২৩. ফকনার দাঁড়িয়ে আছে

ফকনার দাঁড়িয়ে আছে ওয়্যারলেস সেটের পাশে। ওয়্যারলেস অপারেটর হচ্ছে বেঁটে এ। যার আসল নাম অ্যালবার্ট জিরান। সে মোটই বেঁটে নয়—প্রায় ছ ফুটের মতো লম্বা। তার বেঁটে খেতাবের উৎস রহস্যমণ্ডিত।

বেঁটে এ ওয়্যারলেস সেটের নব ঘোরাচ্ছে। কমুনিকেশন ফ্রিকোয়েন্সির নব ঘোরাচ্ছে, যদি কিছু ধরা পড়ে। কিছুই ধরা পড়ছে না। জেনারেল ডোফা এদের সঙ্গে যোগাযোগর প্রয়োজন এখনো বোধ করেন নি। তবে শিগগিরই হয়তো করবেন। জেনারেল ডোফা চেষ্টা করবেন তাদের ঘিরে ফেলতে। তাঁকে অতি দ্রুত সৈন্য সমাবেশ করতে হবে। প্যারাট্রুপার নামাতে হবে হয়তো। ফোর্টনক এবং এই পরিত্যক্ত এয়ারপোর্ট ছাড়া প্যারাট্রুপার নামাবার জায়গা নেই। গাছপালায় চারদিক ঢাকা।

ওয়্যারলেস সেট বিপ-বিপ করছে। ফকনার বলল, বেঁটে এ, কিছু আসছে?

মনে হচ্ছে। সিগন্যাল ক্লিয়ার না। প্রচুর ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ।

চেষ্টা করে যাও। এফ এম এ দেখবে কিছু পাওয়া যায় কি না?

এল ইশারায় চুপ করতে বলল। সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে। পরিষ্কার সিগন্যাল।

হ্যালো হ্যালো…….ব্রিগেডিয়ার ক্রিন্তা। হ্যালো।

অ্যালবোর্ট জিরান।

মিশন ফোর্টনক? হ্যালো, ফোর্টনক?

ফকনার এগিয়ে এল। ক্লান্ত গলায় বলল, ফকনার কথা বলছি–ব্রিগেডিয়ার ক্ৰিন্তা, সুপ্ৰভাত।

সুপ্রভাত কি না বোঝা যাচ্ছে না।

তোমাদের জন্যে তো সুপ্রভাত বটেই।

ফকনার বিস্মিত ভঙ্গি করল, যেন খুবই অবাক হয়েছে।

আমি যা বলব তুমি তা করবে না?

আমরা কেউ করব না।

বহুবচনে কথা বলছ কেন? তুমি তোমার নিজের কথা বল। যা করতে বলব তা করবে না?

না।

খুবই ভালো কথা। সাধাসাধি আমার পছন্দ না। ভয় দেখিয়ে রাজি করানোতেও আমার বিশ্বাস নেই। আমি সহজ-সরল লোক। যেহেতু তুমি আমার কোনো কাজে আসছ না, কাজেই তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো যুক্তি দেখছি না।

ফকনার ঠোঁটের সিগারেট খুঁড়ে ফেলে দুপা এগিয়ে খাপ থেকে পিস্তল টেনে বের করল। তার মুখের রেখা একটুও বদলাল না। ঠোঁটের ফাঁকে যে-হাসি লেগে ছিল, সেই হাসি লেগে রইল। পরপর দুবার গুলির শব্দ হল। শব্দ মেলাবার সঙ্গে-সঙ্গেই তার শান্ত গলা শোনা গেল, বেঁটে এল, ডেডবডি সরিয়ে নিয়ে যাও। আর এদের কফি দেওয়ার ব্যবস্থা কর। তোমরা যারা এখনো বেঁচে আছ, তাদের বলছি—কোনো রকম জোরজবরদস্তি নেই। আমার কথা যারা শুনতে চাও না, তাদের শুনতে হবে না। তবে যারা শুনবে তারা ভালোমতো শুনবে এইটুকু আশা করি।

মাওয়া ভাঙা-ভাঙা গলায় বলল, জেনারেল ডোফাকে কি বলতে হবে?

বলছি। তার আগে কফিপর্ব শেষ হয়ে যাক।

নিশো একদৃষ্টে এদের দিকে তাকিয়ে আছেন। এত দূর থেকে কথাবার্তা তিনি কিছুই শুনতে পান নি। হত্যার দৃশ্যটি শুধু দেখেছেন। এত সহজে, এত শান্ত ভঙ্গিতে মানুষ খুন করা যায়, তা তাঁর কল্পনাতেও ছিল না। তিনি শব্দ করে বমি করলেন। তাঁর নাড়িতুড়ি যেন উঠে আসতে চাইছে। মনে-মনে বললেন, হে ঈশ্বর, এ কী দেখলাম। তাঁর মনেই রইল না যে তিনি ঈশ্বর বিশ্বাস করেন না। স্বৰ্গ-নরক বিশ্বাস করেন না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *