২৫. বিসর্জনের বাজনা বাজিতে শুরু করিয়াছে

পঞ্চবিংশতি পরিচ্ছেদ

বিসর্জনের বাজনা বাজিতে শুরু করিয়াছে, কাজল জানে। জন্মের পরে উজ্জ্বলভাবে বহুদিন জ্বলিয়া একটা নক্ষত্র যেমন ক্ৰমে ম্লান আর হলুদ হইয়া আসে, তেমনি মানুষের জীবনও। স্রোতে এবার ভাটার টান। সবাই মিলিয়া আনন্দ করিয়া বাঁচিবার দিনগুলি ফুরাইয়া আসিল। এখনও আনন্দ থাকিবে, জীবন থাকিবে, চারদিকে পৃথিবী তেমন করিয়াই চলিতে থাকিবে, কিন্তু তেমন করিয়া আর সকাল হইবে না, কী যেন একটা থাকিবে না। মা চলিয়া গেলে তাহার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্ব শেষ হইয়া যাইবে। কে আর বাবার গল্প শোনাইবে, কালো মেঘ ঘনাইলে দেখিবার জন্য ডাকিয়া আকুল হইবে।

পৃথিবী কত বদলাইয়া গেল। এমন সে কখনও দেখে নাই। মানুষ হাসে কম, ভালোবাসে কম। হাসিলে তাহার অনেকরকম অর্থ হয়, ভালোবাসিলে তাহার পেছনে অনেক কারণ থাকে। কাহারও আড্ডা দিবার সময় নাই, দু দণ্ড শান্ত হইয়া বসিয়া মানবিক গল্প করিবার সময় নাই। প্রত্যেকে আখের গুছাইবার জন্য ব্যস্ত। প্রত্যেকেই টাকা জমাইতেছে, বাড়ি করিতেছে, ছেলেকে ডাক্তার আর ইঞ্জিনীয়ার করিতেছে। এমনভাবে আর কিছুদিন চলিলে দেশে আর শিক্ষক, কবি, দার্শনিক কিংবা শিল্পী থাকিবে না। একটা জাতি একেবারে মরিয়া যাইবে।

তাহার সন্তানদের সে এ কোথায় আনিল? এ কোন উপলব্ধিহীন, মননহীন, অসুস্থ ঘোলাটে আলোয় স্তিমিত পৃথিবীতে সে তাহাদের রাখিয়া যাইবে?

পিতার কর্তব্য সন্তানকে প্রকৃত আনন্দ লাভ কবিবার পথের সন্ধান দিয়া যাওয়া। যুগ যতই পরিবর্তিত হোক, শৈশবে পিতামাতার কাছ হইতে লাভ করা শিক্ষা বুকের মধ্যে থাকিয়া যাইবে। ছোট ছেলে এখনও খুবই ছোট, কাজল সপ্তর্ষিকে মনের মতো করিয়া গড়িবার চেষ্টা লাগিয়া পড়িল।

সকালবেলা সে ছেলেকে লইয়া শিশিরভেজা ঘাসের ওপর হাঁটে, উবু হইয়া বসিয়া ঘাসফুল দেখায়। নিজের ছোটবেলার গল্প শোনায়, ঠাকুরদার কথা বলে। মাঝে মাঝে ছেলে আর হাঁটিতে চায় না, দুই হাত উঁচু করিয়া বাবার দিকে তাকাইয়া দাঁড়াইয়া থাকে। কাজল তখন ছেলেকে কোলে নেয়। সপ্তর্ষি বাবার গালে গাল ঠেকাইয়া অবাক চোখে সব কিছু দেখে। ওই একটা পাখি আসিয়া গাছেব ডালে বসিল। ওই একটা বাছুর কোথা হইতে আসিয়া মাঠের মধ্যে খুব খানিকটা দৌড়াইয়া বেড়াইল। বাবার বুকের গরমে থাকা কী আরামের। বাবা কী একটা গান গুনগুন করিয়া গাহিতেছে। বেশ সুন্দর গানটা।

তুলি তাহার জীবনকে ধন্য করিয়াছে। সুন্দরী স্ত্রী অনেকেরই থাকে, সুন্দর স্বভাবের মেয়েও পৃথিবীতে বিরল নয়। কিন্তু তুলি অনন্যা, জগতে একমাত্র। জীবন সুন্দর, কারণ সে জীবনে তুলি আছে।

কেন যেন ফেলিয়া আসা দিনগুলির কথা মনে পড়ে, অনেকদিন যাহাদের দেখে নাই তাহাদের কথা মনে পড়ে। ভবঘুরে মামা প্রণব কোথায় চলিয়া গিয়াছে কে জানে। রামদাস কাকা বোধহয় আর বাঁচিয়া নাই, বাঁচিয়া থাকিলে একবার অবশ্যই আসিত। ব্যোমকেশ নিজের গ্রামে বিবাহ করিয়া শেকড় গাড়িয়া বসিয়াছে। মা অসুস্থ, খুবই অসুস্থ। হয়তো আর উঠিবে না। থাকিবার মধ্যে আছে আকাশ, বাতাস, প্রান্তর, গাছপালা। অনেকদিন আখের আলির খবর লওয়া হয় নাই। কেমন আছে মানুষটা? একবার গেলে মন্দ হয় না।

সেই বাঁশবন, বরতি বিল, দিগন্তস্পশী প্রান্তর-সন্ধ্যার আসন্ন অন্ধকারে বাঁশবনের মাথা হইতে আকাশে শয়তান উড়িয়া যায়, তাহাদের মুখ দিয়া আগুনের শিখা বাহির হয়, আখের আলি গল্প করিয়াছিল। কেমন আছে আখেরের বৌ রাবেয়া? এতদিন কেন তাহাদের কথা মনে পড়ে নাই? কিন্তু মনে পড়িতেই বুঝিতে পারিল ওই মুক্ত প্রকৃতির প্রসারেই তাহার অস্তিত্বের আসল সার্থকতা লুকাইয়া আছে। খ্যাতিতে বা অর্থে নয়, সভা-সমিতি কিংবা সামাজিক প্রতিষ্ঠায় নয়। মাঠের পারে অলৌকিক সূর্যাস্তের সৌন্দর্যে মহাজীবনের যে সংবাদ আলোর সংকেতে ফুটিয়া ওঠে, সঠিকভাবে তাহা পাঠ করিতে পারার আনন্দই জীবনের শ্রেষ্ঠ আনন্দ।

বাতাসে মাটির গন্ধ বহিয়া আসে। শুষ্ক খড়ের গন্ধ, জলের শব্দ, পাখির ডাক। মাঝখানের দশবারোটা বছর মুছিয়া যায়, আশা-আকাঙ্খায় উদগ্রীব অল্প বয়সের জীবনটা আবার ফিরিয়া আসে। অনেক দেরি হইয়াছে, আর নয়। কালই সে যাইবে, ছেলেকে লইয়া।

পরের দিন দুপুর গড়াইয়া গেলে কাজল ছেলেকে লইয়া বাহির হইল। রাস্তায় বেশ লোকের ভিড়, অনেক গাড়িঘোড়া চলিতেছে। আজকাল সারাদিনই বহু লোক বিভিন্ন কাজে কোথা হইতে কোথায় যাতায়াত করে। এত ব্যস্ততা কীসের? কাহারও এতটুকু সময় নাই। সকলেই জীবনযাত্রার মান আর একটু বাড়াইয়া লইবার জন্য দিশাহীন ছুট লাগাইয়াছে। ডায়োজিনিসের কথা মনে পড়ে। সামান্য ডালসিদ্ধ খাইয়া সারাদিন পড়াশুনা করিতেন। শিষ্যদেব উপদেশ দিতেন। স্টোইক দর্শনের মূল কথাটাই মানুষ ভুলিয়া গেল। বিশাল বাড়ি, দামি পোশাক, সুখাদ্যের দীর্ঘ তালিকা, ক্ষমতার মাদকতা—সব হইতেছে, কিন্তু জীবনের অন্তঃসারশূন্যতা কীসে পূর্ণ হইবে?

বাবার সঙ্গে বাহির হইতে পাইয়া সপ্তর্ষি খুব খুশি। সে বলিল—আমরা কোথায় যাব বাবা?

–চল না, দেখবি এখন। আমার অল্পবয়েসে যেখানে বেড়াতে যেতাম, সেখানে নিয়ে যাব। দেখবি কত পাখি, বড়ো বড়ো মাঠ, বাঁশবন। তুই ফিঙে পাখি দেখেছিস? মাছরাঙা?

-হুঁউ-উ। মা চিনিয়ে দিয়েছে। যেখানে যাচ্ছি সেখানে ফিঙে আছে?

—আছে তো। তালচড়াই আছে, দোয়েল ছাতারে বসন্তবৌরি আছে—

সপ্তর্ষি বলিল—প্যাঁচা নেই?

—তাও আছে। তবে প্যাঁচা তো দিনে বেরোয় না। ফেরার সময় সন্ধে হয়ে গেলে দেখা যাবে হয়তো। তুই প্যাঁচা দেখেছিস?

–হুঁ। মা দেখিয়েছে।

–মা! তোর মা প্যাঁচা পেল কোথায়?

—ছবির বইতে। দু রকম প্যাঁচা আছে, ভূতুম প্যাঁচা আর লক্ষ্মী প্যাঁচা।

–আচ্ছা দেখি, আজ তোকে জ্যান্ত প্যাঁচা দেখানো যায় কি না।

প্রথম বাসায় বড়ো ভিড়। ছেলের কষ্ট হইবে ভাবিয়া সেটা ছাড়িয়া দিল। পরের বাস আসিল মিনিট দশেক পরেই। এটায় তত ভিড় নাই। এমন কী উঠিবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দু জন লোক নামিয়া যাওয়ায় কাজল ছেলেকে লইয়া বসিবার জায়গাও পাইয়া গেল।

অনেক, অনেকদিন পরে আবার সে এই পথে বেড়াইতে যাইতেছে। প্রথম যৌবনের সেই আশ্চর্য জীবনানুভূতি, রোভরা দুপুর, সামনে বিস্তৃত না-দেখা সমগ্র জীবনটা, সমস্ত আবার মনে পড়িয়া যায়। ছেলেকে সে এই বিস্তারের মধ্যে মুক্তি দিয়া যাইবে। এইভাবেই উত্তরাধিকারের হস্তান্তর।

বাসের দরজায় দাঁড়ানো সহিসটা হাঁকিল-মোহনপুর, মোহনপুর মোড়!

কাজল বলিল—খোকা, এরপরেই আমরা নামব। চল, এগুই—

পরের স্টপেই সহিস চেঁচাইল-কাঁঠালিয়া! কাঁঠালিয়া!

নামিতে গিয়া কাজল অবাক হইয়া থামিয়া গেল।

কাঁঠালিয়া গ্রামটা কোথায় গেল? মাঠ, বাঁশবন আর ধানক্ষেত? এ তো দেখা যাইতেছে চারদিকেই নিবিড় বসতি, গায়ে গায়ে লাগা বাড়ি, ইটের পয়েন্টিং করা বাঁধানো রাস্তা পাড়ার মধ্যে ঢুকিয়া গিয়াছে। রীতিমত শহর জমিয়া উঠিবার উপক্রম। একজন আধুনিক চেহারার যুবক আবার একটা বিলাতি কুকুর চেনে বাঁধিয়া বেড়াইতেছে। কলিকাতা হইতে আর বাকি কী?

পেছন হইতে কে বলিল—দাদা, না নামলে সরে দাঁড়ান, দরজা আটকাবেন না—

ছেলেকে লইয়া কাজল সরিয়া আসিল।

সপ্তর্ষি বলিল–নামলে না যে বাবা?

-হ্যাঁ, ইয়ে—আমরা একটু গাছপালা আছে এমন জায়গায় নামব। এখানে খালি বাড়িঘর—

–তুমি যে বলেছিলে কাঁঠালিয়ায় গাছপালা আর মাঠ আছে?

কাজল ইতস্তত করিয়া বলিল—ছিল তো। একটু এগিয়ে পাওয়া যাবে এখন। দেখা যাক—

পরের দুইটা স্টপেও নামা গেল না। শিউলি, তেলিনিপাড়া চলিয়া গেল। কোথায় নামিবে সে? সভ্যতার অগ্রগতির প্রতীক হিসাবে জনপদ প্রসারিত হইয়াছে। এখানে বসিবার মতো ঘাস নাই, দেখিবার মতো দিগন্ত নাই, ভাবিবার মতো সময় নাই। পুত্রকে লইয়া সে এখন কোথায় যায়?

দেবপুকুরে গিয়া কাজল বাস হইতে নামিল। এখানে রাস্তার ধারে এখনও মাঠ, ঝোপজঙ্গল। দেবপুকুরে সে আগেও আসিয়াছে। তখন এসব জায়গা অজ পাড়াগাঁ ছিল। এখন দুই-একটা বাড়ি উঠিতে শুরু করিয়াছে। এখানেও শহর গ্রামকে স্পর্শ করিল বলিয়া। কাজল মনকে প্রবোধ দিবার চেষ্টা করিল—ভালোই তো, দেশের উন্নতি হইতেছে, ভালোই তো। কিন্তু মনের নিভৃতে গোপন কান্না বাজিতে থাকে। পরিচিত, প্রিয় সবকিছু হারাইবার কান্না।

তাহার হাত ছাড়াইয়া সপ্তর্ষি মাঠের মধ্যে দৌড়াইয়া বেড়াইতেছে। পড়ন্ত বৌদ্রে পৃথিবী মায়াময়। সে আর কিছু চায় না, শুধু এই পৃথিবীর মাটিতে মাটি হইয়া মিশিয়া থাকিতে চায়। গাছের গুড়িতে হেলান দিয়া দুরে তাকাইয়া দেখিতে চায় কীভাবে সন্ধ্যা নামে, আকাশে প্রথম তারাটি ফুটিয়া ওঠে, পাখির ডানায় দিনের আলো মুছিয়া যায়। মাটিতে কান পাতিয়া সে চলমান জগতের স্পন্দন শুনিতে চায়।

তারপর একদিন আসিবে, আসিবেই, যখন সে এই মাটিতে, আলো আর বাতাসে নিঃশেষে মিশিয়া যাইবে। আর সে ঘুম হইতে উঠিবে না, কুলের অম্বল দিয়া ভাত মাখিয়া খাইবে না, প্রিয় বইয়ের সন্ধানে পুরোনো বইয়ের দোকানে ঘুরিয়া বেড়াইবে না।

অনেক বই না-পড়া থাকিয়া যাইবে, অনেক লেখা বাকি থাকিবে।

তবু সে তো চেষ্টা করিল। সে ফাঁকি দেয় নাই, নিজের বিশ্বাসের কথা, মানুষকে ভালোবাসিবার কথা, ব্রহ্মাণ্ডের প্রতি কণার মধ্য দিয়া বহমান বিশ্বসংগীতের কথা লিখিয়াছে। মানুষ নেয় ভালো, নহিলে সে আর কী করিবে?

আলের পথ দিয়া একজন হাঁটিয়া আসিতেছিল। সাধারণ গ্রামের মানুষ। কাজলকে দেখিয়া সে বলিল–বাবু কী করছেন এখানে? জমি কিনবেন নাকি?

-না, এমনি একটু ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে এসেছি—

—ও, ওই যে খোকাটা, ওটা বুঝি আপনার?

-হ্যাঁ ভাই। আচ্ছা, আমি জমি কিনতে এসেছি মনে হল কেন তোমার? জমি বিক্রি হচ্ছে বুঝি খুব?

লোকটি সোসাহে বলিল—নয় তো কী! আর একবছরের মধ্যে এতটুকু জমি আর পড়ে থাকবে না বাবু। দেখেছেন তো কাঠালিয়া মোহনপুরের অবস্থা? সব বিক্কিরি হয়ে গেল বলে। রোজ দলে দলে লোক আসছে–

আঞ্চলিক উন্নতিতে তৃপ্ত মানুষটি আলপথ ধরিয়া চলিয়া গেল।

সারাটা বিকেল ছেলের সঙ্গে মাঠে মাঠে খেলিয়া বেড়াইল কাজল। দেখিল শেয়ালকাঁটার ফুলে হলুদ প্রজাপতি আসিয়া বসিতেছে। ঘাসের ডগা হইতে উড়িয়া যাইতেছে ফড়িং।

যখন আলো কমিয়া আসিল, সন্ধ্যা নামিবার উপক্রম হইল, কাজল ছেলেকে ডাকিয়া বলিলচলো বাবা, এইবার বাড়ি যাই–

নক্ষত্ৰভরা আকাশের নিচে ছেলের হাত ধরিয়া বাসরাস্তার দিকে হাঁটিয়া ফিরিতে ফিরিতে কাজল বলিল–বাবাই, তোকে একটা কথা বলব। এখন হয়তো যা বলব তার মানে বুঝতে পারবি না, কিন্তু ভালো কবে শুনে রাখ। বড়ো হয়ে তোকে একটা কাজ করতে হবে–

সপ্তর্ষি বাবার গলার স্বরে অবাক হইয়া বলিল—কী বাবা?

কাজল হাঁটু গাড়িয়া ছেলের সামনে বসিল, ছেলের দুই কাঁধে হাত রাখিয়া বলিল—তোর ঠাকুরদা বই লিখতেন জানিস তো?

–হুঁ-। দাদু লেখক ছিলেন।

-হ্যাঁ বাবা! দাদুর প্রথম বইটার দ্বিতীয় পর্ব আমি লিখেছি। দাদু যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকে আমি শুরু করেছিলাম। এটা আমাদের পরিবারের গল্প, মানুষের গল্প। এই বইখানার তিন নম্বর পর্ব তুই লিখবি। কেমন? আমি যেখানে শেষ করেছি সেখান থেকে ধরবি। মনে থাকবে?

—তুমি লিখবে না?

—না বাবাই, আমায় একজায়গায় যেতে হবে যে—

—কবে ফিরবে?

ছেলেকে বুকে জড়াইয়া ধবিয়া কাজল বলিল—ফিরব। তোর ছেলে হয়ে ফিবব।

সপ্তর্ষি সবটা বুঝিল না। কিন্তু বাবা ফিরিবে শুনিয়া নিশ্চিন্ত হইল। বলিল—আমি লিখব বাবা। তোমার মতো, ঠাকুরদার মতো।

একটু চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল–তোমার কলমটা আমাকে দিয়ে যেয়ো।

[অপুর সংসার সমগ্র সমাপ্ত]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *