২৪. ভারতবর্ষের রাজা মহেন্দ্রপ্রতাপ

এর পরের অধ্যায় আরম্ভ হয় ভারতবর্ষের রাজা মহেন্দ্রপ্রতাপকে নিয়ে।

১৯১৫ সালের মাঝামাঝি জর্মন পররাষ্ট্র বিভাগ রাজা মহেন্দ্রপ্রতাপের উপদেশ মত স্থির করলেন যে, কোনো গতিকে যদি আমীর হবীব উল্লাকে দিয়ে ভারতবর্ষ আক্রমণ করানো যায় তাহলে ইংরেজের এক ঠ্যাং খোড়া করার মতই হবে। ভারতবর্ষ তখন স্বাধীনতা পাবার লোভে বিদ্রোহ করুক আর নাই করুক, ইংরেজকে অন্তত একটা পুরো বাহিনী পাঞ্জাবে রাখতে হবে তাহলে তুর্করা মধ্যপ্রাচ্যে ইংরেজকে কাবু করে আনতে পারবে। ফলে যদি সুয়েজ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ইংরেজের দুপা-ই খোঁড়া হয়ে যাবে।

মহেন্দ্রপ্রতাপ অবশ্য আশা করেছিলেন যে, আর কিছু হোক হোক ভারতবর্ষ যদি ফাঁকতালে স্বাধীনতা পেয়ে যায় তা হলেই যথেষ্ট।

কাইজার রাজাকে প্রচুর খাতির-যত্ন করে, স্বর্ণ-ঈগল মেডেল পরিয়ে একদল জর্মন কূটনৈতিকের সঙ্গে আফগানিস্থান রওয়ানা করিয়ে দিলেন। পথে রাজা তুর্কীর সুলতানের কাছ থেকেও অনেক আদর-আপ্যায়ন পেলেন।

কিন্তু পূর্ব-ইরান ও পশ্চিম-আফগানিস্থানে রাজা ও জর্মনদলকে নানা বিপদ-আপদ, ফাঁড়া-গর্দিশ কাটিয়ে এগতে হল। ইংরেজ ও রুশ উভয়েই রাজার দৌত্যের খবর পেয়ে উত্তর দক্ষিণ দুদিক থেকে হানা দেয়। অসম্ভব দুঃখকষ্ট সহ্য করে, বেশীর ভাগ জিনিসপত্র পথে ফেলে দিয়ে তাঁরা ১৯১৫ সালের শীতের শুরুতে কাবুল পৌঁছান।

আমীর হবীব উল্লা বাদশাহী কায়দায় রাজাকে অভ্যর্থনা করলেন–তামাম কাবুল শহর রাস্তার দুপাশে ভিড় লাগিয়ে রাজাকে তাঁহাদের আনন্দ-অভিবাদন জানালো। বাবুরবাদশাহের কবরের কাছে রাজাকে হবীব উল্লার এক খাস প্রাসাদে রাখা হল।

কাবুলের লোক সহজে কাউকে অভিনন্দন করে না। রাজার জন্য তারা যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল তার প্রথম কারণ, কাবুলের জনসাধারণ ইংরেজের নষ্টামি ও হবীব উল্লার ইংরেজ-প্রীতিতে বিরক্ত হয়ে পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল; নব-তুর্কী নব্য-মিশরের জাতীয়তাবাদের কচিৎ-জাগরিত বিহঙ্গকাকলী কাবুলের গুলিস্তান-বোস্তানেকেও চঞ্চল করে তুলেছিল। দ্বিতীয় কারণ, রাজা ভারতবর্ষের লোক, জর্মনীর শেষ মতলব কি সে সম্বন্ধে কাবুলীদের মনে নানা সন্দেহ থাকলেও ভারতবর্ষের নিঃস্বার্থপরতা সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা ছিল না। এ-অনুমান কাইজার বার্লিনে বসে করতে পেরেছিলেন বলেই ভারতীয় মহেন্দ্রকে জর্মন কূটনৈতিকদের মাঝখানে ইন্দ্রের আসনে বসিয়ে পাঠিয়েছিলেন।

ইংরেজ অবশ্য হবীব উল্লাকে তম্বী করে হুকুম দিল, পত্রপাঠ যেন রাজা আর তার দলকে আফগানিস্থান থেকে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু ধূর্ত হবীব উল্লা ইংরেজকে নানা রকম টালবাহানা দিয়ে ঠাণ্ডা করে রাখলেন। একথাও অবশ্য তার অজানা ছিল না যে, ইংরেজের তখন দুহাত ভর্তি, আফগানিস্থান আক্রমণ করবার মত সৈন্যবলও তার কোমরে নেই।

কিন্তু হবীব উল্লা রাজার প্রস্তাবে রাজী হলেন না। কেন হলেন না এবং না হয়ে ভালো করেছিলেন কি মন্দ করেছিলেন, সে সম্বন্ধে আমি অনেক লোকের মুখ থেকে অনেক কারণ, অনেক আলোচনা শুনেছি। সে-সব কারণের কটা খাঁটী, কটা ঝুটা বলা অসম্ভব কিন্তু এ-বিষয়ে দেখলুম কারো মনে কোনো সন্দেহ নেই যে, হবীব উল্লা তখন ভারত আক্রমণ করলে সমস্ত আফগানিস্থান তাতে সাড়া দিত। অর্থাৎ আমীর জনমত উপেক্ষা করলেন; জর্মনি, তুর্কী, ভারতবর্ষকেও নিরাশ করলেন।

জর্মনরা এক বৎসর চেষ্টা করে দেশে ফিরে গেল কিন্তু রাজা মহেন্দ্রপ্রতাপ তখনকার মত আশা ছেড়ে দিলেও ভবিষ্যতের জন্য জমি আবাদ করতে কসুর করলেন না। রাজা জানতেন, হবীব উল্লার মৃত্যুর পর আমীর হবেন নসর উল্লা নয় মুইন-উস-সুলতানে। কিন্তু দুটো টাকাই যে মেকি রাজা দুচারবার বাজিয়ে বেশ বুঝে নিয়েছিলেন। আমান উল্লার কথা কেউ তখন হিসেবে নিত না কিন্তু রাজা যে তাকে বেশ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অনেকবার পরখ করে নিয়েছিলেন সে কথা কাবুলের সকলেই জানে। কিন্তু তাকে কি কানমন্ত্র দিয়েছিলেন সে কথা কেউ জানে না; রাজাও মুখ ফুটে কিছু বলেন নি।

১৯১৭ সালের রুশ-বিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গে রাজা কাবুল ছাড়েন। তারপর যুদ্ধ শেষ হল।

শেষ আশায় নিরাশ হয়ে কাবুলের প্রগতিপন্থীরা নির্জীব হয়ে পড়লেন। পর্দার আড়াল থেকে তখন এক অদৃশ্য হাত আফগানিস্থানের খুঁটি চালাতে লাগলো। সে হাত আমান উল্লার মাতা রানী-মা উলিয়া হজরতের।

বহু বৎসর ধরে রানী-মা প্রহর গুনছিলেন এই সুযোগের প্রত্যাশায়। তিনি জানতেন প্রগতিপন্থীরা হবীব উল্লা, নসর উল্লা, মুইন-উ-সুলতানে সম্বন্ধে সম্পূর্ণ নিরাশ না হওয়া পর্যন্ত আমান উল্লার কথা হিসেবেই আনবেন না। পর্দার আড়াল থেকেই রানী-মা প্রগতিপন্থী যুবকদের বুঝিয়ে দিলেন যে, হবীব উল্লা কাবুলের বুকের উপর জগদ্দল পাথর, রাজা মহেন্দ্রপ্রতাপও যখন সে পাথরে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করতে পারেননি তখন তারা বসে আছেন কিসের আশায়? নসর উল্লা, মুইন-উ-সুলতানে দুজনই ভাবেন সিংহাসন তাঁদের হকের মাল— সে-মালের জন্য তারা কোনো দাম দিতে নারাজ।

কিন্তু আমান উল্লা দাম দিতে তৈরী। সে দাম কি? বুকের খুন দিয়ে তিনি ইংরেজের সঙ্গে লড়ে দেশকে স্বাধীন করতে প্রস্তুত।

কিন্তু আমান উল্লাকে আমীর করা যায় কি প্রকারে? রানী-মা বোরকার ভিতর থেকে তারও নীলছাপ বের করলেন। আসছে শীতে হবীব উল্লা যখন নসর উল্লা আর মুইন-উস-সুলতানকে সঙ্গে নিয়ে জলালাবাদ যাবেন তখন আমান উল্লা কাবুলের গভর্নর হবেন। তখন যদি হবীব উল্লা জলালাবাদে মারা যান তবে কাবুলের অস্ত্রশালা আর কোষাধ্যক্ষের জিম্মাদার গভর্নর আমান উল্লা তার ঠিক ঠিক ব্যবহার করতে পারবেন। রাজা হতে হলে এই দুটো জিনিষই যথেষ্ট।

কিন্তু মানুষ মরে ভগবানের ইচ্ছায়। নীলছাপের সঙ্গে দাগ মিলিয়ে যে হবীব উল্লা ঠিক তখনই মরবেন তার কি স্থিরতা? অসহিষ্ণু রানী-মা বুঝিয়ে দিলেন যে, ভগবানের ইচ্ছা মানুষের হাত দিয়েই সফল হয়— বিশেষত যদি তার হাতে তখন একটি নগণ্য পিস্তল মাত্র থাকে।

স্বামী হত্যা? এ্যাঁ? হ্যাঁ। কিন্তু এখানে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা হচ্ছে না যেখানে সমস্ত দেশের আশাভরসা, ভবিষ্যৎ মঙ্গল অমঙ্গল ভাগ্যনিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন সেখানে কে স্বামী, স্ত্রীই বা কে?

শঙ্করাচার্য বলেছেন, কা তব কান্তা? কিন্তু ঠিক তার পরেই সংসার অতীব বিচিত্র কেন বলেছেন সে তত্ত্বটা এতদিন পর আমার কাছে খোলসা হল।

অর্বাচীনরা তবু শুধালো, কিন্তু আমীর হবীব উল্লার সৈন্যদল আর, জালালাবাদ অঞ্চলের লোকজন নসর উল্লা বা মুইন-উস-সুলতানের পক্ষ নেবে না?

রাগে দুঃখে রানী-মার নাকি কণ্ঠরোধ হবার উপক্রম হয়েছিল। উম্মা চেপে শেষটায় বলেছিলেন, ওরে মূর্খের দল, জালালাবাদে যে-ই রাজা হোক না কেন, আমরা রটাব না যে, সিংহাসনের লোভে অসহিষ্ণু হয়ে সেই গৃধুই নিরীহ হবীব উল্লাকে খুন করেছে? মূখেরা এতক্ষণে বুঝল, এস্থলে রানীর কি মত? নয়। এখানে রানীর মতই সকল মতের রানী।

এসব আমার শোনা কথা কতটা ঠিক কতটা ভুল হলপ করে বলতে পারব না; তবে এরকমেরই কিছু একটা যে হয়েছিল সে বিষয়ে কাবুল চারণদের মনে কোনো সন্দেহ নেই।

কিন্তু কথামালার গল্প ভুল। বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার জন্য লোকও জুটল।

আপন অলসতাই হবীব উল্লার মৃত্যুর আরেক কারণ। জালালাবাদে একদিন সন্ধ্যাবেলা শিকার থেকে ফিরে আসতেই তাঁর এক গুপ্তচর নিবেদন করল যে, গোপনে হুজুরের সঙ্গে সে অত্যন্ত জরুরী বিষয় নিয়ে আলাপ করতে চায়। সে নাকি কি করে শেষ মুহূর্তে এই ষড়যন্ত্রের খবর পেয়ে গিয়েছিল। কাল হবে, কাল হবে বলে নাকি হবীব উল্লা প্রাসাদের ভিতরে ঢুকে গেলেন। সকলের সামনে গুপ্তচর কিছু খুলে বলতে পারল না আমীরও শুধু বললেন, কাল হবে, কাল হবে।

সে কাল আর কখনো হয় নি। সে-রাত্রেই গুপ্তঘাতকের হাতে হবীব উল্লা প্রাণ দেন।

সকালবেলা জলালাবাদে যে কী তুমুল কাণ্ড হয়েছিল তার বর্ণনার আশা করা অন্যায়। কেউ শুধায়, আমীরকে মারল কে? কেউ শুধায়, রাজা হবেন কে? একদল বলল, শহীদ আমীরের ইচ্ছা ছিল নসর উল্লা রাজা হবেন, আরেকদল বলল, মৃত আমীরের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো মূল্য নেই; রাজা হবেন বড় ছেলে, যুবরাজ মুইন-উস-সুলতানে ইনায়েত উল্লা। তখতের হক তারই।

বেশীর ভাগ গিয়েছিল ইনায়েত উল্লার কাছে। তিনি কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছেন। লোকজন যতই জিজ্ঞেস করে রাজা হবেন কে? তিনি হয় উত্তর দেন না, না হয় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলেন, ব কাকায়েম বোরো অর্থাৎ খুড়োর কাছে যাও, আমি কি জানি। কেন সিংহাসনের লোভ করেননি বলা শক্ত; হয়ত পিতৃশোকে অত্যধিক কাতর হয়ে পড়েছিলেন, হয়ত পিতার ইচ্ছার সম্মান রাখতে চেয়েছিলেন, হয়ত আন্দাজ করেছিলেন যে, যারা তার পিতাকে খুন করেছে তাদের লোকই শেষ পর্যন্ত তৎ দখল করবে। তিনি যদি সে-পথে কাঁটা হয়ে মাথা খাড়া করেন তবে সে-মাথা বেশীদিন ঘাড়ে থাকবে না। অত্যন্ত কঁচা, কাঁচালঙ্কা ও পাঁঠার বলি দেখে খুশী হয় না। জানে এবার তাকে পেষার লগ্ন আসন্ন। নসর উল্লা আমীর হলেন।

এদিকে রানী-মা কাবুলে বসে তড়িৎ গতিতে কাবুল কান্দাহার জালালাবাদ হিরাতে খবর রটালেন রাজ্যগৃঃ, অসহিষ্ণু নসর উল্লা। ভ্রাতা হবীব উল্লাকে খুন করেছেন। তাঁর আমীর হওয়ার এমনিতেই কোনো হ ছিল না— এখন তো আর কোনো কথাই উঠতে পারে না। হক্‌ ছিল জ্যেষ্ঠ পুত্র, যুবরাজ মুইন-উস-সুলতানের। তিনি যখন স্বেচ্ছায়, খুশ-এখতেয়ারে নসর উল্লার বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন অর্থাৎ সিংহাসনের দাবী ত্যাগ করেছেন, তখন হক বর্তালো আমান উল্লার উপর।

অকাট্য যুক্তি। তবু কাবুল চীৎকার করলো, জিন্দাবাদ আমান উল্লা খান–ক্ষীণকণ্ঠে।

সঙ্গে সঙ্গে রানী-মা আমান উল্লার তৎ লাভে খুশী হয়ে সেপাইদের বিস্তর বখশিশ দিলেন; নূতন বাদশা আমান উল্লা সেপাইদের তনখা অত্যন্ত কম বলে নিতান্ত কর্তব্য পালনার্থে সে তনখা ডবল করে দিলেন। উভয় টাকাই রাজকোষ থেকে বেরলল। কাবুল হুঙ্কার দিয়ে বলল, জিন্দাবাদ আমান উল্লা খান।

ভলতেয়ারকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, মন্ত্রোচ্চারণ করে একপাল ভেড়া মারা যায় কিনা। ভলতেয়ার বলেছিলেন, যায়; কিন্তু গোড়ায় প্রচুর পরিমাণে সেঁকো বিষ খাইয়ে দিলে আর কোন সন্দেহই থাকবে না।

আফগান সেপাইয়ের কাছে যুক্তিতর্ক মন্ত্রোচ্চারণের ন্যায়— টাকাটাই সেঁকো।

আমান উল্লা কার্টুল বাজারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পিতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করলেন। সজল নয়নে, বলদৃপ্ত কণ্ঠে পিতৃঘাতকের রক্তপাত করবেন বলে শপথ গ্রহণ করলেন, যে পাষণ্ড আমার জা-দিলের পিতাকে হত্যা করেছে তার রক্ত না দেখা পর্যন্ত আমার কাছে জল পর্যন্ত শরাবের মত হারাম, তার মাংস টুকরো টুকরো না করা পর্যন্ত সব মাংস আমার কাছে শূকরের মাংসের মত হারাম।

আমান উল্লার শত্রুপক্ষ বলে আমান উল্লা থিয়েটারে ঢুকলে নাম করতে পারতেন; মিত্রপক্ষ বলে, সমস্ত ষড়যন্ত্রটা রানী-মা সর্দারদের সঙ্গে তৈরী করেছিলেন— আমান উল্লাকে বাইরে রেখে। হাজার হোক পিদর-কুশ বা পিতৃহন্তার হস্ত চুম্বন করতে অনেক লোকই ঘৃণা বোধ করতে পারে। বিশেষত রানী-মা যখন একাই একলক্ষ তখন তরুণ আমান উল্লাকে নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কে নামিয়ে লাভ কি? আফগানিস্থানে স্ত্রীলোকের আমীর হওয়ার রেওয়াজ থাকলে তাকে হয়ত সারাজীবনই যবনিকা-অন্তরালে থাকতে হত।

আমান উল্লার সৈন্যদল জলালাবাদ পৌঁছল। নসর উল্লা, ইনায়েত উল্লা দুজনই বিনাযুদ্ধে আত্মসমর্পণ করলেন। নসর উল্লা মোল্লাদের কুতুব-মিনার স্বরূপ ছিলেন; সে মিনার থেকে যাজক সম্প্রদায়ের গম্ভীর নিনাদ বহির্গত হয়ে কেন যে সেপাই-সান্ত্রী জড়ো করতে পারল না সেও এক সমস্যা।

কাবুল ফেরার পথে যুবরাজ নাকি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কেঁদে ফেলেছিলেন। জলালাবাদের যেসব সেপাই তাকে আমীরের তখতে বসাবার জন্য তার কাছে গিয়েছিল তারা ততক্ষণে আমান উল্লার দলে যোগ দিয়ে কাবুল যাচ্ছে। কান্না দেখে তারা নাকি মুইন-উস-সুলতানের কাছে এসে বারবার বিক্রপ করে বলেছিল, বলল না এখন, ব কাকায়েম বোরর খুড়োর কাছে যাও, তিনি সব জানেন। যাও এখন খুড়োর কাছে? এখন দেখি, কাবুল পৌঁছলে খুড়ো তোমাকে বাঁচান কি করে।

কাবুলের আর্ক দুর্গে দুজনকেই বন্দী করে রাখা হল। কিছুদিন পর নসর উল্লা কলেরায় মারা যান। কফি খেয়ে নাকি তার কলেরা হয়েছিল। কফিতে অন্য কিছু মেশানো ছিল কিনা সে বিষয়ে দেখলুম অধিকাংশ কাবুল চারণের স্মৃতিশক্তি বড়ই ক্ষীণ।

এর পর মুইন-উ-সুলতানের মনের অবস্থা কি হয়েছিল ভাবতে গেলে আমার মত নিরীহ বাঙালীর মাথা ঘুরে যায়। কল্পনা সেখানে পৌঁছয় না, মৃত্যুভয়ের তুলনাও নাকি নেই।

এখানে পৌঁছে সমস্ত দুনিয়ার উচিত আমান উল্লাকে বারবার সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করা। প্রাচ্যের ইতিহাসে যা কখনো হয়নি আমান উল্লা তাই করলেন। মাতার হাত থেকে যেটুকু ক্ষমতা তিনি ততদিনে অধিকার করতে পেরেছিলেন তারই জোরে, বিচক্ষণ কূটনৈতিকদের শত উপদেশ গ্রাহ্য না করে তিনি বৈমাত্রেয় জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাকে মুক্তি দিলেন।

এ যে কত বড় সাহসের পরিচয় তা শুধু তারাই বুঝতে পারবেন যারা মোগলপাঠানের ইতিহাস পড়েছেন। এত বড় দরাজ-দিল আর হিম্মৎ-জিগরের নিশান আফগানিস্থানের ইতিহাসে আর নেই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *