জহুর কাঁঠাল গাছের নিচে মোড়া পেতে বসে ছিল। বাড়ির অন্য কেউ এখনন ঘুম থেকে ওঠে নি। জেলখানার অভ্যেস জহুরের এখনন আছে, সূর্য ওঠার আগে ঘুম। ভাঙে। জহুর দেখল এই সাতসকালে সাইফুল ইসলাম হনহন করে আসছে। এই নিয়ে পরপর তিন দিন এল।
স্লামালিকুম জহুর ভাই।
ওয়ালাইকুম সালাম। কি ব্যাপার?
জহুর ভাই, আজকে ঠিক করেছি থানায় গিয়ে একটা ডাইরি করাব।
বেশ তো, করান।
আপনার কাছে একটা পরামর্শের জন্যে আসলাম।
এর মধ্যে আবার পরামর্শ কি?
না, এই বিষয়ে না। অন্য বিষয়ে।
জহুর লক্ষ করল সাইফুল ইসলাম আজ আবার একটু বিশেষ সাজগোজ করে এসেছে। ঘাড়ের কাছে পাউডারের সূক্ষ প্রলেপ। মিষ্টি একটা সেন্টের গন্ধও আসছে গা থেকে। সাইফুল ইসলাম কেশে গলা পরিষ্কার করে বলল, ভাবছি পত্রিকার অফিসে একটা চিঠি লিখব।
হারমোনিয়াম চুরির খবর পত্রিকা ছাপবে না।
জ্বি-না, সেইটা না। থানাতে এত বড়ো একটা খুন হয়ে গেল, সেই বিষয়ে।
ও।
বেনামে একটা চিঠি দিয়ে দেই, কি বলেন জহুর ভাই?
বেনামী চিঠি ওরা ছাপবে না।
সেই জন্যেই একটা পরামর্শ করতে আসলাম। ইয়ে, অন্য কারোর নাম দিয়ে দিলে কেমন হয়?
কার নাম দেবেন?
তাও তো কথা। ইয়ে, আপনার দুলাভাই শুনম চন্দ্রপুর গেছেন?
হুঁ।
ফিরবেন কবে?
কাল-পরশু ফিরবেন।
সাইফুল ইসলাম একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
দুলাভাইকে কিছু বলতে চান?
জ্বি-না, জ্বি-না।
সাইফুল ইসলাম চুপচাপ বসে রইল। এক সময় বলল, টুনীকে বলেছিলাম সিও সাহেবের বাসায় গিয়ে গলাটা সাধতে। ইমনের সরগম দিয়ে দিয়েছিলাম, সে যায় না। আসলাম যখন, তাকে বলেই যাই, কি বলেন?
ঠিক আছে, বলে যান। চা-ও খেয়ে যান।
গানের মধ্যে সরগমটাই আসল। গলা যত ভালোই হোক, সাধনা না থাকলে সব শেষ।
জহুর জবাব দিল না। সাইফুল ইসলাম রুমাল দিয়ে নাক মুছতে মুছতে বলল, এই যে কয়েক দিন কিছু করি নাই–এতেই আমার গলা টাইট হয়ে গেছে। সঙ্গীতের মতো কঠিন কিছু নাই।