২৬ মে, বুধবার ১৯৭১
আজ লেবুগাছ আনতে যাবার কথা ছিল, কিন্তু শরীফ দুপুরে অফিস থেকে ফিরে জানাল বিকেলে মিনিভাইদের বাসায় যেতে হবে। রেবার খালাতো বোনের স্বামীকে গোপালপুরে মেরে ফেলেছে–খবর এসেছে। ওদের খুব মন খারাপ।
সাড়ে চারটেয় গুলশান গেলাম। রেবার খালাতো বোন শামসুন্নাহারের স্বামী আনোয়ারুল আজিম রাজশাহী জেলার গোপালপুর সুগার মিলের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ছিল। তাকে এবং সেই সঙ্গে মিলের আরো অনেক বাঙালি অফিসার ও শ্রমিককে পাক আর্মির লোকেরা গুলি করে মেরে ফেলেছে। আজিমের বউ-বাচ্চার কি হয়েছে, কেউ জানে না। রেবা-মিনিভাইয়ের দ্বিগুণ মন খারাপ আরো একটি কারণে। শামসুন্নাহারের ছোট ভাই সালাহউদ্দিনও বোনের কাছে ছিল। সেসুদ্ধ পুরো পরিবারের কোনো খোঁজখবর নেই।
আমরাও মন খারাপ করে চুপচাপ বসে রইলাম অনেকক্ষণ। তারপর এক সময় উঠে বাড়ি ফিরে এলাম।
বাসায় ঢুকে দেখি একরাম ভাই, লিলিবু এসেছেন। বাবার সঙ্গে আলাপ করছেন। একরাম ভাই বরিশালের এডিসি হয়ে বদলি হয়েছেন।
এই রকম সময় ঢাকা থেকে সুদূর বরিশালে বদলি হওয়াতে একরাম ভাইয়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। একি দুর্দৈব! কিন্তু না গিয়েও তো উপায় নেই। ক্র্যাকডাউনের পরে কঠিন মার্শাল ল শাসন। এসময় বদলি ক্যানসেলের কোনো রকম তদবিরেরই অবকাশ নেই। তবে একটা সান্ত্বনা বদলিটা প্রমোশনের।
একরাম ভাই প্রথমে একাই যেতে চান। কিন্তু লিলিবু গো ধরে বসেছেন তিনিও সঙ্গে যাবেন। আমরা লিলিবুকে বোঝালাম–এই রকম দুর্দিনে তাঁর প্রথমে না যাওয়াই ভালো। একরাম ভাই দুএকটা ছেলে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে যান, পরে অবস্থা বুঝে লিলিবু যাবেন। এখানেও তো ছেলেমেয়েরা সবাই রয়েছে–বাবা-মা দুজনেই একসঙ্গে গেলে ওরাও তো মুষড়ে পড়বে। তাছাড়া এখানে অনেক কাজও রয়েছে। একরাম ভাই বদলি হলেন, ঢাকার সরকারি বাসা রাখতে পারবেন না, বাসা খোজা, সেখানে পুরো সংসার উঠিয়ে নিয়ে গোছানো–লিলিবুর এখানে এখন থাকাটা খুবই জরুরি।