আতাহার তার মার পাশে দাঁড়িয়ে মৃদুস্বরে ডাকল, মা!
গভীর কমা থেকে ভদ্রমহিলা জবাব দিলেন না। আতাহার নিজেই তার প্রশ্নের জবাব দিল–কিরে বটু?
কেমন আছ মা?
গভীর নিদ্রায় আছি। ভালই আছি। দাঁড়িয়ে আছিস কেন, বোস।
বসার জায়গা দেখছি না। নল-টল লাগিয়ে তোমাকে যা করে রেখেছে–বসতে গিয়ে কোনটা খুলে পড়বে–কি বিপদ হবে কে জানে।
বিপদ আর কি হবে। দাঁড়িয়ে থাকিস না, বোস।
আতাহার সাবধানে মার পাশে বসল। ঘরে একজন নার্স ছিলেন, তিনি আতাহারের দিকে এক পলক তাকিয়ে বাইরে চলে গেলেন। এই ঘরে আলো বেশ কড়া। একটা আলো একেবারে চোখে এসে লাগছে। যে ঘরে রোগীরা গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকেন সেই ঘরের আলো অনেক নরম হওয়া উচিত। জিরো পাওয়ারের নীল বাতি জ্বলবে। খুব মৃদু সংগীত বাজবে। ঘুম পাড়ানো গান–
খোকা ঘুমুল
পাড়া জুড়ালো
বর্গি এল দেশে।
ঘরটা অন্যান্য ঘরের তুলনায় ঠাণ্ডা। এসির কারণেই ঠাণ্ডা। হিম-হিম ভাব। এটা ঠিক আছে। গভীর নিদ্রা এবং মৃত্যু দুইই শীতল। ঘর শীতল হবেই।
তুই কতক্ষণ থাকবি রে বটু?
বেশিক্ষণ থাকব না মা। রাত দশটার টেনে নেত্রকোনা যাচ্ছি। মজিদকে দেখতে যাচ্ছি।
কোন মজিদ?
পাগলা মজিদ–তোমাকে যে মাসি ডাকতো সেই মজিদ। মনে পড়েছে?
উহুঁ।
ঝাকড়া ঝাকড়া চুল। মোটাগাটা, থাপ থাপ করে হাঁটে। তোমাকে মাসি ডাকায় তুমি বললে–বাবা, তুমি আমাকে মাসি ডাকছ কেন? খালা ডাক। তখন সে বলল, আপনার হিন্দু হিন্দু চেহারা এই জন্যে আপনাকে মাসি ডাকছি। এখন মনে পড়েছে মা?
হুঁ, মনে পড়েছে।
অনেক দিন তাকে দেখি না–দেখতে ইচ্ছে করছে।
তুই এক যাচ্ছিস?
আমি এক যাব কি করে? আমার সঙ্গে কি টাকা পয়সা আছে? নেত্রকোেনা যেতে টেন ভাড়া লাগবে না? সাজ্জাদ। আমাকে নিয়ে যাচ্ছে।
তোর হাতে টাকা পয়সা নেই?
কিছু নেই। কে এখন আমাকে টাকা দেবে? একশ টাকা পরিমল বাবুর কাছ থেকে ধার নিয়েছিলাম–সেটা কবেই শেষ। উনি প্রতি দিন তিন-চারবার করে টাকাটা ফেরত চাইছেন। দিতে পারছি না।
তোর তো খুব খারাপ অবস্থা।
ভয়াবহ অবস্থা। তোমার অবস্থার চেয়েও একশ গুণ ভয়াবহ। তুমি তো ঘুমে ঘুমে সব পার করে দিচ্ছ, কিছু টের পোচ্ছ না। আমি তো আর ঘুমুচ্ছি না। জেগে আছি।
সমস্যার কথা শুনতে ভাল লাগছে না রে বটু ভাল কোন কথা বল।
ভাল কথা হচ্ছে–মিলি খুব সুখে আছে। ফরহাদ যে মিলির সঙ্গে গিয়েছিল আর ফিরে আসেনি। সে চিঠিতে জানিয়েছে–ঐখানে থেকেই সে পড়াশোনা করবে।
ভালই তো। বোনের সঙ্গে থাকবে।
হুঁ ভাল।
তোর কি হবে?
বুঝতে পারেছি না ম।
তোর কবিতা লেখার কি হচ্ছে?
অনেক দিন কিছু লিখতে পারছি না।
কেন?
জানি না মা।
তোর মুখটা এমন শুকনা লাগছে কেন? দুপুরে কিছু খেয়েছিস?
খেয়েছি।
মিথ্যা কথা বলছিস কেন বটু?
ও আচ্ছা, খাওয়া হয়নি।
পেটে খিদে নিয়ে আমার পাশে বসে আছিস?
এখন আর বসে থাকব না, উঠে যাব।
এত তাড়াতাড়ি উঠে যাবি কেন? তোর টেন তো রাত দশটায়। এখন বাজে মাত্র আটটা। কমলাপুর যেতে কতক্ষণ আর লাগবে?
অনেকক্ষণ লাগবে। রাস্তায় খুব ট্রাফিক জ্যাম। তাছাড়া যাবার আগে এখানকার একজন মহিলা ডাক্তারের সঙ্গে খানিকক্ষণ গল্প করব। চা বা কফি খাওয়াবে।
বুঝেছি–বুড়ি। ও মাঝে মাঝে এসে আমাকে দেখে যায়। বড় ভাল মেয়ে।
হুঁ—একটু পাগলী ধরনের, তবে ভাল।
ওকে বিয়ে করবি?
কি আশ্চর্য, ওকে বিয়ে করব কেন?
তুই তো কিছুই করিস না, গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়াস–মেয়েটাকে বিয়ে করলে অন্তত খাওয়া-পরার দুঃশ্চিন্তা থেকে বাঁচবি। তোর কি মেয়েটাকে পছন্দ হয় না?
পছন্দ হয়। যাদের পছন্দ হয় তাদের বিয়ে করতে নেই মা।
এটা আবার কেমন কথা?
বিয়ে করলেই রহস্য থাকে না।
তোর যে কি সব পাগলামী কথা!
মা, যাই?
চলে যাবি?
হুঁ।
আশ্চর্য, যাবার আগে তুই আমাকে একবার ছুঁয়েও দেখবি না?
আতাহার মার কপালে হাত রাখল। কি অদ্ভূত অবস্থা!
ভালবাসা নিয়ে একজন স্পৰ্শ করছে। অন্যজন সেই স্পর্শ ফিরিয়ে দিতে পারছে না।
আতাহার ডাক্তার হোসনার ঘরের দিকে রওনা হল। তাকে পাওয়া যাবে কিনা কে জানে। হয়ত গিয়ে দেখা যাবে আজ তার নাইট ডিউটি নেই। ঘর তালাবন্ধ।
হোসনা টেবিল থেকে ড্রয়ার বের করে ড্রয়ারের জিনিসপত্র সারা টেবিলে ছড়িয়েছে। শিশি, বোতল, তুলা, কেঁচি, রাজ্যের জিনিস। আতাহারকে ঢুকতে দেখে বলল, কবি সাহেবের খবর কি?
আতাহার বলল, ভাল।
মার সঙ্গে দেখা হয়েছে?
জ্বি।
কথা হয়েছে?
জ্বি, কথাও হয়েছে। আপনি কি খুঁজছেন?
টাং-ডিপ্রেসার–যা দিয়ে জিহবা চেপে ধরা যায়। জিহবা চেপে ধরলেই গলার ভেতরটা দেখা যায়।
খুঁজে পাচ্ছেন না?
পাব তো বটেই। সব কটা ড্রয়ার খুঁজতে হবে এবং মারফির সূত্র অনুসারে সবচে শেষের ভুয়ারে পাওয়া যাবে।
আজ তাহলে আমার চা খাওয়া হচ্ছে না।
না। আপনি বরং একটা কাজ করুন–কোন রেস্টুরেন্ট থেকে আমার একাউন্টে এক কাপ চা খেয়ে নিন।
আপনি টাকা দিচ্ছেন?
হ্যাঁ।
শুধু চা খাব নাকি? চায়ের সঙ্গে অন্য কিছুও খেতে পারি–চপ, সিঙ্গাড়া…?
হোসনা হেসে ফেলল। আতাহার লক্ষ্য করল, দারুণ ব্যস্ত ডাক্তার মেয়েও অন্যসব মেয়েদের মত সুন্দর করে হাসতে পারে।
কবি সাহেব!
