৯
সিএমএম কোর্ট, পুরান ঢাকা,
বর্তমান সময়, সকাল প্রায় ১১টা
“চাচা সময়টা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটু এদিক-সেদিক হয়ে গেলেই সমস্যা হয়ে যাবে। মনে আছে তো?” অরণি একটু উদ্বেগের সাথেই ড্রাইভার চাচার কাছে জানতে চাইল। ওরা পুরান ঢাকার সিএমএম কোর্টের ঠিক বাইরেই টেক্সিতে বসে আছে। এখানে জজ কোর্ট আর সিএমএম কোর্ট পাশাপাশি। ঢাকা মেট্রোপলিটানের সমস্ত অপরাধীকে হাজিরার জন্য এখানেই আনা হয়। গরম আর উত্তেজনায় দুজনেই অস্থির হয়ে আছে। ওদের পরিকল্পনাটা একদিকে ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ অন্যদিকে পাগলামিও বটে। তবে টাইমিং ঠিক রাখতে পারলে সফল হওয়ার সম্ভবনাও প্রায় শতভাগ। পরিকল্পনাটা আসলে হাসানের। এইরকম পাগলামি চিন্তাভাবনা আসলে ওর পক্ষেই করা সম্ভব। আর ওর পাগলামিতে সায় দিচ্ছে বলে অরণির নিজেরও একটু অস্বস্তি লাগছে কিন্তু কিছু করার নেই। ওর মায়ের আসলে কী হয়েছে এটা জানতে হলে এছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই ওর।
“আরে আম্মাজান আপনি টেনশন নিয়েন না,” ড্রাইভার চাচা তার কবজিবিহীন হাতটা নেড়ে হাসিমুখেই বলল, “আজ প্রায় তিরিশ বছরের উপরে এই লাইনে আছি, গাড়ি চালাইতেছি। গাড়ির যেকুনো ব্যাপারে আপনি আমার উপরে নির্ভর করতে পারেন,” তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে বেশ মজাই পাচ্ছে।
“চাচা আমি আসলেই দুঃখিত, আপনাকে এভাবে ব্যাপারটার সাথে জড়ানো আমার একদম উচিত হয়নি কিন্তু এছাড়া আমার আসলে আর কোনো উপায় ছিল না,” অরণির আসলেই খারাপ লাগছে বুড়ো মানুষটাকে এভাবে একটা রিস্কি ঘটনার সাথে জড়ানোতে।
“আরে মা কী যে বলো,” ইতোমধ্যেই মানুষটা অরণিকে তুমি বলে ডাকতে শুরু করেছে। “আজ থেকে চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছর আগে সংগ্রামের সময়ে তখন একেবারে চ্যাংড়া পোলা আছিলাম। যুদ্ধে গেলাম পাকিস্তানিগর মর্টারে ডান হাতটা ভাইঙা গেল। ওই অবস্থাতেই ধরা পড়লাম ওগো হাতে। সাত দিন ওগো ক্যাম্পে আটকাইয়া রাখল। জানোয়ারের বাচ্চারা একটা দানাপানি তো দূরে থাক হাগা মুতাও করতে দিত না। হাতের যন্ত্রণা আর অসহ্য অত্যাচারে ভাবতেছিলাম মইরাই যামু। ওইহান থাইক্কা ওই অবস্থায় পলায়ছিলাম। তহন জানের ভয় করি নাই। আর তোমার কি মনে ওয় এই বুইরা বয়সে কব্বরে এক ঠ্যাং দিয়া আমি জানের ভয় করি। হাসাইলা মামণি। বউডা মইরা গেছে আইজকা পাঁচ বছর। দুই পোলা হেগো মতন থাহে নিজের বউ পোলাপাইন লইয়া। আমার সাতেও কেউ নাই পাঁচেও কেউ নাই। যদি আমারে দিয়া তোমার কুনো উপকার ওয় হেইডাই আমার লাইগ্যা বড় পাওনা। তয় মামণি ব্যাপারডা কী কউ দেহি। তুমি বড় ঘাপলার ভিতরে পইরা গেছো মনে অইতাছে।”
অরণি মনোযোগ দিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। কী বলবে বুঝতে পারছে না। ও আসলে কী করছে, ঠিক করছে না ভুল করছে নিজেই বুঝতে পারছে না। “চাচা আমি আপনাকে সব বলব, তবে… ওই যে ওই গাড়িটাই। আমি আপনাকে যা যা বলেছি মনে আছে তো? ঠিক তাই তাই করতে হবে। আর খুব সাবধানে।” সামনে একটা নীল রঙের পুলিশ ভ্যান দেখা যাচ্ছে। আসামিদের কোর্টে আনা-নেওয়ার জন্য সাধারণত এই ধরনের ভ্যান ব্যবহার করা হয়।
“জি, মামণি, মনে আছে,” চাচা গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল।
“আমি যখন বলব তখনই,” অরণি সামনে তাকিয়ে আছে। ভ্যানটা ওদের সামনে দিয়ে চলে গেল। ওদের পরিকল্পনাটা রিস্কি হলেও খুব সহজ। এইভাবে কোর্টে অপরাধী চালান দেওয়া ভ্যানগুলোতে সাধারণত নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতটা শক্ত থাকে না। একটা লকড ভ্যানে অনেকগুলো অপরাধী থাকে, ওদের হাতে পরানো থাকে হাতকড়া। ভ্যানের ভেতরে থাকে দুজন কনস্টেবল। আর সামনে ড্রাইভারের পাশে থাকে একজন এসআই। হাসানের পরিকল্পনা হলো জজ কোর্টের গেট দিয়ে ঢুকে ছোট্ট গোলচক্করটা পার হয়ে ভ্যান যখন থামতে নেবে, অরণিদের গাড়ি গিয়ে ভ্যানটাকে পাশ থেকে তীব্রবেগে বাড়ি মারবে। তাতে ভ্যানটা যদি উলটে যায় তবে ভালো, না উলটে গেলেও চলবে। ভেতরের হাঙ্গামা শুরু হতেই হাসান একজন কনস্টেবলকে জিম্মি করে হাতকড়া খুলে ভ্যানের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে। মোটকথা ও ভেতরের পরিস্থিতি সামলাবে, সেটা যেভাবেই হোক। আর অরণিদের দায়িত্ব হলো বাইরের ব্যবস্থা করা।
অরণি পুরো ব্যাপারটা চাচাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। চাচা ওকে আশ্বাস দিয়েছে সে এমন ব্যবস্থা করবে যাতে ভ্যানটা অবশ্যই উলটে যায়। ওরা গাড়িটাকে এমন এক জায়গায় দাঁড় করিয়েছে যাতে ভ্যানটা ওদেরকে পাস করে যাওয়া মাত্র ওরা গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে এগোতে পারে এবং গোলচক্কর ঘুরতে ঘুরতে ওটাকে সময়মতো বাড়ি মারতে পারে। ভ্যানটা ওদেরকে পাস করে যাওয়া মাত্র ওরা গাড়ি স্টার্ট দিল। গাড়িটা এগোতে যাবে বিস্ময়ে অরণির চোখ ওপরে উঠে গেল, “ও মাই গড।” ভ্যানটার ঠিক পেছনে পেছনে একটা পুলিশের জিপ ওদেরকে পাস করে গেল।
.
অন্যদিকে হাসান চরম মেজাজ খারাপ করে ভ্যানের ভেতরে বসে আছে। অসহ্য গরম আর বিরক্তিতে সে দরদর করে ঘামছে। এর আগেও কয়েকবার এভাবে কোর্টে হাজিরা দিতে নিয়ে আসা হয়েছে তাকে। এর আগে প্রতিবার ঠিক যেভাবে তাকে আনা হয়েছে তার ওপরে ভিত্তি করেই সে পালানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু শুরু করার আগেই এভাবে সব উলটে-পালটে যাবে সে ভাবতেও পারেনি। প্রথম সমস্যা হয়েছে ভ্যানের ভেতরে থাকা কনস্টেবল দুজনকে নিয়ে। এর আগে যে দুজন ওদেরকে নিয়ে এসেছিল তার ভেতরে একজনকে সে কনভিন্স করে ফেলেছিল। ওই ব্যাটা ঠিক থাকলে একজনকে সামলানো ওর পক্ষে অতটা কঠিন হতো না। কিন্তু যে ব্যাটাকে এত কষ্ট করে ভাজ দিল ওই ব্যাটা আজ আসেইনি। ওর নাকি ডিউটিই পড়েনি। তার ওপরে আবার উটকো ঝামেলা এসে হাজির হয়েছে। আজ নাকি ওপর মহল থেকে কী এক ইন্সপেকশন এসেছে। তাই নিরাপত্তার পরিমাণ অনেক বেশি। আলাপরত দুই কনস্টেবলের কথোপকথন শুনে যা বুঝেছে ওদের সাথে আজ একটা এক্সট্রা জিপও দেওয়া হয়েছে। তাতে নাকি ওসি বা এএসপি এইরকম কেউ একজন থাকবে।
এসব ভাবতেই ওর মেজাজটা আবারও বিগড়ে গেল। ও ভ্যানের ভেতরে আবারও একবার দেখে নিল। কনস্টেবল দুজন বিড়ি ফুঁকছে আর গল্প করছে, দুজনেরই শটগান কোলের ওপরে রাখা। একটা সময় ছিল যখন এদেশের পুলিম শুধু থ্রি নট থ্রি রাইফেল ব্যবহার করত। এখন সেখানে থ্রি নট থ্রি’র পরিবর্তে তাদের হাতে উঠেছে শটগান। আবার এর সাথে যোগ হয়েছে কোমরো রাখা পিপার স্প্রে। আজ আসামি আছে সব মিলিয়ে ও সহ ছয়জন। সবার হাতেই হাতকড়া লাগনো। তবে একটা ভালো দিক, অনেক সময় সবাইকে একটা দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। আজ সেটা নেই।
প্রশ্ন হলো অরণি এখন কী করবে? ও কি এক্সট্রা জিপ দেখে পরিকল্পনা বাদ দেবে নাকি এগিয়ে যাবে। পরিস্থিতি এখন নির্ভর করছে অরণির ওপরে। ওদের জিপ জজ কোর্টের গেট দিয়ে ঢুকে গেল। ধীরে ধীরে গোলচক্কর পার হয়ে ভ্যানটা থেমে যাচ্ছে, কিছুই ঘটল না।
.
পেছনের জিপটা দেখে চাচা ক্যাবটা থামিয়ে দিল। “মামণি এখন কী করবা? আমি কি গাড়ি চালামু?”
অরণি বুঝতে পারছে না ও কী করবে। পেছনের জিপটা ওদের পরিকল্পনার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। ওর কি থেমে যাওয়া উচিত না আগের মতোই কাজ করা উচিত। ভ্যানটা এখন গোলচক্কর ঘুরছে, ওটার ঠিক পেছনেই জিপটা। যা করার এখনই করতে হবে। পরে আর সময় পাওয়া যাবে না। ও সিদ্ধাস্ত নিয়ে ফেলল।
“চাচা শোনেন কী করতে হবে,” বলে ও চাচাকে নির্দেশনা দিয়ে দিল।
“এইটা ঠিক আছে, তুমি শক্ত হয়ে বসো, আমি খেইল দেহাইতাছি,” বলে চাচা গাড়িটা ছেড়ে স্পিড বাড়িয়ে দিল। ওরা কোর্টের গেট দিয়ে বেশ ভালো বেগেই ঢুকে গেল। যত এগোল স্পিড আরও বাড়তে লাগল। আরও বেগ বাড়তে লাগল।
ভ্যানটা তখনও পুরো গোলচক্কর ঘুরে শেষ করেনি। চক্করটা ঘুরে ওটা সোজা হয়ে প্রায় থেমে গেল এমন সময় তিরের বেগে অরণিদের গাড়িটা ভ্যানটাকে ঠিক পাশ থেকে বাড়ি মারল। বাড়িটা লাগল ভ্যানটার ইঞ্জিন আর বডির ঠিক মাঝখানে। অরণিদের গাড়িটা প্রায় আশি মাইল বেগে ওটাকে আঘাত করা মাত্র ভ্যানটা থামতে থামতে প্রায় একশ ষাট ডিগ্রির মতো ঘুরে গিয়ে আঘাত করল ওটার পাশের জিপটাকে। ভ্যানের সামনের অংশ ঘুরে গিয়ে জিপটার একেবারে মুখের দিকে আঘাত করল। আঘাতের তীব্রতায় জিপের একপাশের জানালার সব কাচ ভেঙে গেল। আর জিপের পেছনটা উঠে গেল কোর্টের সিঁড়ির দিকে। ভ্যানটা আঘাতের ধাক্কা সামলে নিয়ে এদিক-সেদিক করতে করতে সোজাই দাঁড়িয়ে রইল, উলটাল না। অন্যদিকে জিপটার একটা অংশ সিঁড়ির দিকে উঠে যাওয়াতে সেটা একদিকে কাত হয়ে পড়ে গেল।
চারপাশে লোকজনের চিৎকার-চেঁচামেচিতে অরণি মাথাটা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসল। যদিও সচেতন ছিল তবুও গাড়ির তীব্র ধাক্কায় ওর মাথার একপাশে কেটে গেছে বাড়ি লেগে। ও সোজা হয়ে প্রথমেই চাচার দিকে তাকাল। সে স্টিয়ারিং হুইলের ওপরে ঝুঁকে আছে। অরণি পেছন থেকে তার কাঁধ ধরে নাড়া দিল। চাচা কাশতে কাশতে হাত নেড়ে জানাল সে ঠিক আছে। অরণি গাড়ির দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো। গাড়ির একপাশের জানালার কাচ ভেঙে গেছে।
হাসান কী করছে ভেতরে? ও বের হচ্ছে না কেন? এমন সময় গুলির প্রচণ্ড শব্দে ভ্যানটা কেঁপে উঠল।
.
ভ্যানটাকে থেমে যেতে দেখে হাসান ভেবেছিল অরণি বোধ হয় পরিকল্পনা বাদ দিয়েছে। ও ভ্যানের ছোট্ট জানালা দিয়ে দেখার জন্য উঠে দাঁড়াতে যাবে তীব্র ধাক্কায় ছিটকে পড়ল অপর পাশে। ভ্যানের ভেতরের সবাই এদিক-সেদিক ছিটকে পড়েছে। হাসান হ্যাঁচড়ে প্যাঁচড়ে উঠে দাঁড়াল। ভেতরে কনস্টেবলদের একজন অচেতন হয়ে পড়ে আছে। অন্যজন একপাশে ছিটকে পড়লেও অজ্ঞান হয়নি। সে হাত বাড়িয়ে শটগানটা তুলে নিতে যাবে হাসান তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। শটগানের একটা প্রান্ত ধরে ফেলেছে, কনস্টেবল হাসান শটগানের গোড়াটা ধরে ফেলল। কনস্টেবল ওটা ধরে জোরে টান দিতে হাসান সোজা হয়ে আরেক হাতে ওটা ধরে ফেলল আর সাথে সাথে ওর একটা আঙুল চলে গেল ট্রিগারে, চাপ লেগে একটা শেল বেরিয়ে গেল সোজা ভ্যানের ছাদের দিকে। প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে উঠল ভ্যান।
কনস্টেবল হঠাৎ গুলির শব্দে কেঁপে উঠতেই হাসান ওর হাতে চলে আসা শটগানের গোড়া দিয়ে বাড়ি মারল তার মাথায়। অজ্ঞান কনস্টেবলের কোমর থেকে চাবি নিয়ে ওর হাতের হাতকড়াটা খুলে ফেলল। ভ্যানের দরজাটা ভেতর থেকে তালা মারা, চাবি মিলিয়ে ওটার তালা খুলে ও বেরিয়ে এলো বাইরে। বাইরে এসে ভ্যানের দরজাটা লাগিয়ে দিল। যাতে আর কেউ পালাতে না পারে। চারপাশের হই-হট্টগোলের দিকে ও এবার চোখ বুলিয়ে অবাক হয়ে গেল। পরিস্থিতি ওর পরিকল্পনার চেয়েও ভয়াভহ রূপ ধারণ করেছে। পুলিশের জিপটা উলটে আছে, ভ্যানটা কাত হয়ে আছে একপাশে, লোকজনের চিৎকারে বিস্ময়কর অবস্থা।
এর ভেতরে অরণিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল একটা ক্যাবের পাশে। চিৎকার করে ওকে ডাকছে। হাসান ওর দিকে এগোতে যাবে “হল্ট, দুজনেই মাথার ওপরে হাত তুলে ঘুরে দাঁড়াও” একটা চিৎকার শুনে দাঁড়িয়ে গেল। ওদের থানার ওসি বজলুর রশিদ আর সাথে একজন কনস্টেবল। দুজনের হাতের অস্ত্রই ওদের দিকে তাক করা, দুজনের চেহারাই বিধ্বস্ত, ওরা সম্ভবত উলটে যাওয়া জিপের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে।
হাসান আর অরণি দুজনেই হাত তুলল। রাগে হাসানের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। এভাবে তীরে এসে তরি ডুববে ওরা ভাবতেও পারেনি। ওসি আর তার কনস্টেবল এগিয়ে আসছে, ওসি ইশারা করতেই কনস্টেবল কোমর থেকে হাতকড়া বের করল। অরণি অসহায়ভাবে হাসানের দিকে তাকাল। হাসান মাথা নাড়ল মৃদু। কিছুই করার নেই।
হঠাৎ বুম করে একটা শব্দ হলো আর একটা সিলভার রঙের সিলিন্ডারের মতো একটা কিছু উড়ে এসে পড়ল। ওদের ঠিক মাঝখানে। ওটা থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। প্রায় সাথে সাথেই সবাই কাশতে লাগল। আবারও একই শব্দ হলো। কনস্টেবল আর ওসির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। জিনিসটা ওদের বেশি কাছে পড়াতে ধোঁয়া সরাসরি ঢুকে গেছে ওদের নাকে-মুখে হাসান দাঁড়িয়ে ছিল ওসির বেশ কাছে, নিজের মুখটা এক হাতে আড়াল করে অন্য হাতে খপ করে ধরে ফেলল ওসির হাতের পিস্তলটা। একটানে ওটা ছিনিয়ে নিয়ে ওটার বাঁটটা বসিয়ে দিল ওসির কানের নিচে। ওসি ঢুলে পড়েতেই পিস্তলটা পকেটে ঢুকিয়ে সে এক হাতে অরণিকে নিয়ে ঢুকে গেল ক্যাবের ভেতরে। চাচা প্রস্তুত হয়েই ছিল। ওরা ঢুকতেই চাচা গাড়ি ছেড়ে দিল।
অনেকটা পথ গাড়ি চালিয়ে চাচা গাড়িটা পার্ক করল একটা গলির ভেতরে। সবার অবস্থাই বিধ্বস্ত। হাসান অরণির দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল। অরণিও হেসে ফেলল। দুজনেই হাসছে, চাচাও যোগ দিল ওদের সাথে। সবাই হাসছে, ব্যাপারটা অনেকটা নিজেদের হালকা করার মতো।
হঠাৎ হাসান একটা হাত বাড়িয়ে প্রচণ্ড জোরে একটা চড় মারল অরণির গালে।