২১
পুরান ঢাকা
বর্তমান সময়, বেলা ৪টা ৩০ মিনিট
এএসপি আতিকুর রহমান তার জিপে বসে আছে। বকশি বাজারের কাছে জ্যামে আটকে আছে তাদের জিপ। মেজাজটা অসম্ভব খিচড়ে আছে তার। একটু আগে ওপর ওয়ালার সাথে তুমুল কথা কাটাকাটি হয়েছে। মাঝে মাঝে তার মনে হয় চাকরিটা ছেড়ে দিলেই বোধ হয় ভালো হয়। চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাইরে চলে যায় অথবা এমবিএ করে কোনো কর্পোরেট হাউজে জয়েন করে। এমনিতেও সে বিজনেস ফ্যাকাল্টির স্টুডেন্ট ছিল। বেশ ভালো ছাত্রই ছিল বলা চলে। বসুন্ধরা সিটির মালিক চাপ দিয়েছে তো আমার কী! আমি আমার কাজ করছিলাম। তবে হ্যাঁ, ক্ষতিটাও আসলে মারাত্মক হয়েছে এবং এক অর্থে বলা চলে এই ঝামেলার জন্য সে নিজেও খানিকটা দায়ী, তাই সে চুপ করে ছিল। তেমন কোনো উত্তর দেয়নি। এরপর তার মেজাজাটা খারাপ হয়ে যায় যখনি বলে তাকে এই কেস থেকে সরিয়ে দেবে। সে সোজা বলেছে এই কেসের শেষ না দেখে সে ছাড়বে না। এরপর তার স্যার আর বেশি কিছু বলেনি। সেও বেরিয়ে এসেছে।
বসুন্ধরা সিটি থেকে ক্রু ধরে ধরে সে বুঝতে পেরেছে ওই ছেলে এবং মেয়েটা এখন পুরান ঢাকায় আছে। সম্ভবত পাটুয়াটুলির ওদিকে কোথাও। ওদিকেই যাচ্ছে সে। নিশ্চয়ই ওখানে কিছু একটা পাওয়া যাবে। কিন্তু সে এটা বুঝতে পারছে না এই ছেলে এবং মেয়েটা আসলে চাচ্ছেটা কী। এদেরকে তার মোটেও সাধারণ ক্রিমিনাল বলে মনে হচ্ছে না। নিশ্চয়ই এর পেছনে গুরুতর কোনো কাহিনি আছে। তাকে সেটা বের করতে হবে। আর এজন্য তাকে প্রথমে ওই ছেলে আর মেয়েটার কাছে পৌঁছতে হবে।
“ঘটনা কী বুঝলাম না,” অরণি বেশ বিস্ময়ের সাথে বলল। “ওপরে লেখা ব্রাহ্মসমাজ অফিস, আর নিচে দেখি পাবলিক টয়লেট। বাপার কী?”
হাসান এদিক-ওদিক তাকাল। এক বয়স্ক গার্ড একটা টুলে বসে বসে ঝিমাচ্ছে। “চাচা, এই ব্রাহ্মসমাজের অফিসটা কোথায়? এখানে তো দেখি বাথরুম।”
“হে হে হে এডাই তো ওয় আমাগো দেশে,” চাচা হাসতে হসতে বলল।
“কেন? পাবলিক টয়লেট কেন, এখানে?” অরণি জানতে চাইল।
“আরে বেটি বুঝো না, এইডা বাংলাদেশ। এইহানে বাগান দখল কইরা কিলিনিক ওয়, অফিস দখল কইরা টয়লেট ওয়। তোমাগো কী দরকার হেইডা কও।”
“আমরা এই ব্রাহ্মসমাজের অফিসটা খুঁজছিলাম।”
“অফিস তো আর নাই। এইহানে হেরা প্রত্যেক রবিবার না কুনদিন জানি আহে। তয় ওইহানে একটা পোলা থাহে। মনে ওয় হেই সব দেহাশুনা করে। তোমাগো কিছু জানবার থাকলে হের কাছে জিগাইতে পারো। ওই যে ওই বাড়িড়াতে থাহে হেয়।”
চাচার দেখানো বাড়িটার দিকে তাকাল ওরা। ব্রাহ্মসমাজের বাড়িটার সামনে সুন্দর বাড়িটাতে থাকে মনে হলো অরণির কাছে। ওরা দারোয়ান চাচাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার চলে এলো ভবনটার সামনের দিকে। এখানে এসে বড় গেটের ভেতরের ছোট গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকল। বাড়িটার সামনে একটা পিচ্চি মেয়ে একা একা বল নিয়ে খেলছে।
ওদরেকে ঢুকতে দেখে দৌড়ে চলে এলো ওদের সামনে। ভারি সুন্দর একটা মেয়ে, চোখগুলো পিঙ্গল রঙের। এত সুন্দর পিঙ্গল চোখ অরণি এর আগে কখনো দেখেনি। পিচ্চি মেয়েটা ওদের কাছে এসে অরণির জামা ধরে টানতে টানতে বলল, “তোমরা কি বিয়ে করতে এসেছ?”
অরণি হাসানের দিকে তাকাল। ওর চোখে জিজ্ঞাসা। এত কিছু থাকতে এই পিচ্চি বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করল কেন।
“না মামণি, তোমাদের বাসায় কেউ আছে?”
অরণি প্রশ্ন করতে করতে ভেতর থেকে যুবক বয়সের একজন মানুষ বেরিয়ে এলো। “আম্মু—”
সম্ভবত পিচ্চিটাকে ডাক দিচ্ছিল, অরণি আর হাসানকে দেখে থেমে গেল। “আপনারা…বিয়ের জন্য এসে থাকলে আজকে তো একটু লেট হয়ে গেছে।”
“সরি?” ওরা বুঝতে পারছে না এরা বারবার বিয়ে বিয়ে করছে কেন।
“না আমরা আসলে অন্য একটা দরকারে এসেছিলাম,” হাসান এগিয়ে গেল কথা বলার জন্য।
“ওহো, দুঃখিত। এখানে আসলে লোকজন খুব একটা আসে না তো, আর ইয়াং কাপলরা সাধারণত বিয়ে করার জন্যই আসে। এই কারণে ইয়ং কাপল দেখলেই আমরা ধরে নেই তারা বিয়ে করতেই এসেছে,” লোকটা একটু লজ্জা পেয়ে গেছে।
“কেন? এখানে বিয়ে করতে আসে কেন লোকজন? আপনারা কি বিয়ে পড়ান?” হাসান বেশ অবাক হয়েছে লোকটার কথায়।
“হ্যাঁ, ইন্টার রিলিজিওন ম্যারেজ তো একমাত্র এখানেই করানো হয়,” বলে লোকটা হাসল। “আপনারা জানেন না? ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে আইনগতভাবে একমাত্র আমাদের এখানেই বিয়ে পড়ানো হয়। অবশ্য একমাত্র বলাটা ঠিক না। কারণ বাংলাদেশে আরও তিনটা জায়গাতে পড়ানো হয়। পল্টনে, সিলেটে আর চিটাগাঙে। তবে এখানেই সবচেয়ে বেশি বিয়ে পড়ানো হয়ে থাকে। এটা আমাদের ব্রাহ্মসমাজের অনেক পুরানো একটা পদ্ধতি। আচ্ছা আপনারা কেন এসেছেন?”
“আমরা এসেছি আপনাদের লাইব্রেরিতে। ওটা নাকি বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরানো লাইব্রেরি। আমরা কয়েকটা বই খুঁজতে এসেছি,” হাসান বলল।
“বই খুঁজতে এসেছেন। কিন্তু আমাদের লাইব্রেরি তো বন্ধ,” লোকটা জানাল।
“বন্ধ মানে কি আজকে বন্ধ হয়ে গেছে?” অরণি প্রশ্ন করল।
“নাহ আজকে না অনেকদিন ধরে বন্ধ। এই যে ছোট্ট বাড়িটা দেখছেন এখানে ছিল আমাদের লাইব্রেরি। এটার অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছেন। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। তাই বইগুলো ওখান থেকে সরিয়ে আপাতত লাইব্রেরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।”
“কতদিন হলো আপনাদের লাইব্রেরি বন্ধ?”
“সে তো কয়েকমাস ধরে বন্ধ। অবশ্য এর আগেও লাইব্রেরি যে খুব চালু ছিল তা কিন্তু না। অনেকদিন ধরে লাইব্রেরিতে কেউ আসে না। ধুলো ময়লা পড়ে বই সব নষ্ট হচ্ছিল। এরপর এই বাড়ির একটা অংশে ফাটল ধরার পর আমরা মাস ছয়েক আগে লাইব্রেরিটা বন্ধ করে দেই।”
“আপনি শিওর লাইব্রেরি ছয় মাস যাবৎ বন্ধ? এর ভেতরে কেউ আসেনি?” অরণির মনে হচ্ছে আবারও ওরা কানা গলির ভেতরে পড়ে যাচ্ছে।
“নাহ খোলা লাইব্রেরিতেই কেউ আসত না।”
“আমাদের দেশের মানুষ গাউড বই আর নোট বই ছাড়া অন্য কোনো বই পড়ে, বলেন? আর এসব পুরানো বই ঘাঁটতে কে আসবে?”
দুজনেই হতাশ হলো। ভেবেছিল এখানে কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু পাবে কিন্তু আবারও হতাশা।
ওরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল হঠাৎ লোকটা ডাক দিল। “আচ্ছা দাঁড়ান দাঁড়ান গত সপ্তাহে মনে হয় একজন ভদ্রমহিলা এসছিলেন। তিনিও সম্ভবত একটা বই খুঁজতেই এসেছিলেন। অথবা অন্য কোনো একটা দরকারে। আমি ঠিক জানি না। আমি তখন বাইরে ছিলাম।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা তার ব্যাপারেই জানতে চাচ্ছিলাম। তিনি কি লাইব্রেরিতে গিয়েছিলেন। আসলে সঠিকভাবে বলতে গেলে তিনি কী খুঁজছিলেন বলতে পারবেন?”
“আসলে আমি তখন ছিলাম না। আমার স্ত্রী ছিল। আপনারা একটু দাঁড়ান আমি ওকে জিজ্ঞেস করে দেখছি,” বলে লোকটা পিচ্চিটাকে কোলে নিয়ে ভেতরে চলে গেল। পিচ্চিটা বাবার কোলো উঠে ভেতরে যেতে যেতে ওদরেকে বাই দিল। অরণিও পিচ্চিটাকে হাত নেড়ে বাই দিল I
“কী সুন্দর বাচ্চা, তাই না?” অরণি হাসতে হাসতে বলল।
“আরে ধুৎ তুমি আছ বাচ্চা নিয়ে। আমি আছি মহা চিন্তায়। আবার যেন কানাগলিতে পড়তে না হয়,” শেষের কথাটা হাসান বিড়বিড় করে বলল।
লোকটা একটু পরেই বেরিয়ে এলো। “আসলে ওইদিন বাসায় আমি ছিলাম না। আমার স্ত্রী ছিল। ওই ভদ্রমহিলা এসে লাইবেরিটা দেখতে চান। তারপর—”
“তারপর?” দুজনেই অস্থির হয়ে আছে জানার জন্য।
“তারপর আমার ওয়াইফ ঢুকতে দেয়নি। কিন্তু বারবার রিকোয়েস্ট করতে থাকেন তিনি। তার অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পেরে অবশেষে তাকে ঢুকতে দেয় আমার স্ত্রী। তিনি কিছুক্ষণ থেকে কয়েকটা বই ঘাঁটাঘাঁটি করে চলে যান।”
“আপনাদের লাইব্রেরিটা আমাদের দেখতে হবে,” হাসান ফট করে বলে বসল।
“মানে,” অরণি বিষয়টাকে সহজ করার জন্য বলল। “আমাদের ওই বইগুলো দেখা খুবই জরুরি,” অরণি বলে উঠল অনেকটা কাতর কণ্ঠে।
“দেখুন লাইব্রেরিটা যদি খোলা থাকত তবে কোনো ব্যাপার ছিল না। কিন্তু আসলে বইগুলো রাখা আছে উপাসনালয়ের ভেতরে ওখানে এভাবে ঢুকতে দেওয়ার নিয়ম নেই।”
“প্লিজ, ব্যাপারটা আমাদের জন্য খুবই জরুরি। আমাদের জীবন-মরণের প্রশ্ন। ওই ভদ্রমহিলা আমার মা ছিলেন। তিনি এখানে আসার পরদিনই খুন হন। আমাদের জানা দরকার আসল ঘটনাটা কী। এখানে হয়তো কিছু একটা পেতে পারি আমরা।”
লোকটা এখনও চুপ করে আছে। মানে দেখতে দেবে কি দেবে না এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। অরণি বলে উঠল, “প্লিজ, একটু বিবেচনা করে দেখুন। আমরা কিছুক্ষণ সময় নেব মাত্র। কয়েকটা বই তো দেখব। দরকার হলে আপনি আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন।”
“ঠিক আছে, এত রিকোয়েস্ট করতে হবে না,” লোকটা অরণির বলার ভঙ্গিতে হেসে ফেলল। “কয়েকটা বই দেখবেন তো। ঠিক আছে আপনারা দাঁড়ান আমি চাবি নিয়ে আসছি।
“একটু শুনুন প্লিজ,” লোকটা ভেতরে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, অরণি তাকে থামাল। “ওই ভদ্রমহিলা যিনি এসেছিলেন তিনি কোন বইগুলো দেখেছিলেন যদি একটু জানাতে পারতেন তাহলে ভালো হতো।”
লোকটা সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে চলে গেল। একটু পরে ফিরে এলো চাবির এক বিশাল গোছা নিয়ে। বিশাল বড় বড় একেকটা চাবি। অরণি চাবিগুলো দেখে মনে মনে চিন্তা করল চাবি যদি এত বড় হয় তাহলে তালা না জানি কত বড়।
লোকটা চাবি হাতে বেরিয়ে এসে ওদেরকে বলল, “লাইব্রেরিটা ভেঙে ফেলা হবে দেখে আপাতত সমস্ত বই উপাসনালয়ের ভেতরে একটা ঘরে অনেকটা লাইব্রেরির মতো করেই সাজিয়ে রেখেছি। আপনারা আসুন আমার সাথে। আসলে বইগুলো দেখাতে চাচ্ছিলাম না কেন, এখানে অথরিটি আছে। আমি তো চাকরি করি মাত্র। প্রতি রবিবার সন্ধ্যায় এখানে প্রার্থনা হয়, আলোচনা সভা হয়,” লোকটা হাঁটতে হাঁটতে বলল।
“এখানে এখনও প্রার্থনা হয়?” হাসান কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইল। “হ্যাঁ, প্রার্থনা হয়। এখানকার ব্রাহ্মসমাজের প্রায় সবাই আসেন। আমাদের দেশের অনেক গণ্যমান্য লোকজন এই মতে বিশ্বাস করেন।”
“আচ্ছা, এই ব্রাহ্মসমাজের অফিসের সাইনবোর্ডের নিচে পাবলিক টয়লেট কেন?” অরণি কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইল।
লোকটা কোনো উত্তর দিল না দেখে ওরা আর জানতে চাইল না। “এই যে বাগানটা দেখছেন,” বলে সে বাড়ির সামনের বাগানটা দেখাল। “এই বাগানটা আরও অনেক বড় ছিল। ওই অংশটাও আগে বাগান ছিল। আপনারা কি জানেন এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আসতেন?”
“তাই নাকি?” হাসান বেশ অবাক হলো শুনে।
“হ্যাঁ, তিনি একাধিকবার এখানে এসেছিলেন। তিনি এখানে এলে নাকি বিকেল বেলা সামনের বাগানে হাঁটাহাঁটি করতেন। আর রাতের বেলা ওই যে লাইব্রেরি ভবনটা যেটা দেখছেন। মানে যেটা ভেঙে ফেলা হবে ওটার বারান্দায় বসে কবিতা লিখতেন। তখন কিন্তু বুড়িগঙ্গা নদী এই বাড়িটার একদম সামনেই ছিল।”
“একদম সামনে মানে? এখন যেটা রাস্তা, সেখানে?” হাসান জিজ্ঞেস করল।
“অনেকটা তাই,” লোকটা তালা খুলতে খুলতে জবাব দিল। ইতোমধ্যেই ওরা বিরাট বাড়িটাতে প্রবেশ করেছে। দুজনেই ওপরে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে বিরাট বাড়িটার সৌন্দর্য। লোকটা ওদেরকে নিয়ে চলে এলো ভেতরের একটা ঘরে। ওটার সামনে দাঁড়িয়ে তালা খুলতে লাগল।
“কী দারুণ, তাই না,” হাসান মন্তব্য করল।
“অসাধারণ। এত এত বছর পরেও কী চমৎকার রয়েছে সবকিছু। আর আর্কিটেকচারাল ডিজাইনটাও দারুণ,” অরণিও মুগ্ধ।
লোকটা তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল। সাথে সাথে ওরাও ঢুকল ভেতরে। কেমন জানি ভ্যাপসা একটা গন্ধ। বাতি জ্বেলে দিতেই দেখা গেল, চারপাশে থরে থরে বই সাজানো। প্রতিটা বইয়ের কলামের ওপর একটা করে নম্বর দেওয়া। টেম্পোরারি রাখার কারণে কোনো র্যাক ব্যবহার না করে সারি সারি কলামের মতো বই সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
লোকটা ওদেরকে দাঁড়াতে বলে প্রতিটা র্যাকের নম্বর চেক করে দেখতে লাগল। একটা কলামের সামনে দাঁড়িয়ে নম্বরটা পড়ে ডাক দিল ওদরেকে। “এই সারিটাতেই আপনার মা বই চেক করেছিলেন। মানে তিনি দেখা শেষ করে বইটা এই সারিতেই রেখেছিলেন।”
ওরা দেখতে লাগল মনোযোগ দিয়ে।
“আপনারা দেখুন আমি এখানেই দাঁড়ালাম,” লোকটা বলল।
“ঠিক আছে, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, অরণি বলে সে মনোযোগ দিয়ে বই দেখতে লাগল। হাসান ইতোমধ্যেই মাটিতে বসে চেক করতে শুরু করেছে। “দারুণ সব বই। এত পুরানো সব বই মনে হয় না বাংলাদেশের আর কোথাও পাওয়া যাবে।”
“এই সারিতে সবই প্রায় ইতিহাসের বই,” অরণি দেখতে দেখতে মন্তব্য করল।
“না অরো, তুমি একটু ভুল বললে। এগুলো ইতিহাসের বই কিন্তু ইতিহাসের একটা বিশেষ শাখার বই। এখানে শুধুমাত্র পুরানো মিথ আর লেজেন্ডের বইগুলোই আছে। আর আছে বিভিন্ন কাল্টের ওপর বই।”
“যদিও আমরা জানি মা এই সারি থেকেই বই নিয়েছিল। কিন্তু তারপরও এতগুলো বইয়ের ভেতর থেকে আমাদের নির্দিষ্ট বইটা বের করব কীভাবে। মানে কোন বইটাই আমাদের দরকার সেটা বুঝব কীভাবে?”
“একটা অপশন হতে পারে লেজেন্ড আর কান্টের সব বই খুঁজে দেখা। অন্য আরেকটা অপশন হতে পারে…” হাসান বইগুলোর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কীভাবে সম্ভাব্য বইটা বের করবে।
“তোমার প্রথম অপশন প্রথমেই বাদ,” অরণি বলল। “কারণ এত বই এত এত পেজ, প্রত্যেকটা চেক করা অসম্ভব।”
“তাহলে একটা সম্ভাবনা হতে পারে শুধু ওপরের বইগুলো আমরা খুঁজে দেখতে পারি। কারণ ম্যাডাম যদি বই বের করে দেখে থাকেন তবে অবশ্যই তিনি দেখার পরে নিশ্চয়ই সেটাকে এই বইয়ের স্তূপের নিচে ঢোকাতে যাবেন না। আর যুক্তি বলে তিনি ছিলেন একা এবং একা অনেকগুলো বই সরিয়ে নিচে ঢোকানো সম্ভব নয়।”
“হ্যাঁ এটা হতে পারে,” বলে অরণি সবার ওপরের বইটা তুলে নিল। একটা ইংরেজি বই ‘কনফেশন অভ আ থাগত। “এটা মনে হয় ঠগিদেরকে নিয়ে,” সে উলটে-পালটে দেখছে। হাসান বইটা হাতে নিল।
“নাহ মনে হচ্ছে না মা এটা দেখেছিল। কারণ এটা দেখেই মনে হচ্ছে বহুদিন এটাতে কারও হাত পড়েনি,” ও বইটা রেখে দ্বিতীয়টা তুলে নিল। এটা একটা বাংলা বই। ভূভারতের ইতিহাস নিয়ে লেখা। নাহ এটাও না। তারপরের বইটাও একটা বাংলা বই ‘প্রাচীন বাংলার বিদ্রোহ’ নিয়ে লেখা। তারপেরর বইটা মোটা একটা বই ‘কিংবদন্তির ঢাকা’ বাংলাদেশি একজন লেখক নাজির হোসেনের লেখা। হাসান বইটা উলটে-পালটে দেখছে, অরণি পাঁচ নম্বর বইটা তুলে নিল। এই বইটা অন্যান্য বইগুলোর তুলনায় অনেকটাই পরিষ্কার মনে হয়েছে তার কাছে।
বেশ মোটা একটা বই। অনেক অনেক পুরানো। পাতাগুলো লাল হয়ে ক্ষয়ে গেছে। সে মলাটের ওপর বইটার নাম পড়ল ‘কাল্ট অ্যান্ড মিথস্ ইন ওল্ড ইন্ডিয়া’ লেখকের নামটা একজন ইংরেজের। অরণি বইটা প্রকাশের সাল দেখল চল্লিশের দশকে লেখা। তার মানে ভারতবর্ষ স্বাধীনের ঠিক আগ দিয়ে প্রকাশিত এই বইটা। বইটা ওলটাতে গিয়ে সূচিপত্রের দিকে চোখ বুলাতে গিয়ে অরণি অস্ফুটে শব্দ করে উঠল। হাসান অরণির শব্দ শুনে ওর দিকে এগিয়ে এসে কাঁধের পেছন থেকে উঁকি দিল। অরণি সূচিপত্রের একটা বিশেষ জায়গায় আঙুল দিয়ে দেখাল।
সূচিপত্রের এক জায়গায় পেনসিল দিয়ে টিক চিহ্ন দেওয়া হয়েছে এবং টিক চিহ্নের পাশেই ছোট্ট করে ইংরেজিতে লেখা ‘অরো। “এ তো তোমার নাম,” হাসান বলে উঠল।
“হ্যাঁ, একমাত্র মা-ই আমাকে এই নামে ডাকত, আর তুমি,” অরণি মৃদু স্বরে বলল।
হাসান অন্য বইগুলো রেখে ওর হাত থেকে বইটা নিয়ে নিল। দুজনেই মেঝেতে বসে দেখতে লাগল বইটা। সূচিপত্রের যে জায়গাটাতে দাগ দেওয়া ওটাতে চোখ বুলাল। পুরো বইটাই লেখা হয়েছে প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন গোত্র, বিদ্রোহ গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন ধরনের কাল্ট এবং তাদের মিথ নিয়ে। যে জায়গায় দাগ দেওয়া ওই অধ্যায়টার টাইটেলটা হাসান পড়ল।
“ লেজেন্ড অভ বোক্রেন হর্স অ্যান্ড পসিবল কাল্টিজম।”
“এইটাই সেই বই,” অরণি ঘোষণা করার সুরে বলল।
“অধ্যায়টা বের করো,” হাসানের বলার আসলে দরকার ছিল না। কারণ অরণি ইতোমধ্যেই অধ্যায় উলটাতে শুরু করেছে। অধ্যায় নম্বর এগারো। পৃষ্ঠা নম্বর মিলিয়ে নির্দিষ্ট জায়গাটায় এসে দুজনেই হাঁ হয়ে গেল।
“সর্বনাশ এখানে তো পৃষ্ঠাগুলো নেই,” হাসানের গলায় হাহাকার।
“অরণি উলটে-পালটে দেখার চেষ্টা করছে। পুরো বইটা ঘেঁটেও পৃষ্ঠাগুলো পাওয়া গেল না। “সর্বনাশ পেজগুলো তো নেই,” সে আবারও পুরো বইটা উলটে-পালটে দেখছে।
“তোমার কি মনে হয় মা এগুলো সরিয়েছে?” অরণি হাসানকে প্রশ্ন করল।
“আচ্ছা যেখানে পেজগুলো নেই ওই জায়গাটা বের করো তো,” হাসানের কথামতো অরণি আবারও জায়গাটা বের করল। “নাহ আমার মনে হয় না। কারণ দেখো ছেঁড়া জায়গাগুলো একদম নতুন না। যত পুরানো বই-ই হোক কোনো জায়গা নতুন ছিঁড়লে একটু হলেও পৃষ্ঠাগুলোর ছেঁড়া জায়গার ধার রয়ে যাবে অথবা কিছু কিছু জায়গা সাদা হয়ে থাকবে। ম্যাডাম এখানে এসেছিলেন গত সপ্তাহে। এগুলো ছেঁড়া হয়েছে অনেক আগেই। ছেঁড়া জায়গার ধারগুলো একদম বসে গেছে,” হাসান উলটে-পালটে দেখছিল, হঠাৎ একজায়গায় থেমে গেল। কিছু একটা তার চোখে পড়েছে।
“দাঁড়াও দাঁড়াও এখানে কিছু একটা লেখা,” হাসান একটা জায়গায় এসে থেমে গেছে। যে অধ্যায়টাতে মার্ক করা ছিল সেটা যে জায়গায় শেষ হয়েছে মানে সরিয়ে নেওয়া পৃষ্ঠাগুলো যেখানে শেষ, সেখান থেকে অন্য একটা অধ্যায় শুরু হয়েছে। সেই অধ্যায়টার ওপর পেনসিল দিয়ে কিছু একটা লেখা। এই একই কালি দিয়ে শুরুতে মার্ক করা ছিল
দুজনেই লেখাটা পড়তে লাগল। ইংরেজিতে ছোট ছোট করে লেখা ‘মিসিং লিডস’ লিখে একটা তির চিহ্ন দেওয়া তার নিচে একটা নাম লেখা এবং একটা ঠিকানা দেওয়া।
অরণি মৃদু স্বরে নামটা পড়ল, “খন্দকার আহমদ বশির, ওয়ারি এটা মায়ের হাতের লেখা। তার মানে কি আমাদের এখন এই লোককে খুঁজে বার করতে হবে?” বলে সে হাসানের দিকে তাকাল। হাসানের মুখ সাদা হয়ে গেছে।
“ওহো নো, নো নো নো,” হাসান বিড়বিড় করে বলছে।
“কী ব্যাপার? কী হলো?” অরণি হাসানের এক্সপ্রেশন দেখে ভয় পেয়ে গেছে। “কী হলো কিছু বলছ না কেন?”
হাসান হঠাৎ অরণির হাত চেপে ধরল। “চলো এখান থেকে বের হই। আমাদের এখানকার কাজ শেষ।” বলে সে বইটা অরণির হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বইয়ের সারির ওপর রেখে দিয়ে রীতিমতো ওকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে চলল।
“হলো কী? আমাকে ঠিকানাটা লিখে নিতে দাও।”
“লেখা লাগবে না। এই ঠিকানা আমি খুব ভালো করেই চিনি। চলো এখন চলো,” বলে সে ব্রাহ্ম উপাসনালয়ের লোকটাকে ধন্যবাদ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। অরণি হঠাৎ থেমে গেল। “হাসান তুমি কিছু একটা বলছ না। ব্যাপার কী? ওই নামটা দেখার পর থেকে তুমি এমন করছ কেন? কে এই লোক?”
হাসান থেমে দাঁড়াল। “এই লোক হলো সেই লোক যার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার কারণে সে আমার মাথার ওপর দাম ধরেছিল। সে বলেছিল একদিন সে আমাকে উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে এবং বলা হয়ে থাকে এই লোকই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অ্যান্টিক চোরাচালানি।
.
অনেকক্ষণ ধরে সে একই জায়গায় পায়চারি করছে। বিরক্তির একটা সীমা আছে। অবশ্য সে যেই কাজ করে তাতে ধৈর্য হলো সবচেয়ে বড় অস্ত্র। সেটা কাউকে ফলো করার ব্যাপারেই হোক আর গুলি করার ব্যাপারেই হোক। ধৈর্য হলো সবচেয়ে বড় বন্ধু। কতক্ষণ আগে ছেলেমেয়ে দুটো এই পুরানো ভবনের গেট দিয়ে ঢুকেছে। এখনও কোনো খবর নেই। তবে তার চিন্তিত হওয়ার আরও বেশ কয়েকটা কারণ আছে। একটু আগে এখান দিয়ে তিনটা পুলিশের জিপ গেছে। যেতেই পারে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রথম জিপটার ভেতরে সে পুলিশের সেই লোকটাকে বসে থাকতে দেখেছে যাকে সে বসুন্ধরা সিটিতে দেখেছিল। তার মানে কি ওই পুলিশ অফিসার ট্রেস করে এই পর্যন্ত চলে এসেছে। যদি এসেই থাকে তবে ওই দুজনের জন্য এটা সমূহ বিপদের খবর। …এবং ওই দুজনের জন্য বিপদের খবর মানে তার জন্য বিপদের খবর। কারণ এই মুহূর্তে তার কাজই হলো দুজনকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করা। বিরক্তির সাথে সে আবারও পায়চারি শুরু করল। এমন সময় দুজন ভবনটার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। আহ, যাক বেরিয়েছে।
.
“সর্বনাশ, তাই নাকি?” অরণিও চমকে উঠেছে কথাটা শুনে। “কিন্তু, কিন্তু এই লোকের সাথে তাহলে… নাহ আমি আসলে বুঝতে পারছি না। পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে একদম ঘোলাটে লাগছে। আমি খেই হারিয়ে ফেলছি। এই লোক তাহলে আমাদের ঘটনার সাথে কীভাবে সংযুক্ত?”
“আমিও বুঝতে পারছি না। এতক্ষণ পর্যন্ত যা বুঝতে পারছিলাম এখন আমার কাছেও সব গুলিয়ে উঠছে। এই বিশেষ মানুষটির নাম এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট জানার পর থেকে এখন আমার কাছেও সব ওলট-পালট লাগছে,” হাসানকে একদম দিশেহারা দেখাচ্ছে।
“আচ্ছা, তোমার কি মনে হয় এই লোকই এসবকিছু ঘটাচ্ছে?” অরণি জানতে চাইল
“বুঝতে পারছি না,” হাসান পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে বলল।
“কাকে ফোন করছ?” অরণি জানতে চাইল।
“চাচাকে এখানে আসতে বলি,” বলে হাসান কল করে চাচাকে নির্দেশনা দিতে লাগল কোথায় আসতে হবে। ইতোমধ্যেই ওরা হাঁটতে হাঁটতে ব্রাহ্ম উপাসনালয়ের গেট পার হয়ে মূল রাস্তায় উঠে এসেছে। চাচাকে আসতে বলেছে পাটুয়াটুলি চশমার মার্কেটের সামনে। চাচা জানিয়েছে তার আসতে কয়েক মিনিট লাগবে কারণ সে গাড়িতে গ্যাস ভরছে।
ফোনটা রেখে হাসান অরণিকে বলল, “চাচা যে কষ্ট করছে তাকে অন্তত গ্যাসের টাকাটা হলেও দিতে হবে। আর সাথে কিছু টাকা জোর করে হলেও দিয়ে দিতে হবে।”
“হ্যাঁ ঠিক আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এখন আমরা যাব কোন দিকে? কিছু ঠিক করেছ?” অরণি জানতে চাইল। হাসান শুধু মাথা নাড়ল। কিছুই বলল না। “আচ্ছা এই লোক আসলে কে? এই খন্দকার আহমদ বশির? আর তোমার সাথে এর সমস্যাটা কী?”
“এই লোক হলো মিস গাইডেড ট্যালেন্ট। একজন জিনিয়াস টাইপের… হঠাৎ সে থেমে গেল। ওরা রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছিল হঠাৎ তীব্র বেগে এগিয়ে এসে একটা পুলিশের জিপ ব্রেক করল ওদের সামনে। হাসান খপ করে অরণির হাত চেপে ধরল।
দুজনের কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই জিপের ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে ছিটকে বের হলো একজন। বের হতে হতেই পিস্তল বের করে ফেলেছে সে। “হোল্ড, “ চিৎকার করে উঠল সে। “দুজনেই, হাত ওপরে।”
.
এসপি আতিকুর রহমান অত্যন্ত বেজার মুখে এসে গাড়িতে উঠল। বসুন্ধরা সিটির অ্যান্টিকের দোকান থেকে যে ক্লু পেয়ে সে এখান পর্যন্ত এসেছে সেটা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ওখান থেকে যে দোকানের লিড পেয়েছে সেটাতে কাজ হয়নি। দোকান বন্ধ থাকার পরও সে দোকানের মালিকের বাসা খুঁজে বার করেছে। লোকটা বাসায় নেই। সামনের দোকানদার বলেছে সে কিছুক্ষণ আগেই লোকটাকে বেরোতে দেখেছে। তার কাছ থেকে নম্বর নিয়ে কল করেও কোনো কাজ হয়নি, মোবাইল বন্ধ। মেজাজ খারাপ করে সে জিপে উঠে ড্রাইভারকে বলল থানায় ফিরে যেতে। ড্রাইভার বাবুবাজারের দিকে জিপ ঘোরাচ্ছে তখন সে ওইদিক দিয়ে না গিয়ে পয়েন্টের দিক দিয়ে যেতে বলে। কারণ এত চিপাচাপা গলি তার ভালো লাগে না।
এই সামান্য ব্যাপারটাই যে তার এত বড় সৌভাগ্যের কারণ হবে কে জানত। গাড়ি পাটুয়াটুলি ক্রশ করছে হঠাৎ সে দেখে সামনে দুটো ছেলেমেয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। খেয়াল করার মতো বিশেষ কোনো কারণ নেই। একদম সাধারণ চেহারা। মেয়েটার মাথায় কাপড় দেওয়া আর ছেলেটার চোখে চশমা। কিন্তু সচেতন থাকার কারণেই হোক আর এরকম কাউকে খুঁজছে এই কারণেই হোক সে ছেলেটার মুখের দিকে তাকাল। সাথে সাথে সে চিনতে পারে, এরাই। এদেরকেই সে খুঁজছে। সাথে সাথে জিপ ব্রেক করতে বলে লাফ দিয়ে নেমে পিস্তল তোলে ওদের দিকে।
“হোল্ড,” চিৎকার করে উঠল। “দুজনেই,” বলে সে পিস্তলের মাথা নাড়াল। “হাত ওপরে।”
.
পুরো ব্যাপারটা তার চোখের সামনেই ঘটে গেল। ব্যাপারটা সে ফলো করল অনেকটা টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখার মতো। ছেলেমেয়ে দুটো ব্রাহ্ম উপাসনালয় থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তায় হাঁটছে সে তখনও পিছু নেয়নি। কারণ ওরা তখনও হেঁটে তাকে ক্রশ করেনি। আর সে বোঝার চেষ্টা করছে এরা কোন দিকে যেতে পারে। হঠাৎ পুলিশের সেই তিনটে গাড়ি কোথা থেকে এলো সে নিজেও বুঝতে পারল না। আচমকা সামনের জিপটা হার্ড ব্রেক করল। পেছনের গাড়ি দুটোও বাধ্য হলো থেমে যেতে। সবার পেছনের গাড়িটা আরেকটু হলে মাঝের গাড়িটাকে ঠুকে দিয়েছিল।
গাড়িগুলো থামার প্রায় সাথে সাথেই সামনের জিপের ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে একজন পুলিশ অফিসার ছিটকে বেরিয়ে এলো।
“হোল্ড, “ চিৎকার করে উঠল পুলিশ অফিসার। “দুজনেই,” পিস্তল নেড়ে বলল। “হাত ওপরে।”