২৫. বজ্রপাত

২৫. বজ্রপাত

কালবৈশাখীর ঝড় শুরু হবার পূর্ব মুহূর্তে আকাশ যখন কুচকুচে কালো মেঘে ঢেকে যায় এবং সেই মেঘ চিরে যখন বিদ্যুতের ঝলক নেমে আসে এবং তার কয়েক মুহূর্ত পরে যখন গুরুগম্ভীর আওয়াজে চারিদিক প্রকম্পিত হয়ে ওঠে তার মাঝে এক ধরনের অস্বাভাবিক সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে যেটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আমাদের দেশ ঝড়-বৃষ্টি আর মেঘের দেশ–কাজেই আমরা সবাই কখনো না কখনো মুগ্ধ হয়ে ঝড়-বৃষ্টি আর মেঘ দেখেছি। আমাদের কাছে আকাশের বিজলি এবং গুরুগম্ভীর বজ্রপাতের শব্দে এক ধরনের সাহসিকতা রয়েছে। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বরকে তাই বলা হতো বজ্রকণ্ঠ!

আমরা সবাই জানি বজ্রপাতের সাথে বিদ্যুতের এক ধরনের সম্পর্ক আছে। দৈনন্দিন কাজে কোনো না কোনোভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নি সে রকম মানুষ আজকাল আর একজনকেও পাওয়া যাবে না। যে ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের কৌতূহল থাকতে পারে সেটা হচ্ছে মেঘের মাঝে কেমন করে বিদ্যুৎ এসে জমা হয়?

যারা একটুখানি বিজ্ঞানও জানে তারাও বলতে পারবে যে পৃথিবীর সবকিছু তৈরি হয়েছে। পরমাণু দিয়ে। পরমাণুর কেন্দ্রে রয়েছে নিউক্লিয়াস, যেখানে থাকে পজিটিভ চার্জ এবং সেই পজিটিভ চার্জের আকর্ষণে আটকা পড়ে সেটাকে ঘিরে ঘুরতে থাকে নেগেটিভ চার্জের ইলেকট্রন। প্রত্যেকটা পরমাণুতে সমান সংখ্যক পজিটিভ এবং নেগেটিভ চার্জ থাকে বলে মোট চার্জ হচ্ছে শূন্য তাই আমাদের চারপাশের জগৎ হচ্ছে স্বাভাবিক এবং চার্জহীন। যদি কোনোভাবে আমরা এই চার্জকে প্রবাহিত করতে পারি তখন সেটাকে আমরা বলি বিদ্যুতের প্রবাহ। চার্জ যদি হয় দুই রকম তার প্রবাহও হতে হবে দুই রকম, তবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে বিদ্যুৎ প্রবাহ ব্যবহার করি সেটা সব সময়ই হচ্ছে ইলেকট্রনের প্রবাহ, ধাতব পদার্থে কিছু ইলেকট্রন প্রায় যুক্ত অবস্থায় থাকে, তাই সেগুলোর প্রবাহই অনেক সোজা!

বোঝাই যাচ্ছে আমরা যখন একটা বজ্রপাত দেখি সেটা আসলে এরকম একটা বিদ্যুৎ প্রবাহ যেটা হয় ক্ষণিকের জন্যে এবং দিগ্বিদিক প্রকম্পিত করে। এই বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্যে প্রথমে চার্জগুলোকে আলাদা হতে হয়, বজ্রপাতের আগে সেটা ঠিক কেমন করে হয় বিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি সেটা বুঝে উঠতে পারেন নি। মেঘ জমা হবার সময় জলীয় রূপে যখন উপরে উঠতে থাকে তখন সেই জলীয়বাষ্পের ঘর্ষণের জন্যে কিছু ইলেকট্রন আলাদা হয়ে নিচের মেঘগুলোর মাঝে জমা হতে থাকে, উপরের মেঘের মাঝে ইলেকট্রন কম পড়ে গিয়ে সেটার মাঝে পজিটিভ চার্জের জমা হয়। জলীয়বাষ্প যত উপরে উঠতে থাকে ততই ঠাণ্ডা হতে থাকে, যখন ঠাণ্ডা হতে হতে এটা বরফ হয়ে যেতে শুরু করে তখনো তাদের মাঝে চার্জ জমা হতে থাকে, নেগেটিভ চার্জগুলো থাকে নিচে এবং পজিটিভ চার্জ থাকে উপরে–বলা যেতে পারে মেঘের দুই ধরনের চার্জ যেন একটা বিশাল ক্যাপাসিটর হয়ে আকাশে ঝুলে থাকে।

কোথাও যখন এভাবে চার্জকে আলাদা হয়ে যেতে দেখা যায় তখন সেটাকে বলে স্থির বিদ্যুৎ। শীতকালে শুকনো মাথায় চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর পর আমরা প্রায় সবাই ছোট ছোট কাগজকে সেই চিরুনি দিয়ে আকর্ষণ করিয়েছি। এটা ঘটে চার্জ আলাদা হয়ে চিরুনিতে স্থির বিদ্যুৎ জমা হবার কারণে। আমাদের দেশের বাতাসে জলীয়বাষ্প তুলনামূলকভাবে বেশি, শীতের দেশের বাতাস হয় শুষ্ক, সেখানে স্থির বিদ্যুৎ আরো অনেক বেশি স্পষ্টভাবে দেখা যায়। কার্পেটে হাঁটলে জুতোর সাথে ঘষা খেয়ে শরীরে এত স্থির বিদ্যুৎ জমা হয়ে যেত যে দরজা খোলার সময় দরজার নবের কাছে হাত আনতেই শরীরের স্থির বিদ্যুৎ স্পার্ক হিসেবে দরজার নবে ছুটে যেত! দীর্ঘদিন ওরকম পরিবেশে থাকতে থাকতে নিজের অজান্তেই আমার একটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল, দরজা খোলার আগে পকেট থেকে চাবি বের করে চাবির মাথাটাকে স্পার্ক হতে দেয়ার জন্যে ব্যবহার করা। স্পার্কটা যেহেতু আঙ্গুল থেকে বের না হয়ে চাবি থেকে বের হতো তাই বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার অস্বস্তিকর অনুভূতিটা হতে অনেক কম।

যাই হোক আকাশে যখন মেঘের ভেতর প্রচুর চার্জ জমা হয়ে যায় তখন তার স্বাভাবিক পরিণতি হতে চার্জটুকু কোনোভাবে সরিয়ে দিয়ে একটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং সেটাই হচ্ছে বজ্রপাত। বজ্রপাতের ব্যাপারটা হঠাৎ করে ঘটে না, তার জন্যে একটা প্রস্তুতি হয়, প্রথমে মেঘের ভেতরকার নেগেটিভ চার্জের জন্যে নিচে মাটিতে এক ধরনের পজিটিভ চার্জ জমা হয়। এক সময় মেঘের নিচে থেকে “স্টেপ লিডার” নামে এক ধরনের খুব হালকা আলোকিত আভা সাপের মতো এঁকেবেঁকে নিচে নেমে আসতে থাকে, তখন মাটি থেকেও একই ধরনের একটা আলোকিত আভা উপরের দিকে উঠতে থাকে যেটাকে বলা হয় পজিটিভ স্ট্রিমার। এর ভেতর দিয়ে যে বৈদ্যুতিক কারেন্ট বা প্রবাহ হয় সেটা শ’খানেক এম্পিয়ারের মতো (আমরা আমাদের বাসায় পাঁচ থেকে দশ এম্পিয়ার কারেন্ট ব্যবহার করি) উপর থেকে নেমে আসা স্টেপ লিডার আর নিচে থেকে উপরে ছুটে যাওয়া পজিটিভ স্ট্রিমার যখন একটা আরেকটাকে স্পর্শ করে তখন তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায়। মেঘের ভেতর জমা হয়ে থাকা বিশাল চার্জ তখন আক্ষরিক অর্থে লক্ষ মাইল বেগে নিচে ছুটে আসে। বিদ্যুৎ প্রবাহের পরিমাণ তখন হয়ে যায় প্রায় লক্ষ এম্পিয়ার। এই বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ যখন বাতাস ভেদ করে নিচে ছুটে আসে তখন বাতাসটা 20 থেকে 30 হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত গরম হয়ে যায়, যেটা সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রা থেকে বেশি!

এই প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণে আমরা নীলাভ সাদা আলোর একটা জ্বালানি দেখতে পাই। তাপমাত্রার কারণে আরো একটা ব্যাপার ঘটে, বাতাসটুকু ফুলে-ফেঁপে বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে প্রচণ্ড গতিতে এবং তার কারণে গগনবিদারি একটা শব্দ হয় যেটাকে আমরা বজ্রপাতের শব্দ হিসেবে শুনি। যে কোনো শব্দের জন্যে কোনো কিছুকে নড়তে-চড়তে হয়, কাঁপতে হয় যদি সেই নাড়াচাড়া বা কাঁপাটুকু শব্দের গতি থেকে দ্রুতগতিতে হয় তাহলে সেটাকে বলে শক ওয়েভ। বজ্রপাতের শব্দটা আসলে শক ওয়েভ, শক ওয়েভের মাঝে আসলে অনেক শক্তি থাকে, কাছাকাছি কোথাও বজ্রপাত হলে প্রচণ্ড শব্দে ঘরের দরজা-জানালা ভেঙে যাওয়া তাই এত বিচিত্র কিছু না।

বজ্রপাত থেকে আলো আর শব্দ দুটি বের হওয়ার কারণে আমরা সাধারণত একটা মজার জিনিস করতে পারি, বজ্রপাতটা কত দূরে বের হয়েছে সেটা মোটামুটি নিখুঁতভাবে বের করে ফেলতে পারি। আলোর গতি সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার, কাজেই বজ্রপাতের আলোর ঝলকানিটা আমরা বলতে গেলে সাথে সাথেই দেখি। বাতাসে শব্দের গতি সেকেন্ডে মাত্র সাড়ে তিনশ মিটার অর্থাৎ এক কিলোমিটার যেতে প্রায় তিন সেকেন্ড সময় লাগে। কাজেই আলোর ঝলকানির কত সেকেন্ড পর শব্দটা শোনা গেছে সেটা দেখে তাকে তিন দিয়ে ভাগ দিলেই বজ্রপাতটা কত কিলোমিটার দূরে হয়েছে মোটামুটি নিখুঁতভাবে বের করে ফেলা যায়। সত্যি কথা বলতে কী সময় মাপার জন্যে ঘড়ি দেখারও প্রয়োজন নেই, “এক হাজার এক” “এক হাজার দুই” এভাবে বলতে এক সেকেন্ড করে সময় লাগে, কাজেই যত সংখ্যা পর্যন্ত গোনা যায় তত সেকেন্ড পার হয়েছে ধরে নেয়া যায়। অন্যদের কথা জানি না, বজ্রপাতে আলোর ঝলকানি দেখলেই আমি নিজের অজান্তে “এক হাজার এক” “এক হাজার দুই” গুনতে শুরু করে দিই।

বজ্রপাতে আমরা সবসময়ই দেখি আলোর ঝলকানিটি কেঁপে কেঁপে ওঠে, ব্যাপারটা এত দ্রুত ঘটে যে আমরা সবসময় চোখে দেখে আলাদা করতে পারি না। ভিডিও ক্যামেরা বা অন্য কিছু দিয়ে আলোর ঝলকানিটুকু ধরে রাখলে দেখা যাবে বজ্রপাতের সময় পুরো ব্যাপারটা সেকেন্ডের একটা ক্ষুদ্র ভগ্নাংশের মাঝেই কয়েকবার ঘটে যেতে পারে।

পৃথিবীতে গড়ে প্রতি সেকেন্ডে 100টা বজ্রপাত হয়–পৃথিবীর কোথাও হয় বেশি কোথাও হয় কম। আকাশের মেঘ থেকে যেহেতু বিদ্যুৎ নিচে নেমে আসে তাই এটা সাধারণত উঁচু জিনিসকে সহজে আঘাত করে। বজ্রপাত থেকে রক্ষা করার জন্যে উঁচু বিল্ডিংয়ের উপর ধাতব একটা সূচালো শলাকা লাগিয়ে রাখা হয়, সেটা মোটা বিদ্যুৎ সুপরিবাহী তার দিয়ে মাটির গভীরে নিয়ে যাওয়া হয়। পেছনের বিজ্ঞানটুকু খুব সহজ, আকাশ থেকে নেমে আসা বিদ্যুৎ অনিয়ন্ত্রিতভাবে না গিয়ে এই মোটা তারের ভেতর দিয়ে মাটির গভীরে চলে যাবে। অর্থাৎ অনিয়ন্ত্রিতভাবে না হয়ে বজ্রপাতটা হবে এই সূচালো শলাকার উপর।

সূচালো শলাকায় শুধু যে বজ্রপাত হয় তা নয়, এই সূচালো শলাকার ভেতর দিয়ে বিপরীত চার্জ বের হয়ে উপরে মেঘের মাঝে জমে থাকা চার্জকে কমিয়ে দিতে পারে। কাজেই অনেক সময়েই বজ্রপাতের আশঙ্কাটাকেও এই ধাতব শলাকা কমিয়ে আনতে পারে।

বিদ্যুৎ পরিবাহী ধাতব শলাকার ভেতর দিয়ে চার্জকে প্রবাহিত করে মাটির গভীরে নিয়ে যাওয়ার এই ধারণাটা দিয়েছিলেন বেঞ্জামিন ফ্লাংকলিন। একটা উঁচু গির্জার উপরে তার একটা ধাতব শলাকা লাগানোর পরিকল্পনা ছিল, গির্জাটা তৈরি হতে দেরি হচ্ছিল বলে এক মেঘলা দিনে তিনি তার ছেলেকে নিয়ে আকাশে একটা ঘুড়ি ওড়ালেন। ঘুড়ির সুতোয় একটা চাবি লাগিয়ে তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন, এমনিতে ঘুড়ির সুতো বিদ্যুৎ অপরিবাহী তাই আকাশের মেঘ থেকে কোনো বিদ্যুৎ নেমে আসছিল না, কিন্তু বৃষ্টিতে সুতো ভেজা মাত্র বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়ে মেঘের মাঝে জমে থাকা বিদ্যুৎ নেমে এলো, সুতোর সাথে বেঁধে রাখা চাবি থেকে বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গ (স্পার্ক) বের হতে থাকে! যে বিষয়টা দেখতে চেয়েছিলেন সেটা সন্দেহাতীতভাবে দেখেছেন সত্যি কিন্তু এই বিপজ্জনক পরীক্ষাটা করতে গিয়ে আরেকটু হলে তিনি নিজে এবং তার ছেলে মারা পড়তে পারতেন!

বজ্রপাতে প্রতি বছরই কিছু মানুষ মারা যায়। মজার কথা হলো বজ্রপাতের শিকার হয়ে শতকরা নব্বই জন মানুষ কিন্তু বেঁচেও যায়। রয় সুলিভান নামে একজন মানুষের সাত সাত বার বজ্রপাত হওয়ার পরও সে বেঁচে ছিল। কেউ যেন তাই বলে বজ্রপাতকে হেলাফেলা করে না নেয়–বজ্রপাতের সময় যে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় সেটা কিন্তু ছেলেখেলা নয়!

মানুষ সেই আদিকাল থেকে বজ্রপাত দেখে আসছে কিন্তু এখনো যে এটাকে পুরোপুরি বুঝতে পেরেছে তা নয়। আগে বলা হয়েছে মেঘের নিচের অংশে থাকে নেগেটিভ চার্জ, সেটা থেকে বজ্রপাত হয়। কিন্তু উপরের পজিটিভ চার্জটুকু কী করে, সেখান থেকে কী বজ্রপাত হয়ে পারে না? আমরা সবাই মেঘ থেকে মেঘে বজ্রপাত হতে দেখেছি, সেখানে এই পজিটিভ চার্জটুকু ব্যবহার হয় কিন্তু কখনো কখনো এই পজিটিভ চার্জ থেকে সরাসরি বজ্রপাত ঘটে যায়। এই বজ্রপাতগুলো সাধারণ বজ্রপাত থেকে প্রায় দশগুণ বেশি শক্তিশালী, তাই প্রায় দশগুণ বিধ্বংসীকারী। সবচেয়ে যেটা ভয়ের কথা, পৃথিবীর মানুষ এই পজিটিভ বজ্রপাতের খবর পেয়েছে মাত্র বছর ত্রিশেক আগে। আকাশে যে প্লেন উড়ে সেগুলোতে সাধারণ বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাবার মতো নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে, কিন্তু পজিটিভ বজ্রপাত থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা পুরোপুরি নেই!

বজ্রপাতে শুধু যে আলো, শব্দ এবং ধ্বংস হয় তা নয়, এর মাঝে আরো কিছু ব্যাপার ঘটে, যেটা বিজ্ঞানীরা কখনো কল্পনা করেন নি। ধারণা করা হতো শক্তিশালী গামা রে আসে শুধু পৃথিবীর বইরের মহাজগৎ থেকে। মাত্র কিছুদিন হলো বিজ্ঞানীরা দেখেছেন বজ্রপাত থেকেও কোনো একটা বিচিত্র উপায়ে শক্তিশালী গামা রে বের হয়ে আসে!

বিষয়টা বোঝার জন্যে বিজ্ঞানীরা মাঠে নেমেছেন, আমরাও আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি সেটা তাদের মুখ থেকে শোনার জন্যে!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *