২৩. শুক্লযজুর্বেদ – ত্রয়োবিংশ অধ্যায়

ত্রয়োবিংশ অধ্যায়

মন্ত্রঃ– হিরণ্যগর্ভঃ সমবর্তগ্রে ভূতস্য জাতঃ পতিরেক আসীৎ। স দাধার পৃথিবীং দ্যামুতেমাং কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম৷৷৷৷৷ উপমহীতোহসি প্রজাপতয়ে ত্ব জুষ্টং গৃহাম্যেষ তে যোনিঃ সূর্যস্তে মহিমা। যন্তেহহস্তুসংবৎসরে মহিমা সম্বভুব যন্তে বায়াবন্তরিক্ষে মহিমা সম্বভূব যন্তে দিবি সূর্যে মহিমা সম্বভূব তস্মৈ তে মহিমে প্রজাপতয়ে স্বাহা দেবেভ্যঃ।।২৷৷ যঃ প্রাণততা নিমিষতে মহিত্বৈক ইদ্রাজা জগতে বভূব। য ঈশে অস্য দ্বিপদশ্চতুষ্পদঃ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম৷৷৩৷৷ উপমগৃহীতোহসি প্রজাপতয়ে ত্বা জুষ্টং গৃহ্নমেষ তে যোনিশ্চমান্তে মহিমা যন্তে রাত্রৌ সংবৎসরে মহিমা সম্বভূব যন্তে পৃথিব্যামগ্নেী মহিমা সম্বভূব যন্তে নক্ষত্রে চন্দ্রমসি মহিমা সম্বভূব তস্মৈ মহিম্নে প্রজাপতয়ে দেবেভ্যঃ স্বাহা।।৪।যুঞ্জন্তি ব্ৰধমরুষং পরি তসুষঃ। নোচন্তে বোচনা দিবি৷৷৷৷ যুঞ্জন্ত্যস্য কাম্যা হরী বিপক্ষ রথে। শোণা. ধৃষ্ণু নৃহস্য৷৷৬৷৷যদ্বাতো অপো অগনীগম্পিয়ামিন্দ্রস্য তম্ব। এতং স্তোতরনেন পথা পুনরশমাবর্তয়াসিনঃ।।৭৷ বসবাঞ্জন্তু গায়ত্রেণ ছন্দ রুদ্রাত্ত্বাঞ্জন্তু ত্রৈভেন ছদসাহদিত্যাস্তাঞ্জন্তু জগতেন ছন্দ। ভূর্ভুবঃস্ব লাজীঞ্ছাচীন্যব্যে গব্য এতদন্নমত্ত দেবা এতদনুমদ্ধি প্রজাপতে৷৷৷৷কঃ স্বিদেকাকী চরতি ক উ স্বিজ্জায়তে । পুনঃ।কিংশ্বিদ্ধিমস্য ভেষজং কিম্বাবপনং মহৎ।৯।সূর্য একাকীচতি চন্দ্রমা জায়তে পুনঃ। অগ্নিহিঁমস্য ভেষজং ভূমিরাবপনং মহৎ৷৷১০৷৷ কা স্বিদাসীৎ পূর্বচিত্তিঃ কিং স্বিদাসী বৃহদ্বয়ঃ।কা স্বিদাসীৎ পিলিপ্পিলাকা স্বিদাসীৎ পিশঙ্গিলা।।১১৷ দৌরাসীৎ পূর্বচিত্তির আসীদ বৃহদ্বয়ঃ। অবিরাসীৎ পিলিগ্নিলা রাত্রিরাসীৎ পিশঙ্গিলা৷১২৷৷ বায়ু পচতৈরবত্ব সতগ্রীবচ্ছাগৈনগ্রোধশ্চমসৈঃ শম্মলিবৃদ্ধা। এষ স্য রাখ্যো বৃষা পদভিশ্চতুর্ভিরেদগন্দ্ৰহ্মা কৃষ্ণশ্চ নোহবতুনমোহগুয়ে।১৩ সংশিতো রশ্মিনা রথঃ সংশিতো রশ্মিনা হয়। সংশিতো অপস্বপসুজা ব্রহ্মা সোমপুরোগবঃ।।১৪। স্বয়ং বাম্বিং কল্পয়স্ব স্বয়ং যজস্ব স্বয়ং জুষ। মহিমা তেহন্যেনন সয়শে৷১৫ন বা উ এতন্দ্রিয়সে ন রিষ্যাসি দেবাঁ ইদেমি পথিভিঃ সুগেভিঃ। যত্ৰাসতে সুকৃতো যত্র তে যমুত্র ত্বা দেবঃ সবিতা দধাতু।১৬৷ অগ্নিঃ পশুরাসীত্তেনা যজম্ভ স এতং লোকমজয়দ্যস্মিন্নগ্নিঃ স তে লোকো ভবিষ্যতি তং জেষ্যসি পিবৈতা অপঃ। সূয়ুঃ পশুরাসীত্তেনামজন্ত স এতং লোকমজযদ্যস্মিম্বায়ুঃ স তে লোকো ভবিষ্যতি তং জেষ্যসি পিবৈতা অপঃ। সুর্যঃ পশুরাসীৰ্ত্তেনাযজন্ত স এতং লোকমজযদ্যস্মিন্ সূর্যঃ স তে লোকো ভবিষ্যতি তং জেষ্যসি পিবৈতা অপঃ১৭৷৷ প্ৰাণায় স্বাহা অপানায় স্বাহা। ব্যানায় স্বাহা। অম্বে অম্বিকেহলিকে ন মা নয় ত কশ্চন। সসস্ত্যশ্বকঃ সুভদ্রিকা কাম্পলবাসিন ম৷৷১৮। গণানাং ত্বা গণপতিং হবামহে। প্রিয়াণাং ত্বা প্রিয়পতিং হবামহে। নিধীনাং ত্বা নিধিপতিং হব্যম হ ব স মম। আহমজানি গর্ভধমা ত্বমজাসি গর্ভধ৷১৯৷ তা উভৌ চতুরঃ পদঃ সংসারয়াব স্বর্গে লোকে প্রোণুবাথাং বৃষা বাজী রেতোধা রেতে দধাতু৷৷২০ উৎসথ্যা অবস্তদং ধেহি সমঞ্জিং চারয়া বৃষ। য স্ত্রীণাং জীবভোজনঃ ॥২১৷৷ যকাহসকৌ শকুস্তিকাহহহলগিতি বঞ্চতি। আহন্তি গভে পসো নিগল্পলীতি ধারকা৷৷২২৷৷ যকোহসকৌ শকুন্তক আহলগিতি বঞ্চতি। বিবক্ষত ইব তে মুখমধ্বৰ্যো মা নমভিভাষথাঃ ২৩৷ মাতা চ তে পিতা চ তেহগ্রং বৃক্ষস্য রোহতঃ। প্রতিলামীতি তে পিতা গভে মুষ্টিমতংসয়ৎ৷৷২৪৷৷ মাতা চ তে পিতা। চ তেইগ্রে বৃক্ষস্য ক্রীড়তঃ। বিবক্ষত ইবতে মুখং ব্রহ্মম্মা ত্বং বদো বহু।।২৫ উর্বামেনামুচ্ছাপয় গিরৌ ভারং হরন্নিব। অর্থস্যৈ মধ্যমেধতাং শীতে বাতে পুনন্নি।।২৬৷ উমেনমুণ্ড্রয়তাদিরৌ ভারং হরন্নিব। অথাস্য মধ্যমেজতু শীতে বাতে পুনন্নিব৷৷২৭৷৷ যদস্যা অংহুলভদ্যাঃ কৃধু স্থূলমূপাতসৎ। মুস্তাবিদস্যা এজতো গোশফে শকুলাবিব।।২৮। যদ্দেবাসো লোমগুং প্রবিষ্টীমিনমাবিষু। সকথা দেদিশ্যতে নারী সত্যস্যাক্ষিভুবো যথা।।২৯। যদ্ধরিণো যুবমত্তিন পুষ্টং পশু মন্যতে। শূদ্রা যদ্যজারা ন পোয় ধনায়তি।।৩০৷ যদ্ধরিণো যমত্তি ন পুষ্টং বহু মন্যতে। শূদ্রো যদ্যায়ৈ জানোন পোষমনু মন্যতে।।৩১।দধিক্ৰারো অকারিষং জিষ্ণোরশ্বাস্য বাজিনঃ। সুরভি নো মুখাকরৎ প্র ণ আয়ুংষি তারিষৎ৷৷৩২। গায়ত্রী ত্রিজগত্যনু ঈক্ত্যা সহ। বৃহত্যুষ্ণিহাককুচীভিঃ শম্যন্তু ত্বা।।৩৩৷৷ দ্বিপজা যাশ্চতুষ্পদাস্ক্রিপদা যাশ্চ ষট্‌ পদাঃ।বিচ্ছন্দা যাশ্চ সচ্ছাঃ সূচীভিঃ শম্যন্তু ত্বা।৩৪।।মহানাম্ন্যো রেবহত্যা বিশ্বা আশাঃ প্রভূবরীঃ। মৈঘীর্বিদ্যুতো বাচো সূচীভিঃ শম্যন্তু ত্বা।৩৫৷৷ নার্যস্তে পত্নো লোম বিচিন্বন্তু মনীষয়া। দেবানাং পত্না দিশঃ সুচীভিঃ শম্যন্তু ত্বা৷৷৩৬৷৷ রজতা হরিণীঃ সীসা যুজো যুজ্যন্তেকর্মভিঃ। অশ্বস্য বাজিনচি সিমাঃশম্যন্তু শম্যতীঃ৩৭। কুবিদঙ্গ যমন্তো যবঞ্চিদ্যথা দান্ত্যনুপূর্বং বিমূয়। ইহেহৈষাং কৃণুহি ভোজনানি যে বহিষো নম উক্তিং যজন্তি৷৩৮। কত্ত্বা ছ্যতি কত্ত্বা বিশাস্তি কস্তে গাত্রাণি শম্যতি। ক উ তে শমিতা কবিঃ ৩৯৷৷ ঋতবস্ত ঋতুর্থ পর্ব শমিতাররা বি শাসতু। সংবৎসরস্য তেজসা শমীভিঃ শম্যন্তু ত্বা।।৪০৷৷ অর্ধমামা পংষি তে মাসা আচ্ছ্যন্তু শম্যন্ত। অহোরাত্রাণি মরুতো বিলিষ্টং সূদয়ন্তু তে।৪১৷৷ দৈব্যা অধ্বর্যুবস্তুা চ্ছ্যন্তু বিচোসতু। গাত্রাণি পর্বশস্তে সিমাঃ কৃথন্তু শম্যন্তীঃ।।৪২৷৷ দৌস্তে পৃথিব্যন্তরিক্ষং বায়ুছিদ্রং পৃণাতু তে। সূর্যস্তে নক্ষত্রেঃ সহ লোকং কৃপোতু সাধুয়া।৪৩৷৷ শং তে পরভ্যো গাত্ৰেভ্যঃ শমবরেভ্যঃ। শমস্থভ্যো মজ্জ ভ্য শম্বস্তু তম্বৈ তব৷৷৪৪। কঃ স্বিদেকাকী চরতি ক উ স্বিজ্জায়তে পুনঃ। কিং সিন্ধিমস্য ভেষজং কিম্বাবপনং মহৎ৷৷৪৫৷ সূর্যঃ একাকী চরতি চন্দ্রমা জায়তে পুনঃ। অগ্নিহিমস্য ভেষজং ভূমিরাপনং মহৎ৪৬। কিং স্বিসূর্যসমং জ্যোতিঃ কিং সমুদ্রসমং সরঃ। কিং স্বিৎপৃথিব্যৈ বর্ষীয়ঃ কস্য মাত্রা ন বিদ্যতে।।৪৭৷ ব্ৰহ্ম সূর্যসমং জ্যোতিদেীঃ সমুদ্রসমং সরঃ। ইন্দ্রঃ পৃথিব্যৈ বর্ষীয়ান গোস্তু মাত্রান বিদ্যতে।৪৮৷ পৃচ্ছামি ত্ত্বা চিতয়ে দেবসখ যদি ত্বমত্র মনসা জগস্থ যেযু বিষ্ণুস্ত্রিযু পদেষ্টেস্তেষু বিশ্বং ভূবনমা বিবেশা৷৪৯৷৷ অপি তেষু ত্ৰিষু পদেম্বস্মি যেষু বিশ্বং ভুবনমা বিবেশ। সদ্যঃ পর্যেমি পৃথিবীমুত দ্যামেকেনাঙ্গেন দিবো অস্য পৃষ্ঠ৷৷৫০৷৷ কেবন্তঃ পুরুষ আ বিবেশ তান্যঃ পুরুষে অর্পিতনি। এতক্ষপ বন্থামসি ত্বা কিং স্বিন্নঃ প্রতি বোচাস্যত্র।৫১৷৷ পঞ্চস্বন্তঃ পুরুষ আ বিবেশ ন্যস্তঃ পুরুষে অর্পিতানি। এতত্ত্বাত্র প্রতিমন্বনো অস্মি ন মায়য়া ভবদ্যুত্তরে মত্।।৫২৷ কা স্বিদাসীৎ পূর্বচিত্তিঃ কিং স্বিদাসীদ বৃহদ্বয়ঃ। কা স্বিদাসীৎ পিলিঞ্জিলা কা স্বিদাসী পিশঙ্গিলা।।৫৩৷৷ দৌরাসীৎ পূর্বচিত্তিরশ্ন আসী বৃহদ্বয়ঃ। অবিরাসী পিলিগ্নিলা রাত্রিরাসীৎ পিশঙ্গিলা।।৫৪। কা ঈমরে পিশঙ্গিলা কা ঈং কুরুপিশজিলা। কা ঈমাস্কন্দমষতি ক ঈং পন্থাং বি সর্পতি।৫৫৷৷ অজারে পিশক্লিা শাৰিকুরু পিশঙ্গিলা। শশ আস্ফমত্যহিঃ পন্থাং বি সর্পতি।৫৬৷ কত্যস্য বিষ্ঠাঃ কত্যক্ষরাণি কতি হোমাসঃ কতিধা সমিদ্ধ। যজ্ঞস্য দ্বা বিদথা পৃচ্ছ কতি হোর ঋতুলশা যজন্তি৷৫৭৷ ষডস্য বিষ্ঠাঃ শতক্ষণ্যশীতিহোমাঃ সমিধো হ তিঃ। যজ্ঞস্য তে। বিদথা প্র ব্রবীমি সপ্ত হোর ঋতুশো যজল্কি।৫৮৷ কো অস্য বেদ ভুবনস্য নাভিং কো দ্যাবাপৃথিবী অন্তরিক্ষা কঃ সূর্যস্য বেদ বৃহতো জনিং কো বেদ চন্দ্রমসং যতোজাঃ৫৯৷৷ বেদাহমস্য ভুবনস্য নাভিং বেদ দ্যাপৃথিবী অন্তরিক্ষ। বেদ সূর্যস্য বৃহতত জনিত্ৰমথো বেদ চন্দ্রমসং যতজাঃ ॥৬০। পৃচ্ছামি জ্বা পরমং পৃথিব্যাং পৃচ্ছামি যত্র ভুবনস্য নাভিঃ। পৃচ্ছামি ত্বা বৃষ্ণো অস্য রেতঃ পৃচ্ছামি নাটঃ পরমং ব্যোম।।৬১। ইয়ং বেদিঃ পরো অন্তঃ পৃথিব্যা অয়ং যজ্ঞো ভুনস্য নাভিঃ। অয়ং সোমো বৃষ্ণো অশস্য রেতো ব্রহ্মায়ং ৰাচঃ পরমং ব্যোম।।৩২৷ সুভুঃ স্বয়ঃ প্রথমোহন্তর্মহত্যর্ণবে। দধে হ গর্ভমৃত্বিয়ং যত জাতঃ প্রজাপতিঃ ॥৬৩। হোতা যক্ষৎপ্রজাপতিং সোমস্য মহিঃ। জুতাং পিবতু সোমং হোতজ।।৬৪৷৷ প্রজাপতে ন ত্বদেন্যন্যো বিশ্ব রূপাণি পরি তা বভূব। যৎকামাস্তে জুহুমমো অন্তু বয়ং স্যাম, পতয়ো রয়ীণা৷৬৫৷৷

[কণ্ডি-৬৫, মন্ত্র ৮৩]

.

মন্ত্রার্থঃ– (দ্বাবিংশ অধ্যায়ে হোমমন্ত্র কথিত হয়েছিল। এই ত্রয়োবিংশ অধ্যায়ে শিষ্ট কর্মসমূহ কথিত হচ্ছে)

১। সৃষ্টির আদিকালে একমাত্র হিরণ্যগর্ভ পুরুষই বিদ্যমান ছিলেন। তিনি একলাই সকল উৎপন্নমাত্র প্রাণীজাতের অধিপতি বা পালক ছিলেন। তিনিই এই পৃথিবী এবং দ্যুলোককেও ধারণ করেছিলেন। সেই প্রজাপতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাভক্তি সহ পরিচারিত করে।

২। (মহিম নামক গ্রহ গ্রহণীয়)–হে গ্রহ তুমি উপযাম পাত্রের দ্বারা গৃহীত হয়েছ। প্রজাপতির নিমিত্ত প্রিয় তোমাকে গ্রহণ করেছি। (গ্রহটিকে বেদিতে স্থাপনীয়)–এই তোমার স্থান। হে গ্রহ! এই সূর্য তোমার মহিমা। তোমার যে মহিমা দিনে ও সম্বৎসরে উৎপন্ন হয়েছে; তোমার যে মহিমা বায়ুতে ও অন্তরিক্ষে উৎপন্ন হয়েছে এবং তোমার যে মহিমা দুলোকে ও সূর্যে উৎপন্ন হয়েছে তোমার সেই মহিমার নিমিত্ত, প্রজাপতি এবং অন্য দেবতাগণের নিমিত্ত এই আহুতি প্রদত্ত হচ্ছে।

৩। যে প্রজাপতি আপন মহিমার কারণে জগতের প্রাণন-নিমেষোষে করণশালীর পালক হয়েছেন এবং যিনি এই সমস্ত দ্বিপাদ-চতুষ্পদরূপী ঐশ্বর্যের পালক, সেই প্রজাপতি দেবের নিমিত্ত আমরা ধন-ধান্য ইত্যাদির দ্বারা সদা যজ্ঞ ইত্যাদি করে থাকি।

৪। হে পাত্র! তুমি উপযাম পাত্রের দ্বারা গৃহীত হয়েছ। প্রজাপতির নিমিত্ত প্রিয় তোমাকে আমি গ্রহণ করছি। হে গ্রহ! এই (বেদি) তোমার স্থান। এই চন্দ্রমা তোমার মহিমা। তোমার যে মহিমা রাত্রি ও সম্বৎসরে উৎপন্ন হয়েছে, তোমার যে মহিমা পৃথিবী ও অগ্নিতে উৎপন্ন এবং তোমার যে মহিমানক্ষত্র ও চন্দ্রমায় উৎপন্ন হয়েছে, সেই তোমার দ্বারা মহিমাবান্ প্রজাপতি এবং অন্য দেবগণের উদ্দেশ্যে এই আহুতি প্রদান করছি৷৷

৫। এই স্থির জগতের উপর রক্তাভ, আপন ক্রোড়ের উপর নিদ্রাশীল এবং আকাশচারী সূর্যকে ঋত্বিকগণ আপন স্তুতিসমূহে স্বকার্যরত করছে। তার জ্যোতিতে দ্যুলোকে এই রোচমান গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদি প্রকাশিত হচ্ছে।

৬। ঋত্বিবৃন্দ আপন স্তুতিসমূহের দ্বারা এই সূর্যের কমনীয় রথের দুটি প্রান্ত সংযুক্তকারী; শ্বেত বর্ণ, শত্রুধর্ষক এবং নেতা সূর্যকে বহন করতে সমর্থ অশ্বকে রথে সংযোজিত করছে।

৭। (যজমান বলছেন)–হে অধ্বযুর্গগণ! এই যে আমার বায়ুবেগশীলা অশ্ব জলে ইন্দ্রের প্রিয় শরীরে দূর পর্যন্ত চলে এসেছে, আমার এই অশ্বকে পুনরায় সেই পথে নিবর্তিত করা।

৮। হে অশ্ব! বসুগণ তোমাকে গায়ত্রী ছন্দে শিরোভাগে ধৃতরঞ্জিত করুক। হে অশ্ব! রুদ্রগণ তোমাকে ত্রিষ্টুপ ছন্দে মধ্যভাগে ধৃতরঞ্জিত করুক, এবং হে অশ্ব! আদিত্যগণ জগতী ছন্দে তোমাকে পিছনভাগে ঘৃতের দ্বারা রঞ্জিত করুক। ভূ-ভুবঃ স্বঃ। খই, সতুসমূহ, যব এবং এই দধি প্রভৃতি হে অশ্ব! ভক্ষণ করো। হে প্রজাপতি! হে দেবগণ! এই ভুক্তশেষ অন্নকে ভক্ষণ করো।

৯। (ঋত্বিকদ্বয় ব্রহ্মা ও হোতর পরস্পর ব্রহ্মবার্তা আলোচনা) ব্রহ্মা–হে হোতা! কে একাকী ভ্রমণ করে? কে বিনষ্ট হয়েও পুনরায় উৎপন্ন হয়? হিম অর্থাৎ শীতের নিবর্তক কি? মহৎ আবপন কি?

১০। হেতা–হে ব্ৰহ্ম! সূর্য একলাই আকাশে সঞ্চারণ করে। চন্দ্রমা পুনঃ উৎপন্ন হয়। শীতের ভোজন (নিবর্তন) হলো অগ্নি এবং এই ভূমিই মহৎ আবপন (অর্থাৎ এই ভূমিতেই বীজ পুনঃ পুনঃ বপিত হয়)।

১১। হে হোতা! পূর্বচিত্তি (বা পূর্বচিন্তা) কি ছিল? বৃহৎ পক্ষী কে ছিল? পিলিগ্নিলা (চিক্কণা) কি ছিল? পিশঙ্গিলা (রূপকে গলাধঃকারিণী) কে ছিল? কে ছিল?

১২৷ হে ব্ৰহ্মণ! এই দৌ (অর্থাৎ বৃষ্টি)-ই পূর্বচিত্তি ছিল। অশ্বই ছিল বৃহৎ পক্ষী। এই পৃথিবীই পিলিপ্পিলা ছিল। রাত্রিতে সকল বর্ণ বা রূপ অন্তর্হিত হওয়ার কারণে রাত্রিই পিলিগ্নিলা।

১৩। হে অশ্ব! বায়ু তোমাকে পাক (বা রন্ধন)-এর দ্বারা রক্ষা করুক। ধূমের দ্বারা কৃষ্ণবর্ণ গ্রীবাশালী অগ্নি তোমাকে ছাগের দ্বারা (অর্থাৎ ছাগদানের দ্বারা) রক্ষা করুক। বটবৃক্ষ সোমপাত্রের দ্বারা এবং শাল্মলি বৃক্ষ বৃদ্ধির দ্বারা তোমাকে রক্ষা করুক। এই রথে যোজনযোগ্য সেচক তুমি (অর্থাৎ অশ্ব) চার পদে ভর করে গমন করছ। অকৃষ্ণব্রহ্মা (অর্থাৎ চন্দ্রমা) আমাদের রক্ষা করুক। অগ্নির উদ্দেশ্যে নমস্কার করছি৷৷

১৪। রথ লাগামে (অর্থাৎ আকর্ষক রজ্জতে) শোভিত হয়। লাগামে অশ্ব শাভিত হয়। জলে উৎপন্ন অশ্ব জলেই শোভিত হয়। ব্ৰহ্ম অর্থাৎ পরিবৃঢ় অশ্বমেধ সোমকে পুরোভাগে নিয়ে স্বর্গে গমনশীল হয়েছে।

১৫। হে অশ্বমেধিয় অশ্ব! তুমি স্বয়ংই স্বেচ্ছামতো শরীরকে কল্পনা করো (অর্থাৎ যে কোনও রকম শরীরকে ধারণ করতে পার)। স্বেচ্ছায় তুমি স্বয়ংই দেবগণের যজন করো এবং অভীষ্ট পদার্থসমূহকে সেবন করো। অন্য কিছুর দ্বারাই তোমার মহিমা লাভ করতে পারা যায় না।

১৬। হে অশ্ব! এই যে তুমি আমাদের দ্বারা কর্তিত হতে যাচ্ছ, সেই তোমার মরণ হবে না এবং নষ্ট হবে না। এক্ষণে তো তুমি সুগম দেবযান পথে দেবগণের প্রাপ্ত হবে। যে স্থানে পুণ্যবাঙ্গণ নিবাস করেন এবং যে স্থানে তারা (পুণ্যবাগণ) গমন করেন, সেই স্থানে তোমাকে সবিতাদেব ধারণ (স্থাপন) করুক।

১৭। পূর্বকালে স্বয়ং অগ্নিই পশু ছিল। দেবগণ সেই পশুরূপ অগ্নির দ্বারা যজ্ঞ করতেন। সেই পশুরূপ অগ্নি এই পৃঙ্খীলোক জয় করেছিল, যে লোকে স্বয়ং অগ্নি অধিপতি দেবতা। হে অশ্ব! যজ্ঞে নিহত হবার পর এই পৃঙ্খীলোক তোমার লোক হবে। তুমি সেই পৃঙ্খীলোককেই বিজয়। করবে। তুমি এই লোক্ষণী জল পান করো। (অশ্বের মুখে পোক্ষণী জল নিক্ষেপনীয়)। বায়ু পশু ছিল। দেবতাগণ তার দ্বারাই যজন করেছিল। সেই পশুরূপ বায়ু অন্তরিক্ষলোককে বিজয় করেছিল। যার অধিপতি দেবতা বায়ুই। হে অশ্ব! যজ্ঞে মরণপ্রাপ্তির পর এই অন্তরিক্ষলোকই তোমার লোক হবে। তুমি তাকেই বিজয় করবে। এই প্রোক্ষণী জল পান করো… সূর্য পশু ছিল। দেবতাগণ তার দ্বারাই যজন করেছিল। সেই পশুরূপ সূর্য দ্যুলোককে জয় করেছিল, যার অধিপতি দেবতা সূর্যই। হে অশ্ব!তুমি যজ্ঞে হত হবার পর সেই দ্যুলোকই তোমার লোক হবে। তুমি সেই লোককে বিজয় করবে। তুমি এই প্রোক্ষণী জল পান করো।….॥

১৮৷ প্রাণ, অপান ও ব্যানের উদ্দেশ্যে এই অ্যাতি প্রদান করছি। (মহিষী, বেশ্যা ও রাজরক্ষিতা কর্তৃক অশ্বের নিকট গমনীয়)–হে অম্বা, অম্বিকা ও অম্বালিকা (সবই মাতৃরূপে সম্বোধন)! কোনও পুরুষ আমাকে অশ্বের নিকট শীঘ্র উপস্থাপিত করতে পারেনা। (আমার শীঘ্র না পৌঁছাবার কারণ এই যে,) এই দুষ্ট অশ্ব সেই কাম্পীলবাসিনী সুভদ্রিকাকে নিয়ে শায়িত রয়েছে। (কাম্পীল নামক নগরে সুভগা, সুরূপা, বিদগ্ধা ও বিনীতা নারীগণের বাস ছিল। তাদের মধ্যে সুভদ্রিকা নাম্নী একজনকে অশ্বমেধিয় অশ্বের পার্শ্বে শায়িতা করা হয়েছিল–এটাই তাৎপর্য)।

১৯। গণগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ গণপতি তোমাকে আমরা যাচিত করছি। প্রিয়গণের মধ্যে প্রিয়পতি তোমাকে আমরা যাচিত করছি। সুখনিধিসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সুখের নিধিপতি তোমাকে আমরা যাচিত করছি। হে বসুরূপ অশ্ব! তুমিই আমাদের পতি হও। (মহিষী অশ্বের পার্শ্বে শায়তা হন)–হে অশ্ব! গর্ভধারক তোমার তেজ আমি? আকর্ষণ করে আপন যোনিতে ধারণ করছি। তুমি সেই গর্ভধারক আপন তেজকে আকর্ষণ পূর্বক আমার যোনিতে নিষেক করো৷

২০। হে অশ্ব! আগত হও। আমি ও তুমি উভয়ে আপন চারটি পদ বিস্তৃত করব। (অধ্বর্যু5) হে অশ্ব ও মহিষী! তোমরা দুজনে এই স্বর্গীয় যজ্ঞভূমিতে নিজেদের আচ্ছাদিত করে নাও। (মহিষী কর্তৃক অশ্বের লিঙ্গটি ধরে আপন যোনিতে প্রবিষ্ট করণীয়) বীর্যবান্ অশ্ব, বীর্যকে ধারণশীল, আমাতে আপন বীর্য স্থাপন করুক৷

২১। (যজমান কর্তৃক অশ্বকে কহনীয়)–হে সেচক অশ্ব! উত্থিত হয়ে জঙশালিনী এই মহিষীর যোনিতে আপন লিঙ্গ রক্ষা করো–তাকে (লিঙ্গকে) অগ্র পশ্চাৎ চালিত করো। এই লিঙ্গই স্ত্রীগণের জীবন ও ভোজন স্বরূপ৷৷

২২। (কুমারী কন্যার দ্বারা অধ্বর্যু যোনির প্রান্ত অঙ্গুলী দেখিয়ে–এই (যোনি) কেমন করে ছোট পক্ষীর ন্যায় আহলগ (হলে হলে) শব্দ করে যাচ্ছে?যখন ভগে শিশ্নকে ভরিত করা হচ্ছে, তখন যযানি যেন লিঙ্গকে গিলিত করে নিচ্ছে৷৷

২৩। (কুমারী শিশ্নের প্রান্ত অঙ্গুলী দেখিয়ে)–হে অধ্বর্যুগণ! এটি কিরকম পক্ষী যে তোমাদের অগ্রে আহলগ শব্দ করে থাকে? এ তো তোমাদের মুখ হতেই নির্গত শব্দ বলে মনে হয়। অধ্বর্যুগণ! আর কিছু বলো।

২৪। (ব্রহ্মা মহিষীকে বলছেন)–হেমহিষী! তোমার মাতা ও তোমার পিতা যখন খট্রার (খাটের) উপর আরোহরণ করেছিল–তখন আমি স্নেহিত করছি এমন কথা বলে তোমার পিতা মুষ্টিতে শিশ্নটিকে ধরে ভগে প্রবিষ্ট করেয়েছিল। (তাতেই জন্ম হয়)।

২৫। (মহিষী) হে ব্রহ্মন্! তোমারও মাতা-পিতা যখন খট্টায় রতিক্রীড়া করতেন….. তোমার মুখ যেন আরও কিছু বলতে ইচ্ছা করছে; হে ব্ৰহ্মণ! তুমি অধিক কিছু বলল না ৷

২৬। (উদাতা কর্তৃক বাবা বা বেশ্যার প্রতি) ওরে ভাই! এই বাবাকে অশ্বের উপরে ওঠাও, যেমন ভার বহন করে (ক্লান্ত হয়ে) ভারবাহী জন অশ্বের উপর ভার স্থাপন করে উপরে ওঠে। তখন এর মধ্য যোনিভাগ স্ফীত হয়ে উঠবে, যেমন শীতল বাতাসে শস্য (বা ধান্য) ঝারাই করার সময় কৃষক শস্যপূর্ণ ঝুরিকে উপরে ওঠায়।

২৭। (বাবাতা কর্তৃক উদ্গাতার প্রতি) ওরে ভাই! কেউ এই উদগাতাকে অশ্বের উপর ওঠাও, যেভাবে পর্বতে ভারবাহী জন ক্লান্ত হয়ে অশ্বের উপর ভার স্থাপন করে উপরে ওঠায়। তখন এর মধ্যলিঙ্গভাগ কম্পনযুক্ত হয়, যেভাবে শীতল বায়ুতে শস্য, ঝারাই করতে কৃষকের হস্তদ্বয় কম্পিত হয়ে থাকে৷৷

২৮। (হোতা পরিবৃত্তার প্রতি) যখন ছোট যোনিশালিনী বালিকার ভগে ছোট ও স্থূল লিঙ্গ প্রবিষ্ট হয় তখন অণ্ডকোষ তার যোনির উপরই কম্পন করতে থাকে, যেমন গাভীর পদে পূর্ণ (গোষ্পদে) জলে দুটি মৎস্য গতি (চলন বা ক্রীড়া) করে।

২৯। (পরিবৃক্তা হোতার প্রতি) যখন এই দেবজন প্রকর্ষের সাথে শ্লেষ্মাগ্রাবী লিঙ্গকে ভগে প্রবিষ্ট করায় তখন মাত্র নারীর জঙ্ঘাটুকুই দেখা যায়, এবং তাতেই তাকে নারী বলে বোঝা যায়। (অন্যথায় তার সর্বাংশ লোপ হয়ে যায়, কেননা সুরতিরত পুরুষ নারীর সর্বাঙ্গ আবৃত করে দেয়), যেমন চক্ষের দ্বারা দৃষ্টকে বিশ্বাস করা হয়। যদি কেউ এই কথা বলে যে, এই ব্রাহ্মণ তো সাক্ষাৎ দেবতা–বিদ্বান, এইজন্য ভয়ে ভয়ে তাকে সাধারণ রতি করতে হবে। তাও কোন আসন ইত্যাদির সাথে নয়। তাহলে এই কর্ণে শ্রবণের ন্যায় অসত্যপ্ৰায় হয়। চক্ষের দ্বারা প্রত্যক্ষের ন্যায় সত্য এই যে, উপরের এই দেবতা ভোগকালে নারীকে জ্ঞাত হয়ে থাকে।

৩০। যখন কোন কৃষকের শস্যপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রবেশ করে কোন হরিণ ক্ষেত্রে বিচরণ করে, তখন কৃষক একটা স্বীকার করে না যে, শস্যপূর্ণ ধান্যক্ষেত্রে বিচরণ করে পশু স্থল (মোটা) হয়। সে তবে এটি জেনে দুঃখী হয়ে থাকে যে, তার ক্ষেত্রে শস্য চুরি হয়ে গিয়েছে। এই রকমে যখন কোন ক্ষুদ্রা কোন ধনীর রক্ষিতা হয়ে যায়, তখন তার পতি এটা বোঝে না যে, এক্ষণে তার ঘরে প্রভূত ধন আসবে। সে তো এই-ই জানে যে, তার স্ত্রী ব্যভিচারিণী হয়ে গেছে।

৩১। যখন হরিণ শস্য ভক্ষণ করে, তখন পশু পুষ্ট হয়ে গেছে, কি প্রসন্নতার কথাকৃষক এমন কথা মানে না। যখন শূদ্র কোন ধনীর স্ত্রীর জার হয়ে যায়, তখন বৈশ্যও সেই আপন পুষ্টিকে স্বীকার করে না। বরং সে ক্লেশপ্রাপ্ত হয়।

৩২। (অশ্বের পার্শ্বে শায়িতা মহিষীকে উঠিয়ে, ঋত্বিক কর্তৃক কথনীয়)–বিধৃত হয়ে গমনকারী, জয়শীল এবং বেগবান অশ্বের পবিত্রতার নিমিত্ত আমরা এই অশ্লীল ভাষণ করেছি। এক্ষণে এই যজ্ঞ আমাদের মুখগুলিকে সুগন্ধিত (অর্থাৎ পবিত্র) করুক এবং আয়ুকে বর্ধন করুক৷৷

৩৩। গায়ত্রী, ত্রিষ্টুপ, জগতী, অনুষ্টুপ, পংক্তির সাথে বৃহতী, উষ্ণিক ও ককুপ, হে অশ্ব! তোমাকে এই ছন্দগুলি সূচের সাথে সংস্কৃত করুক।

৩৪। দ্বিপদা, ত্রিপদা, চতুষ্পদা এবং স্বল্পদা যে ছন্দ আছে, বিগত ছন্দভাব এবং ছন্দ লক্ষণ যুক্ত যে ছন্দ আছে, হে অশ্ব! তারা তোমাকে সূচের সাথে সংস্কৃত করুক।

৩৫। মহানাম্নী শরী ঋসমূহ, রৈবত-সামের রেবতী ঋক্সমূহ, সমর্থা সকল দিকসমূহ এবং মেঘের বৈদ্যুৎ বাণীসমূহ, হে অশ্ব! এই সূচসমুহের সাথে তোমাকে সংস্কৃত করুক।

৩৬। হে অশ্ব! রাজার পত্নী ও স্ত্রীগণ বুদ্ধির সাথে তোমার রোমাবলীকে ছিন্ন করুক, দেবগণের পত্নীবর্গ এবং দিমূহ সূচের দ্বারা তোমাকে সংস্কৃত করুক।

৩৭। রৌপ্য, স্বর্ণ এবং তা বা লৌহের গুচ্ছীকৃত সূচসমূহ ছেদনকৃত কর্মের দ্বারা অশ্ব-শরীরে সংযোগ প্রাপ্ত করছে; (অর্থাৎ সূচসমূহের দ্বারা অশ্বশরীরের ছেদিত স্থানগুলি সংযুক্ত বা সীবন করে দেওয়া হচ্ছে)। বেগবান্ অশ্বের ত্বকে ছিদ্র সৃষ্টি করে সূচগুলি সীমারেখা নির্মাণ করুক।

৩৮। হে প্রিয়! যে রকমে কৃষক যথাক্রমে যবকে ঘাস হতে পৃথক করে ছেদন করে, সেই রকম তুমিও তাদের (অর্থাৎ বহুজনের) নিমিত্ত এই লোকে ভোজন ইত্যাদি সম্পন্ন করো যারা দুর্ভাসনের উপর উপবেশন পূর্বক স্তুতিসমূহ বা হবিঃসমূহের দ্বারা দেবগণকে যজন করছে।

৩৯। হে অশ্ব! স্বয়ং প্রজাপতিই তোমাকে ছেদন করছে। প্রজাপতিই তোমার ত্বককে পৃথক করছে। প্রজাপতিই তোমার অঙ্গকে ছিন্ন করছে। বিদ্বান্ প্রজাপতিই তোমার ছেদনশালী, অন্য কেউ নয় ৷৷

৪০। হে অশ্ব! সম্বৎসরের তেজে ঋতু অনুসারে ঋতুগুলি তেমার অস্থি-গ্রন্থিসমূহকে ছেদন করে। তারা কর্মের দ্বারা তোমাকে হবিঃভাব প্রাপ্ত করাক৷

৪১। হে অশ্ব! অর্ধমাস ও পূর্ণমাস সংস্কার করে তোমার পর্বসমূহকে ছেদিত করে। দিবা, রাত্র ও মরুৎবর্গ তোমার লঘু অঙ্গকে সন্ধিত (অর্থাৎ সন্ধান) করুক।

৪২। দৈব অধ্বর্যু অশ্বিনদ্বয় তোমাকে ছেদন করুক এবং হবিঃরূপ প্রদান করুক। সংস্কৃত করে তোমার অঙ্গের প্রতি পর্বের সীমারেখাগুলি তারা তোমার শরীরে নির্মাণ করুক।

৪৩। হে অশ্ব! পৃথিবী, দ্যুলোক, অন্তরিক্ষ এবং বায়ু তোমার ছিদ্রকে পূর্ণ করে দিক। নক্ষত্রসমূহের সাথে সূর্য তোমাকে সুষ্ঠু লোকে স্থাপন করুক–তোমাকে স্বর্গ প্রদান করুক৷

৪৪। হে অশ্ব! তোমার শির প্রভৃতি উত্তম অঙ্গের শান্তি মিলুক; অন্য ক্ষুদ্র অঙ্গের শান্তি মিলুক এবং অস্থি-মজ্জার নিমিত্ত শান্তি হোক। অধিক কি, তোমার শরীর মাত্রেরই শান্তি প্রাপ্তি হোক।

৪৫। কে একাকী চলে? কে পুনরায় উৎপন্ন হয়? কে হিমের ভেষজ এবং মহৎ আবপন কি?

৪৬। সূর্য একাকী সঞ্চারণ করে; চন্দ্রমা পুনরায় উৎপন্ন হয়; অগ্নি হিমের ভেষজ, এবং এই পৃথিবীই মহৎ অবপন (শস্য ইত্যাদি সবকিছুর বিশাল আধার)।

৪৭। সূর্যের সমান কি সেই জ্যোতি? সমুদ্রের সমান কি সেই সরোবর? পৃথিবী অপেক্ষা কি সেই মহত্তর? এবং কার ইয়ত্তা নেই?

৪৮৷ ব্ৰহ্ম সূর্যের মতো জ্যোতিষ্মন; দ্যুলোক সমুদ্রের মতো সরোবর; পৃথিবী অপেক্ষা ইন্দ্র মহত্তর বা চিরন্তন এবং গাভীর ইয়ত্তা (অর্থাৎ পরিমাণ) নেই৷৷

৪৯ (ব্রহ্মা কর্তৃক জিজ্ঞাসা)–হে দেবমিত্র উদগাতা! আমি জ্ঞানের নিমিত্ত তোমার নিকট জিজ্ঞাসা করছি যে, তুমি কি এই বিষয়ে কখনও বিচারবান্ হয়েছিলে যে, বিষ্ণু যে তিনটি পদে-আহবনীয়, গার্হপত্য ও দক্ষিণাগ্নিতে যজন করেছিল, তাতে কি সর্ব জগৎ সমান হয়েছিল?

৫০। (উদ্গাতার উত্তর)–হে ব্রহ্ম! ঐ তিন স্থানে (তোমার সাথে) আমিও বিদ্যমান আছি, এই সমস্ত লোক সমান হয়ে গিয়েছে। আমি তৎক্ষণাৎ এই পৃথিবীর ও দ্যুলোকের উপরেও আবর্তিত হয়ে আগমন করি। একই অঙ্গ মনের দ্বারা আমি এই স্বর্গের উত্তর স্থানকেও জ্ঞাত আছি।

৫১। (উদ্গাতা কর্তৃক ব্রহ্মাকে জিজ্ঞাসা)-কিসের অভ্যন্তরে পুরুষ প্রবিষ্ট হয়ে গিয়েছে? পুরুষের অভ্যন্তরে কোন্ কোন্ বস্তু প্রবিষ্ট হয়ে গিয়েছে? হে ব্ৰহ্মন্! এই প্রশ্ন আমি তোমার নিকট স্পর্ধার সাথে জিজ্ঞাসা করছি। তুমি এই বিষয়ে আমাকে কি প্রত্যুত্তর দান করছ?

৫২। (ব্রহ্মার প্রত্যুত্তর)–পঞ্চ ভূতের অভ্যন্তরে পুরুষ (বা আত্মা) প্রবিষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই পঞ্চ ভূত এই পুরুষের অভ্যন্তরে (আত্মায়) স্থাপিত হয়েছে। হে উদগাতা! এই আমি তোমাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে বলে দিচ্ছি। বুদ্ধিতে তুমি আমা অপেক্ষা অধিক নাও।

৫৩। (অধ্বর্যুকে হোতার জিজ্ঞাসা)–পূর্বচিত্তি কি ছিল? বৃহৎ ওজনশীলা পক্ষী কি ছিল? পিলিগ্নিলা কি ছিল? এবং পিশঙ্গিলা কি ছিল?।

৫৪। (প্রত্যুত্তর)বর্ষা ছিল পূর্বচিত্তি; অশ্ব ছিল বৃহৎ পক্ষী; পৃথিবী ছিল পিলিগ্নিলা (সর্বাপেক্ষা চিকন); রাত্রি ছিল পিশঙ্গিলা (সবকিছুকে অন্তর্হিতকারিণী)।

৫৫। হে হোতা! পিশঙ্গিলা কে এবং কুরু অর্থাৎ অনুকরণকারী পিশঙ্গিলা কে? কে এই লম্ফ প্রদান পূর্বক চলে থাকে? এবং কে অক্র-বক্র ভাবে পথ চলে?

৫৬। নিত্যা মায়া পিশঙ্গিলা এবং শ্বাবি (সেধা)-ই কুরু পিশঙ্গিলা; (অর্থাৎ অজাঅর্থে মায়া ও রাত্রি; মায়া সকল কিছুকে গ্রাস করে এবং রাত্রি (সে) অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় কোনও রূপ দৃষ্ট হয় না, সুতরাং সবকিছু যেন গ্রাসিত হয় বলে মনে হয়); শশক লম্ভ প্রদান করে চলে এবং সর্প অক্র-বক্র ভাবে পথ অতিক্রম করে।

৫৭। (ব্রহ্ম) হে উদগাতা! এই যজ্ঞের কি পরিমাণ অন্ন আছে? কত সংখ্যক অক্ষর আছে? হোম কত প্রকার? সমিধসমূহ কতগুলি? তুমি যজ্ঞের জ্ঞাতা, সুতরাং আমি তোমাকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছি। কত সংখ্যক হোতা যজ্ঞে ঋতু অনুসারে যজন করে থাকে।

৫৮। (উদগাতার উত্তর)–হে ব্রহ্মন্! এই যজ্ঞের ছয় পরিমাণ অন্ন, শত সংখ্যক অক্ষর, আশীটি হোম, তিনটি সমিধ যজ্ঞকে জ্ঞাতশালী আমি তোমাকে এই তথ্য বলছি। সাতজন হোতা ঋতুর অনুকূলে যজন করে থাকে। মিহীধরের ভাষ্যানুসারে রসের সংখ্যানুযায়ী অন্নেরও সংখ্যা ছয় পরিমাণ; একশত অক্ষর সমন্বিত ছন্দের দ্বারা যজ্ঞ নিষ্পন্ন হয়ে থাকে বলেই যজ্ঞের অক্ষর সংখ্যা একশত–অর্থাৎ গায়ত্রীর অক্ষর ২৪ ও অতিধৃতির অক্ষর ৭৬, উষ্ণি ২৮ ও ধৃতি, ৭২, অনুষ্টুপ ৩২ ও অত্যষ্টি ৬৮, অষ্টি ৬৪ ও বৃহতী ৩৬, অতিশকরী ৬০ ও পংক্তি ৪০, অতিজগতী ৫২ ও জগতী ৪৮ এইরূপে শত অক্ষর। অশ্বমেধ যজ্ঞের একবিংশতি যুপ সহ অন্যান্য সহ হোমসংখ্যা ৮০। বলা হয়েছে অশ্বত্পর গোমৃগা… ইত্যাদি তিনটি সমিধ]।

৫৯। (উদ্গাতার জিজ্ঞাসা)-হে ব্রহ্ম! এই ভুবনের নাতি (অর্থাৎ কারণকেন্দ্র) কে জ্ঞাত আছে? দুলোক, পৃথ্বীলোক ও অন্তরিক্ষলোককে কে জ্ঞাত আছে? মহান্ সূর্যের উৎপত্তি স্থানকে কে জ্ঞাত আছে? কে জ্ঞাত আছে যে, চন্দ্রমা কোথা হতে উৎপন্ন হয়েছে?।

৬০। (ব্রহ্মার উত্তর)–হে উদ্গাতা! আমি এই ভুবনের নাভিকে জ্ঞাত আছি, (অর্থাৎ এই ভুবনের কারণ যে পরব্রহ্ম, তা আমি জ্ঞাত আছি)। জ্ঞাত আছি দ্যাব-পৃথিবী অন্তরিক্ষকে, (অর্থাৎ এই লোকত্রয় যে ব্রহ্মের বিকার, তা আমি জ্ঞাত আছি)। জ্ঞাত আছি মহান্ সূর্যের প্রভব বা উৎপত্তিকে, (অর্থাৎ সূর্যের উৎপত্তির কারণ যে ব্রহ্ম তা আমি জ্ঞাত আছি)। যে স্থান হতে চন্দ্রমা উৎপন্ন হয়েছে, তা আমি জ্ঞাত আছি, (অর্থাৎ চন্দ্র যে পরমাত্মা হতে জাত তা আমি জ্ঞাত আছি)

৬১। (যজমান অধ্বর্যুকে জিজ্ঞাসা করছেন)–হে অধ্বর্যু! তোমাকে আমি পৃথিবীর পরম অন্ত (অবধি) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছি। জিজ্ঞাসা করছি, যে স্থানে ভুবনের নাভি আছে সেই সম্পর্কেও। তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি সেচক অশ্বের বীর্য সম্পর্কে। বাণীর পরম ব্যোম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছি৷৷

৬২। (অধ্বর্যুর উত্তর)–হে যজমান! এই উত্তর বেদিই পৃথিবীর পরম অন্ত বা অবধিস্থান; এই অশ্বমেধ যজ্ঞই পৃথিবীর নাভি (অর্থাৎ প্রাণিসমূহের কারণ); এই সোমই সেচক অশ্বের বীর্য এবং এই ঋত্বি ব্রহ্মাই ত্রয়ীরূপ বাণীর (ঋক্‌-সাম-যজুঃ রূপ বেদবাণীর) পরম স্থান।

৬৩। সুষ্ঠু বিশ্বের উৎপাদক, স্বয়ংই ব্রহ্মাণ্ডরূপ শরীর ধারী (স্বয়ম্ভু) এবং সেই অনাদিনিধন পরম পুরুষ এই সৃষ্টিরূপ মহাসমুদ্রে কালপ্রাপ্ত গর্ভকে ধারিত করেছিলেন। সেই গর্ভ হতেই প্রজাপতি পুরুষ উৎপন্ন হয়েছিলেন।

৬৪। তা! দৈবী হোতা সোমের মহিমার দ্বারা প্রজাপতিকে পূজা করেছিলেন। যজন কর্মশালী সেই প্রজাপতি মহিমগ্রহস্থ সোমকে পান করুক। হে মানব হোতা! তুমিও যজ্ঞ করো।

৬৫। হে প্রজাপতি! এই ভূতমাত্র তুমি ভিন্ন কিছু নয়। এই যে সমস্ত চরাচরব্যাপ্ত ভূত (প্রাণী) আছে, এই সকলের ওপর তুমিই প্রজাপতি (অর্থাৎ সকলেরই পালক তুমি)। আমরা যে কামনাকরী হয়ে তোমার হোম করছি, তা (সেই কামনা) আমাদের (পূর্ণ) হোক তোমারই দয়ায় আমরা ধনরাশি এবং ধনীসমূহের পালক হবো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *