বাঙালির আদিখ্যেতা
আদিখ্যেতা কথাটার মধ্যেই আছে আদিখ্যেতা। কারণ, “অধিক’ শব্দের বিশেষ্য হলো আধিক্য’। কিন্তু বাঙালিরা এই একটা প্রত্যয় নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেননি। তাঁরা “আধিক্য’র পরে ব্যাকরণের মাথা খেয়ে আবার একটা ‘তা’ প্ৰত্যয় জুড়ে দিয়ে শব্দটাকে করেছেন “আধিক্যতা’–চলতি বাংলায় আদিখ্যেতা”। (অনেকে যেমন ভুল করে দারিদ্র্যতা লেখেন, তেমনি।)। আসলে, বাঙালির চরিত্রেই এই আদিখ্যেতা রয়েছে, রয়েছে সবকিছুকে বাড়িয়ে, অতিরঞ্জন করে বলার প্রবণতা। প্রশংসা করলে বাঙালিরা যেমন মাত্রা ছাড়িয়ে যান, নিন্দা করলেও তেমনি কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
এটা যে, সাম্প্রতিক বৈশিষ্ট্য, তা মনে করার কারণ নেই। কারণ, মধ্যযুগের সাহিত্যও দেখতে পাই সবচেয়ে বহুলব্যবহৃত অলঙ্কার হলো: অতিশয়োক্তি অলঙ্কার। বিপ্রদাসের মনসামঙ্গলে মুসলমান জমিদার হাসনের লাখ লাখ সৈন্যের বিরুদ্ধে মনসা দেবী দু লাখ নাগ, বাইশ লাখ ভুজঙ্গ, বিশ লাখ ফণা-ধরা মহাপদ্ম নাগ এবং ছত্রিশ লাখ তক্ষক পাঠিয়েছিলেন। মনসামঙ্গলের অনেক পরে লেখা মুসলমানী পুঁথিতেও লাখ লাখ সৈন্য মরার কথা বলে কবি পরীক্ষণে বলেছেন, ‘শুমার করিয়া দেখি চল্লিশ হাজার।’
যে-যুগে মানুষ বয়স গুনতো কুড়ি দিয়ে, সেই যুগে হাজার, লাখ, কোটি–এসব শব্দের বিশেষ কোনো অর্থ ছিলো না! বোধ হয়। আধুনিক কালেও নেই। তা না-হলে একটি বাক্যে কেউ হাজার হাজার (অথবা কোটি কোটি) সালাম ও আদাব জানাতে পারে? হাজার আর লাখ এত অর্থহীন হয়েছে যে, সম্প্রতি হাজারের বদলে লেখা হচ্ছে–হাজারো। লাখের বদলে লাখো।
মনে মনে অন্যের সম্পর্কে যাই ভাবুন, বাঙালিরা বাইরে অন্তত বিনয়ে বিগলিত। ‘পরম পূজনীয়েষ্ণু’, ‘পরম শ্ৰদ্ধাভাজনেষু ইত্যাদি সম্বোধন করে যাদের কাছে চিঠি লেখা হয়, তাদের সবার প্রতিই পত্ৰলেখকের যে-অগাধ অথবা আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা থাকে, তা হলপ করে বলা যায় না। শ্ৰীশ্ৰীচরণকমলেষুর পাদপদ্মে’ (একই কথা, অতএব আদিখ্যেতা) প্ৰণতি জানাবার সময়ে ভক্তির চেয়ে ভণ্ডামি অনেক বেশি থাকে। এমনি ভণ্ডামির দৃষ্টান্ত হলো: প্রভৃতি খানাপিনার আয়ােজন করে নিমন্ত্রণ করার সময়ে চারটে ডাল-ভাত’ খাওয়ার কথা বলা। প্রাসাদের মতো অট্টালিকা নির্মাণ করে তার নাম দেওয়া ‘পর্ণকুটীর’।
বস্তুত, এ রকমের অতিরঞ্জন থেকেই বাংলা বিশেষণগুলো ধীরে ধীরে ধার খুইয়ে ফেলছে। বিশেষণের আগে তাই লাগাতে হচ্ছে ভীষণের মতো বিশেষণীয় বিশেষণ। যেমন, ভী-ষ-ণ সুন্দর, ভীষণ ভালো। আমার ধারণা, এই ধরনের ব্যবহার সম্প্রতি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন, “মহা’ শব্দটির ব্যবহার। সম্ভবত ’৭২ সালে সবার আগে বাংলা একাডেমীর পরিচালক মহাপরিচালক হন। তারপর মহামারীর মতো দেখা দিলো মহাসচিব, মহাজোট, মহাসম্মেলন, মহাসড়ক, মহানগরী। সম্ভব-অসম্ভব সব বিশেষণের আগেই মহা’ এসে মহা উৎপাত শুরু করলো। এভাবে মহা শব্দটিই এখন তার মাহাত্ম্য হারিয়ে ফেলেছে। মহারা মাহাত্ম্য হারানোর একটা দৃষ্টান্ত দিতে পারি। স্বাধীনতার পরে লক্ষ্য করলাম, জনসভাকে লেখা হচ্ছে সমাবেশ। আর শেখ মুজিবের মতো বড় নেতার সভাকে বলা হচ্ছে মহাসমাবেশ। সত্যি সত্যি তখন তাতে অনেক লোক হতো। কিন্তু এখন রাজাকারনেতার সভায় কয়েক ডজন খুদে রাজাকার উপস্থিত হলেও তাকে কেউ কেউ বলেন মহাসমাবেশ। অতঃপর মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর সভাকে কী বলা হবে?–মহামহাসমাবেশ অথবা মহাজনসমুদ্র? (এখনই বলে রাখি, মহাজনসমুদ্র লেখার বিপদ আছেএখন সমাস বিশ্লিষ্ট হবার জামানায় ওটাকে কেউ মহাজন-সমুদ্র মনে করতে পারেন, বিশেষ করে দেশে যখন মহাজন অর্থাৎ ধার-দেনেওয়ালা এবং মহৎ জনদের এতো আদিখ্যেতা হয়েছে!
রাজনৈতিক আদিখ্যেতারও দুয়েকটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে। শেখ মুজিব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা— এ বিষয়ে রাজাকার ছাড়া অন্যদের কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। কিন্তু প্ৰতিষ্ঠাতা না-বলে তাকে বলা হয়–জাতির জনক। কথাটা এসেছে সম্ভবত ইংরেজি ফাউন্ডিং ফাদার/ফাদার অব দ্য নেশন থেকে। বহুল প্রচলিত এক্সপ্রেশন–বাংলা ভাষা একে মেনে নিয়েছে। শুনতে অতো খারাপ লাগে না। কিন্তু মুজিবের ক্ষেত্রে ঐ একটা বিশেষণ অনেকে যথেষ্ট মনে করেন না–তাঁর দ্বিতীয় বিশেষণ তাই বঙ্গবন্ধু। সম্প্রতি এক জায়গায় এ দুটির সঙ্গে তৃতীয় আরেকটি বিশেষণ দেখলাম ‘বাংলাদেশের স্থপতি’। যারা ব্যক্তিপূজা করেন, তাদের কথা আলাদা; কিন্তু যারা পূজা করেন না, তেমন কারো তুলনায় শেখ মুজিবের প্রতি আমার শ্রদ্ধা একটুও কম নয়। আমি বিশ্বাস করি, তিনি যা করেছেন, তার জন্যে তিনি অবশ্যই সর্বকালের একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিশেবে ইতিহাসে মর্যাদা পাবেন। কিন্তু এ কথা মনে করা সত্ত্বেও এ যাবৎ আমি কখনো “বঙ্গবন্ধু’ লিখিনি। এবং মনে করি, তাঁর পুরো নাম নয়, তাকে সংক্ষেপে কেবল মুজিব বললেই যথেষ্ট হয়। সক্রেটিস যদি কেবল সক্রেটিস, গেলিলিও যদি গেলিলিও, শেক্সপীয়র যদি শেক্সপীয়র, নিউটন যদি নিউটন, লিঙ্কন যদি লিঙ্কন, আইনস্টাইন যদি আইনস্টাইন এবং ম্যান্ডেলা যদি শুধু ম্যান্ডেলা নামে পরিচিত এবং বিখ্যাত হতে পারেন, তবে মুজিব বলার সময় প্রতিবার তাঁকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বলতে হবে কেন?
ওদিকে, শেখ মুজিব বাংলাদেশের বিতর্কাতীত প্রতিষ্ঠাতা হওয়ায় জিয়াউর রহমানের দল পড়েছেন দারুণ বেকায়দায়। এ দলের লোকেরা যেহেতু তার নাম ভাঙিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চান, সে জন্যে তাকেও ফেরেশতায় পরিণত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই তাঁরা তাঁকে দুটো বিশেষণ ইতিমধ্যে দিয়েছেন। প্ৰথমে শহীদ, তার পর স্বাধীনতার ঘোষক। অথচ আশ্চর্য, ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হলেও, তাকে শহীদ বলা হয় না! যদ্দুর শুনেছি, জিয়া নিহত হন সেনাবাহিনীর আভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দুে। অন্তত ধৰ্মযুদ্ধে যে নিহত হননি–এ বিষয়ে নিশ্চিত। এমন কি, তিনি যেভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেটাকেও আদৌ ধর্মসঙ্গত বলা যায় না। তা হলে তিনি কোন যুক্তিতে শহীদ হলেন? এমন কি, বিএনপির নেতারাও ভালো করে জানেন যে, জিয়াউর রহমান কোন পরিবেশে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং সে ঘোষণায় তিনি কী বলেছিলেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন মুজিবের নামেই। তা না-হলে তার মতো একজন অজ্ঞাত মেজরের আহবানে কেউ যুদ্ধ শুরু করেনি, অথবা যুদ্ধ চালিয়েও যায়নি। অথচ এই ঘোষক পদবীটা এত জরুরি হয়ে পড়েছে যে, সেটা না-বললে দেশের সবচেয়ে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত লোকেরও চাকরি চলে যায়–এমন কি, রাষ্ট্রপতির।
বাঙালির আতিশয্যগ্ৰীতি রবীন্দ্রনাথের মধ্যেও কিছু কম ছিলো না। তিনিও বিশেষণপ্রেমিক ছিলেন। এমন কি, তার ওপর কেউ কবিগুরু” “গুরুদেব’ ‘মহাকবি ইত্যাদি বিশেষণ একক অথবা একত্রে বর্ষণ করলে তিনি রাগে অন্ধ হয়ে তাকে অভিশাপ দিতেন বলে শোনা যায়নি। গান্ধীজীর রাজনৈতিক আন্দোলন দেখে রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি তাই তাকে একটা উপাধি দেন– মহাত্মা। সেই থেকে দেশবাসী গান্ধীজীর আসল নাম প্রায় ভুলে গিয়ে তাঁর নামই দেন মহাত্মা গান্ধী। রবীন্দ্রনাথ ১৯২০-এর দশকের গোড়ার দিকে গান্ধীজীকে যখন এই উপাধি দেন, তখন বাংলার জনপ্রিয় নেতা ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ। গান্ধীজীর একটা বিশেষণ থাকলে বাঙালি নেতারও একটা বিশেষণ প্রয়োজন হয়। অতএব তিনি হলেন দেশবন্ধু। তারপর একে-একে দেখা দিলেন দেশপ্রিয়, নেতাজী, শেরে বাংলা, বঙ্গবন্ধু। যারা এ রকম কোনো বিশেষ নামে ভূষিত হলেন না, তারাও পিছিয়ে থাকলেন না। তাদের নামের আগে লেখা হলো দেশবরেণ্য, দেশনন্দিত ইত্যাদি। এ রকমের বীরপূজার পথ ধরে সম্প্রতি শেখ হাসিনা হয়েছেন জননেত্রী। খালেদা জিয়া হয়েছেন দেশনেত্রী।
প্রসঙ্গত বলতে হয়, বাংলাদেশে সম্প্রতি বিদ্যুতের মতো অনেক কিছুই তীব্ৰ অভাব দেখা দিয়েছে; কিন্তু বন্যার পানির মতো যে-জিনিশটার প্রাদুর্ভাব হয়েছে তা হলো নেতা-কর্মীর। একটা দলের যিনি নেতৃত্ব দেন, তিনি নেতা। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন থাকতে পারেন, যাদের বলা যায় নেতৃস্থানীয়। কিন্তু এখন গ্রাম পর্যায়েও দলের নেতা তৈরি হয়েছেন। এতো নেতা যে, কোনো ভিড়ের মধ্যে একটা লাঠি ছুড়ে মারলে আধ-ডজন নেতা আহত হন। আর, নেতা-কর্মী? এ এক অদ্ভুত পরিভাষা। যা আগে ছিলো সমর্থক, সক্রিয় সমর্থক অথবা কমী, তাই এখন পদোন্নতি পেয়ে নেতাকমীতে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক টাউট, দলীয় চাঁদাবাজ এবং মহাফাজিলসবাই এখন নেতাকমীর পদ অলকৃত’ করেছেন। বাঙালিরা কর্তাভজা— শক্তের ভক্ত, নরমের যম। পেছনে গাল দিলেও ক্ষমতাবানের সামনে তারা হাত কচলাতে অত্যন্ত পারদশী। (একটা জন্তুর কথা তারা মনে করিয়ে দেন। সে জন্তুটা মালিক এবং মালিক-স্থানীয় সবার সামনে হাত কচলানোর বদলে একটা বিশেষ অঙ্গ নাড়তে থাকে।) এ জন্যে উচ্চপদস্থ কোনো সরকারি কর্মচারীর সামনে পড়লে বাঙালিরা কেচো হয়ে যান। কী বলে সম্মান জানাবেন ভেবে পান না। তাই একটার পর একটা বিশেষণের আশ্রয় নিতে থাকেন। যেমন, কোনো মন্ত্রী এলে তাঁকে অমুক সাহেব অথবা জনাব অমুক বললে যথেষ্ট মনে করেন না। বলেন মাননীয় মন্ত্রী। মন্ত্রী কথাটাই যথেষ্ট সম্মানের। কিন্তু মাননীয় বললেও যথেষ্ট হয় না। অনেকে বলেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় মন্ত্রী। ভাবখানা। এই যে, এ দেশে সরকার ছাড়া অন্যদেরও মন্ত্রী আছে। অনেকে আবার বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী বলে বিবেচনা করেন যে, কথাটা যথেষ্ট গালভারি হলো না। তারা তখন বলেন–গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় মন্ত্রী–যদিও এরশাদী সংশোধনের পর আক্ষরিক অর্থে বাংলাদেশ এখন আর গণপ্রজাতন্ত্রী নেই। কারণ, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এখন আল্লাহর ওপর বর্ষিত হয়েছে।
বাংলাদেশ যেহেতু কাৰ্যত নির্বাচিত একনায়কের দেশ, সে জন্যে মন্ত্রীর তুলনায় প্রধানমন্ত্রীর স্থান অনেক উচুতে। তাই মাননীয় বিশেষণ তীর জন্যে যথেষ্ট নয়। তাঁর নামের আগে আরও দু-একটা বেশি বিশেষণ স্বভাবতই প্রয়োজন হয়। যেমন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনয়া জননেত্রী মহামান্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। (খালেদা জিয়াকেও সম্প্রতি কী কী বিশেষণে আখ্যায়িত করা হচ্ছে, তার খেই হারিয়ে ফেলেছি।) এই বিনয়ের স্রোতে ভেসে-যাওয়া আত্মসম্মানবর্জিত মহাভণ্ড লোকগুলোই আবার শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে সরে গেলে তাঁর মুণ্ডুপাত করে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর ভজনা শুরু করেন। রাতারাতি অফিসে নতুন ছবি টানান। প্রথম আলোতে প্ৰকাশিত একটি চিঠি থেকে জানতে পারলাম যে, এবারের স্বাধীনতা দিবসে (২০০৬) বাংলাদেশ টেলিভিশন (আসলে হিজ মাস্টার্স ভয়েস অব বাংলাদেশ) থেকে যে-সম্প্রচার করা হয়, তাতে একবারও নাকি শেখ মুজিবের নাম বলা হয়নি। বেশ্যারও বোধহয় খদ্দেরের প্রতি এর চেয়ে বেশি আনুগত্য থাকে। বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিকদের নামের সঙ্গে আরও যেসব অর্থহীন বিশেষণ ব্যবহৃত হতে দেখেছি, সেগুলো হলো: মহানায়ক, মহান নেতা, ক্ষণজন্মো, রূপকথার নায়ক, জনগণের নেতা, মজলুম জননেতা ইত্যাদি। এ রকম একটা দৃষ্টান্ত দিই। মণি সিংহ সম্পর্কিত একটি লেখা থেকে। এতে তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে বলা হয়েছে: ‘বর্ণাঢ্য ও সংগ্ৰামী রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মণি সিংহের জীবনাবসান ঘটে…।”
মৃত্যু সম্পর্কে বাঙালিদের অনেকগুলো লক্ষ্য করার মতো এক্সপ্রেশন আছে। যেমন, স্বৰ্গলাভ, স্বৰ্গারোহণ, স্বগীয়, স্বৰ্গত (নরকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও), মৃত্যু বরণ, শাহাদাত বরণ, শাহাদাত বরণকারী ইত্যাদি। এগুলো একটাও আমার বানানো নয়, সবগুলোই অথেনটিক। আমি ভেবে পাইনে, মৃত্যুকে বরণ করে কিভাবে–যদি না সেটা আত্মহত্যা হয়? কেউকেটা মরলে সেই তার বিদেহী আত্মার প্রতি বাঙালিরা শ্ৰদ্ধা জানান। আত্মা যদি থাকেই, তবে সেটা যে বিদেহী–তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না! তা হলে বিদেহী কথাটার আদিখ্যেতা কেন?
খবরের কাগজে মাঝেমধ্যে দুটো ব্যবহার লক্ষ্য করি— যুগব্যক্তিত্ব আর যুগমানব। এর কি কোনো অর্থ আছে, নাকি এও আমাদের আদিখ্যেতা? এর অর্থ কি যে-ব্যক্তি অথবা মানব একটা নতুন যুগ তৈরি করলেন? নাকি যে-ব্যক্তি অথবা মানব একটা বিশেষ যুগের যথার্থ প্রতিনিধি অথবা যথাৰ্থ ফসল? প্রসঙ্গত ‘ব্যক্তিত্ব’ শব্দটাও আদিখ্যেতার আরেকটি চমৎকার উদাহরণ। ব্যক্তিকে ব্যক্তিত্ব বলে না, ব্যক্তিত্ব হচ্ছে ব্যক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। প্যর্সন থেকে যেমন প্যর্সনালিটি। যেভাবে সেই ব্যক্তিত্ব কথাটার অব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিদিন, তা দেখলে আহাদে আটখানা হওয়ার উপায় থাকে না। তিনি একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব।” বড় মাপের ব্যক্তিত্বও বোধ হয় শুনেছি। বড় মাপের মানে লম্বা চওড়া। সত্যিকারের লম্বা এবং মোটা লোককে বড় মাপের ব্যক্তি বললে প্ৰবল আপত্তির কারণ দেখিনে। যদিও একজনের দেহের দিকে ইঙ্গিত করে কোনো মন্তব্য করা ঠিক ভদ্রতার মধ্যে পড়ে না। কিন্তু বড় মাপের ব্যক্তিত্ব?–একেবারে অর্থহীন।
রাজনৈতিক এলাকা থেকে আর-একটি আদিখ্যেতার দৃষ্টান্ত না-দিয়ে পারছি না। বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতির নামের আগে বেশ কয়েকটি বিশেষণ লক্ষ্য করেছি। অধ্যাপক ডক্টর রাষ্ট্রপতি …। এর থেকে বেহুদা তোশামুদি আর কিছু হতে পারে না। রাষ্ট্রপতির চেয়ে বড়ো আর কী আছে? তা ছাড়া, ইংরেজি ভাষায় কাউকে প্রফেসর বললে তার থেকে সম্মানের কিছু থাকে না। ডক্টর কথাটা তখন বেকার হয়ে যায়। তাই কেউ অধ্যাপকের পর ডক্টর বললে তা হাসির খোরাক ছাড়া কিছুই জোগাবে না। বাড়তি সম্মান তো নয়ই! বাংলাদেশে আরও লক্ষ্য করি অধ্যাপক আর প্রফেসরের মধ্যেও একটা পার্থক্য করা হয়। প্রফেসরকে বাংলায় অধ্যাপক বলা হলে তিনি নাখোশ হন–কারণ অধ্যাপক বললে যেন যথেষ্ট বলা হয় না। (প্ৰশংসার কাঙাল আর কাকে বলে!)৷ কলেজের শিক্ষকরা অনেক দিন আগে থেকেই নিজেদের নামের আগে অধ্যাপক লিখে থাকেন। একজন অধ্যক্ষও অধ্যাপক। কিন্তু তা সত্ত্বেও অধ্যক্ষরা নামের আগে লেখেন অধ্যক্ষ। সম্প্রতি একজনের নামের আগে দেখলাম উপাধ্যক্ষ। শুনে হাসির চেয়ে বিস্ময়ই বেশি বোধ করেছি। কিছু কাল আগে আরেকজনের নামের আগে দেখলাম। তিনি লিখেছেন ইঞ্জিনিয়ার অমুক। অধ্যাপক, ডাক্তার, ব্যারিস্টার, অ্যাডভোকেট–এঁরা সবাই পেশা আর পদের কথা লিখতে পারলে এনজিনিয়ার আর পিছিয়ে থাকবেন কেন? এর পরে আস্তে আস্তে আরও কতোটা পদস্খলন হবে, সেটা এখনই বোঝা যাচ্ছে না।
মহান এবং পবিত্র শব্দ দুটোরও শ্ৰীলতাহানি করা হচ্ছে প্রতিদিন। যেমন মহান স্বাধীনতা দিবস, মহান শহীদ দিবস। একটা দিন কী করে মহান হয়, সেটা বোঝা কঠিন। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিধানে মহানের এ রকম কোনো সংজ্ঞা নেই। আরেকটি আদিখ্যেতা পবিত্র শব্দের। ওরস, মিলাদ, রমজান, ঈদ, হজ, দরগা, মাজার, মক্কা, মদিনা–সবই পবিত্র, সন্দেহ নেই। কিন্তু শরীফ লেখার পরও কি শব্দের গোড়ায় আবার পবিত্র লেখার কোনো দরকার আছে? আরেকটা এক্সপ্রেশন দেখেছিলাম–‘পবিত্ৰ শোণিতে রঞ্জিত”। কোন রক্তটা পবিত্র আর কোনটা অপবিত্র আমার সীমিত বিজ্ঞানের জ্ঞান দিয়ে তার হদিস করতে পারিনি।
এর থেকেও গুরুতর একটা দৃষ্টান্ত দিতে পারি ধর্ম থেকে। যিশু খৃষ্ট পরিচিত। শুধু যিশু অথবা খৃষ্ট হিশেবে। বুদ্ধ পরিচিত বুদ্ধ হিশেবে। কৃষ্ণ কৃষ্ণ হিশেবে। কোনো বিশেষণ ছাড়াই কোটি কোটি লোকের কাছে তাঁরা পরম শ্ৰদ্ধেয়। কিন্তু ব্যতিক্রম ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা। তাঁরা তাদের ধর্মপ্রবর্তকের নামের আগে-পিছে অনেকগুলো বিশেষণ জুড়ে দিতে পছন্দ করেন। কেউ না-দিলে তাকে প্রায় নাস্তিক বলে গণ্য করেন। সৈয়দ মুজতবা আলি লিখতেন মহাম্মদ সাহেব। তাই নিয়ে তার অনেক গালমন্দ শুনতে হয়েছে। তাঁর যুক্তিটা ছিলো: জীবদ্দশায় মহাম্মদকে সম্মান করে তাঁর অনুসারীরা বলতেন: সাহাব অর্থাৎ সাহেব। সে জন্যেই, তার অনুসারীদের বলা হয় সাহাবা। তার মধ্যে অসম্মানের কিছু নেই। মওলানা আকরম খান তাঁর যেজীবনী লিখেছিলেন, তাতে মোহাম্মদ নামের আগে কোনো বিশেষণ দেননি, এমনকি, হজরতও নয়। তার মানে কি এই যে, তার শ্রদ্ধা ছিলো না ধর্মপ্রবর্তকের প্রতি? তাঁর নামের শেষে দরুদ অথবা পীস বি আপন হিম লেখাও আমার কাছে বাহুল্য মনে হয়। কারণ তিনি তো সৃষ্টিকর্তার পেয়ারা দোস্ত, তাঁর জন্যে আমাদের মতো পাপী তাপীর দোয়ার কি কোনো দরকার আছে?
ধর্ম থেকে অন্য প্রসঙ্গে যাবার আগে পীর অথবা তার থেকেও ছোটো মাপের ধর্মীয় নেতাদের কথা বলে নিই। ছেলেবেলায় কুচিৎ পীরের কথা শুনতাম। পীরদের সম্মানসূচক পদবী ছিলো মওলানা। কিন্তু এখন মওলানার নামের সঙ্গে অনেকগুলো বিশেষণ লাগানো হয়। একটা দৃষ্টান্ত দিই পত্রিকা থেকে। শামসুল উলামা হজরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কেবলাহ’। এই বিশেষণগুলোর একটা ছাড়া বাকিগুলোর অর্থ আমার জানা নেই। এমন কি, যার কথা বলা হচ্ছে, তার নামও শুনিনি। ঐ একই পত্রিকার একটি বিজ্ঞাপনে দেখলাম। লন্ডনের এক বাঙালি পাড়ায় একটি “ওয়াজ মাহফিল’ হবে এবং তাতে ‘ওয়াজ ফরমাইবেন’ পাঁচজন মওলানা ও হাফিজ। এই পাঁচজনের নামের আগেই আছে সম্মানসূচক উপাধি “হযরত’। এতজন হজরতের কাছাকাছি বাস করছি জেনে পুলকিত ও আশ্বস্ত বোধ করলাম। কারণ এদের পুণ্যগুণে মৌলবাদীদের বোমাবাজি থেকে রক্ষা পাব বলে ভরসা করছি। সত্যি সত্যি, সম্প্রতি মওলানাদের বিশেষণের সংখ্যা ‘অত্যাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে (আকারটা আদিখ্যেতা)। আগে যাঁরা মুন্সি অথবা মৌলবী বলে পরিচিত ছিলেন, ভুইফোড়ের মতো রাতারাতি তারা মওলানায় পরিণত হয়েছেন। দাড়ি থাকলেই তাকে মওলানা বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। দাড়িহীন মওলানা এখনো দেখিনি, তবে খুনীকে মওলানা হতে দেখেছি। যেমন, পালাবদলের খেলায় রাজাকারও মওলানায় পরিণত হয়েছেন। যে যতো বড় রাজাকার, সে ততো বড় মওলানা। তাঁর ওয়াজের ততো ক্যাসেট বিক্রি হয়। জেএমবি-র খুনিরাও মওলানা, মুফতি ইত্যাদি উপাধিতে অলস্কৃত হয়েছেন। একটু আদিখ্যেতা করে বলতে পারি এসব উপাধিকে তাঁরা অলঙ্কৃত করেছেন।
এক সময়ে যারা বিলেতে যেতেন, তাদের বলা হতো: বিলোতফেরত। এতো কম লোক তখন সুদূর বিলেতে যেতেন বা যেতে পারতন যে, কথাটার একটা তাৎপর্য থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু এখন আর তা নেই। তেমনি যখন দেশ থেকে মাত্র কয়েক শো লোক হজ করতে মক্কা যেতেন, তাদের বলা হতো আল-হজ। বোম্বাই পর্যন্ত গিয়ে ফিরে এলে বলা হতো বোম্বাই হাজী। কিন্তু এখন? এখন কি আল-হজ না-বললে চলে না! দেশের অমুসলমান ছাড়া বাকি তো তাবৎ লোকই প্রায় হজ করে ফেলেছেন। কেউ কেউ বছরে একাধিকবার রাজনৈতিক হাজও করেন। তা হলে আর কেন আল-হাজ?
কেবল ধর্মীয় অথবা রাজনৈতিক নেতাদেরই নয়, অন্যদেরও সম্মানের আতিশয্য দেখানো হয়। যে-রবীন্দ্রনাথের গান অথবা কবিতা ছাড়া সম্ভবত শৌচাগারের উদ্বোধনও সম্ভব হয় না, সেই রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে শুরু করা যাক। রবীন্দ্রনাথ মস্ত বড় কবি, সন্দেহ নেই। বিশ্বের কাছে তিনি বাঙালিদের পরিচয় তুলে ধরেছিলেন, তাতেও সন্দেহ নেই। তবে তাঁকে মহাকবি, বিশ্বকবি, কবীন্দ্র, কবিগুরু, গুরুদেব ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করার কী প্রয়ােজন? তাঁর নামটাই কি কালিদাস অথবা শেক্সপীয়রের মতো যথেষ্ট নয়? অন্তত আমি আমার কোনো রচনায় এই বিশেষণগুলোর একটাও ব্যবহার করিনি। তাতে যে সেসব রচনায় তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা কিছুমাত্র হ্রাস পেয়েছে, বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। রবীন্দ্রনাথের মতো বঙ্কিমচন্দ্র পরিণত হয়েছেন ঋষি অথবা সাহিত্যসম্রাটে, নজরুল বিদ্রোহীতে। এসবের কোনো দরকার ছিলো না। সম্প্রতি একটি পত্রিকায় একজন কবি-মুক্তিযোদ্ধার খবর পড়লাম। তিনিও অনেকগুলো বিশেষণের অধিকারী। বিশিষ্ট কবি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা’। মুশকিল। হলো: এই বিশিষ্ট কবির নাম পর্যন্ত আমি শুনিনি। তা ছাড়া, তিনি বন্দুক নিয়ে মুক্তিযুদ্ধও করেননি। কী করে বীরত্ব প্রমাণ করলেন, দুর্বোধ্য।
বস্তুত, বাঙালিদের বিশেষণ-গ্ৰীতির প্রবল বন্যায় বিশিষ্ট” কথাটার অর্থ বঙ্গোপসাগরে ভেসে গেছে। বিশিষ্ট হলো সে, যাকে সাধারণ থেকে আলাদা কর লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ঢালাওভাবে সবার নামের সঙ্গে বিশিষ্ট লাগালে বিশিষ্ট কথাটাই বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে। সত্যি বলতে কি, কেবল বাঙালিদের মধ্যে নয়, ংলা ভাষার মধ্যেও অতিকথনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তা না হলে কেন বলা হবে। অমুক ব্যক্তি সভাপতির পদ অলকৃত করেন? পদটাকে কী করে একজন অলস্কৃত করেন? রঙ লাগান? মহতী সভা এ রকমের একটি অর্থহীন বাগাড়ম্বর। কিন্তু ব্যাকরণের দিক দিয়ে এতে লিঙ্গের কোনো ভুল নেই। অপর পক্ষে, কিছু দিন আগে “শাহাদাত বরণকারী”। “স্বাধীনতার ঘোষক’ ‘জেনারেল (অবঃ)’ জিয়াউর রহমানের বিধবা” “ক্ষমতাসীন চার দলীয় ঐক্যজোটের নেতা’, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী’ ‘দেশনেত্রী’ বেগম খালেদা জিয়া এক ভাষণে বলেন, “মহতী” অনুষ্ঠান। এ থেকে অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিশেষ কিছু বোঝা না-গেলেও, বোঝা গেলো তাঁর ভাষণ যিনি লিখেছিলেন, তার লিঙ্গজ্ঞান দুর্বল। অনুষ্ঠান কথাটা পুংলিঙ্গ। অতএব মহতী না হয়ে মহৎ অথবা মহান হবার কথা। এসব বিশেষণ ব্যবহার করতে গিয়ে ব্যাকরণের শ্ৰীলতাহানির কী দরকার? সোজা এবং সংক্ষেপে ‘অনুষ্ঠান’ বললেই হয়!
আরেকটা বিশেষণ প্রায়ই শোনা যায়: আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ধরা যাক, কারো বই ঢাকা ও কলকাতা থেকে প্ৰকাশিত হলে অমনি তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখকে পরিণত হন। এ রকমের খ্যাতি আরোপের বাসনা বাঙালিদের মধ্যে এতই প্রবল যে, ‘প্রবাসী’ও একটি বিশেষণে পরিণত হয়েছে। যেমন, প্রবাসী লেখক। এ দিয়ে বোঝা গেলো। যে-লেখক বিদেশে থাকেন। কিন্তু তার মধ্যে গৌরবের কী আছে? বিশেষণের এই ভিড়ে এখন আর ফল দিয়ে কারো পরিচয় হয় না, তোশামোদীরা কী বিশেষণ দিলেন, তা দিয়েই বাজিমাতের চেষ্টা চলে। অর্থহীনভাবে চিরন্তন, আবহমান, প্রচণ্ড, অসম্ভব, বিখ্যাত, প্ৰখ্যাত ইত্যাদি বিশেষণও ব্যবহার করা হয় যখন-তখন। অসম্ভব সুন্দরের একটা অথেনটিক দৃষ্টান্ত দিই আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে–অসম্ভব সুন্দর মুহূর্ত কিশোর পারেখা অমর করে রেখেছেন।” এক জায়গায় পড়েছিলাম ‘অন্যতম’–শ্ৰেষ্ঠ অৰ্থে। যেমন, শ্ৰেষ্ঠ কবি লিখতে গিয়ে লেখক লিখেছেন অন্যতম কবি।
মনে আছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বাংলার অধ্যাপক। ১৯৬৯ অথবা ৭০ সালে দাউদ পুরস্কার পাওয়ার পর তাকে সম্মান জানানোর জন্যে একটি সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে একটি ছাত্রী এই পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপককে খুশি করার জন্যে (অন্য ভাষায়—তৈল প্রদান করার নিমিত্ত) তার বক্তৃতায় বলেছিলো, ‘…দাউদ পুরস্কার পেয়ে বিশ্বের কাছে তিনি বাঙালিদের মুখোজুল করেছেন।” শুনে হেসেছিলাম। কিন্তু অবাক হইনি। কারণ বাঙালিরা এমন অতিশয়োক্তি করেই থাকেন। এঁরা দিঘিকেও সাগর বলেন। ব্যাং ভাবে তার কুয়োই মহাসাগর। কারণ, মহাসাগর সে কখনো দেখেনি। তুলনা করার সময়ে একটা বস্তুকে অন্য একটা বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা হয়। দুটোরই আকার, আয়তন, বৈশিষ্ট্য, সাদৃশ্য ইত্যাদি জানা থাকলে তবেই সেই তুলনা সার্থক হয়। তা না-হলে সেই তুলনাই অনর্থক। জ্ঞানের অভাব থেকে অনৰ্থক তুলনা দেখা দিতে পারে; কিন্তু না, বাঙালির অনৰ্থক তুলনার কারণ তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য–আদিখ্যেতা।
(প্ৰথম আলো, মে ২০০৬)