জ্বি।
আপনাকে আজ ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত লাগছে কেন?
ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত লাগছে, কারণ দুপুরে কিছু খাইনি।
সে কি? খাননি কেন?
আতাহার হাসিমুখে বলল, মাঝে মাঝে উপোস দিতে ভাল লাগে। উপোস দিলে বোঝা যায় শরীর নামক একটা ব্যাপার। আমাদের আছে। সেই শরীরের দাবী উপেক্ষা করা কঠিন।
আপনি কি মিনিট দশেক অপেক্ষা করতে পারবেন?
পারব।
তাহলে দয়া করে মিনিট দশেকের জন্যে বারান্দায় গিয়ে অপেক্ষা করুন। আমি টাং ডিপ্রেসারটা খুঁজে বের করে আসছি। আপনাকে আমার পরিচিত একটা হোটেলে নিয়ে গিয়ে খাওয়াব।
এখানে অপেক্ষা করলে অসুবিধা আছে?
হ্যাঁ আছে। আমি কারো সামনে কিছু খুঁজতে পারি না।
আতাহার বারান্দায় এসে দাঁড়াল। স্ট্রেচারে করে একজন রোগীকে অতি ব্যস্ততার সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মনে ওটিতে নিচ্ছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই রোগীর মুখভর্তি হাসি। যেন সে আনন্দময় কোন কাজে রওনা হয়েছে। মানুষ তার সমগ্র জীবনে কত অসংখ্য বিস্ময়কর মুহুর্তের সম্মুখীনই না হয়। তাদের দেখা বিস্ময়কর মুহূর্তগুলো লিখে রাখত তাহলে চমৎকার হত—এবং একজনের সঙ্গে অভিজ্ঞতা মিলিয়ে দেখতে পারত।
(একটু অংশ মিসিং আছে)
আতাহারকে চকচকে একশ টাকার একটা নোট দিতে পেরে তার খুব ভাল লাগছে। অন্য এক ধরনের আনন্দ হচ্ছে। পিটুইটারী গ্ল্যান্ড থেকে বিশেষ কোন এনজাইম হয়ত রক্তে চলে এসেছে। রক্ত সেই এনজাইম দ্রুত নিয়ে গিয়েছে। মস্তিকে। মস্তিম্বক সিগনাল পেয়ে আনন্দিত হয়েছে।
আতাহার টাকাটা খরচ করল না। রাতের খাওয়াটা সে সাজ্জাদের বাসায় সারাতে পারে। খাওয়ার পর সাজ্জাদকে নিয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনে চলে আসা। তাছাড়া এমিতে নীতুকে দেখার জন্যে হলেও তার যাওয়া দরকার। নীতুর জ্বর বেড়েছে। দেখতে যাওয়া উচিত। দুদিন পর পর মেয়েটা অসুখে পড়ছে। বিয়ের আগে এত অসুখ-বিসুখ হলে বিয়ের দিন তাকে তো পুরোপুরি পেত্নীর মত লাগবে।
নীতু তার খাটে শুয়ে আছে। তার গায়ে হালকা খয়েরি রঙের একটা চাদর। তার ঘরের বাতি নেভানো। শুধু মাথার পাশের সাইড টেবিলে টবিল ল্যাম্প জ্বলছে। সাইড টেবিলের পাশে এক গাদা কলা, কয়েকটা বেদান এবং পলিথিনের ব্যাগে এক কেজির মত কালো আঙ্গুর। কামাল এইসব ফল-মূল নিয়ে কিছুক্ষণ আগেই নীতুকে দেখে গেছে। সে প্রায় এক ঘণ্টার মত ছিল। এই এক ঘণ্টা সে নীতুর হাত ধরে বসেছিল। এখন কামাল নেই। কামাল যে চেয়ারে বসেছিল। সেই চেয়ারে বসে আছেন হোসেন সাহেব। তিনিও নীতুর হাত ধরে বসে আছেন। নীতু ভাবছে–একেকজন মানুষ হাত ধরলে একেক রকম লাগে কেন? বাবা হাত ধরামাত্র তার সারা শরীরে প্রবল এক শান্ত ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। মা যদি কোন এক অলৌকিক উপায়ে হঠাৎ উপস্থিত হতেন এবং তার হাত ধরতেন তাহলে নিশ্চয়ই অন্য রকম লাগত।
হোসেন সাহেব বললেন, শরীরটা এখন কেমন লাগছে রে মা?
নীতু বলল, ভাল।
তোকে যে জিনিসে ধরেছে তার নাম ভাইরাস, অন্য কিছু না। ভাইরাস ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে। মিউটেশনের ফলে ভাইরাস চেঞ্জ হচ্ছে–ক্ৰমেই বদলাচ্ছে। এন্টিবায়োটিক ভাইরাসের উপর কাজ করে না, এ হচ্ছে আরেক সমস্যা। বুঝতে পারছিস?
পারছি।
ভাইরাস জাতীয় সংক্রমণে প্রধান অষ্ণুধ হচ্ছে রেস্ট। রিল্যাক্সেশন এবং প্রচুর ভিটামিন-সি। গ্রাসভর্তি লেবুর সরবত খাবি, কমলার রস খাবি–দেখবি ভাইরাস কাবু হয়ে পড়ছে। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী লিনাস পলিং ভাইরাস বিষয়ে একটা চমৎকার কথা বলেছেন…
নীতু বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, বাবা, ভাইরাসের গল্প শুনতে ইচ্ছে করছে না।
হোসেন সাহেব বললেন, ভাইরাসের গল্প শুনতে না চাইলে কি গল্প শুনতে চাস?
কোন গল্পই শুনতে চাই না। তুমি চুপচাপ আমার হাত ধরে বসে থাক।
আচ্ছা। ঠিক আছে। বসে থাকলাম।
হোসেন সাহেব এক নাগাড়ে বেশিক্ষণ চুপচাপ বসে থাকতে পারেন না। তিনি উসখুসি করতে লাগলেন। লিনাস পলিং-এর ভাইরাস ব্যাখ্যা তিনি কিছুক্ষণ আগে এনসাইক্লেপেডিয়া ব্রিটানিকা থেকে পড়ে এসেছেন। নীতুকে শোনাবার জন্যেই পড়া। মনে হচ্ছে পড়াটা জলে গেল।
নীতু বলল, বাবা, তোমাকে এখন খুব জরুরী একটা কথা বলি?
হোসেন সাহেব বললেন, বল।
কথাটা শুনে তুমি আপসেট হয়ে না, ঘাবড়েও যেও না।
হোসেন সাহেব শংকিত গলায় বললেন, কথাটা কি?
আমি কামাল সাহেব নামের এই মানুষটাকে বিয়ে করব না।
কি বলছিস তুই?
আমি যা বলছি খুব ভেবেচিন্তে বলছি। আরো অনেক আগে বলা উচিত ছিল। আই এ্যাম সরি যে আগে বলিনি।
চিঠিপত্র সব দিয়ে দিয়েছি।
তাতে কি হয়েছে?
কামালকে কি বলব?
বলবে যে আমার মেয়ের ধারণা তুমি মহা লোভী একজন মানুষ। আমার মেয়ে লোভী মানুষ পছন্দ করে না।
আমার ধারণা অসুখ-বিসুখে তোর মাথাটা ইয়ে হয়ে গেছে।
আমার মাথা ইয়ে হয়নি। মাথা ঠিক আছে। তুমি যাও তো বাবা, এখুনি গিয়ে টেলিফোন কর।
এখুনি টেলিফোন করতে হবে?
হ্যাঁ, এখুনি করতে হবে।
হোসেন সাহেব বিব্রত গলায় বললেন, তুই বরং আরেকটু ভেবে-টেবে নে।
নীতু বিছানায় উঠে বসল। শান্ত গলায় বলল, আমার যা ভাবার আমি ভেবেছি–আর ভাবব না। তুমি যাও তো বাবা, টেলিফোন কর। হোসেন সাহেব বিরস মুখে উঠে দাঁড়ালেন। নীতু ড্রয়ার খুলে চিঠির কাগজ এবং কলম বের করল। তার গায়ে এখনো ভাল জ্বর। তাতে কিছু যায়-আসে না। জ্বর নিয়েও সে যা লেখার খুব গুছিয়ে লিখতে পারবে। হয়ত হাতের লেখা তত ভাল হবে না। ভাল না হলে না হবে। হাতের লেখা বড় কথা না, কি লেখা হচ্ছে সেটাই বড়…
আতাহার ভাই,
আপনি কেমন আছেন? চারদিন হল জ্বরে কষ্ট পাচ্ছি। এই চারদিনে একবারও মনে হল না–যাই মেয়েটাকে দেখে আসি। গতকাল বাসায় এসে ভাইয়ার সঙ্গে কিছুক্ষণ ফুসফাস করে চলে গেলেন। আমি নিশ্চিত ছিলাম। আপনি আমাকে দেখতে আসবেন। কাজেই খুব তাড়াহুড়া করে শাড়ি পারলাম। আমি দেখতে খারাপ তো–শাড়ি পরলে মাঝে-মধ্যে একটু ভাল দেখায়, তাই শাড়ি পরা–আপনি আসেননি। আমি পরে খোঁজ নিয়েছি, আমার জ্বর সম্পর্কে কিছু জানাতেও চাননি।
দরজায় পায়ের শব্দ হল। নীতু চিঠি লেখা বন্ধ করে তাকাল। আতাহার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। আতাহার বলল, কয়েকদিনের জ্বরে তুই দেখি একেবারে শুটকি হয়ে গেছিস। শুটকির দোকানে তোকে ঝুলিয়ে রাখলে ছুড়ি মাছের শুটকি হিসেবে বিক্রি হয়ে যাবি।
নীতুর চোখ ভিজে উঠার উপক্রম হল। সে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরল।
করছিস কি?
চিঠি লিখছি।
প্রেমপত্র?
হ্যাঁ, প্রেমপত্ৰ?
দুদিন পর তো বিয়েই হচ্ছে–এর মধ্যে প্রেমপত্র লেখার দরকার কি?
আপনি কেন শুধু শুধু আমাকে বিরক্ত করছেন?
তোকে বিরক্ত করছি?
হ্যাঁ, বিরক্ত করছেন। দয়া করে নিচে যান। চা-টা খেয়ে বিদেয় হোন।
অসুখে কাতর হয়ে আছিস, রোগী দেখে যাই–জ্বর আছে এখনো?
আতাহার ভাই, আপনি যান তো।
আচ্ছা রে ভাই যাচ্ছি। খ্যাক খ্যাক করিস না। প্রেমপত্ৰ–লিখে শেষ কর। মেজাজ আকাশে তুলে রাখলে সুন্দর সুন্দর শব্দ মনে আসবে না। শুধু মনে আসবে কঠিন কঠিন তৎসম শব্দ-উৎপ্রেক্ষা, শ্লাঘা, বাজনাদ, বৃকোদার–এই টাইপ শব্দ।
আতাহার ভাই, আপনি যান।
আতাহার চলে গেল। পরের তিন মিনিট নীতু ব্যাকুল হয়ে কাঁদল। চিঠিটা লেখার চেষ্টা করল। আসলেই সে এখন আর চিঠি নিয়ে এগুতে পারছে না। নীতু ঠিক করল, চিঠি না, যা বলার সরাসরি বলাই ভাল। আজ বলাই ভাল। আতাহার ভাইকে সে ছাদে ডেকে নিয়ে যাবে, তারপর এতদিনকার জমানো কথা সব বলবে। কাঁদতে কাঁদতে বলবে। নীতু বাথরুমে ঢুকে চুল আচড়াল। অসুস্থ অবস্থায় মুখে পাউডার দিতে নেই–তারপরেও মুখে হালকা করে পাউডার দিল। ঠোঁট ফ্যাকাসে হয়ে আছে। হালকা করে একটু লিপস্টিক কি দেয়া যায় না? এমন হালকা করে দেয়া যেন কেউ কিছু বুঝতে না পারে। টিপের পাতাটা শেষ হয়ে গেছে। রোজ ভাবে আনাবে–আনানো হয় না। আজ একটা কাগজের উপর বড় বড় করে লিখবে টিপা, তারপর সেই কাগজটা আয়নার উপর স্বাকচ টেপ দিয়ে লাগিয়ে দেবে, যাতে ভোরবেলা ঘুম ভেঙে আয়নার দিকে তাকালেই মনে পড়ে–টিপ কিনতে হবে।
নীতু নিচে নেমে এসে শূনল, আতাহার এবং সাজ্জাদ রাতের ট্রেনে নেত্রকোনা যাবে বলে বের হয়ে গেছে।