২৪. কুসুম নৌকা ঘাটায় যায় নি

কুসুম নৌকা ঘাটায় যায় নি। বিয়ের কনে বলেই তাকে যেতে দেয়া হয় নি। সে ভেতর বারান্দায় পাতা চৌকীর উপর আজ সারাদিন ধরেই প্রায় শুয়ে আছে। কুসুমদের বাড়ি থেকে পুষ্প গিয়েছিল। মনোয়ারার খুব শখ ছিল রাজবাড়ির মেয়েটাকে শেষবার দেখার। তার ব্যথা হঠাৎ শুরু হওয়ায় যেতে পারেন নি।

পুষ্প ফিরল খুব মন খারাপ করে। কুসুম বলল, ঘাটে অত মানুষ দেইখ্যা রাজবাড়ির মেয়ে খুব খুশী, ঠিক না পুষ্প?

পুষ্প কিছু বলল না।

কুসুম বলল, উনি কি করতেছিলেন? হাসতেছিলেন?

না, খুব কানতেছিল।

মতি ভাই কি ঘাটে গেছিল?

উহুঁ।

নৌকা কতক্ষণ হইছে ছাড়ছে?

মেলা সময় হইছে।

ইঞ্জিনের নৌকা?

হুঁ। এইতা জিগাইতেছ ক্যান?

কুসুম হাসিমুখে বলল, কারণ আছেরে পুষ্প। কারণ আছে। আমি বিষ খাইব বইল্যা ঠিক করছি।

রাজবাড়ির মেয়ে থাকলে বিষ খাইয়া লাভ নাই, বাঁচাইয়া ফেলব। অখন বাঁচানির কেউ নাই।

জ্বীনে ধরা কথা কইওনাতো বুবু।

জ্বীনে ধরা কথা না পুষ্প। একেবারে খাডি কথা। তুই মতি ভাইরে ডাইক্যা আন। সে দেখুক। ছটফট কইরা মরব। এই মরণ দখলে তার কষ্ট হইব। কষ্ট হইলে তার গলা আরো সুন্দর হইব।

তামাশা কইর না বুবু।

আচ্ছা যা–তামাশা বন্ধ।

কুসুম হাসছে। সেই হাসি পুষ্পের ভাল লাগছে না। সে ভীত গলায় বলল, বিষ খাইবা না তো!

আরে দূর বোকা–বিষ খাওনের কি হইছে। বিয়ার কইন্যা বিষ খাইলে বিয়া ক্যামতে হইব?

তোমার কথাবার্তা যেন কেমুন কেমুন।

কুসুম খিল খিল করে হাসছে। হাসির শব্দে বিরক্ত হয়ে ধমক দিতে গিয়ে মনোয়ারা ধমক দিলেন না। আহারে দুঃখী মেয়ে। মনের আনন্দে একটু হাসছে হাসুক। সে নৌকা ঘাটায় যেতে চেয়েছিল তিনি যেতে দেননি। এর জন্যেও মায়া লাগছে। যেতে দিলেই হত। মনোয়ারা ডাকলেন, কুসুম আয় চুল বাইন্দা দেই। কুসুম এল না। কোন উত্তরও দিল না। তার কিছুক্ষণ পর মনোয়ারা ভেতরের বারান্দায় গিয়ে দেখলেন কুসুমের মুখ দিয়ে ফেনা বেরুচ্ছে। শরীরের খিঁচুনি হচ্ছে। কুসুম ভাঙ্গা গলায় বলল, মাগো আমারে মাফ কইরা দিও। আমি বিষ খাইছি। ধান খেতে যে বিষ দেয় হেই বিষ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *