হাতসেপসুত
গেল বুধবারে বিকেলের দিকে আমরা ভবেশদার দোকানে গিয়েছিলাম। তবে এবারে দু-জনে না, তিনজনে। আমি, পিজি আর সেতু। সেতু পিজির গার্লফ্রেন্ড, যার সঙ্গে রোজ রাত দুটো অবধি পিজি হেডফোনে গুজুর গুজুর করে। মেয়েটা বেশ মিশুকে। দক্ষিণ কলকাতায় বাড়ি। একবারের আলাপেই আমাদের বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। পিজির কাছে সেতু ভবেশদার বলা অনেক গল্প শুনেছিল। নিজে ইতিহাসের ছাত্রী, তাই পিজি যেদিন আমাকে বলল সেতু ভবেশদার সঙ্গে আলাপ করতে চায় সেদিন আমি অবাক হইনি একদমই।
দোকানে গিয়ে দেখলাম ভবেশদা যথারীতি বই মুখে নিয়ে বসে আছেন। আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকালেন। তারপরে সেতুকে দেখে কপালে জিজ্ঞাসার ভাঁজ পড়ল। পিজি একগাল হেসে বলল,
‘হেঁ হেঁ ভবেশদা, এ হল গিয়ে আমার বিশেষ বান্ধবী।’
‘হুঁ, সে তোমার দেঁতো হাসি দেখেই বুঝলাম।’
তারপরে সেতুর দিকে ফিরে বললেন,
‘কী নাম তোমার কন্যা?’
‘অদ্বিতীয়া, অদ্বিতীয়া চ্যাটার্জি। আমি এই প্রেসিডেন্সিতেই পড়ি। হিস্ট্রি অনার্স। প্রদীপ্তর মুখে আপনার অনেক কথা শুনেছি। বিগ ফ্যান হিয়ার! এবার থেকে মাঝে মাঝেই কিন্তু আমি ওদের সঙ্গে চলে আসব আপনাকে জ্বালাতে, যদি না আপনার আপত্তি থাকে।’
‘আরে, আপত্তি কীসের, এসব গল্প বলতে তো আমারও ভালোই লাগে। তোমার নামটা দারুণ সুন্দর। কিন্তু এত বড়ো নাম ধরে ডাকতে অসুবিধা হবে তো।’
‘আপনি আমাকে সেতু বলে ডাকতে পারেন, ডাকনাম আমার।’
‘বাহ, তবে তাই হবে, তবে সেতু, তোমার ভালোনামের সঙ্গে কিন্তু ইজিপ্টের এক বিখ্যাত ফারাওয়ের নামের বেশ মিল আছে।’
আমার একটু খটকা লাগল এবারে, বললাম,
‘ফারাওয়ের নামের সঙ্গে মিল? কিন্তু ফারাওরা তো সবাই পুরুষই হত।’
‘না, হাতে-গোনা কয়েকজন নারীও ফারাও হয়ে রাজত্ব করে গেছেন। ক্লিওপেট্রা নিজেই তো ফারাও ছিলেন। তবে এখন যাঁর কথা বলছি সে ক্লিওপেট্রার অনেক আগের। পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম সেলিব্রিটি মহিলা বলতে পারো।’
সেতু এটা শুনে প্রায় লাফিয়ে উঠল,
‘আরিব্বাস! আমার নামে ফারাওয়ের নাম! এই গল্পটা আপনাকে আজকেই বলতে হবে, ভবেশদা।’
ভবেশদা এবারে মুচকি হেসে বললেন,
‘তুমি আজ আমাদের গেস্ট, তোমার আবদার ফেলি কী করে? চলো, তাহলে বেনুর দোকানেই যাওয়া যাক।’
‘হাতসেপসুত, যে নামের মানে প্রথমা, অদ্বিতীয়া। প্রায় ১৫০০ বিসি-র কথা, বুঝলে। এইটিন্থ ডাইনেস্টির রাজা প্রথম তুতমোসিস আর তাঁরর রানি আহমোসের কন্যাসন্তান ছিলেন এই হাতসেপসুত।’
‘এই প্রথম তুতমোসিসের নির্দেশেই ভ্যালি অফ দ্য কিংসে রাজাদের কবর তৈরি করা শুরু হয় বলেছিলেন না?’
‘ঠিক ধরেছ, এ-ই সে। প্রথম তুতমোসিস একজন দুর্ধর্ষ রাজা ছিলেন। ইনি ইউফ্রেটিস নদী পেরিয়ে রাজত্ব ছড়িয়ে দেন উত্তর সিরিয়া আর পূর্ব ইরাকে। তুতমোসিস পনেরো বছর রাজত্ব করার পরে যখন মারা গেলেন তখন ওঁর জায়গাতে ফারাও হয়ে এলেন ওঁর আরেক সন্তান দ্বিতীয় তুতমোসিস। তোমাদের তো বলেইছি, মিশরের অনেক রাজপরিবারেই ভাই আর বোনের মধ্যে বিয়ে হত। এতে মনে করা হত রাজরক্ত অটুট থাকবে। তুতানখামেনও ওঁর বোনকে বিয়ে করেন। তা, সেরকমই হাতসেপসুতও বিয়ে করেন দ্বিতীয় তুতমোসিসকে। ওঁদের একটা মেয়ে হয়, নাম ছিল নেফেরুরে। দ্বিতীয় তুতমোসিসের অন্য আরেক স্ত্রী-র গর্ভে এক রাজপুত্রের জন্ম হয়, তৃতীয় তুতমোসিস।
‘কিন্তু একদিন যখন হঠাৎ দ্বিতীয় তুতমোসিস মারা গেলেন তখন রাজকুমারের বয়স মাত্র চার। সে ফারাও যদিও-বা হল কিন্তু তার পক্ষে তো আর রাজত্ব শাসন করা সম্ভব নয়। তাই সেই কাজে এগিয়ে এলেন ওর সৎমা হাতসেপসুত। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই দেখা গেল রানি নিজেকেই ফারাও বলে ঘোষণা করে দিলেন।’
পিজি এবারে বলল,
‘এরকমটা করলেই হল নাকি? দেশের লোকেরা ছেড়ে দেবে থোড়াই। চাইলাম আর ফারাও হয়ে গেলাম? তাও আবার মেয়ে হয়ে?’
সেতু এবারে পিজির দিকে কটমট করে তাকাতে পিজি ব্যাকফুটে চলে এল,
‘না, মানে দেখ, আমি ফেমিনিজমের এগেইনস্টে গিয়ে কিছু বলছি না। কিন্তু এতদিন ধরে ভবেশদার গল্প শুনে যা বুঝেছি তাতে ইজিপশিয়ান রয়াল ফ্যামিলিতে তো প্যাট্রিয়ার্কিটা খুব বেশি ছিল, তাই…’
ভবেশদা এবারে পিজিকে মাঝপথে থামিয়ে বললেন,
‘পিজি ভাই কিন্তু খুব ভুল কিছু বলেনি সেতু। এরকম চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে রানি হাতসেপসুত ছিলেন মারাত্মক রকমের বুদ্ধিমতী, বুঝলে। দু-ভাবে নিজেকে ফারাও বানিয়েছিলেন তিনি।
‘প্রথমত রানি এটা বুঝেছিলেন যে স্রোতের বিপরীতে হাঁটতে গেলে দেশের সাধারণ মানুষের সাপোর্ট খুব দরকার। তাই প্রথম থেকেই দারুণ জনদরদি রূপ নিয়েছিলেন হাতসেপসুত। যেখানে ফারাওরা দেশের মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন সেখানে এই নতুন ফারাও কিন্তু দেশের মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। ওঁর রাজত্বকালেই প্রথমবার রাজসভার উঁচু উঁচু পদগুলো দেওয়া হয় সমাজের একদম গ্রাসরুট লেভেলের মানুষদের, যাদের হয়তো কোনো রয়াল লিনিয়েজ নেই, কিন্তু যোগ্যতা আছে। হাতসেপসুতের মন্ত্রী সেনেনমুতও ছিল এমনই একজন।
‘আর দ্বিতীয়ত হাতসেপসুত আরেকটা এমন পন্থা নিয়েছিলেন যাতে ওঁর অধস্তনেরা ওঁকে ফারাও বলে মানতে বাধ্য হয়। সেটা হল নিজের নামে মিথ তৈরি করা। তিনি নাকি স্বয়ং সূর্যদেব আমুন-রে-র সন্তান।’
‘মানে নিজেই নিজের জন্য মাইথোলজির গল্প বানিয়েছিলেন?’
‘একদমই তাই। এই প্রোপাগান্ডাকে সফল করার জন্য হাতসেপসুত নিজের নামে একটা বিশাল বড়ো মরচুয়ারি টেম্পল বানান, সেখানে দেবী হাথোর আর আনুবিসের মন্দিরও ছিল। এই টেম্পল ছিল ভ্যালি অফ দ্য কিংসের কাছেই। হাতসেপসুতের সেই মন্দিরের গায়ে ওঁর ওই বানানো গল্প খোদাই করা আছে।
‘স্বর্গে নাকি একদিন আমুন-রে ঠিক করেন যে তাঁরর একটা কন্যা হবে, যে মিশরে রাজত্ব করবে। জ্ঞানের দেবতা থত ঠিক করেন যে সেই মেয়েকে ধারণ করবেন রানি আহমোসে। সেইমতো আমুন নাকি আহমোসের সামনে এসে ওঁকে আশীর্বাদ করেন।’
হাতসেপসুতের মন্দির
পিজি এবারে ফিক করে হেসে বলল,
‘ব্যস, আশীর্বাদ করল আর অমনি… এ তো একদম আমাদের কুন্তীর মতো গল্প দেখছি।’
‘হ্যাঁ, সেরকমই বলতে পারো। তা, আমুনের এই আশীর্বাদের পরেই দেবতা খুম কুমোরের চাকা থেকে নিখুঁতভাবে তৈরি করেন হাতসেপসুতের আত্মাকে। ন-মাস পরে আহমোসে প্রসব করেন হাতসেপসুতকে। ব্যস, এভাবেই হাতসেপসুত হয়ে গেলেন আমুনের সন্তান। ওঁর জন্মের আগেই নাকি ঠিক ছিল যে উনি ফারাও হবেন। গুগলে হাতসেপসুত টেম্পল ওয়াল গ্রাফিতি বলে সার্চ করলেই দেখো ছবিগুলো পেয়ে যাবে।’
ভবেশদা বলার সঙ্গেসঙ্গেই সেতু সেই ছবি বের করে ফেলল, তিনজনে মিলে দেখলাম সেই ছবি। তখনই সেতু ভবেশদাকে বলল,
‘কিন্তু দাদা, এখানে তো হাতসেপসুতকে একদমই মেয়েদের মতো লাগছে না, আই মিন…’
‘আমি বুঝতে পেরেছি কী বলতে চাইছ, নারী শরীরের কোনো চিহ্নই নেই এর মধ্যে, তাই তো?’
‘হ্যাঁ।’
‘হাতসেপসুতের প্রথমদিককার কয়েকটা মূর্তি আছে বুঝলে, সেগুলো দেখলে কিন্তু বোঝা যেত এটা একজন মেয়েরই। তবে ওর রাজত্বের সপ্তম বছর থেকেই হাতসেপসুত একটা অদ্ভুত কাণ্ড করে বসেন। নিজেকে পুরোপুরি ফারাও প্রমাণ করার জন্য নিজের ছবি, মূর্তি সবেতেই নিজেকে পুরুষ হিসেবে দেখাতে থাকেন। পরনের জামাকাপড়ও হয়ে যায় একদম পুরুষেরই মতো। এমনকী নকল দাড়িও লাগাতে থাকেন হাতসেপসুত। প্রচ্ছন্নে বলতে পারো ফারাওদের প্যাট্রিয়ার্কির জয় হয়েছিল সেখানে। এমন দারুণ একজন মহিলাকেও নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের বলে প্রতিপন্ন করতে হয়।’
হাতসেপসুত
সেতু এবারে বলল,
‘কিন্তু একটা জায়গাতে আমার একটু অদ্ভুত লাগছে, ভবেশদা। তৃতীয় তুতমোসিস তো একদিন নিশ্চয় সাবালক হয়েইছিল। সে এটা মেনে নিল কী করে যে তার সৎমা দেশের ফারাও, যেখানে থ্রোনেতে ওর অধিকারটাই বেশি?’
‘এটা একটা খুব ভালো প্রশ্ন করলে, বুঝলে। তুতমোসিস কোনোদিনই এটাকে মানতে পারেননি। কিন্তু হাতসেপসুতের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। ওঁকে সরিয়ে নিজেকে ফারাও বানাতে গেলে দেশের মানুষের রাগের কারণ হতে হত। তাই তুতমোসিসকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হয়। সাড়ে বাইশ বছর রাজত্ব করার পরে হাতসেপসুত মারা যান। এরপরে তুতমোসিস রাজা হয়েই সৎমা-র ওপরে বদলা নিতে থাকেন।’
‘সেটা কীভাবে?’
‘কীভাবে আবার, ইতিহাস থেকে এই নারী ফারাওয়ের নাম মুছে দিতে চেয়েছিলেন ফারাও তুতমোসিস। তাই হাতসেপসুতের মন্দিরে থাকা ওঁর মূর্তিগুলো ভেঙে একটা গর্তে ফেলে দেওয়া হয়। কার্নাকের মন্দিরের গায়ে হাতসেপসুতের খোদাই করা ছবিও ছেনি দিয়ে তুলে দেওয়া হয়। ঠিক যেমনটা হয়েছিল তুতানখামেনের সঙ্গেও। অথচ দেখো দু-জনেই আজকে কত বিখ্যাত।’
‘আচ্ছা ভবেশদা, হাতসেপসুতের মমিটা কোথায় আছে?’
‘হাতসেপসুতের মমি মাত্র বারো বছর আগে আইডেন্টিফাই করা গেছে, স্পন্দন ভাই। সে আরেক ইন্টারেসটিং গল্প বুঝলে।
‘১৯০৩ সালে হাওয়ার্ড কার্টার ভ্যালি অফ দ্য কিংসে হাতসেপসুতের সমাধি খুঁজে পান। সেই সমাধির নম্বর ছিল কে ভি ২০। কিন্তু অন্য বাকি বেশিরভাগ টুম্বের মতোই কে ভি ২০তেও কোনো মমি পাওয়া যায়নি। শুধু পাওয়া গিয়েছিল হাতসেপসুতের নাম লেখা একটা বিশাল সারকোফেগাস। আবার সেই সালেই কাছাকাছির মধ্যেই আরেকটা খুব ছোট্ট কবর খুঁজে পান কার্টার। তার নাম ছিল কে ভি ৬০এ। এখানে একজন নারীর মমি খুঁজে পাওয়া যায়, বুঝলে। তার শরীরে ফারাওদের কোনো অ্যামুলেট ছিল না। ওটা ছিল হাতসেপসুতের ধাইমার মমি।
দেইর এল বাহরি থেকে পাওয়া কাঠের বাক্স
‘আবার অন্যদিকে ১৮৮১ সালে দেইর এল বাহরিতে অতগুলো মমি খুঁজে পাওয়া গেলেও হাতসেপসুতের মমি পাওয়া যায়নি। তবে খুব অদ্ভুতভাবে পাওয়া গিয়েছিল একটা বাক্স, তার গায়ে এই ফারাওয়ের নাম লেখা। বাক্সের ভেতরে ছিল একটা মামিফায়েড লিভার আর একটা দাঁত। মাড়ির পিছনের দিকের, তোমরা কী-একটা বল না এটাকে?’
‘মোলার?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ, বাঁ-দিকের ওপরের পাটির মোলার দাঁত।’
‘সারকোফেগাস পাওয়া গেল, শরীরের ভেতরের অংশ পাওয়া গেল, এদিকে রানির মমিটাই হাওয়া!’
‘হাওয়া নয় মোটেই, ভায়া। হাওয়ার্ড কার্টারেরই দোষ বলতে পারো। যে মানুষটা দুর্দান্ত দক্ষতার সঙ্গে তুতানখামেনের সমাধি খুঁজে বের করেছিলেন সেই কে ভি ৬০-এর ভেতরে ভালো করে দেখেননি। পরের দেড়শো বছরে বালির নীচে ঢাকা পড়ে যায় এই কবরের মুখ।
‘১৮৮৯তে আমেরিকান আর্কিয়োলজিস্ট ডোনাল্ড রায়ান সেই ভ্যালি অফ দ্য কিংসেই কাজ করছিলেন। অন্য একটা কবরে ঢোকার আগে রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য যখন মাটিতে ঝাঁট দিচ্ছেন তখনই একটা বড়ো পাথরের টুকরোতে ফাটল দেখতে পান। সেই পাথর সরাতেই আবার কে ভি ৬০-এর মুখটা খুলে যায়।
হাতসেপসুতের মমি
হাতসেপসুতের মমির সিটি স্ক্যান
‘অন্ধকার ছোট্ট কবরটা ছিল খুবই সাধারণ, কবরের দেওয়ালে তেমন কিছু দারুণ ছবিও আঁকা ছিল না। তবে কবরের এককোণে মেঝের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে যান ডোনাল্ড। সেখানে পড়ে আছে এক মহিলার মমি! বাঁ-হাতটা বুকের কাছে যেভাবে জড়ো করা ছিল তাতেই ডোনাল্ড বুঝতে পারেন যে এই মমি রাজপরিবারের কারোরই। তিনি তখন লাক্সরের একটা দোকান থেকে কাঠের কফিন বানিয়ে তাতে সেই মমিকে পুরে সেই সমাধির মধ্যেই রেখে দিয়ে আসেন।
‘এর পরে কেটে গিয়েছিল আরও সতেরো বছর। ২০০৬ সালে ইজিপ্টের আর্কিয়োলজিস্ট জাহি হাওয়াস আবার ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করেন। ততদিনে বাকি সব মহিলার মমি পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখা হলেও কোনোটাকেই হাতসেপসুতের মমি বলে আইডেন্টিফাই করা যায়নি। বাকি রয়ে গিয়েছিল ওই একটি মমিই। তাই ওটাকে ভ্যালি অফ দ্য কিংসের সেই কবর থেকে তুলে আনা হয় কায়রো ইউনিভার্সিটিতে। সেখানেই মমির সিটি স্ক্যান করা হয়। সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট তৈরি করার সঙ্গেসঙ্গেই রেডিয়োলজিস্ট আসরাফ সেলিম দেখা করেন জাহি হাওয়াসের সঙ্গে। মমিতে উল্লেখযোগ্য কিছুই পাওয়া যায়নি। তবে ওপরের চোয়ালের একটা দাঁত মিসিং, হয়তো বয়সের কারণেই পড়ে গিয়েছিল।
‘এটা শুনেই জাহির মনে পড়ে যায় ১২০ বছর আগে দেইর এল বাহরি থেকে পাওয়া সেই কাঠের বাক্সটার কথা, তাতে একটা দাঁত পাওয়া গিয়েছিল না! সেই বাক্স রাখা ছিল কায়রো মিউজিয়ামেই। তাই সেই দাঁত খুঁজে পেতেও সমস্যা হল না। দেখা গেল দাঁতটা একদম মমির চোয়ালের সেই ফাঁকা জায়গাটায় বসে যাচ্ছে, একেবারে খাপে খাপ! ফারাও হাতসেপসুতের মমি এভাবেই খুঁজে পাওয়া গেল।’
‘দাঁত না থাকলে তবেই যে সেই দাঁতের মর্যাদা বোঝা যায়, হাতসেপসুত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।’