদনের বৈশিষ্ট্য ছিল যথাসম্ভব অধিক সংখ্যক সামন্ত-প্ৰজার মধ্যে জমির বিলি-বন্দোবস্ত। সার্বভৌমের মত সামন্ত-প্রভুর পরাক্রম খাজনা-তালিকার দৈর্ঘ্যের উপরে নির্ভর করত না, নির্ভর করত তার প্রজাদের সংখ্যার উপরে এবং সেটা আবার নির্ভর করত চাষী-মালিকদের সংখ্যার উপরে।[৩] অতএব যদিও নর্মান-বিজয়ের পরে ইংরেজদের দেশটি বিভক্ত করা হয়েছি বিশাল বিশাল সামন্ত-রাজ্যে, যাদের এক একটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ৯০০টির মত পুরানো ইঙ্গ-স্যাক্সন তালুক, তা সমাকীর্ণ ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চাষীদের সম্পত্তিতে এবং সেগুলির মধ্যে মধ্যে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত কতিপয় বৃহদাকার জমিদারিতে। এই অবস্থা এবং সেই সঙ্গে শহরগুলির ঐশ্বর্য, যা ছিল পঞ্চদশ শতাব্দীর স্বকীয় বৈশিষ্ট্য—এই দুয়ের কল্যাণে সম্ভব হয়েছে জনগণের সেই সমৃদ্ধি, যার চিত্র এত প্রজ্জ্বল চ্যান্সেলর ফর্টে একেছেন তার “লড়স লেগাম অ্যাঙ্গলি” নামক গ্রন্থে।

বিপ্লবের যে-প্রস্তাবনা, যা সূচিত করল ধনতান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতির, তা অভিনীত হয়েছিল পঞ্চদশ শতকের শেষ তৃতীয় ভাগে এবং ষোড়শ শতকের প্রথম দশকে। যাদের সম্পর্কে স্যর জেমস স্টুয়ার্ট সঠিক ভাবেই বলেছে, “সর্বত্রই বিনা-প্রয়োজনে ভর্তি করে আছে গৃহ এবং সৌধ”-সামন্তপ্রভুদের এমন পোয় বাহিনীকে দলে দলে ভেঙ্গে দেওয়ার মুক্ত সর্বহারাদের একটা বিরাট সমষ্টি শ্রমের বাজারে নিক্ষিপ্ত হল। যদিও রাজশক্তি, যা নিজেই ছিল বুর্জোয়া বিকাশের ফল, তার নিরংকুশ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার অভিযানে এই পোয়-বাহিনীগুলির ভাঙ্গনের প্রক্রিয়াকে সবলে ত্বরান্বিত করল, তা হলেও সেটাই একমাত্র কারণ ছিল না। রাজা ও পার্লামেন্টের সঙ্গে উদ্ধত সংঘর্ষে, বৃহৎ সামন্ত-প্রভুর এজমালি জমি জবর দখল করে এবং জমি থেকে চাষী-সমাজকে জোর করে তাড়িয়ে দিয়ে সৃষ্টি করেছিল এক অতুলনীয় ভাবে বিরাট সর্বহারা-শ্রেণীকে, অথচ ঐ জমিতে অদের মত ঐ চাষীদেরও ছিল সমান সামন্ততান্ত্রিক অধিকার। ফ্লেমিশ পশম-শিল্পের দ্রুত অভ্যুদয় এবং সেই সঙ্গে ইংল্যাণ্ডে পশমে দামে উর্ধ্বগতি এই উচ্ছেদের কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ প্রেরণা যুগিয়েছিল। বিরাট বিরাট সামন্ততান্ত্রিক যুদ্ধ ইতিপূর্বেই প্রাচীন অভিজাতবর্গকে গ্রাস করে ফেলেছিল। নতুন অভিজাতবর্গ হল যুগের সন্তান, যার কাছে অর্থই হল সব ক্ষমতার সেরা ক্ষমতা। সুতরাং, আবাদী জমিকে মেষ-চারণে রূপান্তরিত করার সোচ্চার ঘোষণা ধ্বনিত হল তার কণ্ঠে। হারিসন তার “ডেস্ক্রিপশন অব ইংল্যাণ্ডে, প্রেফিক্সড টু ইলিনশেড’স ক্রনিক্স (“ইংল্যাণ্ডের বর্ণনা, ইলিনশেড-এর ধারাবিবরণীর ভূমিকা” নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন ক্ষুদ্র চাষীদের এই উৎপাটনের ফলে কিভাবে দেশের সর্বনাশ ঘটছে। “আমাদের মহামান্য জবর-দখলকারীদের পরোয়া কি? চাষীদের বাসা-বাটি আর শ্রমিকদের কুটিরগুলিকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে কিংবা ভেঙ্গে পড়ার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। হারিসন বলেন, “যদি প্রত্যেকটি তালুকের নথিপত্র দাবি করা হয় তা হলে অবিলম্বেই দেখা যাবে যে, কতকগুলি তালুকে সতের, আঠারো, এমনকি কুড়িটি পর্যন্ত বাড়ি ধ্বংস হয়েছে ইংল্যাণ্ড আর কখনো জনবসতি এত কমে যায়নি, যা এখন হয়েছে। শহর আর জনপদে হয় একেবারই ক্ষয় পেয়েছে, আর নয়তো এক-চতুর্থাংশের বেশি, এমনকি, অর্ধেকেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে, যদিও কয়েক টিতে এখানে সেখানে কিছু বৃদ্ধি ঘটতে পারে; জনপদগুলিতে বাসা-বাড়িগুলিকে ভেঙে দিয়ে মেষ-চারণে পরিণত করা হয়েছে, একমাত্র সামন্তপ্রভুর বাড়ি ছাড়া আর কিছুই সেখানে দাড়িয়ে নেই। আমি আরো বলতে পারি।” এই পুরাতন বিবরণদাতাদের নালিশগুলি সব সময়েই অতিরঞ্জিত, কিন্তু উৎপাদনের অবস্থায় বিপ্লবের ফলে তৎকালীন মানুষদের মনে কী প্রতিক্রিয়া ঘটেছিল, এগুলিতে তার বিশ্বস্ত প্রতিফলন ঘটে। চ্যান্সেলর ফর্টে এবং টমাস মোর-এর লেখাগুলিকে তুলনা করলে পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীর ব্যবধানটা ধরা পড়ে। যে কথা থর্নটন সঠিক ভাবেই বলেছেন, “ইংরেজ শ্রমিক শ্রেণীকে তার স্বর্ণযুগ থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল লৌহযুগে অতিক্রমণের কোনো পর্যায় ব্যতিরেকেই।”

এই বিপ্লবে আইন সন্ত্রস্ত বোধ করল। তা এখনো সভ্যতার এই শিখরে ওঠেনি যেখানে “জাতির সম্পদ” (অর্থাৎ মূলধনের গঠন এবং জনসাধারণের বেপরোয়া শোষণ ও বঞ্চনা) সমগ্র রাষ্ট্রপরিচালনার চরম লক্ষ্য হয়ে দাড়িয়েছে। তার সপ্তম হেনরির ইতিহাসে বেকন লিখেছেন, “সেই সময় (১৪৮৯) জমি-ঘেরাও আরো ঘন ঘন হতে শুরু করে, যার দ্বারা আবাদি জমি (লোকজন ও পরিবার ব্যতীত যেগুলিকে সার দেওয়া যায়নি) পরিবর্তিত হল চারণভূমিতে, কয়েক জন রাখাল দিয়ে যা অনায়াসেই পরিষ্কার করানো যেত, এবং বহুবার্ষিক পুরুষানুক্রমিক ও ইচ্ছাধীন প্রজাস্বত্বগুলি (যার উপরে বেঁচে থাকত চাষীসম্প্রদায়ের বেশির ভাগ) পরিণত হল খাসমহলে। এর ফলে দেখা দিল তোক এবং (তার ফলে) শহর, গীর্জা, গীর্জা-কর ইত্যাদিতে অবক্ষয়। …এর প্রতিকার কল্পে রাজার এবং তৎকালীন পালমেন্টের প্রজ্ঞা প্রশংসনীয়। তাঁরা জনসংখ্যা-নাশক ভূমি-বেষ্টনের এবং জনসংখ্যা-নাশক পশু চারণের অধিকার প্রত্যাহার করে নেবার একটা পন্থা অবলম্বন করলেন। ১৯৮৯ সালে সপ্তম হেনরির একটি আইন (১৯) অন্তত ২০ একর জমির অধিকারী এমন সমস্ত “কৃষি-খামারের বাড়ি-ঘর-ধ্বংস করা নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে। আরেকটি আইন (২৫) জারি করে, ঐ একই আইনকে নবীকৃত করা হয়। অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে এই আইনে বিবৃত করা হয় যে, বহুসংখ্যক খামার এবং গবাদি পশুর, বিশেষ করে মেষের, পাল কতিপয় ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে, এবং তার ফলে জমির খাজনা দারুণ ভাবে বর্ধিত হয়েছে, কৃষির আয়তন হ্রাস পেয়েছে, গীর্জা ও বাসগৃহ ধ্বংস করা হয়েছে, এবং বিপুলসংখ্যক মানুষ যার দ্বারা তাদের নিজেদেরকে ও তাদের পরিবারবর্গকে পরিপোষণ করত সেই সব উপায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অতএব, এই আইন ধ্বংসপ্রাপ্ত খামারবাড়িগুলির পুননির্মাণের আদেশ জারি করছে, ফসলী জমি ও গোচর-জমির মধ্যে একটা অনুপাত নির্ধারিত করে দিচ্ছে ইত্যাদিতে। ১৫৫৩ সালের আইনে উল্লেখ করা হয় যে, এমন কয়েকজন আছে যারা ২৪,০০০ ভেড়ার মালিক; ঐ আইন মালিকানাধীন ভেড়ার সংখ্যা সীমিত করে দেয় ২০০০-এ।[৪] ক্ষুদ্র কৃষক ও চাষীদের উৎখাত করার বিরুদ্ধে সোচ্চার দাবি এবং এই আইন-প্রণয়ন উভয়েই সমভাবে, সপ্তম হেনরির মৃত্যুর ১৫০ বছর পরে পর্যন্তও নিল বলে প্রতিপন্ন হল। এই নিষ্ফলতার কারণ বেকন নিজের অগোচরেই প্রকাশ করে ফেলেছেন। “এসেজ : সিভিল অ্যাণ্ড মর্যাল” (“প্রবন্ধাবলী : রাষ্ট্রিক ও নৈতিক” ) নামক তঁার গ্রন্থে বেকন বলেন ( প্রবন্ধ, ২৯) “রাজা সপ্তম। হেনরির পরিকল্পনাটি ছিল প্রাজ্ঞ ও প্রশংসনীয়; সেটি ছিল কৃষিকর্মের খামার ও বাড়িগুলিকে একটি মানে নিয়ে আসা, যে-মানটিকে রক্ষা করা হবে জমির এমন একটা অনুপাত সেগুলির জন্য ধার্য করে দিয়ে, যাতে একজন প্রজা দাস-সুলভ হীন অবস্থার মধ্যে না থেকে, বাস করে স্বচ্ছল প্রাচুর্যের পরিবেশে এবং লাঙল কেবল ভাড়াটেদের হাতে না গিয়ে থেকে যায় মালিকদের হাতে,”[৫] অন্য দিকে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা যা দাবি করত তা হল বিপুল জনসমষ্টির জন্য একটি অধঃপতিত ও প্রায় দাস-সুলভ অবস্থা, ভাড়াটে শ্রমিক হিসাবে তাদের এবং মূলধন হিসাবে তাদের শ্রম-উপকরণ-সমূহের রূপান্তর। এই রূপান্তরের কালে আইনও চেষ্টা করে কৃষি-মজুরি-শ্রমিকের কুটিরের সঙ্গে ৪ একর জমি রাখতে এবং তাকে নিষেধ করে দেওয়া হয় সে যেন কোন আবাসিককে গ্রাহক না করে। প্রথম জেমসের রাজত্বকালে, ১৬২৭ সালে, ফ্রন্ট মিল এর রজার ক্রকার-কে নিন্দা করা হয় কেননা তিনি ফ্রন্ট মিলের জমিদারিতে এমন একটি কুটির নির্মাণ করেন যার সঙ্গে ৪ একর জমির মৌসী পাট্টা সংলগ্ন ছিল না। এমন কি প্রথম চালস-এর আমলে এই ১৬৩৯ সাল পর্যন্ত একটি রাজকীয় কমিশন। নিয়োগ করা হয়, যাতে করে পুরনো আইনগুলি, বিশেষ করে ৪ একর সংক্রান্ত আইনটি, কার্যকরী করা যায়। এমনকি, ক্রমওয়েল-এর সময়েও লণ্ডনের ৪ মাইলের মধ্যে বাডি-নির্মাণ নিষিদ্ধ ছিল, যদি তার সঙ্গে ৪ একর জমি যুক্ত না থাকত। আঠারো। শতকের প্রথমার্ধেও কৃষি-শ্রমিকের কুটিরের সঙ্গে ২ বা ১ একর জমি না থাকলে নালিশ করা হত। আর এখন তো সে ভাগ্যবান, যদি সে পায় একটা ছোট বাগান কিংবা ভাড়া করতে পারে কয়েক ‘রুড জমি বাড়ি থেকে অনেক দূরে। ডঃ হান্টার বলেন, ‘জমিদার এবং জোত-মালিক এখানে হাতে হাত রেখে কাজ করে। বাড়ির সঙ্গে কয়েক একর জমি শ্রমিককে করে তুলবে অতিরিক্ত স্বাধীন। [৬]

ষোড়শ শতকে ‘সংস্কার আন্দোলন’ (রিফর্মেশন’) এবং তজ্জনিত গীর্জা-সম্পত্তির লুণ্ঠন ও ধ্বংস-সাধনের ফলে জমি থেকে মানুষের সবলে উৎপাটনের প্রক্রিয়ায় এক ভয়াবহ প্রেরণা সঞ্চারিত হল। সেই আন্দোলনের সময়ে ক্যাথলিক গীর্জা ছিল ইংল্যাণ্ডের জমির এক বিরাট অংশের সামতান্ত্রিক মালিক। মঠগুলির অবসান ঘটাবার পরে সেগুলির অধিবাসীরা সর্বহারাদের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হল। গীর্জার ভূ সম্পত্তিগুলির একটা বড় অংশ রাজার লোভাতুর প্রিয়পাত্রদের মধ্যে বিলি করে দেওয়া হল কিংবা ফাটকাবাজ খামার-মালিক ও নাগরিকদের কাছে নামমাত্র দামে বেচে দেওয়া হল, যারা পুরুষানুক্রমিক উপস্বত্বভোগীদের দলে দলে উৎখাত করে দিল এবং তাদের জমিগুলি একটি অখণ্ড জোতে পরিণত করল। গীর্জা-করের এখতিয়ারের এক অংশে অবস্থিত, আইনের দ্বারা নিশ্চয়ীকৃত লোকজনের জমি বিনা-বাক্যে বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হল।[৭] ইংল্যাণ্ডের মধ্য দিয়ে এক সফরের পরে রানী এলিজাবেথ চেঁচিয়ে উঠেছিলেন, “Pauper ubique jacet.” তাঁর রাজত্বের ৪৩-তম বছরে একটি গরিব কর প্রবর্তন করে জাতি নিঃস্বতাকে সরকারি ভাবে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হল। “মনে হয়, এই আইনের প্রণেতার। এর কারণগুলি বিবৃত করতে লজ্জা বোধ করেছিলেন, কেননা, চিরাচরিত প্রথা অনুসারে আইনের যে-প্রস্তাবনা দেওয়া হয়, এক্ষেত্রে তা দেওয়া হয়নি।[৮] প্রথম চালস-এর ১৬তম বিধানের ৪র্থ অনুচ্ছেদের দ্বারা এটাকে চিরস্থায়ী বলে ঘোষণা করা হয় এবং, বস্তুতঃ পক্ষে, কেবল ১৮৩৪ সালেই। এটা একটা নোতুন ও কঠোরতর রূপ ধারণ করে।[৯] সংস্কার আন্দোলনের এই আশু ফলগুলি কিন্তু তার সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ফল হয়নি। ভূমি-সম্পত্তির প্রথাগত অবস্থা গুলির ধর্মীয় দুর্গ-প্রাচীর ছিল গীর্জার সম্পত্তি। তার পতনের পরে এই অবস্থাগুলি আর দুর্ভেদ্য রইল না।[১০]

এমনকি সপ্তদশ শতকের সর্বশেষ দশকেও, চাষী-সম্প্রদায় স্বাধীন চাষী-কর্মীদের এই শ্ৰেণীটি ছিল কৃষক-মালিকদের চেয়ে সংখ্যাধিক। তারাই ছিল ক্রমওয়েলের শক্তির মেরুদণ্ড এবং, এমনকি মেকলের স্বীকৃতি অনুসারেও, মাতাল জমিদারেরা এবং তাদের সেবাদাস গ্রামীণ যাজকেরা, যারা বাধ্য হত তাদের প্রভুদের পরিত্যক্ত রক্ষিতাদের বিয়ে করতে, তারা এদের সঙ্গে তুলনায় দাড়াতে পারত না। ১৭৫-এর নাগাদ এই চাষী-সম্প্রদায়ের অবলুপ্তি ঘটে গিয়েছিল[১১] এবং সেই সঙ্গে অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল কৃষি-শ্রমিকের এজমালি জমির শেষ চিহ্নটুকু। কৃষি-বিপ্লবের বিশুদ্ধ অর্থ নৈতিক কারণগুলি আমরা এখানে এক পাশে সরিয়ে রাখছি। আমরা আলোচনা করছি কেবল জোর-জবরদস্তিমূলক পদ্ধতিগুলির কথা, যেগুলি তখন প্রযুক্ত হত।

স্টুয়ার্টদের প্রত্যাবর্তনের পরে ভূ-সম্পত্তির মালিকেরা, আইন-সঙ্গত পথে, এক জবর-দখল সংঘটিত করল-ইউরোপীয় ভূখণ্ডে যা সর্বত্র সংঘটিত হয়েছে আইনগত কোনো অনুষ্ঠান ব্যতিরেকেই। তারা জমির সামন্ততান্ত্রিক ভোগ-দখলের শত ইত্যাদির অবলুপ্তি ঘটাল অর্থাৎ রাষ্ট্রের কাছে তার যাবতীয় বাধ্য-বাধকতা থেকে নিষ্কৃতি পেল; চাষী-সম্প্রদায় ও জনসাধারণের বাকি অংশের উপর কর চাপিয়ে দিয়ে “ক্ষতিপূরণ করে দিল”; যে-ভূসম্পত্তির উপরে তাদের ছিল নিছক একটা সামন্ততান্ত্রিক অধিকার, তার উপরে নিজেদের জন্য আধুনিক ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করল; এবং, সর্বশেষে, ভূমি-ব্যবস্থা সংক্ৰান্ত সেই সব আইন রচনা করল, খুটিনাটি ব্যাপারে দরকার মত রদবদলের পরে, যেগুলি ইংরেজ কবি-শ্রমিকের উপরে একই ফলাফল বিস্তার করবে, যা করেছিল টার্টার ববিস গুনফ-এর অনুশাসন রুশ চাষী-সম্প্রদায়ের উপরে।

“মহিমাময় বিপ্লব” উইলিয়ম অব অরেঞ্জ-কে ক্ষমতায় আনার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতায় নিয়ে এল উদ্বৃত্ত-মূল্যের আত্মসাৎকারী জমিদার ও ধনিকদের।[১২] তারা উদ্বোধন করল বিশাল আয়তনে রাষ্ট্রীয় ভূমি-সম্পত্তির অপহরণ, যা এতকাল চলে আসছিল সীমিত মাত্রায়। এই সম্পত্তিগুলি দিয়ে দেওয়া হত, হাস্যকর দামে বেচে দেওয়া হত কিংবা সরাসরি দখল করে ব্যক্তিগত ভূসম্পত্তির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হত। [১৩]আইনগত শিষ্টাচারের প্রতি সামান্যতম স্বীকৃতি ব্যতিরেকেই এই সব কিছু ঘটল। এই ভাবে প্রতারণাপূর্বক করায়ত্ত করা রাষ্ট্রীয় জমি-জমা এবং সেই সঙ্গে গীর্জার ভূমিসম্পত্তির লুণ্ঠন–যতদূর পর্যন্ত তা আবার প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবের ফলে হাত ছাড়া হয়নি—চনা করে দিল আজকের দিনের ইংরেজ অভিজাত-গোষ্ঠীর রাজকীয় ভূম্যধিকারগুলির ভিত্তি।[১৪] বুর্জোয়া ধনিকেরা যে এই কর্মকাণ্ডটিকে সমর্থন করল, তার অন্যতম উদ্দেশ্য হল জমিতে অবাধ বাণিজ্যের বিস্তার সাধন, বৃহদাকার জোত-ব্যবস্থার ভিত্তিতে আধুনিক কৃষিকর্মের সম্প্রসারণ, এবং হাতের কাছে মজুদ মুক্ত কৃষিমজুরদের সরবরাহের বৃদ্ধি সাধন। তা ছাড়া এই নোতুন ভৌমিক অভিজাত-তন্ত্র ছিল আবার নোতুন ব্যাংক-তন্ত্রের, নোতুন ডিম-ফোটা বৃহৎ-অর্থের এবং, তখনো সংরক্ষণমূলক কর-ব্যবস্থার উপরে নির্ভরশীল, বৃহৎ কারখানা-মালিকের স্বাভাবিক মিত্র। নিজেদের স্বার্থে ইংরেজ বুর্জোয়া-শ্রেণী সম্পূর্ণ বিচক্ষণতার সঙ্গেই কাজ করেছিল, যেমন করেছিল সুইডিশ বুর্জোয়া-শ্রেণী যারা, প্রক্রিয়াকে বিপরীত মুখে ঘুরিয়ে দিয়ে, তাদের অর্থ নৈতিক মিত্র চাষী-সমাজের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে, রাজাকে সাহায্য করেছিল অভিজাতবর্গের হাত থেকে সরকারের খাস জমি জোর করে পুনরুদ্ধার করতে। এই ঘটনা ঘটে ১৬০৪ সাল থেকে, দশম চার্লস এবং একাদশ চার্লস-এর রাজত্বকালে।

উল্লিখিত রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি থেকে এজমালি সম্পত্তি সব সময়েই আলাদা। এজমালি সম্পত্তি হল একটি টিউটনিক প্রতিষ্ঠান, যা সামন্ততন্ত্রের আবরণে প্রচলিত ছিল। আমরা দেখেছি কিভাবে এই সম্পত্তির জোর-জবরদস্তিমূলক দখল, যা সাধারণত আবাদি জমির গোচর জমিতে রূপান্তরিত করার সঙ্গে একযোগে চলত, তার শুরু হয়েছিল পঞ্চদশ শতকের শেষাশেষি এবং চলেছিল ষোড়শ শতক অবধি। কিন্তু সে সময়ে এই প্রক্রিয়াটি সাধিত হত ব্যক্তিগত হিংসাকাণ্ডের সাহায্যে, যার বিরুদ্ধে আইন দেড়শ বছর ধরে বৃথাই লড়াই করেছিল। অষ্টাদশ শতকে যে-অগ্রগতি ঘটে তা প্রকাশ পায় এই ঘটনায় যে, তখন খোদ আইনটা নিজেই পরিণত হল জনগণের জমি অপহরণের হাতিয়ারে, যদিও বড় বড় জোত-মালিকের। সেই সঙ্গে তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র পদ্ধতিগুলিও ব্যবহার করত।[১৫] লুণ্ঠনের সংসদীয় রূপটি হল সাধারণ জমির পরিবেষ্টন-সংক্রান্ত আইনগুলি, অর্থাৎ সেই বিধানগুলি যার বলে জমিদারেরা সর্ব সাধারণের জমিগুলি নিজেদেরকে দান করে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসাবে। স্যর এফ এম. ইডেন প্রথমে তার বিশেষ চাতুর্যপূর্ণ ওকালতিতে সাধারণ সম্পত্তিতে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন সামন্ত প্রভুদের স্থান-গ্রহণকারী বৃহৎ জমিদারবর্গের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসাবে; তার পরে নিজেই আবার তা খণ্ডন করেন যখন তিনি সাধারণ জমিগুলি ঘেরাও করার জন্য একটা ব্যাপক আইন প্রণয়নের দাবি করেন (এবং এই ভাবে স্বীকার করে নেন যে, সেগুলিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করার জন্য একটি সংসদীয় কু-দেতা’-র [ ‘জোর-কেরামত’-এর দরকার ] এবং, তদুপরি, জমি থেকে উৎখাত গরিবদের ক্ষতিপূরণ দানের জন্য আইনসভার কাছে আহ্বান জানান।[১৬]

এক দিকে যখন জমিদারদের খেয়াল-খুশির উপরে নির্ভরশীল একটা দাস-সুলভ জনসমষ্টি-উঠবন্দী প্রজা তথা বার্ষিক ইজারাভোগী ছোট কৃষকেরা—দখল করল স্বাধীন চাষীদের জায়গা, অন্য দিকে তখন, রাষ্ট্রীয় ভূ-সম্পত্তি অপহরণের পরে, সাধারণ জমি গুলির এই ধারাবাহিক লুণ্ঠন বৃহৎ জোতগুলিকে আরো স্ফীতকায় করে তুলতে এবং কৃষি-জনসংখ্যাকে কারখানা-শিল্পের সর্বহারা হিসাবে মুক্ত করে দিতে সাহায্য করল; স্ফীতকায় জোতগুলিই অষ্টাদশ শতকে অভিহিত হত ‘মূলধন জোত’[১৭] বা বণিক জোত[১৮] বলে।

যাই হোক, উনিশ শতকের মত আঠারো শতক তত সম্পূর্ণ ভাবে জাতীয় সমৃদ্ধি এবং জনগণের দারিদ্র্যের মধ্যে অভিন্নতাটা ধরতে পারেনি। আমার সামনে যে বিপুল পরিমাণ তথ্যসম্ভার রয়েছে, তা থেকে কয়েকটি অনুচ্ছেদ আমি এখানে উদ্ধৃত করছি, যেগুলি তৎকালীন ঘটনাবলীর উপরে প্রভূত আলোক সম্পাত করবে। একজন ক্রুদ্ধ ব্যক্তি লিখছেন, “হার্টফোর্ডশায়ারের বেশ কয়েকটি প্যারিশে, গড়ে ৫০ থেকে ১৫০ একর জমির অধিকারী, এমন ২৪টি জোতকে গলিয়ে তিনটি জোতে পরিণত করা হয়েছে।”[১৯] “নর্দাম্পটনশায়ার এবং লেইসেস্টারশায়ারে সাধারণ জমির পরিবেষ্টন খুব বিরাট আয়তনে সংঘটিত করা হয়েছে, এবং, পরিবেষ্টনের ফলে সৃষ্ট নোতুন জমিদারি গুলির অধিকাংশকেই পরিবর্তিত করা হয়েছে চারণ-জমিতে, যার ফলে, আগে যে-সব জমিদারিতে বছরে ১,৫০০ একর পর্যন্ত আবাদ হত, এখন সেগুলির বেশির ভাগেই ৫০ একরের বেশি আবাদ হয় না। আগেকার বাড়ি-ঘর, গোলাবাড়ি, আস্তাবল ইত্যাদির ধ্বংসাবশেষগুলিই কেবল এখন পড়ে রয়েছে আগেকার অধিবাসীদের চিহ্ন হিসাবে।” কতকগুলি বেষ্টনমুক্ত গ্রামে এক শ’ বাড়ি ও পরিবারকমে দাড়িয়েছে আট-দশটিতে। ……মাত্র ১৫-২০ বছর ধরে বেষ্টন করা হয়েছে এমন সব প্যারিশের জমি-মালিকের সংখ্যা সেগুলির বেষ্টন-মুক্ত অবস্থায় সেখানে যত সংখ্যক জমির মালিক বাস করত, তার তুলনায় অনেক কম। চার-পাঁচজন বিত্তবান মেষপালকের পক্ষে একটা বিশালাকার বেষ্টনভুক্ত জমিদারি আত্মসাৎ করে নেওয়া মোটেই বিরল ঘটনা নয়—এমন একটি জমিদারি যা আগে ছিল ২০-৩০ জন জোত মালিক এবং সমসংখ্যক প্রজা ও ক্ষুদ্র স্বত্বাধিকারীর হাতে। এর ফলে, এরা সকলেই তাদের নিজেদের পরিবারবর্গ এবং, যারা প্রধানতঃ তাদের দ্বারাই কর্ম-নিযুক্ত ও পরিপোষিত হয়, তাদেরও পরিবারবর্গ সহ জীবিকা থেকে উচ্ছিন্ন হয়।[২০] প্রতিবেশী জমিদারদের দ্বারা, বেষ্টনের অছিলায়, কেবল যে পতিত জমিই দখলীকৃত হত, তা নয়, সেই সঙ্গে যৌথ ভাবে কর্ষিত কিংবা যৌথ-সমাজের কাছ থেকে নির্দিষ্ট-পরিমাণ খাজনার বিনিময়ে অধিকার প্রাপ্ত জমিও দখলীকৃত হত। “যে-সব খোলা মাঠ ও জমির ইতিমধ্যেই উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, আমি এখানে সেগুলির কথাই উল্লেখ করছি। এমনকি পরিবেষ্টনের পক্ষ সমর্থক লেখকেরা পর্যন্ত স্বীকার করেন যে এই হ্রাস-প্রাপ্ত গ্রামগুলি জোতের উপরে একচেটিয়া মালিকানা বাড়িয়ে দেয়, খাদ্য-দ্রব্যাদির দাম চড়িয়ে দেয় এবং জনশূন্যতা সৃষ্টি করে এবং এমনকি পড়ো জমি ঘিরে দেওয়ার ব্যাপারটা পর্যন্ত (যা এখন করা হচ্ছে), দরিদ্র জনগণকে তাদের জীবিকা থেকে আংশিক ভাবে বঞ্চিত করে তাদের উপরে আঘাত করছে, এবং বৃহৎ জোতগুলিকে আরো বৃহত্তর করে তুলছে।”[২১] আঃ প্রাইস বলেন, “এই জমি চলে যায় কয়েকজন বৃহৎ কৃষকের হাতে; এর ফল অবশ্যই এই হবে যে ক্ষুদ্র কৃষকেরা ( আগে তিনি যাদের অভিহিত করেছেন “ক্ষুদ্র স্বত্বা ধিকারীদের এবং তাদের প্রজাদের এক-সমষ্টি বলে, যে-প্রজারা তাদের নিজেদেরকে ও পরিবারবর্গকে পোষণ করে তাদের অধিকৃত জমির ফসল, যৌথ জমিতে পালিত ভেড়া, হাঁস-মুর্গী, শুয়োর ইত্যাদির দ্বারা এবং, সেই কারণে, যাদের প্রাণ-ধারণের কোন দ্রব্যসামগ্রী কেনার কোনো দরকার পড়ত না”) রূপান্তরিত হত এমন এক দল লোকে যারা তাদের জীবিকা অর্জন করত অপরের জন্য কাজ করে, এবং যাদের যেকোনো জিনিসের দরকার হলেই বাজারে যেতে হত ॥…… সম্ভবতঃ শ্রমের সরবরাহ বেড়ে যাবে কেননা তার জন্য জবরদস্তি বেড়ে যাবে। শহর ও কল-কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, কেননা আশ্রয় ও কাজের খোঁজে আরো বেশি বেশি মানুষ সেখানে তাড়িত হবে। এই ভাবেই জোতগুলিকে আত্মসাৎ করার ঘটনা স্বাভাবিক ভাবে ঘটে। আর এই ভাবেই এই প্রক্রিয়া অনেক বছর ধরে এই রাজ্যে কার্যতঃ ঘটে আসছে।[২২] জমি ঘেরাওয়ের ফলাফল তিনি এই ভাবে সংক্ষেপে বিবৃত করেন, “মোটের উপরে, নিচু পর্যায়ের লোকদের অবস্থা সব দিক দিয়েই আরো খারাপের দিকে পরিবর্তিত হয়। জমির ক্ষুদ্র অধিকারী থেকে তারা পর্যবসিত হয় দিন-মজুর ও ভাড়াটে কর্মীতে; এবং সেই একই সময়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়ে ওঠে আরো কঠিন।[২৩] বস্তুত পক্ষে, সাধারণ জমির জবরদখল এবং সেই সঙ্গে কৃষিকর্মে তার সহগামী বিপ্লব কৃষি-শ্রমিকদের উপরে এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করল যে, এমনকি ইডেন-এরও মতে, ১৭৬৫ এবং ১৭৮০-এর মধ্যে তাদের মজুরি ন্যূনতম সীমারও নীচে নেমে গেল এবং সরকারি গরিব-আইনের ত্রাণ-সাহায্য দ্বারা তা পরিপূরণ করার প্রয়োজন দেখা দিল। তিনি বলেন, তাদের মজুরি, “জীবনের পরম প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ক্রয়ের পক্ষে যথেষ্টর তুলনায় বেশি ছিল না।”

ক্ষণিকের জন্য জমি-ঘেরাওয়ের জনৈক ধ্বজাধারী এবং ডাঃ প্রাইসের একজন বিরোধীর কথা শোনা যাক, যেহেতু খোলা মাঠে লোকজনকে আর শ্রম নষ্ট করতে দেখা যায় না, সেই হেতু অবশ্যই জনশূন্যতা দেখা দিয়েছে এমন একটা সিদ্ধান্ত। অনিবার্য নয়। যদি ক্ষুদ্র কৃষকদের এমন একদল লোকে রূপান্তরিত করা যায়, যারা অবশ্যই অপরের জন্য কাজ করে এবং অধিকতর শ্রম উৎপাদন করে, তাহলে এটা হবে একটা সুবিধা, যা সমগ্র জাতি (অবশ্য, রূপান্তরিত কৃষকেরা এই জাতির অন্তর্ভুক্ত নয়) কামনা করবে। যখন তাদের সম্মিলিত শ্রম একসঙ্গে নিয়োজিত হবে, তখন ফসল উৎপন্ন হবে ঢের বেশি, ম্যানুফ্যাকচারের জন্য পাওয়া যাবে উদ্বৃত্ত এবং এই ভাবে ম্যানুফ্যাকচার যা হল জাতির একটি খনি-স্বরূপ, তা উৎপন্ন ফসলের পরিমাণ অনুপাতে বৃদ্ধি পাবে।” [২৪]

যে দার্শনিক-সুলভ মানসিক প্রশান্তি সহকারে রাষ্ট্রীয় অর্থতত্ব সম্পত্তির পবিত্রতম অধিকারসমূহের” নির্লজ্জতম লঙ্ঘনকে, ধনতান্ত্রিক উৎপাদন-পদ্ধতির ভিত্তি-স্থাপনের প্রয়োজনে অনুষ্ঠিত হিংসাত্মক কার্যাবলীকে গণ্য করে থাকে, তা লোকহিতৈষী ও ‘টোরি’-পন্থী স্যার এফ এম. ইডেন দেখিয়েছেন। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ তৃতীয় ভাগ থেকে অষ্টাদশ শতকের শেষ পর্যন্ত জমি থেকে জনগণের বলপূর্বক উৎপাটনের দরুন ক্রমাগত যে-সব চুরি, অত্যাচার ও গণ-দুর্দশা অনুষ্ঠিত হয় সেগুলি থেকে তিনি যে মনোরম সিদ্ধান্তটিতে উপনীত হলেন তা এই, “আবাদি জমি এবং চারণ-জমির মধ্যে যথোচিত অনুপাত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গোটা চোদ্দ শতক এবং পনের শতকের বেশির ভাগটা জুড়ে ২, ৩, এমনকি ৪ একর পর্যন্ত আবাদি জমি-পিছু ছিল এক একর চারণ-জমি-যে পর্যন্ত না অবশেষে এক একর আবাদি জমি-পিছু ৩ একর চারণ-জমির সঠিক অনুপাতটি প্রতিষ্ঠা করা গিয়েছে।

উনিশ শতকে কৃষি-শ্রমিক ও সাধারণ সম্পত্তির মধ্যেকার স্মৃতিটি পর্যন্ত মুছে গিয়েছে। আরো সাম্প্রতিক কালের কথা নয় বাদই দিলাম, কিন্তু ১৮০১ থেকে ১৮৩১ সালের মধ্যে যে ৩৫,১১,৭৭০ একর সাধারণ জমি কৃষি-জনসমষ্টির অধিকার থেকে অপহরণ করা হয়েছিল এবং সংসদীয় কলা-কৌশলের সাহায্যে জমিদারেরা জমিদারদের দান করেছিল, তার জন্য কি এক কপর্দক ক্ষতিপূরণও তাদের দেওয়া হয়েছিল?

কৃষি-জনসংখ্যার পাইকারি উচ্ছেদসাধনের সর্বশেষ প্রক্রিয়াটি হল তথাকথিত জমি সাফাইয়ের অর্থাৎ জমি থেকে মানুষজনকে ঝেটিয়ে তাড়াবার কর্মকাণ্ড। এই পর্যন্ত যত ইংরেজি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, সেগুলিরই চরম পরিণতি হল এই “জমি সাফাই”। পূর্ববর্তী এক অধ্যায়ে প্রদত্ত আধুনিক অবস্থার চিত্রটিতে আমরা যেমন দেখেছি, যখন সাফাই করার মত স্বাধীন কৃষি-কৰ্মী আর থাকে না, তখন শুরু হয় কুটির “সাফাই”-এর কর্মকাণ্ড, যাতে করে কষি-শ্রমিকেরা যে জমি চাষ করে, সেখানে মাথা গোঁজার ঠাইটুকু পর্যন্ত না পায়। কিন্তু “জমি-সাফাই” বাস্তবে ও সঠিক ভাবে কি বোঝায়, তা আমরা জানতে পাই কেবল আধুনিক কল্পকাহিনীর সেই স্বপ্নরাজ্যে স্কটল্যাণ্ডের হাইল্যাণ্ডস-এ। সেখানে এই প্রক্রিয়াটির বিশেষত্ব হল তার ধারাবাহিক চরিত্র, এক আঘাতে যে-আয়তনে তা সংঘটিত হয় তার ব্যাপকতা ( আয়ার্ল্যাণ্ডেও জমিদারের এক সঙ্গে কয়েকটি করে গ্রাম-সাফাই পর্যন্ত গিয়েছে কিন্তু স্কটল্যাণ্ডে জমিদারেরা এক সঙ্গে হাতে নিয়েছে জার্মান রাজ্যগুলির মত বিরাট বিরাট এলাকা) এবং, সর্বশেষে, সম্পত্তির স্ব-বিশেষ রূপ, যার অধীনে চুরি-করা জমি পর্যন্ত দখলে রাখা যায়।

হাইল্যাণ্ডের ‘কেলট’-রা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল, যে গোষ্ঠী যে-জমিতে বাস, করত, সেই গোষ্ঠী ছিল সেই জমির মালিক। গোষ্ঠীর প্রতিনিধিকে বলা হত তার ‘প্রধান” বা “মহাজন”; সে ছিল কেবল নামে মাত্র সম্পত্তির মালিক, ইংল্যাণ্ডের রানী যেমন ইংল্যাণ্ডের সমস্ত জমির মালিক। ইংরেজ সরকার যখন এই বড় কর্তাদের পারস্পরিক যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং ‘লো-ল্যাণ্ড’-এর সমতলে তাদের নিরন্তর আক্রমণ দমন করতে সক্ষম হল, তখন ঐ গোষ্ঠীপতিরা কোনক্রমেই তাদের প্রথাগত লুঠেরা-বৃত্তি পরিত্যাগ করল না; তারা কেবল তার রূপ পরিবর্তন করল। তাদের নিজেদের কর্তৃত্ববলে তারা তাদের নামমাত্র অধিকারকে রূপান্তরিত করল ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারে এবং যখনি তার ফলে গোষ্ঠীর লোকজনের সঙ্গে তার বিবোধ হত, সে খোলাখুলি বলপ্রয়োগ করে তাদের জমি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে, সেই বিরোধের সমাধান করত। অধ্যাপক নিউম্যান বলেন, “একই ভাবে ইংল্যাণ্ডের যে কোন রাজা দাবি করতে পারেন যে তিনি তার প্রজাদের সাগরে তাড়িয়ে দেবেন।”[২৫] ‘প্রিটেণ্ডার’-এর ( সিংহাসন দাবিদার’-এর) অনুগামীদের সর্বশেষ অভ্যুত্থানের পরে স্কটল্যাণ্ডে যে বিপ্লব শুরু হয় তার প্রথম পর্যায়গুলির ইতিবৃত্ত অনুসরণ করা যায় স্যার জেমস স্টুয়ার্ট[২৬] এবং জেমস এণ্ডার্সনের[২৭] লেখাগুলিতে। আঠারো শতকে বিতাড়িত ‘গেইল’দের (কেলটদের) দেশান্তর গমন নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল, যাতে করে তাদের জোর করে গ্লাসগো ও অন্যান্য শিল্প-শহরে পাঠানো যায়।[২৮] উনিশ শতকে প্রচলিত এই পদ্ধতিটির একটি নমুনা হিসাবে[২৯] সাদারল্যাণ্ডের ডাচেস যে সাফাই চালিয়েছিলেন, তার উল্লেখই যথেষ্ট  হবে। অর্থতত্ত্বে সু-শিক্ষিত এই মহিলাটি সরকারে প্রবেশের পরেই সিদ্ধান্ত করেন যে তিনি একটা আমূল প্রতিকার সংঘটিত করবেন, গোটা দেশটিকে—যার জনসংখ্যা আগেকার কর্মকাণ্ডগুলির ফলে ইতিমধ্যেই ১,৫০,০০০-এ গিয়ে দাড়িয়েছে তাকে পর্যবসিত করবেন একটা মেষ-চারণ-ভূমিতে। ১৮১৪ থেকে ১৮২০ সাল পর্যন্ত এই ১,৫০,০০০ অধিবাসীকে, প্রায় ৩,০০০ পরিবারকে শিকারের মত তাড়া করা হয় এবং নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। তাদের সমস্ত গ্রামগুলিকে ধ্বংস করা হয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয়, তাদের সমস্ত ক্ষেতগুলিকে চারণভূমিতে পরিণত করা হয়। ব্রিটিশ সৈন্যরা এই উচ্ছেদ কাণ্ড সবলে সম্পাদন করে এবং অধিবাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। একজন বৃদ্ধা মহিলা তার কুটির ছেড়ে যেতে অস্বীকার করলে, কুটিরের মধ্যেই আগুনে পুড়ে মারা যান। এই ভাবে এই মহীয়সী মহিলা ৭,৯৪,৩০০ একর জমি অত্মসাৎ করলে, স্মরণাতীত কাল ধরে যে জমি ছিল গোষ্ঠীর সম্পত্তি। উৎপাটিত অধিবাসীদের জন্য তিনি সাগরের তীরে পরিবার-পিছু ২ একর হিসাবে মোট ৬,০০০ একর জমি বরাদ্দ করলেন। এই ৬,০০০ একর জমি এতকাল পতিত পড়েছিল এবং সেগুলি থেকে মালিকদের হাতে কোনো আয় আসত না। এই ‘ডাচেস মহিলাটি তার হৃদয়ের মহানুভবতার দরুন কার্যত এতদূর পর্যন্ত গেলেন যে ঐ জমির জন্য গোষ্ঠীর লোকদের উপরে একর পিছু ২ শিলিং ৬ পেন্স করে ভাড়া ধার্য করে দিলেন, যে-লোকেরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তার পরিবারের জন্য রক্ত ঢেলে এসেছে। গোষ্ঠা-জমির পুরোটাকেই তিনি ভাগ করলেন ২৯টি বৃহদাকার মেষ-ফার্ম’-এ, প্রত্যেকটিতে বসিয়ে দিলেন একটি করে পরিবার-বেশির ভাগই ইংল্যাণ্ড থেকে আমদানি করা খামার চাকর। ১৮৩৫ সালেই ১৫,০০০ গেইলের বদলে ১,৩১,৩০০ ভেড়াকে জায়গা করে দিয়েছে। আদিবাসীদের বাকি অংশ সমুদ্র-তীরে নিক্ষিপ্ত হয়ে মাছ শিকার করে কোন রকমে বেঁচে থাকার চেষ্টায় লিপ্ত হয়। তারা পরিণত হল উভচর প্রাণীতে, এবং, যে কথা একজন ইংরেজ লেখক বলেছেন, বাস করত অর্ধেকটা মাটিতে আর অর্ধেকটা জলে—দুয়েরই আধাআধি যোগ করে।[৩০]

কিন্তু তাদের গোষ্ঠীর “মহাজন”-দের প্রতি তাদের আবেগপূর্ণ ও পার্বত্য দেবভক্তির জন্য ধীর গেইলদের আরো তিক্ত প্রায়শ্চিত্ত করা তখনো বাকি ছিল। তাদের মাছের গন্ধ তাদের “মহাজনদের নাকে গিয়ে পৌছাল। তারা তার মধ্যে কিছু মুনাফার গন্ধ পেল এবং লণ্ডনের বড় বড় মৎস্য-ব্যবসায়ীদের কাছে সমুদ্র-তীর ভাড়া দিয়ে দিল। দ্বিতীয় বারের মত গেইলদের শিকারের মত তাড়া করে দেওয়া হল।[৩১]

কিন্তু, সর্বশেষে, মেষ-চারণ-ভূমির অংশ বিশেষকে রূপান্তরিত করা হল মৃগ সংরক্ষণীতে। সকলেই জানা আছে যে, ইংল্যাণ্ডে কোনো সত্যিকারের বন নেই। বড় বড় লোকের বাগানে যেসব হরিণ থাকে, সেগুলি গৃহপালিত গবাদি পশুর মত শান্তশিষ্ট, লণ্ডনের পৌরপতিদের ( ‘অল্ডারম্যান’-দের) মত স্থূলকায়। সুতরাং স্কটল্যাণ্ডই হল এই “মহৎ আবেগ”-এর শেষ অবলম্বন। ১৮৪৮ সালে সমার্স বলেন, “নোতুন নোতুন বন ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠছে।” এখানে গেইক-এর একধারে আপনি পাচ্ছেন গ্লেনফেশির নোতুন বন; এবং ওখানে আরেক ধারে পাচ্ছেন আর্ড ভেরিকির নোতুন বন। একই লাইনে আপনি পাচ্ছেন ব্ল্যাক মাউন্ট, এক বিশাল পতিত ভূখণ্ড, সম্প্রতি বনে রূপান্তরিত। পূর্ব থেকে পশ্চিমে—আবারভীনের প্রতিবেশ থেকে ওবানের পাহাড়ি অঞ্চল পর্যন্ত—আপনার কাছে এখন প্রসারিত বনের পর বনের এক একটানা লাইন; অন্য দিকে, হাইল্যাণ্ডস-এর অপরাপর অংশে বিরাজ করছে লচ আর্কেইগ, গ্ল্যোরি, গ্লেনমোরিস্ট ইত্যাদি জায়গার নোতুন নোতুন বনগুলি। যেসব নদী-বাহিত উপত্যকায় আগে ছিল মোট কৃষক-গোষ্ঠীর বসতি, সেখানে এখন আমদানি করা হয়েছে ভেড়ার পাল এবং ঐ কৃষকেরা তাড়িত হয়েছে আরো অপকৃষ্ট, আরো অনুর্বর জমিতে জীবিকার সন্ধান করতে। এখন হরিণ, ভেড়ার স্থান দখল করছে এবং তা আবার ছোট প্রজাদের বেদখল করে দিচ্ছে, যারা স্বভাবতই তাড়িত হল আরো অপকৃষ্ট জমিতে এবং আরো চরম দারিদ্র্যের নিষ্পেষণে। হরিণ-বন[৩২] এবং মানুষ জন এক সঙ্গে থাকতে পারে না। হয় একে, নয় ওকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবেই। যেমন গত এক-চতুর্থ শতাব্দী ধরে বন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমন আরো এক-চতুর্থ শতাব্দী ধরে তা বৃদ্ধি পাক, এবং গেইলরা তাদের জন্মভূমি থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক।” হাইল্যাণ্ডস-এর স্বত্বাধিকারীদের মধ্যে এই তৎপরতা কিছু অংশের কাছে একটা আকাঙ্ক্ষা, কিছু অংশের কাছে মৃগয়া-প্রেম… আবার যারা আরো বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন, এমন কিছু অংশের কাছে এটা একটা বৃত্তি যা তারা অবলম্বন করে একমাত্র মুনাফার দিকে নজর রেখে। কারণ এটা একটা ঘটনা যে, একটি পাহাড়-সারিকে মেষ-চারণ হিসাবে ভাড়া দেবার তুলনায় বনের মধ্যে একটি মৃগ-মৃগয়াক্ষেত্র মালিকের কাছে অনেক ক্ষেত্রেই বেশি মুনাফাজনক।… যে শিকারী হরিণ-বনের খোঁজে থাকে, সে কেবল তার টাকার থলির সীমা ছাড়া আর কোনো হিসাবের দ্বারাই তার আর্থিক প্রস্তাবকে সীমিত করে না। নর্মান রাজাদের অনুসৃত নীতি যে দুঃখ-দুর্দশা সৃষ্টি করেছিল, তার তুলনায় হাইল্যাণ্ডস এর উপরে চাপিয়ে দেওয়া দুঃখ-দুর্দশা বড় কম ছিল না। হরিণের বিচরণক্ষেত্র ক্রমেই আরো বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মানুষকে ততই শিকারের মত তাড়া করে সংকীর্ণ থেকে আরো সংকীর্ণ বৃত্তের মধ্যে নিবদ্ধ করা হয়েছে। মানুষের অধিকারগুলিকে একটা একটা করে নাশ করা হয়েছে। এবং অত্যাচারও দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে। আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ায় পতিত জমিগুলি থেকে যেমন গাছপালা ও ঝোপঝাড় সাফ করে ফেলা হয়, তেমনি একটি স্থিরীকৃত নীতি হিসাবেই, একটি কৃষিগত আবশ্যিকতা হিসাবেই, স্বত্বাধিকারীরা মানুষজনকে সাফাই করার এবং ছড়িয়ে দেবার কর্মকাণ্ড অনুসরণ করে থাকে, এবং এই কর্মকাণ্ড চলতে থাকে ধীর-স্থির, ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে। [৩৩]

গীর্জার অধিকারভুক্ত সম্পত্তি লুণ্ঠন, রাষ্ট্রের খাস-জমির প্রতারণামূলক আয়ত্তীকরণ, সাধারণ জমিগুলি সবলে অপহরণ, সামন্ততান্ত্রিক ও গোষ্ঠীগত সম্পত্তির জবর-দখল এবং বেপরোয়া সন্ত্রাস-সৃষ্টির মাধ্যমে সেগুলিকে আধুনিক ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে রূপান্তরিতকরণ-এইগুলিই হল আদিম সঞ্চয়নের সরল-নিস্পাপ বিভিন্ন পদ্ধতি। এইগুলিই ধনতান্ত্রিক কৃষিকার্যের জন্য ক্ষেত্ৰ-জয় করল, জমিকে মূলধনের অংশবিশেষে পরিণত করল এবং শহরের শিল্পগুলির জন্য সৃষ্টি করল একটি মুক্ত” ও আইনের আশ্রয়-বহির্ভূত সর্বহারা-শ্রেণী।

————

১. ক্ষুদ্র মালিকেরা, যারা নিজেদের ক্ষেত নিজেদের হাতে চাষ করত এবং মোটামুটি যোগ্যতা ভোগ করত, তারা তখন জাতির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে করেছিল, যা তারা আজকে করেনা। যদি সে কালের সর্বশ্রেষ্ঠ পরিসংখ্যানমূলক লেখকদের বিশ্বাস করা যায়, তা হলে অন্তত ১০৬০,০০০ স্বত্বাধিকারী, তাদের পরিবারবর্গ সহ, নিশ্চয়ই ছিল সমগ্র জনসংখ্যার এক-সপ্তমাংশ; তারা তাদের জীবিকা সংগ্রহ করুত নিঃশর্ত স্বত্বভুক্ত ছোট ঘোট জমি থেকে। এই ক্ষুদে জমিদারদের গড় আয় ছিল বছরে ৬০ থেকে ৭০ পাউণ্ড। হিসাব করে দেখা গিয়েছিল যে, যারা নিজেদের জমি চাষ করত, তাদের সংখ্যা যারা অপরের জমি চাষ করত, তাদের চেয়ে বেশি ছিল। (মেকলে, ‘হিস্টরি অব ইংল্যাণ্ড, ১ম সং, পৃঃ ৩৩৩, ৩৩৪)। এমন কি সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ তৃতীয় ভাগেও ইংল্যাণ্ডের ৪ ভাগ মানুষ ছিল কৃষিজীবী (ঐ, ৪১৩)। আমি এখানে মেকলেকে উদ্ধৃত করছি কেননা ইতিহাস-বিকৃতকারী এই লোকটি এই ধরনের তথ্য যথাসম্ভব কম করেই দেখাবেন।

২. আমাদের ভুললে চলবে না যে, এমন কি ভূমিদাসও কেবল তার বাড়ি সংলগ্ন জমিটির মালিক, যদিও কর-প্রদানকারী মালিক ছিলনা, সেই সঙ্গে সাধারণ জমিরও সহ-অধিকারী ছিল। “Le paysal ( in Silesia, under Frederick ll.) est scrf.” যাই হোক, এই ভূমিদাসেরা সাধারণ-জমিতে অধিকার ভোগ করত। “On n’a pas pu encore engager le. Silesicns au partage des communes tandis que dans la Nouvelle Marche, il n’y a guere de village ou ce partage ne soit exscute avec le plus grand succes.” ( Mirabeau : “De la Monarchie Prussienne.’ Londres, 1788, t. ii. pp. 125, 126.)।

৩, জাপান তার ভূমি-সম্পত্তির বিশুদ্ধ সামন্ততান্ত্রিক সংগঠন ও সুকুমার সংস্কৃতি সহ আমাদের সমস্ত ইতিহাস বইয়ের তুলনায় ইউরোপীয় মধ্যযুগের ঢের বেশি খাঁটি ছবি উপস্থিত করে; তার কারণ আমাদের বইগুলি লেখা হয়েছিল বুর্জোয়া সংস্কারের প্রভাবে। মধ্যযুগের বিনিময়ে উদার হওয়া খুবই সুবিধাজনক।

৪. টমাস মোর তার ‘ইউটোপিয়া’য় বলেন, “আপনাদের যে ভেড়াগুলি ছিল এত শান্ত ও নিরীহ এবং এত অল্প খেয়ে খুশি, সেগুলি, আমি শুনতে পেলাম, এখন সেগুলি হয়ে উঠেছে এমন রাক্ষস, এমন বুনো যে তারা খেয়ে ফেলছে, গিলে ফেলছে খোদ মানুষ গুলোকেই।” লণ্ডন ১৮৬৯, পৃঃ ৪১।

৫. স্বাধীন, সম্পন্ন কৃষক-সমাজ এবং পদাতিক বাহিনীর মধ্যেকার সম্পর্ক বেকন তুলে ধরেছেন। ৫. শ্রেষ্ঠ বিচারশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের সাধারণ মত এই যে যুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রধান শক্তি নিহিত থাকে তার পদাতিক বাহিনীর মধ্যে। এবং ভালো পদাতিক বাহিনী গঠন করতে হল দাসসুলভ ও অভাবগ্রস্ত পরিবেশে কোনক্রমে বেড়ে ওঠা লোকদের দিয়ে চলবে না, চাই স্বাধীন ও প্রাচুর্যপূর্ণ পরিবেশে লালিত লোকদের। সুতরাং যদি কোন রাষ্ট্র অভিজাত ও ভদ্রলোকের জন্যই সবচেয়ে বেশি করে থাকে এবং চাষী আর হলধরেরা কেবল তাদের কাজের লোক বা মজুর হিসাবে বা কেবল কুঁড়েঘরের বাসিন্দা (যা ঘরবাসী ভিখারী ছাড়া আর কিছু নয়) হিসাবেই থাকে, তা হলে সেখানে হয়ত একটা ভাল অশ্বারোহী বাহিনী হতে পারে, কিন্তু কিছুতেই একটা ভালো পদাতিক বাহিনী হতে পারে না। এবং এটা দেখা যায় ফ্রান্সে ও ইতালীতে এবং আরো কিছু বিদেশী জায়গায়, যার জন্য সেখানে পদাতিক যোদ্ধা হিসাবে নিয়োগ করতে হয় সুইজার ইত্যাদিদের ভাড়াটে দল; এবং তা থেকে যা পরিণতি হয়, ঐসব দেশে লোকসংখ্যা বেশি কিন্তু সৈন্যসংখ্যা খুবই কম। (দি রেইন অব হেনরি দি সেভেন্থ’, কেনেট-এর ইংল্যাণ্ড থেকে আক্ষরিক পুনর্মুদ্রণ, ১৭১৯, লণ্ডন, ১৮৭৩, পৃঃ ৩০৮)।

৬. ডঃ হান্টার, ঐ, পৃঃ ১৩৪। পুরনো আইন অনুসারে যে-পরিমাণ জমি বরাদ্দ করা হত, আজকের দিন মজুরদের পক্ষে তা অত্যধিক বলে বিবেচিত হবে এবং তা বরং তাদের ছোট কৃষি-মালিকে রূপান্তরিত করবে। (জর্জ রবার্টস: ‘দি সোশ্যাল হিস্ট্রি অব দি পিপল’ইন পাস্ট সেঞ্চুরিজ,, পৃঃ ১৮৪, ১৮৫)।

৭. “ ‘টাইদ (রাষ্ট্রকে প্রদত্ত খাজনা : ফসলের এক-দশমাংশ) হিসাবে প্রাপ্ত ভাণ্ডারে গরিবদের অংশীদারিত্বের অধিকার প্রাচীন বিধি-বিধানের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।” ( টাকেট:‘এ হিষ্ট্রি অব দি পাস্ট অ্যাণ্ড প্রেজেন্ট অব দি লেবার, পপুলেশন, ১৮৪৬, পৃ: ৮৪-৮০৫)।

৮. উইলিয়ম কবেট : ‘হিষ্ট্রি অব প্রোটেস্ট্যান্ট রিফর্মেশন, পৃ: ৪৭১।

৯. প্রোটেস্ট্যান্টবাদের “সারমর্ম অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে নিম্নোক্ত বিষয়টিতেও দেখা যায় : ইংল্যাণ্ডের দক্ষিণে কয়েকজন জমির মালিক এবং বিত্তবান কৃষি-মালিক একটি বৈঠকে মিলিত হয়ে এলিজাবেথের গরিব আইনের সঠিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে দশটি প্রশ্ন প্রস্তুত করে। এই প্রশ্নগুলিকে তারা পেশ করে সেই যুগের একজন প্রসিদ্ধ বিধান-বিশেষজ্ঞের সার্জেন্ট গিগের বিবেচনার জন্য, (পরে প্রথম জেমস-এর আমলে যিনি বিচারক হয়েছিলেন। প্রশ্ন ৯ : প্যারিশের অধিকতর বিত্তবান কৃষি-মালিকদের কেউ কেউ একটি সুকৌশল পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যার সাহায্যে এই আইনটিকে (এলিজাবেথের ৪৩ তম আইনটিকে) কার্যকরী করার তাবৎ ঝামেলা পরিহার করা যায়। তারা প্রস্তাব করেছেন যে আমরা প্যারিশে একটি কারাগার স্থাপন করব এবং তার পরে এলাকায় একটি নোটিস দেব যে যদি কেউ এই প্যারিশের গরিবদের ভাড়া খাটাতে চান, তা হলে তারা একটা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে সীল-করা খামে প্রস্তাব দিন তারা কত কম দামে তাদেরকে আমাদের হাতে তুলে দিতে চান এবং তাঁদের এই কর্তৃত্ব দেওয়া হবে যে তারা এমন যে-কাউকে প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন, যে-লোক এই কারাগারে আবদ্ধ থাকে নি। এই পরিকল্পনার প্রস্তাবকদের ধারণা যে আশেপাশের কাউন্টিগুলিতে এমন অনেক ব্যক্তি পাওয়া যাবে, যারা শ্রম করতে অনিচ্ছুক হয়ে এবং বিনা শ্রমে জীবন-কাটাবার জন্য কোন জোত বা জাহাজ নেবার মত সঙ্গতি বা ক্রেডিট না থাকায় প্যারিশের কাছে একটি অতি সুবিধাজনক প্রস্তাব করতে পারে। যদি কোন ঠিকাদারের অধীনে গরিবদের মধ্যে কেউ মারা যায়, তা হলে পাপটা হবে তার, কেননা প্যারিশ তাদের প্রতি কর্তব্য করেছে। কিন্তু আমাদের আশংকা, বর্তমান আইনটিতে এই ধরনের সুবিবেচনাপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ নেই; কিন্তু আপনাকে জানাচ্ছি যে, যে কাউন্টির বাকি ভূমি-স্বত্বভোগীরা এবং নিকটবর্তী “খ” কাউন্টির ভূমি-স্বত্বভোগীরা খুব চটপট মিলিত হবে তাদের সদস্যদের এমন একটি আইন প্রস্তাব করার নির্দেশ দিতে, যা প্যারিশকে ক্ষমতা দেবে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে গরিবদের কারারুদ্ধ করে রাখবার এবং কাজ করবার চুক্তি করতে এবং এই মর্মে ঘোষণা করতে যে, কোনো লোক যদি এই ভাবে কারারুদ্ধ হতে অস্বীকার করে, তা হলে সে কোনো ত্রাণ-সাহায্যের দাবিদার হতে পারবে না। আশা করা যায়, এর ফলে দুর্দশাগ্রস্ত লোকেরা ত্রাণ-সাহায্য চাওয়া থেকে নিবৃত্ত হবে” (আর ব্ল্যাকি, “দি হিষ্ট্রি অব পলিটিক্যাল লিটারেচর ফ্রম দি অলিয়েস্ট টাইমস”, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ৮৪-৮৫)। স্কটল্যাণ্ডে ভূমিদাসপ্রথার অবসান ঘটেছিল ইংল্যাণ্ডের কয়েক শতাব্দী পরে। এমনকি ১৬৯৮ সালেও সালটুন-এর ফ্লেচার স্কচ পার্লামেন্টে ঘোষণা করেন, “স্কটল্যাণ্ডে ভিখারীর সংখ্যা ২,০০,০০০-এর কম নয়। নীতিগত ভাবে একজন প্রজাতন্ত্রী হিসাবে যে-প্রতিকার আমি সুপারিশ করতে পারি, তা হলো পুরনো ভূমিদাস-প্রথাকে ফিরিয়ে আনা, যারা নিজেদের জীবিকার ব্যবস্থা নিজেরা করতে পারে না তাদের সকলকে আবার গোলাম করা।” ইডেন তাঁর পূর্বোক্ত বইয়ে (পৃঃ ৬০-৬১) বলেন, “ভূমিদাসত্বের হ্রাসপ্রাপ্তি থেকেই গরিবদের উৎপত্তি। আমাদের স্বদেশীয় গরিবদের মাতা এবং পিতা হল শিল্প এবং বাণিজ্য। আমাদের স্কচ প্রজাতন্ত্রীর মত ইডেনও কেবল একটিমাত্র ভুল করেছেন; ভূমিদাসত্বের অবসান কৃষি-শ্রমিককে সর্বহারা করেনি, তাকে সর্বহারা করেছে জমিতে তার সম্পত্তির অবসান; প্রথমে করেছে সর্বহারা এবং পরে ভিখারী। ফ্রান্সে যেখানে সম্পত্তি থেকে কৃষি-শ্রমিকের উৎপাদন ঘটেছিল অন্য ভাবে, সেখানে ১৫৭১ সালের মৌলিন্স-এর অধ্যাদেশ’ এবং ১৮৫৬ সালের অনুশাসন ইংল্যাণ্ডের গরিব-আইনগুলির স্থান গ্রহণ করে।

১০. অধ্যাপক রজার্স, যদিও ছিলেন প্রোটেস্ট্যান্ট গোঁড়ামির উর্বরক্ষেত্র অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থতত্ত্বের অধ্যাপক, তিনি কিন্তু তার “কৃষির ইতিহাস”-এর ভূমিকায় “রিফর্মেশন”-এর ফলে সাধারণ জনসমষ্টির সর্বস্বান্ত হবার ঘটনার উপরে জোর দিয়েছেন।

১১. “এ লেটার টু স্যার টি সি বানবেরি বার্ট অন দি হাই প্রাইস অব প্রভিশনস, বাই এ সাফোক জেন্টেলম্যান”, ১৭৯৫ পৃ: ৪। এমনকি বৃহৎ জোতের প্রচণ্ড প্রবক্তা, “ইনকুইরি ইনটু দি কানেকশন বিটুইন দি প্রেজেন্ট প্রাইস অব প্রভিশনস”, ১৭৭৩, পৃঃ ১৩৯, বলেন, আমি সত্যই আমাদের চাষী-সম্প্রদায়ের অন্তর্ধানের জন্য আক্ষেপ করি—সেই লোকগুলি যারা বাস্তবিক পক্ষে এই জাতীর স্বাধীনতাকে ঊর্ধ্বে তুলে বেখেছিল; আমার দেখে দুঃখ হয়, তাদের জমি-জমা একচেটিয়া-অধিকার-বিস্তারী জমিদারদের হাতে চলে গিয়েছে, যারা তা ইজারা দিয়েছে ছোট ছোট কৃষকদের কাছে এমন সব শর্তে যেন এই কৃষকেরা তাদের ক্রীতদাস, যে-কোনো খারাপ ব্যাপারে প্রভুদের হুকুম তামিলের জন্য সর্বদা প্রস্তুত।

১২. এই বুজোয়া নায়কটির ব্যক্তিগত নৈতিক চরিত্র সম্পর্কে নানা ব্যাপারের মধ্যে একটি : আয়ার্ল্যাণ্ডে লেডি অর্কনিকে বড় বড় জমি দান বাজার প্রণয়ের এবং মহিলার প্রভাবের প্রকাশ্য দৃষ্টান্ত লেডি অর্কনির সোহাগপূর্ণ পরিচর্যাই নাকি “ফি লেবিয়োরাম মিনিষ্টিরিয়া” (ব্রিটিশ মিউজিয়ামে’-এ স্লোয়ান-পাণ্ডুলিপি-সংকলন দ্রষ্টব্য, নং ৪২২৪, পাণ্ডুলিপিটির নাম “ক্যারেক্টার অ্যাণ্ড বিহেভিয়ার অব কিং উইলিয়ম।” এটা নানা কৌতুহলকর বিবরণে পরিপূর্ণ।)

১৩. “ ‘ক্রাউন এস্টেট (খাস-জমি )-গুলির বে-আইনি বিলিবিক্রয় ইংল্যাণ্ডের ইতিহাসের কলংকময় অধ্যায়গুলির মধ্যে একটি জাতির বিরুদ্ধে এক প্রকাণ্ড জালিয়াতি।” (এফ. ডবলু নিউম্যান, লেকচার্স অন পলিটিক্যাল ইকনমি’, পৃঃ ১২৯, ১৩০)। [ বিশদ বিবরণের জন্য দ্রষ্টব্য : ‘আওয়ার ওল্ড নোবিলিটি।-নোড্রেস ওরাইজ লণ্ডন, ১৮৭৯-এফ, এঙ্গেলস ]

১৪. উদাহরণস্বরূপ পড়া যায় : ই, বার্ক-এর পুস্তিকা-বেড় ফোর্ডের ডিউক বংশ সম্পর্কে, যার বংশধর হলেন লর্ড জন রাসেল, “উদারনীতিবাদের টুনটুনি পাখি”।

১৫ জোত-মালিকেরা কুঁড়েঘরবাসীদের নিষেধ করে তাদের নিজেদের ও তাদের সন্তানদের ছাড়া আর কোন জীবিত প্রাণী রাখতে। তারা অজুহাত দেয় যে এই সকল জন্তু ও হাঁস-মুরগী রাখলে সেগুলিকে খাওয়াবার জন্য তার গোলাবাড়ি থেকে চুরি করবে। তারা আরও বলে যে কুঁড়েঘরে বসবাসকারীদের গরিব করে রাখলে তাদের কর্মক্ষম রাখা যাবে। কিন্তু, আমার বিশ্বাস, প্রকৃতপক্ষে জোতমালিকরা তাদের সকল সাধারণ জমি করায়ত্ত করতে চায়। (“A Political Inquiry into the Consequence of Enclosing Waste Lands, London, 1785, p. 75 )

১৬. ইডেন Lc. ভূমিকা।

১৭. মূলধন জোত’: ময়দা-ব্যবসা এবং শস্যেৰু মহার্ঘতা সম্পর্কে দুটি পত্র, জনৈক ব্যবসায়ীর দ্বারা লিখিত, লণ্ডন, ১৭৬৭, পৃঃ ১৯, ২০।

১৮. বণিক-জোত’ : ‘অ্যান এনকুইরি ইনটু দি কজেস অব দি প্রেজেন্ট হাইপ্রাইস অব প্রভিশনস’, লণ্ডন, ১৭৬৭, পৃঃ ১১ টীকা। অনামী প্রকাশিত এই চমৎকার বইটির লেখক রেভাঃ নাথানিয়েল ফরস্টার।

১৯ টমাস রাইট : ‘এ শর্ট অ্যাড্রেস টু দি পাব্লিক অন দি মনোপলি অব লার্জ ফার্মস, ১৭৭৯; পৃঃ ২, ৩।

২০. রেভাঃ অ্যাডিংটন ‘ইনকুইরি ইনটু দি রিজিনস ফর অল্প এগেনস্ট এনক্লোজিং ওপেন ফিস, লণ্ডন, ১৭৭২, পৃ ৩৭।

২১. ডঃ আর প্রাইস, রিভার্শনারি পেমেন্টস’, পৃঃ ১৫১। ফস্টার, অ্যাডিংটন, কেন্ট, প্রাইস এবং জেমস এণ্ডার্সনকে পড়া ও তুলনা করা উচিত তোষামুদে ম্যাক কুলকের বকবকানির সঙ্গে তার লিটারেচর অব পলিটিক্যাল ইকনমি’ নামক ‘ক্যাটালগে। লণ্ডন, ১৮৪৫।

২২. ঐ, পৃঃ ১৪৭।

২৩. আমাদের প্রাচীন রোমের কথা মনে পড়ে। ধনীরা অবিভক্ত দেশের বৃহত্তর অংশের দখল পেয়েছিল। তারা বিশ্বাস করেছিল এই জমিগুলি আবার তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে না এবং সেই জন্য তাদের জমির লাগোয়া গরিবদের কিছু প্লট তারা কিনে নিয়েছিল, এবং কিছু নিয়েছিল গায়ের জোরে; এই ভাবে তারা ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত টুকরো টুকরো ক্ষেতের বদলে সুবিস্তৃত জমিতে চাষ করতে লেগেছিল। তার পরে তারা কৃষিকাজে ও গো-পালনে ক্রীতদাস নিয়োগ করেছিল, কেননা স্বাধীন লোকদের সামরিক কাজে নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ক্রীতদাসদের মালিকানা তাদের বিপুল লাভ এনে দিল, কেননা সামরিক কাজ থেকে নিষ্কৃতি পাবার দরুন তারা অবাধে বংশবৃদ্ধি করতে এবং গাদায় সন্তান উৎপাদন করতে পারত। এইভাবে এই পরাক্রান্ত লোকেরা সমস্ত সম্পদ নিজেদের দিকে টেনে নিল এবং গোটা দেশ ক্রীতদাসে ছেয়ে গেল। অন্য দিকে, ইতালীয়দের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকল; দারিদ্র্য, করের বোঝ এবং সামরিক কাজ তাদের ধ্বংস করে দিল। এমনকি যখন শান্তি এল, তখন তারা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়তায় কবলিত হল, কারণ ধনীদের হাতে ছিল জমির দখল এবং তারা সেখানে স্বাধীন লোকদের নিযুক্ত না করে, নিযুক্ত করত ক্রীতদাসদের। ( আপ্পিয়ান : গৃহযুদ্ধ )। এই অনুচ্ছেদটিতে বিবৃত হয়েছে লিসিনাস-এর বিধান প্রবর্তনের আগেকার পরিস্থিতি। সামরিক কাজ, যা রোমের প্লিবিয়ানদের ধ্বংস বহুল মাত্রায় ডেকে এনেছিল, তারই সাহায্যে আবার শালে মেন স্বাধীন জার্মান চাষীদের ও ভূমিদাস ও খৎবন্দীদাসে পরিণত করলেন।

২৪. “অ্যান ইনকুইরি ইনটু দি কানেকশন বিটুইন দি প্রেজেন্ট প্রাইস অব প্রভিশনস, পৃ ১২৪, ১২৯। কাজের লোকেরা বিতাড়িত হল তাদের কুটির থেকে। বাধ্য হল কাজের খোঁজে শহরে যেতে। কিন্তু তাতে ঘটল বৃহত্তর উদ্বৃত্ত এবং এই ভাবে বর্ধিত হল মূলধন।” (“দি পেরিলস অব দি নেশন’, দ্বিতীয় সংস্করণ, লণ্ডন, ২৮৪৩, পৃ: ১৪।

২৫. ঐ, পৃঃ ১৩২।

২৬. স্টুয়ার্ট বলেন, আপনি যদি এই সব জমির খাজনা (তিনি ভুল করে এর মধ্যে গোষ্ঠী-প্রধানকে প্রদত্ত করও অন্তর্ভূক্ত করেন তার আয়তনের সঙ্গে তুলনা করেন, তা হলে তা খুব কম বলে মনে হবে। আপনি যদি তাকে ঐ জোতের দ্বারা পরিপোষিত সংখ্যার সঙ্গে তুলনা করেন, তা হলে আপনি দেখতে পাবেন হাইল্যাণ্ডসে একটি জমি সম্ভবত একটি ভাল ও উর্বর প্রদেশে অবস্থিত একই মূল্যের একটি জমির চেয়ে দশগুণ বেশি লোককে পোষণ করে। প্রিন্সিপলস অব পলিটিকাল ইকনমি, প্রথম খণ্ড, পৃঃ ১০৪)।

২৭. জেমস এণ্ডার্সন : “অবজার্ভেশনস অন দি মিনস অব একসাইটিং এ স্পিরিট অব ন্যাশনাল ইণ্ডাষ্ট্রি,” এডিনবরা, ১৭৭৭।

২৮. ১৮৬০ সালে বলপূর্বক উৎসাদিত লোকদের ধোকা দিয়ে কানাডায় রপ্তানি করা হয়েছিল। কেউ কেউ পাহাড়ে এবং নিকটবর্তী দ্বীপগুলিতে পালিয়ে গিয়েছিল।

২৯. অ্যাডাম স্মিথের টাকাকা্র বুকানন বলেন, স্কটল্যাণ্ডের হাইল্যাণ্ডসে সম্পত্তির প্রাচীন ব্যবস্থা প্রত্যহই ভাঙ্গা হচ্ছে। উত্তরাধিকার সূত্রে স্বত্বভোগীকে না দিয়ে জমিদার এখানে যে সবচেয়ে বেশি অর্থ দেয় তাকেই জমির বন্দোবস্ত দেয় আর সে যদি হয় একজন উন্নয়নকারী, তা হলে সঙ্গে সঙ্গেই চালু করে কষির এক নোতুন প্রণালী। “ছোট ছোট প্রজা ও শ্রমিকদের দিয়ে ছেয়ে থাকা জমি অধ্যুষিত ছিল তার ফসলের অনুপাতে, কিন্তু নোতুন উন্নততর কৃষিকার্য এবং উচ্চতর খাজনার অধীনে সবচেয়ে কম খরচে পাওয়া যায় সম্ভাব্য সবচেয়ে বেশি ফসল এবং অপ্রয়োজনীয় কর্মীরা অপসারিত হবার ফলে জনসংখ্যা হয় হ্রাসপ্রাপ্ত; কত লোককে জমি পোষণ করবে, তা নয়, কত লোককে তা নিয়োগ করবে, সেটাই হয় মাত্রা। অপসারিত প্রজারা কাছাকাছি শহরে জীবিকার সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। (ডেভিড বুকানন : ‘অবজার্ভেশনস অন অ্যাডাম স্মিথস ওয়েলথ অব নেশনস’, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১৪৪ )। স্কচ জমিদারের পরিবাগুলিকে উচ্ছেদ করত যেন তারা আগাছার ঝাড় উপড়ে ফেলেছে এবং তারা গ্রামবাসী ও গ্রামবাসীদের প্রতি আচরণ করত যেমন জানোয়ারদের দ্বারা উত্যক্ত হয়ে কুদ্ধ ভারতীয়রা আচরণ করে বাঘে ভরা জঙ্গলের প্রতি। মানুষকে বিনিময় করা হত ভেড়ার পশম বা মাংসের সঙ্গে কিংবা তার চেয়েও সস্তা কিছুর সঙ্গে। তা হলে মোগলরা যখন চীনের উত্তর দিকের প্রদেশগুলিতে প্রবেশ করে সেখানকার লোকজনকে উচ্ছেদ করে। সেই জায়গাগুলিকে রূপান্তরিত করতে চেয়েছিল পশুচারণে, তখন তাদের উদ্দেশ্যটা কি আর এমন খারাপ ছিল? এই একই ব্যবস্থা তো হাইল্যাণ্ডের অনেক জমিদার প্রয়োগ করেছে তাদের স্বদেশবাসীদের বিরুদ্ধে। (জজ এনসর: ইনকুইরি… পপুলেশন অব নেশনস’, লণ্ডন, ১৮১৮, পৃঃ ২১৫, ২১৬)।

৩০. যখন সাদারল্যাণ্ডের বর্তমান ডাচেস ‘আংকল টমস কেবিন’-এর লেখিকা শ্ৰীমতী বীচার-কে মহা ধুমধামে লণ্ডনে অভ্যর্থনা জানিয়ে ছিলেন আমেরিকান রিপাব্লিকের নিগ্রো ক্রীতদাসদের প্রতি তার সহানুভূতি দেখাবার জন্য, যে সহানুভূতি তিনি ইচ্ছা করেই দেখাতে ভুলে গিয়েছিলেন তাঁর সহ-অভিজাতবর্গের প্রতি-গৃহ যুদ্ধের সময়ে যখন ইংল্যাণ্ডের প্রত্যেকটি মহৎ হৃদয় স্পন্দিত হয়েছিল দাস-মালিকদের জন্য, তখন আমি নিউইয়র্ক ট্রিবিউনে পত্রিকায় সাদারল্যাণ্ডের ক্রীতদাসদের সম্পর্কে তথ্যাদি প্রকাশ করেছিলাম। আমার লেখাটি একটি স্কচ পত্রিকায় পুনমুদ্রিত হয়েছিল এবং তার ফলে ঐ পত্রিকার সঙ্গে সাদারল্যাণ্ডের স্তাবকদের বেশ একটা বিতর্ক শুরু হয়েছিল।

৩১. এই মৎস্য-ব্যবসায়ের কৌতুহলকর বিবরণ ‘মিঃ ডেভিড আকু হার্টস পোর্টফোলিও-তে সবিস্তারে পাওয়া যাবে। নাসাউ ডবল সিনিয়র তার ইতিপূর্বে উধৃত গ্রন্থে (মৃত্যুর পরে প্রকাশিত) সাদারল্যাণ্ডশায়ারের কর্মকাণ্ডকে মানুষের স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে কল্যাণকর সাফাই-অভিযান’ বলে বর্ণনা করেছেন।’ (ঐ)।

৩২. স্কটল্যাণ্ডের হরিণ-বনগুলিতে একটিও গাছ ছিল না। ভেড়াগুলোকে কেবল সাড়া পাহাড়গুলিতে এদিক-ওদিক তাড়িয়ে বেড়ানো হত; এবং এগুলোকে বলা হত। হরিণ-বন এমনকি গাছ-লাগানন বা সত্যিকার বন-বচনাও নয়।

৩৩. রবার্ট সমার্স : লেটার্স ফ্রম দি হাইল্যাণ্ডস : অর দি ফ্যমিন অব ১৮৪৭, লন, পৃঃ ১২-২৮। এই চিঠিগুলি গোড়ায় বেরিয়েছিল ‘টাইমস পত্রিকায়। ইংরেজ অর্থনীতিকরা অবশ্য গেইলদের এই দুর্ভিক্ষকে ব্যাখ্যা করলেন তাদের জনসংখ্যার মাত্রাতিরিক্ত বাহুল্যের সাহায্যে, তারা তাদের খাদ্য সরবরাহের উপরে চাপ দিচ্ছিল। জমি-সাফাই, বা জার্মানিতে যাকে বলা হয় ‘বাউএন লেগেন’, জার্মানিতে শুরু হয় ৩০ বছরের যুদ্ধের পরে এবং ১৭৯০ সাল পর্যন্তও কুর্সাসেন-এ কৃষক-বিদ্রোহ ঘটায়। বিশেষ করে পূর্ব-জার্মানিতে সাফাইয়ের প্রকোপ লক্ষিত হয়। অধিকাংশ প্রুশীয় প্রদেশে, দ্বিতীয় ফ্রেডরিক সর্বপ্রথম কৃষকদের সম্পত্তির অধিকারকে সুরক্ষিত করেন। সাইলেসিয়া বিজয়ের পরে তিনি জমিদারদের বাধ্য করেন কুটির, গোলাবাড়ি ইত্যাদি পুনর্নির্মাণ করতে। তিনি সেনাবাহিনীর জন্য সৈন্য এবং কোষাগারের জন্য কর চাইলেন। বাকি বিবরণের ফ্রেডরিকের আর্থিক প্রণালী ও স্বৈরতান্ত্রিক উচ্ছংখলা, আমলতন্ত্র ও সামন্ততন্ত্রের অধীনে কৃষকের মনোম জীবন ইত্যাদির জন্য তাঁর অনুরাগী মিরাবো থেকে নিম্নেদ্ধত অনুচ্ছেদটি পঠিতব্য: Le in fait donc une des grandes richesses du cultivateur dans le Nord de l’Altemagen, Malheureusement pour l’espece humaine, ce n’est qu’une ressource contre la misere et non un moyen de bien-etre. Les impots directs, les corvees, les servitudes de tout genre, ecrosent le cultivateur allemand, qui paie encore des impots indirects dans tout ce qu’il achete…et pour comble de ruine, il n’ose pas vendre ses productions ou et comme il le veut; il n’ose pas acheter ce dont il a besoin aux marchands qui pourraient le lui livrer au meilleur prix. Toutes ces causes le ruinent inscnsiblement, et il se trouverait hors d’etat de payer les impots directs a l’echeance sans la filerie; elle lui offre une ressource en occupant utilement sa femme, ses enfants, ses servants, ses valets, et lui-memc; mais quelle penible vie, meme aidee de ce secours. En ete, il travaille comme un forcat au labour. age et a la recolte; il se couche a 9 heures et se leve a deux pour suffire aux travaux; en hiver il devrait reparer ses forces par un plus grand repos; mais il manquera de grains pour le pain et les dit :usomailles, il se defait-des degrees qu’il faudrait voudre pour payer les impots. Il faut donc filer pour suppleer a ce vide… il fauty apporter la plus grande assiduite. Aussi le paosan se couche-til en hiver a minuit, une heure, et se leve a cinq ou six : yu bien il se couche a neuf a neuf, et es leve a deux, et cela tous les jours de la vie si ce n’est le dimanche. Ces exces de veille et de travaii usent la nature humaine, et de la vien qu’hommes et femmes vieillissent beaucoup plutot dons les campagnes que dans les villes.” ( Mirabeau, 1. c., t. III. pp. 212 sqq.)

রবার্ট সমার্স-এর পূর্বোল্লিখিত বইটি প্রকাশের ১৮ বছর পরে, ১৮৬৬ সালের এপ্রিল মাসে, অধ্যাপক লিয়োন লেভি ‘সোসাইটি অব আর্টস-এ মেষ-চারণভূমির মৃগ বনে রূপান্তরের উপরে একটি বক্তৃতা করেন, যাতে তিনি স্কটিশ হাইল্যাণ্ডে ঘনায়মান সর্বনাশের ছবি আঁকেন। তিনি বলেন, “নিজনীকরণ এবং মেষ-চারণ ক্ষেত্রকে মৃগবনে রূপান্তরীকরণ—এই দুটি হল বিনা-ব্যয়ে আয়ের সর্বাপেক্ষা সুবিধাজনক পন্থা। মেষ চারণক্ষেত্রকে মৃগ-বনে রূপান্তরিত করা হাইল্যাণ্ডে বহুল প্রচলিত। জমিদারেরা একদিন যেমন মানুষদের নির্বাসিত করেছিল, আজ তেমন মেষদের নির্বাসিত করে নোতুন প্রজাদের স্বাগত জ্ঞাপন করে-বন্য পশু ও পালকযুক্ত পাখি। একজন ফফর শায়ারে ডালহৌসির আর্লের জমিদারি থেকে জন ও গ্রোটস অবধি হেঁটে যেতে পারেন, একবারও বনভূমি পরিত্যাগ না করে। এই বনগুলির অনেকগুলিতে শেয়াল, বন বিড়াল, পশমি-নেউল, নেউল, খাটাশ এবং আল্পাইন শশক বেশ সুপ্রাপ্য; অন্যদিকে ইদুর, কাঠবিড়ালী ও খরগোশ গ্রামে গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে বিরাট বিরাট এলাকা, যে গুলিকে তথ্যগত বিবরণীতে বর্ণনা করা হয়েছে অতি উৎকৃষ্ট সমৃদ্ধ জমি হিসাবে, সেগুলিকে সর্বপ্রকার কৃষি ও উন্নয়ন থেকে রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে এবং নিয়োজিত করা হয়েছে মুষ্টিমেয় মানুষের বছরে সামান্য কিছুদিনের কৌতুকের জন্য। ১৮৬৬ সালের ২রা জুনের ‘ইকনমিস্ট পত্রিকা লিখেছে, ‘সাদারল্যাণ্ডের একটি সবচেয়ে সুন্দর মেষ-চারণক্ষেত্র, এ বছর যার ইজারা শেষ হবার পরে বাৎসরিক ১,০০০ পাউণ্ড খাজনায় বন্দোবস্ত দেবার প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেই মেষ-চারণক্ষেত্রটিকে রূপান্তরিত করা হচ্ছে মৃগ-বনে। এখানে আমরা প্রত্যক্ষ করছি সামন্ততন্ত্রের আধুনিক প্রবৃত্তিগুলি আজও কাজ করছে সেদিনের মত, যেদিন নর্মান-বিজেতা: ধ্বংস করেছিল তিরিশটি গ্রাম—সৃষ্টি করতে নয়া বন। ২০ লক্ষ একর সম্পূর্ণ রূপে পতিত’ অথচ তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে স্কটল্যাণ্ডের সবচেয়ে উর্বর সব জমি। গ্লেন্টিট-এর প্রাকৃতিক দুর্বাদল ছিল পারে সবচেয়ে পুষ্টিকর ঘাস। বেন অল্ডারের হরিণ-বন ছিল বহু-বিস্তৃত ব্যাডেনক অঞ্চলের সর্বোত্তম বিচরণক্ষেত্র; ব্ল্যাক মাউন্টের একটা অংশ ছিল স্কটল্যাণ্ডে কালো-মুখো ভেড়ার সবচেয়ে ভাল চারণক্ষেত্র। নিছক কৌতুক-ক্রীড়ার জন্য স্কটল্যাণ্ডের কী বিরাট আয়তন জমিকে অনাবাদি ফেলে রাখা হয়েছে, তা বোঝা যায় যখন মনে করা যায় যে তা সমগ্র পার্থের সমান। বেন অল্ডারের বন-সম্পদের পরিমাণ থেকে কিছুটা ধারণা করা যায় এই সবলে আরোপিত উষরতা থেকে কী বিরাট ক্ষতি হয়েছে। এই জমি ১৫০০০ ভেড়ার তৃণ যোগাত। সমস্ত বনভূমিই অনুৎপাদনশীল। জার্মান সাগরের তলায় তা ডুবে থাকলেও একই ব্যাপার হত।”এই ধরনের তৈরী-কা উষরতা বা মরুভূমি আইনসভার সুদৃঢ় হস্তক্ষেপের সাহায্যে প্রতিরুদ্ধ হওয়া উচিত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *