১৩
মতিঝিল, ঢাকা বর্তমান সময়, বেলা ১টা
“ভয় পেয়ো না, এক কাজ করো, ওড়না দিয়ে মাথাটা ঢেকে ফেল। আর স্বাভাবিক থাকো একদম,” হোটেল থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে হাসান অরণিকে বলল। মুখে যতই বলুক স্বাভাবিক থাকতে, আসলে সেও ভয় পেয়েছে। এরকম ঘটনা সে এর আগে দেখেনি। পুলিশ ওদের পিছু লাগবে এটা তো জানা কথা কিন্তু এভাবে টিভি চ্যানেলে ওদের ছবি চলে আসবে তাও এত দ্রুত এটা তার কল্পনাতেও আসেনি।
“চাচা যদি না আসে তাহলে আমরা কী করব?” অরণির গলার স্বরও মৃদু হয়ে গেছে। বোঝা যাচ্ছে সে বেশ ভয় পাচ্ছে। নিজের মায়ের খুনিকে বের করতে গিয়ে এখন সে নিজেই পলাতক অপরাধী হয়ে গেছে। ভাবতেই তার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।
“শোনো অরণি,” হাসান ওর দিকে ফিরে বলল। “ঘটনা যখন ঘটে গেছে এখন আর পিছু ফিরে দেখার উপায় নেই। এখন সামনেই এগোতে হবে। যাই ঘটুক আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। বাই এনি চান্স চাচা যদি না আসে তবে অন্য কোনো ব্যবস্থা করতে হবে।”
“কিন্তু করবেটা কী?
“দেখি আগে চাচা আসে কি না।”
নটরডেম কলেজের সামনে আসতে দুজনেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। একটা সাদা গাড়ি নিয়ে চাচা দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখে। “কী ব্যাপার, আম্মাজান, আপনেরা এত দেরি করলেন? আমি তো চিন্তায় পইড়া গেছিলাম।”
“চাচা জলদি গাড়ি ছাড়েন,” হাসান অরণিতে এক হাতে ধরে গাড়ির দিকে যেতে যেতে বলল। দুজনেই চটজলদি উঠে বসল গাড়িতে।
চাচাও উঠে বসেছে। গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে সে বলল, “কী ব্যাপার মামণি, কিছু হইছে নি? তোমাগোরে দেইখা মনে হইতাছে পিছে শয়তান তাড়া করছে?”
“চাচা আমরা মহা ঝামেলায় পড়ে গেছি,” অরণি কিছু বলার আগেই হাসান বলে উঠল। “আমাদের ছবি টিভিতে দেখাচ্ছে, ধরিয়ে দেওয়ার জন্য বলছে। খোদা জানে এখন কী হবে? ভাগ্যিস গাড়িটা পরিবর্তন করার কথা মাথায় এসেছিল।”
“হায় হায় তাইলে তো মহা মুসিবত হয়া গেল। এহন তুমরা কী করবা? সামনে আগাইলেও বিপদ পিছাইলেও বিপদ।”
“এজন্যই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সামনেই এগোব,” অরণি দৃঢ় কণ্ঠে বলল। “বিপদ যখন ভালোভাবেই দেখা দিয়েছে তাহলে এর শেষ না দেখে ছাড়ব না। চাচা আপনিও কিন্তু আমাদের সাথে আরও বেশি বিপদে জড়িয়ে পড়ছেন। এমনিতেই আপনি বয়স্ক মানুষ। আমাদের জন্য অনেক ঝামেলা পোহাচ্ছেন। আপনাকে আমরা হয়তো আরও বেশি ঝামেলায় ফেলে দেব। আপনি যদি ইচ্ছে করেন…”
“মামণি তুমি কি আমারে অপমান করার চেষ্টা করতাছো?” চাচা গম্ভীর মুখে বলল। “এইডা একটা কথা কইলা তুমি? মনে চোট দিলা মামণি। তুমরা পোলাপান মানুষ এত বড় বিপদে পইরা গেছো চোখের সামনে আর আমি মুরুব্বি হয়ে তোমাগো ফালায় চইলা যামু! এইডা একটা কথা। চইলা যাইতে চাইলে তো আমি আগেই যাইতে পারতাম। আমি তোমাগো লগেই আছি। এহন এত কথা না বইলা কই যামু হেইডা কোথায়?”
অরণি হাসানের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমরা কি আগের পরিকল্পনা অনুযায়ীই এগোব?”
“অবশ্যই এছাড়া আর রাস্তা কী? হয় ওই পরিকল্পনা অনুসারেই এগোতে হবে আর না হলে ঢাকা ছেড়ে পালাতে হবে। এই দুটোর মাঝে অন্য কোনো রাস্তা তো আমি অন্তত দেখতে পাচ্ছি না। আর ঢাকা ছেড়ে পালালে এই ব্যাপারটার সুরাহা জীবনেও হবে না। কাজেই আমরা আগের পরিকল্পনা অনুসারেই এগোব,” বলে সে একটু থেমে চাচার দিকে ফিরে বলল, “চাচা আমরা এখন যাব পান্থপথ বসুন্ধরা সিটিতে।”
“ঠিক আছে,” বলে চাচা গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিল। ইতোমধ্যে ওরা মতিঝিলের শাপলা চত্বর পার হয়ে এসেছে। গাড়ি এখন এগোচ্ছে দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে। দৈনিক বাংলার মোড় পার হয়ে গাড়ি পল্টনের সিগন্যালে দাঁড়ালে হাসান চাচার কাছে জানতে চাইল কোন দিক দিয়ে যাবে।
“ক্যান এই দিক দিয়া সোজা গিয়া পেরেস ক্লাব পার হইয়া শাহবাগ দিয়া ডাইনে ঘুরুম।”
“আপনি এক কাজ করেন চাচা এইদিক দিয়ে না গিয়ে ডানে মোড় নেন। বিজয়নগর হয়ে কাকরাইল পার হয়ে রূপসি বাংলার পাশ দিয়ে মেইন রোডে উঠে যান। তাহলে শাহবাগের জ্যামে পড়তে হবে না। আর আমি মূল রাস্তা একটু অ্যাভয়েড করতে চাচ্ছি।” দুজনেই এখনও শঙ্কিত হয়ে আছে। রাস্তায় কোনো পুলিশের গাড়ি দেখলেই বুক ধুকপুক করছে। তবে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ওরা রূপসি বাংলার পাশ দিয়ে কাওরান বাজার যাওয়ার মেইন রোডে এসে উঠল।
“ভালোই তো দ্রুত এগোচ্ছি আমরা। ঢাকার জ্যাম এখন কমে গেছে মনে হচ্ছে,” অরণি রাস্তার দিকে দেখতে দেখতে বলল।
“হুমমম তোমার মাথা। জ্যাম কমে গেছে না। আরও বেড়েছে। এখন দুপুর টাইম বলে টের পাচ্ছ না। অফিস আওয়ারের রাশে যদি পড়ো তাহলে বুঝবা জ্যাম কাকে বলে।”
অরণি মনে মনে হাসল। এই মানুষটার স্বাভাব একটুও বদলায়নি। ঠিক আগের মতো করেই ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলে।
“হাসান, আমাদের মনে হয় একটা ব্যাপারে কথা বলা উচিত।”
“কোন ব্যাপারে?”
“তোমার মনে আছে আমরা যখন কোর্ট থেকে পালাই সেই সময় ওসি যখন আমাদেরকে অ্যারেস্ট করতে আসে তখন দুটো স্মোব বম্ব উড়ে এসে পড়েছিল?”
“হ্যাঁ, ওই ব্যাপারটা আসলেই অনেক ঘাপলার। কারা আমাদেরকে এভাবে হেল্প করল? তার মানে কি কেউ আমাদেরকে অনুসরণ করছে? আর যদি হেল্প করতেই চায় তবে সরাসরি করছে না কেন? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”
“আমিও না, কিন্তু ব্যাপারটা আমার ভালো লাগেনি।”
“আমারও না কিন্তু…”
হঠাৎ চাচা ঘোষণা করল, “আমরা প্রায় চইলা আইছি।” কিছুক্ষণের ভেতরেই ওরা চলে এলো বসুন্ধরা সিটির সামনে। চাচা গাড়িটাকে রাস্তার বামে পার্ক করতে করতে বলল, “আমি কি গাড়ি ঘুরায়া মার্কেটের সামনে নিয়া যাব?”
“না না চাচা, কোনো দরকার নেই। আপনি গাড়ি এখানেই রাখুন। আমরা রাস্তা পার হয়ে চলে যাব।”
চাচা গাড়িটাকে বামে সাইড করে কতগুলো ফার্নিচারের দোকানের সামনে পার্ক করল। বসুন্ধরা সিটির অপজিটে এই ফার্নিচারের দোকানগুলোতে খুব ভালো ভালো পুরানো ফার্নিচার কিনতে পাওয়া যায়। দোকানগুলো এক সারিতে বসানো। হাসান ডানে-বামে দেখতে দেখতে বলল, “চাচা আপনি গাড়িটাকে রাখবেন ওইখানে।” সে একটা জায়গা দেখাল। “আর আপনি ওই চায়ের দোকানগুলোতে বসে থাকতে পারবেন। আপনার সাথে কি মোবাইল আছে?”
“আছে।”
“নম্বরটা দেন। কোনো ঝামেলা হলে আমি আপনাকে জানাব। আমার নম্বর আমি আপনাকে দিচ্ছি না। কারণ এতে আপনার বিপদ আরও বাড়তে পারে।”
“ঠিক আছে। আমি এইহানেই থাকুম। আর বাবারা তুমরা সাবধানে থাইকো। বিপদ-আপদের কুনো মা-বাপ নাই। এমনিতেই যে ঝামেলায় পড়ছো। বিপদ আর বাড়াইয়ো না।”
“ঠিক আছে চাচা আমরা সাবধানেই থাকব,” অরণি চাচাকে আশ্বস্ত করল।
হাসান ওর সানগ্লাসটা চোখে পরে নিয়ে অরণিকে বলল, ওড়নাটা মাথায় জড়িয়ে নিতে। তারপর দুজনেই বেরিয়ে এলো বাইরে। হাসান অরণির একটা হাত ধরে রাস্তা পার হয়ে চলে এলো বসুন্ধরা সিটির মূল প্রবেশ পথের সামনে।
বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, বসুন্ধরা গ্রুপের অন্যতম নিদর্শন এবং দক্ষিণ এশিয়ার সেরা শপিং মলগুলোর একটি। আড়াই হাজারের ওপর রিটেইল শপের সমন্বয়ে গঠিত এই শপিং মলটিতে প্রতিদিন প্রায় পঁচিশ থেকে ত্রিশ হাজার লোক আসা-যাওয়া করে বিভিন্ন প্রয়োজনে। বসুন্ধরা সিটির সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে হাসান একবার আড়চোখে তাকাল সিঁড়ির একপাশে বসে থাকা পুলিশদের দিকে। অরণির দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল, “মাথায় ঘোমটা তুলে দাও। আর এটা তোমার ব্যাগে রাখো। আমি এটা নিয়ে সিকিউরিটি ব্যারিয়ার পার হতে পারব না।“
ছোট্ট রুমালে মোড়ানো জিনিসটা হাতে নিতে নিতে অরণি জানতে চাইল, “এটা কী?”
“আগে ব্যাগে ঢোকাও,” বলে হাসান টান দিয়ে জিনিসটা নিয়ে একরকম জোর করেই অরণির ব্যাগে গুঁজে দিয়ে চেন টেনে দিল। “শোনো, এখানে ঢোকার দুটো গেট আছে। একটা আমাদের একদম সোজা। আর অপরটা ওই যে ডান দিকে। আমরা এই সোজাটা দিয়ে ঢুকব। কারণ এটাতে ভিড় বেশি থাকে। যে কারণে আমাদেরকে ভালো করে কেউ খেয়াল করবে না। গেট দিয়ে ঢোকার সময়ে আমি যখন মোবাইলটা সিকিউরিটি গেটের ডান পাশে ট্রেতে রাখব তুমিও তোমার ব্যাগটা ট্রেতে রেখে দেবে। বুঝেছ?”
অরণি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল, “ওকে।”
“আর শোনো, এখানে সবখানে সিসি ক্যাম আছে কাজেই মাথাটা ঢেকে রাখার চেষ্টা করবে। আর আমিও সবধানে থাকব। গুড লাক।”
ওরা গেটের সামনে এসে ভেতরে ঢোকার লাইনে দাঁড়িয়ে গেল। লাইন থাকার পরও বেশ ঝামেলা, ভিড় আর ঠেলাঠেলি। এই ঠেলাঠেলির সুযোগে ওরা কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই ঢুকে পড়ল ভেতরে।
ভেতরটা একবাক্যে বেশ সুন্দর। বিভিন্ন ধরনের শোরুম আর নানারকমের আয়োজনে চারপাশ মুখরিত। সময়টা দুপুর হওয়ার পরও বেশ ভিড় এখানে। ভেতরে ঢুকে হাসান অরণিকে একপাশে টেনে নিল। “জিনিসটা দাও,” বলে ও অরণির ব্যাগের চেন খুলে নিজেই হাত ঢুকিয়ে দিল।
“আরে আস্তে, তুমি কি পাগল নাকি। এমন উদ্ভট সব কাজকারবার করো। কী এমন জিনিস। কী এটা?”
“হাসান রুমালে মোড়ানো জিনিসটা নিয়ে কোমরে গুঁজে রাখল। “এটা একটা পিস্তল।”
অরণি আরেকটু হলে ওর হাত থেকে ব্যাগটা ফেলেই দিত। “আশ্চর্য তুমি এটা পেলে কোথায়?”
“কেন তোমার মনে নেই আমরা যখন কোর্টের সামনে থেকে পালাই ওসি সাহেবের পিস্তলটা ছিনিয়ে নিয়েছিলাম। এইটা সেই পিস্তলটাই। থ্যাঙ্কস অ্যানিওয়ে।”
“থ্যাঙ্কস মানে, তুমি আমাকে দিয়ে ওটা ভেতরে ঢোকালে। আশ্চর্য। আমাকে একবার জানানোরও প্রয়োজন বোধ করলে না,” অরণির মেজাজ সিরিয়াস খারাপ হয়ে গেছে।
“না করিনি। কারণ ওটা যে একটা পিস্তল এটা জানলে তুমি জীবনেও এতটা নরমাল থাকতে পারতে না। নিশ্চিত উদ্ভট কিছু করে বসতে। মেয়েদের যা নার্ভ। উফফফ। আমরা কি গল্প করতে এখানে এসেছি না এখন কাজে নামব?” বলে সে শিস দিতে দিতে সামনে এগিয়ে গেল। অরণি হাঁ করে তাকিয়ে রইল। মনে মনে ভাবল, পাগলদের সাথে কাজ করার এই জ্বালা। এরা কখন কী করবে কেউ বলতে পারবে না।
মানুষটা চুপচাপ ওদের ওপর নজর রাখছিল। হাসান আর অরণি ঠিক তার পাশ দিয়ে হেঁটে বসুন্ধরা সিটিতে প্রবেশ করে। ওরা বসুন্ধরা সিটিতে ঢোকার পর সে একটু চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না। হঠাৎ একটা এসএমএস এলো। ‘ফলো দেম। ইফ নেসেসারি গিভ দেম অ্যানি হেল্প’। সে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে ভেতরে প্রবেশ করার লাইনে এসে দাঁড়াল। জজ কোর্টের বাইরে ঠিক যথা সময়ে সে ওদেরকে সাহায্য করতে পেরেছিল। তবে এবার এরা আবার কোন ঘটনা ঘটাবে কে জানে। ব্যাপারটা ধীরে ধীরে আরও রিস্কি হয়ে যাচ্ছে। তবে পিছু হঠার কোনো উপায় নেই। যে লোকের অধীনে সে কাজ করে তার প্রতি মারাত্মক কৃতজ্ঞ সে। সেইসাথে তাকে সে ভীষণ ভয়ও পায়। বহু বছর সে তার অধীরে কাজ করছে। অনেকবার দেখেছে লোকটা কী পরিমাণ নিষ্ঠুর হতে পারে। কাজেই পিছু হটার কোনোই উপায় নেই। সে যেহেতু বলেছে এই ছেলে আর মেয়েটার পিছু লেগে থাকতে এবং যেকোনো বিপদ থেকে ওদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে তাকে সেটা করতেই হবে। সে লাইন পার হয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। গেটের সিকিউরিটির নমুনা দেখে মনে মনে হাসল। এই এদের সিকিউরিটি! তার সাথে দুইটা পিস্তল আর একটা ছুরি আছে, আরও আছে স্মোক বম্ব। এরা খুঁজে পাওয়া বা সন্দেহ করা তো দূরে থাক টেরটিও পায়নি। ভেতরে ঢুকে সে ওদেরকে খুঁজতে লাগল। প্রায় সাথে সাথেই চোখে পড়ল ওদেরকে। প্রবেশ পথের কাছেই শপিং মলের একটা ম্যাপ দেওয়া আছে। দুজনেই ওটার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু একটা দেখছে।
.
“কী ব্যাপার তুমি কী খুঁজছ?” প্রশ্নটা অরণির। শপিং মলের ম্যাপের সামনে দাঁড়িয়ে হাসান খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ম্যাপটা। ওটা দেখতে দেখতেই হাসান জবাব দিল, “আমি সিএইচএল কুরিয়ারের দোকানটা খুঁজছি।”
“দাঁড়াও কুরিয়ারের প্যাকেটার গায়ে লেখা আছে,” অরণি প্যাকেটা বের করে দেখতে দেখতে বলল, “সিএইচএল, লেভেল ফোর। লেভেল ফোরের লিস্টটা দেখো।”
“লেভেল ফোর, লেভেল ফোর। এই তো। লেভেল ফোর, শপ নম্বর একশ ছাব্বিশ,” চলো।
ওরা হাঁটতে হাঁটতে দ্বিতীয় লিফটটার সামনে এসে দাঁড়াল। লিফটের সামনে দুনিয়ার ভিড় আর বিশাল দুইটা লাইন।
“ধুৎ এখানে হবে না। চলো এসকেলেটর দিয়ে ওঠাই ভালো হবে। নিরাপদও সেইসাথে দ্রুত ওঠা যাবে,” হাসান অরণির একটা হাত ধরে এসকেলেটরের দিকে রওনা দিল।
এসকেলেটর দিয়ে উঠতে উঠতে অরণি হাসানের কাছে জানতে চাইল, “আচ্ছা আমাকে বলো তো তুমি আসলে কুরিয়ার শপে ঠিক কী আশা করছ? ওখানে কি আদৌ কিছু আছে? নাকি আমরা পুরোপুরি ভুল পথে এগোচ্ছি?”
“সত্যি কথা বলব?” প্রশ্নটা করে হাসান অরণির দিকে ফিরে তাকাল। “আমি আসলে জানি না। আসলেই আমি বুঝতে পারছি না আমরা সঠিক পথে এগোচ্ছি কি না। অথবা আদৌ সেখানে কিছু পাব কি না। কিন্তু এছাড়া আর উপায় কী বলো।”
অরণি চুপচাপ ভাবতে লাগল। আসলেই এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ভুল হোক সঠিক হোক একটা চেষ্টা চালিয়ে দেখতেই হবে। ওরা পাঁচ তলায় মানে লেভেল ফোরে এসে নির্দিষ্ট নম্বরের দোকানটা খুঁজতে লাগল।
“বত্রিশ, তেত্রিশ,” হাসান দোকানের নম্বরগুলো দেখতে দেখতে এগোচ্ছে। ওকে অনুসরণ করছে অরণি। একটা একটা করে দোকান পার হয়ে ওরা চলে এলো গলির শেষ মাথায়। “নাহ এই সারিতে নেই। এখানে পঞ্চাশ পর্যন্ত শেষ।”
“অন্যদিক দিয়ে আমাদেরকে আবার শুরু করতে হবে। আমরা যেখান থেকে শুরু করেছিলাম ওখান থেকে ডান বা বাম দিয়ে,” অরণি মন্তব্য করল। আবার হাঁটতে হাঁটতে ওরা চলে এলো যেখান থেকে শুরু করেছিল সেখানে। এবার বাম দিক দিয়ে সিরিয়াল ধরে এগোল। নম্বর মিলিয়ে একেবারে গলির শেষ মাথায় এসে দেখা মিলল কাঙ্ক্ষিত সিএইচএল কুরিয়ারের দোকানের। দোকান বললে আসলে ভুল হবে। বেশি বড়ও না আবার একবারে ছোটও না দোকানটা। তবে গলির একদম শেষ মাথায়।
অরণি আর হাসান একে অপরের দিকে একবার তাকিয়ে দোকানের স্লাইডিং ডোর ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল। নীল রঙের ইউনিফর্ম পরা দুজন কুরিয়ার বয় বের হয়ে গেল বড় বড় কয়েকটা প্যাকেট নিয়ে। দোকানের ভেতরটা বেশ সুন্দর। দেশীয় কুরিয়ারের দোকানের মতো এলোমেলো না। সবকিছু সুন্দর করে সাজানো-গোছানো এবং বেশ পরিচ্ছন্ন। সুন্দর একটা কাউন্টারের সামনে দুটো চেয়ার রাখা। এই মুহূর্তে কাউন্টারে কেউ নেই। আরও ভালো করে বলতে গেয়ে পুরো দোকানেও কেউ নেই।
“কেউই তো নেই দেখি,” ওরা কাউন্টারের দিকে এগোতে এগোতে হাসান বলল। কাউন্টারের ওপরে একপাশে একটা এলসিডি টিভি লাগানো। ওটাতে একটা হিন্দি চ্যানেল চলছে। টিভিটার অন্যপাশে বসানো একটা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।
“এক্সকিউজ মি স্যার, আপনাদের কীভাবে হেল্প করতে পারি?” বেশ সুন্দর চটপটে চেহারার এক যুবক বেরিয়ে এসেছে পেছনের একটা দরজা দিয়ে। সম্ভবত পেছনে একটা স্টোররুম জাতীয় কিছু আছে।
“হুমমম,” হাসান এখনও চারপাশ দেখছে। “আপনারা তো শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক কুরিয়ার করে থাকেন, তাই না?”
“জি, স্যার। আমাদের কোনো ইনবাউন্ড সার্ভিস নেই। সবই আউটবাউন্ড সার্ভিস,” ছেলেটার মুখে ফরমাল হাসি। “তা স্যার আপনার জন্য কী করতে পারি?”
“আমি একজন জার্নালিস্ট,” বলে হাসান ওর ব্যাগ থেকে আইডি কার্ড বের করে দেখাল।
“স্যার কোন পত্রিকার পক্ষ থেকে এসেছেন?” কাস্টমার না বুঝতে পেরে তার হাসির মাত্রা একটু কমেছে। তবে ছোট পরিসরে হলেও এখনও হাসিটা বৰ্তমান।
“আমি আসলে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। আমাদের দেশের কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর ওপর একটা প্রতিবেদন লেখার চেষ্টা করছি,” হাসান একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
“ও আচ্ছা স্যার, তাহলে তো আমরা খুব একটা হেল্প করতে পারব না। কারণ আমরা ঠিক এদেশীয় সার্ভিস না।”
“আচ্ছা আচ্ছা,” বলে হাসান কাউন্টারের সামনের চেয়ারটা টেনে বসে পড়ল। “আসলে আপনি আমার কথা বুঝতে পারেননি। আমি একটা প্রতিবেদন তৈরি করার চেষ্টা করছি আমাদের দেশে চালু আছে এমন সব ধরনের কুরিয়ার সার্ভিস নিয়ে,” বলে সে একটু বিরতি দিল। “আপনাকে আসলে খুলে বলি আমি মূলত ক্রাইম রিপোর্টার। আমি যে প্রতিবেদনটা করার চেষ্টা করছি সেটা হলো কুরিয়ার সার্ভিসের সাথে জড়িত সিকিউরিটি রিস্কের ব্যাপার নিয়ে।”
“স্যার, আমি আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না। কুরয়িার সার্ভিসের সাথে সিকিউরিটি রিস্কের ব্যাপারটা কীভাবে জড়িত?”
“কুরিয়ার সার্ভিসের সাথে অবশ্যই সিকিউরিটি রিস্কের ব্যাপার জড়িত। এই যেমন ধরো ২০০৫ সালে জেএমবি যখন ব্যাপক সমালোচিত। তখন তারা দেশের তেষট্টিটা জেলায় বোমা হামলা চালিয়েছিল। কীভাবে জানেন?” ছেলেটা মাথা নাড়ল। তার মাথায় কিছু ঢুকছে না। “তারা এই বোমাগুলোকে দেশের বিভিন্ন জেলায় কীভাবে পৌঁছেছিল জানেন?”
“না স্যার।”
“কুরিয়ারের মাধ্যমে। ওই ঘটনার পর দেশের মিডিয়া থেকে শুরু করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে তুলাধুনা করে ফেলে এরপর এই নিয়ে কিছুদিন ব্যাপক আলোড়ন হয় এবং বেশিরভাগ কুরিয়ার তাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার পরিবর্তন করে। এরপর দীর্ঘদিন এই নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আমি আমার প্রতিবেদনে বের করার চেষ্টা করব এই ব্যাপারটার বর্তমান চিত্রটা আসলে কেমন? বর্তমানে সিকিউরিটি প্রটোকল কতটুকু মানা হয়।”
ছেলেটা তো বটেই অরণি সহ হাঁ হয়ে গেছে। হাসান এইসব আবোল—তাবোল কথা সাজাল কখন?
“স্যার আমি বুঝতে পেরেছি কিন্তু—”
“দাঁড়ান আমার কথা শেষ হয়নি,” হাসান ছেলেটার কথার মাঝখানে থামিয়ে দিল। “আমি বের করার চেষ্টা করছি আমাদের দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক কুরিয়ারগুলোর সিকিউরিটি ম্যাটার এবং বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ সংস্থার সাথে ওদের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে নাকি?”
“স্যার আমি বুঝতে পেরেছি কিন্তু আমি আসলে এ নিয়ে কিছু বলার এখতিয়ার রাখি না। আমাদের ম্যানেজার আজ অসুস্থ বলে আসেননি। আমি আপনাকে তার নম্বর দিচ্ছি। যদি স্যার একটু কষ্ট করে তার সাথে কথা বলে নিতেন তাহলে মনে হয় ভালো হতো।”
“তার মানে আপনি কিছু বলতে চাচ্ছেন না। তার মানে আপনি আমাকে সহায়তা করতে চাচ্ছেন না? এর ফল কী হবে জানেন, একটা রিপোর্ট কতকিছু করার ক্ষমতা রাখে আপনি জানেন?”
“স্যার, আমি সেটা কখন বললাম? আমি বলতে চাচ্ছিলাম-”
“আপনার কথা কে শুনতে চাচ্ছে? আমি যেটা বলি সেটা শুনুন, “ বলে হাসান অরণির দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপল। কাজ হচ্ছে।
“জি, স্যার বলুন।”
“আমার একটা তথ্য দরকার। এই প্যাকেটটা তো আপনাদের? তাই না?” হাসান অরণির দিকে তাকিয়ে বলল, “প্যাকেটটা দেখাবে প্লিজ।” অরণি প্যাকেটটা বের করে হাসানের হাতে দিল।
ছেলেটা সেটা মনোযোগ দিয়ে দেখে বলল, “জি, স্যার।”
“তাহলে আমাকে বলুন কুরিয়ার করা না হলে কুরিয়ারের প্যাকেট কীভাবে বাইরে গেল?”
“স্যার আমি তো সেটা বলতে পারি না। আমি আসলে ডেস্ক ডিউটিতে বসি না। হয়তো আমি ওই সময় দোকানেই ছিলাম না।”
ওই সময়?” ঠিক আছে আপনি আমাকে বলুন তাহলে ঘটনা কখন ঘটেছিল?” ছেলেটা কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল হাসান তাকে আবার চুপ করিয়ে দিল, “দেখুন আপনি জানেন না, এই কথা বললে আমি বিশ্বাস করব না। কারণ তা হলে আপনি সময়ের কথা বলতেন না।”
“স্যার আমি বলতে চাচ্ছিলাম। হয়তো। হয়তো আমি ওইসময় ডিউটিতে ছিলাম না। সাধারণত স্যার কাউন্টার ডিউটিতে আমরা বসি না। ম্যানেজার স্যার বসেন। আ…আমি কীভাবে বলব স্যার? এজন্যই বলছিলাম ম্যানেজার স্যার হয়তো বলতে পারবেন।”
“ঠিক আছে আমি হেল্প করছি। এই প্যাকেটাতে কত তারিখ লেখা?” হাসান জানতে চাইল।
“স্যার, তিনদিন আগের তারিখ লেখা।”
“ওইদিন একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা। ধরেন পঁয়তাল্লিশের মতো বয়স। সম্ভবত তিনি এই প্যাকেটটা নিয়েছিলেন। আমাকে আপনাদের রেজিস্ট্রার দেখান।”
“স্যার, আমি রেজিস্ট্রার দেখাতে পারব না। আমার চাকরি চলে যাবে স্যার,” ছেলেটাকে দেখে মনে হচ্ছে কেঁদে ফেলবে।
“ঠিক আছে, তাহলে আমাকে না বললে আমি বুঝব কীভাবে কী ঘটেছিল। এখন যদি ওই মহিলা কোনো ক্রাইমের সাথে জড়িত হয়ে থাকে, তবে সে—ক্ষেত্রে কী হবে?” হাসানের গলায় কৃত্রিম ভয় ধরানো ভাব এবং সেটা যথার্থ ভয় ধরানোর মতোই।
অরণি হাসানের কথা যতই শুনছে ততই অবাক হচ্ছে। সম্ভবত এই কারণেই সাংবাদিকদের লোকে বলে সাংঘাতিক। তবে ও এটা বুঝতে পারছে না আসলে ওর মা এখানে এসেছিল কি না এবং আসলেও কী ঘটেছিল সেটা বের করবে কীভাবে। চারপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে হঠাৎ ওর চোখ পড়ল ওপরের দিকে।
হাসান ছেলেটার সাথে কথা বলছিল, “দেখুন আপনি কোনোকিছু বলে আমাকে বোঝাতে পারবেন না। ব্যাপারটা এখনও পুলিশের হাত পর্যন্ত যায়নি। আপনি যদি আমাকে হেল্প না করেন বা কোনো ক্লু দিতে না পারেন তবে আমি পুলিশ—”
অরণি হাসানের শার্টের হাতা ধরে টান দিল। হাসান বিরক্ত হয়ে ওর দিকে ফিরে বলল,
“কী?”
অরণি ওপরের দিকে দেখিয়ে বলল, “সিসি ক্যাম।“
“কী?” বলে ও ওপরের দিকে তাকাল। “সিসি ক্যাম?…ওহহহ দারুণ। ম্যাডাম যদি এখানে এসে থাকেন তবে অবশ্যই সিসি ক্যামের রেকর্ডে সেটা থাকার কথা,” বলে সে ছেলেটার দিকে ফিরে বলল, “আপনাদের কাছে ওইদিনের সিসি ক্যামের রেকর্ড আছে না?”
“আছে কিন্তু—”
“কিন্তু কী? সিসি ক্যামের রেকর্ড কীভাবে রাখেন আপনারা?”
“সাধারণত সিসি ক্যামের রেকর্ড প্রতিদিনেরটা প্রতিদিন কমপ্রেস করে একটা ডিভিডিতে রাইট করে রাখা হয়।”
“ঠিক আছে, ওতেই চলবে। আপনি ওইদিনের ডিভিডিটা বের করেন।”
“স্যার, রিটেন ডিভিডিতে আমাদের অ্যাক্সেস নেই। আমি ম্যানেজারের সাথে কথা না বলে ওটা কিছুতেই দেখাতে পারব না। স্যার আমার চাকরি চলে যাবে,” ছেলেটাকে দেখে অরণির খরাপই লাগল। হঠাৎ ওর একটা কথা মনে হলো।
“আচ্ছা আপনাদের অফিসে আর লোক কই? সেই তখন থেকে দেখছি শুধু আপনিই কথা বলে যাচ্ছেন,” ও জানতে চাইল।
“ম্যাডাম আপনারা যখন ঢোকেন তখন হয়তো দেখেছেন দুটো ছেলে প্যাকেজগুলো নিয়ে বেরিয়ে গেল। ওটা আমাদের এভরিডে ট্রানজেকশন টাইম। ওরা ফিরে আসার আগ পর্যন্ত আমি একাই ডিউটিতে আছি।”
অরণি হাসানকে দেখছে। হাসান ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে, হঠাৎ অরণি ভয় পেয়ে গেল। ওর কেন জানি মনে হচ্ছে হাসান ভয়ংকর কিছু একটা করতে যাচ্ছে। ও হাসানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ”হাসান—“
কিন্তু তার আগেই হাসান ঘটনা ঘটিয়ে ফেলল। ও ঝট করে পিস্তলটা বের করে আনল কোমর থেকে। সেটা সোজা তাক করল ছেলেটার কপাল বরাবর। সাথে সাথে ছেলেটার মুখ সাদা হয়ে গেল।
“হাসান স্টপ, প্লিজ স্টপ,” অরণি চিৎকার করে উঠল।
“অরণি দরজাটা লক করে দাও এবং দরজাতে ঝোলানো ওপেন লেখাটাকে ঘুরিয়ে ক্লোজড দিয়ে দাও,” অরণিকে নির্দেশ দিয়ে হাসান ছেলেটার দিকে ফিরল। “দেখো ছোট ভাই, আমি তোমার কোনো ক্ষতি করতে চাই না। বরং তোমার উপকারই করছি,” বলে ও সিসি ক্যামের দিকে দেখাল। “ওখানে সব রেকর্ড থাকছে কাজেই তোমার কোনো ভয় নেই। যখন অথরিটির কেউ জানতে চাইবে তুমি ওটা দেখাতে পারবে। তবে এখন আমাকে সিসি ক্যামের ডিভিডি রেকর্ডগুলো দেখাও।”
“স্যার, ওগুলো পেছনের রুমে একটা লকারে রাখা থাকে,” এদিক দিয়ে আসুন প্লিজ।
সে পথ দেখিয়ে ওদেরকে পেছনের রুমে নিয়ে এলো। ওখানে একটা মনিটরের সাথে সিসি ক্যামের কানেকশন দেওয়া ওটাতে সামনের রুমের প্রায় পুরোটাই দেখা যাচ্ছে।
“স্যার, এই ড্রয়ারে সব ডিভিডি রাখা আছে,” হাসান পিস্তলটা অরণির হাতে ধরিয়ে দিয়ে টান দিয়ে ড্রয়ারটা খুলে ফেলল। অরণি পিস্তলটা হাতে ধরে ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর হুঁশ হওয়াতে সেটা তাক করে ধরল ছেলেটার দিকে। ওর হাত থরথর করে কাঁপছে। জীবনে এই প্রথমবারের মতো সে পিস্তল ধরল।
“সাতাশ আটাশ ঊনত্রিশ…দাঁড়াও দাঁড়াও। হ্যাঁ পেয়েছি। এটাই ওইদিনের ডিভিডি,” নির্দিষ্ট ডিভিডিটা বের করে সে বিজয়ের হাসি দিল। “এটা চালাব কোথায়?”
“স্যার ওখানে মনিটরের পাশেই ওই সিপিইউটাতে চালাতে পারবেন, “ ছেলেটা এক হাত তুলে রেখেছে অন্য হাতে দেখাল সিপিইউটা
হাসান ওটার সামনে গিয়ে ডিভিডিটা স্লটে ঢুকিয়ে দিল। অরণি ছেলেটাকে একপাশে হাত তুলে দাঁড়াতে বলে সে-ও চলে এলো মনিটরের সামনে। ডিভিডিটা প্লে করার পর যথারীতি সামনের রুমটাকে দেখা গেল। ওইদিনের তারিখ শো করছে কর্নারে। “এভাবে হবে না, অনেক সময় লেগে যাবে। তুমি এক কাজ করো এটাকে প্লে দিয়ে টানতে থাকো মা যদি স্ক্রিনে আসে আমরা থেমে যাব,” অরণি হাসানকে বলল।
“হুমমমম ঠিক আছে, তাই করছি,” বলে সে ফুটেজটাকে টানতে লাগল। সকাল ৯:৩০…১০টা…১১টা… ১২টা…১২:৩০…
“দাঁড়াও দাঁড়াও…ওই যে…এটাই,” অরণির মাকে দেখা গেল স্ক্রিনে। পরনে শাড়ি, হাতে একটা ব্যাগ। মাকে স্ক্রিনে দেখে হঠাৎ অরণির বুকটা ধক করে উঠল। ওর মনে হতে লাগল মা যেন মরেনি। বেঁচে আছে।
মা কথা বলছে কাউন্টারে ম্যানেজারের সাথে। হঠাৎ কথা বলতে বলতে ম্যানেজার থেমে গেল, তাকে বসতে বলে সামনে এগোল। দুইটা ছেলে প্যাকেজ নিয়ে বেরোচ্ছে ম্যানেজার এগিয়ে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলতে লাগল।
অরণির মা বসে থাকা অবস্থায় হঠাৎ সিসি ক্যামের দিকে তাকাল। একদম সরাসরি। অরণির মনে হলো মা সিসি ক্যামের ভেতর দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মনিটরে ফুটেজের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ওর মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে গেল, “ওহহহ মাই গড।”
সিসি ক্যামের মনিটরের দিকে তাকিয়ে তিনি কিছু একটা বোঝাতে চাইছেন।