হুমায়ূন দিল্লীর সিংহাসনে বসেছেন, তারিখ ২৩ জুলাই ১৫৫৫ খ্রিষ্টাব্দ। তার ডানপাশে শিশুপুত্র আকবর। আকবরের মাথায় পাগড়ি পরানো ছিল। সে পাগড়ি খুলে ফেলেছে। পাগড়ি নিয়ে খেলছে।
নকিব ঘোষণা দিল
আল সুলতান আল আজম ওয়াল খাকাল আল মোকাররম, জামিই সুলতানাত-ই-হাকিকি ওয়া মাজাজি, সৈয়দ আলসালাতিন, আবুল মোজাফফর নাসিরুদ্দিন মোহাম্মদ হুমায়ূন পাদশাহ গাজি জিল্লুললাহ।
আমীররা একে একে এসে সম্রাট হুমায়ূনের হাত চুম্বন করলেন। সম্রাট সবার কুশল জিজ্ঞাসা করলেন। আমীরদের পর এলেন। বৈরাম খাঁ। হুমায়ূন সিংহাসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। বৈরাম খাঁকে চমকে দিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তিনি ঘোষণা করলেন, বৈরাম খাঁকে আমি ‘খান খান্নান’ (রাজাদের রাজা) সম্মানে সম্মানিত করছি। আমার শরীর ভালো যাচ্ছে না। হঠাৎ মারা যেতে পারি। এমন কিছু ঘটলে নকল হুমায়ূন দিয়ে সিংহাসন রক্ষা করতে হবে না। আমার অবর্তমানে উনি হবেন আকবরের অভিভাবক। আকবর বয়োপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত বৈরাম খাঁ’র নির্দেশে হিন্দুস্থান চলবে।
বৈরাম খাঁ বললেন, আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় সম্রাট অনেক কষ্ট করেছেন। তাকে আমি আর কোনো কষ্ট করতে দেব না। বাকি জীবন অবশ্যই তিনি কাটাবেন মনের আনন্দে। আমাদের চারপাশে অনেক বিদ্রোহী আফগান দল আছে। তারা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা চালাবে। সম্রাটকে এইসব কিছুই দেখতে হবে না। আমি দেখব।
আমীররা বললেন, মারহাবা।
চিকের আড়াল থেকে মহিলাদের চাপা হাসি শোনা যাচ্ছে। অন্তঃপুরের সবাই দীর্ঘদিন পর দরবার শুরুর দৃশ্য দেখতে এসেছেন। মেয়েদের কণ্ঠস্বর এত উঁচু হওয়া উচিত না যে অন্য পুরুষরা তা শুনতে পান।
সমস্ত নিয়মের ব্যতিক্রম করে উঁচু গলায় গুলবদন বললেন, আমার ভাই হিন্দুস্থানের সম্রাট পাদশাহ হুমায়ূনকে মোবারকবাদ।