২৬. এক ঘন্টা একুশ মিনিটের মাথায়

এক ঘন্টা একুশ মিনিটের মাথায় কারারক্ষী মাওয়া, এক জন আর্টিলারির ক্যাপ্টেন, দুজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট এবং এক জন হাবিলদার মেজরকে নিয়ে জনাথন উপস্থিত হল। মাওয়া জীবিত হলেও গুরুতর আহত। গুলি লেগে তার বাঁ হাতের তিনটি আঙুল উড়ে গেছে। ডান পায়ের উরুতেও গুলি লেগেছে। তাকে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে। বাকি অফিসাররা সুস্থ, তবে তারা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। চোখে-মুখে দিশাহারার ভাব। অপ্রকৃতস্থ দৃষ্টি। চোখ রক্তবর্ণ।

ফকনার বলল, মাওয়া, কেমন আছ তুমি?

মাওয়া জবাব দিল না। ফকনার বলল, তোমাদের ওপর দিয়ে সামান্য একটু ঝামেলা গিয়েছে বুঝতে পারছি। আমি দুঃখিত। তোমাদের জন্যে কফি হচ্ছে। কফি খাও, ভালো লাগবে। তোমাদের কারোর যদি ধূমপানের অভ্যাস থাকে, তা হলে চুরুট নিতে পার। ভালো চুরুট আছে।

কেউ কোনো উত্তর দিল না। আর্টিলারি ক্যাপ্টেন একদলা থুথু ফেলল।

তোমাদের এখানে আনার উদ্দেশ্যটা ব্যাখ্যা করা দরকার। আমি জেনারেল ডোফাকে বড় রকমের একটা ধোঁকা দিতে চাই। তোমাদের সাহায্য ছাড়া তা সম্ভব হচ্ছে না। তোমরা যা করবে তা হচ্ছে, জেনারেল ডোফার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। আমি যা শিখিয়ে দিই, ওয়্যারলেসে তাই তাকে বলবে। খুব বিশ্বাসযোগ্যভাবে বলবে। আমি তোমাদের কাছ থেকে প্রথম শ্রেণীর অভিনয় চাই।

বলতে-বলতে ফকনার হাসল। প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেট বের করল।

তোমরা যা বলবে তা হচ্ছে….

ফকনারের কথা শেষ হবার আগেই আর্টিলারি ক্যাপ্টেন কঠিন গলায় বলল, তুমি যা বলবে আমরা তাই করব, এরকম মনে করার কোনো কারণ আছে কি?

পছন্দ না-হবার কারণ হচ্ছে, ডোফা কোনো শিশু নয়। তার আচার-আচরণ শিশুর মতো, কথাবার্তা শিশুর মতো, কিন্তু সে শিশু নয়। তুমি তা ভালো করেই জান। সে ধুরন্ধর মানুষ।

ধুরন্ধর মানুষরা মাঝেমাঝে হাস্যকর ভুল করে। করে না?

তা করে। তবে…..

কোনো তবে নয়। এই সুযোগ আমি নিতে চাই।

নিতে চাচ্ছ না, কিন্তু আমার পরামর্শ শোন, একটা বিকল্প ব্যবস্থা রাখ।

কি-রকম বিকল্প ব্যবস্থা?

ধর, ডোফা তোমার পরিকল্পনামতো কাজ করল না। এক দল কমান্ডো বিমান বোঝাই করে পাঠিয়ে দিল। তোমার ফাঁদে সে পা দিল না। যদি তাই করে, তখন আমরা কি করব?

কি করতে চাও?

আগে থেকে তৈরি থাকতে চাই।

বেশ, তৈরি হও। শোন রবিনসন, তোমার মাথার চুল বেশি পেকে গেছে। দড়ি দেখলেই সাপ ভাবছ।

তা ভাবছি। তাতে ক্ষতি তো কিছু নেই। আমি গোটা দলকে দুভাগে ভাগ করে দেব। এক ভাগ থাকবে ফোর্টনকে। অন্য ভাগ নিশোকে নিয়ে গ্রামে লুকিয়ে থাকবে। যদি দেখি ডোফা তোমার ফাঁদে পা দিয়েছে, একটা হেলিকপ্টার নিয়ে নিজেই নেমেছে, তখন আমরা হেলিকপ্টার দখল করে নেব। হেলিকপ্টার নিয়ে পালিয়ে যাব। আর যদি তা না হয়, তা হলে এক দল ওদের মোকাবেলা করবে, অন্য দল নিশোকে নিয়ে আরো ভেতরের দিকে পালিয়ে যাবে। কি, রাজি আছ?

ফকনার জবাব দিল না। একদলা থুথু ফেলল। রবিনসনের পরিকল্পনা তার পছন্দ হচ্ছে না। দল দুটি ভাগে ভাগ করা মানেই ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া।

কি ফকনার কথা বলছ না কেন?

রাজি? হ্যাঁ, রাজি।

গুড। ভেরি গুড। তুমি নিশোকে নিয়ে গ্রামে চলে যাও। এখানকার ব্যাপারটা আমি সামলাব।

আমি যাব?

হ্যাঁ, তুমি যাবে। পরিকল্পনার প্রথম অংশ তুমি করেছ, বাকিটা আমাকে করতে দাও। তুমি ভালো করেই জান, প্ল্যানিং-এর ব্যাপারটা আমি ভালো করি।

এক সময় করতে, এখন কর কি না জানি না।

এখনো করি। সময় নষ্ট করে লাভ নেই, রওনা হয়ে যাও।

দুটি দল যদি কোনো কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি, তখন? একটিমাত্র ওয়্যারলেস সেট।

ওয়্যারলেস সেট তোমার সঙ্গেই থাকবে ফকনার। আর আমরা যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি, তা হলে বিচ্ছিন্নভাবেই টিকে থাকার চেষ্টা করব। চেষ্টা চালাতে হবে কত দ্রুত দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়া যায়।

ফকনার কিছু বলছে না। বিরক্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে যাবার ইচ্ছা খুব একটা নেই।

রবিনসন বলল, সময় নষ্ট করছ ফকনার। রওনা হয়ে যাও।

কত জন সঙ্গে নেব?

সাত জন নাও।

বাকি সব রেখে যাও।

বেশ, তাই হবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *