২৫ জুলাই, রবিবার ১৯৭১
সকালে নাশতা খাবার সময় বললাম, অনেক দিন আতাভাইয়ের বাড়ি যাওয়া হয় নি। মাসুম এসেছে, চল ওকে নিয়ে যাই।
শরীফ বলল, ঐ সঙ্গে ফকিরের বাসাও ঘুরে আসব। ওকে ফোন করে দাওতো, যেন বেরিয়ে না যায়।
আতাভাই নারিন্দায় থাকেন, ফকির লারমিনি স্ট্রিটে।
ফোন করতেই ফকির বললেন, আজকে এদিকে না আসাই ভালো। কাল সারারাত ধরে যাত্রাবাড়ীর ওদিকটায় গোলাগুলি চলেছে। সকাল হতে হাটখোলার মোড় থেকে যাত্রাবাড়ী-ডেমরা ঐ এলাকায় কারফিউ দিয়ে রেখেছে।
তাই নাকি? কি বৃত্তান্ত–কিছু জানতে পেরেছেন?
না, এখন বৃত্তান্ত জানতে বেরোনো খুব নিরাপদ হবে না। যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় বহুত ধরপাকড়, মারধর হচ্ছে। আমরা তো পাশেই–আমি অবশ্য ইচ্ছে করলে নবাবপুর রোডের দিক দিয়ে বেরোতে পারি কিন্তু আমার বউ বলছে, কি দরকার? অন্তত একটা ছুটির দিন বউ-বাচ্চা নিয়ে বাড়িতে আরাম করলে হয় না?
করুন। আমরাও তাহলে তাই করি।
আতাভাইকেও ফোন করে জিগ্যেস করলাম, রাতে গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন?
উনি বললেন, শুনেছি প্রচুর। আমরা তো ভয় পেয়ে গেছিলাম–শেষ পর্যন্ত আমাদের পাড়াতেও শুরু হলো কিনা। কিন্তু এদিকে আর আসে নি।
গোলাগুলি কোনদিকে হয়েছে বলে মনে হয়?
শব্দটা তো যাত্রাবাড়ির দিক থেকেই এসেছে, মনে হয়। হাটখোলার মোড় থেকে ঐদিকে তো কারফিউ অজ।
মনটা খুব চনমন্ করতে লাগল।
যাত্রাবাড়ির দিকে সারারাত গোলাগুলি। না জানি কি যুদ্ধ হয়েছে। কার কাছে, কেমন করে ঘটনার বিবরণ পাই?