২৪ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার ১৯৭১
ফকির বলল, ঠেটা মালেকার মন্ত্রীদের তো একেবারে কুফা অবস্থা–
জামী হেসে ফেলল, চাচা, আপনিও দেখি চরমপত্রের ভাষায় কথা বলছেন।
ফকিরও হাসল, শুধু আমি কেন রে বেটা, ঢাকায় প্রায় সবার মুখেই তো এখন এই সব কথাই শুনছি–কুফা, ফাতা ফাতা, ছ্যারাব্যারা অবস্থা, মাদারের খেইল, গুয়ামুরি হাসি, ফুচি মারা-ইঃ।! বাংলা ভাষাকে একেবারে–
ফকিরের মুখের কথা কেড়ে শরীফ পাদপূরণ করল, সমৃদ্ধ করে দিল।
আজ দুপুরে নাকি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে মন্ত্রী মওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের গাড়িতে মুক্তিরা বোমা ছুঁড়েছে, মন্ত্রীর হাত-পা দুই-ই জখম, গাড়ির ড্রাইভার ও অন্য দুজন যাত্রীও জখম। ফকিরই খবরটা এনেছে। ২৯-৩০ আগস্ট একগাদা মুক্তিযোদ্ধা গ্রেপ্তার হবার পর ঢাকা শহর কদিন যেন মৃতি হয়ে পড়েছিল, এখন আবার জ্ঞান ফিরে পেয়ে একটু একটু নড়েচড়ে উঠছে। দশ তারিখে বাসাবো এলাকায় একদল মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে ওখানকার কদমতলী ফাড়ির পুলিশ আর রাজাকারদের বেশ বড় রকম সংঘর্ষ হয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধারা নদীর ওপারের এক গ্রাম থেকে এসে ফাড়ি ঘেরাও করে রেইড় করে বেশকিছু পুলিশ আর রাজাকার মেরে আবার নির্বিঘ্নে পালিয়ে গেছে। খবরটা আমাদের কানে আসতে কদিন দেরি হয়েছিল। নিজেদের দুঃখ-ধান্দা নিয়ে বড় বেশি মুষড়ে ছিলাম, খবরটা শুনে একটু চাঙ্গা হয়ে উঠি সবাই।
শরীফ বলল, আচ্ছা কাগজে দেখলাম শেখ মুজিবের বিচার নাকি সমাপ্তঃ মিলিটারি ট্রাইবুনাল শিগগিরই রিপোর্ট পেশ করবে প্রেসিডেন্টের কাছে। কি হবে বলে মনে হয়?
ফকির বলল, কি করে বলব? আগা মাথা কিছুই তো ভেবে পাইনা। শেখকে বাঁচিয়ে যে রেখেছে–এইটাই তো আমার কাছে প্রায় অলৌকিক মনে হয়।
শরীফ বলল, আমার মনে হয় শেখকে মারতে ওরা সাহস পাবে না, এমনিতেই ওদের এখন ছ্যারাব্যারা অবস্থা, এ সময় শেখকে মারলে আরো যে গভীর গাজ্ঞায় পড়বে, সেটুকু বুদ্ধি ওদের আছে।