1 of 2

২৬. দ্বৈত সত্তার প্রকাশ

হীরা বুলবুলের মধ্যে বিস্ময়করভাবে দ্বৈত সত্তার প্রকাশ দেখা যেতে লাগলো। তার দুরকম ভাব, দু প্রকার কণ্ঠস্বর, এমনকি মুখের চেহারাও ভাব অনুযায়ী পৃথক হয়ে যায়। সে সম্পূর্ণ উন্মদিনী, কিন্তু তার উন্মাদ দশারও দুটি রূপ।

কখনো কখনো সে সম্পূর্ণ চুপ করে থাকে। দণ্ড, প্রহর, এমনকি সম্পূর্ণ দিনের মধ্যেও একটি শব্দ উচ্চারণ করে না। ঠায় বসে থাকে এক স্থানে, যেন কোনো জড় মূর্তি। তার দৃষ্টি তখন উদাস হয়ে যায়, ঔদাসীন্য মাখা মুখখানি অপূর্ব সুন্দর দেখায়। সে স্নান করে না, চুল বাঁধে না, পোশাক পরিবর্তন করে না, এমনকি কিছু খায় না পর্যন্ত। রাইমোহন তার কাছে এসে অনেক কাকুতিমিনতি করে, কিন্তু হীরা বুলবুলের ভ্রূক্ষেপ নেই। যেন সে কোনো গভীর ধ্যানে নিরত।

মাঝে মাঝে তার ধ্যান ভাঙ্গে, তখন সে গাইতে শুরু করে আপনি মনে। হীরামণি নামে যে সঙ্গীত পটিয়সী বারাঙ্গনা এক সময় বুলবুল নামে খ্যাতি অর্জন করেছিল, এখন তার কণ্ঠে সপ্তসূর্য যেন আরও বণাঢ্য হয়ে ভর করেছে। অতি সূক্ষ্ম মীড় ও টপ্পার কাজ।

হীরা বুলবুল যখন গান শুরু করে তখন রাইমোহনের বুকটা মুচড়ে মুচড়ে ওঠে। এমন মধুর গান। এমন সুরের মূর্চ্ছনা, অথচ অন্য কারুকে শোনানো যাবে না! হীরা বুলবুল এই গান গেয়ে তো কলকাতার বাবুসমাজকে মাতোয়ারা করে দিতে পারে আবার।

কলকাতায় ফিরিয়ে আনার পর প্রথম কয়েকদিন রাইমোহন অনেক ভাবে বোঝাবার চেষ্টা করেছে ওকে। এখন রাইমোহন শান্ত স্তব্ধ হীরা বুলবুলের সামনে গিয়ে যদি বা কিছু বলাবলি করেও, কিন্তু হীরা বুলবুল গান শুরু করার পর সে আর ভয়ে সামনে থাকে না।

গান গাইতে গাইতে অকস্মাৎ এক জায়গায় থেমে গিয়ে হীরা বুলবুল তার দ্বিতীয় মূর্তি ধারণ করে। তখন তার চক্ষু দুটি থেকে যেন আগুন ঠিকরে বেরোয়, মুখখানা হয়ে যায় কালী মূর্তির দু পাশের ডাকিনী যোগিনীর মতন, গলার আওয়াজও হয়ে যায় সানের মেঝেতে টিনের কৌটো ঘষার মতন। সামনাসামনি কেউ না দেখলে বা শুনলে বিশ্বাসই করবে না যে এই রমণীই একটু আগে এমন অপূর্ব সুরেলা গলায় গান গাইছিল।

তখন সাংঘাতিক হিংস্র হয়ে ওঠে। সে, মুখ দিয়ে কুৎসিত কদৰ্য গালি-গালাজের ঝড় বইতে থাকে, চোখের সামনে যাকেই দেখতে পায় তাকেই মারতে ধেয়ে আসে। যে-কোনো কারণেই হোক তার সবচেয়ে বেশী আক্রোশ রাইমোহনের ওপর। হাতের সামনে যা পায়, তাই ছুঁড়ে মারে রাইমোহনের দিকে। একবার পান ছেচার পিতলের হামানদিস্তে সজোরে নিক্ষেপ করেছিল রাইমোহনের কপাল লক্ষ্য করে, সেটি ঠিক মতন লাগলে রাইমোহনকে আর পৃথিবীর বাতাসে নিশ্বাস গ্রহণ করতে হতো না।

সেই অবস্থায় হীরা বুলবুল কোনো ষণ্ডকায় পুরুষের মতন দুপদুপিয়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ায়, খাদ্যদ্রব্য পেলে মুঠো মুঠো মুখে ভরে, দু দিকের কষ দিয়ে লালা গড়ায় এবং অকারণে হা-হা করে হেসে ওঠে। তখন তাকে দেখলে রাক্ষসী বলে মনে হয় অথবা অপ্রাকৃত কোনো ভীতিপ্ৰদ রমণী।

দাস-দাসীরা পালিয়েছে এ গৃহ ছেড়ে। রাইমোহনের এক সহচর হারাণচন্দ্র এখনো রয়ে গেছে শুধু। দুজনে মিলে এ পাগলিনীকে কোনোক্রমে সামলায়। এখন সন্ধ্যার সময় অধিকাংশ ঘরেই আলো জ্বলে না। একতলার এক ছোট কুঠুরিতে হারাণচন্দ্র বসে বসে সুরা পান করে, রাইমোহন চুপ করে বসে থাকে সেখানে। সে যেন এখন আর সুরাপানেও স্বাদ পায় না। হঠাৎ একেবারে বিস্বাদ হয়ে গেল জীবনটা।

আজ হারাণচন্দ্রের পীড়াপীড়িতে রাইমোহন সুরার পাত্রে দু-একটা চুমুক দিয়েছে। বাতাসে শীত শীত ভাব, তাই সুরার প্রভাবে শরীরে উত্তাপ সঞ্চারিত হলে বেশ আমেজ আসে। রাইমোহন আক্ষেপের সঙ্গে বললো, সব কেমুন ভেবলে গেল রে, হারাণে, সব ভেবলে গেল!

হারাণচন্দ্রের আবার ছিলিমও চলে। চরসেই। সে বেশী টং হয়। কল্কেট রাইমোহনের দিকে এগিয়ে দিয়ে সে বললো, দুটান দিয়ে দ্যাকো দাদা, রিদয়টা একদম খোলসা হবে। দিনরাত ভেবে ভেবে তুমি যে একেবারে কাহিল হয়ে গেলে!

এই সময় ওপর থেকে ভেসে আসে হীরা বুলবুলের সুমিষ্ট কণ্ঠের গান। গত দেড়দিন যাবৎ সে টু শব্দটিও করেনি। এই সন্ধেবেলা আবার তার ধ্যান ভঙ্গ হয়েছে।

গান শুনতে পেয়ে হারাণচন্দ্ৰ বলে উঠলো, আহা, আহা, দিদি আমার সাত্থক বুলবুল। রাইমোহন মন দিয়ে খানিকক্ষণ গানটা শুনলো। হীরা বুলবুল গাইছে :

পাসরিতে চাই তারে না যায় পাসরা
আমারে মজালে আমার নয়নেরি তারা
বাসনা করিয়ে মনে
চাব না তাহার পানে
আঁখি নিষেধ না মানে
বহে বারিধারা…

রাইমোহন বললো, এ গান আমি শিকোচি ওকে। এ গান কার রচনা জানিস? কালী মীর্জার। নাম শুনিচিস?

হারাণচন্দ্র মাথা নেড়ে জানালো যে ঐ নাম সে শোনেনি।

রাইমোহন আফসোসের সুরে বললো, তা শুনবি কেন, তোরা তো সবাই নিধুবাবুর নামে নাচিস। কালী মীর্জাও কম বড় গায়ক ছেলেন না। লক্ষ্ণৌ, দিল্লি থেকে গান শিকে এয়েছিলেন। বর্ধমানের রাজা বাহাদুর প্রতাপচাঁদের সভায় গাইতেন। সেই যে রে, যাঁর নামে আর এক জাল প্ৰতাপচাঁদ বেইরেছেল। কালী মীর্জা কলকেতায় এসে গোপীমোহন ঠাকুরের আখড়াতেও গাইতেন। যেমন ভালো গান বাঁধতেন, তেমন ঢেউ খেলানো গলা, আর চ্যায়রা খানা ছেল কি, যেন নবাব আমীর কেউ হবে।

হারাণচন্দ্র জিজ্ঞেস করলো, তুমি ওনাকে দেকোচো, দাদা?

রাইমোহন বললো, হ্যাঁ, দেকিচি, গান শুনিচি। খানাকুলের রামমোহন রায়, ঐ যে রে যিনি এখুনকার বোম্যজ্ঞানীদের গুরু ঠাকুর, সেই তিনিও কিছুদিন গান শেকার জন্য এই কালী মীর্জার কাচে নাড়া বেঁধেছিলেন। আমি যখন কালী মীর্জার গান শুনি, আমার বয়েস তখুন। অনেক কম, ধর চাঁদুর মতন বয়েস, আমি বাপ-মরা ছেলে, কেউ দোকবার নেই, ঘুরে ঘুরে বেড়াই-এই যা, কার নাম করলুম।

–কার নাম করলে দাদা?

—চাঁদুর নাম? হঠাৎ কেন মনে এলো?

—বাদ দাও ওসব কতা। আর এক ছিলিম টানো, গান শোনো।

হীরা বুলবুল তখন অন্য গান ধরেছে :

ভালবাস, ভালবাসি, লোকে মন্দ বলে তাতে
কাহারও নই প্রতিবাদী, তবু কেন মিছে তাতে।
কি নৃপতি কি দীন
সবে দেখি প্ৰেমাধীন
কেউ ছাড়া নয় কোন দিন
ভেবে দেখ যাতে-তাতে।

হারাণচন্দ্ৰ বললো, আহা-হা, আহা-হা!

রাইমোহন বললো, এ গানটা হীরে অনেকদিন পরে গাইলে। আমিও প্রায় ভুলেই গোসলাম। বড় খাসা গান। এটি কার বাঁধা বলতে পারিস?

—এটা আর বলতে হবে না। টপ্পার টান শুনেই বুঝিচি! এ গান নিধুবাবু ছাড়া আর কার?

রাইমোহন ক্ষেপে উঠে বললো, নিধুবাবু আর নিধুবাবু! সবই তোদের নিধুবাবু। সাধে কি আর দাশু রায় মশাই রেগে গিয়ে বলেচেন, জুতোর চোটে ঘুচাব তোর নিধুর টপ্পা গাওয়া!

—দাদা, তবে এ গান কারি?

—শ্রীধর কথকের। কত বড় গায়ক ছেলেন শ্রীধর কথক, আবার তেমনই দিলদরিয়া মানুষ। শুনিচি, কত গান বেঁধেচেন আর লোকের মধ্যে বিলি করে দিয়েচেন। তোদের নিধুবাবু শ্রীধর কথকের কত গান চুরি করেচে, জানিস?

–দাদা, শোনো, শোনো, এবার অন্য গান। আহা, আর পাঁচজন যদি এ গান শুনতো!

—সেই দুঃখেই তো আমারও বুক ফাটে রে, হারাণে! এ কী হলো? কেন এমন হলো? দুটো উটকো দস্যু। ওর শরীর ঠগরেচে বলে মাতাটাও এমন বিগড়ে যাবে? আগে কলকাতার বড় মানুষরা ওকে ঠোগরায়নি!

—দাদা, শোনো, মন দিয়ে শোনো।

হীরা বুলবুল এবার গাইছে :

রাজার দুলালী বটে। আমি কাঙালিনী
লোকে যা জানে জানুক, আমি যে নিজেরে জানি
ধন রত্ন সবই মিলে
মন যদি নাহি দিলে
মনে যদি মরু গড়িলে,
তারেই কব রাজধানী?

শুনতে শুনতে রাইমোহনের দুই চক্ষু দিয়ে জল গড়াতে লাগলো। এক সময় শব্দ করে কেঁদে উঠলো সে।

হারাণচন্দ্ৰ জড়িত স্বরে বললো, এ কি হলো, দাদা? ভাবের ঘোরে একেবারে কেইন্দে ভাসালে যে! তা এ গানটে কার বাঁধা একটু বলে দাও।

–কার বাঁধা, বল তো হারাণে? বল কার বাঁধা? আমার! আমার বাঁধা গান, আমার সুর। বল, খারাপ বেঁধেচি? ভালোবাসা যদি না পায়, তবে রাজকুমারীরেও আমি কাঙালিনী বলিচি। কোন বাপের ব্যাটা আগে এমন লিকতে পেরেচে বল?

—অতি মধুর লিকোচে দাদা। বড় সরেস! কিন্তু তুমি কাঁদচো কেন?

—আমার কী হলো, বল! হীরেকে সব গান শোকালুম, কিন্তু আর কি কেউ তা শুনতে পাবে? সবই আমার গুখুরি হলো! আহা, হীরে এত করে চেয়েছেল জগন্নাথ ক্ষেত্তরে যেতে, তা সেখেনেও তাকে নিয়ে যেতে পারলুম নাকো।

কথাবার্তার মধ্যে ওপরে কখন যে গান থেমে গেছে, তা ওরা দুজনে খেয়াল করেনি। হঠাৎ রাইমোহন চোখ তুলে দেখলো, কুঠরির দ্বারের কাছে দাঁড়িয়ে আছে হীরা বুলবুল। আঁচল খসে পড়ে লুটোচ্ছে মাটিতে, বক্ষে কোনো অন্তবাস নেই, ঘটির মতন বৃহৎ-বর্তুল স্তন দুটি উন্মুক্ত, মাথার চুল খোলা, মুখ চোখে রক্তপিপাসুর মতন হিংস্রভাব, ঠিক যেন একটি ডাকিনী। হাতে আবার একটি আঁশবঁটি, সে স্থিরভাবে চেয়ে আছে রাইমোহনের দিকে।

রাইমোহনের সারা শরীর একবার কেঁপে উঠলো। তারপর সে অশ্রুজড়ানো কণ্ঠে বললো, কী হয়েচে, হীরে? আমার ওপর তোর এত রাগ কেন? আমি তোকে এ সময় যেতে কত নিষেধ করিচিলুম–তুই আমায় মারতে চাস কেন, হীরে আমি কি তোর ডান?

হীরা বুলবুল মুখে হাসি ফুটিয়ে অদ্ভুত বিকৃত গলায় বললো, ওরে ড্যাকরা, আজ তোরই একদিন কি আমারই একদিন!

সে ঢুকে পড়লো ঘরের মধ্যে। রাইমোহন বললো, বেশ, আয়, আমাকে মার, তাতে যদি তোর সাধ মেটে!

হারাণচন্দ্ৰ উঠে দাঁড়িয়ে বললো, দিদি, হীরে দিদি, ও কী কচ্চো? হীরা বুলবুল হারাণচন্দ্রের কথায় কানই দিল না।

মাতাল এবং চরসখের হলেও হারাণচন্দ্রের শরীরে এখনো শক্তি আছে। সে পাশ থেকে লাফিয়ে পড়লো হীরা বুলবুলের ওপর। আঁশবঁটিটা কোনক্রমে হীরা বুলবুলের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তারপর সে শুরু করে দিল যুদ্ধ এবং চাঁচাতে লাগলো, রাইদাদা, ধরো, ধরো!

এই সব সময় হীরা বুলবুলকে জোর করে মাটিতে ঠেসে ধরে নির্মমভাবে প্রহার করতে হয়, তা ছাড়া তাকে নিবৃত্ত করার আর কোনো উপায় নেই।

হীরা বুলবুলকে কিল চড় মারতে রাইমোহনের বুক ফেটে যায়, তবু হারাণকে সাহায্য করার জন্য সে বাধ্য হয় এগিয়ে আসতে। হারাণচন্দ্ৰ বেশ জোওয়ান, কিন্তু এই সব সময়ে হীরা বুলবুলের শরীরে যেন অসুরের শক্তি ভর করে। রাইমোহন একলা কখনো হীরা বুলবুলের মুখোমুখি এই অবস্থায় পড়লে খুনই হয়ে যেত।

মারতে মারতে হীরা বুলবুলকে নিস্তেজ করে দেবার পর তারপর দুজনে তাকে ধরাধরি করে ওপরে শুইয়ে দিয়ে আসে।

 

এইরকম ভাবে কি দিনের পর দিন চলে? রাইমোহন এখন সৰ্ব্বক্ষণ চিন্তিত ও বিমর্ষ থাকে। হীরা বুলবুলের চিকিৎসার জন্য এর মধ্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। এনেছে সাহেব ডাক্তার, এনেছে মেডিক্যাল কলেজের পাশ করা অ্যালোপাথ, এনেছে একাধিক কবিরাজ, এমনকি দুজন ওঝাকেও এনেছিল। সকলেই গুচ্ছের টাকা নিয়েছে এবং কাঁড়িকাঁড়ি ওষুধ দিয়ে গেছে, কিন্তু সেই ওষুধ যে কী করে হীরা বুলবুলকে খাওয়ানো হবে, সে দিশা কেউ দিতে পারেনি। ওঝারা ওষুধ দেয় না। কিন্তু উৎকটভাবে প্রহার করে। একজন কবিরাজ শুধু পরামর্শ দিয়েছিল, হীরা বুলবুলকে আর বাড়িতে আটকে রেখে কোনো লাভ নেই, এই পাগলিনীকে এখন পথে ছেড়ে দেওয়া হোক ভগবানের নামে উৎসর্গ করে, এখন ভগবানই এর একমাত্র ভরসা। আর, স্বেচ্ছাচারীদের পথই সঠিক আশ্ৰয়।

কিন্তু রাইমোহন প্ৰাণে ধরে হীরা বুলবুলকে ঘরের বার করে দেয় কী করে? বিশেষত, এ তো তার বাড়ি নয়, সে নিজেই বরং হীরা বুলবুলের আশ্রিত। হীরা বুলবুলের বিকৃত রূপ দেখে এক এক সময় তার নিজেরই ইচ্ছে করে বিবাগী হয়ে যেতে। অথচ এই বৃদ্ধ বয়েসে সে যাবেই বা কোথায়, পুরোনো অভ্যেসগুলি ছাড়াও সহজ নয়।

ইতিমধ্যে অর্থেরও অকুলান হতে শুরু করেছে। বজরায় দাসু্যরা তাদের সর্বস্বান্ত করে গেছে। হীরা বুলবুলের আরও কিছু লুকোনো সম্পদ আছে কি না রাইমোহন তা জানে না, আর জানিবার উপায়ও নেই। তার নিজেরও রোজগারপাতি নেই। ইদানীং, হীরা বুলবুলের চিকিৎসার জন্যে যথেষ্ট ব্যয় করেছে, এর পর দিন চলা দুষ্কর হয়ে উঠবে।

 

হারাণচন্দ্রের ওপর নজর রাখার ভার দিয়ে রাইমোহন একদিন বেরুলো। বিদ্যোৎসাহিনী সভা আবার চালু হয়েছে কি না, সে সন্ধান নিতে হবে। সিপাহী বিদ্রোহ কিংবা হিন্দুস্তানে মুঘল শাসন পুনঃ প্রবর্তনের আশা এখন মরীচিকাবৎ প্রতিভাত হয়। নায়কহীন, শৃঙ্খলাহীন সিপাহীরা এখন ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে, ইংরেজবাহিনী একের পর এক শহর পুনর্দখল করে চলেছে এবং চলেছে নিষ্ঠুর প্রতিশোধের পালা।

অনেকদিন পর রাইমোহন এলো গুপী স্যাকরার দোকানে। সে গুপীও নেই, সে দোকানও নেই, যেন আলাদীনের আশ্চর্য প্ৰদীপের প্রভাবে সব কিছুর ভোল পালেট গেছে চমকপ্ৰদভাবে। এককালে ছিল মাঠকোঠার দোকান, এখন সাতখানি কুঠরিসমন্বিত পাকা বাড়ি, এবং প্রত্যেক কুঠরিতে লোহার দরজা। বিক্রয় কক্ষটির চারদিকের দেয়াল জোড়া ভেনিশিয়ান আয়না। আগে গুপী নিজেই দুর্গাপ্ৰদীপ জ্বেলে কাজে বসতো, এখন তার অধীনে কয়েক গণ্ডা কারিগর, সে ক্যাশ বাক্স নিয়ে বসে থাকে গদীর ওপর, থলথলে চর্বি এবং নেয়াপাতি ভূড়িটির জন্য তাকে দেখায়। গণেশ ঠাকুরটির মতন। এখন আর কেউ তাকে গুপী স্যাকরা বলে না, বর্তমানে সে গোপীমোহন সরকার, স্বর্ণকার ও মণিকার নামে পরিচিত। উত্তরোত্তর যতই শ্ৰীবৃদ্ধি হয়েছে গুপীর, ততই রামবাগানে নতুন নতুন রক্ষিতা বদল করেছে। রঙ্গী নামে তার নবতম রক্ষিতাটিকে সে নাকি ছিনিয়ে নিয়েছে কালীপ্রসাদ দত্তের খল্পর থেকে।

রাইমোহন গুপী স্যাকরার এতখানি শ্ৰীবৃদ্ধি দেখে প্রথমটায় একটু হকচাকিয়ে গেলেও অবিলম্বে সামলে নিয়ে আগেকার মতন শ্লেষের সুরে বললো, কী রে, গুপী, কেমন চালচ্চিস? ঐ নাদা পেটাটা যে একদিন ফেটে যাবে ফটাস করে!

গুপী স্যাকরা সামান্য একটু ওঠার ভান করে খাতির দেখিয়ে বললো, আসুন, আসুন, ঘোষালমোয়াই, আসতে আজ্ঞা হোক, বস্তে আজ্ঞা হোক। কতদিন পর আপনার পদধূলি পড়লো এই গরিবের দোকানে—

রাইমোহন ভেতরে এসে চতুর্দিকে দৃষ্টিপাত করে বললো, তুই গরিব? তাহলে রাজা দিগম্বর মিত্তির কিংবা জমিদারের ব্যাটা নবীন সিংগী তো দেউলে রে! তা কেমন আচিস বল?

—আজ্ঞে আপনার মতন পাঁচজনের আশীর্বাদে কোনো রকমে কষ্টে ছিষ্টে আচি! বসুন, ঘোষালমোয়াই, পান তামাক খান। এই যে এখেনে, আমার পাশটাতে এসে বসুন।

আসন গ্রহণ করে রাইমোহন বললো, তুই কষ্টে ছিষ্টে আচিস? আহারে, আমায় আগে বলিসনি কেন? মানুষের কষ্ট্রের কতা শুনলে আমার বড় দুঃখু হয়, বিশেষত তোর মতন চেন্নাশুনো মানুষের। তা তোর কিসের কষ্ট?

—আজ্ঞে এদানি রোজগারপাতি কিচু নেই বললেই হয়। সাহেব মেমরা ইদিকে ঘ্যাঁষে না, আর সেপাইর হেঙ্গামার ভয়ে সব বড় মানুষদের বাড়ি বিয়ে-শাদী এ বছর বন্ধ। তা হলে আমাদের চলে কী করে বলুন?

—ভয় নেই, তোর আবার সুদিন আসচে। সাহেবরা সেপাইদের মাজা ভেঙে দিয়েচে, এখন শুদ্দু দুরমুশ করা বাকি! তা তোর কাচে আজ এলুম একটা বিশেষ মন নিয়ে।

—বলুন। মানে, ইয়ে আজ্ঞা করুন।

—শতখানেক টাকা দিতে হবে যে, একটু টানাটানির মদ্যে পড়িচি।–নিশ্চয়, নিশ্চয়, এ আর কী এমন কতা? আপনার টাকা আর আমার টাকা কি আলাদা? আপনার দয়াতেই তো করে খাচ্চি!

পান তামাক সেবা ও কিছুক্ষণ রহস্য কৌতুক করার পর গুপী স্যাকরা বললো, দোকান বন্ধ করার সময় হলো, কই ঘোষালমোয়াই, মালটা দোকান!

রাইমোহন বললো, আজ আর সঙ্গে কোনো মাল নেই রে, টাকাটা তোকে হাওলাং দিতে হবে। বোকাসোকার মতন দেখালেও আজকাল গুপী স্যাকরা অনেক কিছুর সংবাদ রাখে। সে বললো, আপনার ইয়ে, মানে ঐ হীরে বুলবুল মাগীটার নাকি একেবারে মাতা বিগড়ে গ্যাচে, ঘোষালমোয়াই? ও মাগীর তো অনেক আচ্চা-সাচ্চা হীরে-মুক্তোর গয়না আচে, এই বেলা যা পারেন হাতিয়ে নিন, নইলে পাঁচ ভূতে লুটে পুটে খাবে।

রাইমোহন বললো, সে সব কতা পরে হবে। তুই আজ টাকাটা দে, আমায় যেতে হবে।

গুপী স্যাকরার মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। সে একটু চিবিয়ে চিবিয়ে বললো, ঘোষালমোয়াই, আপনি নিশ্চয় অন্য কারুর সঙ্গে কারবার শুরু করেচেন? তাই অনেকদিন এদিকে আসেন না। জগু সরকারের কাচে যাচ্চেন? ভালো ভালো মাল জগু সরকারকে দিয়ে আমার কাচে এয়েচেন খালি হাতে টাকা চাইতে!

রাইমোহন ক্লান্তভাবে বললো, আমি আর মাল সরাবার কারবার করি না রে, গুপী! তুই টাকাটা দিবি না? শোধ দেবো, আমি কতার খেলাপ করি না।

গুপী সরকার ভালো ভাবে দেখলে রাইমোহনকে। মানুষটা বুড়ো হয়ে গেছে, অনেক বদলে গেছে। সেই খড়্গনাসা, শাণিত চক্ষু, অতি ধুরন্ধর মানুষটার বদলে যেন পড়ে আছে তার কঙ্কাল। এবার রাইমোহন টপ করে একদিন মরে যাবে। এইসব লোককে গুপী স্যাকরা বাতিল করে দিতে দ্বিধা করে না!

—এই মাগ্‌গিগণ্ডার বাজারে অত টাকা কোতায় পাবো, ঘোষালমোয়াই, আপনি পাঁচটা টাকা নিন! নেহাৎ আপনি বলেই আমি খালি হাতে–

রাইমোহন স্তম্ভিত হয়ে গেল। এই সেই গুপী? কত বড় মানুষের বাড়িতে রাইমোহন নিজে তদবির করে গুপীকে ঢুকিয়েছে। সেই সব কাজ পেয়েই তো আজ তার আঙুল ফুলে কলাগাছ, সেই থেকেই তার নাম ছড়িয়েছে। সেই গুপী আজ তাকে একশোটা টাকা দিতে চায় না!

রাগে রাইমোহনের শরীর জ্বলতে লাগলো। প্ৰতিশোধের স্পৃহা লকলক করে উঠলো বুকের মধ্যে। কিন্তু একটু পরে সে নিজেই বুঝতে পারলো, এ শুধু অক্ষমের ক্ৰোধ, এই প্রতিশোধ স্পৃহার আগুন শুধু তাকেই পোড়াবে, গুপীকে স্পর্শ করতে পারবে না। অর্থ মানেই ক্ষমতা, সেইজন্য গুপী এখন অনেক ক্ষমতাবান, সেই তুলনায় রাইমোহন একজন সামান্য ক্রুদ্ধ বৃদ্ধমাত্র। গুপী স্যাকরা এখন তার দোকান থেকে রাইমোহনকে সবলে বিদায় করে দিলেও রাইমোহনের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নেই। কৃতজ্ঞতা? রাইমোহন কৃতজ্ঞতা দাবি করবে গুপীর কাছে? কিন্তু কৃতজ্ঞতা তো শর্ত কিংবা লিখিত চুক্তি নয়।

অনেক কথাবার্তার পর গুপী পাঁচ টাকা থেকে দশ টাকায় উঠতে রাজি হলো। টাকাটা রাইমোহনের দিকে এগিয়ে দিয়ে সে হাত জোড় করে বললো, আর কতা নয়, ঘোষালমোয়াই, এবার আমার তবিল মেলাতে হবে যে, এবার আপনি আসুন!

রাইমোহনের একবার ইচ্ছে হয়েছিল, টাকাটা গুপীর মুখের ওপর ছুঁড়ে দিয়ে চলে আসবে। কিন্তু নিজেই সে বিস্মিতভাবে আবিষ্কার করলো, যৌবনের সেই দীপও আর নেই, হাতের টাকা ছুঁড়ে ফেলার মতন তেজ তাকে ছেড়ে চলে গেছে, বরং দশ টাকায় যে অন্তত বিশ-পঁচিশ দিনের খাদ্য সংস্থান হবে, সে কথাই মনে পড়তে লাগলো বারবার।

ক্ষুব্ধ, অপমানিত মুখে রাইমোহন বেরিয়ে এলো। একটুখানি গিয়ে পেছন ফিরে রাইমোহন গুপীর দোকানের দিকে চেয়ে নিষ্ফল আক্ৰোশে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, এত বড় বেড়োনাকো, ঝড়ে পড়ে যাবে! তুই ঝাড়ে বংশে উৎসন্ন হবি, গুপি, এই আমি বামুনের ছেলে বলে রাকলুম, তোর হাড় গো-ভাগাড়ে পচবে, শকুনে তোর চোক খুবলে খাবে–।

বিধুশেখর মুখুজ্যের কাছ থেকে রাইমোহন কিছু মসোহারা পায় নবীনকুমারের ওপরে নজর রাখার বাবদে। কয়েক মাস সে টাকা পায়নি। সে বাড়িতে গিয়ে খবর নিয়ে জানলো, বিধুশেখর অসুস্থ, তাঁর খাজাঞ্চি কাৰ্য্যন্তরে শহরের বাইরে গেছেন, সুতরাং এখন কিছু পাবার আশা নেই।

বিরক্ত হয়ে হাতের দশ টাকা থেকে নগদ চারটি মুদ্রা খরচ করে রাইমোহন এক বোতল খাস ফরাসী ব্র্যান্ডি কিনে ফেললো। অনেকদিন পর আজ সে ভালো করে নেশা করবে।

দু একদিন পরেই হীরা বুলবুলের পাগলামি একটি তৃতীয় স্তরে এসে পৌঁছেলো। এই স্তরে আর গান নেই কিংবা ডাইনীপনাও নেই, শুধু বুক ফাটানো কান্না। আর সে কি কান্না, সেই করুণ স্বর শুনে পথের পথিকরাও থমকে দাঁড়িয়ে যায়। এখন আর রাইমোহনকে সামনে দেখলে হীরা বুলবুল মারতে আসে না, ড়ুকরে ড়ুকরে পুরোনো কথা বলে শুধু কাঁদে। তখন রাইমোহনও তার পাশে বসে কাঁদতে শুরু করে।

রাইমোহনের ধারণা হলো, এইবার হীরা বুলবুল আবার সুস্থ হয়ে উঠবে। তার বুকের মধ্যে যত কান্না জন্মেছিল, সব নিষ্কাষিত হয়ে যাচ্ছে একসঙ্গে। এর পর বুক খালি হলে সে আবার সুস্থ, স্বাভাবিক হবে।

তিনদিনের মধ্যেই হঠাৎ মিটে গেল সব সমস্যা। হীরা বুলবুল নিজেই আত্মঘাতিনী হলো কিংবা কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তা নিশ্চিত ভাবে আর জানার কোনো উপায় রইলো না অবশ্য। হীরা বুলবুলের দেহটা পাওয়া গেল বাড়ির প্রাঙ্গণ সন্নিহিত কুয়োর মধ্যে। বাঈজী কন্যা হীরা বুলবুলের বহু ঘটনাসমন্বিত জীবনের পরিসমাপ্তি হলো এইভাবে। এক সময় তার গুণগ্রাহীর অন্ত ছিল না। এই শহরে, মধুলোভী ভ্রমরের মতন অনেক বড় মানুষের ছেলেই উড়ে এসেছে তার কাছে। এখন একজনও এলো না। রাইমোহন এবং হারাণচন্দ্ৰ পল্লীস্থ কয়েকটি যুবকের সাহায্য চাইল মৃতদেহ শ্মশানঘাটে নিয়ে যাবার জন্য। যতই দুষ্ট প্রকৃতির বা উচ্ছৃঙ্খল হোক, এই সব যুবকদের এই একটি গুণ। শবদাহের ব্যাপারে সাহায্য চাইলে অন্তত কখনো তারা বিমুখ করে না।

শীতকালের বেলা অতি দ্রুত শেষ হয়ে আসে। হীরা বুলবুলকে শ্মশানে নিয়ে যেতে যেতে প্ৰায় অন্ধকার হয়ে গেল। দুটি চিতায় দুটি শব্ব দাউ দাউ করে জ্বলছে, রাইমোহনদের একটু অপেক্ষা করতে হবে।

অন্য শ্মশানবন্ধুরা চলে গেল নিকটবর্তী গঞ্জিকার আখড়ায়। হারাণচন্দ্র উসখুস করতে লাগলো,

রাইমোহনের অনুমতি পেলে সে-ও একটু দম দিয়ে আসে। কিন্তু রাইমোহন একহাতে হীরা বুলবুলের শব ছুঁয়ে চুপ করে বসে আছে। সে কান্নাকাটি করেনি, বরং সে যেন একটা মুক্তির স্বাদ পেয়েছে। আর তো তার কোনো বন্ধন রইলো না।

একটি চিতা খালি হবার পর হীরা বুলবুলকে তোলবার উদ্যোগ করা হচ্ছে, এই সময় হই হই করে এসে পড়লো শ্মশান-পরগাছার দল। তারাও ঘাটে বসে এতক্ষণ কল্কেতে দম দিচ্ছিল। মৃতের বস্ত্ৰ পাবার অধিকার তাদের। কাঠ কেনার টাকা কাকে দেওয়া হয়েছে? এসব তাদের প্রাপ্য।

শ্মশান-পরগাছার দলপতি একজন বলিষ্ঠকায় যুবা, গুম্ফ-দাড়িতে মুখ প্রায় ঢাকা, হাতে একটি ডাণ্ডা, যেন সে স্বয়ং মহাকাল। রাইমোহন একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। চেহারা দেখে চেনার উপায় নেই, কিন্তু ঐ কণ্ঠস্বর ভুল হবে কী করে?

সে হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে দলপতির হাত চেপে ধরে আবেগ-কম্পিত গলায় বললো, চাঁদু! গুম্ফ-দাড়ি সমন্বিত দলপতি হা-হা করে হেসে উঠে বললো, ছুঁয়ে দিলে তো? চাঁড়ালকে ছুঁয়ে দিলে? এবার যে গোবর খেতে হবে!

তার চ্যালারা সেই হাস্যের সঙ্গে দোয়ারকি ধরলো।

রাইমোহন বললো, ভগবান আচেন তাহলে! ঠিক সময় তোকে মিলিয়ে দিয়েচেন। আমি তোর কতাই ভাবচিলুম। চাঁদু, চেয়ে দ্যাক, ও যে তোর মা! ওরে হারাণে, মুকের কাপড়টা সরা।

হারাণচন্দ্ৰ মৃতের মুখের ওপর থেকে চাদরটি সরিয়ে দিল। পাশের চিতার আগুনের আলো এসে পড়লো হীরা বুলবুলের মুখে। চক্ষু দুটি বিস্ফারিত, যেন চন্দ্রনাথকেই দেখছে সে।

চন্দ্রনাথ কয়েক পলক চুপ করে চেয়ে রইলো।

রাইমোহন বললো, বড় কষ্ট পেয়ে গ্যাচে রে হতভাগিনী। যাক, তবু একটু শান্তি যে শেষ সময়ে তুই…ওরে চাঁদু, তোর শোকেই তোর মা মলো…

নাটকীয় পরিস্থিতির জন্য অন্যান্য শ্মশানবন্ধুরা এবং চণ্ডালরাও এসে ভিড় করে দাঁড়িয়েছে সেখানে। তাদের সকলকে বিস্মিত করে চাঁড়ালগুণ্ডা ছেলেদের নেতা চাঁদু সর্দার পরিষ্কার ইংরেজিতে জন কীটসের চার লাইন কবিতা আবৃত্তি করলো :

টু সরো
আই বেইড গুড-মরো
অ্যাণ্ড থট্‌ টু লীভ হার ফার বিহাইণ্ড
বাট চীয়ারলি, চীয়ারলি
শী লাভূস মি ডিয়ারলি;
শী ইজ সে কনস্টান্ট টু মী, অ্যাণ্ড সো কাইণ্ড…

তারপরই সজোরে রাইমোহনের কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে দৌড় দিল উল্টো দিকে।

রাইমোহন আর্ত গলায় বললো, ওরে চাঁদু, দাঁড়া, যাসনি, তুই মুখাগ্নি করবি-শেষ সময়টায় তোর মা তবু শান্তি পাবে–

চন্দ্রনাথ কর্ণপাত করলো না। তার সঙ্গীদের ছেড়ে শ্মশানছেড়ে সে দূরে চলে যেতে লাগলো তীব্র গতিতে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *